লিঙ্গ ও বয়সভিত্তিক স্তরবিন্যাস বলতে কি বোঝেন ?


সামাজিক নিয়ন্ত্রণ, বিচ্যূতি এবং অপরাধ

বিভিন্ন সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবোধ যা মানুষ সামাজিকীকরণের মাধ্যমে শেখে তা মেনে চলা নিশ্চিত
করার জন্য যেসব পন্থা-পদ্ধতির ব্যবহার করা হয় তাই সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মূল বিষয়। সমাজের
বিরাজমান নিয়মের ছক যেন কেউ লঙ্ঘন না করে এটিই হল এর উদ্দেশ্য। সামাজিক নিয়ন্ত্রণের
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক দু'টি রূপ রয়েছে। আনুষ্ঠানিক সামাজিক নিয়ন্ত্রনের কাজটি সম্পাদিত হয়
কতিপয় প্রাতিষ্ঠানিক এজেন্সির মাধ্যমে। এক্ষেত্রে প্রধান বাহনগুলো হল পুলিশ, আদালত, কারাগার
প্রভৃতি। পক্ষান্তরে, অনানুষ্ঠানিক সামাজিক নিয়ন্ত্রণের প্রধান বাহনগুলো হল পরিবার, বিদ্যালয়,
সমবয়সী গোষ্ঠী, গণমাধ্যম, ধর্ম, সমাজ ও আচার-অনুষ্ঠান।এই এজেন্সিগুলোর মূখ্য উদ্দেশ্য সামাজিক
নিয়ন্ত্রন না হলেও সামাজিক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
সাধারণত বিচ্যূতি হিসেবে সমাজ বা গোষ্ঠীর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এমন আচরণকে মনে করা হয়।
সরলভাবে বলা যায় সামাজিক বিচ্যূতি হচ্ছে সমাজের শ্রেয়োবোধের লঙ্ঘন। বিচ্যূতিকে বোঝার জন্য
জৈবিক ও মনস্তাত্বিক তত্ত¡ থাকলেও সমাজতাত্তি¡ক তত্ত¡ই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।এ ক্ষেত্রে
উল্লেখযোগ্য তিনটি তত্ত¡ হল - শ্রেয়োহীনতার তত্ত¡, পৃথকীকৃত অনুষঙ্গ তত্ত¡ ও লেবেলিং তত্ত¡।
অপরাধ বলতে বুঝায় এমন সব আচরণ যা সমাজের আইন ভঙ্গকে নির্দেশ করে। আর এ আইন
লঙ্ঘনের ফলে শাস্তি প্রদান করা হয়। অপরাধ মানব সমাজের সঙ্গে যেমন ওতপ্রোতভাবে যুক্ত তেমনি
সমাজের জন্য হুমকি স্বরূপও। সমাজবিজ্ঞানে অপরাধকে বুঝতে বিচ্যূতি তত্তে¡র সাহায্য গ্রহণ করতে
হয়।স্থান, কালভেদে অপরাধের তারতম্যের ফলে এর শ্রেণীকরণ সহজসাধ্য নয়। সমাজবিজ্ঞানে
অপরাধের কয়েকটি শ্রেণীকরণ রয়েছে। যেমন, সংঘবদ্ধ অপরাধ, সহিংস অপরাধ, শিকারহীন
অপরাধ, ও পেশাগত অপরাধ।
প্রত্যেক সমাজেই অপরাধ দমন ও প্রতিরোধের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আধুনিক সমাজে আইন,
পুলিশ, আদালত ও কারাগার -এ চারটি বিষয় এর সাথে সম্পৃক্ত। অপরাধ প্রতিরোধে সামাজিক ও
সাংস্কৃতিক উপাদানের রয়েছে বিশেষ ভ‚মিকা। সামাজিক নিয়ন্ত্রনের বাহনগুলি এক্ষেত্রে লক্ষনীয়।
কাজেই অপরাধ প্রতিরোধে প্রয়োজন সমনি¦ত উদ্যোগ।

ঊনশ্রেণী সর্বনি¤œ শ্রেণী টহফবৎ ঈষধংং
দীর্ঘদিন ধরে বেকার, এথনিক গোষ্ঠীর লোক প্রভৃতি যারা শ্রমবাজার থেকে বিচ্ছিন্ন তারা
সর্বনি¤œ শ্রেণীর অর্ন্তভ‚ক্ত।
শ্রেণী ঃ প্রশংসাভিত্তিক
১৯৩০ এবং ১৯৪০ এর দশকে ওয়ার্নার খষড়ুবফ ডধৎহবৎ এবং তাঁর সহযোগীরা মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়াংকি সিটি ণধহশবব ঈরঃু নামের একটি শহরে সামাজিক স্তরবিন্যাস বোঝার
জন্য গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন। এই গবেষণায় শ্রেণী বোঝার জন্য তাঁরা স্থানীয় লোকজন
অন্যদের কোন শ্রেণীভ‚ক্ত মনে করে তার উপর নির্ভর করেছিলেন। ফলে তারা যে পদ্ধতি গ্রহণ
করেছিলেন তাকে বলা হয় জবঢ়ঁঃধঃরড়হধষ গবঃযড়ফ ।
ঐ শহরে কে কোন অবস্থানে রয়েছে এই জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীকে
চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন।
শ্রেণী ভিত্তি
উঁচু উঁচু শ্রেণী টঢ়ঢ়বৎ ঁঢ়ঢ়বৎ পষধংং বর্ণ এবং পারিবারিক পটভ‚মি
নিচু উঁচু শ্রেণী খড়বিৎ ঁঢ়ঢ়বৎ ঈষধংং নতুন বিত্ত
উচু মধ্য শ্রেণী টঢ়ঢ়বৎ গওফফষব ঈষধংং উঁচু শিক্ষা, পেশা, উঁচু আয়ের
ব্যবসা
নিচু মধ্য শ্রেণী খড়বিৎ গরফফষব ঈষধংং কেরানীর চাকুরী এবং অন্যান্য
অকায়িক শ্রম চাকুরী।
উঁচু নিচু শ্রেণী টঢ়ঢ়বৎ খড়বিৎ ঈষধংং কায়িক শ্রম: কারখানার শ্রমিক
নিচু নিচু শ্রেণী খড়বিৎ খড়বিৎ ঈষধংং দারিদ্র্য: সমাজ বহিভর্‚ত লোকজন।
শ্রেণী ঃ মন¦য়গত
শ্রেণীকে চিহ্নিত করার জন্য অনেক সময় জরিপের মাধ্যমে উত্তরদাতাদের নিজেদের অবস্থান
জানার চেষ্টা করা হয়। ১৯৮০ এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এরকম একটি গবেষণা থেকে
দেখা যায় ঃ
বর্গ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেণী
জনসংখ্যা (শতাংশ)
উঁচু শ্রেণী ১
উচু মধ্য শ্রেণী ৮
মধ্য শ্রেণী ৪৩

শ্রমিক শ্রেণী ৩৭
দরিদ্র ৮
লিঙ্গভিত্তিক স্তরবিন্যাস
আগে মনে করা হত নারীরা তাদের পিতা এবং স্বামীর শ্রেণীগত অবস্থানকে প্রতিফলিত করে।
তাই তাদের অবস্থান আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন অনুভ‚ত হয়নি। কিন্তু এখন স্পস্ট
হয়ে উঠেছে যে, নারী এবং পুরুষের মধ্যে যথেষ্ট ভিন্নতা রয়েছে যার ফলে নারী ও পুরুষকে
আমরা দু'টি ভিন্ন স্তর হিসাবে দেখতে পারি। নারী-পুরুষের বিভাজন আদিম সমাজ থেকেই
দেখা যায় এবং সব সমাজেই পুরুষ বিত্ত, ক্ষমতা ও মর্যাদার দিক থেকে শ্রেষ্ঠতর অবস্থানে
থাকে।
সমাজবিজ্ঞানীরা নারী পুরুষের ভিন্নতাকে বা লিংগ পরিচিতিকে চারটি উপাদানের ভিতর দিয়ে
দেখেছেন।
জৈবিক লিংগ ঃ এই উপাদানের সাথে যুক্ত নারী-পুরুষের শারীরিক বৈশিষ্ট্য যার মাধ্যমে
একজনকে নারী এবং একজনকে পুরুষ হিসাবে চিহ্নিত করা যায়।
জেন্ডার পরিচিতি এবহফবৎ ওফবহঃরঃু ঃ জেন্ডার পরিচিতি বলতে বোঝায় নারী অথবা পুরুষ
হিসাবে আমাদের অনুভ‚তি এবং মনোভাব।
জেন্ডার আদর্শ এবহফবৎ ওফবধষং ঃ কোন সমাজে নারী-পুরুষ-কিভাবে আচরণ করবে তা নির্দেশ
করে সংস্কৃতি। ছোট বেলা থেকে মেয়েদের পুতুল এবং ছেলেদের শক্তিভিত্তিক বিষয়ে খেলতে
শেখানো হয়। সামাজিকীকরণের ভিতর দিয়ে নারী পুরুষের ভিন্ন ভিন্ন জগত তৈরি হয়ে যায়।
লিংগ ভ‚মিকা ঝবী জড়ষবং ঃ প্রতিটি সমাজে নারী-পুরুষের ভ‚মিকা, তার অধিকার, শ্রমবিভাজনে
তার অবস্থান এবং তার দায়িত্ব নির্দিষ্ট করা থাকে।
প্রতিটি সমাজে এই চারটি উপাদানের সামঞ্জস্যতার উপর জোর দেওয়া হয়।
এই চারটি উপাদানের সামঞ্জস্যের ফলে সমাজে নারী-পুরুষের ভিন্নতার একটি ছক তৈরী হয়
যাকে লিংগবাদ ঝবীরংস বলা হয়। লিংগবাদ হচ্ছে এমন একটি মতবাদ যাতে মনে করা হয়
নারীরা দুর্বল। নারীদের স্থান ঘরে এবং তাদের বুদ্ধিমত্তা কম এবং ফলে উঁচু চাকুরীতে তাদের
স্থান পাওয়া উচিৎ নয়।
নারী-পুরুষের অসমতা
নারী-পুরুষের অসমতার একটি প্রধান ক্ষেত্র তৈরি হয়ে যায় পরিবারের মধ্যে যেখানে নারীদের
অবস্থান থাকে নিচু এবং তারা নানাভাবে অসমতা এবং সহিংসতার শিকার হয়।
কর্মক্ষেত্রে দেখা যায় নারীদের অবস্থান দুর্বল এবং নাজুক। উন্নত দেশে তাদেরকে কর্মক্ষেত্রে
ব্যাপক সংখ্যায় দেখা গেলেও তারা অল্প কিছু ক্ষেত্রে নিয়োজিত থাকে এবং উঁচু আয়ের চাকুরী
বা পেশাতে তাদের প্রবেশ এখনও বেশ সীমাবদ্ধ। উন্নয়নশীল দেশে নারীদের অবস্থান খুবই
নাজুক। অনেক সময় তাদের গৃহস্থালীর মধ্যে আটক থাকতে হয়।

বয়সভিত্তিক স্তরবিন্যাস
বয়সবাদ অমবরংস বলতে বোঝায় এক বয়োগোষ্ঠীর প্রতি অন্য বয়োগোষ্ঠীর বিদ্বেষমূলক
আচরণ। তবে সাধারণত: এই বৈষম্যমূলক আচরণ ঘটে থাকে বয়স্কদের প্রতি।
বৃদ্ধদের সমস্যাটি তৈরি হচ্ছে সাম্প্রতিককালে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় ৬৫ বছর বা
তার বেশি বয়সের বৃদ্ধদের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে ৬৫ শতাংশের
বেশি এবং ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় তা ১২ শতাংশের বেশি। সারা বিশ্বে আয়ু বেড়ে
যাওয়ায় বয়স্কদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে।
কোন কোন সমাজে সাংস্কৃতিকভাবে বয়সবিরোধী চেতনা কাজ করে। এর ফলে বয়স্কদের
অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়। আবার অনেক সমাজে এখন যে দ্রুত সামাজিক পরিবর্তন ঘটছে তার
ফলে পরিবার বৃদ্ধদের বোঝা ঘাড়ে নিতে চাচ্ছে না। বৃদ্ধরা অসহায়বোধ করছে এবং তারা
নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। ফলে বয়সভিত্তিক স্তরবিন্যাস এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে
পড়েছে।
এথনিসিটি
এথনিক গোষ্ঠী বলতে বোঝায় এমন বহু মানুষ যারা নিজেরা মনে করে এবং অন্যরাও মনে
করে তাদের এমন কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার ফলে বৃহত্তর সমাজের মানুষ থেকে তারা
স্বতন্ত্র। এই স্বতন্ত্রের উপর ভিত্তি করে তারা বিশেষ সাংস্কৃতিক আচরণ গড়ে তোলে।
প্রায় প্রত্যেক সমাজেই দেখা যায় কোন না কোন এথনিক গোষ্ঠী অন্যদের উপর প্রভ‚ত্ব করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাদা প্রোট্যেস্ট্যান্টরা এবং বৃটেনে ইংরেজরা অন্যদের উপর প্রভুত্ব করে।
অন্য দুর্বল জাতিগোষ্ঠীকে বলা হয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী গরহড়ৎরঃু এৎড়ঁঢ়ং.
লুইস বার্থ খড়ঁরং ডৎরঃয এর মতে সংখ্যালঘু গোষ্ঠী হচ্ছে, ধ মৎড়ঁঢ় ড়ভ ঢ়বড়ঢ়ষব যিড়,
নবপধঁংব ড়ভ ঃযবরৎ ঢ়যুংরপধষ ড়ৎ পঁষঃঁৎধষ পযধৎধপঃবৎরংঃরপং, ধৎব ংরহমষবফ ড়ঁঃ ভৎড়স ঃযব
ড়ঃযবৎং রহ ঃযব ংড়পরবঃু রহ যিরপয ঃযবু ষরাব ভড়ৎ ফরভভবৎবহঃরধষ ধহফ ঁহবয়ঁধষ ঃৎবধঃসবহঃ ধহফ
যিড় ঃযবৎবভড়ৎব ৎবমধৎফ ঃযবসংবষাবং ধং ড়নলবপঃং ড়ভ পড়ষষবপঃরাব ফরংপৎরসরহধঃরড়হ.
সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর লোকদের সমান অর্থনৈতিক সুযোগ, সামাজিক সম্মান এবং অনেক ক্ষেত্রে
রাজনৈতিক অধিকার থাকেনা। ফলে তারা ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হয়। এভাবে দেখা যায়
সমাজের বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠী ক্ষমতা, বিত্ত এবং মর্যাদার দিক থেকে স্তর তৈরী করে।

শ্রেণী সামাজিক স্তরবিন্যাসের একমাত্র রূপ নয়। সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ভেবার
স্তরবিন্যাসকে দেখেছেন ক্ষমতার সামাজিক বন্টন হিসাবে। স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে আমরা
ক্ষমতার অসম বন্টন তিনটি ক্ষেত্রে লক্ষ্য করি। ক্ষমতার সরাসরি ও রাজনৈতিক প্রকাশ
রাজনৈতিক দলে লক্ষ্যণীয়। সমাজের পরিসরে সম্মান বা মর্যাদার যে অসম প্রকাশ তা
বিরাজ করে মর্যাদাগোষ্ঠীর ভিতরে। আর অর্থনৈতিক সম্পর্ক, বিশেষ করে সম্পত্তি
বিন্যাসের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে শ্রেণী।
মর্যাদা গোষ্ঠী হচ্ছে প্রাক-ধনতান্ত্রিক সমাজের স্তরবিন্যাসের রূপ। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কোন
গোষ্ঠীর একটি বিশেষ জীবনরীতি যার সদস্যরা অন্য গোষ্ঠীর সাথে সামাজিক যোগাযোগ
সীমাবদ্ধ রাখে। ম্যাক্স ভেবার শ্রেণী প্রত্যয়টিকে সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছেন ধনতান্ত্রিক
সমাজের জন্য। তাঁর মতানুযায়ী যেসব মানুষের বাজারে একই অবস্থানে থাকে এবং
একই পুরস্কার লাভ করে তাদের একটি শ্রেণী বলা যায়। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক শ্রেণীর একই
ধরনের জীবন সম্ভাবনা থাকে। আধুনিক সমাজে শিক্ষাগত, পেশাগত ও অন্যান্য যোগ্যতা
জীবন সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে এবং উচুঁ আয়ের সুযোগ করে দেয় বলে সমকালীন
সমাজবিজ্ঞানীরা শ্রেণী বিশ্লেষণে ব্যবহার করেন পেশা, শিক্ষা এবং আয় অথবা কেবলই
পেশা।
নারী ও পুরুষের মধ্যে যথেষ্ট ভিন্নতা থাকায় তাদেরকে দু'টি ভিন্ন স্তরে দেখা যায়। নারীপুরুষ বিভাজন আদিম সমাজ থেকেই লক্ষণীয় এবং সব সমাজেই বিত্ত, ক্ষমতা ও মর্যাদার
দিক থেকে পুরুষ শ্রেষ্ঠতর অবস্থানে থাকে। সমাজবিজ্ঞানীরা নারী-পুরুষের ভিন্নতা বা লিঙ্গ
পরিচিতিকে জৈবিক লিঙ্গ, জেন্ডার পরিচিতি, জেন্ডার আদর্শ ও লিঙ্গ ভ‚মিকা -এ চারটি
উপাদানের ভিতর দিয়ে দেখেছেন। জৈবিক লিঙ্গে নারীর শারীরিক বৈশিষ্ট্য, জেন্ডার
পরিচিতিতে নারী বা পুরুষ হিসাবে আমাদের মনোভাব, জেন্ডার আদর্শে নারী-পুরুষের ভিন্ন
ভিন্ন জগৎ সৃষ্টিতে সামাজিকীকরণ এবং লিঙ্গ ভ‚মিকায় প্রতিটি সমাজে নারী-পুরুষের
ভ‚মিকা ও শ্রমবিভাজনে অবস্থান ও দায়িত্বের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়।এই চারটি
উপাদানের সামঞ্জস্যের ফলে লিঙ্গবাদ নামে নারী-পুরুষের ভিন্নতার একটি ছক তৈরি হয়
যেখানে নারীরা দুর্বল, নারীদের স্থান ঘরে এবং তাদের বুদ্ধিমত্তা কম বলে উচুঁ চাকুরি
পাওয়া অনুচিৎ মনে করা হয়। নারী-পুরুষের অসমতার প্রধান ক্ষেত্র তৈরি হয় পরিবারের
মধ্যে।পরিবারে নারীর অবস্থান থাকে নিচু এবং নানা ভাবে অসমতা ও সহিংসতার শিকার
হয়।কর্মক্ষেত্রেও নারীদের অবস্থান দুর্বল ও নাজুক।উন্নত দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল
দেশে নারীদের অবস্থান খুবই নাজুক।
এক বয়োগোষ্ঠীর প্রতি অন্য বয়োগোষ্ঠীর বিদ্বেষমূলক আচরণ হচ্ছে বয়সবাদ এবং এই
বৈষম্যমূলক আচরণ সাধারণতঃ বয়স্কদের প্রতিই ঘটে থাকে। সারা বিশ্বে আয়ু বেড়ে
যাওয়ায় বয়স্কদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। অনেক সমাজে দ্রুত সামাজিক
পরিবর্তনের ফলে বৃদ্ধদের বোঝা ঘাড়ে নিতে চাচ্ছে না। বৃদ্ধারা অসহায় বোধ করছে এবং
নানা ভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। বয়সভিত্তিক স্তরবিন্যাস তাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এথনিক গোষ্ঠী বলতে বোঝায় এমন কিছু মানুষ যারা নিজেদের এবং অন্যরাও তাদেরকে
মনে করে তাদের এমন কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার ফলে তারা বৃহত্তর সমাজ হতে
স্বতন্ত্র এবং এই স্বতন্ত্রতার উপর ভিত্তি করে তারা বিশেষ সাংস্কৃতিক আচরণ গড়ে
তোলে। প্রত্যেক সমাজেই লক্ষ্য করা যায় কোন না কোন এথনিক গোষ্ঠী অন্যদের উপর
প্রভুত্ব করছে। অন্য দুর্বল জাতিগোষ্ঠী বা সংখ্যালঘু গোষ্ঠী সমান অর্থনৈতিক সুযোগ,
সামাজিক সম্মান ও অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ও বৈষ্যম্যের
শিকার হয়। ফলে ক্ষমতা, বিত্ত এবং মর্যাদার দিক থেকেও স্তর সৃষ্টি হয়ে যায়।

পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. ক্ষমতার রাজনৈতিক প্রকাশ ঘটে নিচের কোনটিতে ?
ক. সম্প্রদায় খ. গোষ্ঠী
গ. রাজনৈতিক দল ঘ. উপরের একটিও নয়
২. স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অসম বন্টন কয়টি ক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয় ?
ক. ২টি খ. ৩টি
গ. ৪টি ঘ. ৫টি
৩. মর্যাদাগোষ্ঠী কোন সমাজের স্তরবিন্যাসের রূপ বলে মনে করা হয় ?
ক. প্রাক -ধনতান্ত্রিক খ. ধনতান্ত্রিক
গ. আধুনিক ঘ. উপরের সবগুলো
৪. সমাজবিজ্ঞানীরা নারী-পুরুষের ভিন্নতাকে নিচের কোন উপাদানের ভিতর দিয়ে দেখেন ?
ক. জৈবিক লিঙ্গ ও জেন্ডার পরিচিতি খ. জেন্ডার আদর্শ
গ. লিঙ্গ ভ‚মিকা ঘ. উপরের সবগুলো
৫. এথনিক গোষ্ঠীর উদাহরণ নিচের কোনটি ?
ক. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাদা প্রোটেন্ট্যান্ট খ. বৃটেনের ইংরেজ
গ. ক ও খ উভয়ই ঘ. কোনটিই নয়
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. সমাজতাত্তি¡ক দৃষ্টিকোণে বয়সবাদ ও এথনিসিটি বলতে কি বোঝেন ?
২. সামজবিজ্ঞানীরা লিঙ্গ পরিচিতিকে কি কি উপাদানের ভিতর দিয়ে দেখেন ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. সামাজিক স্তর বিন্যাসের অবয়বগুলো আলোচনা করুন ?
২. লিঙ্গ ও বয়সভিত্তিক স্তরবিন্যাস বলতে কি বোঝেন ? বিস্তারিত আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]