নৃবিজ্ঞানীরা কিভাবে বিয়ে ব্যবস্থার শ্রেণীকরণ করেছেন?
বিয়ের শ্রেণীকরণের মূলনীতি সংক্ষেপে আলোচনা করুন।


বিয়ের ধরন
ঞুঢ়বং ড়ভ গধৎৎরধমব
এই পাঠটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন :
 বিবাহের শ্রেণীকরণের মূলনীতি
 পাশ্চাত্য সমাজে বিয়ে হচ্ছে দাম্পত্য-ভিত্তিক
 পাশ্চাত্য সমাজের প্রতিষ্ঠানাদি ও সংস্কৃতির প্রসার অপাশ্চাত্য সমাজের বিয়েকে পুনর্গঠিত করেছে
চারটি মূলনীতির ভিত্তিতে নৃবিজ্ঞানীরা বিয়ে ব্যবস্থার শ্রেণীকরণ করেছেন। সেগুলি হচ্ছে: বিবাহ সঙ্গী
নির্ধারণের ক্ষেত্রে গোত্রের গুরুত্ব, পতি-পতœী সংখ্যা, পতি কিংবা পতœীর ভাই/বোন বিবাহ সঙ্গী হতে
পারে কি না, এবং বিবাহে মূল্যবান সামগ্রীর আদান-প্রদান।
অন্তঃর্গোত্র ও বহিঃর্গোত্র বিবাহ : বিবাহ-সঙ্গী নির্ধারণের ক্ষেত্রে গোত্র সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই গুরুত্বকে স্পষ্ট করে তোলেন বৃটিশ আইনজীবী ম্যাকলেনান। তিনি প্রথমে অন্তর্গোত্র (বহফড়মধসু)
এবং বহির্গোত্র (বীড়মধসু) পদ দুটির প্রবর্তন করেন। স্পষ্টতই, প্রথমটি ইঙ্গিত করে গোত্রের ভেতরে
বিয়ে আর দ্বিতীয়টি ইঙ্গিত করে গোত্রের বাইরে বিয়ে। প্রশ্ন জাগতে পারে: গোত্র বলতে কি বোঝানো
হচ্ছে? এই গোত্র কি সকল সমাজে এক? এখানে, গোত্র বলতে নৃবিজ্ঞানীরা বোঝাচ্ছেন একটি
জ্ঞাতিভিত্তিক সামাজিক দল। এর সদস্যপদ, নির্দিষ্ট সমাজের জ্ঞাতিত্ব ব্যবস্থা অনুসারে, এক সমাজ
হতে আরেক সমাজে ভিন্ন হতে পারে। নৃবিজ্ঞানের প্রাথমিক পর্যায়ে ধরে নেয়া হয়েছিল যে, বিবাহ
ব্যবস্থা কেবলমাত্র দুই ধরনের হতে পারে: অন্তর্গোত্রীয় কিংবা বহির্গোত্রীয়। এ ধারণা যে ভ্রান্ততার প্রতি
নৃবিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করান ফরাসী নৃবিজ্ঞানী লেভি-স্ট্রস। তিনি বলেন, সকল বিবাহ ব্যবস্থা একই
সাথে অন্তর্গোত্রীয় এবং বহির্গোত্রীয়। এ কথা বলার পিছনে লেভি-স্ট্রসের যুক্তি ছিল: যে কোন বিয়ে
ব্যবস্থা একটি দলের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ করে, এবং আরেকটি দলের মধ্যে বিয়ে অনুমোদন করে (এ
বিষয়টি ২ নং ইউনিটের ৫ নং পাঠে আলোচিত হয়েছে)।
অন্তর্গোত্রীয় বিয়ের সবচাইতে প্রচলিত ধরন হচ্ছে কাজিন-বিবাহ। কাজিন বিবাহের ক্ষেত্রে দেখা যায়,
কিছু সমাজে আছে আড়াআড়ি কাজিন বিবাহ নীতি। এখানে বিয়ে সংগঠিত হয় আড়াআড়ি কাজিনদের
মাঝে: ফুপাত-মামাত ভাই ও বোন। আবার কিছু-কিছু সমাজে সমান্তরাল কাজিনদের মধ্যে বিয়ে
বাঞ্ছনীয়: চাচাত-খালাত ভাই ও বোন। সমান্তরাল কাজিন বিয়ের প্রচলন দেখা যায় উত্তর আফ্রিকার
মুসলমান আরবদের মধ্যে। বর্হিগোত্রীয় বিবাহ প্রথা অনুসারে গোত্র বা দলের বাইরে বিবাহ বাঞ্ছনীয়।
ট্রব্রিয়াÐ সমাজের বাসিন্দারা বিয়ে করেন নিজ গোষ্ঠী ও গোত্রের বাইরে। লেভি-স্ট্রস অনুসরনে কিছূ
নৃবিজ্ঞানী বিয়েকে দেখেন মৈত্রী স্থাপনের একটি উপায় হিসেবে। তাঁরা বলেন, বিয়ের মাধ্যমে বাণিজ্যিক
সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে, সম্ভব হতে পারে এমন দ্রব্য ও সম্পদের বিনিময় যা সে এলাকায় পাওয়া যায়
না।
ভারতবর্ষে অন্তর্গোত্রীয় বিয়ের ভাল উদাহরণ হচ্ছে জাতিভিত্তিক (পধংঃব) বিবাহ। অন্য কথায়, জাতির
(ব্রাহ্মণ, কায়স্থ) ভেতরে বিবাহ-সঙ্গী বাছাই বাঞ্ছনীয়। তবে, মনে রাখা জরুরী যে, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির
প্রসার এবং পুঁিজবাদ জাতিভিত্তিক বিবাহ ব্যবস্থায় বদল ঘটিয়েছে, ঘটাচ্ছে। নৃবিজ্ঞানীরা একমত যে
বহির্গোত্রীয় এবং অন্তর্গোত্রীয়, এই দুই নীতির সাথে অন্যান্য বিষয় যুক্ত Ñ যেমন কিনা স্থানিক দল,
জ্ঞাতি দল, শ্রেণী, জাতিবর্ণ এবং হয়তো অপরাপর সামাজিক বিভাজন। আধুনিকায়নপন্থী নৃবিজ্ঞানীরা
বহির্গোত্রীয় এবং অন্তর্গোত্রীয় বিয়েকে দেখেন “ঐতিহ্যবাহী”, পিছিয়ে পড়া, জ্ঞাতিভিত্তিক সমাজের
রীতিনীতি হিসেবে। তাঁরা বলেন, আধুনিক, শিল্পভিত্তিক সমাজে জ্ঞাতিত্বের মতন আদিম সম্পর্কের স্থান
নেই, এ ধরনের সমাজে সামাজিক সংগঠনের ভিত্তি হচ্ছে যৌক্তিকতা এবং বিজ্ঞানমনস্কতা, অনুভূতি বা
চারটি মূলনীতির ভিত্তিতে
নৃবিজ্ঞানীরা বিয়ে ব্যবস্থার
শ্রেণীকরণ করেছেন। সেগুলি
হচ্ছে: বিবাহ সঙ্গী নির্ধারণের
ক্ষেত্রে গোত্রের গুরুত্ব, পতিপতœী সংখ্যা, পতি কিংবা পতœীর
ভাই/বোন বিবাহ সঙ্গী হতে
পারে কি না, এবং বিবাহে
মূল্যবান সামগ্রীর আদানপ্রদান।
অন্তর্গোত্রীয় বিয়ের সবচাইতে
প্রচলিত ধরন হচ্ছে কাজিনবিবাহ। ভারতবর্ষে অন্তর্গোত্রীয়
বিয়ের ভাল উদাহরণ হচ্ছে
জাতিভিত্তিক (পধংঃব) বিবাহ ।
বংশ-পরম্পরায় আঁকড়ে-ধরা বিশ্বাস নয়। আধুনিকায়নের সাথে সাথে, শিল্পায়নের সাথে সাথে এ ধরনের
সম্পর্কের উচ্ছেদ ঘটতে বাধ্য।
সা¤প্রতিক কালে, নৃবিজ্ঞানে (এবং অন্যান্য জ্ঞানকান্ডে) এ ধরনের পাশ্চাত্যকেন্দ্রিক ও মতাদর্শিক ধ্যানধারণা প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে, হচ্ছে। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বর্তমানের আধুনিক
ইউরোপে অন্তর্গোত্রীয় বিবাহের প্রচলন ইউরোপের রাজবংশের মধ্যে বিদ্যমান। কঠোরভাবে পালিত না
হলেও বলা চলে, নিজ গোত্রের মধ্য থেকে বিবাহ-সঙ্গী বাছাই করা কাম্য হিসেবে বিবেচিত এবং এটি
বাস্তৃবে অনুশীলিত। নিজ গোত্রের মধ্যে বিয়ে করা যে কাম্য, এটি লিখিত রূপে কোথাও নেই বা বারবার
জনসমক্ষে উচ্চারিতও হয় না। কিন্তু ইউরোপভিত্তিক রাজবংশগুলোর সামাজিক সংগঠনের এটি একটি
মূলনীতি। এক্ষেত্রে “গোত্র” বা “দল” হচ্ছে সর্ব-ইউরোপব্যাপী রাজবংশ (এটি অবশ্য অখন্ড কিছু নয়,
এর কোন একটি মাত্র উৎস নেই) এবং অধিকাংশ বিয়ে রাজবংশের কোন না কোন শাখা-উপশাখার
মধ্যেই ঘটে থাকে। আরো উদাহরণ দেয়া সম্ভব। নরবর্ণকে যদি আমরা একটি সামাজিক দল হিসেবে
সংজ্ঞায়িত করি (আলবত, যেই দলের সংজ্ঞা করা হয়ে থাকে জৈবিকতার ভিত্তিতে) তাহলে ইউরোপ ও
উত্তর-আমেরিকার অধিকাংশ বিয়েকে অন্তর্গোত্রীয় মনে হতে পারে, যেহেতু শ্বেতাঙ্গরা পরস্পরকে বিয়ে
করে। যদিও ইউরোপ ও আমেরিকায় মিশ্র-বর্ণ বিয়ে ঘটে কিন্তু শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিয়ের প্রধান
ধারা হচ্ছে বর্ণভিত্তিক, অর্থাৎ অন্তর্গোত্রীয়।
পতি-পতœী সংখ্যা: এই মূলনীতির ভিত্তিতে বিয়েকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়: (ক) বহু-পতœী
(ঢ়ড়ষুধহফৎড়ঁং) বিবাহ, (খ) বহু-পতি (ঢ়ড়ষুমুহড়ঁং) বিবাহ, এবং (গ) এক-পতিপতœী
(সড়হড়মধসড়ঁং) বিবাহ। বহু-পতœী বিবাহ বহু বিবাহের (ঢ়ড়ষুমধসড়ঁং, ঢ়ড়ষুমধসু) একটি ধরন।
বিয়ের এই ব্যবস্থায় স্বামীর থাকে একাধিক স্ত্রী। কোন কোন সমাজে, স্ত্রীরা জ্ঞাতি সম্পর্কে হন পরস্পরের
ভগ্নী। নৃবিজ্ঞানীরা এ ধরনের বিয়ের নামকরণ করেছেন ভগ্নী বহু-পতœী বিবাহ (ংড়ৎড়ৎধষ ঢ়ড়ষুমুহু)।
বহু-পতি বিয়ের তুলনায়, বহু-পতœী বিয়ে বেশি প্রচলিত এবং নৃবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে এর প্রচলন আঞ্চলিক
নয়। বিশ্বের বহু অঞ্চলে বিয়ের এই ধরনকে স্বাভাবিক ভাবা হয়। এই ভাবনার ব্যতিক্রম হচ্ছে খ্রিস্টীয়প্রধান ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা। খ্রীস্টিয় ধর্ম মতে বিয়ে হতেই হবে এক-পতিপতœী বিবাহ। বহু
পতি-পতœী বিবাহ খ্রিস্টীয়-প্রধান ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় আইনগতভাবে নিষিদ্ধ।
যে সকল অঞ্চলে বংশধারা ব্যবস্থা বিদ্যমান সেখানে দেখা গেছে যে, সকল পুরুষ নয় বরং শুধুমাত্র
বয়োজ্যেষ্ঠ এবং ক্ষমতাশালী পুরুষেরা বহু-পতœী বিবাহ করে থাকেন। কিছু কিছু সমাজে, এটি শুধু মাত্র
দলনেতা অথবা মাতব্বর বা সর্দারদের জন্য রক্ষিত। আমাজন অঞ্চলের সমাজে, একাধিক স্ত্রী থাকা
ক্ষমতার চিহ্ন, আবার ক্ষমতার ভিত্তি তৈরি করবার পথ। একাধিক স্ত্রীর মাধ্যমে জ্ঞাতিকুল বৃদ্ধি করা
সম্ভব, বহু সন্তান-সন্ততি লাভ করা সম্ভব। বিবাহসূত্রে অর্জিত এই বিশাল জ্ঞাতিকুল একজন দলনেতার
দলকে ভারী করে, নানান ধরনের কৌশলী মিত্রসম্পর্ক স্থাপনে এটি তাঁর কাজে লাগে। এই বিবাহ প্রথা
পুরুষটির অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয় কারণ আংশিকভাবে হলেও, তিনি তার স্ত্রী ও
সন্তানদের শ্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, বহু-পতœী বিবাহ অনেক ক্ষেত্রেই বয়সের
অসমতার সাথে যুক্ত। বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষেরা বিয়ে করেন অল্প-বয়স্ক নারীদের; এবং এ সমাজগুলোতে
দেখা যায়, অল্পবয়স্ক পুরুষেরা হয় বহু বছর অবিবাহিত থাকেন অথবা বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষদের বিধবাদের
বিয়ে করেন। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, বহু-পতœী বিবাহের প্রচলন ঘটে এমন ধরনের অর্থনৈতিক এবং
রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যেখানে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে মানুষ। যে সকল সমাজে জমি এবং
অন্যান্য ধরনের ব্যক্তিসম্পত্তি বিদ্যমান, সেখানে এক-পতিপতœী বিবাহের প্রচলন দেখা যায়।
বহু -পতি ব্যবস্থায় একজন স্ত্রীর থাকে একাধিক স্বামী। তিব্বত, নেপাল এবং ভারতের কিছু অঞ্চলে
এধরনের বিয়ের প্রচলন দেখা গেছে। দক্ষিণ ভারতের টোডাদের মাঝে দেখা গেছে যে, একজন নারীর
যে পুরুষের সাথে বিয়ে হয়, তাঁর অপর ভাইয়েরা সকলেই তাঁর স্বামী। যদি বিয়ের পর স্বামীর ভাই
জন্মায়, তাহলে সেও স্বীকৃত হয় তার ভাইয়ের বউয়ের স্বামী হিসেবে। স্ত্রী যখন অন্তঃসত্ত¡া হন, তাঁর
সন্তানের জৈবিক পিতা কে, সেটা নির্ধারণ করা জরুরী মনে করা হয় না। বাচ্চা যখন সাত মাস পেটে,
তখন “ধনুক দেয়ার” (“মরারহম ঃযব নড়”ি) অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্য
হচ্ছে, সমাজ ও আইনের দৃষ্টিতে সন্তানের বাবা কে, তা ঠিক করা। ঘাস-ডালপালা দিয়ে একটি প্রতীকী
তীর-ধনুক বানিয়ে, সাধারণত যে ভাই সকল স্বামীর মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ, তিনি হবু সন্তানের মাকে এটি
উপহার দেন। স্বামীর জ্ঞাতগোষ্ঠী এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। তীর-ধনুকের এই স¤প্রদান অনুষ্ঠান
নরবর্ণকে যদি আমরা একটি
সামাজিক দল হিসেবে
সংজ্ঞায়িত করি ... তাহলে
ইউরোপ ও উত্তর-আমেরিকার
অধিকাংশ বিয়েকে অন্তর্গোত্রীয়
মনে হতে পারে, যেহেতু
শ্বেতাঙ্গরা পরস্পরকে বিয়ে
করে।
আমাজন অঞ্চলের সমাজে,
একাধিক স্ত্রী থাকা ক্ষমতার
চিহ্ন, আবার ক্ষমতার ভিত্তি
তৈরি করবার পথ। একাধিক
স্ত্রীর মাধ্যমে জ্ঞাতিকুল বৃদ্ধি করা
সম্ভব, বহু সন্তান-সন্ততি লাভ
করা সম্ভব।
উপস্থিত সকলকে জানিয়ে দেয় যে তিনি হচ্ছেন হবু সন্তানের পিতা। একাধিক সন্তান হবার পর,
দ্বিতীয় ভাই “ধনুক” উপহার দেন তাঁর/তাঁদের স্ত্রীকে।
কিছু নৃবিজ্ঞানীদের মনে হয়েছে, বহু-পতি ব্যবস্থা শিশুকন্যা হত্যার সাথে সম্পর্কিত কারণ যেসব অঞ্চলে
এ ধরনের বিয়ের প্রচলন, সেখানে জন্মের পরপরই শিশুকন্যাকে হত্যা করার রীতি আছে। কিন্তু যেহেতু
শিশুকন্যা হত্যা বহু-পতœী বিবাহ অঞ্চলেও প্রচলিত, সে কারণে এই সিদ্ধান্তঅনেক নৃবিজ্ঞানীর কাছে
গ্রহণযোগ্য নয়। নৃবিজ্ঞানী র্বেরিম্যান-এর অভিমত হচ্ছে, হিমালয় অঞ্চলের বহু-পতি প্রথার মূল কারণ
হচ্ছে ভূমির স্বল্পতা। বহু-পতির ফলে পরিবারের সাইজ ছোট থাকে। এবং, এতে জমি খন্ড-বিখÐিত হয়
না। এখানে লক্ষণীয় যে, বহু-পতœী ব্যবস্থায় একজন স্বামী বহু সন্তান লাভ করতে পারেন কিন্তু বহু-পতি
ব্যবস্থায়, এমনটি ঘটে না। তার কারণ, স্বামীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে নারীর সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা বৃদ্ধি
পায় না, সেটি অপরিবর্তিত থেকে যায়। র্বেরিম্যানের মতে, বহু-পতি প্রথা ভূমিজ সম্পদ এবং শ্রম
সম্পদের সামঞ্জস্য সাধন করে তোলে। তিনি আবার একইসাথে আমাদের সতর্ক করে দেন যে,
সামঞ্জস্য সাধনের একটি মাত্র সম্ভাব্য কৌশল হচ্ছে বহু-পতি বিবাহ। তার কারণ, হিমালয় অঞ্চলের এই
হিন্দু সমাজগুলোতে, একই সাথে এক-পতিপতœী বিবাহেরও প্রচলন আছে।
এক-পতিপতœী বিবাহ প্রথা অনুসারে একজন নারীর সাথে একজন পুরুষের বিবাহ ঘটে। দেখা গেছে,
কিছু অঞ্চলে এক-পতিপতœী বিয়ের অর্থ হচ্ছে বিবাহিত থাকা অবস্থায় অন্য কোন পতি বা পতœী গ্রহণ
নিষিদ্ধ। কিন্তু, যদি স্বামী কিংবা স্ত্রীর মৃত্যুর মাধ্যমে, অথবা ছাড়াছাড়ির মাধ্যমে, বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে
তাহলে স্ত্রী কিংবা স্বামী পুনরায় বিয়ে করতে পারেন। কিছু অঞ্চলে, এমনটি নয়। অর্থাৎ, ছাড়াছাড়ি
অনুমোদিত নয়; উপরন্তু স্বামী কিংবা স্ত্রীর মৃত্যুর পর, পুনরায় বিয়ে করা অনুমোদিত নয়। পুনরায় বিয়ের
প্রচলনের নামকরণ নৃবিজ্ঞানীরা করেছেন ক্রমান্বিক এক-পতিপতœী বিবাহ (ংবৎরধষ সড়হড়মধসু)।
স্বামীর ভাই ও শ্যালিকা বিবাহ: স্বামীর ভাই (ষবারৎধঃব) ব্যবস্থা হচ্ছে সেটি, যেখানে স্বামী মারা যাবার
পর, বিধবা স্ত্রীকে স্বামীর ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। আমাদের অঞ্চলে, স্বামী মারা গেলে দেবরের
সাথে বিয়ে দেয়ার প্রচলন আছে। কিন্তু এমন কিছু সমাজ আছে যেখানে বিয়ে দেবর কিংবা ভাসুর, যে
কারো সাথে অনুষ্ঠিত হতে পারে। নুয়ের সমাজে মৃত স্বামীর আপন ভাই বিয়ে করতে পারেন বিধবাকে;
যদি মৃত স্বামীর ঔরসজাত কোন সন্তান না থেকে থাকে তাহলে, পরবর্তী বিয়ের সন্তানেরা মৃত স্বামীর
সন্তান হিসেবে বিবেচিত হন। কিছু নৃবিজ্ঞানী এই নিয়মের ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে: এই নিয়ম
পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার নামান্তর যেখানে বিয়ের পর, বউ শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি হয়ে যায় অথবা তারা গোত্রের
অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ব্যাখ্যা অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ এমনও
পিতৃতান্ত্রিক সমাজ আছে যেখানে বিয়ের এই নীতি অনুপস্থিত। আবার, এমন সমাজেও এই নীতি
বিদ্যমান, যে সমাজকে কোনভাবেই পিতৃতান্ত্রিক বলা যায় না। শ্যালিকা বিবাহ (ংড়ৎড়ৎধঃব) নীতি
অনুসারে, স্ত্রী মারা গেলে তার স্বামী নিজ শ্যালিকাকে বিয়ে করেন অথবা বিয়ে করার অধিকার রাখেন।
স্ত্রী বেঁচে থাকলেও শ্যালিকা বিবাহ ঘটতে পারে। কিছু সমাজে স্ত্রী যদি নিঃসন্তান হন, তাহলে স্বামী তার
শ্যালিকাকে বিয়ে করার অধিকার রাখেন। শ্যালিকার গর্ভে জন্মলাভ করা কিছু সন্তান প্রথম স্ত্রীর আপন
সন্তান হিসেবে বিবেচিত হয়। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, স্বামীর ভাই ও শ্যালিকা বিবাহ প্রমাণ করে যে,
অপাশ্চাত্য সমাজে বিয়ে সংগঠিত হয়, দুটি দল বা জ্ঞাতিকুল বা গোষ্ঠীর মধ্যে; দুজন ব্যক্তির মধ্যে নয়
Ñ যা কিনা পাশ্চাত্য সমাজের নিয়ম, এবং আদর্শ Ñ দুটোই।
বিয়েতে আদান-প্রদান: বিয়ে উপলক্ষ্যে বর পক্ষ যদি কনে পক্ষকে মূল্যবান সামগ্রী দেয় সেটিকে বলা
হয় কনে পণ (নৎরফববিধষঃয, নৎরফব ঢ়ৎরপব)। সামগ্রীর আদান-প্রদান যদি হয় উল্টোভাবে, অর্থাৎ,
বিয়ে উপলক্ষ্যে কনে পক্ষ যদি বর পক্ষ, অথবা বরকে, মূল্যবান সামগ্রী প্রদান করে, সেটিকে বলা হয়
যৌতুক (ফড়ৎিু)। যে সমাজগুলোতে প্রথা অনুসারে কনে পণ দেয়া হয়, সেখানে দেখা গেছে যে,
প্রয়োজনীয় মূল্যবান সামগ্রী বরের পক্ষে একা, এমনকি শুধুমাত্র তার পরিবারের সদস্যদের পক্ষে,
যোগাড় করা সম্ভব নয়। গোষ্ঠীর কোন পুরুষ সদস্যের জন্য বউ আনতে বিগ্ধঞ্ঝপ্পত জ্ঞাতিকুলের কসরত
করতে হয়। ঠিক একইভাবে, প্রাপ্ত সামগ্রী বউ পক্ষের বিগ্ধঞ্ঝপ্পত জ্ঞাতিকুলের মধ্যে বিতরণ করা হয়
যাতে যাঁরা পূর্বে সেই গোষ্ঠীতে বউ আনতে সাহায্য করেছিলেন, তাঁরাও এই সামগ্রীর ভাগীদার হন।
প্রতিটি বিয়ের সম্পর্ক স্থাপনে জটিল ধরনের ঋণগ্রস্ততা ও পারস্পরিক লেনদেনের সূত্রপাত ঘটে, যা বংশ
পরম্পরায় চলমান। কনে পণ সংগ্রহ এবং তার পুনর্বণ্টনে বহু মানুষজন জড়িত। বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে,
কিছু কিছু সমাজে দেখা যায় যে, কনে পণ ফেরৎ দেয়ার ক্ষেত্রে কার কি দায়বদ্ধতা এবং তার
হিসেবনিকেশ, দুই প্রজন্মের মানুষজনকে ব্যতিব্যস্তকরে তোলে।
নৃবিজ্ঞানী র্বেরিম্যান-এর
অভিমত হচ্ছে, হিমালয়
অঞ্চলের বহু-পতি প্রথার মূল
কারণ হচ্ছে ভূমির স্বল্পতা। বহুপতির ফলে পরিবারের সাইজ
ছোট থাকে।
নৃবিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ বলে, কনেপণ-প্রদত্ত বিয়েতে প্রচুর পরিমানে ব্যয় করা হয়। আচার-প্রথা পালন
বিয়ের অনুষ্ঠানের গুরুত্বকে বাড়িয়ে তোলে। ধরে নেয়া যেতে পারে যে, লোকসম্মুখে আয়োজিত,
ধূমধামের বিয়ের লক্ষ্য হচ্ছে, এই নতুন সম্পর্ক স্থাপনের সংবাদটি সবার কাছে পৌঁছে দেয়া, সেটার
সামাজিক স্বীকৃতি অর্জন, এবং হবু সন্তানদের বৈধতা ঘোষণা। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায়, কনে পণ
প্রদান নারীর সেবার অধিকার হস্তান্তরের ইঙ্গিত করে। অর্থাৎ, এর পর থেকে, তার শ্বশুরকুল তার
গৃহীসেবা, যৌনক্ষমতা, এবং বাচ্চা জন্মদানের ক্ষমতার অধিকারী; তার পিতৃকুল নয়। নৃবিজ্ঞানী
লিয়েনহার্ট-এর অভিমত হচ্ছে, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায়, কনে পণকে দেখা হয় কন্যা সন্তানকে বড়
করে তোলার কষ্ট, খাটা-খাটনির ক্ষতিপূরণ, এবং তার শ্রমশক্তি হারানোর ক্ষতিপূরণ, হিসেবে।
কিছু সমাজে প্রচলন আছে কনে সেবার (নৎরফব ংবৎারপব)। এসকল সমাজে, স্ত্রীতে অধিকার প্রাপ্তির
বিনিময়ে বর তার শ্বশুরবাড়িতে নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য শ্রম ও সেবা দেন। এ ব্যবস্থার প্রচলন সে
ধরনের সমাজে দেখা যায় যেখানে মূল্যবান সামগ্রী সংগ্রহ করা কঠিন। আফ্রিকার কুং!দের মাঝে,
জামাই তার শ্বশুরকুলকে শ্রম ও সেবা দিতে পারেন পনের বছর পর্যন্ত, কিংবা তৃতীয় সন্তান জন্মানো
পর্যন্ত।
পূর্বে, যৌতুক বিবাহ ইউরোপে প্রচলিত ছিল। ভারতের যৌতুক প্রথার ব্যাখ্যা নিয়ে নৃবিজ্ঞানীদের মধ্যে
বিভিন্ন মত লক্ষণীয়। এক দল মনে করেন যে, যৌতুক দেয়া হয় কন্যাকে। কন্যা যেহেতু বিয়ে সূত্রে ঘর
ছেড়ে চলে যান এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নন, সেকারণে পিতা-মাতা কন্যার বিয়ে উপলক্ষ্যে তাকে
মূল্যবান সামগ্রী উপহার দেয়। অন্য দল মনে করেন, যৌতুক কন্যাকে নয়, বরং বর এবং তার
পরিবারকে দেয়া হয়। তাঁদের ব্যাখ্যা হল : সামাজিকভাবে নারীদের দেখা হয় অর্থনৈতিক বোঝা
হিসেবে। বোঝা হিসেবে বিবেচিত হবার কারণ হ’ল, উঁচু জাতের নারীরা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে
অংশগ্রহণ করেন না। নিচু জাতের নারীরা যদিও তা করে থাকেন, উঁচু জাতের প্রথা, রীতি-নীতি
অনুসরণের প্রবনতার কারণে এ জাতেও যৌতুকের প্রচলন দেখা দেয়। বর পক্ষের জন্য বিয়ের অর্থ
হচ্ছে একজন “বোঝা”-কে খাওয়া-পরার দায়ভার গ্রহণ করা। বোঝা গ্রহণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে যৌতুক
প্রদান করা হয়।
চিত্র ১: যৌতুক
কলকাতা শহরের একটি বিলবোর্ড বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনের বিষয় হচ্ছে কন্যা
সন্তানের বিয়ের জন্য ক্যাশ সার্টিফিকেট ক্রয়ের আহŸান।
সূত্র: ঈধৎড়ষ জ. ঊসনবৎ/গবষারহ ঊসনবৎ (১৯৯০) ঈঁষঃঁৎধষ অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু, ওহংঃৎঁপঃড়ৎ’ং
ঊফরঃরড়হ, ৬ঃয বফরঃরড়হ, ঘবি ঔবৎংবু: চৎবহঃরপব-ঐধষষ, পৃ: ১৮১।
নৃবিজ্ঞানী লিয়েনহার্ট-এর
অভিমত হচ্ছে, পিতৃতান্ত্রিক
সমাজব্যবস্থায়, কনে পণকে
দেখা হয় কন্যা সন্তানকে বড়
করে তোলার কষ্ট, খাটাখাটনির ক্ষতিপূরণ, এবং তার
শ্রমশক্তি হারানোর ক্ষতিপূরণ,
হিসেবে।
ব্যাখ্যা দুটি ভিন্ন হলেও সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মিল রয়েছে। একটি তৃতীয় ব্যাখ্যা কিছু নৃবিজ্ঞানী
দাঁড় করান। তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে, দুটো দৃষ্টিভঙ্গিই নারী-পুরুষের মাঝে বিরাজমান বৈষম্যকে গুরুত্বহীন
করে তোলে, এই বৈষম্যকে আড়াল করে। আড়াল করার এই কাজটি, এ সকল নৃবিজ্ঞানীদের মতে,
বিদ্যমান ব্যবস্থার বৈষম্যের প্রতি সাফাই-গাওয়ার সামিল। তার কারণ, এ দুটো দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান
প্রচলিত ব্যাখ্যাগুলোর (“নারী’র কাজ মূল্যহীন”, “কন্যাসন্তান একটি বোঝা”, “মেয়ের পিতা-মাতা যা
কিছু দেন তা উপহার হিসেবে দেন, খুশি হয়ে দেন”) পুনরাবৃত্তি মাত্র। তাঁদের বিশ্লেষণে, আধুনিক
অর্থনীতি হচ্ছে পুঁজিবাদী। পুঁজিবাদী অর্থনীতি মাত্রই বৈষম্যমূলক Ñ শ্রেণী, নরবর্ণ এবং লিঙ্গীয়ভাবে।
ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক শক্তি দ্বারা যখন পুঁজিবাদী ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়, তখন নারী-পুরুষের মধ্যকার
পূর্বতন বৈষম্য নতুন আঙ্গিকে গড়ে ওঠে। এতে লিঙ্গীয়ভাবে পুরুষেরাই লাভবান হয়: শিক্ষা এবং
আয়করী দক্ষতা অর্জন, চাকরি প্রাপ্তি, সম্পত্তি ক্রয়। এ সকল নৃবিজ্ঞানীদের মতে, উনবিংশ শতকের
শেষভাগ এবং বিংশ শতকের প্রারম্ভে, বাংলা অঞ্চলে মজুরি-ভিত্তিক অর্থনীতির সূত্রপাত এবং বিস্তারের
কাহিনী হচ্ছে পুরুষ-প্রাধান্য স্থাপনের ইতিহাস। চাকুরি-ভিত্তিক এবং মজুরি-ভিত্তিক এই নতুন
অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পুরুষের শ্রম হয়ে ওঠে “মূল্যবান” এবং নারীর শ্রম হয়ে পড়ে “মূল্যহীন”। ফলাফল
হিসেবে দেখা দেয় যৌতুকের প্রচলন, এমন স¤প্রদায়েও যাদের মাঝে আগে এর প্রচলন ছিল না। যেমন
ধরুন, বাঙ্গালি মুসলমান সমাজ। শুরুর দিকে, কেবলমাত্র মুসলমান মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে এর প্রচলন দেখা
দিলেও, পরবর্তী পর্যায়ে এটি সকল শ্রেণীতে ছড়িয়ে পড়ে। যৌতুক পারিবারিক এবং গৃহস্থালী পর্যায়ে
পুরুষের অর্থনৈতিক ক্ষমতাকে প্রকাশ করে। নারী-পুরুষের মধ্যকার এই অর্থনৈতিক বৈষম্য শারীরিক
এবং মানসিক নির্যাতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়: স্ত্রীকে স্বামীর ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়, যৌতুক
আনতে বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দেয়া হয়, স্ত্রীকে এর জন্য মারধর করা হয়, কখনও কখনও এর কারণে স্ত্রী
এসিড নিক্ষেপের শিকার হন, ক্ষেত্রবিশেষে তাকে হত্যা করা হয়।
বিবাহ উপলক্ষে কেবলমাত্র সামগ্রী বা মূল্যবান জিনিসপত্রের আদান-প্রদান নয়, দুই কুলের মধ্যে
নারীরও আদান-প্রদান হতে পারে। নাইজেরিয়ার টিভ সমাজে এভাবে ঘরে বউ আনার প্রচলন আছে।
দুই গোষ্ঠী কন্যার বিনিময়ে কন্যা প্রদান করেন। এক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, নতুন বউ নিজ নিজ
শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে, চলে যাওয়া কন্যার নাম গ্রহণ করেন।
পাশ্চাত্য সমাজসমূহে বিয়ে হচ্ছে দাম্পত্য-ভিত্তিক। এসকল সমাজে বিয়ে ব্যক্তিগত পছন্দ এবং প্রেমভালবাসা-ভিত্তিক হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিয়ের অন্য কোন ভিত্তি (“বাবা-মায়ের পছন্দ”, “দুই বংশকে আরো
কাছে করতে চাই”) অনৈতিক হিসেবে বিবেচিত হয়। বিয়ের অর্থ হচ্ছে স্বতন্ত্র গৃহস্থালী স্থাপন এবং
দাম্পত্যকেন্দ্রিক জীবন যেখানে স্বামী ও স্ত্রী, একে অপরের ঘনিষ্ঠতম সহযোগী ও সাথী। বিয়েতে
একান্তভাবে দম্পতিকে উপহার দেয়া হয়। বর ও কনের নিজ-নিজ পরিবার, তাঁদের আত্মীয় স্বজন এবং
বন্ধু-বান্ধবেরা এই উপহার সামগ্রী দেন। এ হচ্ছে সাধারণ চিত্র। অতি ধনী শ্রেণীতে, এক প্রজন্ম হতে
আরেক প্রজন্মে সম্পত্তির হস্তান্তর বিয়েকে কেন্দ্র করে হয় না। বরং, দাদা-দাদী, নানা-নানী তাঁদের
নাতি-নাতনীদের বিভিন্ন উপলক্ষ্যে Ñ যেমন গ্রাজুয়েশন-এ, মূল্যবান উপহার (ডায়মন্ড, গাড়ী বা
কটেজ) দেন।
সারাংশ
নৃবিজ্ঞানীরা চারটি মূলনীতির ভিত্তিতে বিয়ে ব্যবস্থার শ্রেণীকরণ করেছেন: বিবাহ সঙ্গী নির্ধারণের ক্ষেত্রে
গোত্রের গুরুত্ব, পতি-পতœী সংখ্যা, পতি কিংবা পতœীর ভাই/বোন বিবাহ সঙ্গী হতে পারে কি না, এবং
বিবাহে মূল্যবান সামগ্রীর আদান-প্রদান। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, অপাশ্চাত্য সমাজগুলোর ভিন্নতা সত্তে¡ও
বিয়ের বন্ধন দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বন্ধন স্থাপন করে। পক্ষান্তরে, পাশ্চাত্য সমাজের ব্যক্তি কেন্দ্রিক ব্যবস্থায়,
বিয়ে হচ্ছে দুই ব্যক্তির মাঝে সম্পর্ক স্থাপন। তবে, মাথায় রাখা জরুরী যে, পাশ্চাত্য সমাজের
প্রতিষ্ঠানাদি ও সংস্কৃতির প্রসার (ঔপনিবেশিকতার মাধ্যমে, উপনিবেশ-উত্তর সময়ে বিশ্বব্যাপী
সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে) অপাশ্চাত্যের সমাজে দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন এনেছে। এই
পরিবর্তন বিয়ের সম্পর্ককে পুনর্গঠিত করেছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক শক্তি
দ্বারা যখন পুঁজিবাদী ব্যবস্থা
প্রবর্তিত হয়, তখন নারীপুরুষের মধ্যকার পূর্বতন বৈষম্য
নতুন আঙ্গিকে গড়ে ওঠে।
এতে লিঙ্গীয়ভাবে পুরুষেরাই
লাভবান হয়: শিক্ষা এবং
আয়করী দক্ষতা অর্জন, চাকরি
প্রাপ্তি, সম্পত্তি ক্রয়।
সঠিক উপরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন -
১। পতি-পতœীর সংখ্যার মূলনীতির ভিত্তিতে বিয়েকে কয়টি শ্রেনীতে ভাগ করা যায়?
ক. ২টি খ. ৩টি
গ. ৪টি ঘ. ৫টি
২। নিচের কোন সমাজে “ধনুক দেয়ার” (মরারহম ঃযব নড়)ি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়?
ক. টোডো খ. টিভ
গ. কুং! গ. সামোয়া
৩। নিচের কোন সমাজে কনে সেবার (নৎরফব ংবৎারপব) - প্রচলন আছে?
ক. টিভ খ. আজটেক
গ. টোডো ঘ. কুং!
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। নৃবিজ্ঞানীরা কিভাবে বিয়ে ব্যবস্থার শ্রেণীকরণ করেছেন?
২। কোন ঐতিহাসিক ঘটনা অপাশ্চাত্য সমাজে বিয়ের সম্পর্ককে পুনর্গঠিত করেছে?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। বিয়ের শ্রেণীকরণের মূলনীতি সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
২। অপাশ্চাত্য সমাজে বিয়ে হয় দুটি পক্ষের মধ্যে, দুটি ব্যক্তির মধ্যে নয়। এই বক্তব্য উদাহরণের
সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]