বংশধারা কী?
উত্তরাধিকার এবং পারম্পর্য বলতে কী বোঝায়?


 বংশ ধারা নিরূপনের মূলনীতি
নৃবিজ্ঞানের জন্মলগ্ন হতে জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়ন ছিল নৃবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় বিষয়। আপনারা ৩ নং পাঠে
দেখেছেন কিভাবে মর্গান-অনুসরণে প্রাথমিক পর্যায়ের নৃবিজ্ঞান গুরুত্ব দিয়েছিল জ্ঞাতিত্ব পদাবলীর
উপর। মর্গানের প্রভাবের কারণে গত শতকের প্রথম দশকগুলোতে জ্ঞাতি অধ্যয়ন বলতে বোঝাত
বিভিন্ন সমাজের জ্ঞাতি পদাবলীর তুলনামূলক আলোচনা। ম্যালিনোস্কি এবং কাঠামোগত ক্রিয়াবাদী
নৃবিজ্ঞানীরা, এধরনের “জ্ঞাতি এলজেব্রা” থেকে সরে দাঁড়ালেন। একে জ্ঞাতি এলজেব্রা বলা হয়েছিল
কারণ যুক্তিবিদ্যা বা ষড়মরপ-এর মতনই এগোচ্ছিল জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়ন Ñ আনুষ্ঠানিক নিয়মনীতি,
নানারকমের অর্থহীন শ্রেণীকরণ তৈরি ইত্যাদি। ম্যালিনোস্কি এবং কাঠামোগত ক্রিয়াবাদীরা জ্ঞাতিত্ব
অধ্যয়নকে ঢেলে সাজালেন। তাঁরা গুরুত্ব আরোপ করলেন জ্ঞাতিত্বের সামাজিক প্রেক্ষিতের উপর।
কোন্ সমাজে কোন্ জ্ঞাতি সম্পর্ক কোন্ ধরনের ক্রিয়া সম্পাদন করে থাকে Ñ এই ছিল তাঁদের
মনোযোগের জায়গা। জ্ঞাতিত্ব নিয়ে গবেষণা এবং তাত্তি¡ক লেখালেখির মাধ্যমে কাঠামোগত ক্রিয়াবাদী
তাত্তি¡ক দৃষ্টিভঙ্গি শক্তিশালী হয়ে উঠল। এদের প্রধান অবদান বংশধারা বা গোষ্ঠী তত্ত¡।
বংশধারা তত্ত¡ ১৯৪০ হতে ১৯৬০-এর দশক পর্যন্তবৃটিশ সামাজিক নৃবিজ্ঞানে প্রভাব বিস্তার করে। একই
সময়কালে এই তত্ত¡ মার্কিনী সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানে প্রভাবশালী ছিল। এই তত্তে¡র কেন্দ্রীয় ভাবনা এক
দিকে ছিল ভূখন্ড এবং জ্ঞাতিত্বের সম্পর্ক নির্ণয়, অপর দিকে, পরিবার এবং অধিকতর বৃহত্তর সামাজিক
একক যেমন ক্ল্যান, জেন এবং সিব Ñ এদের আন্তঃসম্পর্ক উদ্ঘাটন। বংশধারা তত্ত¡ বিবর্তনবাদ হতে
জন্মলাভ করে। পরবর্তী পর্যায়ে, যখন মাঠকর্ম-ভিত্তিক গবেষণা এবং ক্রিয়াবাদী তত্ত¡ শক্তিশালী হয়ে
উঠে, তখন এই ভাবনা শক্ত-পোক্তভাবে নৃবিজ্ঞানীদের মধ্যে দানা বাঁধে যে সামাজিক সংগঠনের প্রধান
একক হচ্ছে গোষ্ঠী। এবং আস্তে-আস্তেবিবর্তনবাদী ধারণা Ñ যেমন গোষ্ঠী মনুষ্য প্রজাতির বিবর্তনের
কোন পর্যায়ে উদ্ভাবিত হ’ল Ñ গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। এর পরিবর্তে, সামাজিক সংগঠন হিসেবে গোষ্ঠী
কিভাবে সামাজিক ভারসাম্য নিশ্চিত করে Ñ এই ধরনের প্রসঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। বৃটিশ নৃবিজ্ঞানী
র‌্যাডক্লিফ-ব্রাউন এবং আরো পরে মেয়ার ফোর্টস, ইভানস্-প্রিচার্ড প্রধানত আফ্রিকায় কাজ করেন এবং
সেখানকার সমাজে করা গবেষণার সাহায্যে গোষ্ঠী তত্ত¡ তৈরী করেন। এই তত্ত¡ এতই শক্তিশালী ছিল যে
এক সময় নৃবিজ্ঞানীদের মনে হয়েছিলো পৃথিবীর সকল সমাজেই গোষ্ঠী কিংবা বংশ আছে, থাকতে
বাধ্য। ফরাসী নৃবিজ্ঞানী ক্লদ লেভী-স্ট্রস’এর মৈত্রীবন্ধনতত্ত¡ পরে বংশধারা তত্ত¡কে ¤øান করে দেয়।
বংশধারা
বংশধারা (ফবংপবহঃ) বলতে বোঝান হয়ে থাকে বংশের ধারা। বংশের ধারা নিরূপনের বেলায়,
নৃবিজ্ঞানীদের কাছে প্রধান জিজ্ঞাসা হচ্ছে: এক প্রজন্ম হতে আরেক প্রজন্ম অর্থাৎ, পিতা-মাতা এবং
তাদের সন্তান, এ দুই প্রজন্মের সম্পর্ক কিভাবে সংগঠিত? বংশধারা তাত্তি¡কদের মতে, প্রতিটি ব্যক্তির
সাথে তার পূর্বপুরুষদের সম্পর্ক দুইভাবে সংগঠিত হতে পারে। হয় তার বাবার মাধ্যমে, অথবা তার
এই তত্তে¡র কেন্দ্রীয় ভাবনা এক
দিকে ছিল ভূখন্ড এবং
জ্ঞাতিত্বের সম্পর্ক নির্ণয়, অপর
দিকে, পরিবার এবং অধিকতর
বৃহত্তর সামাজিক একক যেমন
ক্ল্যান, জেন এবং সিব Ñ এদের
আন্তঃসম্পর্ক উদ্ঘাটন।
যখন মাঠকর্ম-ভিত্তিক গবেষণা
এবং ক্রিয়াবাদী তত্ত¡ শক্তিশালী
হয়ে উঠে, তখন এই ভাবনা
শক্ত-পোক্তভাবে নৃবিজ্ঞানীদের
মধ্যে দানা বাঁধে যে সামাজিক
সংগঠনের প্রধান একক হচ্ছে
গোষ্ঠী।
মায়ের মাধ্যমে। তার উত্তরসূরীদের বেলায়, অর্থাৎ, তার পরবর্তী প্রজন্মের সাথে, তার সম্পর্ক
নিরূপনের মাধ্যম হতে পারে, হয় তার কন্যাসন্তান অথবা তার পুত্রসন্তান। মনে রাখবেন যে, কোন
নির্দিষ্ট বংশধারা ব্যবস্থায়, কিছু সূত্রিতার (ষরহবধষ ষরহশ) উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়, আর কিছু
সূত্রিতা গুরুত্বহীন হিসেবে দেখা হয়।
সাধারণত দেখা যায় যে, কোন একটি বিশেষ লিঙ্গীয় সূত্রিতার উপর জোর দেয়া হচ্ছে। অপরটির উপর
না। একে বলে একরৈখিক বংশধারা নীতি (ঁহরষরহবধষ ফবংপবহঃ ৎঁষব), যেহেতু সেই সমাজে
কেবলমাত্র একটি সূত্রিতার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। যদি, পিতা সূত্রিতার মাধ্যম হিসেবে কাজ
করে, তাহলে সেটা হয় পিতৃসূত্রীয় (ঢ়ধঃৎরষরহবধষ, ধমহধঃরপ) বংশধারা। এই নীতি অনুসারে পুরুষ
হচ্ছেন পূর্বসুরী, এবং দলগত সদস্যপদ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে অটুট এবং একাদিক্রমে পুরুষ সূত্রিতার
মাধ্যমে (পুরুষ পূর্বসূরীর ছেলে, তার ছেলের ছেলে, তার ছেলের ছেলের ছেলে ইত্যাদি)। যদি উল্টোটা
ঘটে, অর্থাৎ, মা যদি হন এক প্রজন্ম হতে আরেক প্রজন্মের সূত্রিতার মাধ্যম, তাহলে সেটাকে
নৃবিজ্ঞানীরা বলেন মাতৃসূত্রীয় কিংবা জড়ায়ূসুত্রীয় (সধঃৎরষরহবধষ, ঁঃবৎরহব) বংশধারা। এই নীতি
অনুসারে একমাত্র নারীই হতে পারেন পূর্বসূরী এবং দলগত সদস্যপদ নির্ধারণ করা হয় অটুট এবং
একাদিক্রমে নারীর মাধ্যমে (নারী পূর্বসুরীর কন্যা, তার কন্যার কন্যা, তার কন্যার কন্যার কন্যা
ইত্যাদি)।
কিন্তু পৃথিবীর সকল সমাজ কেবল পিতৃসূত্রীয় অথবা মাতৃসূত্রীয়ভাবে সংগঠিত হয় না। কিছু সমাজে দেখা
যায় যে, দুটি একরৈখিক বংশধারা নীতিই বিদ্যমান। এ ধরনের নীতিমালা যে সকল সমাজে প্রযোজ্য,
সেগুলো নৃবিজ্ঞানীদের ভাষায়, দ্বৈত একরৈখিক বংশধারা নীতি (ফড়ঁনষব-ঁহরষরহবধষ ফবংপবহঃ) দ্বারা
সংগঠিত। কিন্তু বিষয়গুলো আরও জটিল। একরৈখিক এবং দ্বৈত একরৈখিক বংশধারা নীতি বাদে,
কিছু-কিছু সমাজে, আরেক ধরনের সূত্রিতা বিদ্যমান। সেখানে প্রচলিত, নৃবিজ্ঞানীদের ভাষায়, অনএকরৈখিক বংশধারা নীতি (হড়হ-ঁহরষরহবধষ ফবংপবহঃ)। অন-একরৈখিক হতে পারে দুই ধরনের:
অনুষঙ্গিক (পড়মহধঃরপ) এবং দ্বিপাক্ষিক বা দ্বিপাশ্বির্ক(নরষধঃবৎধষ) বংশধারা। অনুষঙ্গিক নীতির
ভিত্তিতে সংগঠিত বংশীয় দল হচ্ছে সেটি যার সদস্য নির্ধারিত হতে পারে পূর্বপুরুষ অথবা পূর্বনারীর
মাধ্যমে, একাদিক্রমে পুরুষ অথবা নারী সূত্রিতার মাধ্যমে, অথবা এ দুটো সূত্রিতার বিভিন্ন ধরনের
সমন্বয়ের মাধ্যমে। অন্য কথায়, পূর্বসূরী যেমন হতে পারেন নারী কিংবা পুরুষ, আবার একই সাথে,
সেই পূর্বসূরীর সাথে সূত্রিতার সম্পর্ক একান্তভাবে নারী বা পুরুষের মাধ্যমে নয়। অর্থাৎ, অনুষঙ্গিক
বংশধারার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন লিঙ্গীয় পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ নয়। দ্বিপাক্ষিক বা দ্বিপার্শ্বিক সূত্রিতা ইউরোপ,
আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত। একজন ব্যক্তি (নারী বা পুরুষ) তার বংশ সূত্রিতা,
সকল পূর্বসূরী নারী এবং পুরুষ আত্মীয়ের সাহায্যে দাঁড় করাচ্ছেন।
দ্বৈত সূত্রীয় বংশধারা (সংক্ষেপে দ্বিসূত্রীয়; নরষরহবধষ ফবংপবহঃ) দ্বিপাক্ষিক/দ্বিপার্শ্বিক বংশধারা হতে
ভিন্ন। অস্ট্রেলিয়ার কিছূ আদিবাসী জাতির মধ্যে দেখা গেছে যে, পিতৃ-এবং মাতৃ-সূত্রিতা আড়াআড়ি
ভাবে সম্পর্কিত। নৃবিজ্ঞানীরা এর নামকরণ করেছেন দ্বৈত সূত্রীয় বংশধারা।
কোন্ কোন্ নীতির ভিত্তিতে বংশ সংগঠিত হয়ে থাকে, তা ছিল উপরের আলোচনার বিষয়। মনে
রাখবেন, বংশ হচ্ছে একটি সামাজিক দল। সামাজিক দল হিসেবে এটি বিশেষ বিশেষ নীতি দ্বারা
গঠিত। বিশেষ ধরনের বংশীয় নীতি বিশেষ ধরনের বংশীয় দল গঠন করে। যেমন: পুরুষ সূত্রিতা গঠন
করে পিতৃসূত্রীয় বংশ ইত্যাদি।
বংশধারা বলতে বোাঝান হয়ে
থাকে বংশের ধারা। ... যদি,
পিতা সূত্রিতার মাধ্যম হিসেবে
কাজ করে, তাহলে সেটা হয়
পিতৃসূত্রীয় বংশধারা। ... যদি
উল্টোটা ঘটে, অর্থাৎ মা যদি
হন এক প্রজন্ম হতে আরেক
প্রজন্মের সূত্রিতার মাধ্যমে,
তাহলে সেটাকে নৃবিজ্ঞানীরা
বলেন মাতৃসূত্রীয়, জড়াসূত্রীয়
বংশধারা।
কিছু সমাজে দেখা যায় যে, দুটি
একরৈখিক বংশধারা নীতিই
বিদ্যমান। .... সেগুলো
নৃবিজ্ঞানীদের ভাষায়, দ্বৈত
একরৈখিক বংশধারা নীতি....
গোষ্ঠী, গোত্র, ফ্রাত্রি এবং ময়টি: গোষ্ঠী (ষরহবধমব) হচ্ছে একটি জ্ঞাতিদল যার সদস্যরা তাদের বংশীয়
সূত্রিতা পুরুষ পরম্পরা কিংবা নারী পরম্পরার মাধ্যমে নির্ধারণ করেন। গোষ্ঠী হচ্ছে পূর্বসূরী কেন্দ্রীক।
সদস্য হিসেবে তখনই কাউকে গ্রহণ করা হয় যখন তিনি নির্দিষ্ট পূর্বসূরীর সাথে তাঁর সূত্রিতা প্রমাণ
করতে পারেন। নৃবিজ্ঞানীদের বক্তব্য হচ্ছে, অপাশ্চাত্যের বহু সমাজে একজন ব্যক্তির রাজনৈতিক বা
আইনী অস্তিত্ব এবং মর্যাদা নির্ধারিত হয় গোষ্ঠী সদস্যপদ দ্বারা। এর বিপরীতে পাশ্চাত্য সমাজে
নাগরিকত্বের ধারণা একজন ব্যক্তির রাজনৈতিক এবং আইনী অধিকার ও মর্যাদাকে নিশ্চিত করে।
গোষ্ঠী হচ্ছে একটি যূথভিত্তিক দল (পড়ৎঢ়ড়ৎধঃব মৎড়ঁঢ়)। কোন সদস্য মারা গেলে এর অস্তিত্ব বিলুপ্ত
হয় না। গোষ্ঠী যূথভিত্তিকভাবে সম্পত্তির মালিক, এই দল উৎপাদনমূলক কাজের বিভাজন করে,
ফসল-ফসলাদির বণ্টন করে, এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্তগ্রহণ করে।
এটিকে সামাজিক সংগঠনের একটি শক্তিশালী এবং কার্যকরী ভিত্তি হিসেবে দেখেছেন নৃবিজ্ঞানীরা।
গোষ্ঠীর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বহির্বিবাহের রীতি অনুসরণ।
গোত্র (পষধহ; কিছু নৃবিজ্ঞানী ংরন পদটি ব্যবহার করেছেন) হচ্ছে দুই বা তার অধিক গোষ্ঠীর একটি
জ্ঞাতিদল। এ দলের সদস্যরা একই পূর্বসূরীর উত্তরসূরী হিসেবে নিজেদের জানেন কিন্তু যে শীর্ষস্থানীয়
উত্তরসূরীর মাধ্যমে তারা একে অপরের জ্ঞাতি, সদস্য বৃদ্ধির কারণে এবং বহুকাল অতিবাহিত হয়ে
যাওয়ার কারণে সেই সূত্রিতার ধারা তাদের জানা নেই। গোষ্ঠীর মত গোত্রও একটি বংশীয় দল কিন্তু
এটি যূথবদ্ধ নয়। বসবাসের দিক থেকে এটি একীভূত নয় যেমন কিনা গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে দেখা যায়।
অন্তত গোষ্ঠীর আকর সদস্যদের ক্ষেত্রে তো বটেই। গোষ্ঠীর মত এটিও হতে পারে পিতৃসূত্রীয় কিংবা
মাতৃসূত্রীয় কিংবা অনুষঙ্গিক । গোত্রের সদস্যরা যেহেতু ছড়ানো-ছিটানো সে কারণে ভূমিমালিক হিসেবে
গোত্রের কোন যূথবদ্ধ পরিচয় নেই। নৃবিজ্ঞানীদের মতে এই দল আচার অনুষ্ঠান পালনের জন্য
গুরুত্বপূর্ণ। গোষ্ঠীর মত গোত্রও হতে পারে বহির্বিবাহ ভিত্তিক একটি দল। গোত্র তার সদস্যদের রক্ষা
করে বিপদের মুহূর্তে। নৃবিজ্ঞানীদের আর একটি পর্যবেক্ষণ হচ্ছে যে, যেহেতু গোত্র বসবাসের একক
নয়, এটি প্রতীকের মাধ্যমে সংহতি এবং ঐক্য রক্ষা করে। যেমন ধরুন, কোন পশু-পাখি (ঈগল,
শেয়াল), প্রাকৃতিক শক্তি (চাঁদ), কিংবা অন্য কোন বস্তু।
চিত্র ১: বংশীয় দলের সাংগঠনিক স্তরবিন্যাস
সূত্র: ডরষষরধস অ. ঐধারষধহফ (১৯৯৯) ঈঁষঃঁৎধষ অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু, ৯ঃয বফরঃরড়হ, ঋষড়ৎরফধ:
ঐধৎপড়ঁৎঃ ইৎধপব ঈড়ষষবমব চঁনষরংযবৎং, পৃ: ৩০৩
গোষ্ঠী, গোত্র, ফ্রাত্রি এবং ময়টি
হচ্ছে স্তরবিন্যস্তবংশীয় দল।
ফ্রাত্রি (ঢ়যৎধঃৎু) হচ্ছে দুই বা তার অধিক গোত্রের একটি একসূত্রীয় জ্ঞাতিদল। ফ্রাত্রির সদস্যরা
জানেন যে তারা সকলে একই জ্ঞাতি দলের। কিন্তু লোকসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এবং দীর্ঘ সময়কাল পার
হয়ে যাবার কারণে তাঁরা তাঁদের পূর্বসূরীর সাথে সূত্রিতার সম্পর্ক নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন না। সম্পূর্ণ
সমাজকে যদি দুই ভাগে বিভক্ত করা হয় তাহলে দুটি ময়টি গঠিত হবে (সড়রবঃু হচ্ছে একটি ফরাসী
শব্দ, এর অর্থ হচ্ছে অর্ধেক)। ময়টির সদস্যরাও জানেন যে তাঁরা একই পূর্বসূরীর সদস্য কিন্তু সূত্রিতার
ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য তাঁদের আর জানা নেই। গোষ্ঠী এবং গোত্রের সদস্যদের পরস্পরের প্রতি
আনুগত্য, ফ্রাত্রি এবং ময়টির তুলনায় বেশি। গোষ্ঠী এবং গোত্রের মত ফ্রাত্রি এবং ময়টিও প্রায়শই
বহির্বিবাহ ভিত্তিক দল। গোষ্ঠী কিংবা গোত্রের সদস্য অনুপস্থিত থাকলে ফ্রাত্রি এবং ময়টির সদস্য
সাহায্যের হাত বাড়াতে বাধ্য। এক ময়টি আরেক ময়টিকে নির্দিষ্ট কাজে সহায়তা করতে পারে। যেমন
ধরুন, কোন ময়টির সদস্য মারা গেলে দাফন কার্যে অন্য ময়টি সাহায্য করে।
এতসব আলোচনার পর মনে হতে পারে পৃথিবীর সকল সমাজে বংশভিত্তিক দল রয়েছে। এটি কিন্তু
সঠিক নয়। অর্থাৎ পৃথিবীতে এমন অনেক সমাজ রয়েছে যেখানে বংশ বা গোষ্ঠীর কোন অস্তিত্ব নেই।
সেই সমাজের জ্ঞাতিব্যবস্থা একেবারে ভিন্ন।
নিচে কেস স্টাডির সাহায্যে বংশধারা নীতি আরো বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে।
একরৈখিক বংশধারা
পিতৃসূত্রীয় বংশধারা: পিতৃসূত্রীয় বংশধারা বলতে বোঝায় পূর্ব-পুরুষের মাধ্যমে জ্ঞাতি সম্পর্ক নিরূপণ:
বাবা, বাবার বাবা, বাবার বাবার বাবা ইত্যাদি। অন্য কথায় বললে, একটি পিতৃসূত্রীয় বংশের সকলেই
একই পূর্ব-পুরুষের বংশধর হিসেবে পরিচিত। যেসকল সমাজে পুরুষ-আধিপত্য স্বাভাবিক হিসেবে
বিবেচিত, এবং সম্পত্তি পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, সে সকল সমাজে পিতৃসূত্রিতা একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও,
যা কিনা সমাজের মূল সাংগঠনিক নীতি হিসেবে কাজ করে। অন্তত, বংশধারা তাত্তি¡কেরা বিষয়টিকে
এভাবেই দেখেছেন।
এমন কিছু বংশভিত্তিক সমাজ আফ্রিকায় আছে যেখানে কেবলমাত্র সামাজিক নয়, রাজনৈতিক সংগঠনও
বংশধারার ভিত্তিতে গঠিত। কিন্তু চীফ বা দলনেতা অনুপস্থিত। নৃবিজ্ঞানী ইভান্স-প্রিচার্ড এর নামকরণ
করলেন খন্ডিত গোষ্ঠী সংগঠন (ংবমসবহঃধৎু ষরহবধমব ড়ৎমধহরুধঃরড়হ)। এমন সমাজে, পরিস্থিতিঅনুসারে একটি গোষ্ঠী অন্য আরেকটি গোষ্ঠীর বিপরীতে সংগঠিত হতে পারে। গোষ্ঠী দুটি সমপর্যায়ের
হতে হবে; জ্ঞাতি বন্ধনের ঘনত্বের দিক দিয়ে তারা কাছের নয়, বরং দূরের। পূর্ব-পুরুষের, এবং
গোষ্ঠীরও, রাজনৈতিক পরিচয় থাকে এসকল সমাজে। এ পরিচয় একজন মানুষের গোষ্ঠী পরিচয়ের
মতনই বৃহৎ এবং ব্যাপক হতে পারে। মানুষে-মানুষে যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় তা হয় জ্ঞাতিসম্পর্কীয়
নৈকট্যের ভিত্তিতে। একটি আরবদেশীয় প্রবাদে বিষয়টা এমনভাবে ধরা পড়ে: “আমার ভাইয়ের
বিপরীতে আমি, আমার কাজিনদের বিপরীতে আমার ভাই আর আমি, বিশ্বের বিপরীতে কাজিনরা আর
আমি।”
যে সকল নৃবিজ্ঞানী বংশধারা নিয়ে গবেষণা কাজ চালিয়েছেন তাঁদের একটি প্রধান যুক্তি ছিল
বংশধারাভিত্তিক সমাজে সামাজিক সংহতি এবং আনুগত্য সংগঠিত হয়ে থাকে বংশধারার ভিত্তিতে। তার
অর্থ: যারা কিনা একই বংশের তারা একে অপরের প্রতি আনুগত্যশীল। আনুগত্য প্রকাশিত হতে পারে
সামাজিক শৃঙ্খলা মেনে চলার ক্ষেত্রে, কিংবা শত্রæপক্ষের সাথে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে। এ ধরনের
একটি ধ্রæপদী উদাহরণ মেলে হর্ন অফ আফ্রিকা’র লক্ষ লক্ষ সোমালি মেষ পালকদের ক্ষেত্রে। যদি
তাদের কাউকে হত্যা করা হয় তাহলে কোন্ গোষ্ঠী মৃত মানুষের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য এবং
পিতৃসূত্রীয় বংশধারা বলতে
বোঝায় পূর্ব-পুরুষের মাধ্যমে
জ্ঞাতি সম্পর্ক নিরূপণ: বাবা,
বাবার বাবা, বাবার বাবার বাবা
ইত্যাদি।
কাদের কাছে Ñ তা নিয়ে নিত্যদিনের রাজনৈতিক সংহতি আয়োজিত হয়ে থাকে। এ ধরনের খন্ডিত
গোষ্ঠী ব্যবস্থায় মনে রাখা দরকার, বংশধারা একটি সামাজিক-রাজনৈতিক সম্পদ। আবার, একটি
অর্থনৈতিক সম্পদও যার অর্থ এবং গুরুত্ব পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে, পরিস্থিতি অনুসারে তা তৈরি
হয়।
পিতার মাধ্যমে বংশধারা প্রবাহিত হওয়ার অর্থ এই নয় যে পিতৃসূত্রীয় ধরনের ব্যবস্থায় মায়ের পরিপূরক
দিক পুরোপুরি বাদ পড়ে যায়। বরং দেখা যায়, ক্ষেত্র-বিশেষে উল্টোটাই ঘটে থাকে। নৃবিজ্ঞানীদের
পর্যবেক্ষণ হ’ল, যেসকল সমাজে পিতৃসূত্রীয় বংশধারা কঠোর, সেখানে একজন পুরুষের সাথে তার
মাতুলালয়ের বিশেষ ধরনের রীতিবদ্ধ সম্পর্ক উপস্থিত থাকতে পারে। যেমন আড়াআড়ি কাজিন বিবাহ
(পৎড়ংং-পড়ঁংরহ সধৎৎরধমব)। অর্থাৎ ফুপাত ভাই-মামাত বোনের বিবাহ শুধুমাত্র অনুমোদিত নয়,
কাম্য। বংশধারা ব্যবস্থা বিয়ে ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত। কেননা বংশের সংজ্ঞার সাথে অজাচার
ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কঠোরভাবে সুসংহত বংশধারা দলের ক্ষেত্রে বহির্বিবাহ নীতি দেখা যায়। বংশের
ভিতরে বিবাহ নিষিদ্ধ হয়ে থাকে, বংশের বাইরে থেকে বিবাহসঙ্গী বাছাই বাঞ্ছনীয়। বিয়েকে দেখা হয়ে
থাকে মৈত্রীবন্ধন স্থাপনের একটি সুযোগ হিসেবে, বিশেষ করে শত্রæদলের সাথে মৈত্রী স্থাপন। এ ধরনের
বাক্যে বিষয়টা ধরা পড়ে: “আমরা শত্রæপক্ষের সাথে বিবাহ-বন্ধন স্থাপন করি।” কিছু পিতৃসূত্রীয় ব্যবস্থায়
বিয়ের মাধ্যমে একজন নারী তার স্বামীর বংশের সদস্য হয়ে পড়ে, অন্যান্য পিতৃসূত্রীয় ব্যবস্থায় দেখা
গেছে, বিয়ে সত্তে¡ও নারী তার নিজ পিতৃবংশের সদস্য থেকে যাচ্ছেন। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার
সমাজগুলোতে, আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানদের মাঝে, এবং লাতিন আমেরিকার সমাজগুলোতে দেখা গেছে,
বিয়ে ধারাবাহিক ভাবে ঘটে থাকে নির্দিষ্ট জ্ঞাতি-শ্রেণীর নারী-পুরুষের মাঝে (ঢ়ৎবংপৎরনবফ শরহপধঃবমড়ৎরবং)।
চিত্র ২: পিতৃসূত্রীয় বংশধারা
সূত্র: ঈধৎড়ষ জ. ঊসনবৎ/গবষারহ ঊসনবৎ (১৯৯০) ঈঁষঃঁৎধষ অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু, ওহংঃৎঁপঃড়ৎ’ং
ঊফরঃরড়হ, ৬ঃয বফরঃরড়হ, ঘবি ঔবৎংবু: চৎবহঃরপব-ঐধষষ, পৃ: ২০২।
পিতার মাধ্যমে বংশধারা
প্রবাহিত হওয়ার অর্থ এই নয় যে
পিতৃসূত্রীয় ধরনের ব্যবস্থায়
মায়ের পরিপূরক দিক পুরোপুরি
বাদ পড়ে যায়। বরং দেখা যায়,
ক্ষেত্র-বিশেষে উল্টোটাই ঘটে
থাকে।
চিত্রের ৪ এবং ৫ নম্বর ব্যক্তি যাঁরা কিনা ১ এবং ২ নম্বরের সন্তান, তাঁরা তাঁদের পিতার বংশের অধিভুক্ত (ভরাট
চিহ্ন)। পরবর্তী প্রজন্মে ৩ এবং ৪ নম্বরের সন্তান ভরাট চিহ্নিত বংশের অধিভুক্ত যেহেতু তাঁদের পূর্বসূত্রিতা
নির্ধারিত হচ্ছে তাঁদের পিতার মাধ্যমে যিনি ভরাট চিহ্নিত দলের সদস্য। তবে ৫ এবং ৬ নম্বরের সন্তানেরা এই
পিতৃবংশের সদস্য নন। যেহেতু তাঁদের বংশসূত্রিতা নির্ধারিত হচ্ছে তাঁদের পিতার মাধ্যমে এবং তিনি এ বংশের
নন। অর্থাৎ যদিও ১২ এবং ১৪-এর মা এই ভরাট চিহ্নিত পিতৃসূত্রীয় বংশের সদস্য, কিন্তু স্বামী (৬ নম্বর) এই
পিতৃসূত্রীয় বংশের সদস্য না হওয়াতে তিনি তাঁর বংশসূত্রিতা সংবহিত করতে পারেন না। তাঁদের সন্তানেরা (১২
এবং ১৪) তাঁদের পিতার বংশের সদস্য। চতুর্থ প্রজন্মে কেবল ১৫ এবং ১৬ হচ্ছেন ভরাট চিহ্নিত পিতৃসূত্রীয় দলের
সদস্য যেহেতু তাঁদের পিতা ভরাট চিহ্নিত পিতৃসূত্রীয় দলের পূর্বতন প্রজন্মের একমাত্র পুরুষ সদস্য। এই চিত্রে
তাহলে ১, ৪, ৫, ৮, ১০, ১৫ এবং ১৬ পিতৃসূত্রীয় বংশের অধিভুক্ত; অপর সকল সদস্য অন্য পিতৃসূত্রীয় বংশের
সদস্য।
নিচে নাইজেরিয়ার পিতৃসূত্রীয় টিভ জাতির একটি কেস স্টাডি উপস্থাপন করা হল।
কেস স্টাডি ১ : টিভ সমাজে পিতৃসূত্রীয় পরিব্যাপ্ত পরিবার
টিভ সমাজে উঠান পরিবেষ্টিত দল হচ্ছে গৃহী উৎপাদনের একক। নৃবিজ্ঞানীরা এই দলের নামকরণ উঠানপরিবেষ্টিত দল করেছেন কারণ এই দলের সদস্যদের ঘর-বাড়ি এবং ধানের গোলা গোল অথবা ডিম্বাকার উঠানকে
ঘিরে গড়ে উঠে। মধ্যখানের খোলা উঠান হচ্ছে টিভ পারিবারিক জীবনের কেন্দ্র। উঠান-পরিবেষ্টিত এই দলের
প্রধান হচ্ছেন সেই দলের বয়োজ্যেষ্ঠতম পুরুষ। তিনি ঝগড়া-ফ্যাসাদ মীমাংসা করেন, অলৌকিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ
করেন, এবং উৎপাদন তত্ত¡াবধান করে থাকেন।
দল প্রধানের সাধারণত একাধিক স্ত্রী থাকে। প্রতিটি স্ত্রীর আছে আলাদা আলাদা ঘর। উঠান-পরিবেষ্টিত এই
দলের সদস্যরা হচ্ছেন: প্রধানের অল্প বয়স্ক ও অবিবাহিত সন্তানকুল, এবং বিবাহিত ছেলে ও তাদের স্ত্রী ও
সন্তান। পরিব্যাপ্ত (বীঃবহফবফ) পরিবারের সদস্য আরো হতে পারেন দল প্রধানের ছোট ভাই ও তার
স্ত্রী-সন্তানেরা, ক্ষেত্র বিশেষে হয়তো তার কোন ভাতিজা। বাইরের কিছু মানুষজন যারা এই উঠান পরিবেষ্টিত দলের
সাথে থাকেন যেমন কিনা বন্ধু-বান্ধব বা একই বয়সই পুরুষ Ñ তারাও বসবাসের সময়কাল পর্যন্তএই দলের সদস্য
হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন। উপরের ছকে টিভদের উঠান পরিবেষ্টিত দলকে তুলে ধরা হয়েছে। ছকে পরিবেশন
করা হয়েছে বংশকুল এবং পরিসর Ñ দুটোই।
নৃবিজ্ঞানী পল এবং লরা বোহানান-এর মতে যদিও আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে প্রতিটি স্ত্রী এবং সন্তান মিলে পৃথক
পৃথক গৃহস্থালী গঠন করছেন, কিন্তু আসলে মূল গৃহস্থালী হচ্ছে বৃহত্তর উঠান পরিবেষ্টিত দল এবং এর সাথে যুক্ত
বহিরাগত সদস্যবৃন্দ।
চিত্র ৩: উঠান-পরিবেষ্টিত টিভ : পরিবারের মানচিত্র ও বংশকুল
টিভ সমাজে উঠান পরিবেষ্টিত দল
হচ্ছে গৃহী উৎপাদনের একক। এই
দলের প্রধান হচ্ছেন সেই দলের
বয়োজ্যেষ্ঠতম পুরুষ।
সূত্র: জড়মবৎ গ. কববংরহম (১৯৭৫) করহ এৎড়ঁঢ়ং ধহফ ঝড়পরধষ ঝঃৎঁপঃঁৎব, ঋষড়ৎরফধ: ঐধৎপড়ঁৎঃ
ইৎধপব ঔড়াধহড়ারপয ঈড়ষষবমব চঁনষরংযবৎ, পৃ: ৩৭।
মাতৃসূত্রীয় বংশধারা: মাতৃসূত্রীয় বংশধারা ব্যবস্থায় সন্তানেরা তাদের মায়ের গোষ্ঠীর অধিভুক্ত (ভরষরধঃবফ,
ভরষরধঃরড়হ) বা সদস্য। অথবা আরো স্পষ্ট করে বললে, সন্তানেরা তাদের মামার দলের অধিভুক্ত কারণ
মাতৃসূত্রীয় সমাজে ক্ষমতা এবং মর্যাদা ধারণ করেন পুরুষেরা, যদিও তা প্রবাহিত হয়, এক প্রজন্ম থেকে
আরেক প্রজন্মে, নারী বংশধরদের মাধ্যমে। মাতৃসূত্রীয় বংশ বলা হয় সেই জ্ঞাতি দলকে যারা একই
পূর্বসূরী নারীর বংশধর।
মাতৃসূত্রীয় বংশধারা কিন্তু মাতৃতন্ত্র নয় Ñ নারীবাদী নৃবিজ্ঞানীরা বারবার এ বিষয়ের উপর জোর
দিয়েছেন। তার কারণ, এই ব্যবস্থায় পুরুষদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা আছে। পুরুষের কর্তৃত্ব থাকলেও
বংশধারার সদস্যপদ কিংবা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি অথবা পদ পুরুষ ধারার মাধ্যমে নির্ধারিত নয়।
এই ব্যবস্থায় একজন পুরুষ সম্পত্তি পায় তার মায়ের ভাইয়ের কাছ থেকে, এবং তার সন্তানেরা পায় তার
স্ত্রীর ভাই হতে। হয়ত এ কারণেই কিছু নৃবিজ্ঞানী একে মাতৃতন্ত্র (অথবা মাতৃ-অধিকার) না বলে, এর
নাম দিয়েছেন “ভাই-অধিকার”। ভারতের কেরালা রাজ্যের নায়ারদের মাঝে ছিলো মাতৃসূত্রীয় ব্যবস্থা।
নায়ার ভাই এবং বোন একই গৃহে বসবাস করতেন, বোনদের স্বামীরা এই ভাই-বোন গৃহে নিয়মিত আসা
যাওয়া করতেন। এভাবেই মাতৃসূত্রীয় এই বংশধারার নতুন প্রজন্ম সৃষ্টি হ’ত। কিছু মাতৃসূত্রীয় সমাজে
ভিন্ন ধরনের প্রচলন দেখা গেছে: এ সমাজগুলোতে স্বামী এবং স্ত্রী নিয়মিত একে অপরের বাসস্থানে যেয়ে
কিছুকাল থাকেন।
চিত্র ৪: মাতৃসূত্রীয় বংশধারা
মাতৃসূত্রীয় বংশধারা ব্যবস্থায়
সন্তানেরা তাদের মায়ের গোষ্ঠীর
অধিভুক্ত (ভরষরধঃবফ,
ভরষরধঃরড়হ) বা সদস্য।
সূত্র: ঈধৎড়ষ জ. ঊসনবৎ/গবষারহ ঊসনবৎ (১৯৯০) ঈঁষঃঁৎধষ অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু, ওহংঃৎঁপঃড়ৎ’ং
ঊফরঃরড়হ, ৬ঃয বফরঃরড়হ, ঘবি ঔবৎংবু: চৎবহঃরপব-ঐধষষ, পৃ: ২০৩।
৪ এবং ৫ নম্বর ব্যক্তি, যাঁরা ১ এবং ২ নম্বরের সন্তান, তাঁরা তাঁদের মায়ের জ্ঞাতিদলের অধিভুক্ত যা ভরাট চিহ্নের
সাহায্যে বোঝানো হয়েছে। পরবর্তী প্রজন্মের, ৫ এবং ৬ নম্বরের সন্তানেরা ভরাট চিহ্নিত বংশীয় দলের অধিভুক্ত
কারণ তাঁদের পূর্বসূত্রিতা নির্ধারিত হচ্ছে তাঁদের মায়ের মাধ্যমে, যিনি কিনা অন্য দলে অধিভুক্ত। তাঁদের পিতা
যদিও ভরাট চিহ্নিত মাতৃসূত্রীয় দলের সদস্য কিন্তু তিনি তাঁর সদস্য পদ সংবহিত করতে পারেন না যেহেতু এটি
মাতৃসূত্রিতার ভিত্তিতে সংবহিত হয়। চতুর্থ প্রজন্মে কেবলমাত্র ২১ এবং ২২ ভরাট চিহ্নিত মাতৃসূত্রীয় দলের সদস্য
যেহেতু তাঁদের মা হচ্ছেন পূর্ববর্তী প্রজন্মের একমাত্র অধিভুক্ত নারী সদস্য। মোট কথা, ২, ৪, ৫, ১২, ১৪, ২১
এবং ২২ একই মাতৃসূত্রীয় দলের সদস্য। মাতৃসূত্রিতার এই চিত্র পিতৃসূত্রিতার উল্টো।
নিচে উত্তর আমেরিকার মাতৃসূত্রীয় ইরোকওয়া জনগোষ্ঠীর একটি কেস স্টাডি উপস্থাপন করা হল।
এখানে যে জ্ঞাতি ব্যবস্থা বর্ণিত হয়েছে, সেটি উত্তর আমেরিকায় ইউরোপীয় শক্তির অনুপ্রবেশ এবং দখল
প্রতিষ্ঠার ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে। উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন আদিবাসী জাতিরা দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন
সরকার-সৃষ্ট ও সরকার নিয়ন্ত্রিত সংরক্ষিত অঞ্চলে বসবাসরত।
কেস স্টাডি ২: ইরোকোওয়া মাতৃসূত্রীয় বংশধারা
উত্তর আমেরিকার (বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) উত্তরপূর্ব অঞ্চলের বাসিন্দা ইরোকোয়া মিত্রসংঘ । এই সংঘে আছে
৫টি জাতি Ñ ওনোনডাগা, মোহক্, সেনেকা, ওনাইডা, ক্যায়ুগা Ñ যাদের সংস্কৃতিতে রয়েছে মিল। ইরোকওয়া
জ্ঞাতি দলের কেন্দ্রে রয়েছে গৃহস্থালী: মাতৃসূত্রিতার ভিত্তিতে সম্পর্কিত একাধিক অণু পরিবারের বসবাসস্থল হচ্ছে
গৃহস্থালী। এই পরিব্যাপ্ত পরিবারের নারীকুল যৌথভাবে কৃষি যন্ত্রপাতি এবং উদ্যানের দেখভালের দায়িত্বে, তারা
একত্রে ভুট্টা এবং অন্যান্য মুখ্য ফসল চাষ করে থাকেন। পুরুষেরা শিকার করেন এবং মাছ ধরেন। গৃহস্থালী নিয়ন্ত্রণ
করেন বয়োজ্যেষ্ঠ নারীরা; জড়ায়ুভিত্তিক বসবাসের নীতির কারণে পুরুষেরা হচ্ছেন বহিরাগত। তাদের বংশ পরিচয়
নির্ধারিত হয় তাদের মা, এবং তার বংশ পরিচয়ের মাধ্যমে।
মাতৃসূত্রে সর্ম্পকিত এক গুচ্ছ গৃহস্থালী মিলে গঠিত হয় একটি মাতৃসূত্রীয় গোষ্ঠী। প্রায় সকল অথবা অধিকাংশ
গোষ্ঠীর রয়েছে পুরুষ দলপতি। বয়োজ্যেষ্ঠ নারীরা পুরুষ দলপতি বাছাই করেন। মাতৃসূত্রীয় কিছু গোষ্ঠী মিলে
গঠিত হয় একটি মাতৃসূত্রীয় বংশ। বংশের সদস্যদের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ। প্রতিটি [উপ]জাতি-তে থাকে ৮টি
বংশ। নির্দিষ্ট কোন একটি মাতৃসূত্রীয় গোষ্ঠী বলতে যেই বিশেষ মাতৃসূত্রীয় গৃহস্থালীগুলোকে বোঝায়, তাঁরা গ্রামের যে
কোন একটি অংশে বসবাস করেন। কোন একটি গ্রামে একাধিক মাতৃসূত্রীয় গোষ্ঠী বসবাস করে। মাতৃসূত্রীয়
বংশগুলো যূথবদ্ধ । একই মাতৃসূত্রীয় বংশের সদস্য হলে দুর্দিনে কিংবা সংঘাতের মুহূর্তে সকলে এককাট্টা হয়ে
পারস্পরিক সাহায্য প্রদানে বাধ্য।
যেমন গৃহস্থালী, তেমনি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অঙ্গনেও দেখা যায় ইরাকওয়া নারীদের সমাদর। পাঁচ
উপজাতির সম্মিলনে গঠিত ইরোকওয়া মিত্রসংঘ শাসনের দায়িত্বে রয়েছেন ৫০ জন সাচেম-এর একটি পরিষদ।
সাচেমরা হচ্ছেন পুরুষ দলপতি; শান্তি-রক্ষা এবং বহির্দলের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা তাঁদের কাজ। সাচেমের পদ
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। ইরোকোয়া মিত্রসংঘের সাচেম পরিষদের সদস্যরা নিজ-নিজ উপজাতিকে প্রতিনিধিত্ব
করেন; আবার প্রতিটি উপজাতির অভ্যন্তরে আছে ছোট সাচেম পরিষদ, এই পরিষদের সদস্যরা তাদের নিজ নিজ
মাতৃবংশকে প্রতিনিধিত্ব করেন। মাতৃসূত্রিতার ভিত্তিতে সাচেম নিযুক্ত হন। যদি কোন সাচেম মারা যান তাহলে
বংশের বয়োজ্যেষ্ঠ নারীরা মিলে নতুন সাচেম নিযুক্ত করেন। যদি নতুন সাচেম অল্পবয়স্ক হন তাহলে একজন
বয়োজ্যেষ্ঠ নারী তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সকল সাচেম পদের মান-মর্যাদা এক নয়। কিছূ সাচেম পদ
গুরুত্বপূর্ণ, যেমন ওনোনডাগা উপজাতির ৩টি সাচেম পদ।
শ্রাদ্ধ এবং মৃত্যু শোক আয়োজন নারীদের কাজ। ইরোকওয়াদের মাঝে দলপতির পদ সংরক্ষিত হয় প্রতীকী অর্থে
বেল্ট দ্বারা। এই বেল্ট বংশের বয়োজ্যেষ্ঠ নারীদের হাতে থাকে। পারিষদের সিদ্ধান্তনারীরা প্রভাবিত করতে পারেন:
ইরোকওয়া জ্ঞাতি দলের কেন্দ্রে
রয়েছে গৃহস্থালী: মাতৃসুত্রিতার
ভিত্তিতে সম্পর্কিত একাধিক অণু
পরিবারের বসবাসস্থল হচ্ছে
গৃহস্থালী।
বংশের সাচেমের সাথে সরাসরি কথাবার্তা বলে অথবা অপ্রত্যক্ষভাবে জনমত গড়ে তোলার মাধ্যমে। সিদ্ধান্তযেহেতু
ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হয় সেহেতু নারী মুরুব্বীদের অপছন্দের কোন সিদ্ধান্তপাশ করানো মুশকিল। যুদ্ধ
পরিচালনার কোন সিদ্ধান্তনারী মুরুব্বীদের অপছন্দের হলে তারা সৈনিকদের খাবার রসদ (ভুট্টা) দিতে অস্বীকৃতি
জানাতে পারতেন।
অন-একরৈখিক বংশধারা
অনুষঙ্গিক বংশধারা: অনুষঙ্গিক বংশধারা নীতি বলতে নৃবিজ্ঞানীগণ বোঝেন সেইসব গোষ্ঠী যাদের
বংশীয় পরিচয় সমানভাবে নির্ধারিত হয়ে থাকে পুরুষ এবং নারীর মাধ্যমে অথবা দুটোর সংমিশ্রনের
