রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান
রাজনৈতিক ব্যবস্থা হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, প্রক্রিয়া এবং ক্ষমতা ব্যবহারের বিভিন্ন
বিন্যাস। রাজনৈতিক ব্যবস্থার শ্রেণীকরণে কোন মতৈক্য না থাকলেও সাধারণভাবে তা গণতন্ত্র,
ফ্যাসীবাদ ও সমাজতন্ত্র-এ তিনটি রূপে বিভক্ত।
সমাজবিজ্ঞান রাষ্ট্র, সরকার, রাজনৈতিক দল, আমলাতন্ত্র প্রভৃতি সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান
করে থাকে। সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ভেবার রাষ্ট্রকে দেখেন কোন সুনির্দিষ্ট ভ‚খন্ডে বৈধ সহিংসতার
একক আধিপত্যের অধিকারী হিসেবে। আধুনিক সমাজে রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন, আইনের
বাস্তবায়ন ও ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে। সরকার হল একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়া।
এটি নির্বাহী, আইন পরিষদ ও বিচার ব্যবস্থার সমন¦য়ে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহন হিসেবে কাজ
করে। আর রাজনৈতিক দল হচ্ছে সাংগঠনিক উপায় যা সরকারের অঙ্গকে করে সংগঠিত ও
নিয়ন্ত্রিত এবং প্রদান করে জাতীয় নেতৃত্ব। আমলাতন্ত্রকে ম্যাক্স ভেবার আধুনিক সমাজে
অনিবার্য বলে মনে করেন। এটি চলে কঠোর নিয়ম-শৃ´খলার মধ্য দিয়ে। এবার আসা যাক
ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বের কথায়। ক্ষমতা হল এক ধরনের সামাজিক সম্পর্ক। কর্তৃত্ব হচ্ছে
বৈধ ক্ষমতা, যে ক্ষমতা মানুষ যথার্থ ও ন্যায়সঙ্গত মনে করে। আর নেতৃত্ব হচ্ছে কোন দলের
মুখ্য ব্যক্তি হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা, গুণাবলী ও আচরণ।
ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে গণতন্ত্রায়ণকে বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখতে হবে দেশগুলির
নির্বাচন প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও জনগণের অংশগ্রহণের ব্যাপারকে। ভারতে রয়েছে
দীর্ঘ ৫০ বছরের সফল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিকাশ। অন্যদিকে পাকিস্তানের গণতন্ত্র পায়নি
সত্যিকার প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি, আর বাংলাদেশ রয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্য অবস্থানে,
যেখানে গণতন্ত্রায়ণের প্রক্রিয়া বিকাশমান।
ভ‚মিকা
রাজনৈতিক ব্যবস্থা বলতে বোঝায় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, প্রক্রিয়া এবং ক্ষমতা ব্যবহারের
বিভিন্ন বিন্যাসকে। প্রত্যয়টির সুবিধা হচ্ছে এর মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক
ব্যবস্থার মধ্যে তুলনা করতে পারি। রাজনৈতিক ব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনার ইতিহাস
প্রাচীন। এ্যারিস্টোটল রাজনৈতিক ব্যবস্থার তিনটি রূপ চিহ্নিত করেছিলেন। আধুনিক যুগের
শুরুতে ম্যাকিয়াভেলী বিভাজন করেছিলেন রাজতন্ত্র এবং প্রজাতন্ত্রে মধ্যে। সমাজবিজ্ঞানী
এস.এন আইজেনষ্টাড ঊরংবহঃংঃধফঃ প্রাক-ধনতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ভাগ করেছেন
নিæোক্ত ভাবে:
❐ আদিম রাজনৈতিক ব্যবস্থা
❐ প্যাট্রিমোনিয়াল সাম্রাজ্য
❐ যাযাবর গোষ্ঠীর সাম্রাজ্য [মোঙ্গল সাম্রাজ্য]
❐ নগর রাষ্ট্র
❐ সামন্ততন্ত্র
রাজনৈতিক ব্যবস্থার শ্রেণীকরণের এ রকম নানা চেষ্টা লক্ষণীয়, যদিও এ ক্ষেত্রে কোন মতৈক্য
নেই। তবে সাধারণভাবে আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার চারটি রূপের উপর বিশেষ গুরুত্ব
আরোপ করা হয়। গণতন্ত্র, ফ্যাসীবাদ, সমাজতন্ত্র, আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদ। এখানে উল্লেখ্য,
অনেক সময় ফ্যাসীবাদ এবং সমাজতন্ত্রকে সর্বাÍকবাদ ঞড়ঃধষরঃধৎরধহরংস হিসাবে চিহ্নিত করা
হয়।
গণতন্ত্র
গণতন্ত্র বা ইংরেজী উবসড়পৎধপু শব্দটির উৎপত্তি গ্রীক উবসড়ং জনপদ এবং কৎধঃড়ং ও
সার্বভৌম ক্ষমতা থেকে। এর অর্থ জনগনের সরকার। ল্যারী ডায়মন্ড, জুয়ান লিন্জ এবং
সাইমুর মার্টিন লিপসেটের মতে গণতন্ত্র হচ্ছে এমন একটি শাসন ব্যবস্থা যেখানে সরকারের
অবস্থানের জন্য ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র শান্তিপূর্ণ প্রতিযোগিতা থাকে। সুষ্ঠু, অবাধ ও
নিয়মিত নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা এবং নীতি বাছাই করার ব্যবস্থা থাকে এবং মত প্রকাশের
স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সংগঠন গড়ে তোলার স্বাধীনতাসহ একগুচ্ছ পৌর এবং
রাজনৈতিক স্বাধীনতা থাকে।
গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান তাত্তি¡ক মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রবার্ট এ. ডাল জড়নবৎঃ অ. উধযষ গণতন্ত্র
বলতে বোঝাতে চেয়েছেন এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সবাই রাজনৈতিকভাবে
সমান, যৌথভাবে সার্বভৌম এবং নিজেদের শাসন করার জন্য যে দক্ষতা, সম্পদ এবং
প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন তার অধিকারী। ঠিক এই ধরনের একটি ব্যবস্থা খ্রীষ্ট্র-পূর্ব পঞ্চম শতকে
গ্রীসের একটি নগররাষ্ট্র এথেন্সে জন্মলাভ করেছিল। একে বলা যায় রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রথম
গণতান্ত্রিক রূপান্তর। এর এক হাজার বছর পরে মধ্যযুগের ইতালীর নগররাষ্ট্রগুলোতে জনপ্রিয়
সরকার গঠিত হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো খুব স্থায়ী হয়নি। দ্বিতীয় গণতান্ত্রিক রূপান্তর ঘটেছিল
ইউরোপের জাতি রাষ্ট্রগুলোতে আমেরিকান এবং ফরাসী বিপ্লবের পর থেকে।তৃতীয় গণতান্ত্রিক
রূপান্তর লক্ষ্য করা যায় উন্নয়নশীল বিশ্বে যেটি এখন চলছে।
গণতন্ত্রের সংজ্ঞা
অনেকে মনে করেন গণতন্ত্রের পদ্ধতিগত সংজ্ঞা গণতন্ত্রের মর্মার্থকে প্রকাশ করেনা। গণতন্ত্রের
সাথে অনিবার্যভাবে যুক্ত গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি যা কোন সমাজে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি এবং ব্যবস্থা
তৈরি হতে সাহায্য করে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি থাকলেই যে গণতন্ত্র থাকবে এমনটি নাও হতে
পারে।
দু'জন মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গ্রাবিয়েল এ্যামন্ড এধনৎরবষ অ অষসড়হফ এবং সিডনি ভার্বা ঝরফহবু
ঠবৎনধ তাঁদের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ঞযব পরারপ ঈঁষঃঁৎব'-এ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ধ্রুপদী বিশ্লেষণ
তুলে ধরেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং ইংল্যান্ডে তাঁরা খুঁজে পেয়েছিলেন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির
আদর্শ ধারণা। এই আদর্শ রূপকে তাঁরা চিহ্নিত করেছিলেন পৌর সংস্কৃতি নামে।
গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হচ্ছে পৌর সংস্কৃতি বা ‘সিভিক' সংস্কৃতি। জনগণের মধ্যে পারস্পরিক
বিশ্বাস এবং রাজনীতিতে জনগণের অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় পৌর সংস্কৃতি। পৌর
সংস্কৃতি প্রধানত: অংশগ্রহণমূলক সংস্কৃতি হলেও এর মধ্যে ক্রিয়াশীল থাকে সীমাবদ্ধ এবং
অধীন সংস্কৃতি যা খানিকটা নিস্ক্রিয় করে রাখে অংশগ্রহণের প্রবণতাকে। এই অর্থে গণতন্ত্রের
সংস্কৃতি হচ্ছে সমন¦য়ের সংস্কৃতি -‘ভিন্নতার সমন¦য়'।
কেন গণতন্ত্র তৈরি হয় এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে। সাইমুর এম. লিপসেটের ঝবুসঁৎ
গধৎঃরংং খরঢ়ংবঃ মতে গণতন্ত্র বিকাশের জন্য কয়েকটি উপাাদান গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
❏ অর্থনৈতিক উন্নয়ন : একটি দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে যত উন্নত তত সেই দেশে
গণতন্ত্র তৈরি এবং টিকে থাকার সম্ভাবনা দেখা যাবে।
❏ শিল্পায়ন : শিল্পায়ন গণতন্ত্রের বিকাশে সহায়ক ভ‚মিকা রাখে।
❏ নগরায়ন : যে সব দেশে নগরায়নের হার বেশি সে সব দেশে গণতন্ত্র তৈরি হবার সম্ভাবনা
বেশি লক্ষ্য করা যায়।
❏ শিক্ষা : ইউরোপের গণতান্ত্রিক দেশের জনগণ সবাই অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন।
তবে অন্য একজন তাত্তি¡ক স্যামুয়েল হান্টিংটন ঝধসঁবষ ঐঁহঃরহমঃড়হ এর মতে গণতন্ত্র
বিকাশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে মধ্যশ্রেণীর গরফফষব ঈষধংং বিকাশ।
ভিন্নভাবে দেখলে গণতন্ত্রের সংস্কৃতিকে বলা যায় মধ্যশ্রেণীর সংস্কৃতি যা সমাজে দু'টি মূল
দ্বন্দে¡র সমাধান তৈরি করেছিল। প্রথমটি হচ্ছে রাষ্ট্র এবং ধর্মের বিভাজন-ধর্মীয় বিষয়ে রাষ্ট্র হল
পক্ষপাতহীন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে শ্রেণীগত দ্বন্দে¡র উপশম।
লিপসেটের ভাষায় শিল্প বিপ্লবের ফলে মৌল রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান তৈরি হয়ে গেছে।
শ্রমিকরা অর্জন করেছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং নাগরিকতা। রক্ষণশীলরা গ্রহণ করেছে
কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। বামপন্থীরা স্বীকার করে নিয়েছে যে রাষ্ট্রের ক্ষমতার বৃদ্ধি অর্থনৈতিক
সমস্যার সমাধান করেনা।
চরম ভাবাদর্শ গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে, হারিয়ে ফেলেছে জনগণের কাছে তার আবেদন । প্রধান
রাজনৈতিক দলগুলো বাস্তবে প্রতিফলিত করে রাষ্ট্র এবং সমাজের কেন্দ্রীয় মূল্যবোধ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও কাজ করে একই ধরনের রাজনৈতিক চেতনা। গিলবার্ট এবং সুলিভানের
প্রহসনে তাই শোনা যায়:
ও ড়ভঃবহ ঃযরহশ রঃ'ং পড়সরপধষ
ঐড়ি হধঃঁৎব ধষধিুং ফড়বং পড়হঃৎরাব,
ঞযধঃ বাবৎু নড়ু ধহফ বাবৎু মরৎষ.
ঞযধঃ'ং নড়ৎহ রহঃড় ঃযব ড়িৎষফ ধষরাব,
রঃং বরঃযবৎ ধ ষরঃঃষব ষরনবৎধষ
ড়ৎ বষংব ধ ষরঃঃষব পড়হংবৎাধঃরাব.
