জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থার মূলনীতি কী?
জ্ঞাতি পদাবলীর ধরনকে মর্গান ক’ভাগে বিভাজিত করেছেন এবং সেগুলো কি কি?


নৃবিজ্ঞানীদের, বিশেষ করে নৃবিজ্ঞানের গোড়াপত্তনের সময়কালের নৃবিজ্ঞানীদের, ধারণা ছিল “অনুন্নত”
মানুষজনের সামাজিক আচরণ বুঝতে হলে জ্ঞাতিভিত্তিক সম্পর্ক বুঝতে হবে। তাঁদের মতে, প্রতিটি
সমাজে জ্ঞাতিকুলকে বিশেষভাবে ভাগ বা শ্রেণীকরণ করা হয়; জ্ঞাতিপদ এই শ্রেণীকরণ ব্যবস্থা বুঝতে
সাহায্য করে। এক বা একাধিক শব্দের সাহায্যে জ্ঞাতিপদ গঠিত; এই জ্ঞাতিপদ জ্ঞাতি অবস্থান বা
মর্যাদার প্রতীক। একটি সমাজের সকল জ্ঞাতিপদ মিলে তৈরী হয় সেই সমাজের জ্ঞাতিভিত্তিক পদাবলী
ব্যবস্থা।
প্রাথমিককালের নৃবিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল: ঐতিহ্যবাহী সমাজে, মানুষজনের সামাজিক মর্যাদা পাশ্চাত্য
মানুষজনের মত অর্জিত না, বরং জন্ম-সূত্রে আরোপিত। অপাশ্চাত্য সমাজের সামাজিক সংগঠনের মূলে
রয়েছে জ্ঞাতিসম্পর্ক Ñ এটা তাঁরা ধরে নিয়েছিলেন। তাঁদের মতে, জ্ঞাতিত্ব নির্ধারণ করে দিচ্ছে
একজনের সামাজিক মর্যাদা, তার আত্মমর্যাদা বোধ; নির্ধারণ করে দিচ্ছে একজনের প্রতি অপরের
কাক্সিক্ষত আচরণ, এবং অপরের প্রতি সেই মানুষটির আচরণবিধি। তাঁদের দৃষ্টিতে, পৃথিবীর “আদিম”,
“বর্বর” (হাল-আমলের ভাষায়, “অনুন্নত”) সমাজে কি কি ভিত্তিতে জ্ঞাতি শ্রেণীকরণ করা হয়ে থাকে,
সেটা অনুসন্ধান করা একান্তজরুরী। তাঁরা বুঝতে চাইছিলেন জ্ঞাতি শ্রেণীকরণের মূলনীতি।
জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়নের এই প্রবল ধারার বিরুদ্ধে সমালোচনা তৈরী হয় ১৯৬০-এর দশক হতে। প্রধান
সমালোচক ছিলেন এডমান্ড লীচ, ডেভিড শ্নাইডার এবং রবিন ফক্স। লীচ বলেন, জ্ঞাতি-ভিত্তিক
সম্পর্ককে নানাভাবে, বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা সম্ভব। কিন্তু এই শ্রেণী-বিভাজনের আদৌ কোন
“সামাজিক গুরুত্ব” আছে কিনা তা অস্পষ্ট। নৃবিজ্ঞানীদের এই ধরনের ক্রিয়াকলাপ (জ্ঞাতি পদের
শ্রেণীকরণ, জ্ঞাতি সম্পর্কের ভিত্তিতে দুটি বিরুদ্ধ জ্ঞাতিব্যবস্থা চিহ্নিত করা, যেমন ধরুন, মাতৃসূত্রীয়
এবং পিতৃসূত্রীয় সমাজ) সামাজিক কাঠামো বুঝতে সাহায্য করে না। এ ধরনের জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়নকে লীচ
তুলনা করেন “প্রজাপতি” সংগ্রহের সাথে। লীচের বক্তব্য ছিল, বিভিন্ন ধরনের প্রজাপতি সংগ্রহ করে
সেগুলোকে নানাভাবে শ্রেণীকরণ করা সম্ভব (রং, আকার ইত্যাদি) কিন্তু এটি আমাদের প্রজাপতির গঠন
বুঝতে বিন্দুমাত্র সহায়তা করে না। জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়নকারীরা বিষয়টিকে বিশ্লেষণের একটি পৃথক ক্ষেত্র
হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন, এবং তাদের কার্যকলাপ দেখে মনে হয় না যে এই ক্ষেত্র অপরাপর ক্ষেত্র,
যেমন, রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম Ñ এগুলোর সাথে কোনভাবে সম্পর্কিত। এই জোরালো সমালোচনার
পর থেকে, এবং বিশেষ করে ডেভিড শ্নাইডারের মার্কিনী জ্ঞাতিত্ব নিয়ে গবেষণা কাজটি প্রকাশিত হবার
পর থেকে, জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়নে বড়সড় রদবদল ঘটে। এই রদবদলকে বর্ণনা করা হয়েছে, “ভগ্নাংশ
থেকে সামগ্রিক”এর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ হিসেবে। জ্ঞাতিত্বকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করা হ’ল সামাজিক এবং
সাংস্কৃতিক পরিসরের অংশ হিসেবে (“ধহ ধংঢ়বপঃ ড়ভ সড়ৎব রহপষঁংরাব ংড়পরধষ ধহফ পঁষঃঁৎধষ
প্রাথমিককালের নৃবিজ্ঞানীদের
ধারণা ছিল: ... অপাশ্চাত্য
সমাজের সামাজিক সংগঠনের
মুলে রয়েছে জ্ঞাতি সম্পর্ক
সামাজিক সংগঠনের মূলে
রয়েছে জ্ঞাতিসম্পর্ক ।
ফড়সধরহং”)। জ্ঞাতিত্বের এই পুনর্সংজ্ঞায়ন জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়নকে পুনর্গঠিত করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকা
পালন করে।
এই পাঠটি প্রজাপতি সংগ্রহ ঢং-এর জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়নের নমুনা। এতে আছে দুটি প্রধান অংশ। প্রথমত,
জ্ঞাতি শ্রেণীকরণের মূলনীতির আলোচনা, এবং দ্বিতীয়ত, জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থার শ্রেণীকরণ। আমাদের
লক্ষ্য হচ্ছে, জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়নের এই ঢং-এর সাথে আপনার পরিচিত ঘটানো এবং এর “সম্ভাব্য
অর্থহীনতা”র সমালোচনাটি আপনার কাছে স্পষ্ট করা। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ তা না হলে সা¤প্রতিক
জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়নের ধারা বোঝা সম্ভব হবে না। তবে, এটা যোগ করা জরুরী যে, প্রজাপতি সংগ্রহ ঢংএর আরো নমুনা সামনের পাঠগুলোতে পাবেন। এই ধারা এত দীর্ঘকাল ধরে চর্চিত ছিল এবং এতই
শক্তিশালী ছিল (এবং কিছু-কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং নৃবৈজ্ঞানিক মহলে, এখনও আছে) যে এটাকে বাদ
দেয়া জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়নের ইতিহাসকে অস্বীকার করার সামিল। উপরন্তু, এই ইতিহাস জানা জরুরী কারণ
এই প্রেক্ষিত থেকেই সৃষ্ট হয়েছে নতুন ধারার কাজ।
জ্ঞাতি শ্রেণীকরণের মূলনীতি (চৎরহপরঢ়ষবং ভড়ৎ ঈষধংংরভুরহম করহ)
প্রাথমিককালের নৃবিজ্ঞানীরা নিæোক্ত বিষয়গুলোকে জ্ঞাতি শ্রেণীকরণের মূলনীতি হিসেবে চিহ্নিত করেন:
১. প্রজন্ম : প্রজন্ম অনুসারে জ্ঞাতিদের পৃথক করা হয়ে থাকে বহু সমাজে। যেমন: বাবা এবং চাচা Ñ
এরা একই প্রজন্মের; দাদা, দাদার ভাই Ñ এরা বাবা-চাচাদের এক প্রজন্ম ঊর্ধ্বে। এবং “নিজ”
(ইংরেজীতে যাকে বলা হয় ঊমড়, ধরুন “আপনি”) হচ্ছে, তার ভ্রাতৃকুলসহ, একটি ভিন্ন
প্রজন্মের সদস্য। “নিজ” হতে আরো কনিষ্ঠ প্রজন্ম হবে ভাগনা-ভাগনি ইত্যাদি।
২. আপেক্ষিক বয়স : ইংরেজিভাষী মানুষজনের মধ্যে আপেক্ষিক বয়সের ধারণা নেই। যেমন আছে
ভারতবর্ষসহ পৃথিবীর আরো বিভিন্ন অঞ্চলে। আপেক্ষিক বয়সের একটি ভালো উদাহরণ হচ্ছে
আমাদের সমাজে স্বামীর ভাইদের মধ্যেকার পৃথকীকরণ: স্বামীর ভাইদের মধ্যে বয়সানুসারে তফাৎ
টানা হয়; বড় ভাইয়েরা হচ্ছেন স্ত্রী’র “ভাসুর” আর ছোট ভাইয়েরা হচ্ছেন তার “দেবর”।
নৃবিজ্ঞানীদের মতে, জ্ঞাতি শ্রেণীকরণের সাথে যুক্ত হচ্ছে আচরণ। দেবরদের সাথে ঠাট্টার সম্পর্ক
অনুমোদিত, পক্ষান্তরে ভাসুরের সাথে সম্পর্ক হতে হবে দূরত্বের, শ্রদ্ধার।
৩. রৈখিক বনাম পার্শি¦ক : রৈখিক জ্ঞাতি (ষরহবধষ শরহ) বলতে বোঝায় তাদের যারা একটি রেখাসূত্রে
বাধা। যেমন: দাদা-বাবা-ছেলে। আর পার্শ্বিক জ্ঞাতি (পড়ষষধঃবৎধষ শরহ, সংক্ষেপে ষধঃবৎধষ-ও বলা
হয়) হচ্ছেন তারা যাদের সাথে আপনি একজন যোগসূত্রকারী জ্ঞাতি’র মাধ্যমে সম্পর্কিত। যেমন
ধরুন (বাঙ্গালি মুসলমান জ্ঞাতি পদাবলী অনুসারে) আপনার দাদার ভাইয়ের সাথে আপনি সংযুক্ত
আপনার দাদার মাধ্যমে। অথবা আপনার নানীর বোনের সাথে আপনি সম্পর্কিত আপনার নানীর
মাধ্যমে।
বহু সমাজে, পার্শ্বিকতার ধারণা উপস্থিত, আবার বহু সমাজে এ ধারণা অনুপস্থিত। যেমন কিছু
সমাজ আছে যেখানে বাবা আর চাচার মধ্যে কোন ভিন্নতা টানা হয়না। আবার একই সূত্রে মা এবং
খালাদের মধ্যেও কোন পার্থক্য করা হয়না। মা এবং খালা সকলকেই “মা” হিসেবে সম্বোধন করা
হয়ে থাকে।
৪. লিঙ্গ : ইংরেজিভাষী সমাজে, “ধঁহঃ” এবং “ঁহপষব” পদ দুটোতে যে পার্থক্য টানা হয়ে থাকে,
সেটাকে লিঙ্গীয় পার্থক্য বলা হয়। একই ভাবে “নৎড়ঃযবৎ” (ভাই) এবং “ংরংঃবৎ" (বোন) পদ
জ্ঞাতি শ্রেণীকরণের মূলনীতি
হচ্ছে: প্রজন্ম আপেক্ষিক বয়স,
রৈখিক বনাম পার্শ্বিক, লিঙ্গ,
রক্ত-সম্পর্কীয় বনাম
বিবাহসূত্রীয়, যোগসূত্রকারী
জ্ঞাতির লিঙ্গীয় পরিচয় এবং
কোন্ পক্ষের আত্মীয়।
দুইটির মধ্যে লিঙ্গীয় পার্থক্য দৃশ্যমান। কিন্তু“পড়ঁংরহ” পদটি লিঙ্গ নিরপেক্ষ। ছেলে হোক কি
মেয়ে, দুজনেই “পড়ঁংরহ”।
৫. রক্ত-সম্পর্কিত বনাম বিবাহসূত্রীয় : এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, রক্তসূত্রে (পড়হংধহমঁরহবধষ) সম্পর্কিত
আত্মীয় বিবাহসূত্রে (ধভভরহধষ) সম্পর্কিত আত্মীয় হতে ভিন্ন। যেমন, রক্ত সম্পর্ক সূত্রে যিনি
“মামা”, বিবাহসম্পর্ক সূত্রে তিনি “মামা-শ্বশুর”। অথবা, “চাচী-শাশুড়ি”-কে যদিও বাঙ্গালি সমাজে
সম্বোধন করা হয় “চাচী” হিসেবে, তার সাথে আত্মীয়তার ধরন যে বিবাহসূত্রীয়, এ বিষয়টাকে
স্পষ্ট করার জন্য “শাশুড়ি” শব্দটি যুক্ত করা হয়ে থাকে।
ইংরেজিভাষী সমাজে, “ঁহপষব” পদ কিন্তু বিবাহ বা রক্তের এই তারতম্য ধারণ করেনা।
“টহপষব” বাবার দিকের রক্ত সম্পর্কীয় চাচাকেও বোঝাতে পারে, আবার বোঝাতে পারে খালুকেও
যিনি কিনা রক্ত সম্পর্কের না, বরং মায়ের দিকের বিবাহ সূত্রের আত্মীয়।
৬. যোগসূত্রকারী জ্ঞাতির লিঙ্গীয় পরিচয় : যে সকল সমাজে পার্শ্বিক জ্ঞাতি গুরুত্বপূর্ণ, সে সকল
সমাজে যোগসূত্রকারী জ্ঞাতির লিঙ্গীয় পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। যেমন কিনা কিছু সমাজে
সমান্তরাল (ঢ়ধৎধষষবষ) কাজিনদের পৃথক করা হয়ে থাকে আড়াআড়ি (পৎড়ংং) কাজিনদের থেকে।
সমান্তরাল কাজিন হচ্ছে বাবার ভাইয়ের এবং মার বোনের সন্তান। আড়াআড়ি কাজিন হচ্ছে বাবার
বোনের এবং মার ভাইয়ের সন্তান। এই সব মূলনীতি সে সব সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যেখানে
সমান্তরাল কাজিনের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ কিন্তু আড়াআড়ি কাজিনের সাথে বিবাহ শুধু অনুমোদিত
না, এ ধরনের বিবাহকে বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করা হয়ে থাকে।
৭. কোন পক্ষের বা দিকের আত্মীয় : জ্ঞাতি পদাবলীর মধ্যে যখন বিভাজন বা পৃথকীকরণ ঘটে বাবা
এবং মায়ের দিকের আত্মীয়দের মধ্যে, সেটাকে নৃবিজ্ঞানীরা বলেন দ্বিখন্ডিতকরণ; জ্ঞাতি ব্যবস্থা
হিসেবে সেটা পরিচিত দ্বিখন্ডিত জ্ঞাতি ব্যবস্থা (নরভঁৎপধঃবফ শরহংযরঢ় ংুংঃবস) হিসেবে। যেমন
ধরুন, মায়ের ভাই এবং বাবার ভাইয়ের জন্য ভিন্ন পদাবলীর ব্যবহার।
জ্ঞাতি পদাবলীর ব্যবস্থার ধরন (ঞুঢ়বং ড়ভ করহ ঞবৎস ঝুংঃবসং)
মর্গানের দৃষ্টিতে, জ্ঞাতি পদাবলী দুই ধরনের : শ্রেণীবাচক এবং বর্ণনাসূচক। শ্রেণীবাচক জ্ঞাতি পদাবলী
একই শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করে রৈখিক এবং পার্শ্বিক জ্ঞাতিদের (যেমন ধরুন, হাওয়াই জ্ঞাতি পদাবলী
ব্যবস্থায়, বাবা এবং চাচাদের ক্ষেত্রে একই জ্ঞাতি পদ ব্যবহার করা হয়)। অপর পক্ষে বর্ণনাসূচক জ্ঞাতি
পদাবলী রৈখিক এবং পার্শ্বিক জ্ঞাতিদের পৃথক করে (যেমন ধরুন, এস্কিমো জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থা
যেখানে “বাবা” বলতে জৈবিক বাবাকেই বোঝানো হয়ে থাকে)। মর্গানের মতে শ্রেণীবাচক জ্ঞাতি পদ
হচ্ছে “আদিম” এবং বর্ণনাসূচক জ্ঞাতি পদ হচ্ছে “উন্নততর”।
জ্ঞাতি পদাবলীর বিভিন্ন ব্যবস্থার আলোচনায় যাবার পূর্বে নৃবিজ্ঞানে জ্ঞাতিসম্পর্ক কিভাবে নকশা-আকারে
পরিবেশিত হয়ে থাকে, তার সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে। দেখুন চিত্র ১। নৃবিজ্ঞানের
জ্ঞাতি নকশায় খেয়াল করে দেখবেন সব সময় একজন ‘বমড়’, যার বাংলা আমরা করছি “নিজ”, তাকে
চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এই “নিজ” হচ্ছে ধরুন আপনি। আপনার অবস্থান হতে জ্ঞাতি দলের সদস্য
কারা (এবং কারা সদস্য নন), তা নকশার মাধ্যমে চিত্রিত করা হয়। এতে বুঝতে সুবিধা হয়।
নৃবিজ্ঞানের পাঠ্যবইতে এই “নিজ”টি সব সময় পুরুষ হয়; এর মাধ্যমে জ্ঞানকান্ড হিসেবে নৃবিজ্ঞানের
পুরুষ-পক্ষপাতিত্ব ধরা পড়ে। চিত্র ১ ভালো করে দেখুন, কোন সংকেত কিসের চিহ্ন তা পাশে লেখা
আছে। চিত্রে তিন প্রজন্মের একটি কাল্পনিক জ্ঞাতি দলকে দেখান হয়েছে। নিজ বা বমড়’র দৃষ্টিতে
প্রথম প্রজন্মে আছে দাদা-দাদী এবং উভয়ের ভাই ও বোন। আরো আছেন, নানা-নানী এবং উভয়ের
মর্গানের দৃষ্টিতে, জ্ঞাতি
পদাবলী দুই ধরনের: শ্রেণীবাচক
(পষধংংরভরপধঃড়ৎু) এবং
বর্ণনাসূচক (ফবংপৎরঢ়ঃরাব)।
ভাই-বোন। দ্বিতীয় প্রজন্মে আছে বাবা-মা এবং তাদের ভাই ও বোন। তৃতীয় প্রজন্মে, চিত্রে দেখানো
হয়েছে আপনাকে, আপনার ভাই ও বোন, এবং আপনার চাচাত, ফুপাত, খালাত ও মামাত ভাই ও
বোনকে।
চিত্র ১: জ্ঞাতিত্ব-সম্পর্ক
সূত্র: জড়মবৎ গ. কববংরহম (১৯৭৫) করহ এৎড়ঁঢ়ং ধহফ ঝড়পরধষ ঝঃৎঁপঃঁৎব, ঋষড়ৎরফধ: ঐধৎপড়ঁৎঃ
ইৎধপব ঔড়াধহড়ারপয ঈড়ষষবমব চঁনষরংযবৎ, পৃ: ১৫।
মার্ডক ছয় ধরনের জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থা চিহ্নিত করেন, যথা: ১.হাওয়াই, ২.এস্কিমো, ৩. ইরোকওয়া,
৪. ওমাহা, ৫. ক্রো, এবং ৬.সুদানি। নিচে এই ছয়টি ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় প্রদান করা হ’ল।
মার্ডক ছয় ধরনের জ্ঞাতি
পদাবলী ব্যবস্থা চিহ্নিত করেন,
যথা: ১.হাওয়াই, ২. এস্কিমো,
৩. ইরোকওয়া, ৪. ওমাহা, ৫.
ক্রো. এবং ৬.সুদানি।
১. হাওয়াই: এই নামের জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থা পলিনেশিয়া অঞ্চলে প্রচলিত। তুলনামূলকভাবে এই
পদাবলী ব্যবস্থা সহজ, কারণ এতে আছে কম জ্ঞাতি পদাবলী। হাওয়াইয়ের ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হ’ল
দুটি: প্রজন্মের ফারাক এবং মা এবং বাবার দিককার আত্মীয়দের উপর সমান গুরুত্ব আরোপন।
বাবা-মায়ের প্রজন্মে, বাবা, বাবার ভাই এবং মায়ের ভাই, একই পদভুক্ত। ঠিক একইভাবে, মা,
মায়ের বোন এবং বাবার বোন একই পদভুক্ত। ভাইদের ক্ষেত্রেও তাই (ভাই হচ্ছেন আপন,
চাচাত, ফুপাত, মামাত এবং খালাত ভাই)। লক্ষ্য করবেন যে জ্ঞাতি পদ ও জ্ঞাতি সম্বোধন, এ
দুটো ভিন্ন বিষয়। পদ বলতে বোঝায় শ্রেণীকরণ, যেমন ধরুন বাংলা ভাষায় ভাই বা ভ্রাতা একই
শ্রেণীর জ্ঞাতিকে বোঝায়, বোন বা ভগ্নী আরেক শ্রেণীর জ্ঞাতিকে বোঝায়। কিন্তু এই শ্রেণীর
জ্ঞাতিকে সম্বোধন করার বিশেষ রীতি রয়েছে এই অঞ্চলের বাঙ্গালি হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও
খ্রিস্টানদের মধ্যে। ভাইদের মধ্যে যিনি বড় তাকে সম্বোধন করা হয়, বড়/মেজ/সেজ “দাদা” বা
“ভাই” হিসেবে; “নিজ” এর থেকে বয়সে যারা ছোট তাদের নাম ধরে ডাকা হয়। ২ নম্বর চিত্র,
“হাওয়াই সমাজের জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থা” দেখুন। বাবা পদটি সংরক্ষিত ২, ৩ এবং ৬-এর জন্য;
মায়ের পদ সংরক্ষিত ১, ৪ এবং ৫-এর জন্য। নিজ প্রজন্মের সকলের (আপন ভাইবোন এবং
কাজিনরা) হচ্ছেন ভাই ও বোন।
হাওয়াইয়ের জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থায় দেখা যাচ্ছে যে, রৈখিক এবং পার্শ্বিক জ্ঞাতির মধ্যে কোন
পার্থক্য করা হয় না। দ্বিতীয়ত, মা এবং বাবার দিকের আত্মীয়ের মধ্যে পার্থক্য করা হয় না।
চিত্র ২: হাওয়াই সমাজের জ্ঞাতি-পদাবলী ব্যবস্থা
সূত্র: ডরষষরধস অ. ঐধারষধহফ (১৯৯৯) ঈঁষঃঁৎধষ অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু, ৯ঃয বফরঃরড়হ, ঋষড়ৎরফধ:
ঐধৎপড়ঁৎঃ ইৎধপব ঈড়ষষবমব চঁনষরংযবৎং, পৃ: ৩০৮।
২. এস্কিমো: এস্কিমো পদাবলী ব্যবস্থা পাওয়া যায় পশুশিকার এবং খাদ্য সংগ্রহকারী সমাজে। আবার,
একই ধরনের পদাবলীর ব্যবহার পাশ্চাত্যের সমাজেও পরিলক্ষিত হয়। এই ব্যবস্থায় গুরুত্ব
আরোপন করা হয় একক পরিবার-এর উপর। মাতা, পিতা, বোন, ভাই, কন্যা, পুত্র Ñ এদের
জন্য যে জ্ঞাতি পদ ব্যবহার করা হয় সেগুলো আর কারো ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় না। দ্বিতীয়ত, একক
“হাওয়াই সমাজের জ্ঞাতি
পদাবলী ব্যবস্থা” দেখুন। বাবা
পদটি সংরক্ষিত ২, ৩ এবং ৬-
এর জন্য; মায়ের পদ সংরক্ষিত
১, ৪ এবং ৫-এর জন্য। নিজ
প্রজন্মের সকলের (আপন
ভাইবোন এবং কাজিনরা)
হচ্ছেন ভাই ও বোন।
হাওয়াইয়ের জ্ঞাতি পদাবলী
ব্যবস্থায় দেখা যাচ্ছে যে, রৈখিক
এবং পার্শ্বিক জ্ঞাতির মধ্যে কোন
পার্থক্য করা হয় না। দ্বিতীয়ত,
মা এবং বাবার দিকের
আত্মীয়ের মধ্যে পার্থক্য করা
হয় না।
পরিবারের বাইরে বহু সদস্যদের একটি মাত্র পদ দিয়ে একত্রীভূত করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ,
“ঁহপষব”, “ধঁহঃ”, কিংবা “পড়ঁংরহ”। ৩ নম্বর চিত্র “এস্কিমো সমাজে জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থা”
দেখুন। বাবা পদটি সংরক্ষিত নিজের বাবার জন্য; মায়ের পদটিও একইভাবে কেবলমাত্র নিজ
মায়ের জন্য সংরক্ষিত। আপন ভাইবোনের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই, বাকি সকলে Ñ মামাত, ফুপাত,
চাচাত ও খালাত ভাইবোনেরা হচ্ছেন কাজিন।
এস্কিমো জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নৃবিজ্ঞানীদের অভিমত হচ্ছে যে, ক্ষেত্র বিশেষে এই
পদাবলী ব্যবস্থা বর্জনকারী (বীপষঁংরাব): রৈখিক এবং পার্শ্বিক জ্ঞাতির ক্ষেত্রে পৃথকীকরণ সুনির্দিষ্ট
যেমন মা এবং বাবা, ভাই এবং বোন Ñ এদের ক্ষেত্রে যে পদ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই পদগুলো
আর কোন জ্ঞাতির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে না। আবার, অন্যভাবে দেখলে এই ব্যবস্থা
অন্তর্ভুক্তিকারী (রহপষঁংরাব)। বাবা এবং মায়ের দিককার আত্মীয়ের মধ্যে কোন পৃথকীকরণ করা
হচ্ছে না। বিবাহসূত্রে সম্পর্কিত আত্মীয় এবং রক্তসূত্রে সম্পর্কিত আত্মীয়দের মধ্যে কোন পার্থক্য
টানা হচ্ছে না। অনেক নৃবিজ্ঞানী মনে করেন, ইঙ্গ-মার্কিন জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থার ভিত্তি হচ্ছে
এস্কিমো পদাবলী ব্যবস্থা।
চিত্র ৩: এস্কিমো সমাজের জ্ঞাতি-পদাবলী ব্যবস্থা
সূত্র: ডরষষরধস অ. ঐধারষধহফ (১৯৯৯) ঈঁষঃঁৎধষ অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু, ৯ঃয বফরঃরড়হ, ঋষড়ৎরফধ:
ঐধৎপড়ঁৎঃ ইৎধপব ঈড়ষষবমব চঁনষরংযবৎং, পৃ: ৩০৭
৩. ইরোকওয়া : ইরোকওয়া (ইংরেজী বানান, “ওৎড়য়ঁড়রং”) ব্যবস্থায় বাবা এবং বাবার ভাই একই পদ
দ্বারা অভিহিত, মা এবং মায়ের বোনের ক্ষেত্রে রয়েছে একই পদ; কিন্তু বাবার বোন এবং মায়ের
ভাই Ñ এদের পদ ভিন্ন। “নিজ”-এর প্রজন্মের ক্ষেত্রে ভাই, বোন এবং সমান্তরাল কাজিন (অর্থাৎ,
বাবার ভাই এবং মায়ের বোনের সন্তান) সকলের পদ একই। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, এটি যৌক্তিক
এস্কিমো জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থা
বর্জনকারী (বীপষঁংরাব)এবং
অন্তর্ভুক্তিকারী (রহপষঁংরাব)
যেহেতু নিজ এই কাজিনদের বাবা ও মাকে নিজের বাবা, নিজের মায়ের পদভুক্ত করেন।
আড়াআড়ি কাজিনদের (বাবার বোন ও মায়ের ভাইয়ের সন্তান) পদ নিজ ভাইবোন ও সমান্তরাল
কাজিনদের থেকে ভিন্ন। এই ব্যবস্থায় বিবাহ-সঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আড়াআড়ি কাজিনদের
অগ্রাধিকার দেয়া হয়। ৪ নম্বর চিত্র, “ইরোকওয়া সমাজের জ্ঞাতি-পদাবলী ব্যবস্থা” দেখুন। বাবা
পদটি সংরক্ষিত ২ এবং ৩-এর জন্য; মায়ের পদ সংরক্ষিত ৪ এবং ৫-এর জন্য। নিজ প্রজন্মের
ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ এবং ১৪ হচ্ছেন ভাই ও বোন; ৭, ৮, ১৫ এবং ১৬
হচ্ছেন কাজিন।
যদিও ইরোকওয়া জ্ঞাতি-পদাবলী ব্যবস্থার নামকরণ করা হয়েছে উত্তর আমেরিকার ইরোকওয়া
আদিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত ব্যবস্থার ভিত্তিতে, এই ব্যবস্থার প্রচলন বহু অঞ্চলে দেখা যায়।
নৃবিজ্ঞানীদের অভিমত হচ্ছে, এই ব্যবস্থা একসূত্রীয় বংশধারার সাথে সম্পৃক্ত। চীনের গ্রামীণ
সমাজে কিছুকাল আগেও এর প্রচলন দেখা গেছে।
ইরোকওয়া জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: একক পরিবারের সদস্যদের সাথে
পার্শ্বিক জ্ঞাতির একত্রীকরণ (মা এবং মায়ের বোন, বাবা এবং বাবার ভাই) এবং, সমান্তরাল ও
আড়াআড়ি কাজিনদের মধ্যেকার বিভাজন।
চিত্র ৪: ইরোকওয়া সমাজের জ্ঞাতি-পদাবলী ব্যবস্থা
সূত্র: ডরষষরধস অ. ঐধারষধহফ (১৯৯৯) ঈঁষঃঁৎধষ অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু, ৯ঃয বফরঃরড়হ, ঋষড়ৎরফধ:
ঐধৎপড়ঁৎঃ ইৎধপব ঈড়ষষবমব চঁনষরংযবৎং, পৃ: ৩০৯
৪. ওমাহা : ওমাহা ব্যবস্থা পিতৃসূত্রীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্যমান। নেব্রাস্কা অঞ্চলের আদিবাসী
আমেরিকান একটি জাতির নাম ওমাহা, তাদের মধ্যে এই ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হওয়া সূত্রেই এর নাম
ইরোকওয়া জ্ঞাতি পদাবলী
ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে:
একক পরিবারের সদস্যদের
সাথে পার্শ্বিক জ্ঞাতির
একত্রীকরণ (মা এবং মায়ের
বোন, বাবা এবং বাবার ভাই)
এবং, সমান্তরাল ও আড়াআড়ি
কাজিনদের মধ্যেকার বিভাজন।
ওমাহা সমাজ জ্ঞাতি পদাবলী
ব্যবস্থা মূল বিষয় হচ্ছে মায়ের
দিকে ভিন্ন প্রজন্মের সদস্যদের
একত্রীকরণ। আবার বাবার
দিকে একই প্রজন্মের সদস্যদের
এক প্রজন্ম নিচে নামিয়ে দেয়া
হয়।
ওমাহা। মজার ব্যাপর হ’ল, ওমাহা জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থায় কেবলমাত্র মা এবং মায়ের বোন নয়,
মায়ের ভাইয়ের মেয়েও একই জ্ঞাতিপদের অন্তর্ভুক্ত। এই তিন শ্রেণীর জ্ঞাতি হচ্ছেন “মা”।
কেবলমাত্র মামা নন, তার পুত্র সন্তানও একই জ্ঞাতিপদভুক্ত। এই দুই শ্রেণীর জ্ঞতি হচ্ছেন
“মামা”। “বাবা” পদভুক্ত হচ্ছেন বাবা এবং বাবার ভাই। আর বাবার বোন অর্থাৎ ফুফুর ছেলে এবং
মেয়েরা হচ্ছেন “ভাগনা” এবং “ভাগনি”। আপন বাবা-মা, চাচা ও খালার সন্তানেরা হচ্ছেন ভাই
ও বোন। ৫ নম্বর চিত্র “ওমাহা সমাজের জ্ঞাতি-পদাবলী ব্যবস্থা” দেখুন। বাবা পদটি সংরক্ষিত ২
এবং ৩-এর জন্য; মায়ের পদটি সংরক্ষিত ৪, ৫ এবং ১৬-এর জন্য। একইভাবে ৬ এবং ১৫ ভিন্ন
প্রজন্মের হওয়া সত্তে¡ও একই পদভুক্ত। নিজ প্রজন্মের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩
এবং ১৪ হচ্ছেন ভাই ও বোন পদভুক্ত; ৭ এবং ৮ যদিও নিজের প্রজন্মের, তাঁরা হচ্ছেন ভাগনাভাগনি শ্রেণীভুক্ত।
এই ব্যবস্থায় মূল বিষয় হচ্ছে মায়ের দিকে ভিন্ন প্রজন্মের সদস্যদের একত্রীকরণ (মা-খালার সাথে
মায়ের ভাইয়ের মেয়ে, মায়ের ভাইয়ের সাথে মায়ের ভাইয়ের পুত্র)। আবার, বাবার দিকে একই
প্রজন্মের সদস্যদের এক প্রজন্ম নিচে নামিয়ে দেয়া (ফুফুর ছেলেমেয়ে ভাইবোন বা কাজিন না হয়ে
হচ্ছেন ভাগনা-ভাগনি)।
চিত্র ৫: ওমাহা সমাজের জ্ঞাতি-পদাবলী ব্যবস্থা
সূত্র: ডরষষরধস অ. ঐধারষধহফ (১৯৯৯) ঈঁষঃঁৎধষ অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু, ৯ঃয বফরঃরড়হ, ঋষড়ৎরফধ:
ঐধৎপড়ঁৎঃ ইৎধপব ঈড়ষষবমব চঁনষরংযবৎং, পৃ: ৩১১
৫. ক্রো: ক্রো হচ্ছে আরেক আমেরিকান আদিবাসী জাতির নাম যারা মন্টানা অঞ্চলের বাসিন্দা। একই
পদাবলীর ব্যবস্থা দেখা গেছে হোপিদের মধ্যে। হোপিরা হচ্ছেন আমেরিকার আরেক আদিবাসী
জাতি। এ বাদে, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও একই জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থা দেখা গেছে। নৃবিজ্ঞানীদের
মতে, এদের জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থা হচ্ছে ওমাহা ব্যবস্থার মাতৃসূত্রীয় সংস্করন। ক্রো ব্যবস্থায় বাবা
এবং বাবার ভাই একই পদভুক্ত। মা এবং মায়ের বোন একই পদভুক্ত। এদের Ñ অর্থাৎ আপন মাবাবা, মায়ের বোন এবং বাবার ভাই Ñ সকলের সন্তান হচ্ছে নিজের ভাইবোন। বাবার বোন এবং
বাবার বোনের কন্যা একই পদভুক্ত (বাংলা ভাষায় বললে দুজনেই হচ্ছেন ফুফু); বাবার বোনের
পুত্র হচ্ছেন বাবা। মায়ের ভাইয়ের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, মায়ের ভাইয়ের পুত্র-কন্যা হচ্ছে
নিজের পুত্র ও কন্যা: তারা এবং “নিজ” একই প্রজন্মের হলেও জ্ঞাতি পদাবলীর দিক থেকে তারা
এক প্রজন্ম নিচে। ৬ নম্বর চিত্র “ক্রো সমাজের জ্ঞাতি-পদাবলী ব্যবস্থা” দেখুন। ৭, ২ এবং ৩ ভিন্ন
দুই প্রজন্মের হলেও বাবা হিসেবে শ্রেণীভুক্ত; ১ এবং ৮ Ñ এরাও দুই প্রজন্মের Ñ কিন্তু দুজনেই
বাবার বোন হিসেবে একই শ্রেণীভুক্ত; ৪ এবং ৫ হচ্ছেন মা শ্রেণীর। ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ এবং
১৪ হচ্ছেন ভাইবোন শ্রেণীর; ১৫ এবং ১৬ হচ্ছেন পুত্র-কন্যা শ্রেণীর।
ক্রো জ্ঞাতি-পদাবলী ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে সমান্তরাল কাজিনরা (চাচাত ও খালাত) একই
শ্রেণীভুক্ত। আড়াআড়ি কাজিনদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, যাঁরা বাবার দিকের তাঁরা নিজের এক
প্রজন্ম ঊর্ধ্বে শ্রেণীভুক্ত; আর যাঁরা মায়ের দিকের তাঁরা এক প্রজন্ম নিচে শ্রেণীভুক্ত।
চিত্র ৬: ক্রো সমাজের জ্ঞাতি-পদাবলী ব্যবস্থা
সূত্র: ডরষষরধস অ. ঐধারষধহফ (১৯৯৯) ঈঁষঃঁৎধষ অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু, ৯ঃয বফরঃরড়হ, ঋষড়ৎরফধ:
ঐধৎপড়ঁৎঃ ইৎধপব ঈড়ষষবমব চঁনষরংযবৎং, পৃ: ৩১০
৬. সুদানী: সুদানী নামে পরিচিত এই জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থা আফ্রিকার দক্ষিণ সুদান অঞ্চলের
অধিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত। এ কারণে এর নামকরণ করা হয়েছে সুদানী জ্ঞাতি-পদাবলী ব্যবস্থা।
চীনের গ্রামীণ সমাজে ইরোকওয়া জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থার পরিবর্তে কিছুকাল ধরে সুদানী জ্ঞাতিপদাবলী ব্যবস্থার প্রচলন দেখা যাচ্ছে। বিশ্বে এই ব্যবস্থার প্রচলন অন্য ব্যবস্থার তুলনায় কম। এই
ব্যবস্থায় বাবা এবং মা, তাদের ভাই এবং বোন Ñ এদের সকলের জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক পদ।
আপন ভাই এবং বোনের জন্য পৃথক পৃথক পদ রয়েছে। একই সাথে, বাবা ও মায়ের ভাইবোনদের
ক্রো জ্ঞাতি-পদাবলী ব্যবস্থার
গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে সমান্তরাল
কাজিনরা (চাচাত ও খালাত)
একই শ্রেণীভুক্ত। আড়াআড়ি
কাজিনদের ক্ষেত্রে দেখা যায়
যে, যাঁরা বাবার দিকের তাঁরা
নিজের এক প্রজন্ম ঊর্ধ্বে
শ্রেণীভুক্ত; আর যাঁরা মায়ের
দিকের তাঁরা এক প্রজন্ম নিচে
শ্রেণীভুক্ত।
সন্তানেরা ভিন্ন ভিন্ন পদে শ্রেণীভুক্ত। এই ব্যবস্থা অন্য সকল ব্যবস্থা হতে খুব ভিন্ন। কারণ এই
ব্যবস্থায় জ্ঞাতিদের খুব সুনির্দিষ্টভাবে আলাদা করা হয়: বাবা, মা, চাচা, খালা, বড় ফুফু, মেজ
মামা, চাচাত বোন ইত্যাদি। এই জ্ঞাতি ব্যবস্থাকে নৃবিজ্ঞানীরা “বর্ণনাসূচক” ব্যবস্থা বলেন। বাঙ্গালি
মুসলমান জ্ঞাতি পদাবলীর সাথে সুদানী জ্ঞাতি-পদাবলী ব্যবস্থার সমূহ মিল রয়েছে । ৭ নম্বর চিত্র
“ সুদানী সমাজের জ্ঞাতি-পদাবলী ব্যবস্থা” দেখুন।
চিত্র ৭: সুদানী সমাজের জ্ঞাতি-পদাবলী ব্যবস্থা
সূত্র: লেখকের তৈরী।
সারাংশ
এই পাঠে জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়নের ‘প্রজাপতি সংগ্রহ’ পর্ব তুলে ধরা হয়েছে। তবে এই পর্বকে পিছনে-ফেলেআসা-পর্ব হিসেবে দেখলে, ভুল করা হবে। বহু বিশ্ববিদ্যালয় মহলে, বহু প্রকাশনায় এই ধারা অবিকৃত
রূপে এখন পর্যন্তচর্চিত হচ্ছে। এই ধারা সমালোচিত হওয়ার পিছনে প্রধান কারণ ছিল এটি জ্ঞাতিত্বকে
দাঁড় করায় স্বতন্ত্র, এবং সমাজের অপরাপর প্রতিষ্ঠান থেকে বিচ্ছিন্ন একটি ক্ষেত্র হিসেবে। আগামী
পাঠগুলোতে দেখবেন যে, নতুন এবং পুনর্গঠিত জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়নের কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: জ্ঞাতিত্বের
অপরাপর প্রতিষ্ঠানের সাথে অন্তর্প্রবিষ্টতার উপর গুরুত্ব আরোপ করা, সেটার অনুসন্ধান করা।
সুদানী জ্ঞাতি-পদাবলী ব্যবস্থা
অন্য সকল ব্যবস্থা হতে খুব
ভিন্ন। কারণ এই ব্যবস্থায়
জ্ঞাতিদের খুব সুনিদিষ্টভাবে
আলাদা করা হয়।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন -
১। মর্গানের দৃষ্টিতে, জ্ঞাতি পদাবলী কত ধরনের ?
ক. ২ ধরনের খ. ৩ ধরনের
গ. ৪ ধরনের ঘ. উপরের কোনটিই নয়
২। কোন জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থায় রৈখিক ও পার্শ্বিক জ্ঞাতির মধে কোন পার্থক্য করা হয় না?
ক. হাওয়াই খ. ইরোকওয়া
গ. এস্কিমো ঘ. ক্রো
৩। কোন জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থা বর্জনকারী (বীপষঁংরাব) ও অন্তর্ভুক্তিকারী (রহপষঁংরাব)?
ক. হাওয়াই খ. ক্রো
গ. এস্কিমো ঘ. ওমাহা
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থার মূলনীতি কী?
২। জ্ঞাতি পদাবলীর ধরনকে মর্গান ক’ভাগে বিভাজিত করেছেন এবং সেগুলো কি কি?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। জ্ঞাতিত্ব শ্রেণীকরণের কার্যকলাপকে লীচ কেন “প্রজাপতি” সংগ্রহের সাখে তুলনা করেছেন? আপনি
কি লীচের সমালোচনার সাথে একমত? উত্তরের পক্ষে যুক্তি লিখুন।
২। জ্ঞাতি শ্রেণীকরণের মূলনীতি অথবা জ্ঞাতি পদাবলী ব্যবস্থার ধরন বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]