বাস্তব জীবনে ভালবাসার আদর্শ পালনের দৃষ্টান্ত ব্যাখ্যা কর

(ক) তখন নিস্তার-পর্ব সুরু হবে। যীশুর তো জানাই ছিল যে,্ এবার তাঁর সেই সময়টি এসে গেছে, যখন এই জগৎ ছেড়ে
পিতার কাছে তাঁকে চলে যেতে হবে। এই সংসারে রয়েছে যারা, তাঁর সেই আপনজনদের তিনি তো বরাবরই ভালবেসে
এসেছেন। এবার তিনি কিন্তু তাদের প্রতি তাঁর সেই ভালবাসার চূড়ান্ত প্রমাণ দিলেন।
সান্ধ্যভোজ তখন চলছে। শয়তান ইতিমধ্যেই সিমোনের ছেলে যুদা ইস্কারিয়োতের মনে যীশুকে শত্রুর হাতে তুলে দেবার
সঙ্কল্প জাগিয়ে দিয়েছিল। তবে যীশু ভালভাবেই জানতেন, পিতা তাঁরই হাতে সমস্ত-কিছু তুলে দিয়েছেন। এ-ও তিনি
জানতেন যে, ঈশ্বরের কাছ থেকেই এসেছেন তিনি আর ঈশ্বরের কাছেই ফিরে যাচ্ছেন। তিনি তখন খাওয়ার আসন থেকে
উঠে গায়ের জামাটা খুলে রাখলেন এবং একটা গামছা নিয়ে কোমরে জড়ালেন। তারপর একটা পাত্রে জল ঢেলে তিনি
শিষ্যদের পা ধুয়ে দিতে আরম্ভ করলেন আর কোমরের গামছাটা দিয়ে তা মুছিয়ে দিতে লাগলেন। এই ভাবে তিনি সিমোন
পিতরের কাছে এলেন। কিন্তু পিতর তাঁকে বললেন : “সে কি প্রভু, আপনি আমার পা ধুয়ে দেবেন?” যীশু তাঁকে উত্তর
দিলেন : “আমি কী করছি, এখন অবশ্য তা বুঝতে পারছ না, কিন্তু পরে বুঝতে পারবে।” পিতর তাঁকে বললেন : “না,
আমার পা আপনি ধুয়ে দেবেন না, কক্ষনো না!” যীশু উত্তর দিলেন : “আমি যদি ধুয়ে না দিই, তাহলে আমার সঙ্গে তোমার
কোন সম্পর্কই যে থাকে না!” সিমোন পিতর তাঁকে বললেন : “প্রভু, তাহলে শুধু পা নয়, আমার হাত আর মাথাও আপনি
ধুয়ে দিন!” যীশু তাঁকে বললেন : “¤েøান করেছে, শুধু পা ছাড়া তার আর কিছু ধোবার প্রয়োজন নেই; সর্বাঙ্গেই সে শুচি।
তোমরাও তো শুচি ... কিন্তু সকলে নও!” তিনি অবশ্য জানতেন, কে তাঁকে শত্রুর হাতে তুরে দেবে; তাই তিনি বললেন :
“তোমরা সকলে শুচি নও!”
তাঁদের পা ধুয়ে দেওয়ার পর তিনি গায়ের জামাটা পরে নিয়ে আবার খাওয়ার আসনে গিয়ে বসলেন। তখন তিনি তাঁদের
বললেন : “আমি এখন তোমাদের জন্যে কী করলাম, তোমরা কি তা বুঝতে পারছ? তোমরা তো আমাকে ‘গুরু’ বা ‘প্রভু’
বলে থাক Ñ আর ঠিকই বল, আমি তো সত্যিই তাই। কাজেই প্রভু ও গুরু হয়ে আমি যখন তোমাদের পা ধুয়ে দিলাম
তখন তোমাদেরও পরস্পরের পা ধুয়ে দেওয়া উচিত। আমি তো এখন তোমাদের সামনে একটি আদর্শই তুলে ধরলাম;
আমি তোমাদের জন্যে যেমনটি করলাম, আমি চাই, তোমরাও ঠিক তেমনটি করবে! আমি তোমাদের সত্যি-সত্যিই বলছি,
দাস কখনো তার প্রভুর চেয়ে বড় হয় না; তেমনি যে-লোক কোথাও প্রেরিত, সেও কখনো তাঁর চেয়ে বড় হয় না যিনি তাকে
প্রেরণ করেছেন। এই কথা জেনে তোমরা যদি সেইমতোই কাজ করে চল, তবে ধন্য তোমরা!
শোন, আমি এখন তোমাদের একটি নতুন আদেশ দিচ্ছি : তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে। আমি নিজে যেমন তোমাদের
ভালবেসেছি, তোমাদেরও তেমনি পরস্পরকে ভালবাসতে হবে। তোমাদের পরস্পরের মধ্যে যদি ভালবাসা থাকে, তাহলে
সকলে তাতেই বুঝতে পারবে, তোমরা আমার শিষ্য!”
(খ) আমি যদি মানুষদের ও স্বর্গদূতদের ভাষায় কথা বলতে পারি, অথচ আমার অন্তরে যদি না থাকে ভালবাসা, তাহলে
আমি ঢংঢঙানো কাঁসর বা ঝনঝনে করতাল ছাড়া আর কিছুই নই! আর আমি যদি প্রাবক্তিক বাণী ঘোষণা করতে পারি, যদি
উপলব্ধি করতে পারি সমস্ত রহস্যাবৃত সত্য, জানতে পারি ধর্মজ্ঞানের সমস্ত কথা, যদি আমার অন্তরে থাকে পর্বত সরিয়ে
দেবার মতো পুর্ণ বিশ্বাস, অথচ না থাকে ভালবাসা, তাহলে আমি তো কিছুই নই! আর আমি যদি আমার সমস্ত-কিছুই
দীনদরিদ্রের মধ্যে বিলিয়ে দিই, এমন কি আমার নিজের দেহ-ও আগুনে সঁপে দিই, অথচ আমার অন্তরে যদি না থাকে
ভালবাসা, তাহলে তাতে আমার কোন লাভই নেই! ...
কেননা “ভালবাসা নিত্য-সহিষ্ণু, ভালবাসা øেহ-কোমল। তার মধ্যে নেই কোন ঈর্ষা। ভালবাসা কখনো বড়াই করে না,
উদ্ধতও হয় না, রুক্ষও হয় না। সে স্বার্থপর নয়, বদমেজাজীও নয়। পরের অপরাধ সে কখনো ধরেই না। অধর্মে সে আনন্দ
পায় না, বরং সত্যকে নিয়েই তার আনন্দ। ভালবাসা সমস্তই ক্ষমার চোখে দেখে; তার বিশ্বাস সীমাহীন, সীমাহীন তার আশা ও তার ধৈর্য। ....
আপাতত বিশ্বাস, আশা ও ভালবাসা, এই তিনটিই থেকে যাচ্ছে বটে, কিন্তু ভালবাসা-ই সর্বশ্রেষ্ঠ”
সারসংক্ষেপ : ঈশ্বর তো ভালবেসে অনেক মর্যাদা দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন তাঁর নিজের প্রতিমূর্তিতে। সেই মানুষ
ঈশ্বরের আজ্ঞা অমান্য করে, তাঁর অবাধ্য হয়ে পাপ করলেও ঈশ্বর তাকে পরিত্যাগ করেননি। কেননা ঈশ্বর তো ঈশ্বর, তাঁর
ভালবাসা চিরস্থায়ী। তিনি প্রতিশোধপরায়ণ নন। “ঈশ্বর জগৎকে এতই ভালবেসেছেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে তিনি দান
করে দিয়েছেন, যাতে, যারা তাঁকে বিশ্বাস করে, তাদের কার-ও যেন বিনাশ না হয়, বরং তারা সকলেই যেন লাভ করে
শাশ্বত জীবন। ঈশ্বর জগৎকে দন্ডিত করতে তাঁর পুত্রকে এই জগতে পাঠাননি; পাঠিয়েছিলেন, যাতে তাঁর মাধ্যমে জগৎ
পরিত্রাণ লাভ করে। যে-মানুষ তাঁকে বিশ্বাস করে, সেই মানুষকে কখনো বিচারে দন্ডিত হতে হয় না; কিন্তু তাঁকে যে
অবিশ্বাস করে, সে তো বিচারে দন্ডিত হয়েই আছে, কারণ ঈশ্বরের একমাত্র পুত্রের প্রতি সে যে বিশ্বাস রাখেনি! সেই বিচার
এই মর্মেই করা হয়েছে যে, আলো জগতে আসা সত্তে¡ও মানুষ আলোর চেয়ে অন্ধকারকেই ভালবেসেছে, যেহেতু মানুষের
কাজকর্ম অসৎ ছিল। কারণ যে-কেউ মন্দ কাজ করে, আলোকে সে ঘৃণা করে, আলোর দিকে সে আসেই না, পাছে তার
কাজের আসল রূপটা বেরিয়ে পড়ে! কিন্তু যে-মানুষ সত্যের সাধক, সে তো আলোর দিকে এগিয়ে আসে, যাতে, তার
কাজকর্ম যে ঈশ্বরের প্রেরণায় সাধিত, তা যেন স্পষ্টই প্রকাশ পায়” (যোহন ৩:১৬-২১)। কবি-লেখকরাও একই উপলব্ধি
থেকে বলেছেন : “পেঁচা রাষ্ট্র করি দেয় পেলে কোন ছুতা, জান না সূর্যের সঙ্গে আমার শত্রুতা!”ঈশ্বর মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা
দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ স্বেচ্ছায় গ্রহণ না করলে ঈশ্বর তাঁর উপর কিছু চাপিয়ে দেন না।
যীশু মানুষকে ভালবেসে ক্রুশের উপরে স্বেচ্ছায তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি নিজেই তো বলেছেন: “পিতা আমাকে
এই জন্যেই ভালবাসেন যে, আমি নিজের প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছি Ñ পরে আমি অবশ্য তা আবার ধারণ করব! আমার কাছ
থেকে কেউ তা হরণ করে নিচ্ছে না; আমি নিজে থেকেই তা বিসর্জন দিচ্ছি। তা বিসর্জন দেবার অধিকারও আমার আছে,
আবার তা ধারণ করবার অধিকার আমার আছে। পিতার কাছ থেকে আমি এই আদেশ পেয়েছি” (যোহন ১০:১৭-১৮)।
সাধু পল বলেন : ভালবাসা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ গুণ। কেননা “ভালবাসা নিত্য-সহিষ্ণু, ভালবাসা øেহ-কোমল। তার মধ্যে নেই কোন
ঈর্ষা। ভালবাসা কখনো বড়াই করে না, উদ্ধতও হয় না, রুক্ষও হয় না। সে স্বার্থপর নয়, বদমেজাজীও নয়। পরের অপরাধ
সে কখনো ধরেই না। অধর্মে সে আনন্দ পায় না, বরং সত্যকে নিয়েই তার আনন্দ। ভালবাসা সমস্তই ক্ষমার চোখে দেখে;
তার বিশ্বাস সীমাহীন, সীমাহীন তার আশা ও তার ধৈর্য। ....আপাতত বিশ্বাস, আশা ও ভালবাসা, এই তিনটিই থেকে যাচ্ছে বটে, কিন্তু ভালবাসা-ই সর্বশ্রেষ্ঠ”। (১করি ১৩:১-১৩)। মনে রাখুন
যীশু বলেন : “আমি তোমাদের একটি নতুন আদেশ দিচ্ছি : তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে। আমি নিজে যেমন তোমাদের
ভালবেসেছি, তোমাদেরও তেমনি পরস্পরকে ভালবাসতে হবে। তোমাদের পরস্পরের মধ্যে যদি ভালবাসা থাকে, তাহলে সকলে তাতেই বুঝতে পারবে, তোমরা আমার শিষ্য!”
পাঠোত্তর মূল্যায়ন: ১৭.৪
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√ ) চিহ্ন দিন
১। ক্রুশের উপরে যীশুর স্বেচ্ছায় জীবন দান কিসের প্রমাণ?
(ক) বীরত্বের প্রমাণ (খ) ভালবাসার প্রমাণ
(গ) কষ্ট ও ত্যাগস্বীকারের প্রমাণ (ঘ) উদারতার প্রমাণ
২। যীশুর শিষ্যত্বের পরিচয় কী?
(ক) পরস্পরের প্রতি ভালবাসা (খ) শিক্ষা বিস্তার
(গ) গরীবদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ (ঘ) পান্ডিত্যপূর্ণ ধর্মপ্রচার
৩। সাধু পলের কথা অনুসারে ভালবাসা হচ্ছে :
(ক) অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ (খ) শ্রেষ্ঠ গুণ
(গ) মানুষের মন জয় করার শক্তি (ঘ) শ্রেষ্ঠ চরিত্রের লক্ষণ
৪। জগতে আলো আসা সত্তে¡ও মানুষ অন্ধকারকেই ভালবাসে কেন?
(ক) কারণ সেখানেই তারা নিরাপদ বোধ করে (খ) কেননা তাদের কাজকর্ম অসৎ
(গ) কেননা তাদের ধরা পড়ার ভয় থাকে (ঘ) কেননা আলোকিত মানুষের দায়িত্ব বেশি

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]