পারমী সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করু দশবিধ পারমির আলোচনা কর

বৌদ্ধধর্মের বিবিধতত্তে¡র মধ্যে পারমি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সেই নিরিখে পারমিসমূহ বা পারমি প্রক্রিয়াকে একটি উন্নত
নৈতিকজীবন প্রক্রিয়াও বলা চলে। গৌতম বুদ্ধ সর্বপ্রাণির মঙ্গল এবং কল্যাণের জন্য পারমিসমূহ পূর্ণ করে সম্যক সম্বুদ্ধ
হয়েছেন। এটি জ্ঞান এবং কর্মের সুসংবদ্ধ ও সমন্বিত ধারা। মন এবং কায় সংযোগে ব্রত বা প্রত্যয়ের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। এ পারমি চর্চা একটি সর্বজনীন প্রক্রিয়া।
পারমির অর্থ
‘পারমি’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ যা অতিক্রম করে, বা অপেক্ষাকৃত অধিকতর, অগ্রবর্তী বা উৎকৃষ্ট, উর্দ্ধে অথবা নৈতিক পূর্ণতা
করেছে, অর্থাৎ পারং + ই। ‘যা কোন ব্যক্তিকে অন্য পারে বা তীরে যেতে সহায়তা করে’। অন্যভাবে বলা যায়, বোধি বা
‘জ্ঞান’ লাভে যা সহায়তা করে। পরম সম্বোধি বা বুদ্ধত্বজ্ঞান লাভের জন্য পারমি সাধনা অপরিহার্য।
দশ পারমি
বুদ্ধত্ব অর্জনের অভিলাষী বোধিসত্ত¡গণকে দশটি নৈতিক গুণাবলী অনুশীলন করতে হয়। এগুলো পালিভাষায় দশ পারমী বলা
হয়। নিচে দশ পারমির সংক্ষিত পরিচয় প্রদান করা হলো :
১. দান পারমী : দান হলো প্রথম পারমী। প্রকৃত অভাবগ্রস্থকে কোন বস্তু দেওয়াকে দান বলা যেতে পারে। তবে এই
দান দেওয়ার ব্যাপারে বিশেষ সর্তক থাকা বাঞ্চনীয়। উপযুক্ত ক্ষেত্র ভিন্ন দান দেওয়া বিধেয় নয়। সর্বস্ব ত্যাগের মহান
ব্রতই হলো দান পারমী। নিজের ধন-সম্পত্তি, পুত্র-কন্যা-স্ত্রী এবং নিজের জীবন পর্যন্ত দান করার অভিপ্রায় দান পারমির অর্ন্তগত।
২. শীল পারমী : শীলপালন বোধিসত্তে¡র এক অতি কর্তব্য কর্ম। গৃহীজীবনেও শীল বা নৈতিক বিধান মেনে চলা প্রয়োজন
সমাজিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যই। তাই বলা যায়, শীল পারমী নৈতিক দিক দিয়ে, আত্মবলে বলীয়ান কিংবা নীতিবান
হওয়ার এক অভিনব পদ্ধতি বিশেষ। অন্যায় ও অসত্য ভাষণ এবং এ রকম অন্যান্য বিষয় সম্পূর্ণরূপে বর্জনই হলো শীল পারমী।
৩. নৈস্ক্রম্য পারমী : কামাচারে অর্থাৎ অবৈধ যৌন কামাচারে নীরব কিংবা বিরত থাকা। এমন কি সংসার ত্যাগ করে
জাগতিক জীবন পরিহার করার ব্রতই হলো নৈস্ক্রম্য পারমী। এটি আধ্যাত্মিক উন্নতির প্রধান সহায়ক।
৪. প্রজ্ঞা পারমী : প্রজ্ঞার সাধনা বা জ্ঞান অর্জনের প্রচেষ্টাই হলো প্রজ্ঞা পারমী। লোকহিতকর জ্ঞান অর্জন করে এর
মাধ্যমে জনকল্যাণ বিধান করে প্রজ্ঞার পরিচয় প্রদান করতে হয়। সমগ্র সৃষ্টি অনিত্য, ক্ষণস্থায়ী, দুঃখপূর্ণ এবং অনাত্ম
বা অহং ভাবশূন্য বলে যিনি প্রজ্ঞার দৃষ্টিতে দর্শন করেন তিনিই কেবল সংসারের প্রতি নির্বেদযুক্ত হয়। এই প্রজ্ঞা তিন
প্রকার শ্র“তময় প্রজ্ঞা, চিন্তাময় প্রজ্ঞা এবং ভাবনাময় প্রজ্ঞা।
৫. বীর্য পারমী : ‘বীর্য’ এখানে শারীরিক শক্তিকে বোঝায় না। ‘বীর্য’ শব্দের বিশেষ অর্থ হলো মানসিক শক্তি বা চারিত্রিক
গুণাবলী। সকল প্রকার জীবের সুখ ও মহাকল্যাণের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করার নামই বীর্য পারমী।
৬. ক্ষান্তি পারমী : সকল প্রকার পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করে ক্ষমাশীল হবার নামই ক্ষান্তি পারমী। সহিষ্ণুতা এবং ধৈর্য্য
অনুশীলন করে ক্ষান্তি পারমী পূর্ণ করে সকলের মধ্যে সুন্দর ও সৎ গুণাবলী প্রতিষ্ঠা করা যায়।
