ব্যক্তি জীবনে ধর্মের ভ‚মিকা কি ?
ধর্মের নেতিবাচক ভ‚মিকাগুলো উল্লেখ করুন।


ভ‚মিকা
ধর্ম কি সমাজ পরিবর্তনে বাঁধা দেয়, না সাহায্য করে এ নিয়ে তর্ক রয়েছে। সমাজ পরিবর্তনের
ফলে ধর্ম কি বদলে যায়? এ প্রশ্নের যে কোন সহজ উত্তর আছে তা নয়। বিষয়টি খুব জটিল।
ধর্মের সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে নানাভাবে বিষয়টির উপর আলোকপাতের চেষ্টা
করেছে। এর মধ্যে দুটি বিষয় বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে। আধুনিক সমাজের ধর্ম কি দুর্বল হয়ে
আসছে? অনেক সমাজে ধর্ম কেন নতুনভাবে শক্তি সঞ্চার করছে? দুটি ক্ষেত্রেই জার্মান
সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ভেবার (১৮৬৪-১৯২০) গুরুত্বপূর্ণ তত্ত¡ বা অর্ন্তদৃষ্টি তুলে ধরেছেন।
ধর্ম ও ধনতন্ত্রের বিকাশ
ম্যাক্স ভেবার ইউরোপে ধনতন্ত্রের বিকাশের কারণ খুঁজতে যেয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত¡ নির্মাণ
করলেন যার সাহায্যে তিনি দেখালেন যে ইউরোপে ধনতন্ত্র বা শিল্প সমাজ উদ্ভবের কারণ হচ্ছে
খ্রীষ্টান ধর্মের একটি শাখা-প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্ম।
প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মÑবিশেষ করে যাজক কালভীনের অনুসারীদের সমন¦য়ে গঠিত কালভীনবাদ
নামে পরিচিত এ শাখাটি কিছু অভিনব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিল যা পৃথিবীর অন্য কোন ধর্মে
লক্ষ্য করা যায় না। এসব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ছিলÑ
❐ ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, অজ্ঞেয় এবং সুদূরবর্তী। মানুষের পক্ষে তাঁর নিকটবর্তী হওয়া সম্ভব
নয়।
❐ মানুষের নিয়তি পূর্ব-নির্ধারিত। ঈশ্বর সৃষ্টির পূর্বেই পরকালে আত্মার অবস্থান নির্ধারিত
করে রেখেছেন। মানুষ মৃত্যুর পর স্বর্গ না নরকে যাবে তা সম্পূর্ণ ঈশ্বরের ইচ্ছাধীন এবং
তাঁর দ্বারা পূর্ব-নির্ধারিত। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন বা যাদু আত্মার কল্যাণের জন্য
কোন কিছুই করতে পারে না।

❐ ঈশ্বর প্রতিটি মানুষকে এক একটি কাজ বা পেশার জন্য সৃষ্টি করেছেন। প্রতিটি পেশাই
ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সমান গুরুত্বপূর্ণ। কোন পেশাই মর্যাদাহানিকর নয়। বরং মানুষের পেশার
সাফল্য অর্জন ঈশ্বরের করুণার চিহ্ন হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। যে ঈশ্বরের করুণা
লাভ করে তার আত্মাই স্বর্গে প্রবেশ করতে পারবে। এই ধর্মীয় নীতির ফলে ধর্ম ও জীবন
থেকে যাদু অপসৃত হল। ঈশ্বর বা অতিপ্রাকৃতকে প্রভাবিত করার কোন মাধ্যম থাকলো
না। থাকলো না কোন যাজক, কোন সেইন্ট বা কোন ধর্মীয় প্রতিনিধির ভ‚মিকা। আত্মার
কল্যাণের জন্য সহায়ক না হওয়ায় ধর্মীয় আচারের গুরুত্ব কমে গেল। পরকাল নয়,
ইহকাল হয়ে পড়ল মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ। প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্ম উৎসাহিত করল
মানুষকে যুক্তিবদ্ধ জীবন যাপন করতে। যাজকরা মঠের শৃ´খলাকে প্রতিষ্ঠা করতে
চাইলেন সমাজ জীবনে। একেই ভেবার বলেছেন জীবনের যুক্তিবদ্ধকরণ
ৎধঃরড়হধষরুধঃরড়হ।
ধর্ম সংস্কার জবভড়ৎসধঃরড়হ
১৫১৭ সালের জার্মানীর একজন যাজক মার্টিন লুথার (১৪৮৩Ñ১৫৪৬) বিটেনবার্গের গীর্জার
দরজায় এঁটে দিলেন তাঁর ৯৫টি প্রস্তাব। এই ঘটনা থেকে জন্ম নিল সংস্কার জবভড়ৎসধঃরড়হ
আন্দোলন। মার্টিন লুথার তাঁর প্রস্তাবে রোমান ক্যাথলিক গীর্জার এবং পোপের তীব্র সমালোচনা
করেছিলেন। ফলে পোপ তাঁকে বিধার্মিক বলে ঘোষণা করলেন। এ সময়ে জার্মানীর কোন
কোন রাজা তাঁকে আশ্রয় দিলেন। ১৫৪১ সালে জন ক্যালভিন সুইজারল্যান্ডে প্রেসবাইটেরিয়ান
গীর্জা প্রতিষ্ঠা করলেন যা পরবর্তীকালে স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং উত্তর আমেরিকাসহ অন্যান্য
জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। ১৬১৮ সালে বোহেমিয়ায় চেক অভিজাত নেতারা ক্যাথলিক রাজার
শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ক্যাথলিকদের সমর্থনকারী
রাজাদের মধ্যে এক ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয় যা ত্রিশ বছরের যুদ্ধ (১৬১৮Ñ১৬৪৮) নামে পরিচিত।
পরবর্তীকালে যদিও এটি শুধু ধর্মকেন্দ্রিক যুদ্ধ থাকেনি, তবুও ইউরোপে এর ফলাফল হয়েছিল
ভয়াবহ। এই যুদ্ধের অবসানে প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ক্যাথলিক দুটি ধর্মকে স্বীকার করে নেওয়া
হয়। রক্তাক্ত অভিজ্ঞতার ভিতর থেকে ইউরোপে ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি গ্রহণ করতে শুরু
করে।
সেক্যুলারাইজেশন ঝবপঁষধৎরুধঃরড়হ
সেক্যুলার শব্দটির অর্থ হচ্ছে ধর্ম ও রাষ্ট্রের ভিন্নতা। এটি ইংল্যান্ডে ঘটেছিল ১৫৩৩ সালে যখন
রাজা অষ্টম হেনরী রোমের পোপের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ইংল্যান্ডের গীর্জার প্রধান হিসাবে
নিজেকে ঘোষণা করেন। মূলত: জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটার পরিপ্রেক্ষিতেই
ইউরোপে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বিকাশ লাভ করেছিল। ক্যাথলিক দেশ ফ্রান্সও এক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ
অবদান রেখেছিল।
ইংরেজি ঝবপঁষধৎরুধঃরড়হ প্রত্যয়টি একটি ভিন্ন অর্থ বহন করে। রেনেসাঁর মানবতাবাদী চিন্তা,
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ, নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে ইউরোপে এবং উত্তর আমেরিকার
সমাজ জীবনে ধর্মের প্রভাব ক্রমেই হ্রাস পেয়েছে। ধর্মবিশ্বাস ও আচরণের দুটি ক্ষেত্রে এটি
লক্ষণীয়।

অপার্থিব জগৎ থেকে পার্থিব জগতে ধাবিত হবার যে আন্দোলন সমাজে ঘটেছিল তাই
সেক্যুলারিজম। মধ্যযুগে ধার্মিক ব্যক্তিগণের মধ্যে মানবিক কর্মকান্ড এবং স্রষ্টা ও পরকালের
সঙ্গে মধ্যস্থতা স্থাপনের দৃঢ় প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। মধ্যযুগীয় এই প্রবণতার ফলশ্রুতিতে
রেনেসাঁকালে সেক্যুলারিজম মানবতাবাদের বিকাশকে প্রকাশ করে। তখন মানুষ এই
পৃথিবীতে মানবীয় সাংস্কৃতিক অর্জন এবং তার পরিপূর্ণতার সম্ভাবনার উপর নজর দিতে
অধিক আগ্রহ দেখায়। আধুনিক ইতিহাসের সামগ্রিক ক্ষেত্রে সেক্যুলারিজমের এ আন্দোলন
গতি লাভ করে এবং প্রায়শই খ্রীষ্টিয় ধর্ম এবং ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ বলে মতামত প্রদান করা
হয়। যাহোক, বিংশ শতকের অর্ধভাগের পর ধর্মতত্ত¡বিদগণের একটি সংখ্যা সেক্যুলার
খ্রীষ্টানোচিত গুণ যুক্তিদ্বারা পক্ষ সমর্থন করেন। তারা প্রস্তাব করেনÑ খ্রীষ্টিয় ধর্ম, কেবল
পবিত্র ও অপার্থিব জগৎ নিয়েই সম্পর্কিত নয়, পক্ষান্তরে মানুষের সেক্যুলার জগতে সুযোগ
খুঁজে খ্রীষ্ট ধর্মীয় মূল্যবোধকে উন্নয়ন করা উচিত।
পুনর্জাগরণবাদ জবারাধষরংস
ধর্মীয় পুনর্জাগরণবাদ এক ধরনের সামাজিক আন্দোলন যার মাধ্যমে কোন ধর্মের প্রতি
ব্যাপকতর আবেগাশ্রিত আনুগত্য প্রকাশ করা হয় বা নতুন নতুন ধর্মমত ঈঁষঃ প্রতিষ্ঠিত করা
