সমাজবিজ্ঞানের বিকাশ কিভাবে ঘটেছে? আলোচনা করুন।


ভ‚মিকা
প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থায় আমাদের ব্যক্তিগত সমস্যাদি ও অভিজ্ঞতা এবং বসবাসের ঐতিহাসিক
সময়কালকে জানতে হলে আমাদের অবশ্যই সামাজিক সময়ে বিকশিত সমাজবিজ্ঞানের
উৎপত্তিকে চিহ্নিত করতে হবে। সমাজ নিয়ে মানুষের চিন্তা মানুষের সমাজের মতই প্রাচীন।
তবুও সমাজ চিন্তার কথা এলেই আমরা স্মরণ করি গ্রীক দার্শনিক প্লেটো, এ্যারিষ্টোটলের কথা।
তাঁরা ছিলেন মূলত: দার্শনিক। সমাজ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চিন্তা গুরুত্বপূর্ণ হলেও
সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভবে ইউরোপের সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর আলোকপ্রাপ্তি কাল
ঊহষরমযঃবহসবহঃ বিশেষ ভ‚মিকা রাখে।ভিকো এরড়াধহহর ইধঃঃরংঃধ ঠরপড় (১৬৮৮-১৭৪৪),
মঁতেস্কিয়্য ঈযধৎষবং ফব ঝবপড়হফধঃ ইধৎড়হ ফব ষধ ইৎবফব বঃ ফব গড়হঃবংয়ঁরবঁ (১৬৮৯-
১৭৫৫), ডেভিড হিউম উধারফ ঐঁসব(১৭১১-১৭৭৬), এ্যাডাম ফার্গুসন অফধস ঋবৎমঁংড়হ
(১৭২৩-১৮১৬) ও জন মিলার ঔড়যহ গরষষধৎ (১৭৩৫-১৮০১) সমাজবিজ্ঞানের বিকাশের সূচনা
করেন। এই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যান দু'জন ফরাসী চিন্তাবিদ স্যাঁ সিঁম ঝধরহঃ ঝরসড়হ
(১৭৬০-১৮২৫) এবং তকভিল অষবীরী ফব ঞড়পয়ঁবারষষব (১৮০৫-১৮৫৯)।
এ ক্ষেত্রে দু'টি বিপ্লব খুব গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছিল। ১৭৮৯ সালে সংঘটিত ফরাসী
বিপ্লব ঋৎবহপয জবাড়ষঁঃরড়হ ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে ইউরোপে পুরানো রাজনৈতিক
ব্যবস্থার অবসান সূচনা করেছিল। ফরাসী বিপ্লব জাতি-রাষ্ট্র গঠন ও গণতন্ত্রের বিকাশের
প্রতীক। কিন্তু এই বিপ্লব সমকালীন চিন্তাবিদদের মনে প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। শিল্প
বিপ্লব ওহফঁংঃৎরধষ জবাড়ষঁঃরড়হ (১৭৬০-১৮৫০) মানুষের জীবনে নিয়ে এল আমূল পরিবর্তন।
জীবন ও জীবিকার কেন্দ্রপট হয়ে পড়ল নগর ও শিল্প। শত শত বছর ধরে চলে আসা গ্রামীণ
জীবন ভেঙ্গে পড়ল। নগর জীবনে সৃষ্ট হল দারিদ্র্য এবং চূর্ণ সমাজ জীবন। উদ্বিগ্ন হলেন
চিন্তাবিদরা।

এই সামাজিক পটভ‚মিতেই সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব। যে চারজন চিন্তাবিদ সমাজবিজ্ঞানের
উদ্ভবের সাথে জড়িত তাঁরা সবাই আলোড়িত হয়েছিলেন এ দু'টি বিপ্লবের দ্বারা। এই চার জন
চিন্তাবিদ হলেন- অগ্যুস্ত্ কঁৎ, হাবার্ট স্পেনসর, এমিল দুরক্যাঁ [প্রচলিত কিছু বাংলা বইতে
নামটি এমিল ডুর্খীম হিসাবে উলে খ রয়েছে] ও ম্যাক্স ভেবার। -
অগ্যুস্ত্ কঁৎ (১৭৯৮-১৮৫৭)
ফরাসী চিন্তাবিদ অগ্যুস্ত্ কঁৎকে অঁমঁংঃব ঈড়সঃব সাধারণত: সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয়।
তিনিই প্রথম ‘সোসিওলজি' 'ঝড়পরড়ষড়মু' প্রত্যয়টি ব্যবহার করেন ১৮৩৮। সোসিওলজি শব্দটি
প্রথম ব্যবহারের তারিখ নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে। জর্জ রিটজার তাঁর সাম্প্রতিক গ্রন্থ
'ঝড়পরড়ষড়মরপধষ ঞযবড়ৎু' গ্রন্থে তারিখটি উল্লেখ করেছেন ১৮২২ সালে। তবে সর্বশেষ গবেষণা
থেকে জানা যায় এটি সম্ভবত প্রথম ব্যবহার হয়েছিল ১৮৩৮ সালে। তিনি সামাজিক
স্থিতিশীলতা ঝড়পরধষ ঝঃধঃরপং এবং সামাজিক গতিশীলতা ঝড়পরধষ উুহধসরপং নামে দু‘ভাগে
বিভক্ত করেন সমাজবিজ্ঞানকে। এ দু‘টো প্রত্যয় সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুকে একটি মৌলিক
শ্রেণীকরণ প্রদান করে। সামাজিক স্থিতিশীলতা পরিবার, অর্থনীতি, রাজনীতির মত বৃহত্তর
প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আলোচনা করে। সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে এ সকল প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক
সম্পর্কের অধ্যয়ন।
সামাজিক স্থিতিশীলতা যেখানে সমাজের বিভিন্ন অংশের পারস্পরিক সম্পর্ককে দেখে সেখানে
সামাজিক গতিশীলতা সমগ্র সমাজকে একক হিসাবে বর্ণনা করে এবং কিভাবে সমাজের
পরিবর্তনে এগুলোর উন্নয়ন ও পরিবর্তন ঘটে তা নির্দেশ করে।
কঁৎ সমাজ ও মানুষের বৃদ্ধিবৃত্তিক বিকাশকে দেখেছেন তিনটি স্তরে যা 'খধি ড়ভ ঞযৎবব
ঝঃধমবং' বা ‘এয়স্তরী সূত্র' নামে পরিচিত। স্তর তিনটি হচ্ছে: ধর্মতত্ত¡ীয় পর্যায় ঞযবড়ষড়মরপধষ
ঝঃধমব, পরাদার্শনিক পর্যায় গবঃধঢ়যুংরপধষ ঝঃধমব এবং দৃষ্টবাদী পর্যায় চড়ংরঃরাব ঝঃধমব।
কঁৎ মনে করতেন প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ন্যায় সমাজবিজ্ঞানকেও একইভাবে অধ্যয়ন করা যায়।
কঁৎ-এর বিজ্ঞানসম্মত ‘দৃষ্টবাদ' 'চড়ংরঃরারংস' সমাজবিজ্ঞানকে খাঁটি বিজ্ঞান হিসাবে চিহ্নিত
করেন।
হাবার্ট স্পেনসর (১৮২০-১৯০৩)
সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে ইংরেজ চিন্তাবিদ হাবার্ট স্পেনসর ঐবৎনবৎঃ ঝঢ়বহপবৎ একটি
উল্লেখযোগ্য নাম। কঁৎ-এর ন্যায় তিনি ও বিবর্তনবাদী চিন্তা থেকে সমাজকে বিশে ষণ -
করেছেন। একই সাথে তিনি ক্রিয়াবাদীও ছিলেন। তাঁর মতে সমাজের বিবর্তন হয়েছে অজৈব
ওহড়ৎমধহরপ থেকে জৈব ঙৎমধহরপ এবং তা থেকে অধি-জৈবিক ঝঁঢ়বৎ ঙৎমধহরপ স্তরে।
পরিবার, রাজনীতি, ধর্ম, সামাজিক নিয়ন্ত্রণ এবং শিল্প বা কর্ম ইত্যাদি হল সমাজবিজ্ঞানের
ক্ষেত্র। 'ঝড়পরধষ ঝঃধঃরপং' (১৮৫১), ঋরৎংঃ চৎরহপরঢ়ষবং (১৮৬২), ঞযব ঝঃঁফু ড়ভ ঝড়পরড়ষড়মু
(১৮৭৩) হল তাঁর প্রধান প্রধান গ্রন্থ।
এমিল দুরক্যাঁ (১৮৫৮-১৯১৭)
ফরাসী সমাজবিজ্ঞানী এমিল দুরক্যাঁ ঊসরষব উঁৎশযবরস সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম জনক। তিনি
বিভিন্ন গ্রন্থে সমাজবিজ্ঞানের তত্ত¡ ও তথ্য কিভাবে ব্যবহার ও সমন¦য় করা যায় তার ভিত্তি
নির্মাণ করেছেন।
কোঁত মনে করতেন
প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের
ন্যায়
সমাজবিজ্ঞানকেও
একইভাবে অধ্যয়ন
করা যায়।
সমাজবিজ্ঞানের মূল
বিষয়বস্তু হচ্ছে ব্যক্তি
ও সমাজের সম্পর্ক।
তাঁর মতে সমাজের
বিবর্তন হয়েছে
অজৈব ওহড়ৎমধহরপ
এবং তা থেকে অধি-
জৈবিক ঝঁঢ়বৎ
ঙৎমধহরপ স্তরে।

দুরক্যাঁ -এর মূল বক্তব্য হচ্ছে ব্যক্তি গোষ্ঠীচেতনা দ্বারা প্রভাবিত হয়। সুতরাং সমাজবিজ্ঞানের
মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক। ক্রিয়াবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি দৃষ্টিপাত
করেছিলেন সামাজিক সংহতি ও তার পরিবর্তনশীল রূপের উপর। তাঁর মতে গোষ্ঠীচৈতন্যএবং
গোষ্ঠীচৈতন্য দ্বারা প্রভাবিত সমস্ত প্রপঞ্চ হচ্ছে সামাজিক ঘটনা ঝড়পরধষ ঋধপঃং। সমাজবিজ্ঞানের
বিশ্লেষণ এবং তত্ত¡ নির্মিত হয় সামাজিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
ম্যাক্স ভেবার (১৮৬৪-১৯২০)
জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ভেবার গধী ডবনবৎ সমকালীন সমাজবিজ্ঞানের উপর সবচেয়ে
বেশি প্রভাব বিস্তার করেছেন। তিনি খ্যাতিমান হয়েছিলেন ধনতন্ত্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত তত্তে¡র
জন্য যা অন্যত্র আলোচিত হয়েছে। তিনি সমাজবিজ্ঞানকে একটি মূল্যবোধ-নিরপেক্ষ বিজ্ঞান
হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। সমাজবিজ্ঞানের পদ্ধতির জন্য প্রত্যয় নির্মাণের উপর
তিনি জোর দিয়েছিলেন। এ জন্য তিনি ব্যবহার করেছিলেন শুদ্ধ জাতিরূপের ওফবধষ ঞুঢ়ব
ধারণা। আদর্শ কৃপণ হচ্ছে সেই ব্যক্তি যার মধ্যে কৃপণের সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা বাস্তবে
কখনও দেখা যায় না। কিন্তু আদর্শ কৃপণের ধারণা আমাদের বিরাজমান কৃপণতাকে বুঝতে
সাহায্য করে। ম্যাক্স ভেবারের রাজনৈতিক সমাজতত্তে¡র ধারণা [অন্যত্র আলোচিত হয়েছে]
এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে।
সমাজবিজ্ঞানের শুরু দীর্ঘ হলেও তার বিকাশ ঘটেছে সাম্প্রতিক কালে। ১৯৫০ সালে ইংল্যান্ডে
মাত্র ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে ডিগ্রী প্রদান করা হত। এখন বৃটেনে ‘এ' লেভেল
পর্যায়ে সমাজবিজ্ঞান দ্বিতীয় জনপ্রিয় বিষয়। ১৯২০ এর দশক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে
সমাজবিজ্ঞানের বিকাশ কিছুটা দ্রুত গতিতে ঘটতে থাকলেও এর ব্যাপ্তি লক্ষ্য করা যায় ১৯৬০
এর দশকে। গত চল্লিশ বছরে সমাজবিজ্ঞানের জনপ্রিয়তা বিস্তৃত হয়েছে সারা বিশ্বে।
জন্মলগ্ন থেকেই সমাজবিজ্ঞানে ছিল নানা দৃষ্টিভঙ্গি বা ধারণা। এগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে ভিন্ন
ভিন্ন মতবাদ হিসাবে গড়ে ওঠে। সমাজবিজ্ঞানের তাত্তি¡ক মতবাদগুলোকে অনেক সময়
প্যারাডাইম চধৎধফরমস বলা হয়। সমাজবিজ্ঞানে এমন বেশ কয়েকটি প্যারাডাইম রয়েছে।
ক্রিয়াবাদ ঋঁহপঃরড়হধষরংস
ক্রিয়াবাদের প্রধান প্রবক্তা ছিলেন হাবার্ট স্পেনসর (১৮২০-১৯০৩) এবং এমিল দুরক্যাঁ
(১৮৫৮-১৯১৭)। স্পেনসর মনে করতেন সমাজ জীবদেহের মত। সমাজের অংশগুলো
সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য সমনি¦তভাবে কাজ করে। দুরক্যাঁ ও সামাজিক সংহতি কিভাবে
তৈরী হয় তা বিশ্লেষণ করেছিলেন। আধুনিক সমাজবিজ্ঞানে ক্রিয়াবাদ বা কাঠামোবাদীক্রিয়াবাদের ঝঃৎঁপঃঁৎধষ-ঋঁহপঃরড়হধষরংস ভাবনা নির্মাণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্যালকট পার্সনস্
ঞধষপড়ঃঃ চধৎংড়হং এবং রবার্ট মার্টন জড়নবৎঃ গবৎঃড়হ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন
করেছেন। ক্রিয়াবাদী সমাজবিজ্ঞানীরা দেখতে চান সমাজ কিভাবে টিকে থাকে বা সমাজে
নিয়ম কিভাবে সৃষ্টি হয়, সমাজ কিভাবে এক ভারসাম্য অবস্থা থেকে অন্য ভারসাম্যমূলক
অবস্থায় পরিবর্তিত হয়। এই প্যারাডাইমে দ্বন্দ¡ উপেক্ষা করা হয়। উপেক্ষা করা হয় সামাজিক
বিভাজনকে।
দ্বন্দ¡মূলক তত্ত¡ঈড়হভষরপঃ ঞযবড়ৎু
কার্ল মার্কস্ -এর চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত দ্বন্দ¡মূলক তত্তে¡ গুরুত্ব আরোপ করা হয় সামাজিক
অসমতা এবং সমাজে বিভিন্ন শ্রেণী ও গোষ্ঠী সম্পদের মালিকানা ও অধিকার নিয়ে যে দ্বন্দে¡
অবতীর্ণ হয় তার উপর। দ্বন্দ¡মূলক দৃষ্টিকোণে নানা তত্ত¡ বা মতবাদ রয়েছে। তবে এর সাধারণ
তিনি সমাজবিজ্ঞানকে
একটি মূল্যবোধ
নিরপেক্ষ বিজ্ঞান
হিসাবে প্রতিষ্ঠা
করতে চেয়েছিলেন।
সমাজবিজ্ঞানের
তাত্তি¡ক
মতবাদগুলিকে
অনেক সময়
প্যারাডাইম
চধৎধফরমস বলা
হয়।
ক্রিয়াবাদী
সমাজবিজ্ঞানিরা
দেখতে চান সমাজ
কিভাবে টিকে থাকে
বা সমাজে নিয়ম
কিভাবে সৃষ্টি হয়,
সমাজ কিবাবে এক
ভারসাম্য অবস্তা
থেকে অন্য
ভারসাম্যমূলক
অবস্থায় পরিবর্তিত
হয়।
দ্ব›দ্বমুলক তত্তে¡ গুরুত্ব
আরোপ করা হয়
সামাজিক অসমতা
এবং সমাজে বিভিন্ন
শ্রেণি ও গোষ্ঠী
সম্পদের মালিকানা
ও অধিকার নিয়ে যে
দ্ব›েদ্ব অবতীর্ণ হয়
তার উপর।

বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সমাজে দ্বন্দে¡র উপর গুরুত্ব আরোপ করা। দ্বন্দ¡মূলক তত্তে¡ আরো বোঝার চেষ্টা
করা হয়েছে কেন সমাজে বিপ্লব ঘটেনি। এই দৃষ্টিকোণ থেকে মনে করা হয় সমাজ টিকে থাকে
শক্তিমানের শক্তি প্রয়োগ ও ভাবাদর্শের চাপে। ক্ষমতা প্রতিবাদকে শমিত করে রাখে। আর
ভাবাদর্শ শোষণকে সহনীয় করে রাখে। ফলে শোষিত ও বঞ্চিত মানুষ সমাজ ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে
ফেলতে সব সময় উদ্যোগী হয় না।
প্রতীকি মিথস্ক্রিয়াবাদ ঝুসনড়ষরপ ওহঃবৎধপঃরড়হরংস
প্রতীকি মিথস্ক্রিয়াবাদ একটি মাইক্রো তাত্তি¡ক দৃষ্টিকোণ যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিংশ শতাব্দীর
প্রথম দিকে বিকাশ লাভ করেছিল। জর্জ হাবার্ট মিড এবড়ৎমব ঐবৎনবৎঃ গবধফ এর চিন্তার
ফলশ্রুতি এই দৃষ্টিকোণটি ব্যক্তির সৃজনশীলতা ও স্বাধীনতার উপর জোর দেয়। প্রতীকের
ব্যবহার মানুষকে অন্য প্রাণী থেকে আলাদা করে দিয়েছে এবং মানুষকে সমাজ জীবন নির্মাণ
করার হাতিয়ার দিয়েছে। সমাজ জীবনে আমরা প্রতীকের মাধ্যমে যোগাযোগ ও মিথস্ক্রিয়া
করি। এই মিথস্ক্রিয়া ও সামাজিকীরণের ফলে আমাদের সত্ত¡া ঝবষভ গড়ে ওঠে। সত্ত¡ার তাই দু'টি
অংশ: আই র এবং মী সব। আই নিজস্ব সত্ত¡া এবং মী হচ্ছে অন্যের প্রভাবে সৃষ্ট সত্ত¡া বা
সামাজিক সত্ত¡া। ফলে মানুষ একই সাথে ব্যক্তি এবং সামাজিক মানুষ- সৃজনশীল এবং
সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সামাজিক মানুষ।
এই তিনটি প্রধান প্যারাডাইম ছাড়াও সমাজবিজ্ঞানে আরো কয়েকটি বেশ জটিল প্যারাডাইম
রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিনিময় তত্ত¡ ঊীপযধহমব ঞযবড়ৎু, যুক্তিভিত্তিক পছন্দ
তত্ত¡ জধঃরড়হধষ ঈযড়রপব ঞযবড়ৎু, প্রপঞ্চবাদ চযবহড়সবহড়ষড়মু, কাঠামোবাদ ঝঃৎঁপঃঁৎধষরংস,
উত্তর-কাঠামোবাদ চড়ংঃ-ঝঃৎঁপঃঁৎধষরংস, উত্তর- আধুনিকতাবাদ চড়ংঃ-গড়ফবৎহরংস.
সারাংশ
সমাজ নিয়ে মানুষের চিন্তা মানুষের সমাজের মতই প্রাচীন। সমাজ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে
বিভিন্ন চিন্তা গুরুত্বপূর্ণ হলেও সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভবে সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর
এনলাইটেনমেন্ট বা আলোকপ্রাপ্তির কালের রয়েছে বিশেষ ভ‚মিকা। এ ক্ষেত্রে ১৭৮৯
সনের ফরাসী বিপ্লব ও পরবর্তীতে শিল্প বিপ্লব (১৭৬০-১৮৫০) খুব গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা
পালন করেছে। ফরাসী বিপ্লব জাতি-রাষ্ট্র গঠন ও গণতন্ত্র বিকাশের প্রতীক এবং এটি
তৎকালীন চিন্তাবিদদের মধ্যে সৃষ্টি করেছিল প্রচন্ড এক আলোড়ন। আর শিল্পবিপ্লব
মানুষের জীবনে নিয়ে এল আমূল পরিবর্তন যেখানে নগর ও শিল্প হল জীবন ও জীবিকার
কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু নগর জীবনে দারিদ্র্য ও চূর্ণ সমাজ জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেন
চিন্তাবিদরা। এই সামাজিক পটভ‚মিতে উদ্ভব ঘটে সমাজবিজ্ঞানের।
যে চারজন চিন্তাবিদ সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভবের সাথে জড়িত তাঁরা সকলেই ফরাসী ও শিল্প
বিপ্লব দ্বারা হয়েছিলেন আলোড়িত। এই চারজন হলেন যথাক্রমে অগ্যুস্ত্ কঁৎ, হাবার্ট
স্পেনসর, এমিল দুরক্যাঁ ও ম্যাক্স ভেবার। অগ্যুস্ত্ কঁৎ-কে বলা হয় সমাজবিজ্ঞানের জনক
