ব্রহ্মবিহারের পরিচয় ব্রহ্মবিহারের বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখুন।

ব্রহ্মবিহারের পরিচয়
লোভ, দ্বেষ, মোহ, সন্দেহ, ঈর্ষা প্রভৃতি ঘৃণ্যতম চিত্তবৃত্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে বুদ্ধ চারটি মহৎ গুণাবলী উল্লেখ করছেন।
এগুলো চারটি ধারায় প্রতফলিত হয়। যথা : ক. মৈত্রী, খ. করুণা গ. মুদিতা, এবং ঘ. উপেক্ষা। সমন্বিতভাবে এগুলোকে
ব্রহ্মবিহার বলে অভিহিত করা হয়। ব্রহ্ম বা নৈতিকতা অর্থে উৎকৃষ্ট অবস্থা-এ অবস্থান করাই হলো ‘ব্রহ্মবিহার’।

ব্রহ্মবিহারের শাব্দিক অর্থ
‘ব্রহ্মবিহার’-এর অর্থ উত্তম এবং শ্রেষ্ঠ। ‘ব্রহ্মবিহার’ বলতে সাত্তি¡করূপে বসবাস করাকে বোঝায় । অন্যভাবে বলা যায়,
গুণগত আচার-আচারণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করে মুখে বসবাস করা এবং সর্বজীবের প্রতি অপ্রমেয় আন্তরিক
সুখানুভূতি জাগ্রত করা।
ব্রহ্মবিহারের স্বরূপ ও প্রকৃতি
ক. মৈত্রী : মৈত্রীর প্রকৃত প্রতিশব্দ হলো শুভেচ্ছা, হিতাকাক্সক্ষা, সৌহার্দ্য, পরোপকারিতা, হিতচিন্তা ইত্যাদি গুণবাচক শব্দ।
মৈত্রীর প্রত্যক্ষ প্রতিশব্দ হলো অশুভ চিন্তা-চেতনা এবং ক্রোধ। অন্যভাবে বলা যায়, মৈত্রী হলো মিত্রতা বন্ধুত্ব যেখানে
প্রেম বা ভালবাসার স্পর্শ থাকে, নির্মল প্রেম থাকে। এ মৈত্রীর মাধ্যমে হিংসা, বিদ্বেষ ও শত্রুতাকে জয় করা যায়। এখানে
সর্বপ্রাণীর প্রতি মমতায় চিত্ত জাগ্রত রাখাই হলো মৈত্রী। মৈত্রীর অনুসারী হলে লোভ, দ্বেষ, মোহ, ক্রোধ, সর্বোপরি অহংবোধ
সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করতে হবে। সকল প্রকার প্রাণীকে নিজের মতো দেখতে হবে। এখানে সুত্তনিপাতর অর্ন্তগত মেত্তাসুত্ত বা
মৈত্রী সূত্রে মৈত্রীভাবের প্রায়োগিক ব্যবহার সর্ম্পকে উলি খিত হয়েছে : -
মাতা যথা নিযং পুত্তং, আযুসা একপুত্তমনুরক্খে
এবম্পি সব্বভূতেসু, মানসং ভাবযে অপরিমাণং।
অর্থাৎ মাতা যেমন তার একমাত্র পুত্রকে নিজের জীবন দিয়ে রক্ষা করেন, তেমনি সকল প্রাণির প্রতি অপরিমেয় মৈত্রীভাব
পোষণ করবেন। এখানে মাতার সন্তানের প্রতি আচরণের সাথে ভাবনা প্রণোদিত মানুষের আচরণের তুলনা করেছেন।
মায়ের নিজের কোন স্বার্থ নেই। সন্তানের মঙ্গলও কল্যাণ কামনায় তিনি নিবেদিত প্রাণ। এখানে সন্তানের সুখেই তাঁর সুখ।
এরূপ সকলের প্রতি সমদৃষ্টি প্রদানের কথা এখানে উলি খিত হয়েছে। -
নিঃস্বার্থ পরোপকারই হলো মৈত্রীর লক্ষণ। মিত্রতা (দয়ালু মনোভাব) হলো মৈত্রীর স্বভাব। মৈত্রী সবাইকে স্বার্থহীন, ধৈর্যশীল
এবং ক্ষমাশীল হবার শিক্ষা দেয়। মনকে সকল সংকীর্ণতার উর্দ্ধে রাখতে সহায়তা করে। যে বা যারা মৈত্রীর অনুশীলন করে
তারা এগার প্রকার আনিশংস বা ফল লাভ করে।
১. সুখে নিদ্রা যায়, ২. সুখে জাগ্রত হয়, ৩. কোনোরূপ পাপময় স্বপ্ন দেখে না, ৪. মানুষের সুপ্রিয় হয়, ৫.
অমনুষ্যদেরও প্রিয় হয়, ৬. দেবতারা সবসময় তাকে রক্ষা করে, ৭. শরীরে অগ্নি, বিষ বা অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে
পারে না, ৮. চিত্ত সমাধিস্থ হয়, ৯. মুখবর্ণ প্রসন্ন হয়, ১০. সজ্ঞানে মৃত্যু বরণ করে, ১১. মৃত্যুর পর উর্দ্ধলোক লাভ করে।
পৃথিবীর সকল প্রাণীর প্রতি সীমাহীন ভালাবাসাই হলো মৈত্রী যা দেশ-কাল বা জাতি’র বাধা অতিক্রম করে এক বন্ধুত্বপূর্ণ
বাতাবরণ সৃষ্টি করে। এটা কোনো আসক্তিময় ভালোবাসা বা প্রেম নয়। এ হলো সর্বজীবের প্রতি অপরিসীম দ্বিধাহীন
ভালোবাসা। একথা বলা যেমন সহজ কর্মে বান্তবায়ন খুবই দুঃসাধ্য। সব কিছুর উর্দ্ধে উঠে সবার মঙ্গল কামনা করাই হলো
মৈত্রী। ধর্মপদ নামক গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে ; হিংসার দ্বারা হিংসা ধ্বংস হয় না। একমাত্র মৈত্রীর দ্বারাই বিদ্বেষ-এর অবসান
হয়।
খ. করুণা : ব্রহ্মবিহারে চিত্তমিুক্তির অন্যতম অঙ্গ হিসেবে করুণাকে দেখানা হয়েছে। অন্যের দুঃখ দেখে মনে দুঃখ উৎপন্ন হয়
এবং তা দূর করার অভিপ্রায় জাগে তার নাম করুণা। অন্যভাবে বলা যায়, পীড়িত সন্তানের প্রতি মাতার যেরূপ স্নেহ,
প্রেম, মায়া-মমতা সেরূপ পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর প্রতি দয়া, কৃপা ও সহানুভূতিবশত চিরশ্বাশত অনুকম্পা প্রর্দশন করাই হলো
করুণা। করুণার প্রত্যক্ষ শত্রু হলো নীতি বিবর্জিত হিংসা এবং পরোক্ষ শত্রু হলো দুর্মনতা বা পরশ্রীকাতরতা। করুণার
বৈশিষ্ট্য হলো অপরের দুঃখ-দুর্দশা নিবারণ করার ঐকান্তিক ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ।
নিষ্ঠুরতা প্রত্যাখান বা প্রত্যাহার করা হলো করুণার স্বভাব। দুঃখ বিমোচন বা অপসারণ করার ইচ্ছা-ই করুণার মূল লক্ষণ।
করুণার দুটি দিক। একটি অনুভূতি প্রবণতা বা আন্তরিকবোধ এবং অন্যটি হলো দুর্গতের দুর্দশা মোচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এখানে একটি চেতনাভিত্তিক এবং অপরটি কর্মভিত্তিক।
গ. মুদিতা : এটি হলো তৃতীয় মহৎ মানবিক গুণ। অপরের সুখ-শান্তি সমৃদ্ধিতে সুখ-প্রশংসায় আনন্দ, যশ-ঐশ্বর্যে মনে
প্রীতিবোধ উৎপন্ন করার নামই হলো মুদিতা। এখানে মুদিতার শিক্ষা হলো সবাই যেন সুখে শান্তিতে বসবাস করে। কেউ যেন অসুখী না হয়।
পরের সুখ সৌভাগ্যের অনুমোদনই হলো মুদিতার লক্ষণ। মুদিতা শুধু সহানুভূতি নয়, এটাকে প্রশংসাসূচক আনন্দও বলা
হয়। ঈর্র্ষাভাব ধ্বংস হলেই মুদিতার জন্ম হয়। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের জয়ে আনন্দ প্রকাশ করা স্বাভাবিক এবং
অনেক সহজ। কিন্তু অপছন্দ ব্যক্তির সাফল্যে আনন্দ প্রকাশ করা কিংবা সেই ব্যক্তিকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করা আরো কঠিন।
কিন্তু মুদিতা ভাবনা সম্পন্ন ব্যক্তি এ কঠিন কাজ খুব সহজেই করতে পারেন। মুদিতা অনুশীলনের জন্য দরকার ব্যক্তিগত
প্রয়াস এবং প্রবল ইচ্ছাশক্তি। মুদিতা দ্বারা শত্র“তাভাব ধ্বংস হয়। মুদিতায় পরের সুখে সুখ এবং দুঃখে দুঃখ অনুরণিত হয়।
৪. উপেক্ষা : উপেক্ষা হলো চতুর্থ ও শেষ মানবিক গুণ যা কোনো ব্যক্তিকে উচ্চতম স্তরে উন্নীত করে। উপেক্ষা-এর
একার্থবোধক শব্দগুলো হলো মধ্যস্তভাব, সাম্য এবং সমচিত্ততা, ন্যায়সঙ্গতভাবে বিচার করা, সঠিক উপায়ে পর্যালোচনা
করা, অথবা নিরপেক্ষভাবে দেখা, পক্ষে কিংবা বিপক্ষে মোহগ্রস্থ না হওয়া প্রভৃতি। মৈত্রী, করুণা, মুদিতা এ তিন অবস্থা
অতিক্রম করে যখন মানুষ অনুদ্বিগ্নমনা এবং সুখে বিগত স্পৃহা হন এবং সদাশান্ত ভাবে অবস্থান করে, তখন সেই অবস্থাকে
বলা হয় উপেক্ষা। নিরপেক্ষ ভাব বা নিরপেক্ষতা-এর প্রধান লক্ষণ। এ নিরপেক্ষতা হলো আপন সাধনা ও চর্চার কারণে
অর্জিত এক স্বভাব বৈশিষ্ট যা চিত্তকে পরহিতে কর্মে স্থিত রাখে নিন্দা-প্রশংসা, লাভ-ক্ষতি, যশ-অযশ, সুখ-দুঃখ ইত্যাদি
কোন বিষযে আর্কষণ ও চঞ্চলতা হেতু চিত্তকে বিচলিত করতে পারে না। উপেক্ষার প্রতিপক্ষ হলো লোভ ও হিংসা। এই লোভ ও হিংসা সম্পূর্নরূপে বিনাশ সাধন হলেই ‘উপেক্ষা’ বোধ হৃদয়ে জাগরিত হয়।
উপসংহার
ব্রহ্মবিহার-এর প্রায়োগিক ব্যবহার মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মৈত্রী, করুণা, মুদিতা, এবং উপেক্ষার নিরন্তর অনুশীলন
করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মানসিক অবস্থা উন্নততর নৈতিকতার পর্যায়ে উন্নীত হয়। এ চারটিকে বলা হয় অপ্রমেয়। এগুলোর সীমা এবং পরিসীমা নেই। সুতরাং মৈত্রী সকল জীব, করুণা সব দুঃখী, মুদিতা সকল উন্নতিশীল ব্যক্তি এবং উপেক্ষা ভালো-মন্দ, প্রিয়-অপ্রিয়, সুখ-দুঃখী
সকল জীবের প্রতি বিস্তৃত এবং প্রসারিত। যিনি নিজের স্বার্থ সম্বন্ধে উদাসীন থেকে মহান গুণাবলীর সাধনা করেন,
বিশ্ববাসীর প্রতি প্রীতিবহন করেন, তাদের মঙ্গল কামনা করেন, এ চারটি গুণাবলী কোনোভাবে স্থান-কাল-পাত্রভেদে সীমাবদ্ধ নয়। তাই এগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন: ১৫.৪
এক কথায় উত্তর দিন
১. ব্রহ্মবিহার কী ?
২. ব্রহ্মবিহারের চারটি ধারা কী কী?
৩. ব্রহ্মবিহারের শব্দগত অর্থ কী?
৩. মৈত্রী দ্বারা কাকে জয় করা যায়?
৪. মৈত্রী শব্দের অর্থ কী? ?
৫. করুণা কী?
৬. মুদিতা কী?
৭. উপেক্ষা কী?
৮. মৈত্রীর অনুশীলনে কতটি আনিশংস লাভ হয়?
৯. উপেক্ষার বিপরীত শব্দ কী?
সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন
১. ব্রহ্মবিহারের পরিচয় দিন।
২. মৈত্রীর অনুশীলনে অর্জিত আনিশংসসমূহ লিখুন।
৩. মৈত্রীর অনুশীলন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করুন।
৪. করুণা এবং মুদিতা সম্পর্কে আলোচনা লিপিবদ্ধ করুন।
৫. উপেক্ষা সম্পর্কে ধারণা দিন।
রচনামূল প্রশ্ন
১. ব্রহ্মবিহারের পরিচয় বিস্তারিতভাবে লিখুন।
২. ব্রহ্মবিহারের বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]