৭. সত্য পারমী : প্রতিজ্ঞা রক্ষা করাকে ‘সত্য পারমী’ বলা হয়েছে। জীবনের বিনিময়ে হলেও সত্য কথা বলার অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার নামই সত্য পারমী।
৮. অধিষ্ঠান পারমী : অধিষ্টান শব্দের অর্থ হলো দৃঢ় সংঙ্কল্প, দৃঢ় চরিত্র, বা দৃঢ় সিদ্ধান্ত। বস্তুত: দৃঢ় সঙ্কল্প ব্যতীত অন্য
পারমীসমূহ পূর্ণ হবার নয়। শোক, দুঃখ, ব্যাধি, বিপত্তি সুদৃঢ় সঙ্কল্পকে টলাতে পারে না কখনো। সৎ সঙ্কল্প গ্রহণ করে
তা বাস্তবায়নে জীবনপণ করে অঙ্গীকারবদ্ধ হবার নামই অধিষ্ঠার পারমী।
৯. মৈত্রী পারমী : মৈত্রীর বৌদ্ধধর্মে এক বিশেষ স্থান করে আছে। সকল জীব সত্ত¡ার প্রতি অপরিমেয় মায়া-মমতা,
ভালবাসা, করুণা এবং মমত্ববোধ জাগ্রত রাখাই হলো মৈত্রী পারমী। পূর্বে এ সম্বন্ধে আলোচনা হয়েছে।
১০. উপেক্ষা পারমী : অভীপ্সা পূরণে আনন্দিত ও অপূরণে দুঃখিত না হয়ে চিত্তের সাম্যভাবে বজায় রাখার অনুশীলন রীতিকে উপেক্ষা পারমী বলা হয়।
পারমীর গুরুত্ব
উপর্যুক্ত দশটি আচরণীয় পারমী তিন পর্যায়ে সর্বমোট ত্রিশটি স্তরে পালিত হয়। এ তিন পর্যায় হলো স্বভাবগত পর্যাযে,
অঙ্গীকারবদ্ধ পর্যায়ে এবং চরম অঙ্গীকার বা পণবদ্ধ পর্যায়ে। এটি একটি অনুশীলন তত্ত¡ । এ তত্তে¡র গুরুত্ব অনুধাবন হয়
জীবনচর্যার মাধ্যমে। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মনের উৎকর্ষতা অর্জনের জন্য এ পারমিসমূহ অনুশীলনযোগ্য। সর্বজনীনভাবে এ
ধারা কিংবা প্রক্রিয়াকে বিচার করলে এটিকে একটি অনন্য জীবনধারা বা বিশুদ্ধজীবন চর্যাও বলা যায়। পারমিসমূহ চর্চার
মাধ্যমে মানুষের সাংসারিক, সামাজিক, রাষ্টীয় এবং সর্বোপরি ব্রহ্মচর্য জীবনেও চর্চা করলে এর প্রত্যক্ষফল লাভ করা সম্ভব।
সেগুলো হলো : ক. মহত্ব খ. নৈতিকতা গ. সহিষ্ণুতা ঘ. দৃঢ়তা (ঠরমড়ঁৎ), ঙ.
মনোযোগিতা , এবং পান্ডিত্য (ডরংফড়স) ইত্যাদি। মূলত এগুলো প্রকৃত অর্থে মানবীয় বৈশিষ্ট্যের অনন্য সম্পদ। সুতরাং সমাজজীবনে এ পারমিসমূহের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
উপসংহার
পারমী সাধনা ও সদ্ধর্ম আচার অত্যন্ত উপযোগী এবং কল্যাণময়ী। শান্তি, স¤প্রীতি ও বন্ধুত্ব কিংবা ভ্রাতৃত্ববোধের
উৎকর্ষতায় ব্যক্তি জীবনে পারমীর ভূমিকা অনন্য সাধারণ। একজন যথার্থভাবে পারমী পালনকারীর চেতনার মূল্যবোধ
সমাজে অন্যকে অনেকাংশে নৈতিকতায় উজ্জীবিত করে। পারমী সাধনার শুভ চিন্তার ফল বা অধিষ্ঠান-ব্রতের কৃতধারার ফল
কখনো বৃথা যায় না। এটি ইহকাল-পরকালে সর্বোপরি সর্বকালেই কল্যাণময়ী এবং সর্বত্রই মঙ্গলময়ী যা শুদ্ধতম জীবনাচারে অন্যতম এক অধ্যায়।
পাঠাত্তর মূল্যায়ন: ১৮.৭
এককথায় উত্তর দিন
১. পারমী অর্থ কী?
২. বুদ্ধ কী পূর্ণ করে সম্যক সম্বুদ্ধ হয়েছিল?
৩. পারমিসমূহ কী কী?
৪. দান পারমী কী?
৫. প্রজ্ঞা কত প্রকার ?
৬. ক্ষান্তি শব্দের অর্থ কী?
৭. অধিষ্ঠান শব্দের উত্তর কী ?
৮. সাম্যভাব বজায় রাখার অনুশীলকে কী বলা হয়?
সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন
১. পারমিসমূহের পচিয় দিন।
২. দশ পারমিসমূহ বিস্তারিত লিখুন।
৩. পারমির গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করুন।
৪. প্রজ্ঞা এবং বীর্য পারমির বিবরণ দিন।
৫. আধ্যাত্মিক উন্নতির প্রধান সহায়ক পারমী সম্পর্কে লিখুন?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. পারমী সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করুন।
২. দশবিধ পারমির আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]