নরওয়ের স্থিতিশীল গণতন্ত্রের পেছনে কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয় দীর্ঘ ঐতিহাসিক
প্রক্রিয়ায় নির্মিত গোষ্ঠী চেতনা যার ফলে নরওয়ের মানুষ আন্তর্ব্যক্তিক সহযোগিতাকে গুরুত্ব
দেয় এবং প্রতিযোগীতামূলক কাজকে পরিহার করার চেষ্টা করে।
এমনকি হল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড এবং বেলজিয়ামের মত যে সব দেশে তাৎপর্যপূর্ণ
উপসংস্কৃতিগত ভিন্নতা রয়েছে সে সব দেশেও তৈরি হয়েছে কনসোসিয়েশনাল
ঈড়হংড়পরধঃরড়হধষ গণতন্ত্র যেখানে শীর্ষজনরা অভিন্ন স্বার্থের মধ্যে সমঝোতা তৈরি করার
তাগিদ অনুভব করেছে এবং দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে তা অর্জন করতে পেরেছে।
ফ্যাসীবাদ
১৯২২ সালে ইতালীতে বেনিতো মুসোলিনীর নেতৃত্বে যে শাসন ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল তাকেই
মূলত: ফ্যাসীবাদ বলে চিহ্নিত করা হয়। ব্যাপক অর্থে ইউরোপে প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের
মধ্যকালীন সময়ে যে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র বিরোধী রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তাকে
ফ্যাসীবাদ বলা হয়। ১৯৩৩ সালে জার্মানীতে হিটলারের নেতৃত্বে যে নাৎসীবাদ ঘধঃরড়হধষ
ঝড়পরধষরংস সৃষ্টি হয়েছিল তাকেও এই অভিধায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ফ্যাসীবাদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি একটি সর্বাত্মকবাদী ব্যবস্থা। এর অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রের সমস্ত
ক্ষমতা কুক্ষিগত করে একটি শাসক গোষ্ঠী। তারা সমাজ জীবনকেও নিয়ন্ত্রিত করে।
এর দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নেতৃত্বের নীতি। ফ্যাসীবাদে নেতার অনুসারীদের উপর সীমাহীন
কর্তৃত্ব থাকে। অনুসারীরা অন্ধভাবে নেতার কর্তৃত্বকে স্বীকার করে নেয়। ফ্যাসীবাদের জোর
থাকে নেতা এবং জনগনের মধ্যে সরাসরি এবং গভীর বন্ধনের উপর।
এর তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কোন বিরোধিতা সহ্য করা হয় না। যে কোন বিরোধিতাকে নির্মূল
করা হয়।
এর চতুর্থ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ফ্যাসীবাদ একটি নতুন সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সৃষ্টির দাবী
তুলে ধরে। এই ধরনের ব্যবস্থায় কোন শ্রেণীসংগ্রাম বা ধনী-দরিদ্রের মধ্যে সংঘাত থাকবে না।
সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিরাজ করবে ঐক্য।
ফ্যাসীবাদের পঞ্চম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি কর্তৃত্ববাদ ও অসমতার উপর প্রতিষ্ঠিত। বর্ণবাদ, নারীপুরুষের অসমতা ও সামাজিক অসমতার উপর সৃষ্টি হয় বলে এটি ব্যক্তি স্বাধীনতা, সম
অধিকার ও ব্যক্তি-অধিকারকে স্বীকার করে না। ফলে এটি গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র বিরোধী।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর এই রাজনৈতিক ব্যবস্থার পতন ঘটে।
সমাজতন্ত্র
মার্কস্ -এর মতে সমাজতন্ত্র হবে এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কতন্ত্র
প্রতিষ্ঠিত হবে। সর্বহারা শ্রেণী দখল করবে রাষ্ট্রক্ষমতা। অবসান ঘটবে সম্পত্তি বা উৎপাদনের
উপায়ের উপর ব্যক্তি মালিকানা এবং মজুরী প্রদান করা হবে সাধারণ নীতিমালার উপর ভিত্তি
করে।
বুর্জোয়া শ্রেণীকে উৎখাত করে শ্রমিক শ্রেণীর এক নায়কতন্ত্র সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত হবার পরে রাষ্ট্রের
আর কোন প্রয়োজন থাকবে না। সাম্যবাদী সমাজে রাষ্ট্র ঝরে পড়বে। যৌথ কর্মকান্ডের দায়িত্ব
গ্রহণ করবে সমাজ। প্রতিটি মানুষ তার পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য যা যা প্রয়োজন তা পাবে।
সাম্যবাদী সমাজে শ্রমবিভাজন থাকবে না। থাকবে না অভাব। মানুষ তার ইচ্ছা অনুসারে যে
কোন কাজ করতে পারবে। শ্রম হবে মানুষের সৃষ্টিশীল সত্ত¡ার পরিপূর্ণতার প্রতীক।
বিরাজমান সমাজতান্ত্রিক সমাজে মার্কস্ -এর চিন্তাকে অনুসরণ করে শ্রমিক শ্রেণীর
একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং মার্কস্ -এর চিন্তার আলোকে বিভিন্ন দেশে সমাজতান্ত্রিক
সমাজ গড়বার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে মার্কস্ -এর স্বপ্ন বাস্তবায়িত
হয়নি।
১৯৮৫ সালে মিখাইল গর্বাচেভ সোভিয়েত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসাবে যে রাজনৈতিক এবং
অর্থনৈতিক সংস্কারের সূচনা করেন তা সমাজতন্ত্রের পতন ডেকে আনে। ১৯৮৯-১৯৯১ সালের
মধ্যে পূর্ব-ইউরোপে সমাজতন্ত্র ভেঙ্গে পড়ে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত রাশিয়ায় রাষ্ট্রনীতি
হিসাবে সাম্যবাদ বর্জন এবং কম্যুনিস্ট পার্টির কর্মকান্ড স্থগিত করা হয়। একই সালে ভেঙ্গে
যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। এভাবে শুরু হয় সমাজতন্ত্রের পতন।
আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদ
উন্নয়নশীল বিশ্বে রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাধারণত: কোন নাম দেওয়া সম্ভব নয়, কেননা এখানে
বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিরাজ করে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে
আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদ ইঁৎবধঁপৎধঃরপ অঁঃযড়ৎরঃধৎরধহরংস। এ ধরনের ব্যবস্থায় রাষ্ট্র এবং
সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের ক্ষমতা থাকে ব্যাপক। আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদের সবচেয়ে
চরম রূপ হচ্ছে সামরিক শাসন। মধ্যশ্রেণী এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং সিভিল সোসাইটির
অবস্থান থাকে নাজুক। আমলাতন্ত্র নিজেদের স্বার্থে ব্যাপক সামাজিক পরিবর্তনে বাধা প্রদান
করে।
সারাংশ
রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, প্রক্রিয়া ও ক্ষমতা ব্যবহারের বিভিন্ন বিন্যাসই হচ্ছে রাজনৈতিক
ব্যবস্থা। রাজনৈতিক ব্যবস্থার তুলনামূলক ইতিহাস প্রাচীন এবং এর শ্রেণীকরণের নানা
রকম চেষ্টা লক্ষণীয় হলেও এক্ষেত্রে কোন মতৈক্য নেই। তবে সাধারণভাবে গণতন্ত্র,
ফ্যাসীবাদ, সমাজতন্ত্র ও আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদ- এ চারটি রূপের উপর গুরুত্ব আরোপ
করা হয়। গণতন্ত্রের অর্থ জনগণের সরকার। এটি এমন একটি শাসন ব্যবস্থা যেখানে
সরকারের অবস্থানের জন্য ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র শান্তিপূর্ণ প্রতিযোগিতা থাকে।
এতে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিয়মিত নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা ও নীতি বাছাই করার ব্যবস্থা
থাকে। মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রবার্ট এ. ডাল জড়নবৎঃ অ. উধযষ গণতন্ত্র বলতে বোঝাতে
চেয়েছেন এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সবাই রাজনৈতিকভাবে সমান,
যৌথভাবে সার্বভৌম এবং নিজেদের শাসন করার জন্য যে দক্ষতা, সম্পদ এবং
প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন তার অধিকারী। অনেকে মনে করেন গণতন্ত্রের সাথে অনিবার্যভাবে
যুক্ত গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি যা কোন সমাজে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি এবং ব্যবস্থা তৈরি হতে
সাহায্য করে। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হচ্ছে পৌর সংস্কৃতি বা ‘সিভিক' কালচার। জনগণের
মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং রাজনীতিতে জনগণের অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়
পৌর সংস্কৃতি।
কেন গণতন্ত্র তৈরি হয় এ নিয়ে গবেষণা হয়েছে প্রচুর। সাইমুর এম. লিপসেটের মতে
গণতন্ত্র বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী কয়েকটি উপাদান হল অর্থনৈতিক
উন্নয়ন, শিল্পায়ন, নগরায়ন ও শিক্ষা। তবে স্যামুয়েল হান্টিংটন এ ক্ষেত্রে মধ্যশ্রেণীর
বিকাশকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে মনে করেন। ফ্যাসীবাদে রাষ্ট্রের সর্বাত্মক
ক্ষমতা কুক্ষিগত করে একটি শাসক গোষ্ঠী যারা সমাজ জীবনকেও করে নিয়ন্ত্রণ। এতে
নেতার অনুসারীদের উপর থাকে সীমাহীন কর্তৃত্ব। তাছাড়া কোন বিরোধিতা ফ্যাসীবাদে
সহ্য করা হয় না। একটি নতুন সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সৃষ্টির দাবী তুলে ধরা হয়
যেখানে কোন শ্রেণীসংগ্রাম বা ধনী-দরিদ্রের মধ্যে সংঘাত থাকবে না। ফ্যাসীবাদের
আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল এটি কর্তৃত্ববাদ ও অসমতার উপর প্রতিষ্ঠিত।
মার্কস্ -এর মতে সমাজতন্ত্র হবে এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে সর্বহারা শ্রেণীর
একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করবে সর্বহারা শ্রেণী। সম্পত্তি বা
উৎপাদন উপায়ের উপর ব্যক্তিমালিকানার ঘটবে অবসান এবং মুজুরী প্রদান করা হবে
সাধারণ নীতিমালার উপর ভিত্তি করে। বুর্জোয়া শ্রেণীর উৎখাতের পর শ্রমিক শ্রেণীর
একনায়কতন্ত্র সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্রের কোন প্রয়োজন থাকবে না। সাম্যবাদী সমাজে
রাষ্ট্র পড়বে ঝরে। এ সমাজে থাকবে না শ্রমবিভাজন। শ্রম হবে মানুষের সৃষ্টিশীল সত্ত¡ায়
পরিপূর্ণতার প্রতীক। মার্কস্ -এর এ চিন্তার আলোকে বিভিন্ন দেশে সমাজতান্ত্রিক সমাজ
গড়বার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। বরঞ্চ বিরাজমান সমাজতন্ত্রের
পতন ঘটেছে অনেক দেশে। উন্নয়শীল বিশ্বে বিরাজমান বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদ। এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্র এবংসামরিক ও
বেসামরিক আমলাদের ক্ষমতা থাকে ব্যাপক। সামরিক শাসন হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক
কর্তৃত্ববাদের সবচেয়ে চরম রূপ।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. সর্বাত্বকবাদ হিসাবে নিচের কোনটিকে চিহ্নিত করা হয়?
ক. গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র খ. গণতন্ত্র ও ফ্যাসীবাদ
ঘ. সমাজতন্ত্র ও সামন্ততন্ত্র গ. ফ্যাসীবাদ ও সমাজতন্ত্র
২. বেনিতো মুসোলিনী ইতালীতে যে শাসন ব্যবস্থার সৃষ্টি করেছিলেন তাকে বলে-
ক. গণতন্ত্র খ. সমাজতন্ত্র
গ. গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র ঘ. ফ্যাসীবাদ
৩. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংগঠন গড়ে তোলার স্বাধীনতা থাকে
নিচের কোনটিতে?
ক. সমাজতন্ত্রে খ. একনায়কতন্ত্রে
গ. গণতন্ত্রে ঘ. উপরের সবগুলো
৪. কত সালে হিটলার জার্মানীতে নাৎসীবাদ সৃষ্টি করেছিল?
ক. ১৯২৩ সালে খ. ১৯৩৩ সালে
গ. ১৯৪৩ সালে ঘ. ১৯৩৪ সালে
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদ বলতে কি বোঝেন ?
২. ফ্যাসীবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করুন ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. রাজনৈতিক ব্যবস্থা বলতে কি বোঝায়? রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিভিন্ন রূপ আলোচনা করুন।
২. আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার রূপগুলো আলোচনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত