কারণ, আমরা ছোটবেলা থেকে পাঠ্য পুস্তকে প্রায় যে কোন জিনিসের বিভিন্ন “ধরন” কি তাই শিখে
থাকি: প্রাণীর ধরন, সরকার ব্যবস্থার ধরন, অর্থনীতির ধরন ইত্যাদি। যে কোন কিছুকে Ñ তা হোক
প্রাণী কিংবা বস্তু Ñ মূলনীতির ভিত্তিতে শ্রেণীকরণ করা হচ্ছে জ্ঞান আহরণের একটি বিশেষ পদ্ধতি।
সা¤প্রতিককালের সমালোচকদের অভিমত হলো, এটি পাশ্চাত্যীয় জ্ঞান তত্তে¡র মূলনীতি। সে প্রসঙ্গ
থাক। এই ধারা জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়নে প্রভাবশালী ছিল, প্রায় একশ’ বছর। এই ধারায় পরিবারকে কিভাবে
শ্রেণীকরণ করা হয়েছে তার সাথে আপনার পরিচয় ঘটানো হবে এই পাঠে। পরিবারকে শ্রেণীকরণের
মূলনীতি একটি ছিল না। কোন্ কোন্ জ্ঞাতি সম্পর্কের ভিত্তিতে পরিবার গঠিত এই মূলনীতি এক
ধরনের শ্রেণীকরণের জন্ম দিয়েছে: বর্ধিত, একক, যুক্ত। আবাসস্থান এবং বংশসূত্রিতা, এবং এর নানান
ধরনের বিন্যাস বিভিন্ন ধরনের শ্রেণীকরণের সূত্রপাত ঘটিয়েছে। আবাসস্থান এবং বংশসূত্রিতার ভিত্তিতে
সৃষ্ট শ্রেণীকরণ এই পাঠে বিস্তারিত ভাবে আলোচিত হবে না। কেবলমাত্র বিভিন্ন নৃবিজ্ঞানীর তৈরি করা
সংজ্ঞাগুলো তুলে ধরা হবে। এই ধারার কাজের প্রধান সমালোচনা হচ্ছে এটি অনৈতিহাসিক। এই
ধারার কাজ কেবলমাত্র কিছু বর্গ তৈরি করে যা থেকে মনে হয় পৃথিবীতে বিশেষ ধরনের পরিবার রয়েছে
এবং এগুলি চিরন্তন। বর্গের ভিত্তিতে তৈরি করা শ্রেণীকরণ পরিবর্তনকে এবং বিবিধতাকে বুঝতে সাহায্য
করে না। সমালোচকদের মতে, এ ধারার নৃবিজ্ঞানীরা বিবিধতার সম্মুখীন হয়ে আরেকটি শ্রেণীকরণের
জন্ম দিয়েছেন মাত্র; প্রধান সমস্যা, যথা Ñ বর্গ, সামাজিক জীবন এবং বিবিধতা কিংবা কি প্রক্রিয়ায় এর
পরিবর্তন ঘটে, এ প্রসঙ্গটিকে এড়িয়ে গেছেন। এই পাঠের দ্বিতীয় অংশে ভিন্ন ধারার কাজ উপস্থাপিত
হবে। একটি কেস স্টাডি রয়েছে, যেখানে, আলোকপাত করা হবে কিভাবে মজুরি-নির্ভরতা
উপনিবেশকালীন বাংলায় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পৃথকীকরণের সূত্রপাত ঘটায়।
বর্ধিত, একক, একান্নবর্তী
পরিবারের ধরনের একটি শ্রেণীকরণ হচ্ছে: বর্ধিত, একক এবং একান্নবর্তী। এই বিশেষ শ্রেণীকরণ
অপরাপর শ্রেণীকরণ যেমন বিবাহ-পরবর্তী বিবাহিত দম্পতির অবস্থানের শ্রেণীকরণের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
বর্ধিত পরিবার (বীঃবহফবফ ভধসরষু): নৃবিজ্ঞানীরা বর্ধিত পরিবার সম্বন্ধে নানাবিধ সংজ্ঞা তৈরি
করেছেন। এই সংজ্ঞাগুলো পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায়, বর্ধিত পরিবারের সংজ্ঞায়নে তারা গুরুত্ব
দিয়েছেন দুটো বিষয়ের উপর: কেউ কেউ এর বৈশিষ্ট্য হিসেবে গুরুত্বারোপ করেছেন “নিকট
আত্মীয়ের” উপস্থিতির উপর। তাঁদের সংজ্ঞা অনুসারে, বর্ধিত হচ্ছে সেই পরিবার যেখানে একত্রে
বসবাস করছেন একটি বিবাহিত দম্পতি, তাদের সন্তানাদি এবং নিকট আত্মীয়। অপর কিছু নৃবিজ্ঞানী
বর্ধিত পরিবারের সংজ্ঞায়নে গুরুত্ব দিয়েছেন, “প্রজন্ম”-এর উপর। তাঁদের মতে বর্ধিত পরিবার হচ্ছে
সেটি যেখানে বিবাহিত দম্পতি, তাদের বিবাহিত এবং অবিবাহিত সন্তান, আর নাতি-নাতনী একত্রে
যে কোন কিছুকে Ñ তা হোক
প্রাণী কিংবা বস্তু Ñ মূলনীতির
ভিত্তিতে শ্রেণীকরণ করা হচ্ছে
জ্ঞান আহরণের একটি বিশেষ
পদ্ধতি। অনেকে বলবেন, এটি
পাশ্চাত্যীয় জ্ঞান তত্তে¡র
মূলনীতি। সে প্রসঙ্গ থাক। এই
ধারা জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়নে
প্রভাবশালী ছিল।
বর্ধিত হচ্ছে সেই পরিবার
যেখানে একত্রে বসবাস করছেন
একটি বিবাহিত দম্পতি,
তাদের সন্তানাদি এবং নিকট
বসবাস করেন। অর্থাৎ, তিন অথবা তারও অধিক প্রজন্মের একত্রে বসবাস হচ্ছে বর্ধিত পরিবার।
সাধারণত, পাশ্চাত্যে প্রকাশিত ইংরেজী ভাষায় লেখা নৃবিজ্ঞানের পাঠ্যবইতে বর্ধিত এবং একক পরিবার
Ñ এই দুই ধরনের পরিবারের তুলনা হাজির করা হয়।
একক পরিবার (হঁপষবধৎ ভধসরষু) : পাশ্চাত্য দেশের সমাজগুলোতে একক পরিবার অর্থাৎ, স্বামী, স্ত্রী
এবং তাদের অবিবাহিত সন্তানের একত্রে বসবাস, “আদর্শ” এবং “বাস্তব” দুটোই। একক পরিবার হচ্ছে
সবচাইতে ‘স্বাভাবিক’ Ñ এই ধারণা সে সব দেশগুলোতে শক্তপোক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং শুধুমাত্র
সামাজিক ধ্যান-ধারণা নয়, এই ধরনের পরিবার রাষ্ট্রীয় নীতি দ্বারাও সংরক্ষিত। নৃবিজ্ঞানের সাধারণ
পাঠ্যবইতে বিষয়টিকে এভাবে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে যে, একক ও বর্ধিত, এ দুই ধরনের
পরিবারের কিছু সুবিধা এবং কিছু অসুবিধা, দুই-ই আছে। তুলনা হাজির করা হয় এভাবে: বর্ধিত
পরিবারে রয়েছে অর্থনৈতিক সুবিধা (সকলে সংসারের খরচপাতির ভাগীদার), নিরাপত্তা (অসুস্থতা বা
মৃত্যুর কারণে পরিবারের মানুষজন একা হয়ে পড়ে না) এবং সমষ্টিবদ্ধতা (সকলে মিলে মিশে থাকে)।
আরও লেখা হয়ে থাকে, সদস্য সংখ্যা বেশি হবার কারণে এবং বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ পরিবারের
সদস্য হবার কারণে, বর্ধিত পরিবার আরও বেশি নমনীয়। বেশি কাজের চাপ থাকলে পরিবারের
সদস্যরা তা ভাগাভাগি করে নেন। উৎপাদিত ফসলাদি সবাই মিলে ভোগ করেন। বর্ধিত পরিবারের
অসুবিধার তালিকায় সাধারণত উল্লেখিত হয় এসব বিষয়: ব্যক্তিক উদ্যমের অভাব, বয়োজ্যেষ্ঠ এবং
বয়োকনিষ্ঠদের মাঝে টানাপোড়েন, পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠদের আধিপত্য অর্থাৎ নেতৃত্ব প্রদানের ব্যক্তিগত
গুণাবলী থাকুক বা না থাকুক বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটিই পরিবারের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন, প্রাইভেসির অভাব।
একান্নবর্তী পরিবার (লড়রহঃ ভধসরষু): পাশ্চাত্যের একক পরিবার হতে খুবই ভিন্নভাবে গঠিত একান্নবর্তী
পরিবার যা পৃথিবীর বহু অঞ্চলে বিস্তৃত। হিন্দু সমাজে, পরিবার মাত্রই একান্নবর্তী বা যৌথ। যৌথপনা
রাষ্ট্রীয় আইন এবং প্রথা দ্বারা সমর্থিত। জন্মসূত্র মতে সকল পুরুষের পারিবারিক সম্পত্তিতে আছে সমান
অধিকার। পরিবারের সকল নারীর Ñ জন্মসূত্রে কিংবা বিয়ের সূত্রে Ñ আছে পরিবার দ্বারা ভরণপোষণের
অধিকার। আইনত, পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ (পিতা অথবা বড় ভাই) পারিবারিক সম্পত্তির
তত্ত¡াবধায়ক মাত্র, অন্যান্য পুরুষ অংশীদারদের সম্মতি ছাড়া তিনি পারিবারিক সম্পত্তি বিক্রি বা
বিভাজিত করতে পারেন না। বিবাহিত পুত্র, স্ত্রী এবং সন্তানসহ বসবাস করে বাবা-মার সংসারে, এক
অন্ন গ্রহণের মধ্য দিয়ে যৌথপনা প্রকাশিত হয়। কন্যাদের বিয়ের খরচ মেটানো হয় যৌথ সম্পত্তি হতে।
যদিও যৌথ সম্পত্তির যে কোন অংশীদার চাইলে তার হিস্যা আলাদা করে নিতে পারেন, এবং তা
আইনীভাবে স্বীকৃত, সচরাচর তা ঘটেনা। অন্তত বাবার জীবদ্দশায় তো নয়ই। বরং, ভারতের
গ্রামাঞ্চলে বহুক্ষেত্রে এমন যৌথ পরিবার পাওয়া যায় যেখানে কয়েক পুরুষ ধরে সম্পত্তি একীভূত। যদি
বিভাজন ঘটে, হয়তো কোন প্রয়োজনে বা ঝগড়া-ফ্যাসাদের কারণে, বৃহত্তর যৌথ পরিবার ভেঙ্গে তার
স্থলে গঠিত হয় আরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যৌথ পরিবার। এই ছোট যৌথ পরিবারগুলো আবার ধীরে ধীরে বড়
যৌথ পরিবারে পরিণত হয়। যৌথ পরিবারের এই বর্ণনা নৃবিজ্ঞানী লিওনহার্ট লিখেছিলেন ১৯৬৪ সালে।
তিনি আরও লিখেছিলেন, পাশ্চাত্য সমাজে পরিবার অ-বৃদ্ধিযোগ্য কিন্তু ভারতে তা নয়।
আফ্রিকার বহুস্ত্রী গৃহস্থালীর ক্ষেত্রে ভিন্ন ধরনের যৌথপনা লক্ষণীয়। সেখানে প্রতিটি স্ত্রীর নিজস্ব ঘর থাকে
যেখানে তিনি তার সন্তানসহ বসবাস করেন। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, এ ধরনের পরিবারে বাবার মাধ্যমে
পরিবারের সকলে একীভূত হন, আর মার মাধ্যমে হন বিভাজিত। তবে, পারিবারিক এবং দৈনন্দিন বহু
কাজ স্ত্রীরা একত্রে করেন। আফ্রিকার যে সকল অঞ্চলে বহুস্ত্রী প্রথার প্রচলন রয়েছে সেসব এলাকায় দেখা
গেছে যে, সকল পুরুষ বহু বিবাহ করেন না, এই প্রথা কেবলমাত্র বিত্তবান এবং ক্ষমতাশালী পুরুষদের
জন্য রক্ষিত। নৃবৈজ্ঞানিক সাহিত্যে বহুস্ত্রী গ্রহণের ব্যাখ্যা এভাবে দেয়া হয়েছে: বহুস্ত্রী গ্রহণের ফলে
একজন বিত্তবান এবং ক্ষমতাশালী পুরুষের ক্ষমতা বিকশিত হয় যেহেতু বিয়ের মাধ্যমে তিনি অপরাপর
গোষ্ঠীর সাথে মৈত্রী স্থাপন করেন; বহুস্ত্রী থাকার ফলে তিনি বহু সন্তানের জনক হন যাদের শ্রম ক্ষমতার
একক পরিবার হচ্ছে সবচাইতে
‘স্বাভাবিক’ Ñ এই ধারণা সে সব
দেশগুলোতে শক্তপোক্তভাবে
প্রতিষ্ঠিত এবং শুধুমাত্র
সামাজিক ধ্যান-ধারণা নয়, এই
ধরনের পরিবার রাষ্ট্রীয় নীতি
দ্বারাও সংরক্ষিত।
পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ
(পিতা অথবা বড় ভাই)
পারিবারিক সম্পত্তির
তত্ত¡াবধায়ক মাত্র, অন্যান্য
পুরুষ অংশীদারদের সম্মতি
ছাড়া তিনি পারিবারিক সম্পত্তি
বিক্রি বা বিভাজিত করতে
পারেন না।
অধিকারী তিনি; সন্তানদের বিয়ে দেয়ার মাধ্যমে তার আত্মীয় গোষ্ঠী বৃদ্ধি পায়, এর ফলে তার ক্ষমতার
জাল সমাজে আরও বিস্তৃত হয়। নৃবিজ্ঞানীরা আরেকটি কারণ উল্লেখ করেছেন, আফ্রিকান সমাজে দেখা
যায় যে, মা যতদিন সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান, ততদিন (অনেক ক্ষেত্রে, প্রায় দুই বছর) স্ত্রীর সাথে
সহবাসের নিষেধাজ্ঞা পালন করা হয়। বহু বিবাহ প্রথা সহবাসের নিষেধাজ্ঞার চাপ লাঘবে সাহায্য করে।
যৌথপনা মাতৃসূত্রীয় সম্পর্কের ভিত্তিতেও সংগঠিত হতে পারে। মেলানেশিয়ার দবু-দের ক্ষেত্রে তাই।
বিবাহের আগ পর্যন্তভাই-বোন একই বাড়িতে বসবাস করেন কিন্তু বিয়ে হয়ে যাবার পর, পুরুষটি তার
বোনের বাড়িতে আর কখনও যান না। এ কারণেই মাতৃসূত্রীয় দল সুসু’র কোন বাসস্থানিক ভিত্তি নেই।
একটি বিবাহিত নারী ও পুরুষের সন্তানেরা তাদের পিতার ক্ষেতের ধান খেতে পারে না; মাছ ধরার
যন্ত্রপাতি এমনকি নৌকাগুলোও শুধুমাত্র সুসু’র সদস্যরা ব্যবহার করতে পারেন, এগুলো উত্তরাধিকার
সূত্রে প্রাপ্ত ও প্রবাহিত। সুসু’র আছে অর্থনৈতিক ভিত্তি, যা বিয়ে সূত্রে গঠিত পরিবারের নেই। নিজ
সুসুর সদস্য বাদে দবুবাসীরা অপর দবুবাসীদের সন্দেহ করেন, শত্রæভাবাপন্ন মনে করেন। স্বামী ও স্ত্রী
ভিন্ন ভিন্ন সুসুর হওয়ার কারণে বিয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ততাদের মধ্যে সম্পর্ক হয় শত্রæভাবাপন্ন।
একে অপরকে সন্দেহ করে, ভাবে অন্যজন যে কোন মুহূর্তে যাদুটোনার সাহায্যে তার ক্ষতি করতে
পারে, তার মৃত্যু ঘটাতে পারে। কেউ মারা গেলে তার লাশ এবং মাথার খুলি তার সুসুর কাছেই
হস্তান্তরিত হয়ে থাকে। ব্যক্তির নাম নির্ধারণ করে তার সুসু, তার সামাজিক মর্যাদাও সুসু অনুসারে
নির্ধারিত হয়। স্বামী কিংবা স্ত্রী কিংবা বাবা-মা মারা গেলে মৃত ব্যক্তির গ্রামে কেবলমাত্র সুসুর সদস্য
ঢুকতে পারে।
বর্ধিত বা একান্ন পরিবার ভিত্তিক সমাজগুলোতে, বিয়ে ব্যক্তির জীবনে আমূল রদবদল ঘটায় না, যা
কিনা পাশ্চাত্য সমাজের বৈশিষ্ট্য। সেখানে বিয়ের পর নববিবাহিত দম্পতি সাধারণত নতুন গৃহে প্রবেশ
করেন, একটি আলাদা সংসার গড়ে তোলেন। বর্ধিত এবং একান্নবর্তী পরিবারের ক্ষেত্রে যা সাধারণত
দেখা যায় তার বর্ণনা নৃবিজ্ঞানী মার্গারেট মীড সামোয়া সমাজ থেকে এভাবে দিয়েছেন:
“[সামোয়া সমাজে] বিয়ের মানে কিন্তু নতুন অথবা আলাদা সংসার গড়ে তোলা নয়। পরিবর্তন ঘটে থাকে
স্বামী অথবা স্ত্রীর বাসস্থান বদলের ক্ষেত্রে, এবং দুই পরিবারের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কে। নববিবাহিত
দম্পতি বসবাস করেন প্রধান ঘরেই, তাদের দেয়া হয় শুধুমাত্র একটি বাঁশের বালিশ, একটি মশারি, এবং
বিছানা পাতার জন্য কিছু মাদুর....নতুন বউ বাড়ির আর সকল নারীর সাথে একত্রে কাজ করেন, সকল
পুরুষেরই খেদমত করেন। স্বামীও সংসারের অন্য সকল পুরুষের সাথে একত্রে কাজ করেন। বিয়ের সম্পর্ক
নব্য-বিবাহিত নারী ও পুরুষের সম্পর্কে, পারস্পরিক দেয়া-নেয়ার মাধ্যমে নতুন কোন একক তৈরি করে
না।”৭
মীড লিখেছেন, সংসারের সিদ্ধান্তগ্রহণের ব্যাপারে সামোয়ান নব দম্পতির তেমন কোন বিশেষ ভূমিকা
থাকে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, সংসার চালানোর দায়িত্ব ন্যস্তথাকে বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষের উপর। স্বামী-স্ত্রীর
এই নতুন পরিবার আলাদাভাবে সম্পত্তি সংগ্রহ করে নিজ গৃহ স্থাপন করে না, তারা বৃহত্তর এককের
অংশ।
নিচে ছক আকারে আবাসস্থ্ল অনুসারে সৃষ্ট করা পরিবারের শ্রেণীকরণ দেয়া হ’ল। লিওনহার্ড এডাম,
মিশচা টিটিয়েভ এবং জর্জ মার্ডক হচ্ছেন নৃবিজ্ঞানী।
৭ ঈ. খবার-ঝঃৎধঁংং, ঞযব ঊষবসবহঃধৎু ঝঃৎঁপঃঁৎবং ড়ভ করহংযরঢ় (২হফ বফহ), খড়হফড়হ: ঊুৎব ধহফ
ঝঢ়ড়ঃঃরংড়িড়ফব, ১৯৬৯, ঢ়. ১২৬ এ উদ্ধৃত।
আবাসস্থান অনুসারে পরিবারের ধরন ও সংজ্ঞা৮
পিতৃ আবাসস্থান (ঢ়ধঃৎরষড়পধষ) বিবাহিত দম্পতি স্বামীর বাবা-মার সাথে, অথবা
তাদের নিকটে, সংসার পাতেন
মাতৃ আবাসস্থান (সধঃৎরষড়পধষ) বিবাহিত দম্পতি স্ত্রীর বাবা-মার সাথে, অথবা
তাদের নিকটে, বসতি স্থাপন করেন
লিওনহার্ড এডাম
পতœীপক্ষীয় আবাসস্থান (ীঁড়ৎরষড়পধষ) বিবাহিত দম্পতি পতœীর পূর্ব-প্রতিষ্ঠিত সংসারে
বসবাস স্থাপন করেন
পতিপক্ষীয় আবাসস্থান (ারৎরষড়পধষ) বিবাহিত দম্পতি পতির পূর্ব-প্রতিষ্ঠিত সংসারে
বসবাস স্থাপন করেন
মিশচা টিটিয়েভ
একীভূত (ঁহরষড়পধষ) স্বামী অথবা স্ত্রী তার বিবাহিত সঙ্গীর পূর্ব-প্রতিষ্ঠিত
সংসারে যোগ দেন (পূর্ব-প্রতিষ্ঠিত এই সংসার তার
বাবা-মার অথবা তাদের বাড়ির নিকটে অবস্থিত
তাদের নিজেদের সংসার হতে পারে)
একীভূত পিতৃপক্ষীয় বিবাহিত দম্পতি স্বামীর বাবা-মার সংসারে যোগ
(ঁহরষড়পধষ ঢ়ধঃৎরষড়পধষ) দেন
একীভূত মাতৃপক্ষীয় বিবাহিত দম্পতি স্ত্রীর বাবা-মার সংসারে যোগ দেন
(ঁহরষড়পধষ সধঃৎরষড়পধষ)
অবিমিশ্র পিতৃপক্ষীয় বিবাহিত দম্পতি স্বামীর পূর্ব-প্রতিষ্ঠিত সংসার যেটি
(হবধঃ ঢ়ধঃৎরষড়পধষ) তার বাবা-মার বাড়ির কাছে, সেটিতে বসবাস
আরম্ভ করেন
অবিমিশ্র মাতৃপক্ষীয় বিবাহিত দম্পতি স্ত্রীর পূর্ব-প্রতিষ্ঠিত সংসার যেটি
(হবধঃ সধঃৎরষড়পধষ) তার বাবা-মার বাড়ির কাছে, সেটিতে বসবাস
আরম্ভ করেন
জর্জ মার্ডক
৮ চধঁষ ইড়যধহহধহ, জবংরফবহপব ঈষধংংরভরপধঃরড়হ (ঈযধঢ়ঃবৎ ৬, ঞযব ঐড়ঁংবযড়ষফ) অবলম্বনে। ঝড়পরধষ
অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু, ঘবি ণড়ৎশ: ঐড়ষঃ, জরহবযধৎঃ ধহফ ডরহংঃড়হ, ১৯৬৩, ঢ়ঢ়. ৮৭-৯২.
মাতৃ আবাসস্থান (সধঃৎরষড়পধষ) স্বামী তার স্ত্রীর পরিবারের সাথে বসবাস করেন
পিতৃ আবাসস্থান (ঢ়ধঃৎরষড়পধষ) স্ত্রী তার স্বামীর পরিবারের সাথে বসবাস করেন
দ্বৈত আবাসস্থান (নরষড়পধষ) বিবাহিত দম্পতি তাদের ইচ্ছানুসারে স্ত্রী অথবা স্বামীর বাবামার সাথে বসবাস করেন
নতুন আবাসস্থান (হবড়ষড়পধষ) বিয়ের পরে দম্পতি নতুন সংসার গড়ে তোলেন
মাতুলাবাসস্থান (ধাঁহপঁষড়পধষ) বিবাহিত দম্পতি স্বামীর মায়ের ভাইয়ের সাথে বসবাস করেন
মাতৃ পিতৃস্থানীয় (সধঃৎর-ঢ়ধঃৎরষড়পধষ) এটা দুই ধরনের হতে পারে: (ক) প্রথম সন্তান জন্মানো পর্যন্ত
বিবাহিত দম্পতি স্ত্রীর বাবা-মার সাথে বসবাস করেন। সন্তান
জন্মানোর পর তারা স্বামীর বাবা-মার বাড়িতে উঠেন।
(খ) বাৎসরিক চক্র মাফিক দম্পতি কিছুকাল স্ত্রীর বাবা-মার
সাথে বসবাস করেন, তারপর কিছু সময়ের জন্য স্বামীর
বাবা-মার সাথে।
পারিবারিক সম্পর্ক হচ্ছে ইতিহাস-নির্দিষ্ট
এ পাঠের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, পরিবারের শ্রেণীকরণের যে প্রবল ধারা জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়নে
প্রায় একশ বছর ধরে প্রচলিত ছিল তা ছিল অনৈতিহাসিক। এই ধারার কাজ পড়ে মনে হয় যে,
পরিবারের বিভিন্ন ধরন প্রজন্ম হতে প্রজন্মান্তরে অনড়, অটলভাবে পুনরুৎপাদিত হতে থাকে। মনে হয়
যে, আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে বহুস্ত্রী বিবাহ, দবুদের মধ্যে মাতৃসূত্রিতা এবং সামোয়ানদের বিয়ে ব্যবস্থা যুগ
যুগ ধরে টিকে আছে, এবং থাকবে।
কিন্তু পর্যবেক্ষদের মতে, বিশ্বের সা¤প্রতিক ইতিহাসে পাশ্চাত্য সমাজ ব্যবস্থার স¤প্রসারণ অপাশ্চাত্য
সমাজগুলোতে পরিবার গঠনে মৌলিক বদল এনেছে। এই পরিবর্তন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার
একজন বয়স্ক পোমো ইন্ডিয়ানের (আদিবাসী) দৃষ্টিতে ধরা পড়েছে এভাবে:
“মানুষ কি? মানুষ কিছু না। পরিবার ছাড়া একজন মানুষের গুরুত্ব পথের ধারের কীটের চাইতেও কম, থুথু
বা মল সেটার চাইতেও নগণ্য সে.... আমাদের সমাজে একজন মানুষ যদি গুরুত্ব পেতে চায় তাহলে ওর
নিজের পরিবারের সাথে থাকতে হবে। যদি ওকে সাহায্য করার কেউ না থাকে, তাহলে তো ও প্রথম যে
ঝামেলাতে পড়বে সেটাতেই নিঃশেষ হয়ে যাবে। তার কারণ, ওর কোন আত্মীয় সাথে থাকবে না যে ওকে
শত্রট্টপক্ষের বিষ মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে। কোন মেয়ে ওকে বিেেয় করতে চাইবে না... ওতো
একজন নতুন শিশুর চাইতেও অনাথ, কেঁচোর চাইতেও দুবর্ল... কারও যদি বড় সংসার থাকে... এবং ওর
বংশের যদি সুনাম থাকে, অমুক বংশের ছেলেমেয়েরা ভাল, তাহলে তো ও বড় কিছু। প্রতিটি পরিবার চাইবে
ও তাদের মেয়ে বিয়ে করুক। শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে পরিবার তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। তোমাদের সমাজে পুলিশ
আর সেনা বাহিনী আছে তোমাকে রক্ষা করার জন্য, কোর্ট কাচারী আছে তোমাকে বিচার পাইয়ে দেওয়ার
জন্য, ডাকঘর তোমার বার্তা আনা নেওয়া করে, স্কুল তোমাকে শিক্ষা দেয়। সব কিছুরই দেখ-ভাল করা হয়।
এমনকি তুমি যদি মারা যাও, তোমার সন্তানদেরও [দেখ-ভাল করে]; কিন্তু আমাদের সমাজে, এসব কাজ
পরিবার করে......।
আমাদের জীবনে, পরিবার ছিল সব কিছু। এখন পরিবার কিছু না। আমরাও শ্বেতাঙ্গদের মত হয়ে যাচ্ছি এবং
সেটা বয়স্ক মানুষদের জন্য খারাপ। তোমাদের মত আমাদের বৃদ্ধ আবাস ছিল না। বয়োজ্যেষ্ঠরা গুরুত্বপূর্ণ
ছিল। তারা জ্ঞানী গুণী ছিলো। তোমাদের বৃদ্ধরা বোধ হয বোকা”।
(হোয়েবেল এবং উয়িভার, ১৯৭৯: ৪০৯)
বিশ্বের সা¤প্রতিক ইতিহাসে
অপাশ্চাত্য সমাজগুলোতে
পরিবার গঠনে মৌলিক বদল
এনেছে পাশ্চাত্যীয় স¤প্রসারণ।
১৯৫০-১৯৬০ এর দশকে ভিন্ন ধারার কাজ জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়নে তৈরি হয় (এ প্রসঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা ইউনিট ৪
এর শেষতম পাঠে পাবেন)। নতুন ধারায় পরিবারকে “কাঠামোর” পরিবর্তে “প্রক্রিয়া” হিসেবে, এবং সমাজের
অপরাপর প্রতিষ্ঠান এবং সম্পর্ক হতে বিচ্ছিন্নভাবে না দেখে, সামগ্রিক ব্যবস্থার সাপেক্ষে দেখার উপর গুরুত্ব
আরোপ করা হয়। এ ধরনের একটি কাজ নিচে কেস স্টাডি আকারে উপস্থাপিত হয়েছে। কলকাতা শহরে
১৯৭৯-১৯৮৫ সময়কালে বৃটিশ নৃবিজ্ঞানী হিলারী স্ট্যান্ডিং তাঁর গবেষণা করেন। তাঁর কাজ থেকে এই কেস
স্টাডিটি তৈরি করা হয়েছে। তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু হচ্ছে, নারীর কর্মসংস্থান এবং পরিবারে সেটির প্রভাব।
ইদানিং কালে, নৃবিজ্ঞান চর্চায় যে ধারা ঐতিহাসিক রূপান্তর এবং সেটিতে ঔপনিবেশিকতার ভূমিকার উপর
গুরুত্ব আরোপ করে, স্ট্যান্ডিং সেই ধারার প্রতিনিধিত্ব করেন।
স্ট্যান্ডিং বলছেন, ১৯ এবং ২০ শতকে বাংলা অঞ্চলের সমাজ এবং অর্থনীতি পুনর্গঠিত হয়। উনিশ শতকের
শেষার্ধে বাঙ্গালি মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে উঠে। ইংল্যান্ডের মধ্যবিত্ত গঠনের ভিত্তি ছিল শিল্প পুঁজি, কিন্তু
উপনিবেশিত বাংলার মধ্যবিত্ত স্বতন্ত্রভাবে গড়ে উঠেনি, গঠিত হয়েছিল ঔপনিবেশিক শক্তির স্বার্থে। সেই
শক্তির প্রয়োজনে এই অঞ্চলে একটি প্রশাসনিক এবং পেশাজীবী (শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী ইত্যাদি) শ্রেণী
গড়ে উঠে। শ্রেণী গঠনের সাথে সাথে নারী এবং পুরুষের পরিসরের পূর্বতন বিভাজন Ñ “ঘর” এবং “বাহির”
Ñ পুনর্গঠিত হয়। পরিসরের নতুন বিভাজন তৈরী হয়: “চাকরি” চিহ্নিত হয় পুরুষের ক্ষেত্র হিসেবে আর
“ঘর”, “গৃহী কাজ” নির্দেশিত হয় নারীর পরিসর হিসেবে। এই শ্রেণীর মতাদর্শে, নারীর ভূমিকা অঙ্কিত হয়
পুরুষের “সহযোগী” হিসেবে। চাকরিজীবী বাঙ্গালী পুরুষের উপযুক্ত বিবাহ সঙ্গী হতে হবে শিক্ষিত নারী।
যেহেতু এই শ্রেণীর পুঁজি হচ্ছে শিক্ষা এবং চাকরি, সে কারণে নারী শিক্ষার গুরুত্ব কেবলমাত্র “স্ত্রী”র ভূমিকা
রূপে নয়, “মা” হিসেবেও নারীর শিক্ষিত হওয়া এই শ্রেণীর কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। মজুরি ভিত্তিক অর্থনীতির
সূত্রপাত এবং প্রসার নব্য-গঠমান বাঙ্গালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে পারিবারিক টানাপোড়েন ও সংঘাত তৈরী করে।
পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে, বেতন বা পারিশ্রমিক বা মজুরি হচ্ছে যে ব্যক্তি শ্রম দেন তার ভোগের বস্তু। ব্যক্তি তাঁর
ইচ্ছানুসারে, তাঁর উপর যারা নির্ভরশীল তাদের ভরণপোষণের জন্য মজুরি বা বেতন, ব্যয় করে থাকেন।
পুঁজিবাদী এবং ব্যক্তিবাদী মতাদর্শ অনুসারে, একজন আয়কারী পুরুষের উপর নির্ভরশীল হবেন তার স্ত্রী এবং
অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান। স্ট্যান্ডিংয়ের বিশ্লেষণে, আধুনিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান যেমন, ব্যাংক, সঞ্চয়, বীমা পলিসি
মূল্যবোধের এই কাঠামোকে প্রতিষ্ঠিত করে।
কেস স্টাডি : উপনিবেশকালীন বাংলায় মজুরি-নির্ভরশীল পরিবারে সদস্যদের পৃথকীকরণ৯
ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলায় মজুরি-ভিত্তিক অর্থনীতির (ধিমবফ বপড়হড়সু) সূত্রপাত ঘটে। মজুরি-নির্ভরশীলতা
মধ্যবিত্ত গৃহস্থালীতে নতুন ধরনের সংকট ও টানাপোড়েন তৈরী করে। ব্রিটিশ-পূর্ব বাংলায়, পুরুষের ক্ষেত্র ছিল
বাহির এবং গৃহের অভ্যন্তর ছিল নারীর পরিসর। বয়স এবং জ্ঞাতিত্বের নীতিমালা অনুসারে গৃহ পরিচালনার সামগ্রিক
দায়িত্বে ছিলেন সব চাইতে বয়োজ্যেষ্ঠ বিবাহিত নারী। এই দায়িত্বের মধ্যে পড়ত যৌথ ভান্ডার পরিচালনা,
চাকরদের পারিশ্রমিক দেয়া, উপহার প্রদান, এবং কল্যাণমূলক দায়দায়িত্ব সম্পাদন। যদি কোন গৃহস্থালীতে
বয়োজ্যেষ্ঠ এবং বিবাহিত নারী না থাকে, কেবলমাত্র তখনই অল্প বয়স্ক এবং অবিবাহিত নারী গৃহ পরিচালনার
দায়িত্বে থাকেন। গৃহের অভ্যন্তরীণ পরিসরে পুরুষের শারীরিক অনুপস্থিতি একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল।
প্রাক ব্রিটিশ যুগে, গৃহস্থালীর আর্থিক সম্পদ যৌথ ভান্ডারে পুঞ্জীভূত হত। পরিবারের সদস্যরা এই ভান্ডার থেকে
তাঁদের প্রয়োজন মেটাতেন। যৌথ ভান্ডারের মূলনীতি অনুসারে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আয়ের ভিত্তিতে বিভাজন
করা হত না। কে আয় করে এবং কে আয় করে না, এটি বিভাজনের নীতি ছিল না। ভূমির মালিকানা যেমন ছিল
৯ ঐরষধৎু ঝঃধহফরহম, উবঢ়বহফবহপব ধহফ অঁঃড়হড়সু. ডড়সবহ'ং ঊসঢ়ষড়ুসবহঃ ধহফ ঃযব ঋধসরষু রহ
ঈধষপঁঃঃধ, খড়হফড়হ: জড়ঁঃষবফমব, ১৯৯১, ঢ়ঢ়. ৮৯-৯২.
শ্রেণী গঠনের সাথে সাথে নারী
এবং পুরুষের পরিসরের পূর্বতন
বিভাজন Ñ “ঘর” এবং “বাহির”
Ñ পুনর্গঠিত হয়। পরিসরের
নতুন বিভাজন তৈরী হয়:
“চাকরি” চিহ্নিত হয় পুরুষের
ক্ষেত্র হিসেবে আর “ঘর”, “গৃহী
কাজ” নির্দেশিত হয় নারীর
পরিসর হিসেবে।
যৌথ, ঠিক একই ভাবে নগদ টাকাও ছিল যৌথ মালিকানাধীন। তবে, তার অর্থ এই নয় যে এই ভান্ডারে পরিবারের
সকল সদস্যের সমান অধিকার ছিল। লিঙ্গ এবং জ্ঞাতি মর্যাদা অসম বন্টনের ভিত্তি ছিল। নারীদের ভূমিজ সম্পদে
অধিকার যেমন নিকৃষ্ট ছিল, ঠিক একই ভাবে অন্যান্য সম্পদের ক্ষেত্রেও তাদের অধিকার পুরুষদের তুলনায় ছিল
নি¤œমর্যাদার। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, আশা করা হত হিন্দু বিধবারা হবেন স্বল্পাহারী, সকল কিছুতে স্বল্পভোগী।
আয়ের পুনর্বণ্টন প্রক্রিয়ার এই অসমতাগুলো নিঃসন্দেহে কাঠামোগত ছিল। কিন্তু অসমতা ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে ছিল
না, অসমতার বৈশিষ্ট্য “চাকরিজীবী” বনাম “বেকার”, বা “উৎপাদনশীল” বনাম “অনুৎপাদনশীল” ছিল না।
মজুরির উপর গৃহের নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে মধ্যবিত্ত গৃহস্থালীতে দেখা দেয় নতুন ধরনের সংকট
এবং টানাপোড়েন। মজুরি নির্ভরশীলতার কারণে সম্পদ বণ্টনে মতাদর্শিক সংঘাতের সৃষ্টি হয়। ঔপনিবেশিক
সরকারের নথিপত্র ঘাঁটলে যৌথ পরিবারের ভাঙ্গন সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য পাওয়া যায়। ১৯১১ সনের শুমারিতে
বলা হয়েছে, যৌথ পরিবারের ভাঙ্গনের ফলে বাড়িঘরের ভাগাভাগি হচ্ছে এবং এতে উত্তর কলকাতার পরিবেশ
“অস্বাস্থ্যকর” হয়ে পড়েছে। ভাঙ্গনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হত: সম্পত্তি নিয়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ, এবং
“আয়কারী” এবং “অলস” সদস্যদের মধ্যকার টানাপোড়েন। সরকারী নথিপত্র ও সাহিত্য, উপন্যাসে টানাপোড়েনের
জন্য নারীদের দোষারোপ করা হ’ত। সরকারী শুমারীর ভাষ্যমতে, জা’দের মধ্যে দেখা দেয় “হিংসা”এবং হয়ত দেখা
যায় যে, ভাইদের মধ্যে কোন একজনের স্ত্রী কিছুতেই চান না তার দেবর-ভাসুরদের পরিবারের পেছনে তার স্বামীর
আয় ব্যয় করা হোক।
হিলারী স্ট্যান্ডিংয়ের প্রধান বক্তব্য হচ্ছে মজুরি-নির্ভরশীলতা পারিবারিক সম্পদ পুনর্বন্টনের পূর্বতন যৌথভিত্তিক
অনুশীলনকে ধীরে ধীরে কোণঠাসা করে তুলছে। এর ফলে, বর্তমানে যৌথ পরিবার দেখা গেলেও, এর ভেতরে
অন্তর্নিহিত হয়ে থাকে নির্ভরশীলতার সংকীর্ণ বা সীমিত অর্থগুলো (একজন পুরুষের আয়ের উপর তার স্ত্রী এবং
সন্তানদের হক সবচাইতে বেশী)। তাঁর বিশ্লেষণ মতে, পারিবারিক সম্পর্কের এই পরিবর্তন একটি সামাজিক এবং
ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া, এটি স্বাভাবিক কিংবা অনিবার্য নয়।
সারাংশ
প্রায় একশত বছর ধরে, জ্ঞানগত কাজ হিসেবে নৃবিজ্ঞানীদের মধ্যে পরিবারের শ্রেণীকরণ খুবই জনপ্রিয়
ছিল। বিভিন্ন মূলনীতির ভিত্তিতে নৃবিজ্ঞানীরা নানান ধরনের শ্রেণী এবং বর্গ তৈরী করেছিলেন। নতুন
নতুন মাঠ গবেষণা নতুন নতুন শ্রেণীকরণের জন্ম দিয়েছিল। ১৯৫০-১৯৬০এর দশকে পরিবার
বিশ্লেষণের প্রত্যয় এবং তাত্তি¡ক চিন্তাভাবনায় মৌলিক বদল ঘটে। শ্রেণীকরণের ধারা তীব্র সমালোচনার
সম্মুখীন হয়। সমালোচকদের দৃষ্টিতে, বর্গকরণ সামাজিক জীবনের বিবিধতাকে বুঝতে সাহায্য করে
না। এ ধরনের জ্ঞানচর্চা পারিবারিক সম্পর্কের বদলকেও বুঝতে সাহায্য করে না। এই সমালোচনার
প্রেক্ষিতে নতুন কিছু তাত্তি¡ক ধারা তৈরী হয়। এগুলির মধ্যে ভিন্নতা সত্তে¡ও, সমিলের দুটি বড় জায়গা
ছিল। নতুন তাত্তি¡কদের বক্তব্য হচ্ছে: প্রথমত, বিভিন্ন সামাজিক, ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক এবং
মতাদর্শিক প্রক্রিয়া পরিবারকে গঠন করে। এগুলি স্থান-কাল নির্দিষ্ট। দ্বিতীয়ত, পরিবার সমাজের
অপরাপর সামাজিক, ঐতিহাসিক সম্পর্ক হতে বিচ্ছিন্ন নয়। কিছু নৃবিজ্ঞানী এটিকে দ্বা›িদ্বক দৃষ্টিতে
বিবেচনা করার উপর গুরুত্ব দেন। তারা বলেন, পরিবারকে একটি স্বতন্ত্র পরিসর হিসেবে বিবেচনা না
করে, আমাদের দেখা উচিত পরিবার কিভাবে অপরাপর সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করে, আবার
কিভাবে এটি অপরাপর প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রভাবিত হয়। নৃবিজ্ঞানী হিলারী স্ট্যান্ডিংয়ের কাজ ইতিহাসনির্দিষ্ট নৃবিজ্ঞানের প্রতিনিধিত্ব করে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন -
১। বৃটিশ নৃবিজ্ঞানী হিলরী স্ট্যান্ডিং -এর মতে কোন সময়কালে বাঙ্গালি মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে উঠে?
ক. উনিশ শতকের শেষার্ধে খ. উনিশ শতকের প্রারম্ভে
গ. বিংশ শতকের শেষার্ধে ঘ. উপরে কোনটিই নয়
২। ইংল্যান্ডের মধ্যবিত্ত গঠনের ভিত্তি ছিল কি?
ক. কৃষি পুঁজি খ. শিল্প পুঁজি
গ. ক ও খ উভয়ই ঘ. উপরের কোনটিই নয়
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। ১৯৫০ এবং ১৯৬০-এর দশকে জ্ঞাতিত্ব অধ্যয়নের নতুন ধারাটি কিসের উপর গুরুত্ব আরোপ করে?
২। প্রথাগত নৃবিজ্ঞানে, পরিবার শ্রেণীকরণের মূলনীতি কি কি?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। সমালোচকদের দৃষ্টিতে, পরিবারের শ্রেণীকরণ অনৈতিহাসিক। এই পাঠে পরিবারের যে শ্রেণীকরণ
উপস্থাপিত হয়েছে, সেটি পর্যালোচনা করে যুক্তি সহকারে আলোচনা করুন।
২। মজুরি-ভিত্তিক অর্থনীতির প্রসার বাঙ্গালি পারিবারিক জীবনে টানাপোড়েনের সূত্রপাত ঘটায়।
আলোচনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত