পদসোপানিক সমাজ কাকে বলে?
সমতা ভিত্তিক সমাজের সাথে পদসোপানিক সমাজের পার্থক্য দেখান।


 বর্তমান সমাজে স্তরায়নের ধরন
এই ইউনিটের শুরুর দুই পাঠ থেকে আপনারা জানেন যে বয়স এবং লিঙ্গ ভিত্তিক বিভাজন সমাজে
আছে। এই বিভাজন নানা সমাজে এবং নানা কালে বিভিন্ন রকম। আপনারা এও জেনেছেন যে, এই
বিভাজন কখনো কখনো নিছক সংঘকেন্দ্রিক হলেও, কখনো কখনো দায়িত্ব ভাগ বণ্টন করে নেয়ার জন্য
হলেও অনেক ক্ষেত্রেই বৈষম্যমূলক বা ভেদাভেদমূলক। অর্থাৎ, অনেক ক্ষেত্রেই এই বিভাজনের মধ্য
দিয়ে সদস্যদের কোন কোন অংশের প্রতি বঞ্চনা হয়ে থাকে। নৃবিজ্ঞানীরা সমাজে এই ভেদাভেদ বা
বৈষম্য নিয়ে গোড়া থেকেই মনোযোগ দিয়েছেন। বৈষম্যের ভিত্তিতে তিন ধরনের সমাজকে চিহ্নিত
করেছেন নৃবিজ্ঞানীরা। সেগুলো হচ্ছে: সমতা ভিত্তিক সমাজ (বমধষরঃধৎরধহ ংড়পরবঃু), পদসোপানিক
সমাজ (ৎধহশ ংড়পরবঃু) এবং শ্রেণী ভিত্তিক সমাজ (পষধংং ংড়পরবঃু)। ভেদাভেদের ক্ষেত্রে কেবল বয়স
বা লিঙ্গ কাজ করে তা নয়। কোন সমাজের সদস্যদের মধ্যে বৈষম্য আছে কিনা কিংবা কিভাবে বৈষম্য
কাজ করছে তা বোঝার জন্য নৃবিজ্ঞানীরা তিনটি ধারণা ব্যবহার করেছেন Ñ আর্থিক সম্পদ, ক্ষমতা
এবং মর্যাদা বা সম্মান। এগুলির ভিত্তিতেই সমাজের সদস্যদের মধ্যে ভেদাভেদ কাজ করে।
সমতা ভিত্তিক সমাজের সদস্যদের মধ্যে সম্পদ, মর্যাদা এবং ক্ষমতার কোন ভেদাভেদ কাজ করে না।
নৃবিজ্ঞানীরা অবশ্য পরিষ্কার করেছেন, এর মানে এই নয় যে কোন ধরনের বাড়তি মর্যাদা কেউই লাভ
করেন না এসব সমাজে। মূল ব্যাপার হচ্ছে এই ধরনের সমাজে কোন সদস্য সম্পদ, মর্যাদা বা ক্ষমতা
কুক্ষিগত করে রাখতে পারেন না, কিংবা বেশি পরিমাণে দখল নিতে পারেন না। অবশ্যই সামাজিক
মর্যাদার কতগুলি জায়গা আছে। যেমন: বিভিন্ন কাজে নানা ধরনের দক্ষতা থাকলে তা সেই সমাজের
মধ্যে বাড়তি সম্মান বয়ে আনে। শিকার করা কিংবা অস্ত্র বানানো ইত্যাদি। এছাড়া অভিজ্ঞতার কারণে
সম্মান পেতে পারেন মুরুব্বীরা। আবার কেউ যদি সুবক্তা হন, কোন একটা ব্যাপার স্পষ্ট করতে পারেন
Ñ তাঁকেও অন্য সদস্যরা কদর করে থাকেন। কিন্তু এ ধরনের সমাজে কোন সদস্যেরই বেঁচে থাকার
প্রয়োজনীয় জিনিস পাবার ক্ষেত্রে অন্য কেউ বাধা দেন না। কেউ কাউকে শোষণ করা বা ঠকানোর চেষ্টা
করেন না। জীবন ধারণের মৌলিক সব দ্রব্যই এখানে সকল সদস্য সমান ভাবে ভোগ করে থাকেন।
সেটাই সামাজিক ব্যবস্থা। এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই এই ধরনের সমাজকে সমতা ভিত্তিক সমাজ বলা হয়ে
থাকে। এখানে বয়স বা লিঙ্গ ভিত্তিক সামাজিক সংঘ সাধারণত থাকে। কিন্তু সেগুলি কোনটার থেকে
কোনটা বাড়তি সুবিধা নিয়ে জীবন যাপন করে না। কিংবা যাঁরা সমাজে নিজেদের দক্ষতা-যোগ্যতার
কারণে বাড়তি সম্মান লাভ করেন Ñ তাঁরা সেই সম্মানের জোরে কোন কিছু বাড়তি ভোগদখল করেন
না।
এই ধরনের সমতা ভিত্তিক সমাজ নৃবিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন তাঁদের গবেষণার সময়কালে। প্রথম
যুগের নৃবিজ্ঞানীরা সরল সমাজে গবেষণা করেছেন। এই সব সরল সমাজের বড় একটা অংশই সমতা
ভিত্তিক ব্যবস্থাতে পরিচালিত হ’ত। ইউরোপীয় পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থা কায়েম হবার আগে সেগুলো
বজায়ও ছিল। নৃবিজ্ঞানীদের বর্ণনা মতে শিকারী-সংগ্রহকারী সমাজের প্রায় সবগুলিতেই এই ধরনের
ব্যবস্থা ছিল। সমাজের সকল সদস্যদের খাদ্য ভাগাভাগি করে খাবার বাধ্যবাধকতা ছিল। আর কোন
কিছুর উপরই কেউ কোন ধরনের স্থায়ী কোন দখল তৈরি করতে পারতেন না। তবে কিছু কিছু শিকারীসংগ্রহকারী সমাজ তাঁরা প্রত্যক্ষ করেছেন যেখানে সমতা ভিত্তিক সমাজের বদলে পদসোপানিক সমাজ
ব্যবস্থা চালু ছিল। যেমন: ইনুইতদের কিছু কিছু দলের মধ্যে সম্পদ জড়ো করবার প্রক্রিয়া তৈরি হচ্ছিল।
যে সব দলের কাছে তিমি শিকার খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাঁদের কেউ কেউ নৌকা, হাতিয়ার ইত্যাদির
মালিক হয়েছিল এবং শিকারে অন্যদের চেয়ে বাড়তি সুবিধা পেত। মার্কিন ভূখন্ডের উত্তর-পশ্চিম
উপক‚লীয় মৎসজীবী জাতির মধ্যেও সমতা ভিত্তিক সমাজ চালু ছিল না, পদসোপানিক ব্যবস্থা চালু
ছিল।
বৈষম্যের ভিত্তিতে তিন ধরনের
সমাজকে চিহ্নিত করেছেন
নৃবিজ্ঞানীরা। সেগুলো হচ্ছে:
সমতা ভিত্তিক সমাজ
(বমধষরঃধৎরধহ ংড়পরবঃু),
পদসোপানিক সমাজ (ৎধহশ
ংড়পরবঃু) এবং শ্রেণী ভিত্তিক
সমাজ (পষধংং ংড়পরবঃু)।
সমতা ভিত্তিক সমাজের
সদস্যদের মধ্যে সম্পদ, মর্যাদা
এবং ক্ষমতার কোন ভেদাভেদ
কাজ করে না।
কী বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে কোন সমাজকে সমতা ভিত্তিক, পদসোপানিক কিংবা শ্রেণী সমাজ বলা হয়ে
থাকে তা একটা ছকের মাধ্যমে দেখানো সম্ভব। যদিও এই ছকের মাধ্যমে বিষয়টাকে যত সহজ করে
ফেলা হয়েছে বাস্তবে সমাজ জীবনে বৈষম্য তার থেকে অনেক জটিল বিষয়। কিন্তু ছকটির মাধ্যমে
বুঝতে সুবিধা হবে নৃবিজ্ঞানের বই-পুস্তকে সমাজের ভেদাভেদ নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গ।
চিত্র - ১ : বিভিন্ন সমাজে সম্পদ, ক্ষমতা ও মর্যাদা
সমাজের কোন অংশের কোন বিশেষ দখল আছে কিনা
সমাজের ধরন আর্থিক সম্পদ ক্ষমতামর্যাদা/সম্মান
সমতা ভিত্তিক সমাজ নেই নেই নেই
পদসোপানিক সমাজ নেই নেই আছে
বর্ণ এবং শ্রেণী ভিত্তিক সমাজ আছে আছে আছে
(এম্বার এবং এম্বার ১৯৯০)
পদসোপানিক ব্যবস্থা বলতে বোঝায় যে ব্যবস্থায় মানুষে মানুষে মর্যাদার পার্থক্য থাকে। পদসোপানিক
সমাজের সদস্যরা পরস্পর মর্যাদার দিক থেকে ভিন্ন অবস্থানে থাকলেও তাঁদের মধ্যে সম্পদের মৌলিক
কোন তারতম্য থাকে না। যে সকল সমাজে নৃবিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন সেখানে চীফ বা প্রধানের পদ
দেখা গেছে। তাঁর মর্যাদাও সমাজে স্বীকৃত। তিনি মহাভোজ এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জিনিসপত্র
পুনর্বণ্টন করে থাকতেন। এই দায়িত্বটা সমাজে খুব সম্মানজনক হিসেবে গণ্য। পুনর্বণ্টন বলতে একটা
বিনিময় ব্যবস্থা আপনারা অর্থনৈতিক সংগঠন অংশে দেখতে পারবেন। যদিও এই সকল সমাজে চীফের
পদ খুবই সম্মানজনক ছিল, কিন্তু তা সত্তে¡ও তাঁরা কোনভাবেই খাদ্য বা দ্রব্যাদি নিজের জন্য সঞ্চয় করে
থাকেন না। জীবন যাপনের মৌলিক অর্থ কোনক্রমেই ভিন্ন নয় চীফ এবং সাধারণ মানুষজনের মধ্যে।
পদসোপানিক সমাজে চীফ বা মুখিয়ার পদ অনেক মর্যাদাসম্পন্ন। কেবল তাই নয়, বরং জ্ঞাতি সম্পর্কের
ক্ষেত্রেও মর্যাদার তারতম্য কাজ করে। চীফের সবচেয়ে কাছের আত্মীয় স্বজনেরা বংশানুক্রমিকভাবে
বেশি মর্যাদা লাভ করে থাকেন। কোন কোন ক্ষেত্রে জন্ম কার আগে হচ্ছে সেই বিচারেও মর্যাদার
তারতম্য কাজ করতে পারে।
অধিকাংশ পদসোপানিক সমাজ পশুপালন এবং চাষবাসকেন্দ্রিক বলে জানা যায়। তবে কিছু সাধারণ
পদসোপান অনেক শিকারী সমাজেও লক্ষ্য করেছেন নৃবিজ্ঞানীরা। সবচেয়ে জটিল ধরনের পদসোপানিক
ব্যবস্থা পাওয়া গেছে মার্কিন ভূখন্ডের উত্তর-পশ্চিম উপক‚লের জাতিসমূহের মধ্যে। এসব সমাজের
সদস্যদের অবস্থানের মধ্যে মর্যাদার ভেদাভেদ গভীরভাবে ঠিক করা থাকে। নূটকাদের মধ্যে সমস্ত
আর্থিক সম্পদ দেখভাল করার দায়িত্ব থাকে আলাদা আলাদা। এই দায়িত্ব সব সময় বড় ছেলের উপর
বর্তায়। মর্যাদার এই পার্থক্য ধরা পড়ে কিছু আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। যেমন: বিশেষ ভাবে নাম
ব্যবহার করা, কোন একটা উৎসবে বিশেষ দায়িত্ব পালন, বিশেষ কোন পোশাক পরা ইত্যাদি। তবে
কেবল চীফ বা মুখিয়াই কোন অলঙ্কার পরতে পারেন। কোন জ্ঞাতি দলের প্রধান আর্থিক ব্যবস্থাপনার
দায়িত্বের কারণে কিছু বাড়তি প্রতীকী সুবিধা পেতে পারেন। যেমন সামুদ্রিক কোন মাছের মুড়ো, কম্বল
কিংবা পশম। এভাবে যে দ্রব্যগুলো পান সেগুলোই তিনি আবার ‘পটল্যাচ’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্যদের
মাঝে বিলিয়ে দেন। (পটল্যাচ প্রথার বিস্তারিত আলোচনা ইউনিট ৬-এর ৩নং পাঠে পাবেন।)
কাছাকাছি ধরনের পদসোপানিক ব্যবস্থা দেখা যায় তাহিতিদের মধ্যে। এই সমাজে চীফের সঙ্গে
আত্মীয়তার সূত্র ধরে পদসোপান নির্ধারিত। এই মর্যাদাভেদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় অর্থ
আছে তাহিতিদের মাঝে। সেখানে ভাবা হ’ত সমাজের প্রত্যেক মানুষেরই একটা অলৌকিক শক্তি আছে
পদসোপানিক ব্যবস্থা বলতে
বোঝায় যে ব্যবস্থায় মানুষে
মানুষে মর্যাদার পার্থক্য থাকে।
... সদস্যরা পরস্পর মর্যাদার
দিক থেকে ভিন্ন অবস্থানে
থাকলেও তাঁদের মধ্যে সম্পদের
মৌলিক কোন তারতম্য থাকে
না।
Ñ মানা। এই মানা কার কতটা থাকবে তা নির্ভর করে তার পদমর্যাদার ওপর। চীফের সবচেয়ে
নিকটাত্মীয়দের মানা সবচেয়ে বেশি থাকবে। কিছু পলিনেশীয় দ্বীপে সর্বোচ্চ প্রধানকে সবকিছু থেকে
আলাদা রাখা হ’ত। এমনকি তিনি এমন এক ভাষা ব্যবহার করতেন যা সমাজের অন্যরা ব্যবহার করবার
অনুমতি পেতেন না। মেলানেশিয়ার কিছু দ্বীপে উঁচু মর্যাদার কাউকে সম্মান প্রদর্শন করবার নজির আছে
মাথা নিচু করে। যদি প্রধান দাঁড়িয়ে থাকেন তাঁর সামনে দিয়ে যাবার সময়ে অন্যরা মাথা নিচু করে
সম্মান দেখাবেন। সেটাই রেওয়াজ। কোন কোন পদসোপানিক সমাজে চীফকে দেখে মনে হতে পারে
তিনি আসলেই বোধহয় সম্পদশালী। তাঁদের বাসস্থান বড় হতে পারে, কিছু দ্রব্যাদি বাড়তি থাকতে
পারে। অনেক সময় হয়তো সমাজের অন্যরা চীফকেই জমির ‘মালিক’ বলছেন। কিন্তু তাঁরা সকলেই
সেই জমি ব্যবহার করতে পারতেন। আর এই শব্দ দিয়ে আক্ষরিক অর্থেই তাঁকে মালিক বোঝায় না।
এটা সম্মান দেখানোর জন্য। আবার তাঁর বড় আবাসস্থান আছে এই কারণে যে সেখানে ভোজের জন্য
কিংবা অন্য কোন উৎসবের জন্য ঘর ব্যবহার করা হয়।
পদসোপানিক সমাজ বলতে যে সকল অ-ইউরোপীয় সমাজের কথা বলা হয়েছে সেখানে মর্যাদার
ভেদাভেদ আছে, কিন্তু সমাজে এক দল মানুষ অন্য দলকে শোষণ করছে না। কিংবা কারো পক্ষে
সম্পদের পাহাড় বানাবার সুযোগ নেই। ফলে স্তর বিন্যস্তবা শ্রেণী বিভক্ত সমাজের চেয়ে এই ধরনের
সমাজ স্পষ্টভাবে স্বতন্ত্র।
বর্তমান বিশ্বে মর্যাদার ভেদাভেদ
সামাজিক বিজ্ঞানের মধ্যে একটা জনপ্রিয় ধারণা আছে। সেটা হ’ল: সম্পদের ভিত্তিতে সমাজে যে
ভেদাভেদ তা দিয়েই শিল্পভিত্তিক সমাজের বৈষম্য বোঝা যাবে। কিন্তু শিল্পভিত্তিক সমাজের সকল বৈষম্য
সম্পদ দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়। সামাজিক মর্যাদার অত্যন্তশক্তিশালী চর্চা শিল্পভিত্তিক সমাজে রয়েছে।
গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় আধুনিক সমাজেই বরং মর্যাদার মাধ্যমে ভেদাভেদ অত্যন্ততীব্র।
আগের পাঠগুলোতে আপনারা নারী-পুরুষের বৈষম্য এবং বয়সের ভিত্তিতে ভেদাভেদ সম্পর্কে আলোচনা
করেছেন। এখানে সেই প্রসঙ্গ মনে রেখে আলোচনা করা সুবিধাজনক হবে।
প্রথমেই আমরা চাকুরির ব্যবস্থার দিকে মনোযোগ দিতে পারি। পৃথিবীতে এখন সবচাইতে বেশি ব্যয়
করা হয় সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার জন্য। আর সামরিক বাহিনী হচ্ছে সবচেয়ে নিয়ন্ত্রিত একটা
ব্যবস্থা। এখানে প্রত্যেকটা পদের সাথে অন্য পদের প্রভেদ স্পষ্ট করে দেখানো আছে। সাধারণ
সৈনিকরা সকল সময় অফিসারের হুকুম পালন করেন। এক্ষেত্রে তাঁর নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন মূল্য
থাকে না। এমনকি নিশ্চিত মৃত্যুর সম্ভাবনা জেনেও কোন দায়িত্ব পালন করতে হবে যদি সেটা
অফিসারের আদেশ হয়। অফিসারদের মধ্যেও আবার পদমর্যাদার ভেদাভেদ আছে। সকল বয়োকনিষ্ঠ
অফিসার তাঁর ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তার আজ্ঞাবাহী থাকেন। এভাবে কোন দেশের সমগ্র সামরিক বাহিনী একটা
পিরামিডের আকার ধারণ করে। এর সর্বোচ্চ স্থানে থাকেন যিনি ঐ দেশের সামরিক বাহিনীর প্রধান।
যদি দুই দেশের সামরিক বাহিনী একত্রে কোন অভিযানে অংশ নেয় তাহলে দুর্বল শক্তির দেশের
সামরিক বাহিনীর সদস্যরা একই মর্যাদায় থাকলেও সবল দেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের অধীনস্ত
হয়ে পড়েন। সামরিক বাহিনীর মধ্যকার মর্যাদার প্রসঙ্গ খুব বিশেষ কিছু মনে হতে পারে। কিন্তু আধুনিক
সমাজের যে কোন চাকুরিতেই এই পদসোপানিক ব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায়। তা সে ব্যাঙ্ক হোক, বীমা হোক
আর, শিক্ষায়তনের কোন কাজ হোক। সকল ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট কিছু আচরণ বিধি লিখিতভাবে বা
অলিখিতভাবে থাকে। এগুলিকে সাধারণ ভাষায় আদব-কায়দা হিসেবে বলা হয়। এই আলোচনা হচ্ছে
একই ধরনের আর্থিক সম্পদের মানুষজনের কথা বিবেচনা করে। চাকুরি যদি শ্রমিকের হয় তাহলে
মর্যাদার অবস্থান অনেক নিচে।
এসব সমাজে মর্যাদার ভেদাভেদ
আছে, কিন্তু সমাজে একদল
অন্যদলকে শোষণ করছে না।
আধুনিক সমাজে ... মমাধ্যমে ভেদাভেদ অত
বাংলাদেশের মতন একটি প্রান্তিক পুঁজিবাদী দেশে আসা যাক। আমাদের সমাজে একটা ধারণা চালু
আছে যেটা গভীরভাবে মর্যাদা কেন্দ্রিক। সেটা হচ্ছে ‘খান্দান’। এটা দিয়ে সাধারণভাবে বংশ মর্যাদা
বোঝানো হয়ে থাকে। সামাজিক মেলামেশা এবং সম্পর্ক তৈরিতে খান্দানের ধারণা অত্যন্তশক্তিশালী।
কাউকে হেনস্তা করবার জন্য বলা হয়ে থাকে ‘দেখতে হবে না কোন্ বংশ থেকে এসেছে!’ বংশ মর্যাদা
মাপার কতগুলো প্রচলন আছে। একটা হচ্ছে কাদের পরিবার বা বংশ কত আগের ‘জমিদার’ কিংবা
সম্পদশালী। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখানে পিতৃবংশের কথা ভাবা হয়ে থাকে। তবে মাতৃবংশের যদি
সম্পদশালী অতীত থাকে সেটাও হিসেব করা হয়ে থাকে মাঝে মধ্যে। যদিও ব্রিটিশ কালে জমিদার
বলতে ব্রিটিশদের অনুগত কিছু মানুষজনই ছিল তবু এটা তেমন আলোচনায় আসে না। খান্দান বা বংশ
মর্যাদা মাপামাপির ক্ষেত্রে গত তিন চার দশকে আরও কিছু উপকরণ চালু হয়েছে। যেমন: চাকুরি কিংবা
শিক্ষা। কোন্ পরিবার কত আগে থেকে ‘সম্মানজনক’ চাকুরি করছেন তার ভিত্তিতে সেই পরিবারের বংশ
মর্যাদা ধরে নেয়া হয়ে থাকে। প্রথম পর্যায়ে চাকুরির মর্যাদা সরকারী চাকুরির দিকে বেশি ছিল।
পরবর্তীতে উচ্চ বেতনের বেসরকারী চাকুরি আরও মর্যাদার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার প্রসঙ্গটাও
গুরুত্বপূর্ণ এবং তা চাকুরির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এ ধরনের মর্যাদার বোধ এতটাই শক্তিশালী যে বিয়ে সাদী
বা অন্যান্য কোন উৎসবে এগুলো হিসেব করে মেহ্মান ডাকা হয়। তাছাড়া বিয়ে করার জন্য জোড়া
বাছাইয়ের সময় পরিবারের লোকজন কম বংশ মর্যাদার কাউকে বিবেচনা করেন না। এখানে যে
প্রবণতার কথা আলোচনা করা হচ্ছে তা অবশ্যই মূলত স্বচ্ছল শ্রেণীর মানুষজনের ক্ষেত্রে সত্যি। তবে
একটা ব্যাপার খেয়াল রাখা দরকার যে শ্রেণীর সাথে বংশ মর্যাদা সম্পর্কিতভাবে কাজ করে। যেমন:
কোন বিয়েতে পাত্র বা পাত্রীর বংশ খুব পছন্দ হ’ল না অপর পক্ষের। সেখানে পাত্র/পাত্রীর পরিবারের
আর্থিক অবস্থা মজবুত হলে সেটার জোরে সম্পর্ক হতে পারে। এই শ্রেণীর মানুষের মধ্যে শিক্ষার
প্রসঙ্গের গুরুত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইদানিং কালে আর একটি মাত্রা লক্ষ্য করা যায়। তা হচ্ছে বিদেশ
ভ্রমণ। অবশ্য এই প্রবণতাটি ভিন্ন ভাবে ব্রিটিশ কালেও ছিল। এর সঙ্গে আরেকটি মাত্রা হচ্ছে ইংরেজী
জানা। মর্যাদার ধারণার সঙ্গে মর্যাদা রাখতে পারাও খুব গুরুত্বপূর্ণ এই শ্রেণীর মানুষের মধ্যে। মর্যাদা
রাখার প্রধান উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে অধিক ভোগ করা। অর্থাৎ আধুনিক কালের নগর সমাজে যত বেশি
পরিমাণে ভোগ্যপণ্য খরিদ করা হয় ততই বেশি মর্যাদাবান থাকবার একটা ব্যবস্থা আছে। এটাকে কথ্য
ভাষায় এই শ্রেণীর লোকজন বলে থাকেন ‘স্টেটাস রাখা’।
বর্তমান কালে মর্যাদার ব্যাপার কতগুলো সূ² উদাহরণেও দেখা যেতে পারে। বড় শহরের প্রায় সব
মধ্যবিত্ত গেরস্তালিতে কাজকর্মের জন্য গৃহশ্রমিক আছেন। চলতি ভাষায় এঁদেরকে ‘বুয়া’ বলা হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণত নারী। এই গৃহশ্রমিকেরা সকলেই অতি দরিদ্র শ্রেণীর সদস্য এবং মাস
ভিত্তিক চুক্তিতে কাজ করে থাকেন। মানে দিনের শ্রম ঘণ্টা মেপে এঁদের কাজ বা মজুরি হয় না। যেহেতু
গৃহশ্রমিকেরা সকলে স্বচ্ছল ঐ মধ্যবিত্তের গৃহেই থাকেন, তাই একই স্থান ব্যবহার করতে হয়। কোন্
ঘরে তিনি থাকবেন তার একটা ব্যবস্থা থাকে, বলাই বাহুল্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেটা যথাসম্ভব নিচু
মানের। কিন্তু পাশাপাশি কোন্ ঘরে তিনি কাজের জন্য আসবেন এবং অন্য সময়ে আসতে পারবেন না
সেটারও পরিষ্কার নিষেধাজ্ঞা থাকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। এটা কেবল ঘর বা জায়গা ব্যবহারের বেলাতেই
নয়, টেলিভিশন দেখা, মেহ্মানদের সাথে কথা বলা বা হাসা, গান গাওয়া বা অন্যান্য অনেক কিছুর
ব্যাপারই নিষেধাজ্ঞা থাকে। এখানে এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারগুলো কেবল আর্থিক বা সম্পদের প্রসঙ্গ
দিয়ে বোঝা যাবে না। কারণ সেই পার্থক্য তো তাঁকে মজুরি দেয়ার সময়েই চুকে গেছে। এখানে
ভেদাভেদটা আসলে মর্যাদার। গৃহমালিক পক্ষের মানুষজন গৃহশ্রমিকের মর্যাদা সম্পর্কে সব সময় তাঁকে
সতর্ক রাখতে চান বলেই এই নিষেধাজ্ঞা।
আর একটা ক্ষেত্রের কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। তা হচ্ছে গায়ের রং। প্রচলিতভাবে আমাদের সমাজে
অনায়াসেই লক্ষ্য করা যায় গায়ের রঙের ভেদে মানুষের মর্যাদার ভেদাভেদ হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে
যাঁদের গায়ের রঙ হল্দেটে তাঁদেরকে বেশি মর্যাদা দেয়া হয়। এটা আমাদের একটা স্থানীয় বিষয় মনে
র রঙের ভেদে মানুষের
াদার ভেদাভেদ হচ্ছে।
সামাজিক মেলামেশা এবং
সম্পর্ক তৈরিতে খান্দানের
ধারণা অত্যন্তশক্তিশালী।
আধুনিক কালের নগর সমাজে
যত বেশি পরিমাণে ভোগ্যপণ্য
খরিদ করা হয় ততই বেশি
মর্যাদাবান থাকবার একটা
ব্যবস্থা আছে।
হলেও আসলে এর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট আছে। সারা পৃথিবীতে শ্বেতাঙ্গ মানুষজনের দ্বারা কৃষ্ণাঙ্গ মানুষজন
নিপীড়িত হয়েছে। এই ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। এখন অধিকাংশ রাষ্ট্রেই কাগজে কলমে এই
বৈষম্য আর নেই। আইনগত ভাবে সকলে সমান। কিন্তু বাস্তবে এখনও দেখা যায় কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি
বিদ্বেষের মনোভাব বহু শ্বেতাঙ্গ সমাজে আছে। এই বিদ্বেষ অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক আক্রমণ পর্যন্তগিয়ে
ঠেকে। যে সব সমাজের মানুষ আফ্রিকার মত কৃষ্ণবর্ণের নয় সেখানে অনেকের দৃষ্টিভঙ্গিই শ্বেতাঙ্গ ধ্যানধারণা দিয়ে গঠিত। যেমন আমাদের সমাজ।
সারাংশ
নৃবিজ্ঞানীদের অনেকেই সমাজের সদস্যদের মধ্যে বৈষম্য-বিভেদের ভিত্তিতে তিন ধরনের সমাজের কথা
উল্লেখ করেছেন। সমতাভিত্তিক, পদসোপানিক এবং শ্রেণীভিত্তিক। যে সকল সমাজে সদস্যদের মধ্যে
মর্যাদায় তারতম্য আছে তাকে পদসোপানিক সমাজ বলা হয়। এর মানে হচ্ছে সদস্যদের মধ্যে
সম্পদের তেমন তারতম্য নেই। এবং একদল মানুষ অন্যদের শোষণ করেন না। আধুনিক সমাজে শ্রেণী
বিভেদের পাশাপাশি মর্যাদার ভেদাভেদ অত্যন্ততীব্র। নগর সমাজে যত বেশি পরিমাণে ভোগ্যপণ্য খরিদ
করা হয় ততই বেশি মর্যাদাবান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে শ্রেণীর সঙ্গে মর্যাদার প্রসঙ্গ
মিলিয়ে দেখা প্রয়োজন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন -
১। বৈষম্যের ভিত্তিতে নৃবিজ্ঞানীরা কত ধরনের সমাজকে চিহ্নিত করেছেন?
ক. ২ খ. ৩
গ. ৪ ঘ. ৫
২। নিচের কোন সমাজে চীফের সঙ্গে আতœীয়তার স ত্র ধরে পদসোপান নির্ধারিত হয়?
ক. ইনুইত খ. তাহিতি
গ. মাসাই ঘ. তিরিকি
৩। নিচের কোন শব্দটি গভীর ভাবে মর্যাদা কেন্দ্রিক?
ক. খান্দান খ. বংশ
গ. ক‚ল ঘ. জমিদার
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। পদসোপানিক সমাজ (ৎধহশ ংড়পরবঃু) কাকে বলে?
২। সমতা ভিত্তিক সমাজের সাথে পদসোপানিক সমাজের পার্থক্য দেখান।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। নৃবিজ্ঞানীরা পদসোপানিক সমাজকে একটা মধ্যবর্তী দশা হিসেবে দেখেছেন Ñ ব্যাখ্যা করুন।
২। অনেকেই বলে থাকেন আধুনিক সমাজে সম্পদ, মর্যাদা আর ক্ষমতা পরস্পর সম্পর্কিত বিষয়।
আপনি কি মনে করেন?

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]