এবং তিনিই প্রথম 'ঝড়পরড়ষড়মু' সোসিওলজি' প্রত্যয়টি ব্যবহার করেন। তিনি
সমাজবিজ্ঞানকে বিভক্ত করেন সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক গতিশীলতায়। তিনি
মনে করেন প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ন্যায় সমাজবিজ্ঞানকে অধ্যয়ন করা সম্ভব।
কঁৎ-এর ন্যায় ইংরেজ সমাজবিজ্ঞানী হাবার্ট স্পেনসর সমাজকে পর্যবেক্ষণ করেছেন
বিবর্তনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। ফরাসী সমাজবিজ্ঞানী এমিল দুরক্যাঁ -এর মতে
সমাজবিজ্ঞানের মূল বিষয়বস্তু হল ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক। তিনি তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে
সমাজবিজ্ঞানের তত্ত¡ ও তথ্য কিভাবে ব্যবহার ও সমন¦য় করা যায় তার ভিত্তি নির্মাণ
জর্জ হাবার্ট মিড
এবধৎমব ঐবৎনবৎঃ
গবধফএর চিন্তার
ফলশ্রæতি এই
দৃষ্টিকোণটি ব্যক্তি
সৃজনশীলতা ও
স্বাধীনতার উপর
জোর দেয়।

করেছেন। সমকালীন সমাজবিজ্ঞানে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিটি হচ্ছেন
জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ভেবার। তিনি সমাজবিজ্ঞানকে চেয়েছিলেন মূল্যবোধ -
নিরপেক্ষ বিজ্ঞান হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে।
সমাজবিজ্ঞানে রয়েছে বেশ কিছু প্যারাডাইম। এগুলোর মধ্যে ক্রিয়াবাদ, দ্বন্দ¡মূলক তত্ত¡ ও
প্রতীকী মিথস্ক্রিয়াবাদ প্রধান।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে কোনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছিল?
ক. ফরাসী বিপ্লব খ. শিল্প বিপ্লব
গ. অক্টোবর বিপ্লব ঘ. ক ও খ উভয়ই
২. প্লেটো ও এ্যারিস্টোটল ছিলেন-
ক. সমাজবিজ্ঞানী খ. রাষ্ট্রবিজ্ঞানী
গ. দার্শনিক ঘ. নৃবিজ্ঞানী
৩. ‘ত্রয়স্তরী সূত্র' 'খধি ড়ভ ঞযৎবব ঝঃধমবং' টি কার?
ক. কার্ল মার্কস্ খ. ম্যাক্স ভেবার
গ. অ্যাডাম ফার্গুসন ঘ. অগ্যুস্ত্ কঁৎ
৪. হাবার্ট স্পেনসর প্রভাবিত হয়েছিল কোন তত্ত¡ দ্বারা?
ক. দৃষ্টবাদ খ. জৈব বিবর্তনবাদ
গ. সর্বপ্রাণবাদ ঘ. সাম্যবাদ
৫. সমাজবিজ্ঞানী এমিল দুরক্যাঁ সামাজিক সংহতিকে কয়টি ভাগে ভাগ করেছেন?
ক. ২টি খ. ৩টি
গ. ৪টি ঘ. ৫টি
৬. কোন সমাজবিজ্ঞানী 'ঠবৎংঃবযবহ' প্রত্যয়টি ব্যবহার করেন?
ক. জর্জ সিমেল খ. কার্ল মার্কস্
গ. ম্যাক্স ভেবার ঘ. ট্যালকট পার্সনস্
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. অগ্যুস্ত্ কঁৎ সামাজিক স্থিতিশীলতা ও গতিশীলতা বলতে কি বুঝিয়েছেন?
২. ক্রিয়াবাদের মূল বক্তব্য কি ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. সমাজবিজ্ঞানের বিকাশ কিভাবে ঘটেছে? আলোচনা করুন।
২. সমাজবিজ্ঞান উদ্ভবের সাথে জড়িত চারজন তাত্তি¡কের অবদান আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]