ভ‚মিকা
রাজনীতি ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করে। ফলে রাজনীতি সম্পর্কে যে কোন আলোচনা তর্ক সৃষ্টি
করতে পারে। সমাজবিজ্ঞানীরা এক্ষেত্রে মূল্যবোধ নিরপেক্ষ হবার চেষ্টা করেন। তাদের
বক্তব্যকে তাঁরা যুক্তি এবং প্রমাণভিত্তিক করার চেষ্টা করেন। এরপরও তাদের যতটুকু পক্ষপাত
থাকে তা বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের সমালোচনা এবং ভিন্নমতের দ্বারা পরিশোধিত করা হয়।
গণতন্ত্র একটি সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। তা সত্তে¡ও আমরা যাকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা
বলি তার একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ আছে। আমরা যখন কোন দেশের গণতন্ত্রায়নের প্রক্রিয়া
পরীক্ষা করি তখন এই প্রতিষ্ঠানগুলোর রূপ এবং কর্মকান্ডের দিকে দৃষ্টিপাত করি।
ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ গণতন্ত্রায়নের তিনটি রূপকে তুলে ধরে। ফলে তিনটি
দেশের তুলনামূলক আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটি সত্যি যে,
সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এই তুলনামূলক আলোচনা এখনও হয়নি। বিশ্লেষণের
অভাবের সাথে যুক্ত রয়েছে এখানে পরিসরের অভাব যার কারণে এমনকি কোন আংশিক
আলোচনাও সম্ভব নয়। নিচের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণে ভারতের গণতন্ত্রায়নের উপর গুরুত্বারোপ করা
হয়েছে। কেননা, ইন্দিরা গান্ধীর জরুরীকাল বাদ দিলে ভারতের ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সফলভাবে বিকাশ লাভের ইতিহাস রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার উপর শীর্ষ মার্কিন গবেষক মাইরন বীনার গুৎড়হ ডবরহবৎ ভারতে গণতন্ত্রায়ন
প্রক্রিয়ার যে বিশ্লেষণ করেছেন তা থেকে বোঝা যায় ভারতে গণতন্ত্রায়ন প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং এর
উপাদানগুলো নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও সক্রিয় রয়েছে।
গণতন্ত্রের মূল একটি উপাদান হচ্ছে নির্বাচন প্রক্রিয়া। ভারতে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল
ঔপনিবেশিক যুগেÑআরো নির্দিষ্ট করলে ১৮৮৪ সালে। এটি করা হয়েছিল স্থানীয় সরকারের
জন্য। ১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার ও ১৯১৯ সালের মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার
জনগণের নির্বাচনের অধিকারকে প্রসারিত করেছিল।এই ধারাবাহিকতা ঔপনিবেশিক যুগে এবং
১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পরে টিকে ছিল। ভারতে নিয়মিত এবং মোটামুটি অবাধ নির্বাচন
হয়েছে এবং জনগণের অংশগ্রহণ স্বত:স্ফ‚র্ত এবং ব্যাপক। ভারতে রয়েছে শক্তিশালী স্থানীয়
সরকার যা গণতন্ত্রের ভিত্তিকে শক্তিশালী করেছে।
ভারতের গণতন্ত্রায়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে প্রতিযোগী রাজনৈতিক
দলগুলো। ভারতীয় কংগ্রেস দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৮৫ সালে। পরবর্তী একশ' বছরের
বেশি সময় ধরে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আবেগ, অনুভ‚তি এবং স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করতে
পেরেছিল। স্বাধীনতার পর থেকে কংগ্রেস দল ভারতে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে
তাৎপর্যপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছিল।
ভারতে জনগণের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ব্যাপক। জাতীয়, প্রাদেশিক ও স্থানীয় পর্যায়ে
নির্বাচনে জনগণ ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে। ভারতে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের আরো
রূপ রয়েছে। মাইরন বীনারের মতে ভারত প্রতিবাদের শিল্পকে নিখুঁত রূপদান করেছে। এত
রকমের প্রতিবাদ আর কোন দেশে দেখা যায় না। ভারতে মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা
রয়েছে।
এই প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতে গণতন্ত্রের প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রেখেছে। তবে অনেক পর্যবেক্ষক
মনে করেন ভারতে রাষ্ট্র এখনও অনেক বেশি শক্তিশালী ও কর্তৃত্বমূলক।
কংগ্রেস দলের পতন এবং আঞ্চলিক দলগুলোর উত্থান ও লোকপ্রিয় চড়ঢ়ঁষরংঃ নেতাদের
আবির্ভাব, হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টির ক্ষমতায় আসা ও উদারনৈতিক ধর্মনিরপেক্ষ
রাজনীতির অবক্ষয় ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন।
পাকিস্তান
ভারতের বিপরীতে পাকিস্তান এক ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে। কংগ্রেস দলের মত পাকিস্তান মুসলিম
লীগ গণতান্ত্রিক চেতনাকে তুলে ধরতে বা টিকিয়ে রাখতে পারেনি। খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী
হামজা আলাভী দেখিয়েছেন পাকিস্তানে পাঞ্জাবী মিলিটারী-সিভিল এলিট এবং মোহাজের
ব্যবসায়ী-শিল্পপতি গোষ্ঠী একটি শক্তিশালী শাসকচক্র হিসাবে আবির্ভূত হয়ে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ
করে দিয়েছিল। অতি শক্তিধর পাকিস্তানী রাষ্ট্র প্রথম থেকেই পরিচালিত হয়েছে ক্যান্টনমেন্টের
দ্বারা। রাজনীতিতে জনগণের কণ্ঠ সত্যিকার ভাবে স্বীকৃতি পায়নি। ফলে পাকিস্তানে বারবার
সামরিক শাসন এসেছে এবংকখনই গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করতে পারেনি।
বাংলাদেশ
গণতন্ত্রায়ন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যবর্তী স্থানে। ১৯৭১
সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছেল বৃটেনের উদারনৈতিক
পার্লামেন্টারী ব্যবস্থার অনুসরণে। কিন্তু বাংলাদেশ গণতন্ত্রের এই যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে
পারেনি। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নতুন যাত্রা শুরু
হয়েছে।কিন্তু বাংলাদেশে প্রধান দু'টি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মধ্যে সমঝোতার অভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র সত্যিকারের
প্রাতিষ্ঠানিক রূপ এখনও গ্রহণ করতে পারেনি। তবে বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রের স্পৃহা
প্রবল, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যথেষ্ট আশাবাদী হবার সঙ্গত কারণ রয়েছে।
গণতন্ত্র সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া হলেও এর একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ রয়েছে।
ফলে কোন দেশের গণতন্ত্রায়ন প্রক্রিয়া পরীক্ষা করতে হলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর রূপ ও
কর্মকান্ডের দিকে দৃষ্টিপাত করতে হয়। ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ গণতন্ত্রায়নের
তিনটি রূপকে প্রতিফলিত করায় তিনটি দেশের তুলনামূলক আলোচনা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এ আলোচনা নেই বললেই চলে।
ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর জরুরীকাল ছাড়া দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গণতান্ত্রিক
প্রক্রিয়ার সফল বিকাশের ইতিহাস রয়েছে। গণতন্ত্রের একটি মূল উপাদান হচ্ছে নির্বাচন
প্রক্রিয়া যা শুরু হয়েছিল ঔপনিবেশিক যুগে এবং স্বাধীনতার পরও টিকে ছিল। ভারতে
নিয়মিত ও অবাধ নির্বাচন হয়েছে এবং এখানে জনগণের অংশগ্রহণ স্বত:স্ফ‚র্ত ও ব্যাপক।
তাছাড়া রয়েছে শক্তিশালী স্থানীয় সরকার যা গণতন্ত্রের ভিত্তিকে করেছে মজবুত। আর এ
গণতন্ত্রায়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে প্রতিযোগী রাজনৈতিক দলগুলো।
ভারতে জনগণের রয়েছে রাজনীতিতে ব্যাপক অংশগ্রহণ। এছাড়া রয়েছে মত প্রকাশ ও
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা।তবে কংগ্রেস দলের পতন, আঞ্চলিক দলগুলোর উত্থান,
হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টির ক্ষমতায় আগমন ও উদারনৈতিক ধর্মনিরপেক্ষ
রাজনীতির অবক্ষয় ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ বলে অনেকে মনে করেন।
ভারতের বিপরীতে পাকিস্তানে এক ভিন্ন চিত্র পরিলক্ষিত হয়। ভারতীয় কংগ্রেস দলের
ন্যায় পাকিস্তান মুসলিম লীগ গণতান্ত্রিক চেতনাকে তুলে ধরতে বা টিকিয়ে রাখতে
পারেনি। মিলিটারী-সিভিল এলিট ও মোহাজের ব্যবসায়ী শিল্পপতি গোষ্ঠী গণতন্ত্রকে
নস্যাৎ করেছিল শক্তিশালী শাসকচক্র হিসাবে আবির্ভূত হয়ে। রাজনীতিতে এখানে
সত্যিকার ভাবে স্বীকৃতি পায়নি জনগণের কণ্ঠ।
গণতন্ত্রায়ন প্রক্রিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যবর্তী অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার অভাবে গণতন্ত্র সত্যিকারের প্রতিষ্ঠানিক রূপ গ্রহণ
করতে না পারলেও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী হবার যথেষ্ট সঙ্গত কারণ
রয়েছে। গণতন্ত্রের প্রবল স্পৃহা রয়েছে মানুষের মধ্যে। তাছাড়া রয়েছে মতামত প্রকাশের
অধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. ভারতে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল কবে?
ক. ১৭৭৪ সালে খ. ১৮৮৪ সালে
গ. ১৮৯৪ সালে ঘ. ১৯৩৪ সালে
২. বাংলাদেশের গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়েছিল কোন পার্লামেন্টারী ব্যবস্থার অনুসরণে?
ক. যুক্তরাষ্ট্র খ. বৃটেন
গ. কানাডা ঘ. ক ও খ উভয়ই
৩. শার্লি-মিন্টো সংস্কার কখন হয়েছিল?
ক. ১৯০৯ সালে খ. ১৯১৯ সালে
গ. ১৯২৯ সালে ঘ. ১৯৩৯ সালে
৪. ভারতীয় কংগ্রেস কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
ক. ১৮৮৫ সালে খ. ১৮৯৫ সালে
গ. ১৮৯০ সালে ঘ. ১৮৯৯ সালে
৫. দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশটিতে মিলিটারী সিভিল এলিট এবং মোহাজের ব্যবসায়ী গোষ্ঠী
একটি শাক্তিশালী শাসক চক্র হিসাবে আবির্ভূত হয়ে ঐ দেশের গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করে?
ক. ভারত খ. বাংলাদেশ
গ. পাকিস্তান ঘ. শ্রীলংকা
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. পাকিস্তানে গণতন্ত্র কেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করতে পারেনি ?
২. গণতন্ত্রায়ন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান উল্লেখ করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করুন।
২. “ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ গণতন্ত্রায়নের তিনটি রূপকে তুলে ধরে।” উক্তিটি ব্যাখ্যা
করুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত