জাতিবর্ণ (পধংঃব) বলতে কী বোঝানো হয়ে থাকে?
শ্রেণী আর শোষণের সম্পর্ক কী?


এই পাঠটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন :
 শ্রেণী বলতে কী বোঝায়
 জাতিবর্ণের বৈশিষ্ট্য
 বর্তমান কালে জাতিবর্ণ এবং শ্রেণী পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত
সামাজিক ভেদাভেদ বুঝবার জন্য বর্তমান দুনিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হচ্ছে শ্রেণী। আমরা
সাধারণভাবে এই ধারণার সঙ্গে পরিচিত। প্রায়শই আমরা ধনী গরিব এই শব্দগুলো ব্যবহার করে থাকি।
এখানে এই শব্দ দুটো দিয়ে আমরা কোন মানুষের আর্থিক সঙ্গতি বুঝিয়ে থাকি। সেটা কেবল টাকা
পয়সা অর্থে নয়। ধনী বলতে সাধারণত সম্পদশালীকে বোঝানো হয়ে থাকে। আর গরিব বলতে সম্পদ
নেই এমন মানুষকে বোঝানো হয়ে থাকে। তবে শব্দ দুটোর একটা তুলনামূলক ব্যবহার আছে। সেটা
হচ্ছে কেউ কারো চেয়ে কম সম্পদশালী হলে বলা হয়ে থাকে Ñ তার তুলনায় গরিব। এই উদাহরণের
মধ্য দিয়ে শ্রেণী বোঝা যেতে পারে। সাধারণভাবে সম্পদের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে যে ফারাক তাকে
শ্রেণী বলে। সম্পদশালী শ্রেণীকে উচ্চ শ্রেণী বা ধনী শ্রেণী আর সম্পদহীনকে নিæ শ্রেণী বা গরিব শ্রেণী
বলা হয়ে থাকে। তবে সামাজিক বিজ্ঞানের লেখাপড়ায় আরেক ভাবে এটাকে বলা হয়ে থাকে Ñ
উচ্চবিত্ত এবং নিæবিত্ত। এর পাশাপাশি মধ্যবর্তী একটা শ্রেণীকে বোঝানোর জন্য মধ্যবিত্ত বলে একটা
ধারণা ব্যবহার হরা হয়। এটা আমরা চলতি ভাষাতেও ব্যবহার করি।
যদিও সম্পদের ভিত্তিতেই শ্রেণী গঠিত হয় বলে সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে, অনেক বিশে- ষকই
বলেছেন শ্রেণী বুঝবার জন্য কেবল সম্পদের ভিত্তিতে এগোলে চলবে না। এর সঙ্গে মর্যাদা, ক্ষমতা
এগুলোকে সম্পর্কিত করে দেখা লাগবে। পক্ষান্তরে, জাতিবর্ণ বলতে এমন এক ভেদাভেদ ব্যবস্থা বোঝায়
যা কোন মানুষের জন্মের সময়েই নির্ধারিত হয়ে যায়। যেমন: ব্রাহ্মণের সন্তান ব্রাহ্মণ বলেই পরিচিত
হবে। শ্রেণী যদিও বর্তমান পৃথিবীর সকল সমাজেই দেখতে পাওয়া যায়, জাতিবর্ণ প্রথা কেবলমাত্র
ভারতবর্ষ এবং আশেপাশে পাওয়া সম্ভব বলে অনেক নৃবিজ্ঞানীরা বলেছেন। তাঁদের মতে, এটা কেবল
হিন্দু সমাজের একটা বৈশিষ্ট্য। কিন্তু অন্য অনেক নৃবিজ্ঞানীরা বলেছেন Ñ ভারতবর্ষের এই জাতিবর্ণ
আপাত স্বতন্ত্র হলেও এই স্তরবিন্যাস অন্য সমাজেও আছে। তাঁরা উল্লেখ করেছেন জাপান, আফ্রিকার
কিছু অঞ্চলের কথা। দুই একজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ ভেদাভেদকেও জাতিবর্ণ প্রথার মত
বলে উল্লেখ করেছেন। নৃবিজ্ঞানে এই দুই স্তরবিভাজনকে সমাজে সত্যিকার ভেদাভেদকারী হিসেবে
দেখা হয়েছে Ñ শ্রেণী এবং লিঙ্গ। এক্ষেত্রে এই দুইয়ের একটা সম্পর্ক টানার চেষ্টা করেছেন অনেক
নৃবিজ্ঞানী। তাঁদের ব্যাখ্যা হ’ল:এই দুই স্তরবিভাজনের পার্থক্য হচ্ছে একটাতে সদস্যরা তাঁদের স্তর
অর্জন করেন, অন্যটাতে সদস্যদেরকে স্তরে সামিল করানো হয়। অর্থাৎ সমাজে কোন মানুষ কোন
শ্রেণীতে জন্মালেও নানা উপায়ে তিনি তাঁর শ্রেণী বদলে অন্য শ্রেণীতে চলে যেতে পারেন। তাঁর সম্পদ
কোন কারণে বৃদ্ধি পেলে বা খোয়া গেলে। আর কোন জাতিবর্ণের সদস্যরা সারা জীবন তাঁর অবস্থান
বদলাতে পারবেন না। যেহেতু তিনি যাই করুন না কেন ঐ জাতিবর্ণের সদস্য পদ ত্যাগ করা সম্ভব নয়।
শ্রেণী এবং জাতিবর্ণের মধ্যে এই পার্থক্য খুবই সরল এবং তেমন কোন অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না,
বিশেষত বর্তমান কালে। কোন একজন দুইজন দরিদ্র মানুষের হঠাৎ ধনী হয়ে যাবার গল্প নিশ্চয় আছে।
কিন্তু তা দিয়ে সমস্তদরিদ্র শ্রেণীর সামজিক জীবন ব্যাখ্যা করা অসম্ভব।
কেবল সম্পদের বেশি পরিমাণ দিয়ে উচ্চবিত্ত শ্রেণীর সামাজিক সুবিধা এবং দাপট বোঝা যাবে না। সে
কারণেই ক্ষমতা এবং মর্যাদার প্রসঙ্গ এসেছে। কিন্তু খোদ সম্পদ থাকবার মানে কি Ñ সেটাও তলিয়ে
দেখা দরকার। সম্পদ থাকার প্রধান মানে হচ্ছে নানান ধরনের দ্রব্যাদি সংগ্রহ করা সম্ভব এই শ্রেণীর
পক্ষে। বিশেষ করে এই মুহূর্তের পৃথিবীতে খোলা বাজারে সকল কিছু কেনা সম্ভব। নানান দ্রব্য কেনা বা
জোগাড় করার মানে হচ্ছে সেই শ্রেণীর সুবিধা ও আরাম আয়েশ নিশ্চিত হচ্ছে। বাড়ি হোক, গাড়ি
হোক, প্রসাধনী হোক আর খাবার হোক। সেটা একটা বিরাট ব্যাপার। এক পক্ষের আরাম আয়েশ
মানেই অন্য পক্ষের দুর্ভোগ এবং বঞ্চনা। ক্ষমতা, মর্যাদা এবং নানারকম বাড়তি সুবিধা পাওয়ার মধ্য
দিয়ে এই শ্রেণীর আচার-আচরণ, মনোভাব, ধ্যান-ধারণা ইত্যাদিতেও বড়সড় পরিবর্তন ঘটে। আচারআচরণ, ধ্যান-ধারণার এই বদল কোন ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়, এটা একটা শ্রেণীগত ব্যাপার। এভাবে
শ্রেণী বলবার সাথে সাথে কেবল সম্পদের পার্থক্যই নয়, আমরা মন-মানসিকতা, ধ্যান-ধারণার পার্থক্যও
শ্রেণী বলবার সাথে সাসম্পদের পার্থক্যই নয়মন-মানসিকতা, ধ্যানপার্থক্যও বুঝতে পারিসাধারণভাবে সম্পদের ভিত্তিতে
মানুষে মানুষে যে ফারাক তাকে
শ্রেণী বলে।
জাতিবর্ণ বলতে এমন এক
ভেদাভেদ ব্যবস্থা বোঝায় যা
কোন মানুষের জন্মের সময়েই
নির্ধারিত হয়ে যায়। যেমন:
ব্রাহ্মণের সন্তান ব্রাহ্মণ বলেই
পরিচিত হবে।
বুঝতে পারি। সেই সঙ্গে শ্রেণীগুলোর মধ্যকার সম্পর্ককেও বুঝতে পারি। উপরন্তু সম্পদ থাকার আর
একটা অর্থ হচ্ছে সম্পদশালী ব্যক্তি অন্যান্য সম্পদহীনকে কাজ দিতে পারে। এটা শুনতে যে রকম
আরামদায়ক শোনায় তেমন নয় মোটেই। এর মানে হ’ল: ধনী শ্রেণী সম্পদের জোরে গরিব শ্রেণীর শ্রম
কিনে নিতে পারে।
মজুরি, মুনাফা এবং মালিকানা
শ্রেণীর সঙ্গে এই ধারণাগুলো খুবই সম্পর্কিত। আগেই বলেছি যে সম্পদশালী শ্রেণী অনায়াসে সম্পদহীন
শ্রেণীর শ্রম খরিদ করে নিতে পারে। এখানে লক্ষ্য করবার বিষয় হচ্ছে সকল কিছু উৎপাদন হবার জন্যই
শ্রম প্রয়োজন পড়ে। আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন যে অনেক সমাজে উৎপাদন হয় সকলের
অংশগ্রহণের মাধ্যমে, সকলের শ্রমে। সেই রকম ব্যবস্থায় যে উৎপাদন হয় তার বিশেষ কোন মালিকানা
থাকে না। যে কারো ভোগদখলের জন্য সেই সামগ্রীর ব্যবহার সম্ভব হয়। এভাবে উৎপাদনের শরীকী
ব্যবস্থা টিকে থাকে। আবার ভোগের ক্ষেত্রেও শরীকী। কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবসার উৎপাদনের প্রক্রিয়া
একেবারেই ভিন্ন। এখানে কোন দ্রব্যের উপর মালিকানা আছে। অর্থাৎ উৎপাদিত সকল দ্রব্যেরই
দাবীদার থাকেন। আধুনিক সমাজে এই দাবীদারের দাবীকে আইনও সমর্থন করে। সম্পদশালী শ্রেণী
যখন শ্রমিককে শ্রমের একটা মজুরি দিয়ে দেয় তৎক্ষণাৎ উৎপাদিত দ্রব্যটির মালিকানা তার হয়ে যায়।
সেই দ্রব্যটি আর সেই মজুর দাবী করতে পারেন না। এই প্রক্রিয়ায় সম্পদশালী শ্রেণীর হাতে আরও
সম্পদ জমতে থাকে। বিষয়টাকে একটু ব্যাখ্যা করা যায়।
এখানে শ্রমের প্রসঙ্গটাকে আবার ভাবা দরকার। আমরা এমন একটা কিছুর কথা ভাবতে পারি না যার
পিছনে কোন শ্রমিকের শ্রম নেই। একটা আলপিন থেকে শুরু করে বড় বড় ইমারত পর্যন্তসকল কিছু।
এখন শ্রমিকের মজুরি দিয়ে দেবার পর সেই দ্রব্যটি মালিকের হয়ে যায় যিনি শ্রমের একটা মজুরি
দিয়েছেন। এই দ্রব্যটি তখন খোলা বাজারে বিক্রি করে মালিক দ্রব্যটির দাম পাবেন। দ্রব্যটির দাম তিনি
যা মজুরি দিয়েছেন তার থেকে ঢের ঢের বেশি। এই বাড়তি যে টাকা তিনি লাভ করলেন এটাই তার
মুনাফা। মালিকের যত উৎপাদন হতে থাকবে ততই তাঁর মুনাফা। অবশ্যই বিক্রি হতে হবে। একদিকে
মালিকের যত উৎপাদন ততই মুনাফা বা লাভ। অন্যদিকে, শ্রমিকের ততই ক্ষতি। কারণ ঐ দ্রব্যটা
উৎপাদন করবার জন্য যে শ্রমের প্রয়োজন ছিল তা তিনি দিয়েছেন, কিন্তু সেই শ্রমের মজুরি দিয়ে ঐ
দ্রব্যটা কেনার আর কোন উপায় নেই তাঁর। ঐটার দাম এখন তাঁর প্রাপ্য মজুরির থেকে বহু পরিমাণে
বেড়ে গিয়েছে। তাহলে চিন্তা করলে বোঝা যায় প্রত্যেকটা জিনিস উৎপাদন করা বা বানাবার সাথে
সাথেই সেই জিনিসের সঙ্গে শ্রমিকের দূরত্ব বাড়তে থাকে। মানে সেটার খদ্দের থাকা তখন আর তাঁর
পক্ষে সম্ভব নয়।
প্রত্যেকটা দ্রব্যের পেছনে যেমন শ্রমিক আছেন, তেমনি মালিকও আছেন। এভাবে সমাজে দুই শ্রেণীর
বৈষম্য বাড়ছেই। এটা সত্যি যে মালিকের কাঁচামাল খরিদ করতে হয়েছে। কিন্তু সেখানেও এই একই
চক্র। একটা পর্যায়ে সকল কাঁচামালই প্রকৃতিতে ছিল। ফলে দ্রব্যের উপর থেকে শ্রমিকের দাবী
হারানোর ব্যাপারটাকে সমর্থন করবার মত তেমন যুক্তি থাকে না। এই প্রক্রিয়ায় একদিকে শ্রমিক শ্রম
দিয়ে আরো নিæগামী অবস্থায় চলে যাচ্ছেন। অন্যদিকে মালিক কোন শ্রম না দিয়ে আরো ঊর্দ্ধগামী অবস্থা
অর্জন করছেন। উভয়ের মধ্যে এই সম্পর্কের কারণে ধনী গরিব শ্রেণীর নাম কখনো কখনো বলা হয় Ñ
মালিক শ্রেণী ও শ্রমিক শ্রেণী। মালিক শ্রেণী এবং শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যকার সম্পর্ককে শোষণের সম্পর্ক বলা
হয়। কারণ শ্রমিকের শ্রমের বিনিময়েই মালিক শ্রেণীর মুনাফা হতে থাকে। দরিদ্র শ্রেণীর মানুষজনের
উপর নানা ধরনের নির্যাতনের এটা একটা দিক মাত্র। এই যাঁতাকল থেকে মুক্তি পেতে শ্রমিকেরা
বারংবার আন্দোলন গড়ে তোলেন। কিন্তু তাঁদের জীবনে এখন পর্যন্তখুব একটা বদল আসেনি Ñ সেটা
একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়। এখানে এই আলোচনাটি একভাবে খুব সহজভাবে করা হয়েছে।
সমাজে শ্রেণী সম্পর্কের বিষয়গুলো এর থেকে ঢের কঠিন। যেমন এই আলোচনায় একটা প্রশ্ন থেকে
যায়। তা হচ্ছে: মধ্যবিত্ত শ্রেণী তাহলে কোথায় গেল? তাছাড়া একটা যুক্তির সমস্যাও দেখা দেয়। সেটা
হ’ল: সমাজে সকল মানুষ স্পষ্টভাবে মালিক কিংবা শ্রমিক-এর কাতারে পড়েন কিনা।
কদিকে শ্রমিক শ্রম দিয়ে
া নি¤œগামী অবস্থায় চলে
ছন। অন্যদিকে মালিক
কান শ্রম না দিয়ে আরো
অবস্থা অর্জন করছেন।
মধ্যবিত্ত চাকুরে-ব্যবসায়ী শ্রেণী
পুঁজিবাদী সমাজে একটা শ্রেণী আছে যার সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে মালিক নয়, আবার শ্রমিকও নয়।
এখানে কাজ না পাওয়া শ্রমিকদের কথা হচ্ছে না। একটা স্বচ্ছল শ্রেণীর কথা হচ্ছে। সাধারণভাবে এঁরাই
হচ্ছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণী। এই শ্রেণীর সদস্যরা রাষ্ট্র ও বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করে থাকেন, কিংবা পণ্যের
বাণিজ্য করে থাকেন। আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নানাবিধ দপ্তর এবং বিভাগ করা হয়েছে। এই
সকল দপ্তর ও বিভাগে নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণের কিছু কর্মচারী প্রয়োজন পড়ে। সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে
শিক্ষক অব্দি। সেই সকল কর্মচারীরা রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে বেতন পেয়ে থাকেন। এছাড়া সরকারী
দপ্তর ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারী দপ্তরে কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। চাকুরির আরেকটি ক্ষেত্র হচ্ছে শিল্প,
কল-কারখানার ব্যবস্থাপনা। যে সব কর্মস্থলে শ্রমিকরা শ্রম দিয়ে দ্রব্য উৎপাদন করে থাকেন, সেখানে
ব্যবস্থাপনা বা ম্যানেজিং-এ অনেক কর্মী চাকুরি করেন যাঁরা শারীরিক শ্রম দিয়ে কিছু উৎপাদন করেন
না। তবে তদারকি করেন। ব্যবসায়ী গোষ্ঠী প্রত্যক্ষভাবে কোন শিল্প-কারখানার মালিক নাও হতে
পারেন। তাঁরা এক স্থানে উৎপাদিত দ্রব্য অন্য স্থানে বেচাকেনার কাজ করে থাকেন। তবে ব্যবসায়ী
শব্দটি দিয়ে সাধারণভাবে এত কিছু বোঝায় যে এটি নিয়ে বিভ্রান্তিঘটবার সুযোগ আছে। আগের
আলোচনায় যাঁদের মালিক বলা হয়েছে তাঁদের অনেকেই নিজেকে পরিচয় দেবেন ব্যবসায়ী বলে। তবে
বৃহৎ শিল্প-মালিকদের বেলায় শিল্পোদ্যোক্তা বা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট পরিচয়টা চলে।
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সদস্যদের কয়েকটা বৈশিষ্ট্য খেয়াল করার মত। প্রথমেই বলা যায় শিক্ষার কথা।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন এই শ্রেণীর একটা বৈশিষ্ট্য। আর চাকুরির ক্ষেত্রেও এটা প্রয়োজনীয় বটে। উচ্চ
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেবার পর যে ধরনের চাকুরি করা হয় তাকে বলা হয় হোয়াইট কলার জব। বাংলায়
আমরা সম্মানজনক চাকুরি বলতে পারি। এই শ্রেণীর দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর সঙ্গে
এঁদের সম্পর্ক উচ্চবিত্তের মতই কঠোর। এঁদের পরস্পরের প্রতি তেমন কোন সংহতি লক্ষ্য করা যায়
না। দরিদ্রদের দিক থেকে সেটা সঙ্গত। কারণ প্রত্যেক মধ্যবিত্ত পরিবারের দেখভালের শ্রম তাঁদেরই
দিতে হয়। আর সেখানেও তাঁর শোষণের অভিজ্ঞতাই হয়ে থাকে। মধ্যবিত্ত শ্রেণী বরং উচ্চবিত্তের
দিকেই বেশি টান দেখায়। এই শ্রেণী আশা-আকাক্সক্ষার ধরনও উচ্চবিত্তের সঙ্গে মেলে বেশি। এই শ্রেণীর
তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এঁরাও কোন উৎপাদন কাজে অংশ নেন না। সে কারণে
কোন কোন বিশে- ষক সমাজের মানুষজনকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করেছেন Ñ উৎপাদক শ্রেণী এবং
অনুৎপাদক শ্রেণী। প্রথম শ্রেণী হচ্ছে দরিদ্র মানুষজনের, আর অন্য সকলে (মালিক সমেত) অনুৎপাদক
শ্রেণী। আবার উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণী ভোগ্যপণ্যের প্রায় সবটারই খদ্দের বলে এঁদের ভোক্তা
শ্রেণীও বলা হয়ে থাকে।
সমাজে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কাজ-কর্মকে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু সমস্যা হ’ল: গরিব
শ্রেণীর পক্ষে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের আবার তেমন দরকার পড়ে না। ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণী যে ধরনের কাজ
করে কিংবা পেশায় নিয়োজিত হয় তার ফলাফল কেবল নিজেদের ভোগে ও মনোরঞ্জনে ব্যবহৃত হয়।
তা সে গান, নাটক, উপন্যাস হোক আর অফিসের ফাইল ঘাঁটাঘাঁটি করা হোক। কিন্তু গরিব শ্রেণীর গান
কিংবা সাহিত্য বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ বলে গণ্য হয় না। অবশ্যই মালিক শ্রেণীর কারখানা বা উৎপাদন ক্ষেত্র
চালু রাখার জন্য এই শ্রেণীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান পৃথিবীর সকল মহানগর এই শ্রেণীর মানুষজনের
আবাসস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মানে এই নয় যে অন্যত্র মধ্যবিত্ত নেই কিংবা মহানগরে উচ্চবিত্ত বা
দরিদ্র শ্রেণীর মানুষজন থাকেন না। বরং মহানগরের যাবতীয় শারীরিক কাজ-কর্ম দরিদ্র মানুষজনই
করছেন Ñ ইমারত বানানো থেকে শুরু করে আবর্জনা পরিষ্কার করা অব্দি। কিন্তু মহানগরের মধ্যবিত্তের
বৈশিষ্ট্য ও ভূমিকা ভিন্ন গুরুত্ব বহন করে। এখানে একটা বিষয় স্পষ্ট করা দরকার। যেহেতু চাকুরিজীবী
ও ব্যবসায়ী মানুষজন ও তাঁদের পরিবারকে মধ্যবিত্ত ধরে নেয়া হয়েছে তাই মধ্যবিত্ত বলতে মোটেই এক
ধরনের স্বচ্ছলতা বোঝায় না। ঢাকা শহরের এ্যাপার্টমেন্টে বসবাসকারী পরিবার যেমন মধ্যবিত্ত, তেমনি
গাইবান্ধার একজন মনোহারী দোকানদার মধ্যবিত্ত। মহানগরের মধ্যবিত্তদের গুরুত্ব হচ্ছে তাঁরাই
সমাজের ধ্যান-ধারণা নিয়ন্ত্রণ করেন। শিল্প-সাহিত্য, প্রচার মাধ্যম ইত্যাদি সাধারণভাবে মধ্যবিত্ত চিন্তামধ্যবিত্ত শ্রেণীর... গুরুত্বপূর্ণ
বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এঁরাও কোন
উৎপাদন কাজে অংশ নেন না।
গরিব শ্রেণীর গান কিংসাহিত্য বুদ্ধিবৃত্তিক কাগণ্য হয় না।
ভাবনাকেই প্রতিফলিত করে, দরিদ্রদের নয়। এ কারণেই কারো কারো মতে শ্রমিক শ্রেণী বা দরিদ্র
মানুষদের পক্ষে আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত শ্রেণীই বড় বাধা।
ভারতবর্ষে জাতিবর্ণ প্রথা
এই অঞ্চলের হিন্দুদের মধ্যে এক ধরনের ভেদাভেদ প্রথার কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। এই ব্যবস্থাতে
বিশ্বাস করা হয় কোন মানুষ জন্মের সময়ই তাঁর সামাজিক অবস্থান নিয়ে আসেন। আর সেই অবস্থানটা
বদলানো যায় না। এই বিশ্বাসের সাথে ধর্মীয় কিছু ব্যাখ্যাও প্রচলিত আছে। কিন্তু ভেদাভেদটা কেবল
বিশ্বাসের নয়, সামাজিক অনুশীলনেও তা দেখা যায়। এটাকে নৃবিজ্ঞানীরা জাতিবর্ণ (পধংঃব) বলেছেন।
কারো কারো মতে এটা সাব-কাস্ট (ংঁন-পধংঃব)। লেখাপড়ার জগতে এটাকে জাতিবর্ণ বলা হলেও
সমাজে চলতি ভাষায় মানুষজন একে ‘জাত’ শব্দ দিয়ে বুঝিয়ে থাকেন। অনেক নৃবিজ্ঞানীই মনে
করেছেন এই বিশেষ ধরনের ভেদাভেদ ব্যবস্থা কেবল ভারতের সমাজেই আছে। এঁদের মধ্যে নাম বলা
যায় লুই ডুমোর কথা।
প্রত্যেকটি জাতিবর্ণ একটির থেকে আরেকটি ক্রমোচ্চভাবে সাজানো। এর মানে হ’ল সমাজের প্রত্যেক
সদস্যেরই জাতিবর্ণের ভিত্তিতে একটা নির্দিষ্ট সামাজিক অবস্থান থাকে। নিচু জাতিবর্ণের লোকজন উঁচু
জাতিবর্ণের লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারবেন না। অন্তত, অনেকগুলি সামাজিক বিধিনিষেধ
আছে। প্রধান বিধিনিষেধ হচ্ছে বিয়ে এবং খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে। যে সব জাতিবর্ণকে উঁচু বলে ধরে
নেয়া হয় তার সদস্যরা ‘নিচু’দের সঙ্গে একত্রে খাবেন না। আর বিয়ের সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন
না। একটা জাতিবর্ণের সদস্যরা কেবল নিজেদের মধ্যেই বিয়ে করতে পারবেন Ñ অর্থাৎ অন্তর্বিবাহ
ব্যবস্থা। কিন্তু বিয়ে এবং খাবার-দাবারের মধ্যেই এই ভেদাভেদ সীমিত নয়। সামাজিকভাবে অনেক
ধরনের নিপীড়নের শিকার হয়ে থাকেন নিচু জাতিবর্ণের লোকজন। একটা চর্চা আছে ছোঁয়া-ছুঁই নিয়ে।
‘উঁচু’ মানুষজন ‘নিচু’ মানুষজনের শারীরিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলেন। এক্ষেত্রে ধারণা করা হয় নিচু বর্ণের
সংস্পর্শে উঁচু অপবিত্র হয়ে যাবেন। এর সামাজিক নাম হচ্ছে Ñ ‘জাত যাওয়া’। সুতরাং, বিয়ে বা
খাদ্যগ্রহণে আপত্তির ভিত্তি হিসেবে এটাকে দেখা যায়। নৃবিজ্ঞানীরা এটাকে শুচিতার ধারণা বলেছেন।
শুচিতা-অশুচিতা কিংবা পবিত্রতা-অপবিত্রতা যাই বলি না কেন Ñ এর একটা ব্যাখ্যা দেয়া হয় ধর্মগ্রন্থ
থেকে। হিন্দু (সনাতন) ধর্মাবলম্বীদের ধর্মগ্রন্থ বেদ-এ চতুর্বর্ণ বা চারটি বর্ণের কথা উল্লেখ আছে।
এগুলো হচ্ছে: ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র। এখানে ব্রাহ্মণকে সবচেয়ে মর্যাদাবান এবং শূদ্রকে
সবচেয়ে মর্যাদাহীন হিসেবে ব্যাখ্যা করা আছে। অন্য বর্ণ দুটিরও মর্যাদা নির্দিষ্ট করা আছে:
ব্রাহ্মণ -> ক্ষত্রিয় -> বৈশ্য -> শূদ্র
অনেক গবেষকই জাতিবর্ণ প্রথা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বেদ-এ বর্ণিত চার বর্ণের প্রসঙ্গ নিয়ে
এসেছেন। কিন্তু বাস্তবে সমাজে ঠিক এইভাবে চারটি বর্ণ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যেমন: বাংলা অঞ্চলে
ব্রাহ্মণ পাওয়া গেলেও বৈশ্য বা শূদ্রের একক অখন্ড কোন রূপ পাওয়া যায় না। বরং অনেক ধরনের
বিভাজন পাওয়া যায় যাঁরা পরস্পরের থেকে আলাদা মনে করেন নিজেদের এবং সামাজিক নিয়মকানুনও সেভাবে গঠিত। বিয়ে-শাদী এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের বেলায় ভেদাভেদ প্রক্রিয়াটা কাজ করে
থাকে। ক্ষত্রিয় বলতে এই অঞ্চলে তেমন কোন বর্ণ কখনোই ছিল না। প্রায় একশ’ বছর আগে উত্তর
বাংলার একটা অংশ নিজেদের ক্ষত্রিয় বলে ঘোষণা দেন। সেই ক্ষত্রিয়দের সঙ্গে উত্তর ভারতের
ক্ষত্রিয়দের অনেক পার্থক্য। বাংলা অঞ্চল হতে নিজেদের ক্ষত্রিয় ঘোষণা দেয়া এই পদক্ষেপকে
বর্ণব্যবস্থার অবিচারের বিরুদ্ধে একটা বিদ্রোহ হিসেবেও দেখা সম্ভব। আবার বাংলা অঞ্চলে ব্রাহ্মণরাও
কোন একটা নির্দিষ্ট বর্গ নন। পরস্পরের সাথে নানা সামাজিক দূরত্ব তাঁরা বোধ করেন এবং সেগুলো
চর্চা করেন। কায়স্থ বলে একটা জাতিবর্ণবিশেষভাবে বাংলা অঞ্চলেই দেখা যায়। এই ধরনের কোন নাম
ভারতবর্ষের অন্য কোথাও দেখা যায় না। বস্তুত, ভারত বর্ষের সকল স্থানে নানাবিধ ভিন্নতা লক্ষ্য করা
ভারত বর্ষের সকল স্থানে
ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়
এক অঞ্চলের জাতিবর্ণ
ভেদাভেদ অন্য অঞ্চলে
কবারেই দেখা যায় না।
এই অঞ্চলের হিন্দুদের মধ্যে
এক ধরনের ভেদাভেদ প্রথা ...
বিশ্বাস করা হয় কোন মানুষ
জন্মের সময়ই তাঁর সামাজিক
অবস্থান নিয়ে আসেন। আর
সেই অবস্থানটা বদলানো যায়
না। ... এটাকে নৃবিজ্ঞানীরা
জাতিবর্ণ (পধংঃব) বলেছেন।
যায় এবং এক অঞ্চলের জাতিবর্ণ ভেদাভেদ অন্য অঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। এক কথায় যত
সরলভাবে জাতিবর্ণ-এর চার ভাগের কথা বলা হয় তত সরলরূপে সেটি সমাজে পাওয়া যায় না, নানাবিধ
বিভেদ লক্ষ্য করা যায়। এই পরিস্থিতি সামলাতে গিয়েই কোন কোন গবেষক ংঁন-পধংঃব ধারণা
ব্যবহার করেছেন।

অনেক গবেষকই জাতিবর্ণ প্রথাকে প্রাচীন ভারতের শ্রম বিভাজন হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। অর্থাৎ,
সমাজে কার কি কাজ এবং উৎপাদন কাজে কার কি অংশগ্রহণ হবে তার ব্যবস্থা এই জাতিবর্ণ। এই
ব্যাখ্যার একটা অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়। বেদের ব্যাখ্যানুযায়ী ব্রাহ্মণ হবেন জ্ঞানী, ক্ষত্রিয় যোদ্ধা, বৈশ্য
ব্যবসায়ী এবং শূদ্র মজুর বা কায়িক শ্রমিক। ঠিক এরকম চারটি ভাগে ঐতিহাসিক দলিল না পাওয়া
গেলেও এটা লক্ষ্য করা গেছে যে ভারতবর্ষের সমাজে জাতিবর্ণের সঙ্গে পেশার একটা যোগাযোগ ছিল।
কিছুকাল আগে পর্যন্তও অনেক নজির পাওয়া গেছে যেখানে কোন একটি জাতিবর্ণের সদস্যরা
বংশানুক্রমিকভাবে একটা নির্দিষ্ট পেশায় নিয়োজিত আছেন। যেমন: নাপিত, জেলে, কুমার, কামার,
তাঁতী ইত্যাদি। এক্ষেত্রে একটা ব্যাপার খেয়াল রাখা দরকার, সাধারণভাবে ‘উঁচু’ জাতিবর্ণের সদস্যরা
আর্থিক ভাবেও স্বচ্ছল।
পেশার দিক থেকে জাতিবর্ণের এই বিভাজন সমাজের অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রভাব রেখেছে
বর্তমান বাজারের প্রসারের আগে সেটা বিশেষভাবে ক্রিয়াশীল ছিল। বিভিন্ন পেশার (নাপিত, কামার,
কুমার ইত্যাদি) মানুষজন স্বচ্ছল গেরস্তদেরকে নিজেদের পেশার কাজ করে দিতেন। বিনিময়ে ফসল
পেতেন। এই ধরনের আদান-প্রদানের নাম দেয়া হয়েছে যজমানি ব্যবস্থা। ব্রিটিশরা আসার পর বাজার
ব্যবস্থার প্রসার ঘটে এবং বিভিন্ন শ্রমিক পেশার মানুষজন নিজেদের উৎপাদিত দ্রব্য বাজারে বিক্রির চেষ্টা
করেন।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জাতিবর্ণ ভিত্তিক উপাধিও দেখা যায়। অর্থাৎ নামের শেষে যে অংশ ব্যবহার করা
হয় সেটা দিয়েই জাতিবর্ণের অনুমান করা সম্ভব হয়। বাংলা অঞ্চলে সবচেয়ে সহজে বোঝা যায়
ব্রাহ্মণদের পরিচয়। কতগুলি পরিচিত উপাধি হচ্ছে: ভট্টাচার্য্য, বন্দ্যোপাধ্যায়, চট্টোপাধ্যায়,
মুখোপাধ্যায়, চক্রবর্তী ইত্যাদি। যেহেতু ‘নিচু’ জাতিবর্ণের নির্দিষ্ট পেশার প্রচলন ছিল Ñ তাই উপাধি
দেখে তাঁদের বেলায় পেশাও বোঝাত অনেক ক্ষেত্রে। তবে নামের সঙ্গে উপাধি জুড়ে দেবার এই চল
ব্রিটিশরা এখানে আসার আগে একই রকম ছিল না। আর্থনীতিক বিরাট বদলের মধ্য দিয়ে বর্তমান
কালে পেশার এই ব্যাপারগুলো আর আগের মত নেই। যেমন: নাপিতদের সাবেক পেশায় এখন অনেক
মানুষ আছেন যাঁদের জাতিবর্ণ ‘নাপিত’ নয়, এমনকি অনেকে হিন্দু ধর্মের বাইরে। কাপড়ের কলে আর
জাতিবর্ণ হিসেবে ‘তাঁতী’রা কাজ করছেন না। ফলে নানা ধরনের পেশায় এসব জাতিবর্ণের সদস্যরা
যাবার চেষ্টা করছেন। ‘উচ্চবর্ণ’ হিন্দুদের স্বচ্ছলতার কারণে ব্রিটিশ কালে তাঁরা শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে
সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে গেছেন সাধারণভাবে।
জাতিবর্ণ ভেদাভেদের এই প্রক্রিয়া স্পষ্টভাবেই নিপীড়নমূলক। নিপীড়নের সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছেন
সমাজের একেবারে নিচে যাঁদের ভাবা হয়। এই ব্যবস্থার বিপক্ষে ‘নিæবর্ণ’ হিন্দুরা নানা সময়ে প্রতিরোধ
গড়ে তুলেছেন। কখনো কখনো উচ্চবর্ণের কিছু সদস্য এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। এখানে
দুইজনের নাম উল্লেখ করা যায়: মহাত্মা গান্ধী এবং স্বামী বিবেকানন্দ। বিশেষভাবে ভারতে নিæবর্ণ হিন্দু
আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ সেখানে সমতল বাংলার চেয়ে অনেক আক্রমণাত্মক ধরনের
ভেদাভেদ রয়েছে। ‘অ¯পৃশ্য’ বলে একটা বর্গ আছেন যাঁর সদস্যরা নিপীড়নের চরম সীমায় বসবাস
করেন। কিন্তু বড়মাপের কোন পরিবর্তন এখনো লক্ষ্য করা যায় না। কয়েক বছর আগে চাকুরিতে নিæবর্ণ
হিন্দুদের কিছু সুবিধা দেবার চেষ্টা যখন সরকার করেছে Ñ তখন ব্রাহ্মণ সহ অন্যান্য তুলনামূলক উচ্চবর্ণ
হিন্দুরা সারা দেশব্যাপী এর বিরুদ্ধে আস্ফালন শুরু করে।
সাধারণভাবে ‘উঁচু’ জাতিবর্ণের
সদস্যরা আর্থিক ভাবেও স্বচ্ছল।
‘উচ্চবর্ণ’ হিন্দুদের স্বচ্ছকারণে ব্রিটিশ কালে তও অন্যান্য ক্ষেত্রে সুবিঅবস্থানে পৌঁছে গেছেনসাধারণভাবে।
সারাংশ
সম্পদের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে যে বৈষম্য তাকে শ্রেণী বলা হয়। তবে শ্রেণী বলবার সাথে সাথে কেবল
সম্পদের পার্থক্যই নয়, আমরা মন-মানসিকতা, ধ্যান-ধারণার পার্থক্যও বুঝতে পারি। আমাদের
পরিচিত সমাজ ব্যবস্থায় শ্রমিক আর মালিক বিবদমান দুইটি শ্রেণী। আর আছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী। শ্রমিক
শ্রম দিয়ে চলেছেন ন্যূনতম মজুরিতে। অন্যদিকে মালিক কোন শ্রম না দিয়ে সম্পদ ও ক্ষমতা অর্জন
করছেন। মধ্যবিত্ত শ্রেণীও কোন উৎপাদন কাজে অংশ নেন না। জাতিবর্ণ বলতে এমন এক ভেদাভেদ
ব্যবস্থা বোঝায় যা কোন মানুষের জন্মের সময়েই নির্ধারিত হয়ে যায়। অনেকের মতে এই অঞ্চলের
হিন্দুদের মধ্যেই কেবল এই ধরনের ভেদাভেদ প্রথা চালু আছে। কিন্তু অন্য নৃবিজ্ঞানীদের যুক্তি হ’ল :
এরকম বৈষম্য অন্য সমাজেও রয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন -
১। হিন্দু (সনাতন) ধর্মাবলম্বীদের ধর্মগ্রন্থ বেদ -এ কয়টি বর্ণ -এর কথা উল্ল্যেখ রয়েছে?
ক. ২টি খ. ৩টি
গ. ৫টি ঘ. ৪টি
২। প্রত্যেকটি জাতিবর্ণ একটির থেকে আরেকটি ------------- ভাবে সাজানো।
ক. ক্রমোনিন্ম খ. ক্রমোচ্চ
গ. সমান্তরাল ঘ. আড়া-আড়ি
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। জাতিবর্ণ (পধংঃব) বলতে কী বোঝানো হয়ে থাকে?
২। শ্রেণী আর শোষণের সম্পর্ক কী?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। কেবল সম্পদের পার্থক্য দিয়ে শ্রেণী ভেদাভেদকে কী ব্যাখ্যা করা সম্ভব?
২। বলা হয়ে থাকে জাতিবর্ণ ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হচ্ছে শুচিতা-অশুচিতার ধারণা। ব্যাখ্যা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]