বিয়ের প্রতিষ্ঠানে কিভাবে লিঙ্গীয় বৈষম্য প্রতিষ্ঠিত হয় আলোচনা করুন।
বাংলাদেশে বিয়ের ধরন কি রকম? আলোচনা করুন।

বিয়ের উদ্দেশ্য
বিয়ে পরিবার গঠনের মূল উৎস। আর পরিবার হচ্ছে সমাজের মূল একক। এ কারণে বিয়ে সামাজিক
জীবন যাত্রায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। হিন্দু ধর্মমতে বিয়ের উদ্দেশ্য তিনটি - ধর্ম
(ৎবষরমরড়হ), প্রজনন (ঢ়ৎড়মবহু) ও রতি বা যৌনতা (ঢ়ষবধংঁৎব)। তবে এ উদ্দেশ্য কেবল উচ্চ
জাতের (যরময পধংঃব) হিন্দুদের বেলা প্রযোজ্য। বলা হয় যে নি¤œজাতের শুদ্রদের বিয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য
যৌনতা। কারণ নি¤œজাত হিসেবে শুদ্রদের উচ্চ ধর্ম পালনের যোগ্যতা নেই। বিশেষত ব্রাহ্মণগণ যেহেতু
ধর্ম পালন করেন সেহেতু তারা শুদ্রদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কস্থাপন করতে পারেন না। তবে কেবল যৌন
সম্পর্কস্থাপনের জন্য শুদ্র নারীদেরকে বিয়ে করা যেতে পারে। উচ্চ জাতের হিন্দুদের বিবাহের সময়
অগ্নিকে সাক্ষী করা হয়। গৃহী ধর্ম হচ্ছে পুরুষ কর্তৃক তার স্ত্রীসহ প্রতিদিন ‘পঞ্চমহাগ্নী’ প্রজ্জ্বলিত করা
(কাপাডিয়া ১৯৭২)১ । যেহেতু পুরুষ ধর্ম পালনের দায়িত্ব প্রাপ্ত সুতরাং তার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করার পর যত
দ্রæত সম্ভব পুনরায় বিয়ে করে স্ত্রী সহযোগে ধর্ম পালন করাই রীতি। কিন্তুনারীদের বেলা অনুরূপ কোন
নিয়ম নেই। আসলে নারীর জন্য বিয়েই একমাত্র ধর্মীয় কর্তব্য বলে বিবেচিত। যেহেতু উচ্চ জাতের
হিন্দুদের মধ্যে বিয়ে ধর্মীয় ও পবিত্র সুতরাং তা অলঙ্ঘনীয় এবং চিরস্থায়ী বলে বিবেচনা করা হয়।
ইসলাম ধর্ম মতে বিয়ে একটি পবিত্র চুক্তি। ইসলামী আইন মোতাবেক বিয়েতে নারীর সম্মতি নেয়া
আবশ্যক। নারীর সম্মতির প্রেক্ষিতে পুরুষ ও নারীর অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ও দুইজন সাক্ষীর সাক্ষ্য
গ্রহণ করে চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তি লিখিত হলে ‘কাবিননামা’ প্রণয়ন করা হয় এবং সরকারের কাজী
অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত হয়। আবার চুক্তি মৌখিকও হতে পারে। মুসলমানদের কাছে বিয়ে ধর্মীয় কর্তব্য না
হলেও তা ‘ফরজ’ বা অবশ্য করণীয় বলে বিবেচনা করা হয়। ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী যৌন সম্পর্ক
স্থাপনের আইনগত ও ধর্মীয় বৈধতা কেবল বিয়ের মাধ্যমে হতে পারে। বিয়ের বাইরে যৌন সম্পর্ককে পাপ
কাজ বলে বিবেচনা করা হয়। এ কারণে মুসলমান সমাজেও বিয়ে ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবেই পরিগণিত
হয়েছে।
বাংলাদেশের সমাজে বিয়েকে বংশ রক্ষার জন্য অত্যাবশ্যক বলে মনে করা হয়। বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য
সন্তান জন্মদান করে বংশের নাম রক্ষা করা। বলা হয় সন্তানের মধ্যে পিতামাতা বেঁচে থাকেন। বিয়ের এই
উদ্দেশ্যটিও ধর্মীয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়। বিয়ের জন্য তাই ‘ভালো’, ‘পবিত্র’ ও ‘সতী’ নারী খোঁজার চেষ্টা

১ কধঢ়ধফরধ কগ, গধৎৎরধমব ধহফ ঋধসরষু রহ ওহফরধ, ঙীভড়ৎফ টহরাবৎংরঃু চৎবংং, উবষযর, ১৯৭২.
