একদিন যীশুকে যাচাই করার জন্য একজন বিধানপন্ডিত এগিয়ে এসে তাঁকে প্রশ্ন করলেন : “গুরু, শাশ্বত জীবন-সম্পদ লাভ
করতে হলে আমাকে কী করতে হবে?” যীশু তাঁকে বললেন : “মোশীর বিধান-গ্রন্থে কী লেখা আছে? আপনি তার কী অর্থ
করছেন?” উত্তরে তিনি বললেন : “তোমার ঈশ্বর স্বয়ং প্রভু যিনি, তাঁকে তুমি ভালবাসবে তোমার সমস্ত অন্তর দিয়ে, তোমার
সমস্ত প্রাণ দিয়ে, তোমার সমস্ত শক্তি দিয়ে আর তোমার সমস্ত মন দিয়ে! আর তোমার প্রতিবেশীকেও তুমি নিজের মতোই
ভালবাসবে!” যীশু তখন বললেন : “আপনি ঠিক জবাব দিয়েছেন। এখন তা-ই করুন, তাহলেই (শাশ্বত) জীবন পাবেন
আপনি!”
কিন্তু বিধানপন্ডিত কেন যে ওই প্রশ্ন করেছেন, তা বোঝাবার জন্যেই তখন যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন : “আচ্ছা, আমার
প্রতিবেশী কে?” উত্তরে যীশু বললেন : “শুনুন! একজন লোক একটি জেরুসালেম থেকে জেরিখো-শহরে নেমে আসছিল;
এমন সময়ে সে একদল দস্যুর হাতে পড়ল। তারা তার যা-কিছু ছিল, সবই লুঠ করে নিল; তারপর তাকে খুব মারধর করে
আধমরা অবস্থায় ফেলে রেখে চলে গেল। এখন হল কি, একজন যাজক সেই পথ দিয়ে আসছিলেন; তিনি ওই লোকটিকে
দেখে পথের ওধার দিয়ে পাশ কাটিয়েই চলে গেলেন। তেমনি একজন লেবীয়ও সেই জায়গায় এসে পড়লেন আর
লোকটিকে দেখে তিনিও পথের ওধার দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন। এবার কিন্তু একজন সামারীয় পথিক যেতে যেতে
তার কাছে এসে পড়ল; তাকে দেখে তার প্রাণটা কেঁদে উঠল। সে তখন তার কাছে এগিয়ে এল; তার সমস্ত ক্ষতের ওপর
তেল ও সুরা ঢেলে সে তা বেঁধে দিল। তারপর নিজের বাহনটির পিঠে চাপিয়ে সে তাকে একটা সরাখানায় নিয়ে গেল আর
সেখানে তার সেবাযতœ করতে লাগল। পরের দিন সে দু'টো রুপোর টাকা বের করে সরাইখানার মালিকের হাতে দিল আর
বলল : “আপনি এই লোকটির সেবাযতœ করুন; যদি কিছু-বেশি খরচা হয়, আমি আপনাকে ফেরার পথে তা মিটিয়ে দিয়ে
যাব।’” যীশু এবার বললেন : “আচ্ছা, আপনার কী মনে হয়? যে-লোকটি দস্যুদলের হাতে পড়েছিল, ওই তিনজনের মধ্যে
কে তার প্রকৃত প্রতিবেশী হয়ে উঠল?” বিধানপন্ডিত উত্তর দিলেন : “যে তাকে দয়া করেছিল, সে-ই“” তখন যীশু তাঁকে
বললেন : “তাহলে এখন যান আর আপনিও ওই রকম কাজই করুন!”
সারসংক্ষেপ : খ্রীষ্টধর্মের মৌলিক শিক্ষা হচ্ছে যীশুখ্রীষ্টকে অর্থাৎ একজন জীবন্ত ব্যক্তিকে অনুসরণ করা। প্রকৃতপক্ষে প্রথম
খ্রীষ্টবিশ্বাসীগণ নিজেদেরকে একটি বিশেষ ‘পথের’ অনুসারী বলে পরিচয় দিতেন। আর সেই ‘পথ’ বলতে তারা বুঝতেন
যীশুখ্রীষ্টকে। শিষ্যদেরকে আহŸান দেওয়ার সময় যীশু বলেছিলেন : “আমাকে অনুসরণ কর।” যীশু বলেন : ‘আমি সত্য,
আমি পথ, আমি জীবন’। যে আমাতে বিশ্বাস করে, যে আমার আদেশ পালন করে সে .... ইহজগতে ও পরজগতে অনন্ত
জীবন পায়। “আমি যেমন তোমাদের ভালবেসেছি, তোমরাও তেমনি পরস্পরকে ভালবাসবে”।
ঈশ্বর সম্বন্ধে যীশুর মূল শিক্ষা হচ্ছে যে, ঈশ্বর ভালবাসা। অদৃশ ঈশ্বরের সেই ভালবাসা মূর্ত হয়েছে যীশুর মধ্যে, “যে
আমাকে দেখেছে সে পিতাকে দেখেছে”। যীশুকে ঈশ্বরপুত্র বলে বিশ্বাস করা, কেননা তিনিই প্রতিশ্রুত মুক্তিদাতা, যিনি
মানবজাতিকে পাপ থেকে পরিত্রাণ করার জন্য মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন। খ্রীষ্টান হওয়ার অর্থ হচ্ছে যীশুকে ব্যক্তিগত
মুক্তিদাতা বলে বিশ্বাস করা। এই বিশ্বাসেই পরিত্রাণ। বিশ্বাস করার অর্থ হচ্ছে কারো উপর আস্থা স্থাপন করা। ঈশ্বরে বিশ্বাস
হচ্ছে ঈশ্বরের উপর আস্থা স্থাপন করা, তাঁর মঙ্গলময়তার উপর আস্থা রাখা। “খ্রীষ্টধর্ম” বলতে কোন বিধি-বিধান মেনে চলা
বা আচার-অনুষ্ঠান পালন করা বুঝায় না; পক্ষান্তরে একজন জীবিত ব্যক্তিকে অনুসরণ করা বুঝায়। মৌলিক খ্রীষ্টিয়
সেবাকাজ বলতে বুঝায় পাপে পতিত মানবজাতিকে উদ্ধার করার সেই সুখবর সহভাগিতা করা। খ্রীষ্টিয় বিশ্বাস বলতে বুঝায়
যীশুর সাথে একাত্ম হয়ে ঈশ্বরের উপর ব্যক্তিগত বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করে ও তাঁর উপর আস্থা
রেখে দৈনন্দিন জীবন যাপন করা।
মনে রাখুন
যে তার ভাইকে ভালবাসে না সে অন্ধকারেই পড়ে আছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন: ১৭.৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√ ) চিহ্ন দিন
১। ঈশ্বর সম্বন্ধে মূল শিক্ষা কি?
(ক) ঈশ্বর সর্বশক্তিমান
(খ) ঈশ্বর ভালবাসা
(গ) ঈশ্বর সর্বব্যাপী
(ঘ) ঈশ্বর ন্যায়বান
২। যীশুর কথা অনুযায়ী আমাদের প্রতিবেশী কে?
(ক) স্ব-ধর্মের লোকজন
(খ) নিকটাত্মীয়রা
(গ) নিজ পাড়া বা গ্রামের লোকজন
(ঘ) যে ব্যক্তি মানুষের বিপদে সাড়া দেয়
৩। খ্রীষ্টধর্মের শিক্ষা অনুযায়ী যীশু কে?
(ক) একজন বিখ্যাত ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব
(খ) একজন সমাজ-সংস্কারক
(গ) একজন ধর্মসাধক
(ঘ) একটি জীবন্ত পথ
৪। প্রথম খ্রীষ্টবিশ্বাসীগণ নিজেদেরকে কী বলে পরিচয় দিতেন?
(ক) একটি বিশেষ পথের অনুসারী বলে
(খ) একটি দার্শনিক মতবাদের অনুসারী বলে
(গ) একজন খ্যাতিমান সাধকের অনুসারী বলে
(ঘ) একটি ধর্মতাত্তি¡ক মতবাদের অনুসারী বলে
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত