● রাষ্ট্রবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইতিহাস ও মনোবিজ্ঞানের সংজ্ঞা, প্রকৃতি ও
সমাজবিজ্ঞানের সাথে এ সকল শাখার সম্পর্ক।
ভ‚মিকা
কোন কোন সমাজবিজ্ঞানী মনে করেন সামাজিক বিজ্ঞানগুলোর মধ্যে যে বিভাজন তা কৃত্রিম
এবং গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজবিজ্ঞানী হোম্যানস এবড়ৎমব ব. ঐড়সধহং মনে করেন প্রতিটি
সামাজিক বিজ্ঞানী কোন না কোন ভাবে মানুষ বা প্রাণীর আচরণ চর্চার সাথে যুক্ত।
সমাজবিজ্ঞানী ইম্যানুয়েল ওয়ালারস্টাইন ও. ডধষষবৎংঃবরহ এর মতে সামাজিক বিজ্ঞানের
ভাগগুলো তৈরি হয়েছিল ঔপনিবেশিক যুগে এবং এর কোন যথার্থতা নেই। সমাজ, মানুষ এবং
অর্থনীতি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় গড়ে ওঠা এক সমগ্র যার মধ্যে জ্ঞানগত কোন বিভাজন নেই।
তাই সামাজিক বিজ্ঞানগুলো-সামাজিক বা সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান,
অর্থনীতি, ইতিহাস প্রভৃতির মধ্যে যথেষ্ট মিল লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু স্বতন্ত্র জ্ঞানের শাখা
হিসাবে বিকাশ লাভ করার জন্য প্রত্যেকটি শাখার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান চড়ষরঃরপধষ ঝপরবহপব
রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রাতিষ্ঠানিক শাখা হিসাবে রাজনৈতিক প্রপঞ্চ বা সংগঠন এবং রাষ্ট্র, সরকার,
রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম এবং জনগণের এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে
অধ্যয়ন করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে ক্ষমতার অধ্যয়নও বলা যায়।
রাজনীতির অধ্যয়ন বেশ প্রাচীন। এর মূল খুঁজে পাওয়া যায় প্লেটো ও এ্যারিস্টোটলের লেখায়।
তবে সংগঠিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উদ্ভব হয়েছে সম্প্রতি। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞানের
আলোচ্য বিষয় ছিল রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য, চরিত্র ও সংগঠন এবং এটি কিভাবে গতিশীল তার
আলোচনায়।
যেহেতু বিংশ শতাব্দীতে রাষ্ট্রের পরিধি বেশ বিস্তৃত, ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল আলোচনা হয়েছে
প্রশস্ততর। ১৯২০ থেকে ১৯৩০ এর মধ্যে সমাজতন্ত্র ও নাৎসীবাদের বিকাশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে
ক্ষমতার উপর দৃষ্টি প্রদান করতে বাধ্য করে। এই সময় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল বিষয়বস্তু হয়ে পড়ল
রাজনৈতিক ক্ষমতার বিন্যাস। ১৯৫৩ সালে ডেভিড ইষ্টন উধারফ ঊধংঃড়হ কোন সম্প্রদায়ে বা
কমিউনিটিতে সম্পদের কর্তৃত্ব বন্টনকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনুসন্ধানের ক্ষেত্র বলে উল্লেখ করেন।
১৯৫০ সাল হতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আচরণবাদ ইবযধারড়ঁৎরংস দ্বারা প্রভাবিত যা অভিজ্ঞতালব্ধ
প্রপঞ্চের গবেষণায় যেমন- ভোট সম্পর্কিত আচরণ, রাজনৈতিক দল, স্বার্থ-সম্পর্কিত দল,
রাষ্ট্রবিজ্ঞান
প্রাতিষ্ঠানিক শাখা
হিসেবে রাজনৈতিক
প্রপঞ্চ বা সংগঠন
এবং রাষ্ট্র সরকার,
রাজনৈতিক দলের
কার্যক্রম এবং
জনগণের এসব
প্রতিষ্ঠানের সাথে
পারস্পারিক সম্পর্ক
নিয়ে অধ্যয়ন করে।
আইন-প্রণয়ন কার্যক্রম, সিদ্ধান্ত-প্রণয়ন প্রক্রিয়া, কর্তৃত্বপরায়ণতা, রাজনৈতিক পরিবর্তন
ইত্যাদিতে মনোযোগ স্থাপন করে।
দুই দশকের প্রগাঢ় গবেষণার পর এটি স্পষ্ট হয়েছিল যে, আচরণবাদ রাজনৈতিক আচরণের
পর্যাপ্ত তত্ত¡ তৈরীতে ব্যর্থ। নতুন মডেলগুলো যেমন-কাঠামোবাদী ক্রিয়াবাদ, সিস্টেম বা
ব্যবস্থাতত্ত¡, যৌক্তিক পছন্দ তত্ত¡ তেমন বেশ সাফল্য ছাড়াই ব্যবহৃত হয়েছে।
যদিও প্রাচীন পরাদার্শনিক মূল্যবোধ এবং ভাবাদর্শ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি অংশে কাজ করেছে,
কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি বিজ্ঞানের মর্যাদা অর্জন করেনি। যা একে বিজ্ঞানে
পরিণত করেছে তা হল এটির ক্রমাগত নতুন ঘটনার অনুসন্ধান, নতুন ধরনের বিশ্লেষণ এবং
শ্রেয়তর তত্তে¡র নির্মাণ।
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব হয়েছে সমাজবিজ্ঞানের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ব্যাপক
যোগাযোগ থেকে। আমলাতন্ত্রের কার্যক্রম, রাজনৈতিক কর্মীদের সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং
জনগণ কিভাবে রাজনৈতিক বিশ্বাস অর্জন করে তা রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানীরা আলোচনা
করে থাকেন, যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা করেন না। বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মূল্যবোধ, আমলাতন্ত্রে
সিদ্ধান্ত-প্রণয়ন, র্যাডিক্যাল মুভমেন্টের সদস্যপদ প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে থাকেন।
সমাজবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিজ্ঞানীদের সাথে তেমন বড় কোন পার্থক্য নেই এখন। তবে
একথা প্রযোজ্য যে, সমাজবিজ্ঞানের পরিধি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চেয়ে ব্যাপক এবং উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গি
পরস্পর থেকে ভিন্নতর। সমাজবিজ্ঞান যেখানে রাষ্ট্রকে দেখে একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে, সেখানে
রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র বা ক্ষমতাকে আলোচনার সম্পূর্ণ বিষয়বস্তু হিসাবে দেখে।
নৃবিজ্ঞান অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু
নর ও নারীর অধ্যয়নই হচ্ছে নৃবিজ্ঞান। এটি দু'টি গ্রীক শব্দ অহঃযৎড়ঢ়ড়ং (মানুষ) এবং
ষড়মরধ(পাঠ) হতে উদ্ভূত। নৃবিজ্ঞান মানুষের উদ্ভব, আচরণ, সামাজিক কাঠামো এবং সামগ্রিক
সংস্কৃতিকে অনুসন্ধান করে।
গত দুই শতাব্দীর অধিককাল ধরে নৃবিজ্ঞানীরা মানুষের প্রকৃতি ও বর্তমানে তার অবস্থান
সম্পর্কে বিজ্ঞান সম্মত কৌশলে সমগ্র বিশ্ব হতে তথ্য সংগ্রহ করে আসছেন। অতীতে মানব ও
বস্তুর অনুসন্ধানে তাঁরা ভ‚গর্ভ খনন করে জীবাশ্ম অনুসন্ধান করেছেন। তাঁরা পৃথিবীর আদিম
মানুষ এবং তাঁদের বৈচিত্র্যময় ও বিস্তৃত সংস্কৃতির অধ্যয়ন করেন। এখন তাঁরা আধুনিক মানুষ,
সমাজ ও সংস্কৃতির অধ্যয়নেও এগিয়ে এসেছেন।
নৃবিজ্ঞানের দু'টি ভাগ রয়েছে। যথা - দৈহিক নৃবিজ্ঞান চযুংরপধষ অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু ও
সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান ঈঁষঃঁৎধষ অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু। দৈহিক নৃবিজ্ঞান মানুষের দৈহিক বৈশিষ্ট্য,
তার উৎপত্তি ও বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করে। নৃবিজ্ঞানের এই শাখাটি সামাজিক বিজ্ঞান
থেকে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন। পক্ষান্তরে, সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের মূল বিষয়বস্তু হল মানুষের সংস্কৃতি।
সমাজ ও সংস্কৃতির আলোচনায় সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের সাথে সমাজবিজ্ঞান ওতপ্রোতভাবে
জড়িত। এ দু'য়ের মধ্যে তুলনার প্রশ্ন আসে যখন সামাজিক বা সাংস্কৃতিক বিজ্ঞানের তুলনা
আসে। সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান বিবাহ, পরিবার, ধর্ম, রাষ্ট্র, অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি আলোচনা
করে এবং গবেষণায় জাতিতত্ত¡ ঊঃযহড়মৎধঢ়যু, তুলনামূলক জাতিতত্ত¡ ঊঃযহড়ষড়মু, ভাষাতত্ত¡
খরহমঁরংঃরপং এবং প্রত্বতত্ত¡ অৎপযবড়ষড়মু এর সাহায্য নিয়ে থাকে। সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের
ইংরেজী প্রতিশব্দ ঈঁষঃঁৎধষ অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহার করা হয় এবং একই
বিষয় ব্রিটেনে ব্যবহৃত হয় সামাজিক নৃবিজ্ঞান ঝড়পরধষ অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু হিসাবে । নৃবিজ্ঞানের
স্বতন্ত্র বৈশিস্ট্য রয়েছে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ঐড়ষরংঃরপ অঢ়ঢ়ৎড়ধপয এবং প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণমূলক
পর্যবেক্ষণ চধৎঃরপরঢ়ধহঃ-ঙনংবৎাধঃরড়হ নামক পদ্ধতির মধ্যে। শিল্পায়িত সমাজের বাইরে ছোট
ও সরল সমাজের সামাজিক সংগঠনকে নৃবিজ্ঞান অধ্যয়ন করে। সম্প্রতি সামাজিক ও
সমাজবিজ্ঞান
যেখানে রাষ্ট্রকে
দেখে একটি
প্রতিষ্ঠান হিসেবে,
সেখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান
রাষ্ট্র বা ক্ষমতাকে
আলোচনার সম্পূর্ণ
বিষয়বস্তু হিসেবে
দেখে
নৃবিজ্ঞান মানুষের
উদ্ভব, আচরণ,
সমাজ কাঠামো
এবং সামগ্রিক
সংস্কৃতিকে
অনুসন্ধান করে।
নৃবিজ্ঞান যেখানে
মানুষ ও সমাজকে
দেখে ক্ষুদ্র পর্যায়ে
যেখানে
সমাজবিজ্ঞান মানুষ
ও সমাজকে
অধ্যয়ন করে
বৃহত্তর ক্ষেত্রে।
সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান আধুনিক ও আধুনিকায়িত সমাজকে অধ্যয়ন করতে শুরু করেছে। ফলে
এটি সমাজবিজ্ঞানের সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ।
নৃবিজ্ঞান যেখানে মানুষ ও সমাজকে দেখে ক্ষুদ্র পর্যায়ে যেখানে সমাজবিজ্ঞান মানুষ ও
সমাজকে অধ্যয়ন করে বৃহত্তর ক্ষেত্রে। পদ্ধতিগত ভিন্নতাও উভয় বিজ্ঞানে লক্ষ্যণীয়।
সমাজবিজ্ঞানের প্রধান পদ্ধতি হল জরিপ ঝঁৎাবু। অন্যদিকে নৃবিজ্ঞানে প্রধানত: ব্যবহৃত হয়
অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষন পদ্ধতি যা নৃবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মরপধষ গবঃযড়ফ নামেও
পরিচিত।
অর্থনীতি ঊপড়হড়সরপং
স্যামুয়েলসন ঝধসঁবষংড়হ ও নরড্াউস ঘড়ৎফযধঁং (১৯৯৮)-এর মতে,
"ঊপড়হড়সরপং রং ঃযব ংঃঁফু ড়ভ যড়ি ংড়পরবঃরবং ঁংব ংপধৎপব ৎবংড়ঁৎপবং ঃড় ঢ়ৎড়ফঁপব
াধষঁধনষব পড়সসড়ফরঃরবং ধহফ ফরংঃৎরনঁঃব ঃযবস ধসড়হম সধহু ফরভভবৎবহঃ ঢ়বড়ঢ়ষব."
