পাপ
আমরা যে সকল কর্ম করি, সেগুলো থেকে পরিণামে দুরকমের ফল পাওয়া যায়: ক. পাপ ও খ. পুণ্য।
যে কর্ম করলে নিজের আত্মা পরিণামে কষ্ট পায় বা অন্যের কষ্ট বা ক্ষতির কারণ হয় তার নাম পাপ। যেমনÑ মাদকাসক্তির
দ্বারা মাদকাসক্তের দেহের ও মনের ক্ষতি হয়, তাই মাদকাসক্তি পাপকর্ম। স্বার্থসিদ্ধির জন্য অন্যকে শারীরিক, মানসিক
নির্যাতন করা, প্রহার করে আহত করা বা হত্যা করাও পাপ কর্ম। সুতরাং যে কর্ম করলে ধর্মহানি ঘটে তা পাপ কর্ম।
পুণ্য
যে কাজ করলে ধর্ম রক্ষা হয়, আত্মার প্রশান্তি ও জীব-জগতের হিত সাধিত হয় তা পুণ্য কর্ম। যেমনÑ একজন আর্ত বা
পীড়িতের সেবা করলে পুণ্য লাভ হয়।
নিজের কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য নামক প্রবৃত্তি গুলোকে দমন করে সৎ পথে চললে নিজের মঙ্গল হয়।
সুতরাং এ কর্ম পুণ্য কর্ম।
আবার উপাসনা ও পূজায় ঈশ্বর ও দেবগণ প্রীত হন। সুতরাং তাঁদের উপাসনা ও পূজা পুণ্যকর্ম।
পাপ ও পুণ্যের ফল এবং স্বর্গ ও নরক
পাপ কর্ম করলে দন্ড বা শাস্তি পেতে হয়। ইহকালে কারা ভোগসহ নানা রকম শাস্তি পেতে হয়। পাপ করলে পাপীর
অনুশোচনা হয়। অনুশোচনার অনলে দগ্ধ হওয়াও এক ধরনের শাস্তি।
আবার পরকালেও দন্ড পেতে হয়। মৃত্যুর পর যমরাজ পাপ-পুণ্যের বিচার করে শাস্তি দেন বা পুরস্কৃত করেন।
পরকালে যেখানে থেকে শাস্তি ভোগ করতে হয় তার নাম নরক।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে ছিয়াশিটি নরকের বর্ণনা রয়েছে। এখানে কয়েকটি পাপকর্ম এবং তার জন্য যে নরকযন্ত্রণা ভোগ করার
কথা বলা হয়েছে তার বর্ণনা দিচ্ছি :
যারা পরের ধনসম্পদ, নারী বা শিশু অপহরণ করে, যমের অনুচরেরা তাদের শক্ত করে বেঁধে তামিস্র নরকে ফেলে দেয়।
তামিস্র নরক ঘোর অন্ধকারে আচ্ছন্ন। পাপী সেখানে খাদ্য ও পানীয়ের অভাবে কষ্ট পায়। যমের অনুচরদের হাতেও
যারা জীবিত অবস্থায় যে-যে প্রকারে অন্যদের প্রতি অত্যাচার করেছিল, হিংসা-বিদ্বেষের প্রকাশ ঘটিয়েছিল, নরকে পাপীদের
ঠিক সেই সেই প্রকারে শাস্তি দেওয়া হয়।
তবে পাপের তারতম্য অনুসারে নরকযন্ত্রণা ভোগের ক্ষেত্রেও তারতম্য ঘটে।
পাপ ভোগ শেষ হলে পাপী নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায় এবং কর্মফল অনুসারে আবার তার পুনর্জন্ম হয়ে থাকে।
শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণে বলা হয়েছে যমরাজ তার অনুচরদের সাহায্যে মৃত ব্যক্তিদের যেখানে এনে দোষ-গুণ বিচার করেন সে
স্থানটিকে নরক নামে অভিহিত করা হয়।
নরক সমূহের মধ্যে তামিস্র নরকের কথা বলেছি। আরও রয়েছে অন্ধতামিস্র, রৌরব, মহারৌরব, কুম্ভীপাক, অসিপত্রবন
ইত্যাদি।
মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জীবের দেহ বিনষ্ট হয়। তখন কর্মফল ভোগের জন্য তার সূ² দেহের উদ্ভব ঘটে। ঐ সূ² দেহ নিয়ে জীব
নরকযন্ত্রণা ভোগ করে।
স্বর্গ
পাপের ফলে জীবের সূ² দেহ যেমন নরকযন্ত্রণা ভোগ করে, তেমনি আবার পুণ্য কর্মের জন্য সুখ ভোগ করে। যে সুখময়
স্থান পুণ্যবান লাভ করে তার নাম স্বর্গ। সুখ ভোগের জন্য স্বর্গলোক রয়েছে। স্বর্গে রোগ, শোক, জরা, ব্যাধি ইত্যাদি নেই।
> সেখানে আছে কেবল সুখ আর আনন্দ।
ধর্মগ্রন্থে স্বর্গের যে বর্ণনা রয়েছে, তাতে দেখা যায়, স্বর্গ দেব-দেবীর বাসস্থান। দেব-দেবীদের রাজা হলেন ইন্দ্র। তিনি তাঁর
বৈজয়ন্ত নামক প্রাসাদে বাস করেন। ইন্দ্রের দেবসভার নাম সুধর্ম। স্বর্গের রাজধানীর নাম অমরাবতী। স্বর্গে নন্দনকানন
নামে চির-অমলিন একটি বাগান আছে। স্বর্গে প্রবাহিত নদীটির নাম মন্দাকিনী। স্বর্গের খাদ্য ও পানীয় অতীব সুস্বাদু।
কারা স্বর্গে যেতে পারবেন?