হয়। ধর্মীয় পুনর্জাগরণবাদ সেক্যুলারাইজেশন এর বিপরীত প্রক্রিয়া। মৌলবাদ এমন একটি
উদাহরণ যা ১৯২০ সালের পর থেকে প্রথমে প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছিল এবং
এখন ইসলামের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
সারাংশ
সমাজ পরিবর্তনে ধর্মের ভ‚মিকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে ধর্মের সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞানের
দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোকসম্পাত করে। জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স
ভেবার এক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ তত্ত¡ উত্থাপন করেন ইউরোপে ধনতন্ত্র বিকাশের কারণ খুঁজতে
গিয়ে। প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মের কালভীনবাদের কিছু বৈশিষ্ট্য যেমনÑ মানুষের পক্ষে ঈশ্বরের
নিকটবর্তী হওয়া অসম্ভব, নিয়তি পূর্ব-নির্ধারিত, প্রতিটি পেশাই ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সমান
মর্যাদাপূর্ণ ইত্যাদির কারণে প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্ম উৎসাহিত করল মানুষকে যুক্তিবদ্ধ
জীবনযাপন করতে।
ইউরোপে ধর্মের সংস্কার শুরু হয় যাজক মার্টিন লুথারের প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে। ত্রিশ
বছরের যুদ্ধ (১৬১৮Ñ১৬৪৮)-ও সংঘটিত হয় ধর্মের সংস্কার নিয়ে যার অবসানে স্বীকার
করে নেওয়া হয়, প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক নামে দু'টো ধর্মকে। শুরু হয় ইউরোপে ধর্ম
নিরপেক্ষতার নীতি। অপার্থিব জগৎ থেকে পার্থিব জগতে ধাবিত হবার আন্দোলনের
ফলাফলই হল সেক্যুলারিজম যা মানবতাবাদের বিকাশকে করে প্রকাশ এবং মানবীয়
সাংস্কৃতিক আইন ও পরিপূর্ণতার সম্ভাবনার উপর নজর রাখে। অপরদিকে আধুনিক
সমাজে ধর্মীয় পুনর্জাগরণবাদও লক্ষণীয় যা সেক্যুলারাইজেশনের বিপরীত প্রক্রিয়া।

নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. “ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, অজ্ঞেয় এবং সুদূরবর্তী” এবং “মানুষের নিয়তি পূর্বÑনির্ধারিত”Ñ এ
বৈশিষ্ট্যদ্বয় কোন ধর্মে লক্ষ্যণীয়?
ক. রোমান ক্যাথলিক খ. প্রোটেস্ট্যান্ট
গ. ইহুদী ঘ. ইসলাম
২. ‘সেক্যুলার ঝবপঁষধৎ' শব্দটির অর্থ কি?
ক. বস্তুনিরপেক্ষতা খ. ধর্ম ও রাষ্ট্রের ভিন্নতা
গ. ধর্মের ভিন্নতা ঘ. রাষ্ট্র ও জনগণের বিচক্ষণতা
৩. ইউরোপে ধনতন্ত্রের সাথে ধর্মের সম্পর্ক খুঁজতে গিয়ে কে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন?
ক. কার্ল মার্কস্ খ. অগ্যুস্ত্ কঁৎ
গ. এমিল দুরক্যাঁ ঘ. ম্যাক্স ভেবার
৪. ধর্মীয় পুনর্জাগরণবাদ নিচের কোনটির বিপরীত প্রক্রিয়া?
ক. ধর্ম সংস্কার খ. সেক্যুলারাইজেশন
গ. জীবনের যুক্তিবদ্ধকরণ ঘ. রিভাইভালিজম
৫. ধর্ম সংস্কারের সাথে সম্পর্কিত ‘ত্রিশ বছরের যুদ্ধ' নিচের কোন সময়কালে সংঘটিত
হয়েছিল?
ক. ১৫৫০-১৫৭০ খ. ১৫৭১-১৬১৭
গ. ১৬১৮-১৬৪৮ ঘ. ১৬৪৯-১৬৮০
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. কালভীনবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো কি ?
২. ধর্মীয় পুনর্জাগরণবাদ কি ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ধনতন্ত্রের বিকাশে ধর্মের ভুমিকা কি? ভেবারীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে আলোচনা করুন।
২. ধর্ম সংস্কার, সেক্যুলারাইজেশন ও পুনর্জাগরণবাদ বলতে কি বোঝেন? ব্যাখ্যা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]