অজাচার কী?
অজাচার নিষেধাজ্ঞা, বিবাহ-সঙ্গী বাছাইয়ের নিষেধাজ্ঞা এবং মানানসই মিলন Ñ এগুলো বলতে কি বোঝায়?


কিছু জ্ঞাতি সম্পর্ক আছে যাদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ। কড়া নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও যদি এ ধরনের
সম্পর্কের মধ্যে যৌনমিলন ঘটে, তাকে অজাচার (রহপবংঃ) বলা হয়। সকল সমাজে অজাচার ধারণা
বিদ্যমান, অর্থাৎ, কিছু কিছু জ্ঞাতিসর্ম্পকের মধ্যে যৌনমিলন নিষিদ্ধ। সেই অর্থে, অজাচারের ধারণা
বিশ্বব্যাপী (ঁহরাবৎংধষ)। তবে, কোন্ কোন্ জ্ঞাতির মধ্যে যৌনমিলন ঘটলে তাকে অজাচার বলা হবে,
সেই ধারণা সকল সমাজে এক রকম নয়। যৌনমিলনের নিষেধাজ্ঞা এবং বিবাহ-সঙ্গীর নিষেধাজ্ঞা, এ
দুটো ভিন্ন জিনিস, এবং এ ব্যাপারে প্রথমেই স্পষ্ট হওয়া জরুরী। ভিন্নতা এই যে, বিবাহের জন্য নিষিদ্ধ
এমনও জ্ঞাতি থাকতে পারে যাদের সাথে যৌনমিলন ঘটলে তা অজাচার হিসেবে বিবেচিত হয় না।
উদাহরণস্বরূপ, কিছু সমাজে আড়াআড়ি বিয়ে নিষিদ্ধ। কিন্তু যদি ফুপাত ও মামাত ভাই বোনের মধ্যে
যৌনমিলন ঘটে, সেটি অজাচার হিসেবে বিবেচিত হয় না। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, সামাজিকভাবে
আরেকটি ধারণার প্রচলন দেখা যায়: অ-মানানসই মিলন (সরং-সধঃরহম)। এটি কী সে ব্যাপারেও স্পষ্ট
হওয়া জরুরী কারণ তা না হলে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়গুলোকে গুলিয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। নৃবিজ্ঞানীরা অমানানসই মিলন বলতে সে ধরনের মিলন, বা যৌন সম্পর্ক গড়ে ওঠাকে বোঝান, যা অনুমোদিত নয়
কারণ সেগুলো সামাজিক দৃষ্টিতে মানানসই নয়। কিন্তু এ ধরনের মিলন নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ
কোনভাবেই অজাচারের ধারণার সাথে সম্পর্কিত নয়।
নৃবিজ্ঞানের জন্মলগ্ন হতে বহু নৃবিজ্ঞানী অজাচারের প্রসঙ্গে আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং অজাচারের উৎস
নিয়ে নানান নৃবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড় করান। ব্যাখ্যাগুলো খুব ভিন্ন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরস্পর-বিরোধীও।
বিশ্বজনীন সংজ্ঞা দাঁড় করানোর সমস্যা
সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে, নিকট আত্মীয়, যথা মাতা-পুত্র, পিতা-কন্যা, ভাই-বোন, এদের মধ্যে
যৌনমিলন নিষিদ্ধ, এবং এই নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী। কিন্তু সাধারণ এই ধারণা বাস্তবের সাথে পুরোপুরি মেলে
না। নৃবিজ্ঞানীরা মোটামুটি এ ব্যাপারে একমত যে, এই তালিকা থেকে কেবলমাত্র একটি সম্পর্কে যৌনমিলন
ঘটে থাকলে তা বিশ্বব্যাপী অজাচার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে এবং তা হ’ল, মাতা-পুত্র। এ বাদে,
