আত্মহত্যার বিভিন্ন ধরনগুলো কি? আলোচনা করুন।
আত্মহত্যার কারণকে সমাজতাত্তি¡ক প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা করুন।


সামাজিক চিন্তা ও সমাজবিজ্ঞানে প্রধান অবদান


সামাজিক চিন্তা ও সমাজবিজ্ঞানে প্রধান অবদানগুলির সাথে যাদের নাম দৃঢ় ভাবে সম্পৃক্ত তাঁরা হলেন
অগ্যুস্ত্ কঁৎ, এমিল দুরক্যাঁ, কার্ল মার্কস্ ও ম্যাক্স ভেবার। কৎঁ -এর দৃষ্টবাদ, দুরক্যাঁ -এর আত্মহত্যা,
মার্কস্ -এর বিচ্ছিন্নতাবোধ ও ভেবারের ধর্ম ও ধনতন্ত্রের সমাজতাত্তি¡ক বিশ্লেষণকে সমাজবিজ্ঞানে বেশ
গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়।
কঁৎ -এর দৃষ্টবাদের মর্মবাণী হচ্ছে বিজ্ঞানের একত্ব। দৃষ্টবাদী সমাজবিজ্ঞানের কাজ হচ্ছে ঘটনার
অনুসন্ধান ও তাঁর ভিত্তিতে নিশ্চিত নিয়মকে আবিষ্কার এবং এই নিয়মের ভিত্তিতে তত্ত¡ নির্মাণ। অন্যান্য
বিজ্ঞানের ন্যায় দৃষ্টবাদী পদ্ধতির ভিত্তি হচ্ছে ঘটনার পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ ও তুলনা।
সমাজবিজ্ঞানে তত্তে¡র প্রকৃতি কি এবং কিভাবে তত্ত¡ ও উপাত্ত মেলাতে হয় তা এমিল দুরক্যাঁ তাঁর
‘আত্মহত্যা' গ্রন্থে দেখিয়েছেন। সাধারণ দৃষ্টিতে আত্মহত্যা ব্যক্তিগত ব্যাপার হলেও তিনি
আত্মহত্যাকে দেখিয়েছেন সামাজিক প্রপঞ্চ হিসেবে এবং আত্মহত্যার হারকে সম্পৃক্ত করেছেন
সামাজিক অঙ্গীকরণের সাথে।
জার্মান ভাববাদী চিন্তার উৎস থেকে এসেছে কার্ল মার্কস্ -এর বিচ্ছিন্নতাবোধ ধারণাটি। বিচ্ছিন্নতাবোধ
দর্শনজাত ও পরাদার্শনিক হলেও তিনি একে দেখেছেন সামাজিক প্রক্রিয়া হিসেবে যেখানে মানুষ বা
সমাজ গড়ে তোলে সমষ্টিগত সংগঠন এবং এরই মধ্যে তারা হারিয়ে ফেলে তাদের সত্ত¡াকে।
সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ভেবার দেখিয়েছেন ধনতন্ত্রের বিকাশে ধর্ম কিভাবে সম্পৃক্ত। তাঁর মতে ইউরোপে
ধনতন্ত্রের বিকাশ হয়েছিল গভীর ধর্মীয় ও নৈতিক আলোড়নের মধ্য দিয়ে। তিনি দেখিয়েছেন
কালভীনবাদের নৈতিক বিশ্বাস ও আচরণ কিভাবে সাহায্য করেছিল ধনতন্ত্রের বিকাশকে।
মূলত: এ সকল বিষয় নিয়েই এই ইউনিটে আলোচনা করা হয়েছে।
অগ্যুস্ত্ কঁৎ ১৭৯৮ সালে ফ্রান্সের মন্টপেয়ারে গড়হঃঢ়বষরবৎ এ জন্মগ্রহণ করেন। কাজেই বলা
যায় তিনি জন্মেছিলেন ফরাসী বিপ্লবের পরে এবং বেড়ে উঠেছিলেন শিল্প বিপ্লবের যুগে। দু'টি
বিপ্লবই তাঁর জীবনকে স্পর্শ করেছিল প্রচন্ডভাবে। তিনি প্রাকৃতিক বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন
প্যারিসের ইকলে পলিটেকনিক ঊপড়ষব চড়ষুঃবপযহরয়ঁব-এ। জীবনের অধিকাংশ সময়ই তিনি
ব্যয় করেছেন প্যারিসে এবং অভিজ্ঞতা লাভ করেন তৎকালীন সামাজিক, বুদ্ধিগত ও
রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে। গণিত শিক্ষাদানে তিনি পেশাগত জীবন শুরু করলেও তাঁর মূল
আগ্রহ ছিল মানুষ ও সামাজিক বিষয়াদি সম্পর্কে। দার্শনিক ও সমাজচিন্তাবিদ স্যাঁ সিমঁ ঝধরহঃ
ঝরসড়হ দ্বারা তিনি ছিলেন প্রভাবিত। ১৮১৭ সালে তিনি তাঁর সচিব নিযুক্ত হন এবং এক সাথে
কাজ করেন। কিন্তু ৭ বছর পর ১৮২৪ সালে তাদের সম্পর্কের ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে তিনি
দৃষ্টবাদী দর্শনের বিকাশ ঘটান। তাঁর মূল বক্তব্য ছিল নিয়ম ও প্রগতি। ১৮২০ হতে ১৮২৬ এর
মধ্যে কঁৎ তাঁর নতুন বিজ্ঞান নিয়ে প্রথম রচনা ঈস্খস্তুত করেন। এই নতুন বিজ্ঞানকেই তিনি
১৮৩৮ সালে নাম দেন ‘সোসিওলজি' ঝড়পরড়ষড়মু। ১৮৩০ থেকে ১৮৪২ এর মধ্যে তিনি
ছয়খন্ডের 'ঈড়ঁৎংব রহ চড়ংরঃরাব চযরষড়ংড়ঢ়যু' লিখেন এবং এতে অর্থনৈতিক জীবন,
আধিপত্যমূলক চিন্তা, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য , পরিবারকাঠামো, শ্রমবিভাজন , ভাষা এবং ধর্মকে চিহ্নিত
করেন আলোচনার মূল বিষয় হিসাবে । তিনি এ সকল বিষয়কে সংগঠিত করেন সামাজিক
স্থিতিশীলতা ঝড়পরধষ ঝঃধঃরপং এবং সামাজিক গতিশীলতা ঝড়পরধষ উুহধসরপং প্রত্যয় দু'টির
মধ্যে। তিনি গভীর ও সমাধানহীন মানসিক সমস্যার সাথে বিয়োগান্তক প্রেমময় জীবন
অতিবাহিত করেন। ১৮৫৭ সালে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হল
ঈড়ঁৎংব রহ চড়ংরঃরাব চযরষড়ংড়ঢ়যু (১৮৩০-১৮৪২), ও চড়ংরঃরাব চড়ষরঃরপং (১৮৭৫-১৮৭৭)।
ভ‚মিকা
ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপে দৃষ্টবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ চিন্তার ধারা হিসাবে বিকাশ লাভ
করেছিল। বেকন, নিউটন এবং ডারউইনের তত্ত¡ ইউরোপীয় চিন্তার উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব
সৃষ্টি করেছিল। তাঁরা দেখিয়েছিলেন কিভাবে বিজ্ঞানের সাহায্যে প্রকৃতির রহস্যকে উন্মোচন
করা যায়। ক্রমশ: এই চিন্তা প্রবল হচ্ছিল যে, সমাজকে একইভাবে বোঝা সম্ভব। প্রকৃতি এবং
পাঠ-১
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি পৃষ্ঠা-২১৯
সমাজ একই নিয়মের অন্তর্গত। প্রকৃতিকে পাঠ করার জন্য যে পদ্ধতি তা সমাজকে জানার
জন্যও প্রযোজ্য।
দৃষ্টবাদের মূল ধারণা সৃষ্টি করেছিলেন স্যাঁ সিমঁ ঝধরহঃ ঝরসড়হ। তাঁর মতে অন্যান্য বিজ্ঞানে
পর্যবেক্ষণের যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তা সামাজিক তত্তে¡র জন্য প্রয়োজন। জ্যোতির্বিদ্যা,
পদার্থবিদ্যা, রসায়ন শাস্ত্রে দৃষ্টবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দর্শনেরও উচিৎ তা গ্রহণ করা। একমাত্র
পর্যবেক্ষণযোগ্য ঘটনাই এবং তার যুক্তিভিত্তিক বিশ্লেষণ দর্শন এবং সামাজিক তত্তে¡র বিষয়বস্তু
হওয়া উচিত।
অগ্যুস্ত্ কঁৎ এই ধারণাকে আরও সুস্পষ্ট এবং সুসংহতভাবে প্রকাশ করেছিলেন। কঁৎ -এর
চিন্তায় দৃষ্টবাদের তিনটি উপাদান রয়েছেÑ পদ্ধতি হিসাবে দৃষ্টবাদ, বিজ্ঞানের ক্রমোচ্চঃ বিন্যাস
ও দৃষ্টবাদের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সমাজ ব্যবস্থা এবং ভাবাদর্শ হিসাবে দৃষ্টবাদ।
পদ্ধতি হিসাবে দৃষ্টবাদ
কঁৎ -এর দৃষ্টবাদের মূল মর্মবাণী হচ্ছে বিজ্ঞানের একত্ব টহরঃু ড়ভ ঝপরবহপব। এর অর্থ হচ্ছে
প্রাকৃতিক এবং সামাজিক বিজ্ঞানের একই যৌক্তিক এবং পদ্ধতিগত ভিত্তি রয়েছে।
সমাজবিজ্ঞানের জন্য প্রয়োজন পরাদর্শন বা অনুমান-নির্ভর ভাবনা থেকে মুক্ত হওয়া। কঁৎ -এর
মতে দৃষ্টবাদী সমাজবিজ্ঞানের কাজ হচ্ছে ঘটনার অনুসন্ধান এবং তার ভিত্তিতে নিশ্চিত
নিয়মকে আবিষ্কার। প্রাকৃতিক নিয়ম সব ক্ষেত্রে একই রকম। এর কোন তারতম্য নেই।
সমাজে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত ইচ্ছার কোন মূল্য নেই। সমাজ প্রকৃতির মত একই যুক্তিভিত্তিক
নিয়মে পরিচালিত হয়। সমাজবিজ্ঞানের কাজ এই নিয়মের ভিত্তিতে তত্ত¡ নির্মাণ। দৃষ্টবাদী
পদ্ধতি সমাজবিজ্ঞানে অন্যান্য বিজ্ঞানের ন্যায় একই ভ‚মিকা পালন করে। এর ভিত্তি হচ্ছে
ঘটনার পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ এবং তুলনা।
বিজ্ঞানের ক্রমোচ্চঃ বিন্যাস ও দৃষ্টবাদী সমাজ
কঁৎ -এর মতে বিজ্ঞানের বিবর্তনের একটি সাধারণ নিয়ম রয়েছেÑ তা অগ্রসর হয় সহজ থেকে
জটিলের দিকে। বিজ্ঞানের শুরু গণিত থেকে এবং তার বিবর্তন জোতির্বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা,
রসায়ন শাস্ত্র, জীববিজ্ঞানের ভিতর দিয়ে সমাজবিজ্ঞানে। প্রতিটি পরবর্তী বিজ্ঞান অধিকতর
নির্দিষ্ট, কিন্তু কম যথাযথ। কেননা পরবর্তী বিজ্ঞানগুুলির বিষয়বস্তু জটিলতর এবং কম
পরিমাপযোগ্য।
মানব সমাজও একইভাবে তিনটি স্তরের ভিতর দিয়ে বিকাশ লাভ করেÑ ধর্মতাত্তি¡ক
ঞযবড়ষড়মরপধষ, পরাদর্শনভিত্তিক গবঃধঢ়যুংরপধষ এবং দৃষ্টবাদী চড়ংরঃরাব। সমাজের বিবর্তনের
সাথে যুক্ত মানুষের বৌদ্ধিক, বস্তুগত এবং নৈতিক উন্নতি। ধর্মতাত্তি¡ক স্তরে মানুষ মনে করে
বিশ্ব পারলৌকিক ক্ষমতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পরাদর্শনভিত্তিক স্তরে মানুষ বিশ্বের মধ্যে সাধারণ
এবং বিমূর্ত সারবত্তার ধারণা সৃষ্টি করতে পারে। দৃষ্টবাদী স্তরে মানুষ বিশ্বকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে
অবলোকন করতে পারে। এভাবে বিজ্ঞানের নিয়ম এবং সমাজের নিয়ম একীভ‚ত হয়ে যায়।
দৃষ্টবাদী ভাবাদর্শ

অগ্যুস্ত্ কঁৎ দৃষ্টবাদকে ব্যবহার করেছেন বিপ্লবের বিরুদ্ধে। দৃষ্টবাদ বিরাজমান সমাজ ব্যবস্থাকে
যথার্থ মনে করে এবং তাকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। সমস্ত সমাজ বিকাশমান এবং
জ্ঞানের সাহায্যে তার ক্রম: উৎকর্ষ সাধন সম্ভব। সঙ্গতভাবে বিপ্লব নিষ্প্রয়োজন। সমাজের আর
কোন আমূল পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।
If we contemplate the positive spirit in its relation to scientific conception .... we shall find that this philosophy is distinguished from the theologicometaphysical by its tendency to render relative the ideas which were at first absolute ... In a scientific view this contrast between the relative and the absolute may be regarded as the most decisive manifestation of the antipathy between the modern philosophy and the ancient. All investigation into the nature of beings, and their first and final causes, must always be absolute; whereas the study of the laws of phenomena must be relative, since it supposes a continuous progress of speculation subject to the gradual improvement of observation, without the precise reality being ever fully disclosed; so that the ralative character of scientific conceptions is inseparable from the true idea of natural laws, just as the chimerical inclination for absolute knowledge accompanies every use of theological fictions and metaphysical entities. -Auguste Comte
সারাংশ
ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপে দৃষ্টবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ চিন্তার ধারা হিসাবে বিকাশ লাভ
করেছিল যার মূল ধারণা সৃষ্টি করেছিলেন স্যাঁ সিমঁ ঝধরহঃ ঝরসড়হ। একমাত্র
পর্যবেক্ষণযোগ্য ঘটনা এবং তার যুক্তিভিত্তিক বিশ্লেষণ দর্শন এবং সামাজিক তত্তে¡র
বিষয়বস্তু হওয়া উচিতÑ এ ধারণাকে পরবর্তীতে আরো সুস্পষ্ট ও সুসংহত করেন অগ্যুস্ত্
কঁৎ। কঁৎ -এর দৃষ্টবাদের মূল মর্মবাণী হচ্ছে বিজ্ঞানের একত্ব। কঁৎ -এর মতে দৃষ্টবাদী
সমাজবিজ্ঞানের কাজ হচ্ছে ঘটনার অনুসন্ধান এবং তার ভিত্তিতে নিশ্চিত নিয়মকে
আবিষ্কার এবং এই নিয়মের ভিত্তিতে তত্ত¡ নির্মাণ। দৃষ্টবাদী পদ্ধতি সমাজবিজ্ঞানে অন্যান্য
বিজ্ঞানের ন্যায় একই ভ‚মিকা পালন করে যার ভিত্তি হচ্ছে ঘটনার পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ ও
তুলনা।
বিজ্ঞান ও দৃষ্টবাদী সমাজ অগ্রসর হয় সহজ থেকে জটিলের দিকে বিবর্তনের সাধারণ
নিয়মে। মানবসমাজও তেমনি বিকাশ লাভ করে ধর্মতাত্তি¡ক, পরাদর্শনভিত্তিক ও দৃষ্টবাদী
পর্যায়ে। আর দৃষ্টবাদী পর্যায়ে মানুষ বিশ্বকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে অবলোকন করতে পারে।
ফলে বিজ্ঞানের ও সমাজের নিয়ম হয়ে যায় একীভ‚ত। কোঁত দৃষ্টবাদকে ব্যবহার
করেছেন বিপ্লবের বিরুদ্ধে।

পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. দৃষ্টবাদের মূল ধারণা সৃষ্টি করেছিলেন কে?
ক. ম্যাক্স ভেবার খ. কার্ল মার্কস্
গ. অগ্যুস্ত্ কঁৎ ঘ. স্যাঁ সিঁম
২. কোন সময়ে ইউরোপে দৃষ্টবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ চিন্তার ধারা হিসাবে বিকাশ লাভ
করেছিল?
ক. সপ্তদশ শতাব্দী খ. অষ্টাদশ শতাব্দী
গ. ঊনবিংশ শতাব্দী ঘ. বিংশ শতাব্দী
৩. দৃষ্টবাদী পদ্ধতির ভিত্তি কোনটি?
ক. ঘটনার পর্যবেক্ষণ খ. ঘটনার পরীক্ষণ
গ. ঘটনার তুলনা ঘ. উপরের সবগুলো
৪. মানবসমাজ বিকাশের কোন স্তরে মানুষ বিশ্বকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে অবলোকন করতে
পারে?
ক. ধর্মতাত্তি¡ক খ. পরাদর্শন ভিত্তিক
গ. দৃষ্টবাদী ঘ. উপরের সবগুলো
৫. অগ্যুস্ত্ কঁৎ দৃষ্টবাদকে ব্যবহার করেছেন নিচের কোন ক্ষেত্রে?
ক. বিপ্লবের পক্ষে খ. বিপ্লবের বিরুদ্ধে
গ. উভয়ই ঘ. কোনটিই নয়
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. অগ্যুস্ত্ কঁৎ -এর দৃষ্টবাদের মর্মবাণী উল্লেখ করুন।
২. কঁৎ -এর মতানুযায়ী সমাজ বিকাশের পর্যায়গুলো ও তাদের বিষয়বস্তু কি?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. দৃষ্টবাদ কি? আলোচনা করুন।
২. অগ্যুস্ত্ কঁৎ-এর দৃষ্টবাদকে বিশ্লেষণ করুন।

এমিল দুরক্যাঁ Ñ আত্মহত্যা
ঊসরষব উঁৎশযবরস-ঝঁরপরফব
উদ্দেশ্য
এই পাঠটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন:
● সমাজবিজ্ঞানী এমিল দুরক্যাঁ এবং তাঁর প্রধান অবদান ‘আত্মহত্যা' সম্পর্কে
এমিল দুরক্যাঁ ঊসরষব উঁৎশযবরস (১৮৫৮-১৯১৭)
প্রখ্যাত ফরাসী সমাজবিজ্ঞানী এমিল দুরক্যাঁ-কে ক্রিয়াবাদের দিকপাল হিসাবে চিহ্নিত করা
হয়ে থাকে। তিনি সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম জনক। ১৮৫৮ সালের ১৫ই এপ্রিল ফ্রান্সের লোরি
প্রদেশের ইপাইল-এর এক ইহুদী পরিবারে তাঁর জন্ম। তিনি শিক্ষালাভ করেন দর্শনশাস্ত্রে ইকল
নরমাল সুপেরিয়রে Εপড়ষব ঘড়ৎসধষ ঝঁঢ়বৎরবঁৎব। ১৮৪৭ সালে বোর্দো বিশ্ববিদ্যালয়ে
সামাজিক বিজ্ঞান ও শিক্ষাতত্তে¡র অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন। এর ১০ বছর পর তিনি
খ'অহহষবব ঝড়পরড়ষড়মরয়ঁব নামক একটি জার্নাল প্রতিষ্ঠা করেন এবং একে ফ্রান্সের সবচেয়ে
মর্যাদাপূর্ণ জার্নাল হিসাবে গড়ে তোলেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এখানে নিয়মিত লিখতেন।
৫৯ বছর বয়সে ১৯১৭ সালের ১৫ই নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সমাজবিজ্ঞানের
তথ্যভিত্তিক গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন পথিকৃৎ। তাঁর আত্মহত্যা, আত্মহত্যার হার,
বিচ্যূতি, ব্যক্তিবাদ প্রভৃতিতে সামাজিক অন্তর্দৃষ্টি অভিজ্ঞতার আলোকে কিভাবে ব্যাখ্যা করতে
হয় তারই উদাহরণ। তাঁর প্রধান প্রধান গ্রন্থগুলো হল ঞযব উরারংরড়হ ড়ভ খধনড়ঁৎ রহ ঝড়পরবঃু
(১৮৯৩), ঞযব জঁষবং ড়ভ ঝড়পরড়ষড়মরপধষ গবঃযড়ফ (১৮৯৫), ঝঁরপরফব (১৮৯৭) ও ঞযব
ঊষবসবহঃধৎু ঋড়ৎসং ড়ভ ঃযব জবষরমরড়ঁং খরভব (১৯১২)
ভ‚মিকা
ফরাসী সমাজবিজ্ঞানী এমিল দুরক্যাঁ ঊসরষব উঁৎশযবরস (১৮৫৮-১৯১৭) সমাজবিজ্ঞানের
অন্যতম জনক। সমাজবিজ্ঞানের তথ্যভিত্তিক গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি পথিকৃৎ। তাঁর ধ্রুপদী গ্রন্থ
‘আত্মহত্যা'-এর মধ্যে তিনি দেখিয়েছেন সমাজবিজ্ঞানে তত্তে¡র প্রকৃতি কি এবং কিভাবে তত্ত¡
এবং উপাত্ত মেলাতে হয়। সাধারণত: মনে করা হয় আত্মহত্যা একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু

দুরক্যাঁ দেখিয়েছেন আত্মহত্যা একটি সামাজিক প্রপঞ্চ এবং সমাজতাত্তি¡ক দৃষ্টিকোণ থেকে এর
অভিনব এবং চমৎকার ব্যাখ্যা দেওয়া যায়।
আত্মহত্যা একটি সামাজিক ঘটনা ঝড়পরধষ ঋধপঃ। দুরক্যাঁ -এর মতে সামাজিক ঘটনা হচ্ছে
এমন সব ঘটনা যা ব্যক্তির উর্ধ্বে থেকে ব্যক্তির উপর চাপ প্রয়োগ করে। আত্মহত্যার এ দু'টি
বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কিন্তু এই সমাজতাত্তি¡ক বিশ্লেষণে যাওয়ার আগে দুরক্যাঁ দেখিয়েছেন
আত্মহত্যার জন্য যেসব কারণকে সচরাচর দায়ী করা হয়, যেমন জৈবিক, মনস্তাত্তি¡ক, সেগুলো
আত্মহত্যার যে উপাত্ত তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অর্থাৎ এই কারণগুলো যথার্থ নয়।
আত্মহত্যার কারণ খুঁজতে হবে ভিন্ন পরিসরে।
সমাজতাত্তি¡ক বিশ্লেষণের প্রক্রিয়ায় তিনি আত্মহত্যার শ্রেণীকরণ করেন। তিনি সামাজিক
একীভবন ঝড়পরধষ ওহঃবমৎধঃরড়হ-এর মাত্রাকে আত্মহত্যার হারের সাথে সম্পর্কিত করেন।
এক্ষেত্রে দুরক্যাঁ আত্মহত্যার তিনটি ভিন্ন ধরনের কথা বলেন যা ভিন্ন ধরনের সম্পর্ককে
প্রতিফলিত করে। আত্মহত্যার ধরন তিনটি হলÑ
❏ আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যা ঊমড়রংঃরপ ঝঁরপরফব
❏ পরার্থমূলক আত্মহত্যা অষঃৎঁরংঃরপ ঝঁরপরফব
❏ নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা অহড়সরপ ঝঁরপরফব
এখানে প্রথম দুই ধরনের আত্মহত্যার ক্ষেত্রে সামাজিক একীভবনের মাত্রা অনুপাতে পরিবর্তিত
হয় বলে দুরক্যাঁ উল্লেখ করেন। অর্থাৎ একীভবনের মাত্রা যত কম হবে ততই আত্মহত্যার হার
বেশি হবে। আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পায় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বন্ধনের দুর্বলতায়।
দুরক্যাঁ ক্যাথলিকদের চেয়ে প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি বলে দেখিয়েছেন।
একইভাবে বিবাহিতদের অপেক্ষা অবিবাহিতদের আত্মহত্যার হার বেশি এবং সন্তান রয়েছে
এমন বিবাহিত ব্যক্তিদের তুলনায় সন্তানহীন বিবাহিত ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি
বলে তিনি দেখিয়েছেন।
দ্বিতীয় ধরনের আত্মহত্যা হল পরার্থমূলক। সামাজিক একীভবন খুব দৃঢ় বা বেশি হলে এ
ধরনের আত্মহত্যা বেশি ঘটে। ভাবগত অর্থে ব্যক্তিকে এখানে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা
হয়। অর্থাৎ ব্যক্তি এখানে সামাজিক কারণে আত্মহত্যা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানী
বৈমানিকদের আত্মহত্যা ও সামাজিক প্রথা অনুযায়ী কোন সমাজে বিধবা স্ত্রীর স্বামীর সাথে
সহমরণÑ পরার্থমূলক আত্মহত্যার উদাহরণ।
ডয়েল পল জনসন উড়ুষব চধঁষ ঔড়হংড়হ সামাজিক একীভবনের সাথে আত্মহত্যা হারের
সম্পর্ককে নি¤েœাক্ত ছকে দেখিয়েছেন।

দুরক্যাঁ -এর মতে সর্বশেষ ধরনের আত্মহত্যা হল নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা অহড়সরপ
ঝঁরপরফব। মূল্যবোধ অস্পষ্ট বা পরস্পর বিরোধী হলে বা মূল্যবোধের দ্রুত পরিবর্তন ঘটলে
ব্যক্তি তার আচরণ কি হবে তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দে¡ ভোগে। সমাজের উত্তেজনা ব্যক্তির মধ্যে
প্রসারিত হয়। ব্যক্তি নিজেকে সমাজের সঙ্গে যুক্ত করতে পারে না। এই অবস্থায় অনেকে
আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
সারাংশ
সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম জনক এমিল দুরক্যাঁ তাঁর ধ্রুপদী গ্রন্থ ‘আত্মহত্যা'-এর মধ্যে
দেখিয়েছেন সমাজবিজ্ঞানে তত্তে¡র প্রকৃতি কি এবং কিভাবে তত্ত¡ এবং উপাত্ত মেলাতে
হয়। সাধারণ দৃষ্টিতে আত্মহত্যা ব্যক্তিগত ব্যাপার হলেও তিনি একে দেখিয়েছেন
সামাজিক ঘটনা হিসাবে । তিনি আত্মহত্যার সচরাচর কারণ যেমন জৈবিক, মনস্তাত্তি¡কএগুলোকে দেখিয়েছেন ভ্রান্ত হিসাবে ।
দুরক্যাঁ সামাজিক একীভবনের মাত্রাকে আত্মহত্যার হারের সাথে সম্পর্কিত করেন এবং
আত্মকেন্দ্রিক, পরার্থমূলক ও নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যার তিনটি ভিন্ন ধরনের কথা বলেন
যা প্রতিফলিত করে ভিন্ন ধরনের একীভবনকে। আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যার ঘটনা বৃদ্ধি
পায় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বন্ধনের দুর্বলতায়। সামাজিক একীভবন খুব দৃঢ় বা বেশি হলে বৃদ্ধি
ঘটে পরার্থমূলক আত্মহত্যার। আর মূল্যবোধের অস্পষ্টতা বা পরস্পর বিরোধিতায় বা
দ্রুত পরিবর্তনে ব্যক্তির কাক্সিক্ষত আচরণের দ্বিধা-দ্বন্দে¡ ঘটে নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. এমিল দুরক্যাঁ আত্মহত্যা কে নিচের কোন প্রপঞ্চ হিসাবে দেখেছেন ?
ক. ব্যক্তিগত খ. সামাজিক
গ. মনোস্তাত্তি¡ক ঘ. রাজনৈতিক
২. ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বন্ধনের দুর্বলতায় কোন ধরনের আত্মহত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পায়?
ক. পরার্থমূলক আত্মহত্যা খ. নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা
গ. আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যা ঘ. সবগুলো
৩. সামাজিক একীভবন খুব দৃঢ় বা বেশি হলে ঘটেÑ
ক. পরার্থমূলক খ. নৈরাজ্যমূলক
গ. আত্মকেন্দ্রিক ঘ. ক ও খ উভয়ই
৪. দুরক্যাঁ -এর মতে ক্যাথলিকদের চেয়ে প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে আত্মহত্যার হার নিচের
কোনটি?
ক. কম খ. বেশি

গ. ক ও খ এর মাঝামাঝি ঘ. নেই
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. সামাজিক ঘটনা কি ?
২. পরার্থমূলক আত্মহত্যা বলতে কি বোঝেন ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. আত্মহত্যার বিভিন্ন ধরনগুলো কি? আলোচনা করুন।
২. আত্মহত্যার কারণকে সমাজতাত্তি¡ক প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]