যীশুর মানব-স্বভাব ও ঐশ্বরিক স্বভাব সম্বন্ধে বলযীশু যে মানবজাতির ত্রাণকর্তা তা ব্যাখ্যা কর


এই ইউনিট বা অধ্যায়ে খ্রীষ্টধর্মের মৌলিক শিক্ষা সম্বন্ধে আলোচনা করা হবে। বাইবেলে যা-কিছু বর্ণিত তা আমাদের বাস্তব
অভিজ্ঞতার সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ। পাপময় জগতের দূষিত ও কলুষিত পরিবেশের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। মানুষের
অন্তরের গভীরতম আকাক্সক্ষা হচ্ছে এই পরিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে চিরস্থায়ী সুখ, শান্তি ও আনন্দ লাভ করা। কিন্তু জগতের
প্রত্যক্ষ বাস্তবতায় তা সুদূর পরাহত। মানুষের চারপাশে এবং সমাজ-জীবনে অসংখ্য প্রতিক‚লতা, বাধা-বিঘœ ও পরীক্ষাপ্রলোভন থাকে। বস্তুত, মানুষ তার নিজের মধ্যেই একটি দ্বন্দ¡ অনুভব করে যার ফলে সে যা করতে চায় তা না করে তার
বিপরীতটাই করে বসে। বাইবেলের ভাষায় এটাই হলো মানুষের হৃদয়পটে সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের লিখে দেওয়া ভালবাসার
বিধানের বিরোধিতা বা অবাধ্যতা। এর ফলে সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর, যিনি তার জীবনের উৎস, ভিত্তি ও পরমগতি, তাঁর সাথে তার
যেরূপ সম্পর্ক থাকার কথা তা আর থাকে না; সে হয়ে পড়ে বিচ্ছিন্ন। ফলে সে নিজের সাথে, ভাই মানুষের সাথে ও
বিশ্বসৃষ্টির সাথে সুষম সম্পর্ক গড়ে তুলতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এক কথায় একে বলা যায় অনাসৃষ্টি। তখন মানুষ তার নিজের
মধ্যেই অনুভব করে নিঃসঙ্গতা, সম্পর্কবিহীনতা, পাপময়তা। এ কথা সত্য যে, মানব-স্বভাবের মধ্যে রয়েছে ইন্দ্রিয়ের
কামনা-বাসনা এবং সপ্তরিপুর অদম্য সন্ত্রাসী তৎপরতা যা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আর তারই ছিটেফোঁটা বাইরে
প্রকাশ পায়। জ্ঞানী-গুণী সাধক ও ধর্মবিশারদগণ মানুষকে ইন্দ্রিয়সংযমী হওয়ার পথ দেখান এবং উপদেশ ও পরামর্শ দেন।
ধর্মগ্রন্থেও এসব জয় করার উপায় হিসেবে নানা বিধি-বিধান এবং তা পালনের নির্দেশ দেওয়া আছে। কিন্তু এমন কোন মন্ত্র
বা শক্তি নেই যা মানুষের পাপময় অবস্থাকে রূপান্তরিত করে পৃথিবী নামক গ্রহটিকে ভ‚-স্বর্গে পরিণত করতে পারে। মানুষকে
ঈশ্বর স্বাধীন ইচ্ছা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং ভালবাসার আদেশ দিয়েছেন। স্বাধীন ইচ্ছা ব্যবহার বা প্রয়োগ করে সেই
ঐশ্বরিক বিধানের নিকট আতœসমর্পণ করলে মানুষ পাপময় অবস্থা থেকে মুক্তির স্বাদ পেতে পারে, কেননা ঈশ্বরের ইচ্ছা
মঙ্গলময় এবং একমাত্র তিনিই সর্বজ্ঞ। একমাত্র তাঁর সেই আদেশ পালনের মধ্যেই মানুষের প্রকৃত স্বাধীনতা ও মুক্তি নিহিত।
এই ইউনিটে আমরা খ্রীষ্টধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে এ জগতে অর্থপূর্ণ জীবনযাপনের ও অনন্ত পরিত্রাণ লাভের উপায় সম্বন্ধে আলোচনা করব। আদিতে ছিলেন বাণী; বাণী ছিলেন ঈশ্বরের সঙ্গে, বাণী ছিলেন ঈশ্বর। আদিতে তিনি ঈশ্বরের সঙ্গেই ছিলেন। তাঁর দ্বারাই
সব-কিছু অস্তিত্ব পেয়েছিল এবং যা-কিছু অস্তিত্ব পেয়েছিল, তার কোন-কিছুই তাঁকে ছাড়া অস্তিত্ব পায়নি। তাঁর মধ্যে ছিল
জীবন; সেই জীবন ছিল মানুষের আলো; অন্ধকারে সেই আলোর উদ্ভাস; আর অন্ধকার তাকে আচ্ছন্ন করতে পারেনি।
যিনি সেই সত্যকার আলো, যে-আলো প্রতিটি মানুষের অন্তর উদ্ভাসিত করে, তিনি জগতে প্রবেশ করছিলেন। জগতের
মধ্যেই ছিলেন তিনি আর যদিও জগৎ তাঁর দ্বারাই অস্তিত্ব পেয়েছিল, তবুও জগৎ তাঁকে চিনল না। তিনি এসেছিলেন আপন
গৃহে, অথচ তাঁর আপনজনেরা তাঁকে গ্রহণ করল না। কিন্তু যারা তাঁকে গ্রহণ করল, তাঁর প্রতি যারা বিশ্বাসী হয়ে উঠল,
তাদের সবাইকে তিনি দিলেন ঈশ্বর-সন্তান হওয়ার অধিকার। রক্তগত জন্মে নয় Ñ দেহের বাসনা থেকে নয়, পুরুষের কামনা
থেকেও নয় Ñ তাদের এই জন্ম ঈশ্বর থেকেই।
বাণী একদিন হলেন রক্তমাংসের মানুষ; বাস করতে লাগলেন আমাদেরই মাঝখানে। আর আমরা তাঁর মহিমা প্রত্যক্ষ
করলাম, একমাত্র পুত্র হিসাবে পিতার কাছ থেকে পাওয়া সেই যে-মহিমা Ñ ঐশ অনুগ্রহ ও সত্যের সেই যে-পূর্ণতা।
সত্যিই তো আমরা সকলে তাঁর সেই পূর্ণতা থেকে লাভবান হয়েছি : লাভ করেছি অনুগ্রহ আর অনুগ্রহ। মোশীর মাধ্যমে
দেওয়া হয়েছিল বিধান, কিন্তু সেই অনুগ্রহ, সেই সত্য নেমে এসেছে যীশুখ্রীষ্টেরই মাধ্যমে। ঈশ্বরকে কেউ কখনো দেখেনি।
পিতার হৃদয়ের কাছেই যাঁর আপন স্থান, নিজে ঈশ্বর যিনি, সেই একমাত্র পুত্রই তাঁকে প্রকাশ করেছেন।
সারসংক্ষেপ : খ্রীষ্টধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হলেন যীশুখ্রীষ্ট। তিনি এক কুমারী মায়ের গর্ভে জন্মেছিলেন। “আদিতে ছিলেন বাণী
..... আমাদের মাঝে নিবাস স্থাপন করলেন।” (যোহন ১:১Ñ১৪)। যীশু যোহন কর্তৃক দীক্ষাøাত হবার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ
থেকে এই বাণী ধ্বনিত হলো: “ইনি আমার প্রিয় পুত্র। তোমরা এঁর কথা শোন।” যীশুর শিক্ষা অনুসরণ করে পিতার উপর
বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে প্রতিবেশীর প্রতি ভালবাসায় জীবন যাপন করলে মানুষের জীবন অর্থপূর্ণ হয়।
“যীশু যে ঈশ্বর-পুত্র, যারা এই কথা স্বীকার করে, ঈশ্বর তাদের সবারই অন্তরে বাস করেন আর তারাও বাস করে ঈশ্বরের
আশ্রয়ে। আমাদের প্রতি ঈশ্বরের যে-ভালবাসা, তা আমরা জেনেছি আর তার ওপর বিশ্বাসও রেখেছি। ঈশ্বর প্রেমস্বরূপ।
ভালবাসায় যার আবাস, সে বাস করে ঈশ্বরের আশ্রয়ে আর ঈশ্বরও তার অন্তরে বাস করেন। আমাদের অন্তরে ভালবাসার
পূর্ণতা এতেই প্রকাশ পায় যে, সেই বিচারের কথা ভেবে আমরা নির্ভয়ে থাকতে পারি; পারি এই জন্যেই যে, যীশু যেমনটি
আছেন, আমরা এখন এই জগতে থেকেই তেমনটি হয়ে উঠেছি। ভালবাসার মধ্যে কোন ভয় থাকতেই পারে না, বরং পূর্ণ
ভালবাসা ভয়কে দূরে সরিয়ে দেয়। আমরা যে ভালবাসি, তার কারণ, ঈশ্বর নিজেই প্রথমে আমাদের ভালবেসেছেন। কেউ
যদি বলে, সে ঈশ্বরকে ভালবাসে, আর তবুও সে যদি নিজের ভাইকে ঘৃণা করে, তবে সে মিথ্যাবাদী; কারণ যাকে সে
দেখতে পায়, তার সেই ভাইকে সে যখন ভালবাসে না, তখন যে-ঈশ্বরকে সে দেখতে পায় না, তাঁকে সে তো ভালবাসতেই পারে না! (১যোহন ৪: ১৫Ñ২১)।
খ্রীষ্টানদের বিশ্বাস, যীশু কেবল দু'হাজার বছর আগেকার ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বই নন। তিনি পুনরুত্থিত ও গৌরবানি¦ত;
বিশ্বসৃষ্টির উপর তাঁর প্রভুত্ব। কিন্তু এই প্রভুত্ব বা কর্তৃত্বের উৎস কোন জাগতিক পদমর্যাদা, পদাধিকার বা ক্ষমতা নয়।
পুনরুত্থিত খ্রীষ্টের প্রভুত্ব ও কর্তৃত্বের উৎস হচ্ছে তাঁর আমৃত্যু ভালাবাসার শক্তি বা ক্ষমতা। সাধু পল তাই বলেন, “আধ্যাÍিক
অর্থে পরিণত মানুষ যারা, তাদের কাছে আমরা অবশ্যই জ্ঞানের কথা শুনিয়ে থাকি; তবে সে জ্ঞান এই সংসারের জ্ঞান নয়,
এবং এ সংসারের নিয়ন্তা যারা, ধ্বংসের পথেই চলেছে যারা, তাদেরও জ্ঞান নয়। আমরা বরং শুনিয়ে থাকি পরমেশ্বরের এক
রহস্যময় জ্ঞানেরই কথা, সেই প্রচ্ছন্ন জ্ঞানেরই কথা, যে-জ্ঞান লাভ ক'রে আমরা মহিমাধন্য হব ব'লে তিনি চিরকাল থেকেই
স্থির করে রেখেছিলেন। এই সংসারের কোন নিয়ন্তাই সেই জ্ঞানের কথা জানতে পারেনি। তারা যদি তা জানত, মহিমময়
প্রভু যিনি, তাঁকে তারা কখনোই ক্রুশে দিত না। আমরা কিন্তু সেই তেমন-সবকিছুর কথাই জানিয়ে থাকি, যার প্রসঙ্গে শাস্ত্রে লেখা আছে : ‘ওই সব-কিছু কারও চোখ দেখেনি কখনো, কারও কানও শোনেনি কখনো; কারও মনও ভাবেনি কখনো।
যারা পরমেশ্বরকে ভালবাসে, তাদের জন্যই তিনি ওই সব-কিছু সঞ্চিত করে রেখেছেন।'” (১ করিন্থীয় ২:৬-৯)। মনে রাখুন
যারা তাঁকে গ্রহণ করল, তাঁর প্রতি যারা বিশ্বাসী হয়ে উঠল, তাদের সবাইকে তিনি দিলেন ঈশ্বর-সন্তান হওয়ার অধিকার।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন: ১৭.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√ ) চিহ্ন দিন
১। যীশু যে ঈশ্বর-পুত্র, যারা এই কথা স্বীকার করে তাদের কী হয়?
(ক) ঈশ্বর তাদের অন্তরে বাস করেন
(খ) ঈশ্বর তাদেরকে পুরস্কৃত করেন
(গ) ঈশ্বর তাদেরকে ধনবান করেন।
(ঘ) ঈশ্বর তাদেরকে দীর্ঘজীবি করেন।
২। বাণী একদিন রক্তমাংসের মানুষ হয়ে কোথায় বাস করতে লাগলেন?
(ক) বেথলেহেমে
(খ) নাজারেথে
(গ) জেরুশালেমে
(ঘ) আমাদের মাঝখানে
৩। দেহধারী ঈশ্বরপুত্রকে যারা গ্রহণ করে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে তারা কী পায়?
(ক) খ্রীষ্টীয় নাগরিকত্ব
(খ) খ্রীষ্টান প্রতিষ্ঠানে চাকুরি
(গ) ঐশরাজ্যের উত্তরাধিকার
(ঘ) ঈশ্বর-সন্তান হওয়ার অধিকার
৪। মোশীর মাধ্যমে দেওয়া হয়েছিল বিধান, আর যীশুখ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে :
(ক) প্রাবক্তিক বাণী
(খ) অনুগ্রহ ও সত্য
(গ) ঐশ্বর্য ও পরাক্রম
(ঘ) প্রজ্ঞা ও মহিমা
৫। ঈশ্বরকে কে প্রকাশ করেছেন?
(ক) প্রবক্তাগণ
(খ) সাধুসন্তরা
(গ) একমাত্র পুত্র যিনি নিজেই ঈশ্বর
(ঘ) স্বর্গের দূতগণ

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]