যাঁরা হিংসাদ্বেষ ত্যাগ করেছেন, যাঁরা ধৃতি ক্ষমা দম প্রভৃতি ধর্মের লক্ষণ অনুসারে জীবন যাপন করেন, যাঁরা জীব-জগতের
সেবা করেন, তাঁরা পুণ্যবান। আর পুণ্যবান ব্যক্তিরাই স্বর্গলাভ করেন।
তবে অর্জিত পুণ্যেরও একটা শেষ আছে। পুণ্যক্ষয় হলে স্বর্গভোগের অবসান ঘটে। তখন জীবকে মরদেহ ধারণ করে আবার
পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করতে হয়।
একমাত্র নিষ্কাম কর্মের দ্বারা মোক্ষলাভ করলে আর পুনর্জন্ম হয় না।
পাঠ সংক্ষেপ
যে কর্ম করলে নিজের আত্মা পরিণামে কষ্ট পায় বা অন্যের কষ্ট ও ক্ষতির কারণ হয়, তাকে পাপ বলা হয়। আর যে কর্ম
করলে আত্মার প্রশান্তি ঘটে এবং জীব-জগতের মঙ্গল হয় তাকে বলা হয় পুণ্য।
পাপ করলে নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। নরকযন্ত্রণা ভোগ শেষে আবার জন্ম নিতে হয়। তামিস্র, অন্ধতামিস্র প্রভৃতি
ছিয়াশিটি নরক রয়েছে।
অন্যদিকে পুণ্যকর্ম করলে পুণ্যবান স্বর্গভোগ করেন। স্বর্গ সুখের স্থান। স্বর্গভোগ শেষ হলে আবার পৃথিবীতে জন্ম নিতে হয়।
তবে নিষ্কাম কর্ম করলে মোক্ষ লাভ হয়। তখন আর পুনর্জন্ম হয় না।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন : ১৬.৪
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১. অন্যের ক্ষতিকর কর্মকে ধর্মগ্রন্থ অনুসারে কী বলা হয়?
ক. অন্যায় খ. অবিচার
গ. গর্হিত কর্ম ঘ. পাপ
২. কোনটি পুণ্য কর্ম?
ক. আহার করা খ. বেড়ানো
গ. পূজা করা ঘ. চাকরি করা
৩. ‘ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে নরক কয়টি?
ক. ছাপ্পান্নটি খ. ছেষট্টিটি
গ. ছিয়াত্তুরটি ঘ. ছিয়াশিটি
৪. নিচের কোনটি স্বর্গে অবস্থিত?
ক. তামিস্র খ. রৌরব
গ. নন্দনকানন ঘ. মহারৌরব
৫. স্বর্গে প্রবাহিত নদীটির নাম কী?
ক. সুহাসিনী খ. মন্দাকিনী
গ. স্রোতস্বিনী ঘ. প্রবাহিনী
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. পাপ কাকে বলে?
২. পুণ্য কাকে বলে?
৩. স্বর্গ কাকে বলে?
৪. নরক কাকে বলে?
৫. চারটি নরকের নাম লিখুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. উদাহরণসহ পাপ ও পুণ্যের ধারণা ব্যাখ্যা করুন।
২. কারা স্বর্গে যেতে পারবেন? স্বর্গের বর্ণনা দিন।
৩. স্বর্গ ও নরকের মধ্যকার পার্থক্য বর্ণনা করুন।
৪. পাঁচটি পাপকর্ম ও পাঁচটি পুণ্যকর্মের একটি তালিকা প্রস্তুত করুন এবং প্রতিটি পাপকর্ম কেন পাপকর্ম এবং প্রতিটি
পুণ্যকর্ম কেন পুণ্যকর্ম তা ব্যাখ্যা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত