সমাজ পরিবর্তনে বিবর্তনবাদী, ক্রিয়াবাদী ও নৈরাজ্য তত্ত¡গুলো বিশ্লেষণ করুন।


ভ‚মিকা
সমাজ কেন পাল্টায় এ প্রশ্ন মানুষ প্রাচীনকাল থেকে করে আসছে। তবুও সমাজ পরিবর্তনের
তত্ত¡ তৈরির ইতিহাস খুব দীর্ঘ সময়ের নয়। মধ্যযুগে আরব মনীষী ইবনে খলদুন (১৩৩২-
১৪০৬) সমাজ পরিবর্তনের চমৎকার তত্ত¡ দিয়েছিলেন।খলদুনের মতে সমাজ ও সভ্যতার
পরিবর্তন হয় চক্রাকারভাবে। সমাজ ও সভ্যতার সূচনা, বিকাশ এবং বিলয় ঘটে। আরব
ইতিহাসের গভীর পর্যালোচনা থেকে তিনি এই তত্তে¡ পৌঁছেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন মানুষ
যখন নগরজীবন যাপন করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন তাদের মধ্যে সংহতি মারাত্মকভাবে হ্রাস
পায়। অন্যদিকে উপজাতির মধ্যে থাকে গভীর সংহতি। তারা যখন নগরবাসীদের আক্রমণ
করে তখন নগরবাসীরা পরাভ‚ত হয়। নতুন বিজয়ীরাও একই প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে এক সময়ে
পরাজিত হয়। এভাবে আবর্তিত হয় ইতিহাসের চাকা। খলদুনের পরে সমাজ পরিবর্তন নিয়ে
গুরুত্বপূর্ণ তত্ত¡ তৈরি হতে শুরু করে শিল্প বিপ্লবের সময় থেকে।
সমাজ পরিবর্তনের রূপ
সমাজ পরিবর্তনের তত্ত¡গুলোর মধ্যে সাধারণ একটি ভাগ হচ্ছে পরিবর্তনের রূপ নিয়ে।
পরিবর্তনের রূপের ক্ষেত্রে আমরা দু'টি ধরন দেখতে পাইÑ চক্রাকার এবং এক রৈখিক। বিংশ
শতকের বিখ্যাত ঐতিহাসিক টয়েনবিও খলদুনের মত সভ্যতার উত্থান-পতনকে চিহ্নিত
করেছেন চক্রাকারভাবে। সমাজবিজ্ঞানী প্রিথিম সোরোকিন (১৮৮৯-১৯৬৮) সংস্কৃতির
পরিবর্তনের তিনটি চক্রাকার পর্যায় তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে সমাজে তিন ধরনের মানসিকতা
লক্ষ্য করা যায়। ইন্দ্রিয়ভিত্তিক ঝবহংধঃব অবস্থায় ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বাস্তবতাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
মনে করা হয়। মরমী ওফবধষরংঃরপ পর্যায়ে মানুষ ধর্মীয় বাস্তবতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব প্রদান

করে। এই দু'পর্যায়ের মিশ্রিত অবস্থাকে তিনি ভাবগত ওফবধঃরড়হধষ বলেছেন। এই তিনটি
পর্যায়ের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের আবর্তন ঘটে।
বিবর্তনবাদী তত্ত¡
ইতিহাস সরল রেখায় প্রবাহিত হয়, ইতিহাস ক্রমধারায় প্রসারমান, ইতিহাস বিকাশমান এমন
ধারণা বেশ জনপ্রিয়। এটিই হচ্ছে ইতিহাসের একরৈখিক ধারণা। সমাজ পরিবর্তনের
একরৈখিক চিন্তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ হচ্ছে বিবর্তনবাদী তত্ত¡।
জীববিজ্ঞানে ঊনবিংশ শতাব্দীতে চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) যে বিবর্তনবাদী তত্ত¡ নির্মাণ
করেছিলেন তার প্রভাব সমাজবিজ্ঞানে পড়েছিল গভীরভাবে। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রায় অধিকাংশ
সমাজবিজ্ঞানী বিবর্তনবাদের পরিসরে সমাজ পরিবর্তনের প্রবাহকে বুঝতে চেষ্টা করেছিলেন।
তাঁরা মনে করেছিলেন সমাজ বা সভ্যতা নি¤œতর স্তর বা পর্যায় থেকে ক্রমাগত উচ্চতর স্তরে
উন্নীত হতে থাকে।
বিবর্তনবাদের আলোচনায় কার্ল মার্কস্ -এর নাম উল্লেখযোগ্য। তাঁর মতে কোন একটি
সমাজের মৌলিক পরিবর্তন সৃস্টি হয় উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটলে। উৎপাদন পদ্ধতি
বলতে বোঝায় উৎপাদনশক্তি এবংউৎপাদনসম্পর্কের সন্ধিযুক্ত মিলন যার মধ্যে উৎপাদন
সম্পর্ক প্রধান। উৎপাদনশক্তি ঋড়ৎপবং ড়ভ চৎড়ফঁপঃরড়হ বলতে বোঝায় কাঁচামাল, হাতিয়ার,
শ্রমশক্তি এবং কখনও শ্রমবিভাজন। উৎপাদনশক্তির বিকাশ অবশ্য নির্ভর করে উৎপাদন
সম্পর্কের ওপর। উৎপাদনসম্পর্ক বলতে বোঝায় উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উৎপাদক এবং
অনুৎপাদকগোষ্ঠীর মধ্যে যে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সম্পর্ক তৈরি হয় তাকে। শ্রেণী-বিভক্ত
সমাজে এই সম্পর্ক গড়ে ওঠে উৎপাদনের উপায়Ñযার দ্বারা উৎপাদন করা হয় এর মালিক এবং
শ্রমদানকারী শ্রেণীকে কেন্দ্র করে। মার্কস্ মনে করতেন মানব ইতিহাসের বিকাশ ঘটেছে চারটি
ধাপের ভিতর দিয়েÑআদিম সাম্যবাদ, দাসপ্রথা, সামন্তবাদ এবং ধনতন্ত্র। এর প্রত্যেকটি
একটি উৎপাদন পদ্ধতি। প্রতিটি উৎপাদন পদ্ধতির অবসান ঘটে শ্রেণীদ্বন্দে¡র ভিতর দিয়ে।
সমাজ বিবর্তনের শেষ ধাপ হচ্ছে দ্বন্দ¡বিহীণ সাম্যবাদী সমাজ, যা প্রতিষ্ঠা হয় ধনতন্ত্রের
পতনের উপর। মার্কস্ -এর তত্ত¡ যথার্থ প্রমাণিত না হলেও সমকালীন ইতিহাসে এর তাৎপর্য
গভীর।
ক্রিয়াবাদী তত্ত¡
ক্রিয়াবাদী তত্ত¡ সাধারণত: ব্যাখ্যা করে কিভাবে সমাজ টিকে থাকে এবং কিভাবে সমাজের
অংশগুলো একে অপরের পরিপূরক হিসাবে কাজ করে। সমাজ পরিবর্তন ক্রিয়াবাদী তত্তে¡র
অনি¦ষ্ট নয়। ক্রিয়াবাদী তাত্তি¡ক ট্যালকট পার্সনস্ (১৯০২-১৯৭৯) অবশ্য বিবর্তনবাদকে
ক্রিয়াবাদী তত্তে¡র সাথে সমনি¦ত করে সমাজ পরিবর্তনের তত্ত¡ প্রদান করেছেন। পার্সনস্রে মতে
সমাজ পরিবর্তনের সাথে চারটি প্রক্রিয়া যুক্ত।
❏ পৃথকীকরণ উরভভবৎবহঃরধঃরড়হ

এর মাধ্যমে সমাজের প্রতিষ্ঠান বিভাজিত হয়ে আরো বেশি বিশেষায়িত ভ‚মিকা পালন
করে। প্রাচীন কালে বিদ্যা-শিক্ষা হত মসজিদ সংলগ্ন মক্তব বা পন্ডিত-মশাইয়ের টোলে।
আধুনিক কালে শিক্ষার জন্য তৈরি হয়েছে অজস্র প্রতিষ্ঠান। কিন্তু একটু গভীরভাবে লক্ষ্য
করলে আমরা দেখবো প্রাতিষ্ঠানিক বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে নির্দিষ্ট ক্রমধারায়Ñধর্মশিক্ষা
থেকে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা। ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা বিভক্ত হয়েছে সাধারণ ও বিজ্ঞানশিক্ষায়।
বিজ্ঞানশিক্ষা থেকে পৃথক হয়ে গেছে প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা। এভাবে উদাহরণটিকে
ক্রমাগত প্রসারণ করা যায়।
❏ অভিযোজনমূলক ক্রমোন্নয়ন অফধঢ়ঃরাব টঢ়মৎধফরহম
পৃথকীকরণের ফলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি আরো বিশেষায়িত ভ‚মিকা পালন করে।
একটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভ‚মিকা অনেক বেশি বিশেষায়িত।
❏ অন্তর্গতকরণ ওহপষঁংরড়হ
এর মাধ্যমে সমাজ ক্রমাগত প্রান্তিক গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে সমাজের কেন্দ্রের
কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দেয়। এই প্রক্রিয়ায় আমাদের দেশে গরীব নারী বা
পাহাড়িদের আরো ক্ষমতাবান করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে তারা সমাজের সব
ধরনের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে।
❏ মূল্যবোধ ব্যাপ্তি ঠধষঁব এবহবৎধষরুধঃরড়হ
এই প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে সমাজে সৃষ্টি হয় নতুন মূল্যবোধ যা অনেক নতুন ধরনের
কর্মকান্ডকে বৈধতা প্রদান করে। এক সময় শাড়ি ছিল সব নারীর সাধারণ পোষাক।
এখন তাদের পোষাকে এসেছে নানা বৈচিত্র্য। সমাজে নতুন মূল্যবোধ সৃষ্টি হবার ফলে
এটি সম্ভব হয়েছে।
পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়া কিন্তু সমাজের স্থিতিশীলতার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে না।
ক্রিয়াবাদী সমাজবিজ্ঞানী স্মেলসার ঝসবষংবৎ দেখিয়েছেন পরিবর্তন কখনও সাময়িক
নৈরাজ্য বা শ্রেয়হীনতা অহড়সরব তৈরি করলেও তা স্থায়ী হয় না। নতুন প্রতিষ্ঠান
অচিরেই আচরণের নিয়ম তৈরি করে ফেলে।
ব্যাপ্তিবাদ উরভভঁংরড়হরংস
নৃবিজ্ঞানে ব্যাপ্তিবাদ ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করেছিল কিভাবে সংস্কৃতি একটি কেন্দ্র বা অঞ্চল
থেকে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। সমাজবিজ্ঞানে ব্যাপ্তিবাদ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছে
কিভাবে উন্নত বিশ্ব থেকে জ্ঞান, চিন্তা এবং প্রযুক্তি অনুন্নত বিশ্বে প্রসারিত বা ব্যাপ্ত হয়। বলতে
গেলে আধুনিকায়ন তত্ত¡ ব্যাপ্তিবাদের একটি ভিন্ন রূপ।
নৈরাজ্য তত্ত¡ ঈযধড়ং ঞযবড়ৎু
সমকালীন সমাজ এক বিস্ময়কর এবং নাটকীয় পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রযুক্তির কল্পনাতীত বিকাশের পাশাপাশি পরিবেশের ওপর সৃষ্টি হচ্ছে ভয়ঙ্কর হুমকি। শীতল
যুদ্ধ শেষ হলেও পারমাণবিক বোমার বিস্তার রোধ করা যায়নি। তা আরো বড় হুমকির কারণ
হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিস্তার ঘটেছে এইডস অওউঝ এর মত ভয়ঙ্কর ঘাতক ব্যাধির। নতুন সহস্রকে
এসে মানুষ বুঝতে পারছে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোন নিশ্চিত ধারণাই এখন আর সম্ভব নয়।
প্রযুক্তির বিস্তারের ওপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ কতখানি রয়েছে তা নিয়ে রয়েছে পন্ডিতজনের মধ্যে
দ্বন্দ¡ এবং শংকা। ফলে সমাজ পরিবর্তনকে অনুধাবন করার জন্য সমাজবিজ্ঞানীরা ক্রমাগত

আকর্ষিত হচ্ছেন গণিতের নৈরাজ্য তত্তে¡র প্রতি। এই তত্তে¡র মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে
সমাজব্যবস্থার মধ্যে কোন এক বা একাধিক ইনপুট অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে যা হঠাৎ
ব্যাপক পরিবর্তন সৃষ্টি করতে বা এমনকি ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে পারে। সোভিয়েত রাশিয়ার
পতনকে এর একটি উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা যায়।
আধুনিকায়ন তত্ত¡গড়ফবৎহরংধঃরড়হ ঞযবড়ৎু
ইতিহাসে আধুনিককালের শুরু রেনেসাঁশের সময় থেকে, সমাজবিজ্ঞান আধুনিক সমাজের শুরু
শিল্পবিপ্লবের যুগ থেকে। আধুনিকায়ন হচ্ছে আধুনিক সমাজ সৃষ্টির প্রক্রিয়া। আধুনিকায়ন তত্ত¡
সমাজ পরিবর্তনের চারটি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে থাকে।
❏ সনাতনী সরল প্রযুক্তির বদলে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তির ব্যবহার।
❏ কৃষিতে খোরাকী উৎপাদনের বদলে বাণিজ্যিক উৎপাদনের বিস্তার।
❏ শিল্পক্ষেত্রে জৈবশক্তির (মানুষ বা প্রাণীর) শক্তির বদলে অজৈব শক্তির (যন্ত্রশক্তির)
ব্যবহার।
❏ কৃষি গৃহস্থালীর এবং গ্রামের বদলে নগরজীবন সমাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়া।
ফরাসী বিপ্লব এবং শিল্পবিপ্লবের পর ইউরোপে আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে এবং অনেকের মতে সত্তরের দশকে পশ্চিমা বিশ্ব উত্তর-আধুনিক যুগে
প্রবেশ করেছে। উত্তর-আধুনিকতা সম্পর্কে একটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত এবং সাধারণ ধারণা তুলে
ধরা প্রয়োজন।
❏ উত্তর-আধুনিকতার তাত্তি¡করা মনে করেন আমরা এখন এত দ্রুত পরিবর্তনশীল তথ্য যুগে
প্রবেশ করেছি যে, আধুনিককালের বা আধুনিকতার চিন্তা-ভাবনা সমকালের জন্য প্রযোজ্য
নয়।
❏ অষ্টাদশ শতাব্দীর আলোক-প্রাপ্তি ঊহষরমযঃবহসবহঃ যুগের ধারণা যে, আমাদের মনের
বাইরে একটি বিষয়গত বিশ্ব রয়েছে যার নিয়মকে আমরা যুক্তির মাধ্যমে ব্যাখ্যা এবং
বিশ্লেষণ করতে পারি তা যথার্থ নয়।
❏ বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে সমাজ এত বৈচিত্র্যপূর্ণ বা ভিন্নমুখী হয়ে পড়েছে যে, কোন
কিছুকে সমাজ, সামাজিক কাঠামো বলে অভিহিত করা সম্ভব হচ্ছে না। শ্রেণী, লিঙ্গ এবং
এথনিক গোষ্ঠীর ঊঃযহরপ এৎড়ঁঢ় মধ্যে যে ভাগ তা ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে সামাজিক
প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির আচরণের মধ্যে যে সম্পর্ক সমাজবিজ্ঞানীরা খুঁজতে চেষ্টা করেন তা
এখন বলতে গেলে সম্ভব নয়।
❏ ফলে মার্কসবাদ বা ক্রিয়াবাদের মত ম্যাক্রো পর্যায়ের তত্ত¡ বা ‘বিশাল বিবরণ' শুধু ভ্রান্ত
নয়, তা অর্থহীনও বটে।
বিশাল তত্ত¡ বা বিবরণের দুর্বলতাকে তুলে ধরার জন্য তাঁরা গ্রহণ করেছেন বিনির্মাণ
উবপড়হংঃৎঁপঃরড়হ কৌশল। বিনির্মাণ একটি তত্ত¡ যা রচনার অংশগুলোর মধ্যে যে বৈপরীত্য
থাকে তাকে উন্মোচন করে। উত্তর-অধুনাবাদ কোন তত্ত¡ নির্মাণ করে না। এটি বরং
সমালোচনামূলক একটি দৃষ্টিভঙ্গি। এই দৃষ্টিকোণ থেকে কোন তত্ত¡কে সত্য বা মিথ্যা প্রমাণ
করা সম্ভব নয়।
নির্ভরশীলতার তত্ত¡উবঢ়বহফবহপু ঞযবড়ৎু

নির্ভরশীলতা তত্তে¡র বিকাশ শুরু হয় লাতিন আমেরিকায় গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে। ষাটের
দশকে এটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন আন্দ্রে গুন্ডার ফ্রাংক অহফৎব এঁহফবৎ ঋৎধহশ.
নির্ভরশীলতা তত্তে¡র সারমর্ম হচ্ছে:
❏ ঔপনিবেশিক যুগে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো বর্তমানের তৃতীয় বিশ্বের
দেশগুলোর ওপর আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করে।
❏ এর ফলে এসব দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।
❏ ঔপনিবেশিক যুগের পর থেকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো উন্নত বিশ্বের ওপর অর্থনৈতিক
এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে নির্ভরশীল থেকে শোষণের শিকার হচ্ছে এবং এসব দেশে
কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ঘটছে না।
বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত¡ ডড়ৎষফ-ঝুংঃবস ঞযবড়ৎু
সত্তরের দশকে নির্ভরশীলতা ও মার্কসবাদী তত্তে¡র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী
ইম্যানুয়েল ওয়ালারস্টাইন এই তত্ত¡ নির্মাণ করেন। এই তত্ত¡ অনুসারে গত ৫০০ বছর ধরে
বিশ্বে ধনতান্ত্রিক বিশ্ব-ব্যবস্থা বিরাজমান রয়েছে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই এই ব্যবস্থার প্রান্ত,
উপ-প্রান্ত এবং কেন্দ্র এর কোন একটি উপভাগে অবস্থান করে। প্রধানত: কেন্দ্রের সাথে যুক্ত
গুটিকয়েক দেশ প্রান্তের অজস্র দেশগুলোকে শোষণ করে। সময়ের সাথে সাথে দেশগুলোর
অবস্থান বদল হয়।
সারাংশ
সমাজ পরিবর্তনের তত্ত¡ খুব দীর্ঘ সময়ের নয়। আরব মনীষী ইবনে খলদুনের মতে সমাজ
ও সভ্যতার পরিবর্তন হয়ে চক্রাকারভাবে। খলদুনের পরে শিল্প বিপ্লবের সময় থেকেই
শুরু হয় সমাজ পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ তত্ত¡ তৈরির চেষ্টা। সমাজ পরিবর্তনের রূপের ক্ষেত্রে
চক্রাকার ও একরৈখিকÑ দু'টি ধরন লক্ষণীয়। সমাজবিজ্ঞানী প্রিথিম সোরোকিন সংস্কৃতির
পরিবর্তনে ইন্দ্রিয়ভিত্তিক ঝবহংধঃব, আদর্শগত ওফবধষরংঃরপ ও ভাবগত ওফবধঃরড়হধষ-এই
তিনটি চক্রাকার পর্যায়কে তুলে ধরেছেন যার মধ্য দিয়ে ঘটে ইতিহাসের আবর্তন। সমাজ
পরিবর্তনে মার্কসবাদী তত্তে¡র যথার্থতা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থাকলেও সমকালীন ইতিহাসের
জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। বিবর্তনবাদের আলোচনায় কার্ল মার্কস্ মনে করেন যে,
কোন একটি সমাজের উৎপাদনশক্তি এবং উৎপাদন-সম্পর্কের পরিবর্তন হলে সমাজে ঘটে
পরিবর্তন। মার্কস্ -এর মতে মানব ইতিহাসের বিকাশ ঘটে আদিম সাম্যবাদ, দাসপ্রথা,
সামন্তবাদ, ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রÑএ পাঁচটি ধাপের ভিতর দিয়ে।
ক্রিয়াবাদী তত্ত¡ সমাজ কিভাবে টিকে থাকে এবং কিভাবে সমাজের অংশগুলো একে
অপরের পরিপূরক হিসাবে কাজ করে তা ব্যাখ্যা করে। ক্রিয়াবাদী তাত্তি¡ক ট্যালকট
পার্সনসের মতে সমাজ পরিবর্তনের সাথে পৃথকীকরণ, অভিযোজনামূলক, অন্তর্গতকরণ ও
মূল্যবোধ ব্যাপ্তিÑ এই চারটি প্রক্রিয়া যুক্ত। সমাজ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া এখন এত জটিল
যে পুরানো তত্তে¡র সাহায্যে সমাজ পরিবর্তন ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। ফলে, বর্তমানে
সমাজবিজ্ঞানীরা ক্রমাগত আকর্ষিত হচ্ছেন গণিতের নৈরাজ্য তত্তে¡র প্রতি যেখানে
প্রতিপাদ্য বিষয় হল সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে কোন এক বা একাধিক ইনপুট অস্থিতিশীলতা
তৈরি করতে পারে যা হঠাৎ ব্যাপক পরিবর্তন সৃষ্টি করতে বা এমনকি ব্যবস্থার অবসান
ঘটাতে পারে। আধুনিকায়ন তত্ত¡ সমাজ পরিবর্তনের চারটি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার ওপর
গুরুত্ব আরোপ করে। এগুলো হলÑ সনাতনী সরল প্রযুক্তির বদলে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তির
ব্যবহার, কৃষিতে খোরাকী উৎপাদনের বদলে বাণিজ্যিক উৎপাদনের বিস্তার, শিল্পক্ষেত্রে

জৈব শক্তির বদলে অজৈব শক্তির ব্যবহার এবং কৃষি-গৃহস্থালীর ও গ্রামের বদলে
নগরজীবন সমাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়া।
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে এবং অনেকের মতে সত্তরের দশকে পশ্চিমা বিশ্ব প্রবেশ করেছে
উত্তর-আধুনিক যুগে। উত্তর-আধুনিকতার তাত্তি¡করা বিশাল তত্ত¡ বা বিবরণের দুর্বলতাকে
তুলে ধরার জন্য গ্রহণ করেছেন বিনির্মাণ কৌশল। এটি একটি সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি
যার দ্বারা কোন তত্ত¡কে সত্য বা মিথ্যা প্রমাণ সম্ভব নয়।
নির্ভরশীলতা তত্ত¡ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো কেন অনুন্নত তার কারণ ব্যাখ্যা করে উন্নত
বিশ্বের ওপর এসব দেশের নির্ভরশীলতার মধ্যে। বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত¡ অনুসারে গত ৫০০
বছর ধরে বিশ্বে ধনতান্ত্রিক বিশ্ব-ব্যবস্থা বিরাজমান রয়েছে। ধনতান্ত্রিক বিশ্ব-ব্যবস্থার
মাধ্যমে কেন্দ্রের শক্তিশালী দেশগুলো শোষণ করছে প্রান্ত বা উপপ্রান্তকে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. কার মতে চক্রাকারভাবে সমাজ ও সভ্যতার পরিবর্তন হয় ?
ক. অগ্যুস্ত্ কঁৎ খ. ইবনে খলদুন
গ. ম্যাক্স ভেবার ঘ. উপরের সবগুলো
২. প্রিথিম সোরোকিন সংস্কৃতির পরিবর্তনে কয়টি পর্যায় তুলে ধরেছেন?
ক. ৩টি খ. ৪টি
গ. ৫টি ঘ. ৬ টি
৩. ফরাসী বিপ্লব ও শিল্প বিপ্লবের পর ইউরোপে নিচের কোনটি দ্রুত বিস্তার লাভ করে?
ক. আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া খ. উত্তর অধুনায়ন প্রক্রিয়া
গ. নির্ভরশীলতা ঘ. বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত¡
৪. মার্কস্ -এর মতে মানব ইতিহাসের বিকাশ ঘটেছে কয়টি ধাপের মধ্য দিয়ে?
ক. ২টি খ. ৩টি
গ. ৪টি ঘ. ওপরের কোনটিই নয়
৫. “সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে কোন এক বা একাধিক ইনপুট অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে
যা হঠাৎ ব্যাপক পরিবর্তন সৃষ্টি করতে পারে বা এমনকি অবস্থার অবসান ঘটাতে পারে”Ñ
এটি নিচের কোন তত্ত¡টির প্রতিপাদ্য বিষয়?
ক. আধুনিকায়ন তত্ত¡ খ. নির্ভরশীলতা তত্ত¡
গ. বিশ্ব-ব্যবস্থা তত্ত¡ ঘ. নৈরাজ্য তত্ত¡
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. সামাজিক পরিবর্তনে বিবর্তনবাদী তত্ত¡ বলতে কি বোঝেন ?
২. নির্ভরশীলতা তত্তে¡র মর্মার্থ উল্লেখ করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. সমাজ পরিবর্তনের বিভিন্ন তত্ত¡গুলো কি কি? আলোচনা করুন।
২. সমাজ পরিবর্তনে বিবর্তনবাদী, ক্রিয়াবাদী ও নৈরাজ্য তত্ত¡গুলো বিশ্লেষণ করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]