“সমাজ মূল্যবান পণ্য উৎপাদনে অপ্রতুল সম্পদ কিভাবে ব্যবহার করে এবং বিভিন্ন জনের
মধ্যে বন্টন করে তা অর্থনীতি অধ্যয়ন করে।”
এই সংজ্ঞার সাথে দু'টি চিন্তা সম্পৃক্ত। একটি হল সম্পদের অপর্যাপ্ততা বা অপ্রতুলতা এবং
অপরটি এই সম্পদকে দক্ষতার সাথে সমাজ কর্তৃক ব্যবহার। সত্যিকার অর্থে এই অপর্যাপ্ততা
ও দক্ষতার সাথে সম্পদ ব্যবহারের রূপ ও সম্ভাবনা বোঝার জন্য অর্থনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ
বিজ্ঞান হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
সমাজে যদি অসংখ্য দ্রব্যের উৎপাদন হয় এবং মানুষের সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণতা পায় তাহলে সমাজে
অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হয় না। মানুষকে তার চাহিদার জন্য আর ভাবতে হয় না। কর
সংগ্রহের জন্য সরকারকে চেষ্টা করতে হয় না। কিন্তু সমাজে সীমাহীন চাহিদা ও অপ্রতুল
সম্পদ থাকলে কেবল অর্থনীতিই পারে সেই অপ্রতুল সম্পদের সঠিক ব্যবহারের নির্দেশ দিতে।
অর্থনীতির পরিসরকে দু'ভাবে দেখা যায়। যথা, মাইক্রো অর্থনীতি ও ম্যাক্রো অর্থনীতি।
এ্যাডাম স্মিথকে মাইক্রো অর্থনীতির জনক বলা হয় এবং এই অর্থনীতি সাধারণত: বাজার
গধৎশবঃ, ফার্ম ঋরৎস ও গৃহস্থালী ঐড়ঁংবযড়ষফং-এর সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তির আচরণকে
অধ্যয়ন করে। পক্ষান্তরে, ম্যাক্রো অর্থনীতি সামগ্রিক অর্থনীতির কর্মকান্ডকে আলোচনা করে।
সমাজবিজ্ঞান ও অর্থনীতি পরস্পর সম্পর্কিত। কেননা সমাজ থেকে উদ্ভূত অর্থনৈতিক
কার্যকলাপ মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। মার্কস্ -এর মত কোন কোন তাত্তি¡ক মনে
করেন অর্থনৈতিক ভিত্তি সমাজের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা বৈশিষ্ট্যকে তৈরি করে দেয়। অর্থনৈতিক
জীবনের সমাজবিজ্ঞান অর্থনীতি কিভাবে সমাজে প্রভাব সৃষ্টি করে তা অধ্যয়ন করে। এ থেকে
আমরা বুঝতে পারি সমাজবিজ্ঞান ও অর্থনীতির সাথে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মিল রয়েছে।
সমাজবিজ্ঞান সমস্ত সমাজকে অধ্যয়ন করে বলে এর সাথে অর্থনীতির যোগসূত্র রয়েছে।
ইতিহাস ঐরংঃড়ৎু
ইতিহাস মানুষের অতীত জীবনযাত্রা ও সমাজের বিভিন্ন চিত্র সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করে থাকে।
তাই একে অতীতের অধ্যয়ন বলে মনে করা হয়। সমাজের নির্ভুল চিত্র ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য
তুলে ধরাই হচ্ছে ইতিহাসের মূল উদ্দেশ্য। এর জন্য ইতিহাসবিদদের হতে হয় নিরপেক্ষ।
সমাজবিজ্ঞান উৎপত্তিকাল থেকেই ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত। উভয়ের মধ্যেই মিল ও অমিল
লক্ষ্যণীয়।সমাজবিজ্ঞানে ঐতিহাসিক সমাজবিজ্ঞান নামে একটি শাখা রয়েছে। সমাজবিজ্ঞানকে
প্রায়ই ইতিহাসের উপর নির্ভর করতে হয়। সমাজের আলোচনায় ইতিহাসের বিকাশ ও
পরিবর্তন জরুরী। সমাজবিজ্ঞান যেখানে অতীত ও বর্তমানকে অধ্যয়ন করে, ইতিহাস সেখানে
কেবল অতীতকে চর্চা করে থাকে। সমাজবিজ্ঞানীরা বর্তমান অথবা সাম্প্রতিক অতীতের
অধ্যয়নে অধিকতর আগ্রহী। ইতিহাস তার উপাত্তের জন্য ঐতিহাসিক পদ্ধতি ব্যবহার করে।
অন্যদিকে, সমাজবিজ্ঞান ঐতিহাসিক উপাত্ত ব্যবহার করে বিশ্লেষণের প্রয়োজনে। উভয়ক্ষেত্রে
অমিল থাকলেও, একথা যথার্থ যে অতীতের সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে বর্তমান সমাজকে
জানা সম্ভব। তবে সাম্প্রতিককালে ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে সীমারেখা শিথিল হয়ে
আসছে।
মনোবিজ্ঞান চংুপযড়ষড়মু
মনোবিজ্ঞানকে মানব আচরণ এবং মানবিক প্রক্রিয়ার বিজ্ঞান ভিত্তিক চর্চা হিসাবে অভিহিত
করা হয়। মনোবিজ্ঞানের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে প্রত্যক্ষণ, শিক্ষণ, প্রেষণা, স্মৃতি, বুদ্ধিমত্তা,
ব্যক্তিত্ব, মনোভঙ্গী প্রভৃতি। মনোবিজ্ঞানের বেশ কয়েকটি শাখা রয়েছে যথা- ¯œায়ুবিক
মনোবিজ্ঞান ঘবঁৎড়ঢ়ংুপযড়ষড়মু, অস্বাভাবিক মনোবিজ্ঞান অনহড়ৎসধষ চংুপযড়ষড়মু ও
সামাজিক মনোবিজ্ঞান ঝড়পরধষ চংুপযড়ষড়মু। সমাজবিজ্ঞানের সাথে সামাজিক মনোবিজ্ঞানের
সম্পর্ক সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ। সামাজিক মনোবিজ্ঞান ব্যক্তির আচরণ কিভাবে অন্য মানুষের দ্বারা
প্রভাবিত হয় বা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করে। ফলে সমাজবিজ্ঞান ও
সামাজিক মনোবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য বেশ সূক্ষ। তবে সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি সবসময়
গোষ্ঠীকেন্দ্রিক, অন্যদিকে সামাজিক মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্তিকেন্দ্রিক।
সারাংশ
সামাজিক বিজ্ঞান হল মানুষ বা প্রাণীর বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন। সামাজিক বিজ্ঞানগুলোর মধ্যে
বিভাজনকে কোন কোন সমাজবিজ্ঞানী কৃত্রিম ও গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন। কেননা
সামাজিক বিজ্ঞানগুলোর মধ্যে যথেষ্ট মিল লক্ষ্য করা যায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান,
অর্থনীতি, ইতিহাস, মনোবিজ্ঞান প্রভৃতি সামাজিক বিজ্ঞান সমাজের বিভিন্ন উপাদান নিয়ে
আলোচনা করে বলে সমাজবিজ্ঞানের সাথে এ সকল শাখার রয়েছে মিল ও অমিল
উভয়ই।
সমাজবিজ্ঞান যেখানে রাষ্ট্রকে দেখে একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে সেখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র বা
ক্ষমতাকে আলোচনার সম্পূর্ণ বিষয়বস্তু হিসাবে দেখে। এটি প্রাতিষ্ঠানিক শাখা হিসাবে
রাজনৈতিক প্রপঞ্চ বা সংগঠন এবং রাষ্ট্র, সরকার, রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম এবং
জনগণের এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে অধ্যয়ন করে।
নর বা নারীর অধ্যয়নই হচ্ছে নৃবিজ্ঞান। এটি মানুষের উদ্ভব, আচরণ, সামাজিক কাঠামো
এবং সামগ্রিক সংস্কৃতিকে অনুসন্ধান করে। নৃবিজ্ঞান মানুষ ও সমাজকে দেখে ক্ষুদ্র
পর্যায়ে, আর সমাজবিজ্ঞান মানুষ ও সমাজকে অধ্যয়ন করে বৃহত্তর ক্ষেত্রে।
সমাজ মূল্যবান পণ্য উৎপাদনে অপ্রতুল সম্পদ কিভাবে ব্যবহার করে এবং তা বিভিন্ন
জনের মধ্যে বন্টন করে তা অর্থনীতি অধ্যয়ন করে। সমাজবিজ্ঞান ও অর্থনীতি পরস্পর
সম্পর্কিত। কেননা সমাজ থেকে উদ্ভূত অর্থনৈতিক কার্যকলাপ মানুষের জীবনযাত্রাকে
প্রভাবিত করে।
মানুষের অতীত জীবনযাত্রা ও সমাজের বিভিন্ন চিত্র সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করে ইতিহাস।
উৎপত্তিকাল থেকেই সমাজবিজ্ঞান ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত। সমাজবিজ্ঞান যেখানে
অতীত ও বর্তমানকে অধ্যয়ন করে ইতিহাস সেখানে কেবল অতীতকেই চর্চা করে থাকে।
ইতিহাস তার উপাত্তের জন্য ব্যবহার করে ঐতিহাসিক পদ্ধতি। অন্যদিকে সমাজবিজ্ঞান
ঐতিহাসিক উপাত্ত ব্যবহার করে বিশ্লেষণের প্রয়োজনে।
মানব আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার বিজ্ঞানভিক্তিক চর্চা হিসাবে মনোবিজ্ঞানকে অভিহিত
করা হয়। সমাজবিজ্ঞানের সাথে মনোবিজ্ঞানের একটি শাখা সামাজিক মনোবিজ্ঞান
ঝড়পরধষ চংুপযড়ষড়মু -এর সম্পর্ক বেশ নিবিড়। ব্যক্তির আচরণ কিভাবে অন্য মানুষের
দ্বারা প্রভাবিত হয় বা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে এটি আলোচনা করে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. আমলাতন্ত্রের কার্যক্রম, রাজনৈতিক কর্মীদের সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং জনগন কিভাবে
রাজনৈতিক বিশ্বাস অর্জন করে- তা নিয়ে কে আলোচনা করে থাকেন?
ক. রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা খ. রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানীরা
গ. সমাজবিজ্ঞানীরা ঘ. নৃবিজ্ঞানীরা।
২. নৃবিজ্ঞানের কয়টি ভাগ রয়েছে?
ক. ২টি খ. ৩টি
গ. ৪টি ঘ. ৫টি।
৩. কাকে মাইক্রো অর্থনীতি গরপৎড় ঊপড়হড়সরপং-এর জনক বলা হয়?
ক. রিকার্ডো খ. অমর্ত্য সেন
গ. রবার্টসন ঘ. অ্যাডাম স্মিথ
৪. সমাজের নির্ভুল চিত্র ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য তুলে ধরা নিচের কোনটির উদ্দেশ্য?
ক. সমাজবিজ্ঞানের খ. নৃবিজ্ঞান
গ. রাষ্ট্র বিজ্ঞান ঘ. ইতিহাস
৫. শিক্ষণ, প্রেষণা, ব্যক্তিত্ব-ইত্যাদি কোথায় আলোচিত হয়?
ক. মনোবিজ্ঞানে খ. সমাজবিজ্ঞানে
গ. অর্থনীতিতে ঘ. উপরের কোনটিতেই নয়।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করুন।
২. রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির আলোচ্য বিষয় কি ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. সমাজবিজ্ঞানের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান ও সমাজ মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা
করুন।
২. ইতিহাস ও অর্থনীতি সমাজবিজ্ঞানের সাথে কিভাবে সম্পর্কিত ? আলোচনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত