বিচ্যূতি বলতে কি বোঝেন? রবার্ট মার্টনের দেওয়া বিচ্যূতির তত্ত¡টি আলোচনা করুন।


ভ‚মিকা
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ জীবন যাপনের প্রয়োজনে একজন নারী বা পুরুষ সমাজের
আদর্শ, মূল্যবোধ, রীতি-নীতি মেনে চলে। ব্যক্তির কাছে এটাই সমাজের প্রত্যাশা। তবু
সমাজের মধ্যেই আবার লক্ষ্য করা যায় এর লঙ্ঘন। সমাজ বা গোষ্ঠীর জন্য কাক্সিক্ষত নয় এমন
আচরণও নিয়মিতভাবে ঘটে থাকে। একেই সমাজবিজ্ঞানীরা আখ্যা দিয়েছেন সামাজিক বিচ্যূতি
হিসাবে ।
সংজ্ঞা
কলিন্স ডিকশোনারী অফ সোসিওলজিতে সামাজিক বিচ্যূতিকে বলা হয়েছে “কোন সমাজ বা
সামাজিক পটভ‚মিতে ‘স্বাভাবিক' বা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত এমন কিছু থেকে ভিন্নতর কোন
সামাজিক আচরণকে।”
"অহু ংড়পরধষ নবযধারড়ঁৎ যিরপয ফবঢ়ধৎঃং ভৎড়স ঃযধঃ ৎবমধৎফবফ ধং 'হড়ৎসধষ' ড়ৎ ংড়পরধষষু ধপপবঢ়ঃধনষব রিঃযরহ ধ ংড়পরবঃু ড়ৎ ংড়পরধষ পড়হঃবীঃ. (ঈড়ষষরহং উরপঃরড়হধৎু ড়ভ ঝড়পরড়ষড়মু,"
১৯৯৫)
সরলভাবে বলা যায় সামাজিক বিচ্যূতি হচ্ছে সমাজের শ্রেয়োবোধ লঙ্ঘন। স্থান, কাল, গোষ্ঠী,
সমাজভেদে সামাজিক মূল্যবোধ এবং শ্রেয়োবোধ ভিন্ন হয় বলে বিচ্যূত আচরণের রূপও হয়
ভিন্ন।
পশ্চিমে ছেলে-মেয়েরা বাবা বা মায়ের নাম ধরে ডাকে। এটি আমাদের দেশে কল্পনা করা যায়
না। আমাদের দেশে এটি বিচ্যূতি। দেশ-কাল ভেদে বিচ্যূতি যেমন ভিন্ন ভিন্ন তেমনি একই
সমাজে একই সময়ে বিচ্যূতির নানা রূপ দেখতে পাওয়া যায়। ধর্মবিশ্বাস থেকে বিচ্যূত

সমাজের সাধারণ আচরণ ভঙ্গ করলে তা পাগলামি বা মানসিক ব্যাধি হিসাবে বিবেচিত হতে
পারে।
বিচ্যূতির তত্ত¡ নানা ধরনের। বিচ্যূতিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে জীববিজ্ঞানের গবেষণা এবং
মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে। সাম্প্রতিককালে বিচ্যূতির জৈবিক তত্ত¡ কিছুটা গুরুত্ব পেলেও
এর যথার্থতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। মনোবিজ্ঞানের তত্ত¡গুলো এখনও অপরিণত।
বিচ্যূতিকে বোঝার জন্য তাই সমাজবিজ্ঞানের তত্ত¡ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বিচ্যূতির তত্ত¡
শ্রেয়োহীনতা অহড়সরব
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধের হার খুব বেশি কেন প্রশ্নটির জবাব খুঁজতে যেয়ে সমাজবিজ্ঞানী
রবার্ট মার্টন এই তত্ত¡ নির্মাণ করেন। তিনি লক্ষ্য করলেন মার্কিন সমাজে সংস্কৃতি এবং
সামাজিক কাঠামোর মধ্যে বৈপরিত্য ও দ্বন্দ¡ রয়েছে। সংস্কৃতি জোর দেয় সাফল্য অর্জনের
জন্য। কিন্তু বাস্তবে সামাজিক কাঠামোর পরিসরে সে ধরনের সাফল্য অর্জনের সুযোগ থাকে
সীমাবদ্ধ।
মার্কিন সমাজে মনে করা হয় যে কেউ উদ্যমী ও পরিশ্রমী হলে সম্পদ এবং সাফল্যের শিখরে
উঠে যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে সমাজের উঁচু স্থানগুলো খুবই সীমিত। টেলিভিশনের পর্দায়
কোটিপতি হওয়া যেমন সহজ বাস্তবে তেমনটি নয়। ফলে অনেকেই সমাজের অনুমোদিত
নিয়মের বাইরে বিচ্যূতিমূলক পন্থায় সাফল্য অনুসন্ধান করে। মার্টনের মতে এর চারটি রূপ
রয়েছে।এগুলো হল- উদ্ভাবনা, আচার-সর্বস্বতা, পলায়ন, ও বিদ্রোহ।
উদ্ভাবনা ওহহড়াধঃরড়হ
এক্ষেত্রে মানুষ সমাজের স্বীকৃত লক্ষ্যকে গ্রহণ করে নতুনতর বিচ্যূতিমূলক উপায়ে সাফল্য
অর্জন করার চেষ্টা করে। পেশাদার অপরাধীরা অপরাধের নতুন নতুন কৌশল খুঁজে বের করে।
ছাত্র-ছাত্রীদের নকল করার বিষয়টিও এর একটি উদাহরণ।
আচার-সর্বস্বতা জরঃঁধষরংস
এ ধরনের আচরণ তখনই ঘটে যখন কেউ কোন কাজের মূল লক্ষ্যকে বিসর্জন দিয়ে উপায়কেই
সবকিছু ভেবে বসে। আমলাতন্ত্রের মধ্যে এ ধরনের ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়। জনগণের সেবার
লক্ষ্যের বদলে তারা উপায় বা পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া বা ফাইলের উপর অনেক সময় জোর দিয়ে
থাকে। মানুষ কষ্ট পায়, কিন্তু নিয়ম বহাল থাকে। এটিও এক ধরনের বিচ্যূতিমূলক আচরণ।
পলায়ন জবঃৎবধঃরংস
পলায়নী আচরণ সৃষ্টি হয় যখন ব্যক্তি সমাজের স্বীকৃত লক্ষ্য এবং লক্ষ্য অর্জনের পথ দু'টিকেই
ত্যাগ করে। এর প্রধান উদাহরণ হচ্ছে নেশাখোর এবং কখনও ভবঘুরে।
বিদ্রোহ জবনবষষরড়হ

বিদ্রোহ হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যখন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সমাজের স্বীকৃত লক্ষ্য ও উপায় দু'টিকে
বদলে নতুন লক্ষ্য ও উপায় সৃষ্টি করে। বিপ্লবে তাই সমাজব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর আহŸান
থাকে যা বিরাজমান সমাজ ব্যবস্থার নিরিখে বিচ্যূতি।
পৃথকীকৃত অনুষঙ্গ তত্ত¡উরভভবৎবহঃরধষ অংংড়পরধঃরড়হ ঞযবড়ৎু
এডউইন, এইচ. সাদারল্যান্ড ১৯৩৯ সালে বিচ্যূতির একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত¡ তুলে ধরেন যা
পৃথকীকৃত অনুষঙ্গ ফরভভবৎবহঃরধষ ধংংড়পরধঃরড়হ নামে পরিচিত। মানুষ বিচ্যূত পরিবেশে বড়
হয়ে উঠলে, বিচ্যূত মানুষদের সাথে বেশি মেলামেশা করলে তাদের মধ্যে অপরাধের প্রেষণা ও
ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে এবং তারা অপরাধের কৌশলগুলো আয়ত্ত করে ফেলতে পারে। অপরাধ
শিক্ষণের ফলজাত। একই পরিবেশে বাস করে কেউ কেউ অপরাধীদের সঙ্গ বেছে নেয় এবং
অপরাধের শিক্ষা লাভ করে। যারা বিচ্যূত নয় এমন মানুষদের সঙ্গ বেছে নেয়, তারা কদাচিৎ
অপরাধী হয়।
লেবেলিং তত্ত¡খধনবষষরহম ঞযবড়ৎু
বিচ্যূতি বা অপরাধের তত্ত¡ নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে ষাটের দশকের
লেবেলিং তত্ত¡। এই তত্তে¡র সারমর্ম হচ্ছে বিচ্যূতি বা অপরাধ একটি সামাজিক প্রক্রিয়া এবং
এই প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে কিছু কিছু কাজ বা আচরণ বিচ্যূত বা অপরাধমূলক হিসাবে চিহ্নিত
হয়। সমাজের শক্তিশালী গোষ্ঠী বা শ্রেণীর স্বার্থে কিছু কিছু মানুষকে বিচ্যূত বা অপরাধী
হিসাবে অভিহিত করা হয়। এর একটি সরল উদাহরণ হচ্ছে খুব তুচ্ছ অপরাধের জন্য কোন
