বিবাহ বলতে কি বুঝায় ? বিবাহের বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ বা ধরন আলোচনা করুন।


ভ‚মিকা
বিয়ে সমাজ জীবনের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যার ভিতর দিয়ে পরিবার গড়ে উঠে।
বিয়ের ভিতর দিয়ে নারী-পুরুষের দৈহিক চাহিদা পূরণ, মানসিক সাহচর্য এবং সামাজিক সম্পর্ক
স্থাপন সম্ভব হয়। বিয়ের ভিতর দিয়ে সমাজ পুনরুৎপাদিত হয়। সাম্প্রতিকালে উন্নত বিশ্বে
বিয়ে খুব বেশি ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে বিয়ের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। মানুষ এখন বিয়ের প্রতি আস্থা
হারিয়ে ফেলছে। বিবাহ-বিচ্ছেদ অবশ্য এখন সবখানেই বেড়ে যাচ্ছে।
বিবাহের সংজ্ঞা উবভরহরঃরড়হ ড়ভ গধৎৎধরমব
একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর মধ্যে সামাজিকভাবে অনুমোদিত এবং
কখনও কখনও আইনগত স্বীকৃতি অনুযায়ী মিলন ঘটলে তাকে বিবাহ বলে সংজ্ঞায়িত করা
যায়।
"গধৎৎরধমব পধহ নব ফবভরহবফ ধং ধ ংড়পরধষষু ধঢ়ঢ়ৎড়াবফ ধহফ ংড়সবঃরসবং ষবমধষষু ৎবপড়মহরুবফ ঁহরড়হ নবঃবিবহ ধহ ধফঁষঃ সধষব ধহফ ধহ ধফঁষঃ ভবসধষব."

সাধারণভাবে বিয়ে বলতে বোঝায় আচরণগতভাবে বা আইনগতভাবে স্বীকৃত একজন নারী ও
একজন পুরুষের ভিতর দৈহিক এবং সামাজিক সম্পর্ক যার সাথে বেশ কিছু দায়িত্ব এবং
কর্তব্য যুক্ত। এই দায়িত্ব এবং কর্তব্যের মধ্যে মূল বিষয় থাকে সন্তান জন্মদান এবং তাদের
লালন-পালন। বিয়েতে অনেক সময় অর্থনৈতিক দ্রব্যের আদান-প্রদান হয়ে থাকে। বিয়ে
সম্পাদিত হয় যাদুভিত্তিক, ধর্মীয়, সামাজিক বা সিভিল অনুষ্ঠান ও আড়ম্বরের ভিতর দিয়ে যা
স্বামী-স্ত্রীর সর্ম্পককে সমাজের দৃষ্টিতে বৈধ করে তোলে।
বিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সম্প্রদায়ের সাথে ছেলে-মেয়েদের
সম্পর্ককেও নির্ধারিত করে দেয়। সম্প্রদায় সন্তানদের বৈধ সন্তান হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান
করে।
যেহেতু বিয়ে হচ্ছে দু'টি গোষ্ঠীর মধ্যে মিত্রতা, তাই বিয়ের সাথে যুক্ত দ্রব্য এবং সেবার
আদান-প্রদান। বিয়ের সময় কনে পেতে পারে কন্যাপণ ইৎরফব চৎরপব বা ইৎরফব ডবধষঃয।
কন্যাপণ বা সন্তানপণ চৎড়মবহু-চৎরপব একসময় আফ্রিকায় প্রায় সর্বজনীন ছিল। পৃথিবীতে
প্রায় ৫৮ শতাংশ সমাজে এটি দেখা যায়। সন্তানপণ প্রধানত: গবাদিপশুর আকারে প্রদান করা
হত। সন্তানপনের তাৎপর্য হচ্ছে জননী হিসাবে নারীর গুরুত্ব রয়েছে। শ্রমশক্তি উৎপাদনের
ক্ষেত্রে নারীর মূল্য অপরিসীম।
কোন ব্যক্তি শ্রম দান করেও স্ত্রীলাভ করতে পারে। পৃথিবীর ১৪ শতাংশ সমাজে এ প্রথা
প্রচলিত রয়েছে।
বিয়ে দুটো সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ফলে এই সম্পর্ককে
প্রতিষ্ঠিত এবং শক্তিশালী করার জন্য অনেক সমাজে উপহার আদান-প্রদানের উপর গুরুত্ব
আরোপ করা হয়।
কনেপণের বিপরীত যৌতুক। বিয়ের জন্য পাত্র পক্ষকে বিভিন্ন দ্রব্য বা সেবা প্রদান করতে
হয়।
দক্ষিণ এশিয়ায় যৌতুক প্রথা অত্যন্ত শক্তিশালী। যৌতুকের জন্য বিয়ের আগে এবং পরে
কনের পরিবারের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করা হয় এবং স্ত্রীর উপর প্রচন্ড নির্যাতনও অনেক সময়
করা হয়।
কেমব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানী এডমন্ড লীচ ঊফসঁহফ খবধপয এক সময় প্রস্তাব
করেছিলেন বিয়ের দশটি কাজ রয়েছে। প্রত্যেক সমাজেই বিয়ে এর কিছু না কিছু কাজ করে
থাকে।
১. কোন নারীর স্বামীকে সন্তানের বৈধ পিতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা।
২. স্বামীকে স্ত্রীর উপর একচেটিয়া দৈহিক অধিকার প্রদান করা।
৩. স্ত্রীকে স্বামীর উপর একচেটিয়া দৈহিক অধিকার প্রদান করা।
৪. একজন পুরুষের সন্তানের বৈধ মাকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা।
৫. স্বামীকে স্ত্রীর গৃহস্থালী কাজের সুবিধা ভোগের আংশিক বা একচেটিয়া সুবিধা প্রদান করা।
৬. স্বামীর অর্থনৈতিক ক্ষমতার উপর স্ত্রীর আংশিক বা একচেটিয়া অধিকার স্থাপন।
৭. স্ত্রীর সম্পত্তির উপর স্বামীর অধিকার স্থাপন করা।
৮. স্ত্রীকে স্বামীর সম্পত্তির উপর অধিকার দেওয়া।

৯. সন্তানদের সুবিধার জন্য সম্পত্তির যৌথ ভান্ডার স্থাপন করা।
১০. স্বামী এবং স্ত্রীর ভাইদের মধ্যে সামাজিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।
বিয়ে সমাজে কতখানি গুরুত্ব বহন করে তা লীচের তালিকা থেকে বোঝা যায়। বিয়ের মাধ্যমে
পরিবার গড়ে উঠে, জ্ঞাতিসম্পর্ক গড়ে উঠে; সম্পত্তি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে হস্তান্তরিত হয়। ফলে
সব সমাজে বিয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিয়ের গুরুত্ব কমে আসছে এবং
অনেক ক্ষেত্রে লীচের বিশ্লেষণ দুর্বল হয়ে পড়ছে।
বর্হিবিবাহ ঊীড়মধসু
ইংরেজী ঊীড়মধসু শব্দটি এসেছে গ্রীক বী বাইরে এবং এধসড়ং বিয়ে থেকে। শব্দটি প্রথম
ব্যবহার করেছিলেন বৃটিশ নৃবিজ্ঞানী জন ম্যাকলিনান ঔড়যহ গপখবহহধহ (১৮২৭-১৮৮১)।
বর্হিবিবাহ বলতে বোঝায় এমন একটি সামাজিক নিয়ম যাতে করে কোন ব্যক্তি তার নিজের
গোষ্ঠীর মধ্যে বিয়ে করতে পারেনা। এই গোষ্ঠীর রূপ কি তা সমাজ থেকে সমাজে ভিন্ন হয়ে
থাকে। তা হতে পারে বিশেষ জ্ঞাতিগোষ্ঠী, গোত্র, জাতবর্ণ বা শ্রেণী। সামাজিকভাবে নির্দিষ্ট
গোষ্ঠীর মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয় অজাচার ওহপবংঃ ঞধনড়ড় ধারনার মাধ্যমে।
অর্ন্তবিবাহ ঊহফড়মধসু
গ্রীক বহফড় শব্দটির অর্থ ভিতর এবং এধসড়ং বিয়ে। এই শব্দটিও জন ম্যাকলিনান প্রথম
ব্যবহার করেছিলেন। অর্ন্তবিবাহের অর্থ হচ্ছে এমন সামাজিক নিয়ম যার ফলে ব্যক্তিকে বিশেষ
গোষ্ঠীর মধ্যে বিয়ে করতে হয়। অর্ন্তবিবাহের দু'টি উদাহরণ হচ্ছে ভারতের জাত-বর্ণ প্রথা
এবং মুসলমানদের মধ্যে চাচাত ভাইয়ের সাথে বিয়ে। হিন্দুদের মধ্যে গোত্রের বাইরে এবং
জাত-বর্ণের ভিতর বিয়ে করতে হয়। মুসলমানদের ভিতর সম্পত্তি পরিবারের মধ্যে রাখার
প্রয়োজনে আপন চাচাতো ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ের উপর গুরত্ব আরোপ করা হয়।
বিয়ের ধরন ঞুঢ়বং ড়ভ গধৎৎরধমব
এককবিবাহ গড়হড়মধসু
একজন নারী এবং একজন পুরুষের বিয়েকে একক বিবাহ গড়হড়মধসু বলা হয়। আধুনিক
সমাজে একক বিবাহ প্রচলিত। ইউরোপে একক বিবাহের চল দু'হাজার বছরের বেশি সময়
ধরে। যদিও অনেক সমাজে একাধিক বিয়ে সম্ভব। তবুও সেসব সমাজেও বাস্তবে একক
বিবাহই ঘটে থাকে।
সাম্প্রতিক পশ্চিমা সমাজে বিবাহ-বিচ্ছেদের জন্য একের পর এক বিয়েকে ঝবৎরধষ
গড়হড়মধসু বলা হচ্ছে।

বহুবিবাহ চড়ষুমধসু
বহুবিবাহ হচ্ছে এমন এক ধরনের বিয়ে যেখানে একজন নারী বা পুরুষ একই সাথে একের
অধিক বিয়ে করতে পারে। এর তিনটি রূপ রয়েছে ঃ বহুস্বামী বিবাহ, বহুস্ত্রী বিবাহ এবং
গোষ্ঠীবিবাহ। বহুস্বামী বিবাহ হচ্ছে এমন একটি প্রথা যার ফলে একজন নারী একাধিক
পুরুষকে বিয়ে করতে পারে। এটি একটি বিরল প্রথা। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে বহুস্ত্রী প্রথার
ব্যাপক প্রচলন রয়েছে।
বাংলাদেশে বহুবিবাহ প্রথার প্রচলন রয়েছে। তবে ১৯৬১ সালে ‘মুসলিম পারিবারিক আইন
অধ্যাদেশ' এটিকে সীমিত করে দিয়েছে। বাংলাদেশে সামান্য পরিবর্তিত আইনটির
অংশবিশেষ নিচে তুলে ধরা হল।
১৯৫৮ সনের ৭ই অক্টোবর তারিখের ঘোষণা অনুযায়ী এবং এতদ সম্পর্কে তাঁহাকে
সক্ষমকারী সকল ক্ষমতা প্রয়োগক্রমে রাষ্ট্রপতি নিæোক্ত অধ্যাদেশ প্রণয়ন জারী করিতে মর্জি
করিয়াছেন ঃ
এই অধ্যাদেশ ‘মুসলিম পরিবারিক আইন অধ্যাদেশ,১৯৬১' নামে অভিহিত হইবে।
ইহার প্রয়োগক্ষেত্র সমস্ত বাংলাদেশে এবং সমস্ত বাংলাদেশের মুসলিম, তাহারা যেখানেই
থাকুক না কেন, এর ক্ষেত্রে ইহা প্রযোজ্য হইবে।
ধারা ৬
বহুবিবাহ ঃ কোন ব্যক্তির বিবাহ বলবৎ থাকিলে সে সালিসী কাউন্সিলের লিখিত পূর্বানুমতি
ব্যতীত অন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারিবে না বা ঐরূপ অনুমতি ছাড়া অনুষ্ঠিত কোন
বিবাহ ১৯৭৪ সনের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রেশন) অধ্যাদেশ এর অধীনে
রেজিষ্ট্রিকৃত হইবে না।
কোন ব্যক্তি যদি সালিসী কাউন্সিল এর অনুমতি ব্যতিত অন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তবে
(ক) বর্তমান স্ত্রী অথবা স্ত্রীগণের তলবী ও স্থগিত দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা তৎক্ষনাৎ
পরিশোধ হইতে হইবে। উক্ত টাকা উক্তরূপে পরিশোধ না করা হইলে বকেয়া ভ‚মি
রাজস্বরূপে আদায়যোগ্য হইবে; (খ) অভিযোগে অপরাধী সাব্যস্ত হইলে [কোন স্বামী] এক
বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ডে অথবা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে বা উভয় প্রকার
দন্ডে দন্ডনীয় হইবে।
ধারা ৭
তালাক ঃ (১) কোন ব্যক্তি, তার স্ত্রীকে তালাক দিতে ইচ্ছা করিলে সে কোন প্রকারেই
হউক তালাক উচ্চারণ করিবার পরেই সে তালাক দিয়াছে বলিয়া চেয়ারম্যানকে লিখিত
নোটিশ মাধ্যমে জানাইবে ও স্ত্রীকেও উহার একটি কপি পাঠাইবে। (২) কোন ব্যক্তি ১নং
উপধারার বিধান লংঘন করিলে সে এক বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হইবে।
এস এস এইচ এল
ইউনিট-৪ পৃষ্ঠা-৮৬
(৩) ৫নং উপধারার বিধান অনুযায়ী অন্য কোনভাবে প্রকাশ্যে অথবা অপ্রকাশ্যে কোন
তালাক পূর্বাহ্নে প্রত্যাহার না করা হইলে ১নং উপধারা অনুযায়ী চেয়ারম্যানের কাছে প্রেরিত
নোটিশের তারিখ হইতে ৯০ দিন অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত তালাক কার্যকরী হইবে
না।
(৪) ১ নং উপধারা অনুযায়ী নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের ভিতর চেয়ারম্যান পক্ষদ্বয়ের মধ্যে
পুনর্মিলন স্থাপনের উদ্দেশ্যে একটি সালিসী কাউন্সিল গঠন করিবেন ও ঐ কাউন্সিল
পুনর্মিলন ঘটাইবার নিমিত্ত সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
(৬) এই ধারা অনুসারে কার্য্যকরী তালাক মাধ্যমে যে স্ত্রীর বিবাহ ভঙ্গ হইয়াছে,
তৃতীয়বারের মত কার্যকরী না হইলে তৃতীয় ব্যক্তির সহিত মধ্যবর্তীকালীন কোন বিবাহ
ব্যতীতই তাহার আগের স্বামীর সহিত পুনর্বিবাহে কোন প্রকার বাধা থাকিবে না।
ধারা ৮
তালাক ব্যতীত অন্যভাবে বিবাহ বিচ্ছেদঃ যেক্ষেত্রে তালাক দেওয়ার অধিকার যথাযথভাবে
স্ত্রীর নিকট অর্পণ করা হয় ও সে উক্ত অধিকার প্রয়োগ করিতে ইচ্ছুক হয় বা সেক্ষেত্রে
একটি বিবাহের পক্ষদ্বয়ের যে কোন একপক্ষ তালাক ব্যতীত অন্যভাবে কোন বিবাহ
বিচ্ছেদ ঘটাইতে ইচ্ছুক হয় সেই ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাপেক্ষে প্রয়োজন অনুযায়ী
৭ ধারার বিধানসমূহ প্রযোজ্য হইবে।
গোষ্ঠী বিবাহ : ঙীভড়ৎঃ উরপঃরড়হধৎু ড়ভ ঝড়পরড়ষড়মু অনুসারে পলিনেশিয়ার যৌন সম্পর্কের
ভ্রান্ত ধারণা থেকে হেনরী লুইস মরগান একে পরিবারের প্রথম রূপ হিসাবে চিহ্নিত