সাধারণভাবে ধরে নেয়া অজাচার নিয়মের লঙ্ঘন, অতীতের কিছু-কিছু সমাজের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়।
যেমন কিনা প্রাচীন মিশরে অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে ভাই এবং বোনের বিয়ের প্রচলন ছিল। প্রাপ্ত তথ্য হতে
অনুমান করা হয়, যেহেতু কন্যা এবং পুত্র উভয়েই উত্তরাধিকার নিয়মানুসারে সম্পত্তি পেত, এই বিবাহ প্রথার
মাধ্যমে পারিবারিক সম্পত্তির অখন্ডতা রক্ষা করা হ’ত। প্রাচীন মিশরের মতনই ভাই-বোন বিয়ের প্রচলন
আরো কিছু সমাজে ছিল: ইনকা সাম্রাজ্যের সময়কালের পেরু, হাওয়াই, আফ্রিকার আজান্দে জনগোষ্ঠী এবং
মাদাগাস্কার এবং মায়ানমার ( পূর্বে বার্মা নামে পরিচিত)। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সকল ক্ষেত্রেই
বিয়েগুলো ছিল অস্থায়ী এবং আনুষ্ঠানিক প্রকৃতির, অথবা উচ্চ সামাজিক শ্রেণী কিংবা অভিজাত শ্রেণীতে
সীমাবদ্ধ ছিল। উপরন্তু লক্ষণীয় যে, নিকট জ্ঞাতির মধ্যে শ্রেণীকরণের মাধ্যমে কিছু-কিছু শ্রেণীর জ্ঞাতি,
বিবাহ-সঙ্গী হিসেবে নিষিদ্ধ ছিল। আবার কিছু কিছু জ্ঞাতি অনুমোদিত ছিল: যেমন, সৎ বোনকে বিয়ে করা
সম্ভব ছিল কিন্তু একই মায়ের পেটের বোনকে নয়, আবার শুধুমাত্র বড় বোন বিবাহ সঙ্গী হতে পারত, ছোট
বোন কিছুতেই নয়। সাধারণভাবে গৃহীত অজাচারের সংজ্ঞায় নৈকট্যের ওপর জোর দেয়া হয়েছে: নিকট
আত্মীয়ের মধ্যে যৌন মিলন ঘটলে তা অজাচার। এই ধারণাটিও বাস্তবতার সাথে মেলে না। এমনও সমাজ
রয়েছে যেখানে বৃহৎ আত্মীয়কুলের মধ্যে যৌন মিলন নিষিদ্ধ। যদি ঘটে, তা অজাচার হিসেবে বিবেচিত।
সকল সমাজে অজাচার ধারণা
বিদ্যমান, অর্থাৎ, কিছু কিছু
জ্ঞাতিসর্ম্পকের মধ্যে যৌনমিলন
নিষিদ্ধ। ...তবে, কোন্ কোন্
জ্ঞাতির মধ্যে যৌনমিলন ঘটলে
তাকে অজাচার বলা হবে, সেই
ধারণা সকল সমাজে এক রকম
নয়।
সাধারণভাবে গৃহীত অজাচারের
সংজ্ঞায় নৈকট্যের ওপর জোর
দেয়া হয়েছে: নিকট আত্মীয়ের
মধ্যে যৌন মিলন ঘটলে তা
অজাচার। এই ধারণাটিও
বাস্তবতার সাথে মেলে না।
এমনও সমাজ রয়েছে যেখানে
বৃহৎ আত্মীয়কুলের মধ্যে যৌন
মিলন নিষিদ্ধ। যদি ঘটে, তা
অজাচার হিসেবে বিবেচিত।
অজাচার সম্বন্ধে প্রথাগত নৃবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
অজাচার নিষেধাজ্ঞার ব্যাখ্যা হিসেবে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয়, মানুষ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে
করে না যেহেতু এতে পরবর্তী প্রজন্মের উপর নেতিবাচক জেনেটিক প্রভাব পড়তে পারে। এবং এ
কারণে অজাচার নিষেধাজ্ঞা মেনে চলা হয়। কিছু নৃবিজ্ঞানীও এ ধরনের ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন, কিন্তু
এটি বহু নৃবিজ্ঞানীর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাঁদের প্রশ্ন হচ্ছে: এই প্রথা অনুসরণ করলে যে
দীর্ঘমেয়াদে মনুষ্য প্রজাতি জেনেটিকেলি ক্ষতিগ্রস্তহতে পারে (বংশগত অসুস্থতা এবং সেকারণে অধিক
হারে মৃত্যুবরণ) Ñ এই তথ্য বিভিন্ন সমাজের মানুষজন কিভাবে জানলেন? যে সকল নৃবিজ্ঞানী বলে
থাকেন জেনেটিক কারণে অজাচারের নিষেধাজ্ঞা পালন করা হয়ে থাকে Ñ তাঁরা এই যৌক্তিক আপত্তির
কোন সদুত্তর দিতে পারেন না। শুধু তাই নয়, যাঁরা এই অবস্থানের সমালোচনা করে থাকেন, তাঁরা
আরো কিছু জিজ্ঞাসা তোলেন, যেমন, যদি সকল সমাজের সকল মানুষ এটা জেনেই থাকে যে নিকট
আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে করলে পরবর্তী প্রজন্মের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি হতে পারে তাহলে কেন কিছু সমাজে
কাজিন বিবাহ প্রচলিত? কাজিন বিবাহ দুই ধরনের: “আড়া-আড়ি” এবং “সমান্তরাল”। “আড়া-আড়ি
কাজিন” বিয়ে বলতে বোঝায় ফুপাতো-মামাতো ভাই বোনের বিয়ে। চাচাতো এবং খালাতো ভাই বোন
“সমান্তরাল কাজিন”, এবং এদের মধ্যে বিয়ে বহু সমাজেই নিষিদ্ধ। কিন্তু কথা হচ্ছে, আড়া-আড়ি হোক
কি সমান্তরাল, জৈবিক দিক থেকে দুই ধরনের কাজিনই সমানভাবে নিকট আত্মীয়। তবে এটা উল্লেখ
করা জরুরী যে নিকট আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে হলে তা জেনেটিকেলি ক্ষতিকর, সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা
এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নন। বৈজ্ঞানিক প্রমাণাদির চূড়ান্তঅভাব সত্তে¡ও মরগান এবং মেইনের তত্তে¡র
সাহায্যে জেনেটিক ব্যাখ্যা উনিশ শতকে জনপ্রিয়তা লাভ করে। উনবিংশ শতকের অপর কিছু
তাত্তি¡কগণের মতে Ñ যেমন স্পেনসার এবং লুববক Ñ অজাচার নিষেধাজ্ঞার উৎস হচ্ছে প্রাচীনকালে
জঙ্গী উপজাতিদের জোরপূর্বক কনে-আনার প্রথা। ডুর্খাইমের মতে অজাচার নিষেধাজ্ঞা আরো
ব্যাপকতর নিষেধাজ্ঞার সাথে যুক্ত: ঋতুস্রাবের রক্ত। একই গোত্রের সদস্যের জন্য গোত্রের সদস্যের
রক্তের সংস্পর্শে আসা নিষিদ্ধ। ডুর্খাইমের মতে অজাচার নিষেধাজ্ঞার উৎসের মূলে আছে এই বিশেষ
নিষেধাজ্ঞা।
মনস্তাত্তি¡ক তত্তে¡র সাহায্যেও অজাচার নিষেধাজ্ঞার ব্যাখ্যা দাঁড় করানো হয়েছে । যেমন কিনা হ্যাভেলক
এলিস এবং ওয়েস্টারমার্ক-এর তত্ত¡। এলিস এবং ওয়েস্টারমার্কের মতে, “প্রাকৃতিক বিমুখতা”
(হধঃঁৎধষ ধাবৎংরড়হ) হচ্ছে অজাচার নিষেধাজ্ঞার কারণ। ছোটবেলা থেকে একসাথে বড় হয়ে উঠলে
অথবা যাদের সাথে জন্ম থেকে পরিচয়, তাদের প্রতি যৌন আকর্ষণ বোধ করাটা, এলিস এবং
ওয়েস্টারমার্কের মতে, অস্বাভাবিক। এ ধরনের তত্ত¡ও সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। প্রথমত, যদি
বিমুখতা স্বাভাবিকই হয়ে থাকে তাহলে কেনই বা নিষেধাজ্ঞা? নিষেধাজ্ঞার তো তাহলে প্রয়োজন পড়ে
না। দ্বিতীয়ত, কিছু নৃবিজ্ঞানীর মতে: কিছু সমাজে বহু জ্ঞাতি বিবাহ-সঙ্গী হিসেবে নিষিদ্ধ যাদের সাথে
ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ঘটেনি। এটি স্বাভাবিক বিমুখতা তত্ত¡ দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। আবার, এও
ব্যাখ্যা করা যায় না কেন কিছু সমাজে এমন ধরনের জ্ঞাতিতে বিবাহ অনুমোদিত যাদের সাথে ছোটবেলা
থেকে পরিচয় ( যেমন কিনা আড়া-আড়ি কাজিন বিয়ে )।
একই ধরনের আপত্তি তোলা হয়েছে মনস্তাত্তি¡ক তত্তে¡র ক্ষেত্রে। মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েডের মতে ঘনিষ্ঠ
সম্পর্কের মধ্যে বিমুখতা নয়, “আকর্ষণ”-ই স্বাভাবিক। তাঁর তত্ত¡ মতে অজাচার নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন
দেখা দেয় যেহেতু মানুষ স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকে পড়ে অজাচারের প্রতি। অজাচার জন্ম দিতে পারে দ্ব›দ্বসংঘাতের; একারণেই অজাচার সকল সমাজে নিষিদ্ধ। ফ্রয়েড এ প্রসঙ্গে টেনে এনেছিলেন পিতৃ-হত্যা
প্রসঙ্গ: তাঁর মতে, মাতাকে যৌনভাবে পেতে চাওয়ার উদ্দেশ্যেই আদিযুগে পিতাকে হত্যা করা হয়।
পিতাকে হত্যা করার অপরাধ বোধ থেকেই অজাচার প্রথার জন্ম।
বিংশ শতকের নৃবিজ্ঞানে অজাচারের কারণসমূহ খোঁজার প্রচেষ্টা ভিন্ন মোড় নিয়েছিল। গবেষকগণ
সমাজত্ত¡ীয় (ংড়পরড়ষড়মরপধষ) ব্যাখ্যা খোঁজেন। অবশ্য, তার মানে এই নয় যে তাঁরা জৈবিক,
মনোবৈজ্ঞানিক অথবা বিবর্তনবাদী যুক্তি উপেক্ষা করেন। নৃবিজ্ঞানী ম্যালিনোস্কি এবং অন্যান্যদের মতে,
অজাচার নিষেধাজ্ঞা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই বিধি-নিষেধগুলো পালন না করা হলে একক পারিবারিক
সম্পর্ক Ñ বিশেষ করে কর্তৃত্বের সম্পর্ক Ñ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যেতে পারে। অথবা, যদি এ ধরনের
তবে এটা উলে- খ করা
জরুরী যে নিকট আত্মীয়ের
মধ্যে বিয়ে হলে তা
জেনেটিকেলি ক্ষতিকর, সে
ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনো
পুরোপুরি নিশ্চিত নন।
যৌনমিলনের ফলে সন্তান জন্মায় তাহলে জ্ঞাতি পদাবলী ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে। কিন্তু
সমালোচকরা এই তত্তে¡র ত্রæটি দেখিয়ে দিতে দ্বিধা করেননি। তাঁদের কথা হল, কর্তৃত্ব-সম্পর্কের ভাংচুর
অথবা জ্ঞাতি পদাবলীর ওলট-পালট Ñ এ সব তো পরের ব্যাপার। ম্যালিনোস্কি মূলত যা বলতে
চেয়েছেন তা হ’ল, একক পরিবার গড়ে উঠেছে অজাচার নিষেধাজ্ঞা থেকে। এবং সেক্ষেত্রে, মৌলিক
এবং কেন্দ্রীয় প্রশ্ন থেকেই যায়, কেনই বা অজাচার নিষিদ্ধ?
অজাচার সম্বন্ধে লেভি-স্ট্রসের ব্যাখ্যা
লেভি-স্ট্রস তাঁর দি এলিমেন্টারি স্ট্রাকচারস অফ কিনশিপ (১৯৬৯) গ্রন্থে, টায়লরের মূলনীতি ধরে এগোন।
টায়লর বলেছিলেন, আদিম সমাজে অজাচার নিষেধাজ্ঞা বিবাহ-প্রথার সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। টায়লরের
নীতি হল: “হয় বহির্গোত্রে বিয়ে কর অন্যথায় বহির্গোত্র দ্বারা খুন হও”। লেভি-স্ট্রস যদিও বিবাহ নিষেধাজ্ঞা
এবং অজাচার-নিষেধাজ্ঞা, এই দুইয়ের মধ্যে তফাৎ টানছেন, তিনি টায়লরের মতই এ ধারণার প্রবক্তা যে,
একটি অপরটির সাথে যুক্ত। তার মতে, অজাচার নিষেধাজ্ঞা একই সাথে প্রাকৃতিক (হধঃঁৎধষ) এবং
সাংস্কৃতিক (পঁষঃঁৎধষ)। প্রাকৃতিক, কারণ এই নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজনীন। আবার সাংস্কৃতিক, কারণ এটা শুধুমাত্র
নিয়ম না, এই নিয়ম এক সমাজ হতে আরেক সমাজে ভিন্ন। লেভি-স্ট্রসের মতে, এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে
লুকিয়ে আছে মনুষ্য সমাজ ও সংস্কৃতির চাবিকাঠি। চাবিকাঠি এই অর্থে যে, পরিবারের ভিতরে বিয়ে করা যদি
অজাচার (নিষিদ্ধ) হয়, তার অর্থ পরিবারের বাইরে বিয়ে করা বাঞ্ছনীয়। একটি দলের অপর দলের সাথে
নারী বিনিময় (বীপযধহমব ড়ভ ড়িসবহ) সৃষ্টি করে মনুষ্য সমাজের মধ্যেকার আদান-প্রদানের ব্যবস্থা
(ংুংঃবস ড়ভ ৎবপরঢ়ৎড়পরঃু)। এই আদান-প্রদানের ব্যবস্থার সাহায্যে সমাজ ও সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে যার মূলে
রয়েছে যোগাযোগ এবং বিনিময়। লেভি-স্ট্রসের ভাষায়, “ঃযব রহপবংঃ ঢ়ৎড়যরনরঃরড়হ বীঢ়ৎবংংবং ঃযব
ঃৎধহংরঃরড়হ ভৎড়স ঃযব হধঃঁৎধষ ভধপঃ ড়ভ পড়হংধহমঁরহরঃু ঃড় ঃযব পঁষঃঁৎধষ ভধপঃ ড়ভ ধষষরধহপব” (বিবাহ
করা একটি প্রাকৃতিক সত্য। বিবাহের মাধ্যমে মৈত্রী স্থাপন করা একটি সাংস্কৃতিক সত্য। অজাচার নিষেধাজ্ঞার
মাধ্যমে প্রকাশ পায় এক ধাপ হতে আরেক ধাপে উত্তরণ)। লেভি-স্ট্রস অজাচার সমস্যার আলোচনার সূত্র
ধরেই মনুষ্য সমাজ কি কি ধরনের মৈত্রীবন্ধন স্থাপন করে, এই আলোচনায় চলে যান। এ সম্পর্কে আপনারা
২ নং ইউনিটের ৫ নং পাঠে জেনে এসেছেন। কিন্তু লেভি-স্ট্রসের তত্ত¡ও একই সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে:
যৌন সম্পর্ক এবং বিবাহ সম্পর্ক, এ দুটো এক জিনিস নয়, এবং যেহেতু এ দুটো একই জিনিস নয় সে
কারণে একটার সাহায্যে আরেকটার ব্যাখ্যা করা সম্ভব না।
এর আগের পাঠ (৪ নং ইউনিটের ১ নম্বর পাঠ), যেটা বিয়ে সংক্রান্ত, তাতে উল্লেখ্য করা হয়েছে,
সা¤প্রতিককালের নৃবিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণা কাজে এবং লেখালেখিতে বিয়ের কোন সর্বজনীন সংজ্ঞা খোঁজার
পরিবর্তে ঐতিহাসিক নির্দিষ্টতার ওপর জোর দিচ্ছেন। ঠিক একইভাবে, অজাচার বিষয়ে যাঁরা বর্তমানে কাজ
করছেন, তাঁরাও অজাচারের বিশ্বজনীন উৎসের সন্ধান না করে, নির্দিষ্ট সমাজে, নির্দিষ্ট সময়কালে অজাচার
বলতে কি বোঝায়, কিভাবে ঘটে থাকে, এসব বিষয়াদি নিয়ে কাজ করছেন।
সারাংশ
অজাচার কি, এবং অজাচার নিষেধাজ্ঞা, বিবাহ-সঙ্গী বাছাইয়ের নিষেধাজ্ঞা, মানানসই মিলনের ধারণা Ñ
এগুলোর ভিন্নতা এই পাঠে আলোচিত হয়েছে। অজাচারের ধারণা অতীত এবং বর্তমানের সকল সমাজে
থাকলেও, কোন্ কোন্ সম্পর্কে যৌন-মিলন নিষিদ্ধ, তার ধারণা ও অনুশীলন সকল সমাজে একরকম
নয়। এ কারণে অজাচারের কোন বিশ্বব্যাপী সংজ্ঞা এ পর্যন্তদাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। অনেকের মতে,
ভবিষ্যতেও হবে না। অজাচার কেন নিষিদ্ধ এ বিষয়ে কেবলমাত্র নৃবিজ্ঞানীরা নন, অন্যান্য জ্ঞানকান্ডের
চিন্তুকেরাও মনোনিবেশ করেছেন, তাত্তি¡ক ব্যাখ্যা তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। এই ব্যাখ্যাগুলো গুরুত্ব
দিয়েছে অজাচার-নিষেধাজ্ঞার উৎসের উপর। ব্যাখ্যাদানকারীরা এপর্যন্তঅতীত এবং বর্তমান সকল
সমাজের ক্ষেত্রে কার্যকরী একটিমাত্র উৎস খোঁজার চেষ্টা করেছেন। এই ব্যর্থতা থেকে বর্তমানের
নৃবিজ্ঞানীদের ধারণা জন্মেছে যে, নির্দিষ্টতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে অজাচারের কারণ খোঁজা
অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
অজাচার নিষেধাজ্ঞা একই সাথে
প্রাকৃতিক (হধঃঁৎধষ) এবং
সাংস্কৃতিক (পঁষঃঁৎধষ)।
প্রাকৃতিক, কারণ এই নিষেধাজ্ঞা
বিশ্বজনীন। আবার সাংস্কৃতিক,
কারণ এটা শুধুমাত্র নিয়ম না,
এই নিয়ম এক সমাজ হতে
আরেক সমাজে ভিন্ন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন -
১। মনস্তাত্তি¡ক তত্তে¡র সাহায্যে অজাচার নিষেধাজ্ঞা ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন কোন দুজন তাত্তি¡ক?
ক. মীড এবং ডগলাস খ. স্পেনসার এবং লুববক
গ. হ্যাভেলক এলিস এবং ওয়েস্টারমার্ক ঘ. উপরের কেউই নন
২। লেডি-স্ট্রক এর মতে অজাচার বিষেধাজ্ঞা একই সাথে ---------------------------- ।
ক. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক খ. প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক
গ. প্রাকৃতিক ও সামাজিক ঘ. উপরের কোনটিই নয়
৩। “একক পরিবার গড়ে উঠেছে আজাচার নিষেধাজ্ঞা থেকে” - উক্তিটি কার?
ক. ব্রনিম্ন ম্যালিনোস্কি খ. লুইস হেনরী মর্গান
গ. ক্লদ লেডি-স্ট্রস ঘ. ক্লিফোর্ড গিয়ার্টজ
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। অজাচার কী?
২। অজাচার নিষেধাজ্ঞা, বিবাহ-সঙ্গী বাছাইয়ের নিষেধাজ্ঞা এবং মানানসই মিলন Ñ এগুলো বলতে কি
বোঝায়?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। অজাচারের বিশ্বব্যাপী সংজ্ঞা দাঁড় করানো অসম্ভব। কেন, তা আলোচনা করুন।
২। অজাচার সংক্রান্তলেভি-স্ট্রসের চিন্তা-ভাবনায় “প্রকৃতি” এবং “সংস্কৃতি”-র ধারণার গুরুত্ব আলোচনা
করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]