দান কী বুঝ দান কী করে দিতে হয় দানীয় সামগ্রী প্রকৃত দাতা কারা বল দানের গুরুত্ব দানের গুণাবলী দানের প্রকারভেদ সম্পর্কে বলতে পারবেন।

দানের পরিচয়
‘দান’ অতি পরিচিত অর্থবোধক শব্দের নাম। ‘দান’ বলতে সচরাচর আমরা আমার যা দেওয়া হয় তাকেই বুঝি। তবে কোন
কিছু দিলেই তা দানের পর্যায়ে পড়ে না। দান হতে হবে স¤প্রদানে, যেখানে স্বত্ব এবং স্বার্থ কোনটিই থাকতে পারবে না।
তা ছাড়া সৎ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দান দিতে হয়। সুতরাং অন্তরে কুশলকর্ম সম্পাদনের নিমিত্তে অন্তরে দান চেতনা
উৎপন্ন করে স্বত্ব ও স্বার্থ ত্যাগ করে উপযুক্ত পাত্রে দান দেওয়াই হচ্ছে দান। সকল প্রকার সোপান।
দান
আগেই বলেছি ‘দান’ বলতে স্বাভাবিকভাবে আমরা অন্যকে কোন কিছু দেওয়াকে বুঝি। তবে এক্ষেত্রে কাউকে কিছু দিলেই
এটি দানের পর্যায়ে পড়বে এমনটি ভাবা উচিত নয়। দান করার আগে দরকার মনের পবিত্রকরণ এবং সৎ চেতনাবোধ।
তাছাড়া দান করতে গেলে স্বত্ব এবং স্বার্থ দুটিই সম্পূর্ণ ত্যাগ করতে হবে। দানের মধ্যে স্বত্ব এবং স্বার্থ থাকলে সেই দান
কোন প্রকার সুফল বয়ে আনতে পারে না। উপযুক্ত পাত্রে দান দেওয়াই উত্তম দান।
দান সামগ্রী
বৌদ্ধধর্মীয় গ্রন্থে দশটি উত্তম দানীয় সামগ্রীর উল্লেখ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে নিম্নলিখিত গাথাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য -
অন্ন পানং বত্থং যানং
মালাগন্ধ বিলেপনং
সেয্যা বসথ পদীপেয্যং
দান সবত্থু ইমে দসা।
অর্থাৎ - অন্ন বা খাদ্য, জল বা পানীয়, বস্ত্র, যানবাহন, মালা (ফুল বা জপমালা), সুগন্ধদ্রব্য (ধূপাদি), বিলেপন (দেহ
পরিস্কার রাখার সামগ্রী), শয্যা (শয়ন যোগ্য), গৃহ (বাসযোগ্য), প্রদীপ ইত্যাদি।
দানের গুরুত্ব
যে সমস্ত মহৎ কাজ রয়েছে তন্মধ্যে দান উত্তম কাজ। দানের মাধ্যমে মানুষের মনে প্রফুল তা অ - াসে আর চিত্তের বিশুদ্ধি
আনয়ন করে। দানচিত্ত অধিকারী সম্পন্ন ব্যক্তি নিজেকে সবধরণের অকুশলকর্ম থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সক্ষম হন। দান
সবাইকে সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করে তোলে। আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে সহায়তা করে। সকল প্রকার
অবহেলিত যেমন দীন-দুঃখী, অসহায়, পুঙ্গ, অন্ধ মানুষের প্রতি গভীর সহানুভূতিশীল অনুপ্রেরণায় উদ্ধুদ্ধকরণে সহায়তা
করে। এ রকম অকৃত্রিম দান চেতনার ফলে মানুষে মানুষে সদ্ভাব, সৌহার্দ্য-স¤প্রীতি সর্বোপরি সৌভ্রাতৃত্বের সুদৃঢ়বন্ধন গড়ে
উঠে।
বৌদ্ধধর্মে দানকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। বৌদ্ধধর্মে চারপ্রকার নরকের নাম উল্লেখ রয়েছে। মন্দ কাজ
করার ফলে সবাই মৃত্যুর পর এ সমস্ত নরকে জন্মগ্রহণ করে। এখানে জন্মের পর সবাই নিদারুণ দুঃখ-যন্ত্রণা ভোগ
করে। সৎ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে উত্তম দান দিয়ে সেই নরকবাসীদেরকে সেই নরকযন্ত্রণা কিংবা সীমাহীন দুঃখ থেকে মুক্ত করা যায়।
যাদের দান চেতনা নেই তাদেরকে সবাই কৃপণ বলে জানে। কৃপণ লোক সমাজে তেমন সমাদৃত হয় না। অন্যদিকে দান
দেওয়ার ফলে দানশীল ব্যক্তি সমাজে কিংবা সকলের প্রিয়ভাজন বা শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সুতরাং
দানের প্রতি সবার সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
প্রকৃত দাতা
কাউকে কিছু দিলে কিন্তু তা দানের পর্যায়ে পড়ে না। অনুরূপভাবে যিনি দান দেন তিনিও দাতা বলে বিবেচিত হন না।
সুতরাং সঙ্গতকারণে প্রশ্ন জাগে প্রকৃত দাতা কে? এখানে বলা বাহুল্য যে, তিনটি বিষয়ে যিনি সচেতন থাকেন তিনিই প্রকৃত
দাতা বলে স্বীকৃত। এ তিনটি বিষয় হলো : ক. বস্তুসম্পত্তি, খ. চিত্ত সম্পত্তি এবং গ. প্রতিগ্রাহক সম্পত্তি।
ক. বস্তুসম্পত্তি : দান দেওয়ার বস্তু সর্ম্পকে সঠিকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করার নামই হলো বস্তু সম্পত্তি। অন্যায়ভাবে অর্জিত
অর্থের দান কোনভাবেই ফলপ্রসূ হয় না। সদুপায় এবং পরিশ্রমে অর্জিত অর্থের মাধ্যমে প্রদত্ত বস্তু দানই হলো উত্তমদান।
খ. চিত্তসম্পত্তি : দান দেওয়ার সময় নিজ অন্তরে কুশলচেতনা বা কুশল ভাব উৎপাদনকেই বলা হয় চিত্তসম্পত্তি। দান
চেতনা উৎপন্ন না করে দান দিলে তা কোন অবস্থাতেই সুফল বয়ে আনতে পারে না। এজন্য উক্ত হয়েছে : দানের পূর্বে,
দানের সময় সর্বোপরি দানের পরেও অন্তরে কুশল চেতনা জাগ্রত রাখতে হবে। এরকম দানের ফল অত্যন্ত মঙ্গলদায়ক।
গ. প্রতিগ্রাহক সম্পত্তি : যাকে দান দেওয়া হয় সেই দানগ্রহীতা শীলবান কিনা তা যথাযথ বিচার-বিবেচনা পূর্বক উপযুক্ত পাত্রে দান করাই হচ্ছে প্রতিগ্রাহক সম্পত্তি।
দাতার গুণাবলী
দান দিলেই যে কেউ উত্তম দাতা হতে পারে না। উত্তম দাতা হওয়ার জন্য বিশেষ কিছু গুণাবলী থাকা অত্যাবশ্যকীয়। এ
গুলো হলো নিম্নরূপ :
১. দান ও দানফল প্রাপ্তিতে প্রগাঢ় থাকা।
২. দানীয় বস্তু এবং গ্রহীতা কাউকে অবহেলা করা যাবে না।
৩. নিজ হস্তে দান দেওয়া বাঞ্চনীয়।
৪. অসময়ে দান না করে যথাসময়ে উপযুক্ত গ্রহীতাকে দান দিতে হবে।
৫. দান দেওয়ার সময় কৃপণতা ত্যাগ করতে হবে।
৬. দান দেওয়ার সময় চিত্তের প্রসন্নতা থাকতে হবে।
৭. দান দেওরার সময় নিজেকে উত্তম দাতা বিবেচনা করা যাবে না।
৮. দান দেওয়ারর সময় দান গ্রহীতাকে অধম এমন কল্পনা করা যাবে না।
দাতার প্রকারভেদ
বৌদ্ধধর্ম মতে, প্রকৃত দাতা হওয়া সহজ ব্যাপার নয়। প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় মানুষ না কিছু দান করে। এ দান দেওয়ার
চরিত্রকে বিচার করে দাতাকে তিন শ্রেণীতে বিভাজন করা হয়েছে। যেমন : ক. দানদাস, খ. দানসহায় এবং গ. দানপতি।
ক. দানদাস : যে দাতা নিজে যেরূপ খাবার গ্রহণ করে সেরূপ খাবার দান না দিয়ে তার চেয়ে আরো নিম্নমানের খাবার
পরিবেশন কিংবা দান করেন তিনিই দানদাস হিসেবে বিবেচিত।
খ. দানসহায় : যে দাতা নিজে যে রকম খাবার গ্রহণ করে অন্যদেরকে একই রকম খাদ্যভোজ্য এবং পানীয় দ্বারা পরিবেশন
কিংবা দান করেন তাঁকে বলা হয় দানসহায়।
গ. দানপতি : যিনি নিজে যে রকমের খাবার গ্রহণ করেন অথচ দান দেওয়ার সময় তার চেয়ে আরো উন্নত এবং
উৎকৃষ্টমানের খাবার পরিবেশন কিংবা দান দিয়ে থাকেন তিনিই দানপতি বলে পরিচিতি লাভ করে।
বৌদ্ধধর্মে দানকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দান করার পূর্বে মনের পবিত্রতা সাধন দরকার। আমরা ত্যাগ করতে পারি
না বলেই আমাদের দুঃখের অন্ত নেই। এজন্য দৈনন্দিন জীবনে আমাদের প্রত্যেককে যৎসামান্য হলেও ত্যাগের অভ্যাস
করা উচিত। প্রতিদিন সামান্য সামান্য ত্যাগের মাধ্যমে মহান কিছু ত্যাগের চেতনা অন্তরে জাগ্রত হয়। মহাদানের চেতনা বস্তুদান থেকেই শুরু করা বাঞ্চনীয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন: ১৫.৩
এক কথায় উত্তর দিন
১. দান-এর অর্থ কী?
২. দান করার সময় কী ত্যাগ করতে হয়?
৩. দানীয় সামগ্রীসমূহ কী কী?
৪. দান করার মধ্য দিয়ে মানুষ কিসের অধিকারী হয়?
৫. প্রকৃত দাতা কারা?
৬. দাতাকে কয় শ্রেণীতে ভাগ করা যায়?
৭. উত্তম দান কী?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. দান কাকে বলে?
২. দানীয় সামগ্রীসমূহ কী কী লিখুন?
৩. প্রকৃত দাতা বলতে কী বোঝেন?
৪. চিত্তসম্পত্তি কাকে বলে?
৫. বস্তুসম্পত্তি কাকে বলে?
৬. দানদাস কাকে বলে?
৭. দানসহায় কাকে বলে?
৮. দানপতি কাকে বলে?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. দান বলতে কী বোঝেন? দানের গুরুত্ব সম্পর্কে লিখুন।
২. প্রকৃত দাতার সংজ্ঞা প্রদান করে দানের প্রকাভেদ সম্বন্ধে যা জানেন লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]