করেছিলেন। পরে ফ্রেডরিক এঙ্গেলস্ও ধারণাটি তাঁর পরিবার ও রাষ্ট্রের বিবর্তনের তত্তে¡
ব্যবহার করেছিলেন।
রোমান্টিক প্রেম এবং বিয়ে
প্রাক-শিল্প সমাজে বিয়ে হতো পরিবার বা বৃহত্তর জ্ঞাতি গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক বা সামাজিক
প্রয়োজন বা স্বার্থে। ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা অনিচ্ছা এখানে প্রাসঙ্গিক ছিল না। ইউরোপের সামন্ত
সমাজে সামন্তপ্রভু অনেক সময়ে তাঁর ভ‚মিদাসদের বিয়ে স্থির করতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা
রাখতেন। ইউরোপের বেশ কিছু দেশে কোন ব্যক্তির বিয়ে করতে সামন্তপ্রভুর অনুমতি নিতে
হতো।
ইউরোপে আধুনিক সমাজ গঠনের প্রক্রিয়ায় পরিবারের রূপের তেমন বড় পরিবর্তন না হলেও
পারিবারিক সম্পর্কের ভিতর গুণগত পরিবর্তন সৃষ্টি হল। পরিবার গঠনের সাথে যুক্ত হয়ে গেল
রোমান্টিক প্রেমের ধারণা।
আধুনিক যুগে পশ্চিমা বিয়ের ভিত্তি হচ্ছে রোমান্টিক প্রেম। বিয়ে নির্ভর করে একজন তরুণ এং
তরুণীর ব্যক্তিগত পছন্দের উপর এবং এক্ষেত্রে পরিবারের তেমন কোন ভ‚মিকা থাকে না। এই
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি পৃষ্ঠা-৮৭
ধরনের বিয়েতে তরুণ-তরুণীর মেলামেশা এবং প্রেম কোর্টশিপ পড়ঁৎঃংযরঢ় নামের সামাজিক
প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে পরিচালিত হয়। কোর্টশিপ বলতে সম্ভাব্য সঙ্গীদ্বয়ের মধ্যে পরিচয় ও
সংযুক্তির দ্বারা বিবাহ পর্যন্ত গড়ানোকে বোঝায়।
"ঈড়ঁৎঃংযরঢ় সবধহং ড়হ ধপয়ঁধরহঃধহপব ধহফ ধঃঃধপযসবহঃ নবঃবিবহ ঢ়ড়ঃবহঃরধষ সধঃবং যিরপয রং ষরশবষু ঃড় ষবধফ ঃড় সধৎৎরধমব"
ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রোমান্টিক প্রেম এবং কোর্টশিপ গত একশ বছরে বিকাশ লাভ
করেছে। প্রযুক্তির বিকাশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিস্তার, নারীদের শ্রমবাজারে যোগদান, মুদ্রণমাধ্যম
এবং গণমাধ্যমের প্রসার প্রভৃতি উপাদান এই প্রবণতার সৃষ্টি করেছে।
বর্তমানে বিয়ের এই পশ্চিমা রূপ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এবং আয়োজিত বিয়ের স্থান দখল
করে নিচ্ছে। উন্নয়শীল বিশ্বের অনেক দেশে বিয়ে পরিবারের মধ্যে অনেক সময় দ্বন্দ¡ তৈরী
করেছে।
বিবাহের প্রবণতা হ্রাস উবপষরহব ড়ভ গধৎৎরধমব
বৃটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ের উপর সাম্প্রতিক কালের গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে বিয়ের
প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। এর পেছনে দু'টি কারণ রয়েছে। বিয়েকে এখন আর অনিবার্য
মনে করা হচ্ছে না। বিয়ের বাইরে মানুষ ক্রমবর্ধমান হারে একত্রবাস করছে এবং এমনকি
সন্তান জন্মদান করছে। অবিবাহিত অবস্থায় একা থাকছে এমন মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।
দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে বিবাহ-বিচ্ছেদ আশংকাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। ১৯১১ সালে বৃটেনে
৮৫৯ টি বিবাহ-বিচ্ছেদের আবেদন করা হয়েছিল। ১৯৯১ সালে যে বিয়ে হয়েছিল তার অর্ধেক
পরিমাণ বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটেছিল। এক হিসাবে দেখা যায় বর্তমানের বিয়ের ৪১ শতাংশ ভেঙ্গে
যাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিবাহ বিচ্ছেদের হার নিচে তুলে ধরা হল ঃ
বছর প্রতি ১০০ বিয়েতে বিবাহ-বিচ্ছেদ প্রতি ১০০০ জন বিবাহিত
মহিলার (বয়স ১৫-৪৪ বছরের) বিচ্ছেদ
১৯২০ ১৩.৪ ১০.০
১৯৩০ ১৭.০ ১০.০
১৯৪০ ১৬.৯ ১৪.০
১৯৫০ ২৩.১ ১৭.০
১৯৬০ ২৫.৮ ১৬.০
১৯৭০ ৩২.৮ ২৬.০
১৯৮০ ৪৯.৭ ৪০.০
১৯৯৮ ৫১.৯ ৩৬.০

সারাংশ
সমাজ জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে বিয়ে যার মধ্য দিয়ে পরিবার গড়ে
উঠে এবং নারী-পুরুষের দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব হয়। একজন
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর মধ্যে সামাজিকভাবে অনুমোদিত এবং
কখনও কখনও আইনগত স্বীকৃতি অনুযায়ী মিলন ঘটলে তাকে বিবাহ বলে। বিয়ে
যেহেতু দু'টি গোষ্ঠীর মধ্যে মিত্রতা ফলে বিয়ের সাথে যুক্ত অর্থনৈতিক দ্রব্য ও সেবার
আদান-প্রদান। বিয়ের সময় কনে পেতে পারে কন্যাপণ বা সন্তানপণ। এর তাৎপর্য হচ্ছে
জননী হিসাবে নারীর গুরুত্ব রয়েছে। কনেপণের বিপরীত হচ্ছে যৌতুক যেখানে বিয়ের
জন্য পাত্রপক্ষকে বিভিন্ন দ্রব্য বা সেবা প্রদান করতে হয়। বিয়ের মাধ্যমে পরিবার ও
জ্ঞাতিসম্পর্ক গড়ে উঠে এবং সম্পত্তি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে স্থানান্তরিত হয় বলে সব
সমাজে এর গুরুত্ব অপরিসীম। তবে সাম্প্রতিকালে বিয়ের গুরুত্ব কমে আসছে।
বিবাহের রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ ও ধরন। বর্হিবিবাহ বলতে বোঝায় এমন একটি
সামাজিক নিয়ম যাতে করে কোন ব্যক্তি তার নিজের গোষ্ঠীর মধ্যে বিয়ে করতে পারেনা।
তবে এই গোষ্ঠীর রূপ সমাজ থেকে সমাজে ভিন্ন হয়ে থাকে। অপরপক্ষে অর্ন্তবিবাহ হচ্ছে
এমন একটি সামাজিক নিয়ম যার ফলে ব্যক্তিকে বিশেষ গোষ্ঠীর মধ্যে বিয়ে করতে হয়।
একক বিবাহ হচ্ছে একজন নারী ও একজন পুরুষের বিয়ে। আধুনিক সমাজে এই একক
বিবাহ প্রচলিত। আর বহুবিবাহ হচ্ছে এমন এক ধরনের বিয়ে যেখানে একজন নারী বা
পুরুষ একই সাথে একের অধিক বিয়ে করতে পারে। এর রয়েছে বহুস্বামী, বহুস্ত্রী ও
গোষ্ঠী বিবাহের ন্যায় তিনটি রূপ। বহুস্বামী বিবাহ হচ্ছে এমন একটি প্রথা যার ফলে
একজন নারী একাধিক পুরুষকে বিয়ে করতে পারে। তবে এটি বিরল একটি প্রথা।
বাংলাদেশে বহুস্ত্রী প্রথার প্রচলন রয়েছে তবে ১৯৬১ সালের ‘মুসলিম পারিবারিক আইন
অধ্যাদেশ' এটিকে সীমিত করে দিয়েছে।
প্রাক-শিল্প সমাজে বিয়ে হতো পরিবার বা বৃহত্তর জ্ঞাতিগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক বা সামাজিক
প্রয়োজনে বা স্বার্থে। এখানে ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রাসঙ্গিক ছিল না। কিন্তু আধুনিক
যুগে পশ্চিমা বিয়ের ভিত্তি হচ্ছে রোমান্টিক প্রেম। এক্ষেত্রে বিয়ে নির্ভর করে তরুণতরুণীর ব্যক্তিগত পছন্দের উপর। পরিবারের কোন ভ‚মিকা থাকে না। এই ধরনের
বিয়েতে তরুণ-তরুণীর মেলামেশা কোর্টশিপ নামক সামাজিক প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে
পরিচালিত হয়।
সাম্প্রতিক কালের গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে যে বৃটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ের প্রতি
মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। বিয়েকে এখন আর অনিবার্য বলে মনে করা হচ্ছে না।
বিয়ের বাইরেও মানুষ ক্রমবর্ধমান হারে একত্রবাস ও সন্তান জন্মদান করছে। তাছাড়া
বিবাহ-বিচ্ছেদ হারের দ্রুত বৃদ্ধিও বিয়ের প্রতি আস্থা কমে যাবার আরেকটি কারণ।

নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. অর্ন্তবিবাহের উদাহরণ নিচের কোনটি ?
ক. ভারতে জাত-বর্ণ প্রথা
খ. মুসলমানদের মধ্যে চাচাত ভাইয়ের সাথে বিয়ে
গ. ক ও খ উভয়ই
ঘ. উপরের কোনটিই নয়
২. কন্যাপণ ও সন্তানপণ পৃথিবীর কত শতাংশ সমাজে দেখা যায় ?
ক. ৫০ খ. ৫৫
গ. ৫৮ ঘ. ৬৩
৩. সন্তানপণ কে পেয়ে থাকে ?
ক. পুরুষ খ. নারী
গ. উভয়ই ঘ. বাবা
৪. যৌতুক প্রথা অত্যন্ত শক্তিশালী কোথায় ?
ক. দক্ষিণ এশিয়া খ. উত্তর-পূর্ব ইউরোপ
গ. দক্ষিণ আমেরিকা ঘ. মধ্য-প্রাচ্য
৫. বাংলাদেশে ‘মুসলিম পরিবারিক আইন অধ্যাদেশ' কত সালে বহুবিবাহ প্রথাকে
সীমিত করে দিয়েছে?
ক. ১৯৫১ খ. ১৯৬১
গ. ১৯৭২ ঘ. ১৯৭৫
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. সাম্প্রতিককালে উন্নত বিশ্বে বিয়ের প্রবণতা হ্রাসের কারণ কি ?
২. বর্হিবিবাহ বলতে কি বোঝায় ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বিবাহ বলতে কি বুঝায় ? বিবাহের বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ বা ধরন আলোচনা করুন।
২. বিবাহের শ্রেণীবিভাগ ও ধরনগুলো কি কি ? উদাহরণসহ আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]