মাধ্যমে। একরৈখিক সূত্রিতা এবং অন-একরৈখিক সূত্রিতা Ñ এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য থাকলেও মিলও
রয়েছে এই অর্থে যে, বংশীয় পরিচয় নির্ধারিত হয়ে থাকে পূর্বসূত্রিতার মাধ্যমে। অনুষঙ্গিক নীতির
ভিত্তিতে সংগঠিত বংশীয় দল হচ্ছে সেটি যার সদস্য নির্ধারিত হতে পারে পূর্বপুরুষ অথবা পূর্বনারীর
মাধ্যমে, একাদিক্রমে পুরুষ অথবা নারী সূত্রিতার মাধ্যমে, অথবা এ দুটো সূত্রিতার বিভিন্ন ধরনের
সমন্বয়ের মাধ্যমে। অন্য কথায়, পূর্বসূরী যেমন হতে পারেন নারী কিংবা পুরুষ, আবার একই সাথে,
সেই পূর্বসূরীর সাথে সূত্রিতার সম্পর্ক একান্তভাবে নারী বা পুরুষের মাধ্যমে নয়।
নীচে আফ্রিকা মহাদেশের জাম্বিয়ার টকা জনগোষ্ঠীর কেস স্টাডি উপস্থাপিত করা হয়েছে।
কেস স্টাডি ৩ : টকা অনুষঙ্গিক বংশধারা
জাম্বিয়ার দক্ষিণে বসবাস করে টকা জনগোষ্ঠী। টকা ভাষায় বংশ হচ্ছে মুকওয়া । আর মুকওয়ার সদস্যদের ডাকা
হয় বাসিমুকওয়া। যারা সকলে একই বাসিমুকওয়ার তারা একই আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকে, তারা
সকলেই নির্দিষ্ট ভূখন্ডের যৌথ অধিকারী, কোন বাসিমুকওয়া মারা গেলে উত্তরসূরী হিসেবে তারা সকলেই সেই মৃত
ব্যক্তির সম্পত্তির অধিকারী এবং তাদেরই কে কোন্ পদের স্থলাভিষিক্ত হবে, সে ব্যাপারে মতামত প্রদান করে
থাকেন। এই অর্থে বলা যেতে পারে, মুকওয়া হচ্ছে একটি স¤প্রদায় Ñ একই মুকওয়ার সদস্য হওয়া মানে তারা
সকলেই একসাথে বসবাস করে, তারা শরীকী এবং একই স্বার্থ সংরক্ষণ করে। মুকওয়ার সদস্য হচ্ছেন সেই যে
কিনা পূর্বনারী অথবা পূর্বপুরুষ, যে কোন সূত্রে সম্পর্কযুক্ততা প্রমাণ করতে পারেন।
সারাংশ
বিংশ শতকের প্রথম দিকে চর্চিত “জ্ঞাতি এলজেব্রা” (যার নমুনা পেলেন এই ইউনিটের ৩ নম্বর পাঠে)
থেকে নৃবিজ্ঞানীরা সরে এসেছেন। সরে এসে তাঁরা জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়নকে কিভাবে ক্রিয়াবাদী
পরিকাঠামোর সাহায্যে ঢেলে সাজালেন, এবং তার ফলে কি ধরনের তত্ত¡ দাঁড় করালেন Ñ সেটাই ছিল
এ পাঠের বিষয়বস্তু। নৃবিজ্ঞানে তাত্তি¡ক মোড় ঘোরানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হচ্ছে বংশধারা
তত্ত¡। বংশধারা তত্তে¡ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে সামাজিক প্রেক্ষিতের উপর: জ্ঞাতিত্ব কোন্ সমাজে কি
ধরনের কার্য সম্পাদন করে থাকে। মনোযাগ দিয়ে ইরোকওয়া কেইস স্টাডি পড়লে বোঝা যায়
ইরোকওয়া মিত্র সংঘের ভিত্তি হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায়ের জ্ঞাতিভিত্তিক সংগঠন: গৃহস্থালী/পরিব্যপ্ত পরিবার,
বংশ, গোষ্ঠী, (উপ) জাতি, মিত্রসংঘ। প্রতিটি পর্যায়ের জ্ঞাতিভিত্তিক সংগঠনগুলো কেবলমাত্র সামাজিক
ভূমিকা পালন করে না, এগুলো একইসাথে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভূমিকাও পালন করে থাকে।
বংশধারা তাত্তি¡কদের লেখালেখি পড়ে মনে হতে পারে যে পৃথিবীর সকল সমাজে, বংশীয় দল
বিদ্যমান। বাস্তবে যে তা নয়, সেটি আগামী পাঠের বিষয়বস্তু। তাতে আলোচনা করা হবে মৈত্রীবন্ধন
তত্ত¡, যার আবির্ভাব বংশ ধারা তত্ত¡কে ¤- ান করে দেয়।
অনুষঙ্গিক বংশধারা নীতি বলতে
বোঝায় যেখানে বংশীয় পরিচয়
সমানভাবে নির্ধারিত হয়ে থাকে
পুরুষ এবং নারীর মাধ্যমে
অথবা দুটোর সংমিশ্রনের
মাধ্যমে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন -
১। নিচের কোন পরিবার পিতৃসূত্রীয় পরিবার ?
ক. টিভ সমাজ খ. ইরোকোওয়া
গ. টকা ঘ. নুয়ের
২। গড়রবঃু শব্দটি কোন ভাষা থেকে এসেছে?
ক. ইংরেজি খ. গ্রীক
গ. ল্যাটিন ঘ. ফরাসী
৩। দুই বা তার অধিক গোত্রের একটি একসূত্রীয় জ্ঞাতিদল হচ্ছে -
ক. গোষ্ঠী খ. গোষ্ঠী
গ. ফ্রাত্রি ঘ. ময়টি
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। বংশধারা কী?
২। উত্তরাধিকার এবং পারম্পর্য বলতে কী বোঝায়?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। বংশধারার মূলনীতি আলোচনা করুন।
২। কেস স্টাডির সাহায্যে পিতৃসূত্রীয় অথবা মাতৃসূত্রীয় বংশধারা আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]