সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণে ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বকে বিশ্লেষণ করুন।


ক্ষমতা চড়বিৎ
ক্ষমতা চড়বিৎ একটি অত্যন্ত জটিল প্রপঞ্চ। সমাজবিজ্ঞানীরা এখন অনুধাবন করছেন যে
ক্ষমতা সমাজবিজ্ঞানের একটি কেন্দ্রীয় বিষয়। কিন্তু ক্ষমতার এত ভিন্ন ভিন্ন রূপ রয়েছে তা
সনাক্ত করা সহজ নয়। ফরাসী চিন্তাবিদ মিশেল ফুকোর গবেষণার পর সমাজবিজ্ঞানীরা
ক্ষমতার জটিল বহুমাত্রিকতা সম্বন্ধে অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন।
ক্ষমতার আলোচনা শুরু করতে যেয়ে আমরা সাধারণত: জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ভেবারের
ধ্রুপদী ধারণা থেকে শুরু করি। ভেবারের মতে ক্ষমতা হচ্ছে “কোন মানুষ অথবা কিছু মানুষের
সামাজিক কাজে অংশগ্রহণকারী অন্য মানুষদের বিরোধিতার মুখে নিজেদের ইচ্ছাকে পূরণ
করা।”
"ঞযব পযধহপব ড়ভ ধ সধহ ড়ৎ ধ হঁসনবৎ ড়ভ সবহ ঃড় ৎবধষরুব ঃযবরৎ ড়হি রিষষ রহ ধ পড়সসঁহধষ ধপঃরড়হ বাবহ ধমধরহংঃ ঃযব ৎবংরংঃধহপব ড়ভ ড়ঃযবৎং যিড় ধৎব ঢ়ধৎঃরপরঢ়ধঃরহম রহ ঃযব ধপঃরড়হ. এই সংজ্ঞা অনুযায়ী ক্ষমতা হচ্ছে এক ধরনের সামাজিক সম্পর্ক। এর ফলে"
সমাজে ক্ষমতার বিতরণ হয় ভিন্ন ভিন্নভাবে যা আমরা দেখতে পাই সামাজিক স্তরবিন্যাসের
মধ্যে-শ্রেণী, মর্যাদাগোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক দলের ভিতর।
ক্রিয়াবাদী ধারণা
ক্রিয়াবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ক্ষমতাকে বিশ্লেষণ করেছেন সমাজবিজ্ঞানী ট্যালকট পার্সনস্
ঞধষপড়ঃঃ চধৎংড়হং। তিনি ক্ষমতার ব্যক্তিকেন্দ্রিক ধারণা বাদ দিয়ে এটিকে দেখেছেন সমাজের
সুবিধা ও সম্পদ হিসাবে যার মাধ্যমে মানুষ যৌথ লক্ষ্যকে অর্জন করতে পারে। মানুষের
দক্ষতার উপর নির্ভর করে সমাজে ক্ষমতার পরিমাণ।
মার্কসীয় দৃষ্টিকোণ
মার্কসীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ক্ষমতার উৎস হচ্ছে শ্রেণী-সম্পর্ক বা উৎপাদন উপায়ের মালিকানা
যার মাধ্যমে মালিক শ্রেণী শাসক শ্রেণীতে পরিণত হয় এবং তাদের শোষণ এবং অর্থনৈতিক
স্বার্থ টিকিয়ে রাখার জন্য ক্ষমতাকে ব্যবহার করে। শাসক শ্রেণীর ক্ষমতা সত্যিকার অর্থে

অবৈধ। শোষিত শ্রেণী ভ্রান্ত চেতনার ঋধষংব ঈড়হংপরড়ঁংহবংং জন্য শাসক শ্রেণীর ক্ষমতার
ব্যবহারকে বৈধ মনে করে। রাষ্ট্র শাসক শ্রেণীর হাতিয়ার। মালিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করার জন্য
এর উদ্ভব এবং বিস্তার।
এলিট তত্ত¡
এলিট তত্তে¡র প্রধান প্রবক্তা হচ্ছেন দু'জন ইতালীয় সমাজবিজ্ঞানী পারেতো ঠরষভৎবফড় চধৎবঃড়
(১৮৪৮-১৯২৪) এবং মস্কা এধবঃধহড় গড়ংপধ (১৮৫৮-১৯৪১) । তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে প্রতিটি
সমাজে যারা বিশেষ বিশেষ গুণে মন্ডিত এবং যারা সাধারণ মানুষ থেকে শ্রেষ্ঠতর তারা এলিট
বা শীর্যজন হিসাবে বিবেচিত। তারা সাধারণ মানুষ বা নন-এলিট থেকে ভিন্ন। সমাজের
ক্ষমতা সবসময় তাদের হাতে থাকে। সমাজে এলিটগোষ্ঠীর পরিবর্তন ঘটে। এক ধরনের
এলিটের বদলে অন্য ধরনের এলিটের আবির্ভাব ঘটে। কিন্তু এলিটদের প্রভুত্ব থেকেই যায়।
বহুত্ববাদ চষঁৎধষরংস
পশ্চিমের গণতান্ত্রিক সমাজে ক্ষমতার বিন্যাস বোঝানোর জন্য এই তত্ত¡টি ব্যবহার করা হয়।
শিল্পভিত্তিক যা আধুনিক সমাজে বহু ধরনের গোষ্ঠী এবং তাদের বহু ধরনের স্বার্থ তৈরি হয়।
ফলে কোন একটি গোষ্ঠী তাদের প্রভুত্বকে সমাজের উপর চাপিয়ে দিতে পারে না বা বিভিন্ন
গোষ্ঠী মিলে একক এলিট শ্রেণীও তৈরি করতে পারে না।
ক্ষমতার বহমানতা : মিশেল ফুকো
ক্ষমতা নিয়ে যুগান্তকারী গবেষণা করেছেন মিশেল ফুকো। ফুকোর মতে অন্যদের উপর কোন
ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা শ্রেণীর প্রভুত্বকে ক্ষমতা হিসাবে দেখা উচিত নয়। ক্ষমতা শিকলের মত নয়।
ক্ষমতা প্রবাহিত হয়। ক্ষমতা অনেকটা জালের মত। প্রতিটি মানুষ ক্ষমতা ব্যবহার করতে
পারে। প্রতিটি মানুষ ক্ষমতার শিকার। ক্ষমতা সমাজের মধ্যে প্রবাহিত হয় চিহ্নের মাধ্যমে,
ভাষার মাধ্যমে, নিয়মের মাধ্যমে। ক্ষমতা আরোপ করবার গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হচ্ছে মানুষের
শরীর, মানুষের মন।
কর্তৃত্ব অঁঃযড়ৎরঃু
ক্ষমতা নিয়ে ভেবারের আলোচনার অনেক দুর্বলতা থাকলেও, কর্তৃত্ব নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণ
কালজয়ী। কর্তৃত্ব হচ্ছে বৈধ ক্ষমতা, যে ক্ষমতাকে মানুষ যথার্থ এবং ন্যায়সঙ্গত মনে করে।
ভেবার কর্তৃত্বের তিনটি রূপ চিহ্নিত করেছিলেনÑ সনাতনী ঞৎধফরঃরড়হধষ, ঐশী ঈযধৎরংসধঃরপ
এবং যুক্তিভিত্তিক-আইনগত জধঃরড়হধষ-ষবমধষ। সহজ করে বললে সনাতনী কর্তৃত্বের ভিত্তি হচ্ছে
প্রথা, ঐশী কর্তৃত্বের আবেগ এবং আইনগত কর্তৃত্বের যুক্তি। সনাতনী কর্তৃত্বের ভিত্তি হচ্ছে যুগ
যুগ ধরে চলে আসা প্রথা এবং ঐতিহ্য। প্রাক-ধনতান্ত্রিক সমাজেই এই ধরনের কর্তৃত্ব লক্ষ্য
করা যায়। রাজতন্ত্র বা সামন্ততন্ত্রের কর্তৃত্বের ভিত্তি হচ্ছে ‘নীলরক্ত' বা অভিজাত বংশ। কেননা
মানুষ তাদের শ্রেষ্ঠত্বে এবং কর্তৃত্বের অধিকারে বিশ্বাস করত। কিন্তু আধুনিক সমাজে মানুষের
এই বিশ্বাস আর নেই।
কোন ব্যক্তির অসাধারণ ক্ষমতা সম্পর্কে বিশ্বাসীদের প্রশ্নহীন অনুরাগকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠে
ঐশী কর্তৃত্ব। বিক্রমশালী যুদ্ধ দলের নেতা, প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা এবং অত্যন্ত জনপ্রিয়
রাজনৈতিক নেতা ঐশী কর্তৃত্বের অধিকারী হয়ে থাকেন। তবে স্মরণ রাখা প্রয়োজন ঐশী

কর্তৃত্ব ক্ষণস্থায়ী। প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করলে বা নেতার মৃত্যুর পর এই কর্তৃত্ব আর থাকে
না। তখন এই কর্তৃত্ব সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। না হলে তা সনাতন কর্তৃত্ব বা যুক্তিভিত্তিক
কর্তৃত্বে রূপান্তরিত হয়। কর্তৃত্বের তৃতীয় রূপটি হচ্ছে যুক্তিভিত্তিক আইনগত কর্তৃত্ব। এর ভিত্তি
হচ্ছে নৈর্ব্যক্তিক সাধারণ নিয়ম-সর্বজনীন আইনগত কাঠামো। আমলাতন্ত্র হচ্ছে এর প্রধান
উদাহরণ।
নেতৃত্ব খবধফবৎংযরঢ়
সমাজবিজ্ঞানে নেতৃত্ব নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না। নেতৃত্ব নিয়ে গবেষণা প্রধানত: হয়ে
থাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ও সামাজিক মনোবিজ্ঞানে। ঈড়ষষরহং উরপঃরড়হধৎু ড়ভ ঝড়পরড়ষড়মু তে
নেতৃত্ব খবধফবৎংযরঢ় বলতে বোঝানো হয়েছে একটি দলের মুখ্যব্যক্তি হিসাবে কাজ করার
ক্ষমতা, গুণাবলী এবং আচরণকে।
নেতৃত্বের সাথে তিনটি উপাদান যুক্তÑ নেতা, অনুসরণকারী এবং যে সামাজিক অবস্থায় নেতাঅনুসারী খবধফবৎ-ভড়ষষড়বিৎ সম্পর্ক কাজ করে। নেতৃত্বের ধরন বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন রকম
হয়ে থাকে। প্রাক-ধনতান্ত্রিক সমাজে নেতৃত্ব খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আধুনিক সমাজে ব্যক্তি
নয়, প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফলে আধুনিক সমাজে ব্যক্তি এবং নেতৃত্বের ভ‚মিকা
তুলনামূলকভাবে কম।
সারাংশ
ক্ষমতা একটি অত্যন্ত জটিল প্রপঞ্চ। বর্তমানে সমাজবিজ্ঞানীরা ক্ষমতাকে কেন্দ্রীয় বিষয়
হিসাবে অনুধাবন করছেন। সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ভেবারের ধ্রুপদী ধারণায় ক্ষমতা হচ্ছে
কোন মানুষ অথবা কিছু মানুষের সামাজিক কাজে অংশগ্রহণকারী অন্য মানুষদের
বিরোধিতার মুখে নিজেদের ইচ্ছাকে পূরণ করা। এ ধারণায় ক্ষমতা হচ্ছে এক ধরনের
সামাজিক সম্পর্ক। ক্রিয়াবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজবিজ্ঞানী ট্যালকট পার্সনস্ ক্ষমতার
ব্যক্তি-কেন্দ্রিক ধারণা বাদ দিয়ে ক্ষমতাকে দেখেছেন সমাজের সুবিধা ও সম্পদ হিসাবে
যার মাধ্যমে মানুষ যৌথ লক্ষ্যকে অর্জন করতে পারে। মার্কসীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ক্ষমতার
উৎস হচ্ছে শ্রেণী সম্পর্ক বা উৎপাদন উপায়ের মালিকানা যার মাধ্যমে মালিক শ্রেণী
শাসক শ্রেণীতে পরিণত হয় এবং তাদের শোষণ এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ টিকিয়ে রাখার
জন্য ক্ষমতাকে ব্যবহার করে। এলিট তত্তে¡র প্রধান প্রবক্তা পারেতো ও মস্কা মনে করেন,
প্রতিটি সমাজে যারা অসামঞ্জস্য যারা সাধারণ মানুষ থেকে শ্রেষ্ঠতর তারা এলিট হিসাবে
বিবেচিত এবং সমাজের ক্ষমতা সবসময় তাদের হাতে থাকে।
ম্যাক্স ভেবারের কর্তৃত্বের বিশ্লেষণ সমাজবিজ্ঞানে কালজয়ী। কর্তৃত্ব হচ্ছে বৈধ ক্ষমতাÑ
যে ক্ষমতাকে মানুষ যথার্থ ও ন্যায়সঙ্গত মনে করে। কর্তৃত্বের তিনটি রূপকে ভেবার
চিহ্নিত করেছিলেন।এ রূপগুলো হল যথাক্রমে সনাতনী, ঐশী এবং যুক্তিভিত্তিকআইনগত। সনাতনী কর্তৃত্বের ভিত্তি হচ্ছে প্রথা, ঐশী কর্তৃত্বের আবেগ এবং আইনগত
কর্তৃত্বের যুক্তি।
সমাজবিজ্ঞানে নেতৃত্ব নিয়ে খুব বেশি আলোচনা না হলেও রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানে
বেশ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। নেতৃত্ব বলতে একটি দলের মুখ্য ব্যক্তি হিসাবে কাজ
করার ক্ষমতা, গুণাবলী ও আচরণকে বোঝানো হয়। নেতৃত্বের সাথে তিনটি উপাদান
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি পৃষ্ঠা-১২১
যুক্তÑ নেতা, অনুসরণকারী এবং যে সামাজিক অবস্থায় নেতা-অনুসারী সম্পর্ক কাজ
করে।

নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. নিচের কার সংজ্ঞা অনুযায়ী ক্ষমতা হচ্ছে এক ধরনের সামাজিক সম্পর্ক?
ক. মিশেল ফুকো খ. ম্যাক্স ভেবার
গ. কার্ল মার্কস্ ঘ. উপরের সবার
২. ম্যাক্স ভেবার কর্তৃত্বের কয়টি রূপকে চিহ্নিত করেছিলেন?
ক. ২টি খ. ৩টি
গ. ৪টি ঘ. ৫টি
৩. একটি দলের মুখ্যব্যক্তি হিসাবে কাজ করার ক্ষমতা, গুণাবলী এবং আচরণকে কি বলে?
ক. আমলাতন্ত্র খ. ক্ষমতা
গ. নেতৃত্ব ঘ. উপরের সব
৪. কোন সমাজে নেতৃত্ব খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
ক. প্রাক-ধনতান্ত্রিক খ. আধুনিক
গ. উত্তর-আধুনিক ঘ. উপরের সব
৫. ‘নীল রক্ত' বা ‘অভিজাত বংশ' কোন কর্তৃত্বের ভিত্তি?
ক. রাজতন্ত্র খ. সামন্তমন্ত্র
গ. গণতন্ত্র ঘ. রাজতন্ত্র ও সামন্ততন্ত্র
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. ক্রিয়াবাদী ধারণায় ক্ষমতা কি ?
২. ক্ষমতার বহমানতা বলতে মিশেল ফুকো কি বুঝিয়েছেন ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব বলতে কি বোঝেন? আলোচনা করুন।
২. সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণে ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বকে বিশ্লেষণ করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]