লোক গ্রেফতার হলে অনেক ক্ষেত্রে সে এমনভাবে অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত হয়ে পড়ে যে তার
পক্ষে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব হয় না। তাকে বাধ্য হয়ে তলিয়ে যেতে হয় অপরাধের
জগতে।
সারাংশ
সমাজ বা গোষ্ঠীর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এমন আচরণকে বিচ্যূতি হিসাবে আখ্যায়িত করা
হয়ে থাকে। বিচ্যূতির নানা তত্ত¡ রয়েছেÑ জৈবিক, মনস্তাত্তি¡ক এবং সমাজতাত্তি¡ক।
সমাজবিজ্ঞানে জৈবিক ও মনস্তাত্তি¡ক তত্ত¡ আলোচিত হলেও, সঙ্গতভাবেই সমাজবিজ্ঞান
দৃষ্টিপাত করে সমাজতাত্তি¡ক তত্তে¡র উপর। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য তিনটি তত্ত¡ হল-
শ্রেয়োহীনতার তত্ত¡, পৃথকীকৃত অনুষঙ্গ তত্ত¡ এবং লেবেলিং তত্ত¡।
রবার্ট মার্টনের তত্তে¡ দেখানো হয়েছে বিচ্যূতি সৃষ্টি হয় সংস্কৃতি এবং সামাজিক কাঠামোর
বৈপরীত্য বা দ্বন্দে¡র জন্য। সংস্কৃতি যেসব বিষয় অর্জনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে
কাঠামোগতভাবে সমাজের বিরাজমান নিয়ম অনুসরণ করে তা ব্যক্তির পক্ষে অর্জন করা
অসম্ভব বা খুব দুরূহ হয়ে পড়ে। এই দ্বন্দ¡জনিত চাপের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তি সাংস্কৃতিক
লক্ষ্য বা প্রাতিষ্ঠানিক উপায়কে বদল অথবা ত্যাগ করে। এর ফলে বিচ্যূতি সৃষ্টি হয়।
মার্টনের মতে বিচ্যূতির রূপ চারটিÑ উদ্ভাবনা, আচার-সর্বস্বতা পলায়নী আচরণ ও
বিদ্রোহ। বিচ্যূতির পৃথকীকরণ অনুষঙ্গ তত্তে¡ সামাজিক পরিবেশের উপর গুরুত্ব আরোপ
করা হয় যার পরিসরে ব্যক্তি বিচ্যূত আচরণ শেখার সুযোগ পায়। এখানে অপরাধ হল

শিক্ষণের ফলজাত। লেবেলিং তত্তে¡ বিচ্যূতি বা অপরাধ একটি সামাজিক প্রক্রিয়া এবং
এর ভিতর দিয়ে কিছু কিছু কাজ বা আচরণ বিচ্যূতি বা অপরাধমূলক হিসাবে চিহ্নিত
করা হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. সমাজ বা গোষ্ঠীর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এমন আচরণকে কি বলা হয়?
ক. বিচ্যূতি খ. অপরাধ
গ. অপরাধ ও বিচ্যূতি ঘ. কোনটিই নয়
২. মার্টনের তত্ত¡ানুযায়ী বিচ্যূতি সৃষ্টি হয় কি কারণে?
ক. সংস্কৃতির কারণে
খ. সামাজিক কাঠামোর কারণে
গ. সংস্কৃতি ও সমাজকাঠামোর সমন¦য়ের কারণে
ঘ. সংস্কৃতি ও সমাজকাঠামোর দ্বন্দে¡র কারণে
৩. পৃথকীকৃত অনুষঙ্গ তত্ত¡টি কে প্রদান করেন?
ক. মার্টন খ. সাদারল্যান্ড
গ. রবার্টসন ঘ. ম্যাকাইভার
৪. বিচ্যূত বা অপরাধের তত্ত¡ নির্মাণে লেবেলিং তত্ত¡ কোন দশকে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে?
ক. পঞ্চাশের দশকে খ. ষাটের দশকে
গ. সত্তরের দশকে ঘ. আশির দশকে
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. বিচ্যূতি কি ?
২. লেবেলিং তত্তে¡র মূল বক্তব্য কি ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বিচ্যূতি বলতে কি বোঝেন? রবার্ট মার্টনের দেওয়া বিচ্যূতির তত্ত¡টি আলোচনা করুন।
২. বিচ্যূতির তত্ত¡গুলো কি? আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]