পাঠ - ১
বিয়ে সামাজিক সংগঠনের
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।
বিয়ে পরিবার গঠনের মূল
উৎস। আর পরিবার
সমাজের মূল একক।
চলে। বংশ রক্ষা ও ধর্ম রক্ষার উদ্দেশ্যে বিয়ের নৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করা হয়। বিয়ের সঙ্গে সম্পর্কআছে
সম্পত্তির উত্তরাধিকারের। বিয়ের মাধ্যমে সন্তান বিশেষত পুত্র সন্তান জন্মদান করা অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য।
বংশের নাম রক্ষা করার সঙ্গে সঙ্গে বংশের সম্পদ রক্ষা করাও কর্তব্য বলে বিবেচিত হয়ে থাকে।
হিন্দু ও ইসলাম দুই ধর্মেই বিয়েতে সমতা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। এর অর্থ বিয়ে হতে হবে এমন দুই
ধর্ম, গোষ্ঠী, পারিবারিক পদমর্যাদার মধ্যে যাদের অবস্থান একই রকমের। হিন্দু সমাজে বর্ণ প্রথা থাকার
ফলে একই বর্ণ ও গোত্রের মধ্যে বিয়ের রেওয়াজ গড়ে উঠে। তবে বহু অসবর্ণ বিয়েও অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মুসলমানদের মধ্যেও সম মর্যাদার বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। আশরাফ আতরাফ এবং মুসলমানদের বিভিন্ন ধর্মীয়
মাজহাবের মধ্যে বিয়ে সহজে মেনে নেয়া হয় না। সমতার নিয়মটি অধিক প্রয়োগ করা হয় ভিন্ন ধর্মের
মধ্যে বিয়ের বেলায়। মুসলমানদের মধ্যে পুরুষগণ আসমানী কিতাবের অনুসারী ধর্মাবলম্বীদের বিয়ে করতে
পারেন, তবে তা কাক্সিক্ষত নয়। এর বাইরে যেমন হিন্দু ও মুসলমান নারী পুরুষের বিয়ে ধর্মীয় মতে হওয়া
সম্ভব নয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য বৃটিশ শাসনামলে একটি আইন প্রণীত হয়। এই আইন অনুসারে
পাত্র পাত্রী কোন ধর্ম অনুসরণ করেন না এমন ঘোষণা দিয়ে তার মানে দুইজন নারী-পুরুষ হিসেবে বিয়ে
করা সম্ভব। বাস্তবে দেখা যায় যে সমাজে এই বিয়ের স্বীকৃতির জন্য পাত্র পাত্রীর কোন এক জনকে ধর্মান্তরিত
হতে হয়। অন্ততপক্ষে নাম বদল করে মুসলমান বা হিন্দু নাম গ্রহণ করতে হয়। পুরুষের তুলনায় নারী
অধস্তন হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বদলের দায়িত্ব নারীর উপর বর্তায়। বিয়েতে সমতার বিষয়টি ধনী ও
গরীবের বিয়ের ক্ষেত্রে অনেক কড়াকড়ি ভাবে বাস্তবায়িত হতে দেখা যায়।
সাধারণত বিয়ে পরিবার ও আত্মীয়স্বজন কর্তৃক আয়োজিত হয়ে থাকে। সুতরাং বিয়ের পূর্বে যদি কেউ
প্রেমের সম্পর্কসৃষ্টি করে তাহলে তাদের বিয়ের সামাজিক স্বীকৃতি সমস্যাজনক হয়ে পড়ে। প্রেমের বিয়ে
এবং আয়োজিত বিয়ের (ধৎৎধহমবফ) মধ্যে পার্থক্য করা হয়। প্রেমের বিয়ে কাজী অফিসে গিয়ে চুক্তিবদ্ধ
হয়ে করা সম্ভব। তবে কাজী অফিসে গিয়ে এ ধরনের বিয়েকে নিরুৎসাহিত করা হয়।
বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য সামাজিক সম্পর্কবৃদ্ধি করা। ইসলাম ধর্ম মতে বংশের নিকটাত্মীয় ব্যতীত
আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হওয়া সম্ভব। দূরের আত্মীয়ের সঙ্গে বিয়ে হলে সম্পর্কআরো ঘনিষ্ট এবং বিস্তৃত
হতে পারে বলে মনে করা হয়। তবে গোষ্ঠীর বাইরে ভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে বিয়ে হলে নতুন সম্পর্কপ্রতিষ্ঠিত
হয় বলে এটাই অধিক গ্রহণযোগ্য। হিন্দু ধর্ম মতে আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে।
ক্ষমতার দ্ব›দ্ব কিংবা বিরোধ মিমাংসার উপায় হিসেবেও দুই প্রতিদ্ব›দ্বী গোষ্ঠীর মধ্যে বিয়ে হয়ে থাকে। গ্রাম
থেকে শহরে বিয়ে সম্পর্কপ্রতিষ্ঠার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিয়ের মাধ্যমে শহরের শিক্ষিত ও
প্রভাবশালী পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কস্থাপন করে গ্রামীণ বিত্তশালীগণ ক্ষমতার জাল বিস্তৃত করতে আগ্রহী
হয়ে থাকেন।
বিয়ের ধরন
বিয়ের বয়স সম্পর্কেসরকারের আইন হচ্ছে মেয়ের ১৮ বৎসর ও ছেলের ২১ বৎসর বয়সে বিয়ে হতে
পারে। এর পেছনে ধারণা হচ্ছে এই যে দাম্পত্যজীবন যাপন ও যৌন সম্পর্কস্থাপনের জন্য মেয়েদের ১৮
বৎসর পর্যন্তঅপেক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের ঋতুস্রাব (সবহংঃৎঁধঃরড়হ) শুরু হওয়ার
পর থেকেই বিয়ের কথা ভাবা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১২-১৪ বৎসরের মধ্যে মেয়েদের এবং ১৮-২০
বৎসরের ছেলেদের বিয়ে দেয়া হয়। শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের মধ্যে ‘বাল্যবিবাহ’কে অনৈতিক, অমানবিক
হিসেবে দেখা হয়। গ্রামে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে মেয়ে সাবালিকা (ঢ়ঁনবৎঃু) হওয়ার পর বিয়ের ব্যবস্থা
করা পিতা মাতার উপর আবশ্যকীয় ধর্মীয় দায়িত্ব মনে করা হয়। তাছাড়া বংশের ইজ্জত (যড়হড়ঁৎ)
রক্ষা করার জন্যও সাবালিকা মেয়েকে দ্রæত বিয়ে দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করা হয়।
গ্রামে মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতার দরূণ যৌন হয়রানীসহ ধর্ষণের ভয় আছে। আর গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থায়
অবৈধ যৌন সম্পর্কহলে নারীকেই দোষারোপ করা হয়। আজকাল যৌতুকের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামে
মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। শহরে মেয়েরা শিক্ষাগ্রহণে নিয়োজিত থাকায় তাদের
বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য
সামাজিক সম্পর্কবৃদ্ধি করা।
গ্রামাঞ্চলে বাল্যবিবাহ হয়ে
থাকে। শহরের শিক্ষিত
মানুষ বাল্যবিবাহকে
অনৈতিক বলে মনে করেন।
দেরীতে বিয়ে হচ্ছে। সাধারণত লেখাপড়া শেষ করে বিয়ে দিতে অভিভাবকগণ আগ্রহী হন। শহরে যেহেতু
একজনের উপার্জনে টিকে থাকা কষ্টকর সে কারণে অনেক মেয়ে লেখাপড়া শেষে চাকুরী পাওয়ার পর
বিয়ে করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন।
হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এক পতি পতœী বিবাহ (সড়হড়মধসু) প্রচলিত। এই এক
পতœীকে বিয়ের রীতি নারীদের বেলা অবশ্য পালনীয় কিন্তপুরুষদের বেলা নয়। হিন্দু সম্প্রদায়ে ইন্ডিয়ান
পেনাল কোডে মেয়েদের বহু পতি গ্রহণ শাস্তিযোগ্য অপরাধে গণ্য করা হয়েছে। বহু পতি বিবাহ রীতি নেই
বললেই চলে। তথাপি আইন করার অর্থ হচ্ছে আইনত পুরুষের প্রাধান্য স্বীকার করে নেয়া। ইসলাম ধর্মের
বিধান অনুযায়ী একজন পুরুষ বিশেষ শর্তাধীনে বিশেষ প্রয়োজনে একাধিক এবং সর্বোচ্চ একসঙ্গে চারজন
স্ত্রী গ্রহণ করতে পারেন। ১৯৬১ সালে মুসলিম ফ্যামিলি ল’ অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে আইন করা হয় যে
দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে হলে পুরুষকে তার প্রথম স্ত্রীর অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। বাস্তবে এই আইনের
কার্যকরিতা কিছুটা লংঘিত হচ্ছে।
হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ে ধারণা করা হয় যে, বিয়ে চিরস্থায়ী এবং আজীবনের বন্ধন। হিন্দু ধর্ম
মতে নারীর জন্য বিবাহ বিচ্ছেদ নিষিদ্ধ। তবে স্ত্রী অধর্ম করলে ও সতীত্ব হারালে পুরুষ বিবাহ বিচ্ছেদ
ঘটাতে পারে। রাষ্ট্রীয় আইনে অবশ্য হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেও বিবাহ বিচ্ছেদ করা সম্ভব। মুসলমান
সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় আইনে বিবাহ বিচ্ছেদ অনুমোদিত। ইসলামী বিধান অনুসারে তালাক দেয়ার
ক্ষমতা পুরুষ বা নারী উভয়েরই থাকতে পারে। বিবাহের সময় কাবিন নামার মাধ্যমে নারীর বিবাহ বিচ্ছেদ
বা তালাক দেয়ার অধিকার স্বীকৃত তবে কাবিন নামায় স্ত্রীকে তালাক দানের ক্ষমতা উল্লেখ না থাকলে
বিবাহ বিচ্ছেদে পুরুষের একক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিধবাদের পুনর্বিবাহ প্রথা স্বীকৃত আছে। হিন্দু ধর্ম মতে বিবাহ
আজীবনের বন্ধন এবং স্বামীর মৃত্যু হলেও সে বন্ধন ছিন্ন হয় না। হিন্দু সম্প্রদায়ে বিধবাদের সতীত্ব রক্ষা
করে চলতে হয় এবং খাওয়া দাওয়া ও চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করে যৌনতা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। অন্যদিকে
ইসলাম ধর্মে বিধবা বিবাহকে উৎসাহিত করা হয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সা:) নিজেও বিধবাকে বিবাহ
করেছিলেন। মুসলিম সমাজে বিধবাগণ বিয়ে করলে তাদের স্বাভাবিক বিয়ের মর্যাদা দেয়া হয়। তবে
বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে এ জাতীয় বিয়েকে “নিকাহ বিয়া” বলা হয়। এই অঞ্চলগুলিতে “নিকাহ
বিয়ার” দম্পতিদের কখনো কখনো সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। পুরুষদের মধ্যে যারা ঘন ঘন
তালাক দেন এবং পুনর্বিবাহ করেন তাদেরকেও সমাজে মর্যাদাহীন ভাবা হয়। এ সব বিয়েকে ‘সাঙ্গা বিয়া’
বলা হয়। ‘সাঙ্গা’ বা ‘হাঙ্গা’ গ্রামাঞ্চলে গালি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সামাজিকতা
বিয়ে মূলত একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। এর বৈধতার জন্য যেমন সামাজিক স্বীকৃতি প্রয়োজন, তেমনি
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেও সামাজিকতা প্রাধান্য পায়। অধিকাংশ বিয়ে যেহেতু আয়োজিত বিয়ে ফলে
পাত্র বা পাত্রী খোঁজার দায়িত্ব পরিবার, জ্ঞাতি, গোষ্ঠী ও আত্মীয় বন্ধুবান্ধবের। বিয়ের মধ্যস্থতা করার জন্য
ঘটকের ব্যবস্থা আছে। সাধারণভাবে যে কেউ বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারলে আনন্দিত হন। আজকাল পত্র
পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে, অন্যান্য গণমাধ্যমে, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনায় এবং এমন কি কম্পিউটারে
ইন্টারনেটের মাধ্যমেও বিয়ের পাত্র পাত্রীর খোঁজ পাওয়া যায়।
বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয় ‘কনে দেখা’ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। কনেকে নানাবিধ প্রশ্ন করে ও খোঁজ খবর
নিয়ে পাত্র পক্ষের পছন্দ হলে বিয়ের পাকা কথা দেয়া হয়। নারীর জন্য আবশ্যকীয় গুণ হিসেবে বিবেচনা
করা হয় দৈহিক সৌন্দর্য, বিশ্বস্ততা, আভিজাত্য, আনুগত্য, ঘরের কাজে পারদর্শিতা ইত্যাদি। আর
পুরুষের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয় উপার্জনক্ষমতা। লক্ষ্য রাখা হয় যেন পুরুষ নারীর চেয়ে বেশী বয়সী ও
শিক্ষা দীক্ষায় বেশী হয়। সা¤প্রতিক কালে নারীর উপার্জন ক্ষমতা বিয়ের জন্য বাড়তি গুণ হিসেবে
বিবেচিত হলেও পূর্বের ধারণা বহাল আছে। বিয়ের সিদ্ধান্ত(বহমধমবসবহঃ) হলে ‘পানচিনি’ অনুষ্ঠানের
বিবাহ বিচ্ছেদে পুরুষের
আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত।
পুরুষদের একাধিক বিবাহ ও
পূন:বিবাহ সমস্যাজনক নয়।
মাধ্যমে সকলকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। বিয়ের আগে ‘গায়ে হলুদ’ অনুষ্ঠানে জ্ঞাতি সম্পর্কের সকল
মুরব্বীগণ হলুদ দিয়ে আশীর্বাদ করেন। গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানটি এক দিকে ধর্মীয় গাম্ভীর্যপূর্ণ। অন্য দিকে
আত্মীয় স্বজন মিলে রং খেলায় মেতে উঠে একে আনন্দময় করে তোলেন।
বিয়ের শুরু থেকে সকল অনুষ্ঠানে জ্ঞাতি গোষ্ঠী ও দূর দূরান্তের আত্মীয় স্বজন অংশগ্রহণ করেন। তবে
সকল অনুষ্ঠানে না হলেও বিয়ের অনুষ্ঠানে সকলের উপস্থিতি অনেকটা বাধ্যতামূলক। বিয়ের অনুষ্ঠান
অনেকদিন ধরে চলে। সব মিলে জ্ঞাতি গোষ্ঠী ও সমাজের লোকদের জানানো ও খাওয়া দাওয়ার মধ্য
দিয়ে বিয়ে সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করে। গ্রামাঞ্চলে খাওয়া দাওয়ার বড় আয়োজন করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক
সুবিধা না থাকায় সমাজের লোকজন একত্রে কাজ করেন ও তৈজসপত্র আয়োজন করেন। বিয়ে তাই
সামাজিক উৎসবের ন্যায় রূপ লাভ করে। শহরে বিয়ে আয়োজনের জন্য ঘর ভাড়া পাওয়া যায় এবং
বাণিজ্যিকভাবে খাওয়া দাওয়া, সাজসজ্জা সবকিছু করা যায়।
অর্থনৈতিক লেনদেন
বিয়ের অর্থনৈতিক বিষয় হচ্ছে মোহরানা ও যৌতুক প্রদান। ইসলাম ধর্ম মতে বিয়ের চুক্তি সম্পাদন কালে
পাত্রীকে অর্থ প্রদানের অঙ্গীকার করতে হয় পাত্রকে। এই অঙ্গীকার কাবিননামায় লেখা থাকে। কিন্তু যে
পরিমাণ অর্থ কাবিননামায় লেখা থাকে তার উল্লেখযোগ্য অংশ ‘উসুল’ বা প্রদান করতে হয়। কাবিন নামায়
উল্লেখিত অনাদায়ী অর্থ পাত্রীকে পরবর্তীতে অবশ্যই প্রদান করতে হয়। বিয়ের পর কনেকে দেন মোহর
দেয়ার বিধান মুসলিম সমাজে ধর্মীয় ভাবে আবশ্যকীয় কর্তব্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। এটি নারীর অর্থনৈতিক
ও সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করে। বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে দেন মোহর দেয়া স্বামীর জন্য
অবশ্য কর্তব্য হলেও বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে তা যথাযথভাবে অনুসৃত হয় না। এর ফলে কেবল ধর্মীয়
বিধানই লংঘন করা হয় না, বরং নারীদের তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। বাস্তবে বেশীর
ভাগ নারী এই অর্থ চান না কারণ তাহলে দাম্পত্য সম্পর্কেচ্যালেঞ্জ তৈরী হয়। মোহরানার পরিমাণ
নির্ধারিত হয় পাত্র পক্ষ ও পাত্রী পক্ষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদার উপর ভিত্তি করে। ধনী শ্রেণীর
পাত্রী পক্ষ মোহরানার পরিমাণ অনেক বেশী লিখিত রাখতে চান। পাত্র পক্ষের চেয়ে পাত্রী পক্ষের আর্থ-
সামাজিক মর্যাদা বেশী হলে পাত্র অধিক অর্থ প্রদান করেন। এটি পণ (নৎরফব ঢ়ৎরপব) দেয়া এবং এ
ধরনের বিয়েকে ‘পণের বিয়ে’ বলা হয়। স্বাভাবিক নিয়ম হচ্ছে পাত্র পক্ষ কন্যা সাজানোর জন্য স্বর্ণালঙ্কারসহ
যাবতীয় দ্রব্যাদি প্রদান করেন। আর পাত্রী পক্ষ পাত্র সাজানোর পোশাক, আংটি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি
প্রদান করেন। উপরন্তু পাত্রী পক্ষ পাত্রীকেও স্বর্ণালঙ্কারসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি দিয়ে থাকেন। পাত্রী যেহেতু
প্রচলিত নিয়মে পাত্রের বাড়ী অর্থাৎ শ্বশুরালয়ে বাস করার জন্য যান, সেহেতু বিছানাপত্রসহ নিত্য
প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি দেয়াও স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যে পড়ে।
স্বাভাবিক লেনদেনের বাইরে যৌতুক (ফড়ৎিু) বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পাত্রপক্ষ মূল্যবান দ্রব্যাদি যেমন
ঘড়ি, রেডিও, সাইকেল, টেলিভিশন, আসবাবপত্র, গাড়ী ইত্যাদি ‘দাবী’ (ফবসধহফ) করে থাকেন।
এছাড়া পাত্র পক্ষ মোটা অঙ্কের অর্থও দাবী করেন। অনেক সময় স্বর্ণালঙ্কার, জমি ও বাড়ীও প্রদান করা
হয়। ইসলামে কনের বাবা বরকে ‘জিহাম’ বা ব্যবহারযোগ্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রাদি দেয়ার রীতি
প্রচলিত। কিন্তু যৌতুক দেয়া বা নেয়া ইসলামে নিষিদ্ধ বা ‘হারাম’। কিন্তু কন্যার পৈত্রিক সম্পদের অধিকার
না থাকায় হিন্দু সমাজে যৌতুক প্রথার প্রচলন শুরু হয়। হিন্দু সমাজের অনুকরণে বাংলাদেশের মুসলমান
সমাজে যৌতুকের অনুপ্রবেশ ও ব্যপ্তি ঘটেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে যৌতুক প্রদানের জন্য একটি যুক্তি
দেখানো হয় যে বিয়ের পর মেয়ে তার বাবা-মার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে না। সুতরাং বিয়ের সময়
সম্পদ প্রদান করতে হবে যা যৌতুক হিসেবে গণ্য। মুসলমান সম্পদ্রায়ে নারীদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে
উত্তরাধিকারের নিয়ম থাকলেও বাস্তবে যৌতুক প্রদান করার রীতি চালু আছে। এতে দেখা যাচ্ছে যে মেয়ের
পরিবারকে বিয়ের অনুষ্ঠানের খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি খরচ, পাত্রপাত্রী সাজানোর খরচ এবং যৌতুকের খরচ
বহন করতে হচ্ছে। বিয়ের সময় যৌতুকের কোন দাবী না করা হলেও বিয়ের পর অনেক সময় স্বামী
বিয়ের অর্থনৈতিক বিষয়
হচ্ছে মোহরানা ও যৌতুক।
নারীদেরকে মোহরানা দেয়া
হয় না। পুরুষগণকে যৌতুক
প্রদান বাধ্যতামূলক হয়ে
যাচ্ছে। যৌতুক প্রদানে ব্যর্থ
হলে নারীরা নির্যাতনের
শিকারে পরিণত হন।
যৌতুকের জন্য স্ত্রীর উপর চাপ সৃষ্টি করেন। যৌতুক প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় অনেক নারীকে অত্যাচার,
নির্যাতন ও হত্যা করা হচ্ছে। ১০ নং ইউনিটের আলোচনা থেকে জানা যায় যে অধিকাংশ নারী নির্যাতন
ও হত্যার ঘটনা ঘটে বৈবাহিক সম্পর্কের নামে।
বিয়েতে মোহরানা ও যৌতুক ছাড়াও আরেক ধরনের অর্থনৈতিক লেনদেন হয়। বিয়েতে অংশগ্রহনকারী
অতিথিবর্গ উপহার (মরভঃ) প্রদান করেন। বিয়েতে কে কি উপহার দিলেন তা মনে রাখা প্রয়োজন। কারণ
পরবর্তীতে অন্যদের বাড়ীতে বিয়ের অনুষ্ঠানে বা অন্য কোন অনুষ্ঠানে অন্তত সম মূল্যের উপহার প্রদান
করাটাই রেওয়াজ। এটাকে উপহার বিনিময় (মরভঃ বীপযধহমব) বলা হয়ে থাকে। সামাজিক সম্পর্করক্ষার
জন্য উপহার বিনিময়ের অর্থনীতি গুরুত্বপূর্ণভ‚মিকা পালন করে।
লিঙ্গীয় বৈষম্য
মানব প্রজন্মের ধারাবাহিকতা বজায় এবং সংরক্ষণের নিমিত্তে বিবাহ ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। বিবাহ
ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে নারী পুরুষ তাদের চরিত্র সংরক্ষণ, অবাধ যৌনাচার নিয়ন্ত্রণ ও আচরণ সংযত করতে
শেখে এবং ব্যক্তির উপর এভাবে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলাম নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদা
প্রদান করেছে এবং ইসলামে কোন লিঙ্গীয় বৈষম্যকে স্বীকার করা হয়নি। নারীর ন্যয্য অধিকার প্রদানের
মাধ্যমে ইসলাম নারীকে মর্যাদার আসনে সমাসীন করেছে। বিশ্বে নারীর মর্যাদাকে করেছে মহিমান্বিত। হিন্দু
সম্প্রদায়ের মধ্যে পুরুষের ধর্ম রক্ষার জন্য নারীকে বিয়ে করা হয় আর বিয়ে করাটাই নারীর জন্য ধর্ম।
হিন্দু ধর্মে বিয়েতে নারীর তালাকের অধিকার, বিধবার বিয়ের অধিকার সব কিছুতে নারী নিগৃহীত হয়।
মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ে একটি চুক্তি। এই চুক্তি সম্পাদিত হয় নারী ও পুরুষের মধ্যে। বিয়ের
মাধ্যমে যে পরিবার গঠন করা হয় তাতে নারীর অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের উদ্দেশ্য হলো সন্তান জন্মদান।
সে সন্তানের উপর অভিভাবকত্বের অধিকার নারী ও পুরুষের উভয়ের। বিয়ের সময় নারীর সম্মতির মাধ্যমে
অধিকার স্বীকৃত হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে নারীর উপর দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। অনেক পুরুষ
স্ত্রীর অধিকারের প্রতি মনোযোগী হলে তাকে ‘স্ত্রৈণ’ বলে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। তার মানে পুরুষের এই
ধরনের আচরণকে স্বাভাবিক আচরণে পরিণত হতে দেয়া হয় না। বিয়ের পর নারীকে পিতৃগৃহ ছেড়ে
শ্বশুরবাড়ী গিয়ে নতুন সম্পর্কের মধ্যে বাস করতে হয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর অবস্থান অধস্তনতার।
তার সঙ্গে অপরিচিত পরিবেশে বসবাস তার অবস্থাকে আরো নাজুক করে তোলে। এর বিপরীতে যদি
কোন পুরুষ বিয়ের পর নারীর পৈত্রিক বাড়ীতে বসবাস করেন তাহলে তাকে ‘ঘরজামাই’ বলে তামাশা
করা হয়। এর অর্থ বিয়ের পর নারীকেই যেতে হবে পুরুষের ঘরে- পুরুষ আসতে পারবেনা নারীর ঘরে।
তবে কোন কোন মুসলিম সমাজ ব্যবস্থায় স্থানীয় প্রথা অনুসারে পুরুষকে নারীর ঘরে স্থায়ীভাবে বসবাস
করতে হয়। বিয়েতে পুরুষরাই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন প্রচুর যৌতুক প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে। নারী হয়ে
যান আর্থিক প্রাপ্তির উৎস মাত্র।
শ্রেণী সম্পর্ক
বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে বিয়ের সম্পর্কও ধরনে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সাধারণভাবে গ্রামে মেয়েদের অল্প বয়সে
বিয়ে দেয়ার রেওয়াজ আছে। তবে গ্রামীণ দরিদ্র শ্রেণী অর্থনৈতিক চাপে ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে অল্প
বয়সে বিয়ে দিয়ে থাকে। বর্তমানে গার্মেন্টস কারখানার চাকুরীর সুযোগ হওয়ায় বহু অবিবাহিত মেয়ে কাজের
সুযোগ পেয়েছে। ইসলাম ধর্মে লিখিত ও মৌখিক ভাবে বিয়ে সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে। মৌখিকভাবে
বিয়ে সম্পাদনের সুযোগ নিয়ে স্বার্থন্বেষি পুরুষ কখনো কখনো এ ব্যবস্থার অপব্যবহার করে। ফলে লিখিত
ভাবে বিবাহ সম্পাদনের উপর বাংলাদেশে গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং বিয়ের নিবন্ধীকরণ আবশ্যকীয় করা
হয়েছে। বিবাহ একটি সামাজিক চুক্তি তাই অন্যান্য চুক্তির ন্যায় এটিও লিখিতভাবে সম্পাদনের জন্য ইসলামে
নির্দেশ রয়েছে। তবুও বাংলাদেশে মুসলিম সমাজে দরিদ্রদের মধ্যে মৌখিক বিয়ের রীতি প্রচলিত। জ্ঞাতি
গোষ্ঠী ও সমাজকে দাওয়াত করে খাওয়ানোর সামর্থ তাদের নেই। অনেক সময় খরচ বাঁচানোর জন্য মেয়েকে
ছেলে বাড়ীতে নিয়ে সেখানে কলেমা পড়ে বিয়ে দেয়া হয়। একে ‘তোলা বিয়া’ বলা হয়ে থাকে। দরিদ্র শ্রেণীর
বিয়েতেও যৌতুকের চাপ পড়ছে। যৌতুকের দাবীতে বিবাহ বিচ্ছেদও ঘটছে। তবে মৌখিক বিয়েতে আইনী
জটিলতা কম থাকায় বিবাহ বিচ্ছেদ সহজ মনে করা হয়। দরিদ্র শ্রেণীতে মেয়েদের পুনর্বিবাহ
তুলনামূলকভাবে সহজ। বিধবা বিয়েতেও সমস্যা কম। শহরে বস্তিবাসীদের মধ্যে একটি জরীপের ফলাফলে
দেখা যায় যে ৪০% এর কোন কাবিননামা নেই, ২৯% কাবিননামা করলেও সঙ্গে রাখেন না, ২০% জানে
না কাবিননামা দিয়ে কি হবে (মান্নান ১৯৮৫)২ । বস্তিবাসীদের মধ্যে বহু বিবাহের প্রচলনও বেশী।
শহরের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কেউ কেউ দরিদ্র শ্রেণীর বিয়েকে সঠিক বিয়ে বলে মনে করে না। তাদের
ধারণা দরিদ্র শ্রেণীর “বিয়ের কোন নিয়ম নেই”, “বিয়ে ঠিকমত পড়ানো হয়না”, “তাদের যৌন চর্চায় অনাচার
ভরা”, “চরিত্রহীন”, “অনৈতিক” ইত্যাদি। শহরের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে এক পতি পতœী বিয়ের মতাদর্শ
প্রতিষ্ঠিত। যৌথ পরিবারের পরিবর্তে একক পরিবার গঠনের প্রবণতা এই শ্রেণীতেই বেশী। একক পরিবার
গঠনের মূল উৎস হিসেবে বিয়ে তাই তাদের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণহয়ে উঠছে। বিয়ের সকল নিয়মকানুন
পালন, আনুষ্ঠানিকতা, যৌতুক এবং বিবাহ বার্ষিকী পালন ইত্যাদি শিক্ষিত ও শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যেই
সর্বাধিক।

২ গধহহধহ গঅ, অ ঝঃঁফু ড়ভ গধৎৎরধমব, উরাড়ৎপব ধহফ ঝবঢ়ধৎধঃরড়হ অসড়হম ঝষঁস উবিষষরহম
ডড়সবহ রহ উযধশধ ঈরঃু, ইধহমষধফবংয ঝড়পরবঃু ভড়ৎ ঃযব ঊহভড়ৎপবসবহঃ ড়ভ ঐঁসধহ জরমযঃং,
উযধশধ, ১৯৮৫.
বিয়ে সামাজিক জীবনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের সমাজে বিয়েকে বংশ
রক্ষার জন্য অত্যাবশ্যক ভাবা হয়। বিয়ে পরিবার গঠনের মূল উৎস। আর পরিবার হচ্ছে সমাজের মূল
একক। বিয়েতে সমতা প্রতিষ্ঠার দিকে লক্ষ্য রাখা হয়। সাধারণত দুই ধর্ম, গোষ্ঠী ও পদমর্যাদার মধ্যে
যাদের অবস্থান একই রকমের তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কস্থাপিত হয়। তবে এর ব্যতিক্রম আছে।
আয়োজিত বিয়ের সংখ্যাই বেশী। তবে প্রেমের বিয়েকেও শহুরে মধ্যবিত্তদের মধ্যে গুরুত্ব দেয়া হয়।
বৈবাহিক সম্পর্কস্থাপনের সময় আত্মীয়তা ও সম্পর্কবিস্তৃত করার জন্য নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বিয়েকে
অগ্রাধিকার দেয়া হয় না। ক্ষমতা ও সম্পদ বৃদ্ধির মাধ্যম হিসেবে বিয়ে কাজ করে। কোন কোন ক্ষেত্রে
বিয়েতে ছেলে পক্ষ মেয়ে পক্ষের কাছ থেকে যৌতুক আদায় করেন। ইসলামি বিধানে বিয়ের চুক্তি, তালাকের
অধিকার, সন্তানের অভিভাবকত্ব, পুনর্বিবাহ, সবকিছুতে নারী পুরুষের সম ও ন্যায্য অধিকার থাকা সত্যেও
তা যথাযথ পালিত না হওয়ায় বাস্তব ক্ষেত্রে অনেক সময় নারীর অধিকার খর্ব হয়। বিয়ে সর্বোপরি একটি
সামাজিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বিয়ের আচার অনুষ্ঠানে সামাজিকতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। দরিদ্র শ্রেণীতে
সাধারণত মৌখিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়। এ কারণে দরিদ্র শ্রেণীর বিয়ের ক্ষেত্রে তালাক, নারীর পুনর্বিবাহ
ইত্যাদি তুলনামূলকভাবে সহজ।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন -
১। পণের বিয়ে কি?
ক. পাত্রপক্ষের চেয়ে পাত্রী পক্ষের আর্থ-সামাজিক মর্যাদা বেশী হলে পাত্র অধিক
অর্থ প্রদান করেন
খ. পাত্র পক্ষের মর্যাদা বেশী হওয়ায় পাত্রী পক্ষ অধিক অর্থ প্রদান করেন
গ. পাত্র পক্ষ ও পাত্রী পক্ষ হিসাব করে বিয়ের খরচ সমান ভাগ করেন
ঘ. পাত্র পক্ষের চেয়ে পাত্রী পক্ষের মর্যাদা বেশী হওয়ায় কোন লেনদেন হয় না
২। ইসলাম ধর্ম মতে অনুষ্ঠিত বিয়েতে স্ত্রী কখন স্বামীকে তালাক দিতে পারেন?
ক. সংসারে বনিবনা না হলে স্ত্রী যখন ইচ্ছা তালাক দিতে পারেন
খ. মেয়ের বাবা-মা রাজী থাকলে তালাক দিতে পারেন
গ. স্ত্রী তালাক দিতে পারেন না, স্বামী তালাক দিতে পারেন
ঘ. কাবিননামায় স্বামী স্ত্রীকে তালাক দেবার ক্ষমতা প্রত্যর্পন করলে স্ত্রী তালাক দিতে পারেন
৩। গ্রামে কেন বাল্যবিবাহ হয়?
ক. মেয়ে সাবালিকা হলে বিয়ে দেয়া ধর্মীয় কর্তব্য বলে মনে করা হয়
খ. বংশের ইজ্জত রক্ষা করার জন্য
গ. গ্রামে মেয়েদের নিরাপত্তার অভাব
ঘ. উপরের সবগুলি
৪। নিকা বিয়ে কি?
ক. অসম দুই পক্ষের মধ্যে বিয়ে
খ. যৌতুক হীন বিয়ে
গ. বিধবার পুনর্বিবাহ
ঘ. স্ত্রীর বাড়ীতে স্বামী থাকেন যে বিয়েতে
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। বিয়ের সামাজিকতা কিভাবে পালন করা হয়?
২। উচ্চশ্রেণী ও নি¤œশ্রেণীর বিয়ের মধ্যে পার্থক্য কি ধরনের?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। বিয়ের প্রতিষ্ঠানে কিভাবে লিঙ্গীয় বৈষম্য প্রতিষ্ঠিত হয় আলোচনা করুন।
২। বাংলাদেশে বিয়ের ধরন কি রকম? আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]