যীশু বললেন, “একটি লোকের দুটি ছেলে ছিল। ছোট ছেলেটি একদিন বাবাকে বলল: ‘বাবা, আমার ভাগের সম্পত্তি
আমাকে দিয়ে দাও’। তখন তিনি তাদের দু’জনের মধ্যে তাঁর ধনসম্পত্তি ভাগ করে দিলেন। কিছুদিন পরে সেই ছোট
ছেলেটি নিজের যা-কিছু ছিল, সবই বিক্রি করে সমস্ত টাকা-কড়ি নিয়ে দূর দেশে চলে গেল। সেখানে উচ্ছৃঙ্খলের মতো দিন
কাটিয়ে সে তার সর্বস্বই উড়িয়ে দিল।
সে সব-কিছুই খরচ করে ফেলেছে, এমন সময় সেই দেশে দেখা দিল করাল দুর্ভিক্ষ। ছেলেটির এবার দুর্দিন শুরু হল। তাই
তাকে গিয়ে চাকরের কাজ নিতে হল সেখানকার এক অধিবাসীর কাছে; সেই লোকটি তাকে নিজের জমিতে পাঠিয়ে দিল
শুয়োর চরাতে। ছেলেটির খুব ইচ্ছা হতো, শুয়োরেরা যে-শুঁটি খায়, তা-ই খেয়ে সে তার পেট ভরাবে। কিন্তু তাও তাকে
কেউ দিত না। তখন তার চেতনা হল। সে বলল: “বাবার ওখানে কত মাইনে-করা লোক প্রয়োজনের চেয়েও বেশি খাবার
পাচ্ছে আর আমি কিনা এখা্েন খিদের জ্বালায় মরছি! আমি এবার এই জায়গা ছেড়ে বাবার কাছে যাব আর তাঁকে বলব:
‘বাবা, আমি ঈশ্বরের কাছে আর তোমার কাছে পাপ করেছি। আমি আর তোমার ছেলে বলে পরিচিত হবার যোগ্য নই! তাই
তুমি আমাকে তোমার একজন মাইনে-করা লোকের মতোই রাখ।’ সে তখন সেই জায়গা ছেলে তার বাবার কাছে যাবার
জন্যে রওনা হল।
সে তখনও দূরেই রয়েছে, সেই সময়ে তার বাবা তাকে দেখতে পেলেন। তাঁর প্রাণটা কেঁদে উঠল। ছুটে গিয়ে তিনি
ছেলেটির গলা জড়িয়ে ধরে তাকে চুমু খেলেন। তখন ছেলেটি তাঁকে বলল : ‘বাবা, আমি ঈশ্বরের কাছে আর তোমার কাছে
পাপ করেছি। আমি আর তোমার ছেলে বলে পরিচিত হবার যোগ্য নই! তাই তুমি আমাকে তোমার একজন মাইনে-করা
লোকের মতোই রাখ!’ তার বাবা কিন্তু চাকরদের ডেকে বললেন : ‘শীগগির যাও : সবচেয়ে ভাল পোশাক বের করে আন
আর ওকে পরিয়ে দাও। ওর হাতে একটা আংটি দাও আর পায়ে পরিয়ে দাও জুতো। তারপর সেই মোটাসোটা বাছুরটা নিয়ে
এসে কেটে ফেল। তারপর এসো, খেয়ে-দেয়ে আনন্দ করা যাক! কারণ আমার এই যে-ছেলেটি, সে তো মরেই গিয়েছিল
আর এখন বেঁচে উঠেছে; সে হারিয়ে গিয়েছিল আর এখন তাকে পাওয়া গেছে!’ তাই তারা সকলে আনন্দ করতে লাগল।
বড় ছেলেটি তখন মাঠে ছিল। ফেরার পথে সে যখন বাড়ির কাছে পৌঁছল, তখন নাচ ও গানবাজনার শব্দ তার কানে এল।
সে একজন চাকরকে ডেকে জিজ্ঞেস করল : ‘এসব আবার কী হচ্ছে?’ চাকরটি বলল: ‘আপনার ভাই যে ফিরে এসেছেন!
আর আপনার বাবা মোটাসোটা সেই বাছুরটাকে তাই কেটে ফেলেছেন। তিনি যে তাঁকে সুস্থ দেহেই ফিরে পেয়েছেন!’ এই
কথা শুনে বড় ছেলেটি রেগে গেল। সে ভেতরে যেতে চাইল না। তার বাবা বাইরে এসে তাকে সাধাসাধি করতে লাগলেন।
কিন্তু বাবাকে সে উত্তর দিল : ‘ভেবে দেখ তো, এত বছর ধরে আমি দাসের মতো তোমার জন্যে খেটে আসছি, একদিনও
তোমার কথা অমান্য করিনি; অথচ তুমি তো আমাকে ্একটা ছাগলছানাও কখনো দাওনি, যাতে আমি বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে
নিয়ে আনন্দ করতে পারি! কিন্তু তোমার ওই যে-ছেলে Ñ যে বেশ্যাদের পেছনে তোমার ধনসম্পত্তি নষ্ট করেছে Ñ সে যখন
ফিরে এল, তুমি কিনা তারই জন্যে মোটাসোটা সেই বাছুরটাকে কেটে ফেললে!...’
তিনি তখন বললেন : ‘বাবা, তুমি তো সবসময়েই আমার কাছে রয়েছ আর আমার সব-কিছুই তো তোমারই! কিন্তু তবুও
আনন্দ করা, উৎসব করাই উচিত ছিল, কারণ তোমার এই যে-ভাই, সে তো মরেই গিয়েছিল আর এখন বেঁচে উঠেছে; সে
হারিয়ে গিয়েছিল আর এখন তাকে পাওয়া গেছে!’...”
সারসংক্ষেপ : পাপ করে মানুষ ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল (আদি ৩:১-১৩)। ফলে মানুষের পরস্পরের
মধ্যেও স¤প্রীতি হারিয়ে গিয়েছিল। সেই হারানো সদ্ভাব ফিরিয়ে আনার জন্য, ঈশ্বরের সাথে মানুষের এবং মানুষে-মানুষে
পুনর্মিলন সাধনের জন্যই যীশুর জন্ম এবং ক্রুশীয় মৃত্যু। তিনি তাঁর ক্রুশীয় মৃত্যুর দ্বারা মানুষকে সেই পাপ-বন্ধন থেকে মুক্ত
করেন। যীশুর মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সাথে মানুষের এবং মানুষের পরস্পরের মধ্যে পুনর্মিলন ঘটে। সাধু পল বলেন, “আমরা
যখন ঈশ্বরের শত্রু ছিলাম, তখনই তো তাঁর পুত্রের মৃত্যু বরণের মধ্য দিয়ে আমরা তাঁর সঙ্গে পুনর্মিলিত হয়েছি; তাহলে তাঁর
সঙ্গে পুনর্মিলিত এই যে আমরা, আমরা যে একদিন তাঁর পুত্রের জীবনীশক্তিতে পরিত্রাণ লাভ করব, তা আরও কতই না
সুনিশ্চিত! (রোমীয় ৫:১০)। “এই সব-কিছু ঈশ্বরেরই কাজ : তিনিই খ্রীষ্টের মধ্যস্থতায় নিজের সঙ্গে আমাদের পুনর্মিলিত
করেছেন, এবং সেই পুনর্মিলনের কর্মদায়িত্ব তিনি আমাদের হাতেই তুলে দিয়েছেন” (২করি ৫:১৮)। “স্বয়ং খ্রীষ্টই তো
আমাদের মধ্যে শান্তির বন্ধন; .....ইহুদী-অনিহুদী ... তাদের উভয় পক্ষকে তিনি একই দেহের আশ্রয়ে এক করে নিয়ে
ঈশ্বরের সঙ্গে পুনর্মিলিত করবেন তার ক্রুশমৃত্যুরই মধ্য দিয়ে। নিজে মৃত্যু বরণ করেই তো সেই শত্রুতার অবসান ঘটাবেন
তিনি। .. আজ তাঁকেই পথ করে ইহুদী-অনিহুদী আমরা তো সকলেই এই পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় এক হয়ে পরম পিতার
দিকে যেতে পারি” (এফেসীয় ২:১৫-১৮)।
মনে রাখুন
“তবুও আনন্দ করা, উৎসব করাই উচিত ছিল, কারণ তোমার এই যে-ভাই, সে তো মরেই গিয়েছিল আর এখন বেঁচে
উঠেছে; সে হারিয়ে গিয়েছিল আর এখন তাকে পাওয়া গেছে!”
পাঠোত্তর মূল্যায়ন: ১৭.৫
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√ ) চিহ্ন দিন
১। পাপ করলে কী হয়?
(ক) মনে ভয় জন্মে
(খ) মানসিক রোগ হয়
(গ) শারীরিক অসুখ হয়
(ঘ) ঈশ্বর ও মানুষের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়
২। যীশু কিভাবে মানুষের মধ্যে শত্রুতার অবসান ঘটিয়েছেন?
(ক) প্রচার কাজের মধ্য দিয়ে
(খ) মৃত্যু বরণ করে
(গ) অলৌকিক কাজ করে
(ঘ) যাদুমন্ত্র দিয়ে
৩। ছোট ছেলেটি তার বাবার কাছে ফিরে এসে কী বলেছিল?
(ক) আমি ঈশ্বরের কাছে ও তোমার কাছে পাপ করেছি
(খ) আমি টাকা-পয়সা অপচয় করেছি
(গ) আমি খিদের জ্বালা মরছি
(ঘ) আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি
৪। বড় ছেলেটি তার ছোট ভাইয়ের প্রত্যাবর্তনের আনন্দে যোগ দিতে পারেনি কেন?
(ক) কারণ সে ছিল বদমেজাজী
(খ) কারণ সম্পত্তির উপর তার লোভ ছিল বেশি
(গ) সে তার পিতার ক্ষমাশীল ভালবাসা বুঝতে পারেনি
(ঘ) সে তার সম্পত্তি হারাতে চায়নি
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত