নির্যাসকরণ কাকে বলে?
সমাজবিজ্ঞানী ট্যালকট পারসন্সকে কেন আধুনিকতাবাদী বলা হয়?


নৃবিজ্ঞানের ধ্রæপদী বিবর্তনবাদী যুগে, বিশেষ করে মর্গান এবং এঙ্গেলসের কাজে, শ্রেণী এবং লিঙ্গ প্রসঙ্গ
আলোচিত হয়েছিল। এ দুয়ের মধ্যকার সর্ম্পক গুরুত্ব পেয়েছিল। এঙ্গেলস যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলেন যে,
শ্রেণী বিভাজিত সমাজের উদ্ভবের সাথে পরিবার এবং বিয়ে ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়। ব্যক্তি মালিকানাধীন
ব্যবস্থায় পুরুষ হয়ে উঠে ক্ষমতাশালী এবং নারী হয়ে উঠে অধস্তন। এই ইউনিটের এক নম্বর পাঠে এসব
আপনারা জেনেছেন। পরবর্তী সময়ে, নৃবিজ্ঞান যখন একটি স্বতন্ত্র জ্ঞানকান্ড হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং
বেড়ে উঠে, শ্রেণীর প্রসঙ্গটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। এ সময়ে পরিবারের প্রসঙ্গটি বিভিন্ন ভাবে উত্থাপিত
হয়। এই পাঠের প্রথম অংশে আলোচিত হবে, বিংশ শতকের প্রথমার্ধে নৃবিজ্ঞানীরা কিভাবে পরিবারের
নির্যাস বা মৌলিকত্ব অনুসন্ধানের চেষ্টা চালান। নৃবিজ্ঞানের এই অনুসন্ধানে, নারী-পুরুষ সম্পর্ক
উদ্ঘাটনে, প্রাধান্য পেয়েছিল “পিতৃত্ব” এবং “মাতৃত্ব”-এর ধারণা। ব্রনিসলো ম্যালিনোস্কি এবং মেয়ার
ফোর্টসের মতন নৃবিজ্ঞানী এ ধরনের জিজ্ঞাসা দাঁড় করান: পিতা বা মাতা হওয়ার মৌলিক অর্থ কি?
অর্থাৎ, তাঁদের জিজ্ঞাসা ছিল পিতা বা মাতা হওয়ার এমন কোন নিগূঢ় অর্থ আছে কিনা যা স্থান-কালের
নির্দিষ্টতা মানে না, এক সংস্কৃতি হতে আরেক সংস্কৃতিতে, বা এক সময়কাল হতে আরেক সময়কালে
ভিন্ন হয় না। স্থান-কাল বিহীন আলোচনা করার প্রবণতাকে বলা হয় নির্যাসকরণ (বংংবহঃরধষরুরহম)।
এই প্রবণতা সর্বজনীন তত্ত¡ দাঁড় করানোর সাথে যুক্ত। সহজ ভাষায় বললে, সর্বজনীন তত্তে¡র মানে হচ্ছে
এমন একটি তত্ত¡ যা কিনা “অল-সাইজ” জামার মতন। এমন একটি জামা যা সকল সাইজের মানুষের
গায়ে লাগে। এই প্রবণতা শুধু মাত্র ম্যালিনোস্কি বা মেয়ার ফোর্টস না, বহু নৃবিজ্ঞানী, সামাজিক বিজ্ঞানী
এবং অন্যান্য তাত্তি¡ক ও চিন্তাবিদের কাজে লক্ষণীয়।
মার্কিনী সমাজবিজ্ঞানী ট্যালকট পারসন্স’এর পরিবার সম্পর্কিত তত্ত¡ ধ্রæপদী আধুনিকায়ন পজিশনকে
ব্যক্ত করে। তাঁর মতে, শিল্পভিত্তিক সমাজে জ্ঞাতিত্ব হয়ে উঠে সীমিত, সংকীর্ণ। এই তত্ত¡ বিংশ
শতকের মাঝামাঝি খুব প্রভাবশালী ছিল। এই তত্ত¡ কেবলমাত্র সমাজবিজ্ঞানীদের নয়, নৃবিজ্ঞানীদেরও
প্রভাবিত করে। তাঁর প্রধান বক্তব্যের নতুন নতুন সংস্করণ তাঁর মৃত্যুর পরে, এমন কি আজ অব্দি,
সময়ে-সময়ে পয়দা হতে থাকে। এই পাঠের দ্বিতীয় অংশে পারসন্সের পরিবার সম্পর্কিত ভাবনা চিন্তা
তুলে ধরা হবে। তৃতীয় অংশে আলোচনা করা হবে মার্কিনী নৃবিজ্ঞানী রায়না র‌্যাপের পরিবার সম্পর্কিত
তাত্তি¡ক উপলব্ধি। র‌্যাপ বলেছেন শ্রেণী ও লিঙ্গীয় সম্পর্কের আন্তঃপ্রবিষ্টতার কথা। এই আন্তঃপ্রবিষ্টতা
গঠন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবার এবং পারিবারিক সম্পর্ক। মার্কিন সমাজে পারিবারিক সর্ম্পকের
একটি কেস স্টাডি রয়েছে এই পাঠের শেষে।
পাঠ - ৪
সর্বজনীন তত্তে¡র মানে হচ্ছে
এমন একটি তত্ত¡ যা কিনা
“ ধষষ ংরুব” জামার মতন।
এমন একটি জামা যা সকল
সাইজের মানুষের গায়ে লাগে।
এই প্রবণতা শুধু মাত্র
ম্যালিনোস্কি বা মেয়ার ফোর্টস
না, বহু নৃবিজ্ঞানী, সামাজিক
বিজ্ঞানী এবং অন্যান্য তাত্তি¡ক ও
চিন্তাবিদের কাজে লক্ষণীয়।
ব্রনিসলো ম্যালিনোস্কি : সর্বজনীন পিতৃত্ব
আরো বহু নৃবিজ্ঞানীদের মতন ব্রিটিশ নৃবিজ্ঞানী ব্রনিসলো ম্যালিনোস্কিও সর্বজনীন সত্য উদঘাটনে রত
ছিলেন। এই প্রসঙ্গে তিনি “বৈধতার মূলনীতি”দাঁড় করান। ম্যালিনোস্কির বক্তব্য ছিল: বিশ্বের সকল
সমাজে সন্তান এবং তার মাতার সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সন্তানের পিতার ভূমিকা
গুরুত্বপূর্ণ। পিতাবিহীন একটি সন্তান এবং তার মা, সামাজিক দৃষ্টিতে অপূর্ণাঙ্গ এবং অবৈধ হিসেবে
বিবেচিত। সমাজের দৃষ্টিতে পূর্ণাঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হতে হলে, সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হলে,
পিতার উপস্থিতি অপরিহার্য। পিতার উপস্থিতি নিশ্চিত করে তোলে একটি সন্তান ও তার মায়ের পূর্ণাঙ্গ
আইনী মর্যাদা। ম্যালিনোস্কি গবেষণা করেছিলেন মাতৃতান্ত্রিক ট্রব্রিয়ান্ড দ্বীপবাসীদের মাঝে। গবেষণা
শেষে তিনি যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলেন যে, ট্রব্রিয়ান্ড দ্বীপবাসীদের কাছে মাতৃত্ব হচ্ছে নিতান্তএকটি
জৈবিক সম্পর্ক। অপর পক্ষে, পিতৃত্ব হচ্ছে একটি সামাজিক সম্পর্ক।
ম্যালিনোস্কির “বৈধতার মূলনীতি”র অপর নাম হচ্ছে “সামাজিক পিতৃত্ব”-এর ধারণা। নৃবিজ্ঞানে এটা
ব্যবহার করা হয়ে থাকে জৈবিক এবং সামাজিক Ñ এই দুই ধরনের পিতৃত্বের পার্থক্য বোঝানোর জন্য।
জৈবিক পিতা হচ্ছেন তিনি যিনি সন্তানের রক্ত-সম্পর্কিত পিতা। আর সামাজিক পিতা হচ্ছেন তিনি যিনি
সামাজিকভাবে সন্তানের পিতা হিসেবে পরিচিত। ম্যালিনোস্কির প্রধান যুক্তি হচ্ছে, এই দুইজন একই
ব্যক্তি হওয়ার চাইতে আরো গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটি শিশুর সামাজিকভাবে স্বীকৃত পিতা আছে কিনা।
জৈবিক পিতার চাইতে সামাজিকভাবে স্বীকৃত একজন পিতার প্রয়োজন বেশি, সকল সমাজে,
একইভাবে। তার কারণ, পিতার উপস্থিতির উপর নির্ভর করছে সমাজে সেই সন্তানটির মর্যাদা, অবস্থা,
এবং অধিকার। ম্যালিনোস্কির প্রধান বক্তব্য ছিল: সামাজিক বৈধতা পাবার জন্য প্রতিটি সন্তানের পিতা
এবং মাতা Ñ দুজনকেই প্রয়োজন।
মেয়ার ফোর্টস : মা-ও-শিশু যুগল
বৃটিশ নৃবিজ্ঞানী মেয়ার ফোর্টস মর্গানকে অনুসরণ করে বলেন, জ্ঞাতিত্বের দুটো দিক আছে: (ক) গৃহী
(ফড়সবংঃরপ) এবং (খ) আইনী-রাজনৈতিক (লঁৎড়-ঢ়ড়ষরঃরপধষ)। ফোর্টস বলেন, জ্ঞাতিত্বের ন্যূনতম একক
হচ্ছে মা ও শিশু যুগল (সড়ঃযবৎ-পযরষফ ফুধফ)। এটা সকল সমাজে সমানভাবে সত্য। মা-শিশুর যুগল
বন্ধন হচ্ছে জৈবিক। পক্ষান্তরে, পিতৃত্ব এবং অন্যান্য জ্ঞাতি সম্পর্ক আরো বেশি সামাজিক। যা জৈবিক
(অর্থাৎ, মা-শিশু যুগল) তা সকল সমাজের জন্য একইভাবে সত্য, কিন্তু যা সামাজিক (অর্থাৎ, পিতৃত্ব
এবং আর সকল জ্ঞাতি সম্পর্ক) তা ভিন্ন-ভিন্ন সংস্কৃতিতে ভিন্ন-ভিন্ন ভাবে বিন্যস্ত।
গৃহী পরিসরে আছে মা-ও-শিশু’র যুগল। তিনি এই যুগলের নাম দেন “মাতৃকেন্দ্রিক কোষ”
(সধঃৎরপবহঃৎধষ পবষষ)। ফোর্টসের কাজ হতে স্পষ্ট হয় যে, তিনি এই পর্যায়ে পৌঁছে এই ভাবনা দ্বারা
তাড়িত হন: কোন ধরনের সমাজে মা ও শিশুসন্তানের যুগলে পিতা অন্তর্ভুক্ত হন? ফোর্টস বলেন, শুধুমাত্র
সেই সমাজে যেখানে দুই ধরনের সর্ম্পক বিদ্যমান। এক হচ্ছে, দম্পতি হিসেবে স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্ক।
এবং দ্বিতীয়ত, শিশুসন্তানের মর্যাদা নির্ধারণে তার পিতার জ্ঞাতি দলের সাথে তার সম্পর্ক। যে ধরনের
সমাজে এ দুটো বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ, সে সমাজে মা ও শিশু যুগলে স্বামী-পিতা অন্তর্ভুক্ত হন। এই অন্তর্ভুক্তি
গৃহী পরিসরে সৃষ্টি করে অণু পরিবার। এই অণু পরিবার হচ্ছে সন্তান জন্মানোর কেন্দ্র। এই অণু পরিবারে
থাকে শুধুমাত্র দুই প্রজন্ম Ñ পিতা-মাতা ও সন্তান। আদর-যতেœর জন্য সন্তান তার পিতা-মাতার উপর
নির্ভরশীল। অপরপক্ষে, প্রজনন আকাক্সক্ষা পরিপূর্ণ করে তোলার জন্য পিতা-মাতা তাদের সন্তানের
উপর নির্ভরশীল। এই হ’ল গৃহী পরিসরে অণু পরিবার। আর, ফোর্টসের মতে, গৃহী দল হচ্ছে সেই দল
যেটি কিনা সদস্যদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে, তাদের বস্তুগত এবং সাংস্কৃতিক চাহিদা পূরণের
কার্য সম্পাদন করে থাকে।
ম্যালিনোস্কির বক্তব্য ছিল:
বিশ্বের সকল সমাজে সন্তান এবং
তার মাতার সামাজিক মর্যাদা
নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সন্তানের
পিতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
জৈবিক পিতা হচ্ছেন তিনি যিনি
সন্তানের রক্ত-সম্পর্কিত পিতা।
আর সামাজিক পিতা হচ্ছেন
তিনি যিনি সামাজিকভাবে
সন্তানের পিতা হিসেবে
পরিচিত।
ফোর্টসের মতে, গৃহী দল হচ্ছে
সেই দল যেটা কিনা সদস্যদের
থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে
থাকে, তাদের বস্তুগত এবং
সাংস্কৃতিক চাহিদা পূরণের কার্য
সম্পাদন করে থাকে।
ট্যালকট পারসন্স : শিল্পোন্নত সমাজের পিতৃতান্ত্রিক অণু পরিবার
মার্কিনী সমাজ বিজ্ঞানী ট্যালকট পারসন্সের বক্তব্য ছিল : অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জ্ঞাতি দলের গুরুত্ব
আন্তঃসম্পর্কিত। কোন সমাজ যখন অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ও জটিল হয়ে ওঠে, যখন সেই সমাজে নানান
ধরনের পেশা দেখা দেয়, শহরাঞ্চল ধীরে ধীরে বিস্তৃত হয়ে ওঠে, এবং গ্রামীণ এলাকা হয়ে যায় ছোট,
কলকারখানা যখন বৃদ্ধি পায়, এক কথায়, সমাজ যখন শিল্পোন্নত হয়ে ওঠে, তখন জ্ঞাতিত্বের পরিধি
সংকুচিত হয়ে যায়। বৃহত্তর জ্ঞাতি দলের পরিবর্তে দেখা যায়, পিতৃতান্ত্রিক অণু পরিবার (স্বামী, স্ত্রী ও
তাদের নিজেদের সন্তান)। এই অণু পরিবারের ভূমিকা সীমিত এবং সীমাবদ্ধ। সন্তানদের লালন-পালন
এবং বিবাহিত দম্পতির ব্যক্তিক বিকাশ Ñ অণু পরিবার শুধুমাত্র এই দুটি কার্য পালন করে থাকে।
পারসন্সের ভাষায় “আদিম” সমাজে জ্ঞাতি দল যে বিস্তৃত ও পরিব্যাপ্ত ভূমিকাদি পালন করে থাকে,
শিল্পোন্নত সমাজে তা ঘটতে দেখা যায় না। তার কারণ হ’ল, রাষ্ট্র, এবং অপরাপর প্রতিষ্ঠান (স্কুল,
কলেজ, অফিস, ব্যাংক, বীমা, কারখানা ইত্যাদি) এই ভূমিকাগুলো পালন করে। এ কারণেই, পারসন্স
বলছেন, শিল্পোন্নত সমাজে দেখা দেয়, “বিচ্ছিন্ন অণু পরিবার”।
উপরে আলোচিত তত্ত¡গুলো বহু নৃবিজ্ঞানী ও সমাজ বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করেছে। যদিও প্রত্যেক
তাত্তি¡ক নির্দিষ্ট কিছু বক্তব্য উপস্থাপিত করেছেন: পার্সন্সের “বিচ্ছিন্ন অণু পরিবার”, ম্যালিনোস্কির
“বৈধতার মূলনীতি”, মেয়ার ফোর্টসের “মা-ও-শিশু যুগল” Ñ তবুও তাঁদের বিশ্লেষণরীতির কিছু মিলের
জায়গা আছে। প্রথমত, তাঁরা (এবং আরো অনেকে) ধরে নেন, জ্ঞাতিত্বের পরিধি এবং গুরুত্ব
শিল্পোন্নত/পাশ্চাত্য সমাজে অণু পরিবারে সীমিত হয়ে যায়। এই ধারণা শুধু ট্যালকট পারসন্সের নয়।
বহু নৃবিজ্ঞানী এবং সমাজবিজ্ঞানী বহু কাল ধরে নিয়েছিলেন যে, আদিম/অনুন্নত সমাজে আছে বিস্তৃত
জ্ঞাতি ব্যবস্থা, আর শিল্পোন্নত/পাশ্চাত্য সমাজে আছে শুধু অণু পরিবার। এই ধারণা খুবই শক্তিশালী।
এবং এখনও, বহু মহলে বর্তমান। দ্বিতীয়ত, আপনারা দেখেছেন কিভাবে ম্যালিনোস্কি এবং মেয়ার
ফোর্টস পিতৃত্ব এবং মাতৃত্বের সর্বজনীন ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন। হাল আমলের তাত্তি¡কদের সমালোচনা
হচ্ছে, এ ধারণাগুলো পাশ্চাত্য সমাজ নির্ভর। তাঁদের বক্তব্য: পাশ্চাত্য নৃবিজ্ঞানীরা নিজ সমাজের
স্বাভাবিকত্বের ধারণার ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী তত্ত¡ দাঁড় করিয়েছেন। বিষয়টা এজন্য আরো বেশি আশ্চর্যের
কারণ এ দুইজন, এবং তাঁদের অনুসারী আরো বহু নৃবিজ্ঞানী, এমন সমাজে কাজ করেছেন যেখানে
তাঁরা যা লিখেছেন তার ঠিক উল্টোটাই বিদ্যমান। যেমন ধরুন, মিয়ানমারের লাখের জনগোষ্ঠী।
তাদের ধারণা হচ্ছে, সন্তান সৃষ্টিতে বাবার ভূমিকা মুখ্য। মা হচ্ছেন পাত্র শুধু, পুরুষ এই পাত্রে সন্তান
রাখেন। স্পষ্টতই, মেয়ার ফোর্টসের “মা-ও-শিশু” যুগল তত্ত¡ এই সমাজের জন্য অর্থবহ নয়। মাতৃত্ব
এবং পিতৃত্বের ধারণা বাদেও, এই দুই নৃবিজ্ঞানী যেভাবে নারীকে গৃহী পরিসর এবং পুরুষকে আইনীরাজনৈতিক পরিসরের সাথে যুক্ত করেছেন, তাও কঠোর সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। তৃতীয়ত,
শ্রেণী, লিঙ্গ এবং অপরাপর বৈষম্যের সম্পর্ক, এদের কাজে অনুপস্থিত। তাঁদের গবেষণা পড়ে মনে হয়,
সমাজে দ্ব›দ্ব-সংঘাত, অথবা স্বার্থ, প্রতিরোধ, আন্দোলন, এগুলো কোথাও, কখনও ঘটে না, সামাজিক
সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে এসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ নয়।
রায়না র‌্যাপ: শ্রেণী ও লিঙ্গীয় সম্পর্কের অন্তর্প্রবিষ্টতা
সামাজিক বৈষম্য এবং জ্ঞাতি ব্যবস্থা Ñ এ দুটো বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। এগুলো আন্তঃসম্পর্কিত। বিংশ
শতকের শেষ ভাগ হতে, এই তাত্তি¡ক উপলব্ধি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন সে
ধারার নৃবিজ্ঞানী যাঁরা সমাজতান্ত্রিক নারীবাদী হিসেবে পরিচিত। এই ধারার প্রতিনিধিত্ব করেন মার্কিন
নৃবিজ্ঞানী রায়না র‌্যাপ। তাঁর প্রধান বক্তব্য হ’ল: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ ব্যবস্থা শ্রেণী-বিভক্ত; শ্রেণীসত্তা লিঙ্গায়িত অর্থাৎ, মানুষের সত্তা, পরিচিতি এগুলো লিঙ্গ-নিরপেক্ষ নয়।
র‌্যাপ বলেন, শ্রেণী কোন বস্তু নয়। এটি একটি প্রক্রিয়া, এটি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া। এই ঐতিহাসিক
প্রক্রিয়া উৎপাদনের উপায়ের সাথে মানুষজনের সম্পর্ক, এবং মানুষে-মানুষে সম্পর্ক, নির্ধারণ করে।
ব্যক্তির অবস্থার বদল ঘটতে পারে: তার কপাল যেমন খুলতে পারে, তার কপাল পুড়তেও পারে।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ব্যক্তি কিংবা তার পরিবারের অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে। কিন্তু, যা পরিবর্তিত হয়
মার্কিনী সমাজ বিজ্ঞানী ট্যালকট
পারসন্সে বক্তব্য ছিল ... সমাজ
যখন শিল্পোন্নত হয়ে ওঠে,
তখন জ্ঞাতিত্বের পরিধি
সংকুচিত হয়ে যায়।
র‌্যাপ বলেন যে পরিবার বলতে
মার্কিন সমাজের মানুষজন দুটো
জিনিস বোঝেন: সংকীর্ণ অর্থে
পরিবার হচ্ছে স্বামী, স্ত্রী এবং
তাদের নিজেদের সন্তান দ্বারা
গঠিত একক। ব্যাপক অর্থে,
পরিবার হচ্ছে রক্ত-সম্পর্কিত
জ্ঞাতি।
বহু নৃবিজ্ঞানী এবং সমাজ
বিজ্ঞানী বহু কাল ধরে
নিয়েছিলেন যে, আদিম/অনুন্নত
সমাজে আছে বিস্তৃত জ্ঞাতি
ব্যবস্থা, আর শিল্পোন্নত/পাশ্চাত্য
সমাজে আছে শুধু অণু পরিবার।
না তা হচ্ছে সামগ্রিক বৈষম্যের সম্পর্ক (মালিক-শ্রমিকের সম্পর্ক, ধনী-গরিবের সম্পর্ক)। বৈষম্যের এই
ব্যবস্থা অতি গভীর এবং কাঠামোগত।
পরিবারের অর্থ সর্বজনীন নয়, এটি সমাজ এবং ইতিহাস-নির্দিষ্ট। এই প্রেক্ষিতে র‌্যাপ বলেন যে পরিবার
বলতে মার্কিন সমাজের মানুষজন দুটো জিনিস বোঝেন: সংকীর্ণ অর্থে পরিবার হচ্ছে স্বামী, স্ত্রী এবং
তাদের নিজেদের সন্তান দ্বারা গঠিত একক। ব্যাপক অর্থে, পরিবার হচ্ছে রক্ত-সম্পর্কিত জ্ঞাতি। আর,
গৃহস্থালী কি? র‌্যাপ বলেন, মার্কিন সমাজে, গৃহস্থালী হচ্ছে বসবাসের একক (একই ছাদের নিচে থাকা,
একসাথে খাওয়া)। গৃহস্থালী হচ্ছে সেই স্থান যেখানে এর সদস্যরা তাদের সম্পদ (আয়, আসবাবপত্র,
মূল্যবান জিনিসপত্র ইত্যাদি) একত্রীভূত করেন এবং কিছু কার্য সম্পাদন করেন। মানুষজন এবং সম্পদ
গৃহস্থালীতে বণ্টিত হয়, যুক্ত হয় (“হ্যাঁ, একজন ভাড়াটিয়া আছে। কিন্তু ও আলাদা খায়”, “ছেলে আর
মেয়ে, ওরা? ওরা তো বড় হবার সাথে-সাথে আলাদা হয়ে গেল। যে যার মত থাকে। আমাদের সংসারে
থাকি আমি, আমার স্বামী আর ছোট ছেলেটি”)।
র‌্যাপ আরো বলেন, পরিবার হচ্ছে মতাদর্শ। মতাদর্শ বলতে বোঝায়, ধ্যান-ধারণা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ
যা নির্দিষ্ট সামাজিক দল (উদাহরণস্বরূপ, জাতি, লিঙ্গ) কিংবা শ্রেণীর বৈশিষ্ট্য। মতাদর্শ আধিপত্যশীল
শ্রেণীর স্বার্থ, জীবনযাপনকে বৈধতা দান করে। অর্থাৎ, মতাদর্শ ক্ষমতা ব্যবস্থার সাথে ওতপ্রোতভাবে
জড়িত। র‌্যাপ পরিবারকে মতাদর্শ বলছেন কেন? তার কারণ, পরিবারের ধারণা একইসাথে বস্তুগত
সম্পর্ককে প্রকাশ করে (“ও চাকরি করলে বাচ্চাদের পড়াশোনার ক্ষতি হবে, আমি মানা করে
দিয়েছি”)। আবার এই সম্পর্কগুলোকে আড়াল করে (“আরে ভাই বুঝলেন, আমার স্ত্রী হচ্ছে হোমমিনিস্টার। ওর কথামত আমার চলতে হয়”)।
শ্রমিক শ্রেণীর গৃহস্থালী প্রসঙ্গে র‌্যাপ গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছেন। স্থানের স্বল্পতার কারণে, নিচে শুধুমাত্র এই
শ্রেণীর গৃহস্থালী ও পরিবারের গঠন-প্রকৃতি তুলে ধরা হবে। মধ্যবিত্ত এবং ধনী শ্রেণীর যে বিশ্লেষণ তিনি
হাজির করেছেন, তার সংক্ষিপ্ত আলোচনা কেস স্টাডিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শ্রমিক শ্রেণীর গৃহস্থালী গড়ে ওঠে প্রতি ঘণ্টায় আয় করা মজুরির উপর ভিত্তি করে। গৃহস্থালীর
সদস্যদের কাজে পাঠিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর গৃহস্থালী উৎপাদন, পুনরুৎপাদন এবং ভোগের সম্পর্কে
অংশগ্রহণ করে। শ্রমিক শ্রেণীর একটি মাত্র সম্পদ আছে। তা হচ্ছে শ্রম ক্ষমতা। শ্রম বিক্রি করে শ্রমিক
শ্রেণীর মানুষজন খাওয়া-পরা-থাকা’র ন্যূনতম চাহিদা মেটান। কাজের বিনিময়ে একজন শ্রমিক পায়
মজুরি এবং এই মজুরি হচ্ছে গৃহস্থালীর অর্থনৈতিক ভিত্তি। একটি গৃহস্থালীর ক’জনকে আয় করার কাজে
পাঠনো হবে তা নির্ভর করে কয়েকটি জিনিসের উপর: গৃহস্থালী টিকিয়ে রাখার নূন্যতম খরচ-পাতির
উপর, প্রতিটি সদস্যের শ্রম-ক্ষমতা, এবং গৃহীচক্রের উপর (স্ত্রী গর্ভবতী কিনা, শিশু সন্তানের বয়স কত
ইত্যাদি)। শ্রমিকদের নিত্যদিনের খাওয়া-পরা-থাকা’র চাহিদা মেটান হয় গৃহস্থালী নামক স্থানে। এই
স্থান আবার ভবিষ্যতের শ্রমিকও উৎপাদন করে। এ দুটো কার্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ শ্রম-ক্ষমতার
পণ্যকরণ হচ্ছে পুঁজিবাদের আবশ্যিক শর্ত। পুঁজিবাদী সমাজে আর অন্যান্য পণ্যের মতন Ñ পাউরুটিমাখন, গাড়ি, টেবিল, পোশাক, কম্পিউটার Ñ শ্রমও পণ্য, এটির বেচা-কেনা করা হয়। মজুরির
বিনিময়ে শ্রমের বিক্রি হচ্ছে পুঁজিবাদের কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য। (পুঁজিবাদকে, সংক্ষেপে, এভাবে সংজ্ঞায়িত
করা যায়: শ্রম বিক্রির ব্যবস্থা, মুনাফা-তৈরীর ব্যবস্থা, শ্রমিকের শোষণ ব্যবস্থা )।
এসব তাত্তি¡ক উপলব্ধির ভিত্তিতে র‌্যাপ বর্তমানের মার্কিনী সমাজে পরিবারের অর্থ কিভাবে শ্রেণী এবং
লিঙ্গের সঙ্গে যুক্ত তা নিরীক্ষণ করছেন। তাঁর নিরীক্ষণে তিনি এ ধরনের জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজেছেন,
যেমন: পুঁজিবাদ, শ্রম, মজুরি Ñ এসবের সাথে পরিবার ও গৃহস্থালীর সম্পর্ক কি? নারী ও পুরুষ, এবং
তাদের দৈনন্দিন জীবন ও অভিজ্ঞতার সাথে এগুলোর সম্পর্ক কি? তাঁর কাজ হতে নিচের কেস স্টাডি
রচিত হয়েছে।
গৃহস্থালীর সদস্যদের কাজে
পাঠিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর গৃহস্থালী
উৎপাদন, পুনরুৎপাদন এবং
ভোগের সম্পর্কে অংশগ্রহণ
করে। শ্রমিক শ্রেণীর একটি মাত্র
সম্পদ আছে। তা হচ্ছে শ্রম
ক্ষমতা। শ্রম বিক্রি করে শ্রমিক
শ্রেণীর মানুষজন খাওয়া-পরা-
থাকা’র ন্যূনতম চাহিদা মেটান।
কেস স্টাডি : যুক্তরাষ্ট্রের পরিবারে লিঙ্গ ও শ্রেণীর আন্তঃপ্রবিষ্টতা১০
মার্কিনী সমাজে “মতাদর্শ” পরিবারের দিক-নির্দেশনা দেয়। গরীব শ্রেণীর ক্ষেত্রে এভাবে: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে থাকবে
প্রেম-ভালবাসা, স্ত্রী স্বামীর সেবা-যতœ করবে, তার জন্য রাঁধবে-বাড়বে, তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে দিবে, তার শার্ট ইস্ত্রি
করে দিবে, ঘর-দোর গুছিয়ে রাখবে, তাদের বাচ্চা হবে ইত্যাদি। পারিবারিক সম্পর্ক দুটো জিনিস নিশ্চিত করে।
এক, পুরুষ শ্রমিকের দৈনন্দিন সেবাযতেœর খরচপাতি কারখানা মালিকের বহন করতে হয় না। ধরুন, যদি শ্রমিকের
বাড়িতে বউ না থাকত এবং তার যদি হোটেলে থাকতে হ’ত, হোটেলের খাবার কিনে খেতে হ’ত, লন্ড্রিতে কাপড়
ধোয়াতে হ’ত, তাহলে নিঃসন্দেহে মিল-মালিকের আরও বেশি মজুরি দিতে হ’ত। পুরুষ-শ্রমিকের স্ত্রী প্রেমভালোবাসার কারণে তার স্বামীর সেবাযতœ করেন। গৃহিণী হিসেবে তিনি যে গৃহশ্রম (যড়ঁংবড়িৎশ) দেন, তার
বিনিময়ে তিনি কোন মজুরি পান না। স্বামী-শ্রমিক তার মজুরি দিয়ে যেসব পণ্য বাজার থেকে কেনেন (খাবার,
পোশাক), পরিবারের সদস্য হিসেবে গৃহিণী-স্ত্রী তার অংশবিশেষ পান। অর্থাৎ, শ্রম-বাজার এবং মজুরির সাথে
পুরুষ-শ্রমিকের সম্পর্ক সরাসরি এবং প্রত্যক্ষ। পক্ষান্তরে , নারীর সম্পর্ক অপ্রত্যক্ষ। স্বামীর মধ্যস্থতায় নারী শ্রমবাজার এবং মজুরির সাথে সম্পর্কিত। দুই, নারী তাঁর পেটে সন্তান নেন, তাকে জন্ম দেন, এবং লালন-পালন
করেন। পুঁজিবাদের কঠোর বৈষম্যভিত্তিক ব্যবস্থায়, সে হয়ে ওঠে আগামী প্রজন্মের শ্রমিক। কিন্তু কারখানা-মালিক,
এই প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিক পেয়ে যান নিখরচায় যেহেতু নারী, মা হিসেবে, তার সন্তানের সেবা যতœ অনিবার্যভাবে করে
থাকেন। এই হচ্ছে শ্রমিক-শ্রেণীর বাস্তব অবস্থা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবিত্ত মানুষজন চাকুরিজীবী। তারা বড় বড় কোম্পানীতে চাকরিরত ব্যবস্থাপক হিসেবে; অনেকে
সরকারী চাকরি করেন, অনেকে পেশাজীবী। অনেক মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে ব্যবসায়ী
প্রতিষ্ঠানের জন্যই কাজ করেন (যেমন, বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্মচারী)। এই শ্রেণী বেতনের উপর নির্ভরশীল; বেতন
বাদে নানান ধরনের আর্থিক সুযোগ সুবিধা তাঁরা পান (বাড়ি ভাড়া, স্বাস্থ্য বীমা, সন্তানদের শিক্ষা ভাতা, বিনোদন
ভাতা)। দেখা যায়, পদন্নোতির তাগিদে মধ্যবিত্ত গৃহস্থালী প্রায়শই স্থান পাল্টায়: গৃহস্থালীর সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
এক রাজ্য হতে আরেক রাজ্যে স্থানান্তরিত হন। অর্থনৈতিক এবং ভৌগোলিক স্থানান্তরনে সাহায্য করে আত্মীয়কুলের
পরিবর্তে বাজারে ক্রয়যোগ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। যেমন, বাড়ির মাল-সামান প্যাক করে দিয়ে নতুন ঠিকানায়
পৌঁছে দেয়ার মতন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (ইদানিংকালে ঢাকায়ও)।
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিয়ে “সমতাভিত্তিক”। র‌্যাপের অভিমত হচ্ছে, ‘সমতাভিত্তিক বিয়ে’ Ñ এই শব্দগুলো পুঁজিবাদী
বৈষম্য আড়াল করে। স্বামীর পেশাগত সম্মান রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে এমন একজন স্ত্রীর যিনি স্বামীর উপযুক্ত
সঙ্গী হতে পারবেন: শিক্ষিত, বুদ্ধিমতি, স্মার্ট। আশা করা হয়, মা হিসেবে তিনি সন্তানদের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত
করে তুলবেন, আকর মূল্যবোধ তাদের মজ্জাগত করবেন। র‌্যাপ বলছেন, মধ্যবিত্ত জ্ঞাতিত্বের দুইটি বৈশিষ্ট্য
লক্ষণীয়: প্রথমত, সম্পদ প্রবাহিত হয় রৈখিক ভাবে (বাবা-মা হতে সন্তান, নাতি-নাতনী ইত্যাদি)। পার্শ্বিক ভাবে নয়
(বৃহত্তর জ্ঞাতিকুল)। পার্শ্বিক প্রবাহ গরিব এবং শ্রমিক পরিবারের ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয়। লেখাপড়া, পেশাগত প্রতিষ্ঠা
এবং বিয়ের উপহার Ñ এ ধরনের ঘটনায় বয়োজ্যেষ্ঠ প্রজন্ম (দাদা-দাদী, নানা-নানী, পিতা-মাতা) বয়োকনিষ্ঠ
প্রজন্মের (নাতি-নাতনী, নিজ সন্তান) পেছনে অনেক টাকা খরচ করেন। দ্বিতীয়ত, মধ্যবিত্ত পরিবার সাধারণত
তাদের আবেগ অনুভূতি এবং মনোযোগ জ্ঞাতিকুলের পেছনে লগ্নি না করে বন্ধু-মহলে করে। এ ধরনের সম্পর্ক
পারিবারিক সম্পদ সংরক্ষণে সাহায্য করে, বন্ধুদের মধ্যে আদান-প্রদান হয় আবেগ-অনুভূতির, সম্পদের নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খুব ধনী যারা, তাঁদের সম্বন্ধে গবেষকরা খুবই কম জানেন। র‌্যাপের মতে, এর কারণ হতে পারে,
ধনীরা গবেষণার টাকা যোগান দেন, তাঁরা নিজেরা সচরাচর গবেষণার বিষয় হতে সম্মত হন না। ধনীদের একাধিক
গৃহস্থালী থাকে, তাঁরা বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন গৃহে যেয়ে বসবাস করেন। ধনী পরিবার খুবই রৈখিক, এবং নিজেদের
মধ্যে কে কোন্ পেশায় আছে সেটা নিয়ে তাঁরা খুব একটা মাথা ঘামায় না। বরং, কার পারিবারিক ঐতিহ্য কি, এটা
নিয়ে তাঁরা বেশি ব্যতিব্যস্তথাকেন। পারিবারিক গন্ডিতে অর্থ সংগৃহীত হয়, এবং প্রবাহিত হয়। তবে, র‌্যাপ বলেন:
অর্থ এবং শ্রেণীর মধ্যকার সম্পর্ক সহজ-সরল নয়। এমনও হতে পারে, কোন পরিবারের অবস্থা পড়ে গেছে কিন্তু
তাঁদের “খানদানি” ঐতিহ্যের কারণে তাঁরা এখনও ধনী মহলে ওঠা-বসা করেন। উচ্চবিত্তদের জগত খুব লিঙ্গ-

১০ জধুহধ জধঢ়ঢ়, "ঋধসরষু ধহফ ঈষধংং রহ ঈড়হঃবসঢ়ড়ৎধৎু অসবৎরপধ: ঘড়ঃবং ঞড়ধিৎফ ধহ
টহফবৎংঃধহফরহম ড়ভ ওফবড়ষড়মু," রহ ইধৎৎরব ঞযড়ৎহব রিঃয গধৎরষুহ ণধষড়স বফং. জবঃযরহশরহম ঃযব
ঋধসরষু. ঝড়সব ঋবসরহরংঃ ছঁবংঃরড়হং, ঘবি ণড়ৎশ: খড়হমসধহ, ১৯৮২, ঢ়ঢ়. ১৬৮-১৮৭.
বিভক্ত। এই শ্রেণীর নারীরা শ্রেণী-দরজা পাহারা দেন: ঘটকালি করেন, মানানসই বিয়ের আয়োজন করেন, আদর্শ
মা এবং স্ত্রীর ভূমিকা বহির্জগতে পরিবেশন করেন। রমণীয় এবং পারিবারিক আচরণ কি হওয়া উচিত তা উচ্চবিত্ত
নারীরা, মিডিয়ার সাহায্যে, নিরন্তর পরিবেশন করেন। লক্ষণীয় হল, ধনী নারীদের “মা” এবং “স্ত্রী” হিসেবে
পরিবেশন করা হয়। কিন্তু, আসলে মা এবং স্ত্রী হবার কারণে তাদের মিডিয়াতে বারেবারে দেখানো হয় না। তাদের
পরিবেশন করা হয় কারণ তারা ধনী। এই শ্রেণীর নারীরা সমাজ সেবা করেন এবং র‌্যাপের বিশ্লেষণ হচ্ছে, এই
ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে তারা পুঁজিবাদের কঠোরতা এবং নৃশংসতা কোমল করে তোলেন।
সারাংশ
নৃবিজ্ঞানে, পরিবার প্রসঙ্গটি প্রধানত দুইভাবে দেখা হয়েছে। ব্রনিসলো ম্যালিনোস্কির মতন নৃবিজ্ঞানী
পরিবারের আকর বৈশিষ্ট্যকে খুঁজেছেন যাতে প্রমাণ করা যায় যে পরিবার হচ্ছে বিশ্বজনীন। এই দৃষ্টিকে
বলা যায় নির্যাসকারী, যেহেতু এটি পরিবারের নির্যাস খোঁজে, যে নির্যাস পরিবারকে দান করবে
সর্বজনীনতা। সমাজবিজ্ঞানী ট্যালকট পারসন্স পরিবারকে বিচার করেছেন আধুনিকতাবাদী দৃষ্টি থেকে।
আধুনিক, শিল্পোন্নত সমাজ হচ্ছে প্রতিষ্ঠান-নির্ভর; অনুন্নত, পিছিয়ে-পড়া সমাজ হচ্ছে জ্ঞাতি-নির্ভর।
জ্ঞাতি ভিত্তিক সংগঠন দ্বারা সম্পাদিত কার্যাবলী, সমাজের উন্নতির সাথে সাথে হস্তান্তরিত হয়ে যায়।
আধুনিক সমাজে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী দপ্তর, সামরিক বাহিনীর মত প্রতিষ্ঠান জ্ঞাতিকুলের পরিবর্তে
প্রয়োজনীয় কার্য সম্পাদন করে। শ্রেণীর প্রসঙ্গটি নৃবিজ্ঞানে উপেক্ষিত হয়েছে বহু বছর ধরে। বর্তমানে
এটি, পুঁজিবাদের বিস্তারের কারণে, এবং পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোতে সমাজতন্ত্রের ভাঙ্গনের কারণে,
নৃবিজ্ঞানের একটি কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে উঠেছে। সমাজতান্ত্রিক নারীবাদীরা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তাত্তি¡ক
অবদান রেখেছেন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন -
১। নিচের কোন সমাজবিজ্ঞনীকে আধুনিকতাবাদী বলা হয়?
ক. রবার্টমার্টন খ. ট্যালকট পারসন্স
গ. এমিল ডুর্খাইম ঘ. আগস্তকোঁত
২। ‘পরিবার শে¬নী কাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়’ - উক্তিটি কার?
ক. ব্রনিসলো ম্যালিনোস্কি খ. মেয়ার ফোর্টস
গ. রায়না র‌্যাপ ঘ. উপরের কেউই নন
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। নির্যাসকরণ কাকে বলে?
২। সমাজবিজ্ঞানী ট্যালকট পারসন্সকে কেন আধুনিকতাবাদী বলা হয়?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। নির্যাসকরণ কি? ম্যালিনোস্কি এবং ফোর্টস-এর পরিবার সম্পর্কিত তত্ত¡ কোন অর্থে এ ধারার
প্রতিনিধিত্ব করে Ñ আলোচনা করুন।
২। র‌্যাপ বলছেন, পরিবার শ্রেণী কাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এপ্রসঙ্গে, র‌্যাপের তাত্তি¡ক উপলব্ধি
আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]