গৃহীনীতির পরিচয়
বুদ্ধ ছিলেন সর্বমানবের কল্যাণের প্রতীক। তাঁর মতে মানবজীবন পরিপূর্ণ হয় নৈতিক গুণাবলী এবং তার পরিশুদ্ধতার
মাধ্যমে। তার জন্য প্রয়োজন মানুষের সাধনা যেখানে সত- সুন্দর জ্ঞান এবং পান্ডিত্য থাকেবে। এগুলো ছাড়া মানুষ কখনো
বড় স্বমহিমায় নিজেকে বিকশিত করতে পারে না। আদর্শ, সমৃদ্ধশালী ও নৈতিক জীবনগঠনে বুদ্ধ তাঁর উপদেশে বিভিন্নভাবে
নীতির কথা বলেছেন। এগুলো মানুষকে ইহজন্ম এবং পরজন্মে সুখ-সমৃদ্ধি সর্বোপরি শান্তি আনয়নে সহায়তা করে।
গৃহীর সংজ্ঞা
গৃহে বা আগারে স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, মাতা-পিতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন-পরিজন নিয়ে বসবাস করে তাদের গৃহী বলে
অভিহিত করা হয়। অন্যভাবে বললে বলা যায়, যারা সংসারে আবদ্ধ হয়ে জীবনযাপন করেন তাদেরকে গৃহী বলা হয়।
গৃহীরা সচরাচর বিভিন্ন রকম পেশায় নিয়োজিত থাকে। পেশাগুলো হলো : নানাবিধ চাকুরি, ব্যবস্যা-বাণিজ্য, কৃষিকাজ
ইত্যাদি ।
গৃহীর দায়িত্ব-কর্তব্য
গৃহীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সর্ম্পকে বুদ্ধের সুন্দর নীতিকথা রয়েছে। এগুলো হলো যথাক্রমে Ñ উৎসাহ, ধন সংরক্ষণ, সৎ ব্যক্তির
সান্নিধ্য লাভ, শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন, শ্রদ্ধাগুণ, শীলগুণ প্রভৃতি।
উৎসাহ : জীবন রক্ষার জন্য যারা অর্পিত কর্মগুলো নিজের শ্রম, সততা, দক্ষতা, জ্ঞান, একাগ্রচিত্ততায় ও কৌশলগতভাবে
সুসম্পাদন করে তাকে বলা হয় গৃহী জীবনে উৎসাহ। অর্থাৎ কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ থাকাই হলো উৎসাহ।
ধন সংরক্ষণ : সৎ উপায়ে এবং কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত ধন সম্পদ যেন নষ্ট না হয় সেই দিকে নজর কিংবা লক্ষ্য রাখা
অত্যাবশ্যকীয়। এ ধন-সম্পদের সংরক্ষণ নিয়ে যারা চিন্তা করেন কিংবা যতœবান হন তারাই উত্তম ধন সংরক্ষক। তার
কখনো কোনোরকম আর্থিক সংকটের সন্মুখীন হন না। কোনো রকম দুঃখ-দুর্দশাকে মোকাবেলা করতে হয় না। তাদের ধন
সম্পদ নষ্ট হয় না।
সৎ ব্যক্তির সান্নিধ্য লাভ : সৎ ব্যক্তির সান্নিধ্য লাভ সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সৎ লোকের সান্নিধ্যে জীবন সুন্দর হয়, মহান
গুণাবলী অর্জিত হয়, পূণ্যবান, দানশীল সর্বোপরি জ্ঞানী এবং পন্ডিত হওয়া যায়। সৎ লাকের সংশ্রবে সবাই মানবিক চিন্তা-
চেতনা, ধ্যান-ধারণা এবং কল্যাণে নিয়োজিত হয়। বৌদ্ধধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গীতে তাকে বলা হয় সৎ লোকের সান্নিধ্য লাভ।
শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন : যে গৃহী সংসারে জীবনে আয় এবং ব্যয় বুঝে টাকা-পয়সা খরচ করেন এবং শৃঙ্খলাবদ্ধভাবেই জীব নির্বাহ
করেন তাকে বলা হয় শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন। এখানে উলে খ থাকে যে, শৃঙ্খলাব - দ্ধ জীবনে গৃহী মিতব্যয়ী হয়।
শ্রদ্ধাগুণ : বৌদ্ধধর্ম মতে, শ্রদ্ধাগুণ বলতে ত্রিরতেœর প্রতি অগাধ ভক্তি ও বিশ্বাস স্থাপনকে বোঝায়। ‘মিলিন্দ প্রশ্ন’ নামক গ্রন্থে
উলে খ রয়েছে -চিত্ত বা মনের প্রসন্নতা সাধন ও উৎসাহ উৎপাদনই হলো - শ্রদ্ধাগুণ। শ্রদ্ধাগুণের প্রভাবে মানুষ সকল প্রকার
দুঃখ নিবৃত্তি করে অমৃতময় নির্বাণ লাভ করা যায়।
শীলগুণ : গৃহীর জীবন সৎ-সুন্দর নৈতিকগুণে গুণান্বিত করে তোলা দরকার। এ ধরণের অনন্য সাধারণ জীবনগঠনের
লক্ষ্যে গৃহীকে শীলগুণ বা চারিত্রিক উৎকর্ষতা সাধন করতে হয়। বৌদ্ধধর্ম মতে শীলগুণ সম্পন্ন হতে হলে গৃহীকে প্রাণী হত্যা
থেকে বিরত থাকতে হবে ; চৌর্যবৃত্তি থেকে বিরত থাকতে হবে ; ব্যাভিচার থেকে বিরত থাকতে হবে ; মিথ্যা কথা ভাষণ
থেকে বিরত থাকতে হবে ; মাদক জাতীয় দ্রব্যাদি সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।
উত্তম গৃহীরা সদা সদ্জীবিকার মাধ্যমে জীবন যাপন করে। তারা নানারকম অহিতকর ও অকল্যাণকর ব্যবস্যা থেকে বিরত
থাকে। ব্যবস্যাগুলো হলো : অস্ত্র ব্যবস্যা, প্রাণী ব্যবসা, মাংস ব্যবসা, মাদকদ্রব্য ব্যবসা এবং বিষ ব্যবসা। তাছাড়াও তারা
নানারকম অমঙ্গলজনক কর্ম থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। এতে গৃহীর মান-সম্মান, যশ-খ্যাতি ক্রমশঃ বৃদ্ধি পায় ।
তাতে তাঁর উত্তম গৃহী জীবন লাভ হয়।
সপ্ত অপরিহানীয় ধর্ম
এখানে ‘সপ্ত’ বলতে সাতটিকে বোঝানো হয়েছে। ‘অপরিহানীয়’ বলতে অবর্জনীয়, ত্যাগ বা পরিহার না করা। আর ‘ধর্ম’
ধারণ করা। সুতরাং সপ্ত অপরিহানীয় ধর্ম বলতে বোঝায় অবর্জনীয় বা পরিত্যাগ না করা। সপ্ত অপরিহানীয় ধর্মগুলো হলো
যথাক্রমে :
১. যারা সভা সমিতিতে সবসময় একত্রিত হয় তাদের কখনো পরিহানি হয় না ।
২. একতাবদ্ধ হয়ে যারা সভা-সমিতিতে সম্মিলিত হয় এবং সভা শেষে একত্রে চলে যায়, কোনো প্রকার নতুন করণীয়
উপস্থিত হলে সবাই একত্রিত হয়ে সম্পাদন করলে সর্বদা তাদের উন্নতি হয়।
৩. যারা সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে নতুন কোনো প্রকার দুর্নীতি চালু করে না, পূর্বপ্রচলিত সুনীতিও উচ্ছেদ করে না
এবং প্রাচীন নীতিগুলো যথাযথভাবে পালন করে চলে তাদের সর্বদা শ্রীবৃদ্ধি হয়। তাদের কখনো পরিহানী হয় না ।
৪. যারা বয়োঃবৃদ্ধদের শ্রদ্ধা, গৌরব প্রর্দশন করে, সম্মান ও পূজা করে, এবং তাদের আদেশ নির্দেশ পালন করে তাদের
সবসময় উন্নতি হয়।
৫. যারা কুলবধু-কুলকুমারীদের জোরপূর্বক কোনো রকম অন্যায় আচরণ করে না, তাদের প্রতি মা এবং বোনের সমমর্যাদা
দেখায় তাদের উন্নতি হয়। পরিহানি হয় না কখনো।
৬. যারা চৈত্যেও যথাযথ সংস্কার সাধন করেন, রীতিমিত পূজা অর্চনা করেন এবং সেই চৈত্যগুলোর উদ্দেশ্যে
পূর্বপুরুষদের প্রদত্ত সম্পত্তি নিজেরা ভোগ না করে চৈত্য ও বিহার নির্মাণে ব্যয় করেন, তাদের সর্বদা উন্নতি হয়।
কখনো অবনতি হয় না।
৭. যারা প্রজ্ঞাবান এবং শীলবান বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি দান দিয়ে সেবা করেন, তাদের সকলপ্রকার সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করেন, অর্হৎগণের আগমনের ব্যবস্থা করেন এবং তাদের খোঁজ-খবর নেন, তাদের কখনো অবনতি হয়
না।
সপ্ত অপরিহানীয় ধর্ম বুদ্ধের অন্যতম মূল্যবান উপদেশ। এ রকম সর্বজনীন গুণগুলো অর্জনে মানবজীবন সমৃদ্ধ এবং সার্থক
হয়। গৃহীজীবনে এগুলোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাছাড়া এগুলোর পরিপালনে সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়জীবনেও উন্নতি ও
শ্রীবৃদ্ধি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার
উপসংহারে বলা যায়, সৎ লোকের সঙ্গে মেলামেশা ও সংশ্রবে জীবন সুন্দর ও মহৎ হয়। এতে পুণ্যবান দানশীল ও জ্ঞানী
হওয়া যায়। সর্বোপরি মানবজীবনের অপরিমেয় কল্যাণ সাধিত হয়। সুতরাং সকলের উচিত সজ্জন,বিদ্বান, পন্ডিত প্রভৃতি
সৎ লোকের সংশ্রবে থাকা।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন: ১৫.৫
এক কথায় উত্তর দিন
১. সংসারে যারা বসবাস করে তাদেরকে কী বলা হয়?
২. উৎসাহ কী?
৩. সৎ উপায়ে কী অর্জন করতে হয়?
৪. শ্রদ্ধাগুণ কী?
৫. পঞ্চব্যবসা কী?
৬. সভা-সমিতিতে কেন একত্রিত হয়ে যেতে হয়?
৭. বয়োঃবৃদ্ধদের কী করা উচিত?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. গৃহীর সংজ্ঞা প্রদান করুন?
২. গৃহীনীতি বলতে কী বোঝেন?
৩. উৎসাহ কাকে বলে?
৪. শীলগুণ বলতে কী বোঝেন?
৫. শ্রদ্ধা কাকে বলে?
৬. সপ্ত অপরিহানীয় নীতি কাকে বলে?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বৌদ্ধ গৃহীনীতি সম্পর্কে আপনার ধারণা লিপিবিদ্ধ করুন।
২. সপ্ত অপরিহানীয় নীতিগুলো বিস্তারিত লিখুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত