শহরে পরিবারের ধরন কি গ্রামাঞ্চলের পরিবারের ন্যায়? আলোচনা করুন।
নারী-প্রধান খানার ধরন কেমন হয়ে থাকে?

পরিবারের ধারণা
পাশ্চাত্য সমাজে পরিবারের একটি সহজ সংজ্ঞা প্রদান করা হয়। পাশ্চাত্যের সামাজিক বাস্তবতায় স্বামী-
স্ত্রী ও তাদের অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক সন্তানদের একত্রে এক গৃহে বসবাস করা স্বাভাবিক। অর্থাৎ পরিবার মানে স্বামী-
স্ত্রী এবং তাদের সন্তান। পরিবারের বৈশিষ্ট্য হিসেবে নির্ধারিত হয় বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে একজন নারী
ও একজন পুরুষ অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর বৈধ যৌন সম্পর্ক, প্রজনন এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা। এর সঙ্গে যুক্ত
হয় পরিবারের সাধারণ আবাসস্থল অর্থাৎ গৃহস্থালী (যড়ঁংবযড়ষফ)। এসকল বৈশিষ্ট্যের আলোকে
পাশ্চাত্যের সমাজ বিজ্ঞানীগণ পরিবারের সংজ্ঞা দাঁড় করান। পরিবার হচ্ছে বিয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট এমন
একটি সামাজিক দল যারা একত্রে বসবাস করে, সন্তান জন্মদান করে এবং অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা
করে। এ সংজ্ঞা অনুযায়ী পরিবার মানে অণুপরিবার (হঁপষবধৎ ভধসরষু)। পাশ্চাত্যের সমাজ বিজ্ঞানীগণ
অণুপরিবারের ধারণার আলোকে পরিবারকে বিশ্বজনীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধারণা করেন। তাদের ধারণা
পাশ্চাত্য ও অপাশ্চাত্য সকল সমাজেই বিয়ের মাধ্যমে বৈধ যৌন সম্পর্কপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং রক্ত সম্পর্কের
মধ্যে নিকটতম অর্থাৎ সন্তান সন্তুতিদের সঙ্গে একত্রে বসবাস করে।
প্রাক ঔপনিবেশিক কালের একান্নবর্তী পরিবার
বৃটিশ শাসনের পূর্বে উপমহাদেশে বহু পিতৃপ্রধান ও মাতৃসূত্রীয় এবং দুটির সংমিশ্রনসহ বিভিন্ন ধরনের
সংঘবদ্ধ সংগঠন ছিল। এগুলি নানাবিধ সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে আন্তসম্পর্কের ফলে
ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছিল। বাংলা অঞ্চলে সর্বাধিক প্রচলিত ছিল চার-পাঁচ প্রজন্মের একান্নবর্তী পরিবার।
এটি রক্ত সম্পর্কিত মানুষজনের যৌথ বা জোটবদ্ধ সামাজিক প্রতিষ্ঠান। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল যৌথতা
বা যূথবদ্ধতা। যদিও রক্ত সম্পর্কযূথবদ্ধতায় মুখ্য ভ‚মিকা পালন করতো, এতে যুক্ত হতো বৈবাহিক
সম্পর্ক, পোষ্য, আত্মীয়তা ও বন্ধুত্ব। এই সকল প্রতিষ্ঠানকে অনেকে যৌথ পরিবার বলে থাকেন।
মূল সম্পর্কপ্রতিষ্ঠিত হতো রৈখিক জ্ঞাতি (ষরহবধষ শরহ) সূত্রে যেমন, দাদা-বাবা-ছেলে-নাতি এবং পার্শ্বিক
জ্ঞাতিসূত্রে (পড়ষষধঃবৎধষ শরহ) যেমন, দাদার ভাই, বাবার ভাই, চাচাতো ভাই। যৌথ পরিবারের
অত্যাবশ্যক বৈশিষ্ট্য ছিল সম্পত্তির যৌথ অংশীদারিত্ব(পড়ঢ়ধৎপবহধৎু)। সম্পত্তির তত্ত¡াবধানের দায়িত্ব
বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির কাছে থাকলেও সকল পুরুষ সে সম্পত্তির সহ-উত্তরাধিকারী ছিলেন। যৌথ পরিবারের
সদস্যগণ একত্রে বসবাস করতেন, খাওয়া দাওয়া করতেন, ধর্মীয় ও পারিবারিক উৎসব একত্রে উদযাপন
করতেন, সকলের আয় সাধারণ সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করতেন। তারা মুনাফা একত্রে ভোগ করতেন ও
সাধারণ সম্পত্তি থেকে সকল ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যয় করতেন। কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতিতে শ্রমের চাহিদা
পাঠ - ২
পাশ্চাত্যে পরিবার মানে অন্ধ
পরিবার। সেখানে স্বামী-স্ত্রী
তাদের অবিবাহিত সন্তানদের
নিয়ে একত্রে বাস করেন।
পূরণের ক্ষেত্রে যৌথ পরিবার কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণহয়ে উঠে। কৃষির পাশাপাশি শিল্পের
যোগান ও ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন মিটানোর জন্যও যৌথ পরিবার কার্যকর ছিল। যৌথ পরিবারের কর্তার
কাছেই কর্তৃত্ব কেন্দ্রীভ‚ত ছিল। যৌথ পরিবারের সদস্যগণের অবস্থান স্তরায়িত ছিল (যরবৎধৎপযু) উর্ধতন
ও অধস্তনদের মধ্যে।
যৌথ পরিবারে সংহতি আনয়নের জন্য কর্তৃত্বের সম্পর্কবাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশ কড়াকড়ি করা হতো।
সামাজিক সম্পর্কস্থাপনের ক্ষেত্রে যৌথ পরিবার একটি ইউনিট হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করতো। পারিবারিক
বিরোধ মিমাংসায়ও পারিবারিক সিদ্ধান্তই চ‚ড়ান্তবলে বিবেচ্য ছিল। সব মিলে যৌথ অস্তিত্বের মধ্যে ব্যক্তিক
অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। যৌথ স্বার্থ এত প্রবল হয়ে উঠে যে ব্যক্তি স্বার্থ মাথা চাড়া দিয়ে উঠার সম্ভাবনা
কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। সামগ্রিক সমাজ ব্যবস্থাও যৌথ পরিবারের অস্তিত্বের পক্ষে নিয়ন্ত্রকের ভ‚মিকা
পালন করে। তবে যৌথতার প্রতি আনুগত্যের বিনিময়ে সদস্যগণ লাভ করেন আজীবন নিরাপত্তা। যে
কোন ধরনের অর্থনৈতিক সঙ্কট, বেকারত্ব, দুর্ভিক্ষ ও অসুস্থতার মোকাবেলা করা যৌথ পরিবারের নৈতিক
দায়িত্বহিসেবে বিবেচিত হতো। বাল্য বিবাহের ফলে পরিবারের মেয়েদের দীর্ঘকাল ভরনপোষণ, এমনকি
বেকার জামাইদের ভরনপোষণ, পুত্রের মৃত্যু হলে তার বিধবা স্ত্রী ও সন্তানদের ভরনপোষন, কন্যার বিবাহ
বিচ্ছেদে অথবা বিধবা হলে তাদের ভরনপোষণ এবং অসুস্থ ও পঙ্গু সকল সদস্যের ভরনপোষণ যৌথ
পরিবারের সম্পদ দিয়েই করা হতো। যৌথ পরিবারের সদস্যগণ শিক্ষাগ্রহণ কিংবা চাকুরীর জন্য শহরে
অবস্থান করলেও তাদের সদস্যপদ খারিজ হতো না। কোন কারণে বিরোধের ফলে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে
গেলেও সৃষ্টি হতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যৌথ পরিবার। এগুলি বর্ধিত হয়ে বড় যৌথ পরিবারে পরিণত হতো। থাকা
খাওয়ার ব্যবস্থা পৃথক হলেও সম্পত্তির পৃথকীকরণ খুব একটা ঘটতো না। যৌথ পরিবার ‘আদর্শ’ হওয়ায়
দরিদ্র শ্রেণীরও লক্ষ্য ছিল এ ধরনের পরিবার গঠন। কিন্তুপ্রধানত জনসংখ্যাগত ও অর্থনৈতিক কারণে
দরিদ্র শ্রেণীর মধ্যে বড় যৌথ পরিবার দেখা যেতো না। দরিদ্র শ্রেণীর মধ্যে মৃত্যু হার বেশি ছিল। শিশু ও
মাতৃ মৃত্যুর হারও বেশী ছিল। ফলে বয়ষ্ক ব্যক্তির সংখ্যা কম হওয়ায় প্রজন্মের গভীরতা দরিদ্র শ্রেণীতে
কম ছিল।
ঔপনিবেশিক আমলে সূচিত পরিবর্তন
উপমহাদেশে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসক বর্গ প্রশাসনিক, মতাদর্শিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন ধারা সৃষ্টি
করে। আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক শাসক গোষ্ঠী উপমহাদেশের মৌলিক প্রতিষ্ঠানসমূহ
ভেঙ্গে পাশ্চাত্যের আলোকে পুণর্গঠিত করে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুঁজিবাদ (পধঢ়রঃধষরংস), মতাদর্শিক
ক্ষেত্রে উদারতাবাদ (ষরনবৎধষরংস) এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সমতার (বয়ঁধষরঃু) নীতি
প্রবর্তিত হয়। এর ফলে জন্মের ভিত্তিতে যৌথ পরিবারভুক্ত হওয়ার নিয়মে উদারতাবাদ চ্যালেঞ্জ তৈরী
করে। উদারতাবাদ শিক্ষা দেয় যে একজন ব্যক্তি স্ব ইচ্ছায় কোন চুক্তিবদ্ধ হবেন, কেবল জন্মের জন্য বাধ্য
হয়ে চুক্তিবদ্ধ হবেন না। পাশ্চাত্যের গণতান্ত্রিক নীতি শিক্ষা দেয় যে একজন ব্যক্তি কর্তৃপক্ষের নেয়া সিদ্ধান্ত
বিনা প্রশ্নে মেনে নেবেন না। সিদ্ধান্তের প্রতি যদি ব্যক্তির সমর্থন থাকে তাহলেই কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তগ্রহণ
করতে পারবে। উদারতাবাদের আরেকটি দিক হচ্ছে যুক্তিবাদ (ৎধঃরড়হধষরংস)। পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদ
শিক্ষা দেয় যে সনাতন প্রতিষ্ঠান ও প্রথা গ্রহণযোগ্য হবে না যদি সেগুলি যুক্তিগ্রাহ্য না হয়। পাশ্চাত্যের
মতাদর্শ এই শিক্ষা দেয় যে কোন কিছু পবিত্র বলে অলঙ্ঘণীয় ভাববার কোন যুক্তি নেই। অনিবার্যভাবেই
যুক্তিগ্রাহ্য না হলে যে কোন পবিত্র বলে বিবেচিত প্রতিষ্ঠান যুক্তিহীন হওয়ার কারণে ধ্বংস করতে হবে।
এভাবে সমষ্টিবাদ এর বিপরীতে ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদ মতাদর্শ হিসেবে ঘোষিত হয়। যৌথ স্বার্থের বদলে স্থান
পায় ব্যক্তি স্বার্থ। ব্যক্তির মতামত, ব্যক্তির উদ্যোগ, ব্যক্তির সিদ্ধান্তঅগ্রাধিকার পায়। ব্যক্তির অধিকারের
নতুন ধারণা সৃষ্টি হয়। ব্যক্তির স্বাধীনতার অধিকার গুরুত্ব পায়। ব্যক্তির স্বাধীনতার অধিকার বিস্তৃত হয়
সামাজিক, অর্থনৈতিক, গৃহ ব্যবস্থাপনা ও রাজৈেনতিক সকল ক্ষেত্রে। উপমহাদেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীর
ভিন্নতাকে উপেক্ষা করে বৃটিশ শাসকগণ অভিন্ন(ঁহরভড়ৎস) অপরাধ আইন জারি করে। কোর্টগুলিতে
প্রাক ঔপনিবেশিক কালে
বাংলা অঞ্চলে সর্বাধিক
প্রচলিত ছিল চার-পাঁচ
প্রজন্মের একান্নবর্তী যৌথ
পরিবার। এর অন্যতম
বৈশিষ্ট্য ছিল সম্পত্তির যৌথ
অংশীদারিত্ব।
বৃটিশ বিচারকগণ দেশীয় রীতি নীতি আইন কানুন উপেক্ষা করে পাশ্চাত্যের আইনের ধারণা দ্বারা
বিচারকার্য পরিচালনা করেন। এর প্রভাবে উপমহাদেশের সমাজ কাঠামো ভেঙ্গে যেতে থাকে।
ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাবে উপমহাদেশে মতাদর্শিক রূপান্তর ঘটে। পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রভাবে
উৎপাদন পৃথক হয়ে যায় পুনরুৎপাদন থেকে। পূর্বে যৌথ পরিবারগুলিতে অর্থনৈতিক উৎপাদন ও সন্তান
জন্মদান ও লালন পালনের কাজ হতো। নতুন ব্যবস্থায় উৎপাদন গৃহস্থালীর বাইরে সংগঠিত হওয়ায় ঘর
ও বাহির, প্রাইভেট ও পাবলিক গন্ডী পৃথক হয়ে যেতে থাকে। ফলে নারী সন্তান লালন পালনের জন্য
পরিবারে ও পুরুষ বহির্জাগতিক যেমন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সকল কাজের জন্য
পরিবারের বাইরের পরিসরে কর্মে নিয়োজিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাশ্চাত্যের শিক্ষা পদ্ধতি অনুশীলন
করে বাঙ্গালী সমাজে চাকুরীজীবী শ্রেণীর আবির্ভাব ঘটে। ধীরে ধীরে মজুরী অর্থনীতি বিকাশ লাভ করতে
থাকে। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ও আধুনিক এই মধ্যবিত্ত শ্রেণী বিয়ে, পরিবার, সামাজিক সংগঠন, নারী
পুরুষ সম্পর্কইত্যাদি সকল বিষয়ে পাশ্চাত্যের মতাদর্শ লালন করেন। বৃটিশ শাসকদের সহযোগী শ্রেণী
হিসেবে সমাজে শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের আধিপত্য বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে তাদের নতুন মতাদর্শ আধিপত্যশীল
মতাদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেতে থাকে। এক পতি পতœীর অণুপরিবারকে আধুনিক ব্যবস্থা হিসেবে
দাঁড় করানো হয়।
ঔপনিবেশিক আমলে সৃষ্ট রূপান্তরের ধারা বাংলাদেশেও চলমান। যেসব খন্ডিত যৌথ পরিবার এখনো টিকে
আছে সেগুলিতে অর্থনৈতিক বিষয়ে দ্ব›দ্ব সৃষ্টি হয়। যৌথ পরিবারের অর্থনৈতিক দায় দায়িত্বের বিষয়গুলি
আধুনিকতার প্রভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। মতাদর্শিক ক্ষেত্রে দ্ব›দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। যৌথ
পরিবারের মতাদর্শ হচ্ছে সহযোগিতার। এই যৌথতা টিকে থাকে যৌথ পরিবারে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে কর্তৃত্ব
মেনে নেয়ার উপর। যৌথ পরিবারের এই কর্তৃত্ব পরায়নতা ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবোধে উজ্জীবিত সদস্যদের মনে
বিরোধের মনোভাব জন্ম দেয়। আধুনিক শিক্ষা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধারণ করার
ফলে যৌথ পরিবারের উর্ধতন-অধস্তন সম্পর্ককে অনেকেই মেনে নিতে নারাজ।
উল্লেখ্য যে পাশ্চাত্যের পরিবারের ন্যায় শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণী যে অণুপরিবার গঠন করে তাতেও
কর্তৃত্বপরায়ন সম্পর্কটিকে থাকে। এই সব অণুপরিবারে পুরুষ কর্তা একনায়কসুলভ আচরণ করেন ও
ক্ষমতা চর্চা করেন। এসকল পরিবারেও বয়সের ভিত্তিতে মর্যাদার স্তরীকরণ করা হয়। সন্তানদের মধ্যেও
বয়সের ভিত্তিতে মর্যাদার পৃথকীকরণের সামাজিকীকরণ করা হয়। পাশ্চাত্যের সমতার নীতির প্রসঙ্গ টানা
হয় ঠিকই। কিন্তুঅণু পরিবারে নারী পুরুষ সম্পর্কেসমতা প্রতিষ্ঠিত হয় না। তার মানে পাশ্চাত্যের বুর্জোয়া
ব্যক্তিতান্ত্রিক নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার নামে সনাতন নৈতিকতার রূপান্তর ঘটে। কিন্তুএই রূপান্তরিত নৈতিকতা
বৈষম্যমূলক।
বাংলাদেশে পরিবারের গঠন
বাংলাদেশে সমাজের ক্ষুদ্র একক হিসেবে পরিবার ও গৃহস্থালীর নির্দিষ্ট ধরন নির্ণয় করা সমস্যাজনক।
কারণ এর রূপ বিভিন্ন ধরনের এবং এটি অনবরত পরিবর্তনশীল। গ্রামে সামাজিক সংগঠনের সবচেয়ে ক্ষুদ্র
একক হচ্ছে ‘ঘর’। একটি ঘরে সাধারণত একটি অণুপরিবার বাস করতে পারে। কিন্তুঘরের পরিচয়ে
সবকিছুঅন্ত—র্ভুক্ত নয়। গৃহস্থালী বলতে বোঝায় ‘চ‚লা’ বা ‘খানা’। এটি খাওয়া দাওয়ার একক। একটি
খানায় অনেকগুলি ঘর যুক্ত থাকতে পারে। খানা হচ্ছে উৎপাদন ও ভোগের ইউনিট। খানার সদস্যগণ
তাদের উপার্জন একত্রিত করেন, উৎপাদনের কাজ একত্রে করেন এবং সিদ্ধান্তগ্রহণ করেন। একটি খানায়
একটি অণুপরিবার, কয়েকটি অণুপরিবার এবং রক্ত সম্পর্কের ও বৈবাহিক সম্পর্কের অন্যান্য সদস্যগণ
থাকতে পারেন। কয়েকটি ঘর ও খানা নিয়ে গড়ে উঠে ‘বাড়ী’। ভৌগোলিক ভাবে ঘর ও খানাগুলি গড়ে
উঠে অনেকটা বৃত্তাকার ভাবে এবং মধ্যস্থলে ফাঁকা জায়গা বা আঙ্গিনা রেখে। সব ঘরের বাসিন্দাগণ এই
আঙ্গিনা সাধারণভাবে ব্যবহার করেন। একটি বাড়ীর সকল গৃহস্থালী সাধারণত রক্তের সম্পর্কেসম্পর্কিত।
বাড়ীর এই এককটিকে গোষ্ঠী বলা হয়। তবে গোষ্ঠী আরো বড় হতে পারে এবং অনেকগুলি এ ধরনের
ঔপনিবেশিক শাসনের
প্রভাবে উপমহাদেশে
মতাদর্শিক রূপান্তর ঘটে।
এর প্রভাবে যৌথ পরিবার
কাঠামো ভেঙ্গে যায়।
গ্রামে সামাজিক সংগঠসবচেয়ে ক্ষুদ্র একক হ‘ঘর’। কিন্তু ঘরের পরিসবকিছু অন্তর্ভুক্ত নয়গৃহস্থালী বলতে বোঝাবা ‘খানা’ যেটি খাওয়াদাওয়ার একক।
বাড়ী থাকতে পারে। একটি বাড়ীতে বসবাসকারী খানাগুলির পৃথক খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও তাদের
চাষাবাদের সকল জমি কিংবা কিছু জমি একত্রে থাকতে পারে। জমি না থাকলেও তারা একত্রে কৃষি
উৎপাদনে শ্রম নিয়োগ করেন। ব্যবসাও একত্রে করতে পারেন। খানার গঠনে অনুপস্থিত অথবা
সাময়িকভাবে অনুপস্থিত সদস্য থাকতে পারেন যারা গ্রামের বাইরে এবং শহরে কাজ করেন কিন্তুউপার্জনের
অংশ খানায় ব্যয় করেন। সাধারণত সামাজিক কর্মকান্ডে একটি বাড়ী একটি ইউনিট হিসেবে প্রতিনিধিত্ব
করে থাকে। খানার প্রধান ব্যক্তিকে কর্তা বা মালিক বলা হয়। বাড়ীর প্রধান হচ্ছেন ‘মুরুব্বী’। এই মুরুব্বী
বাড়ীর পক্ষ থেকে বাড়ীর বাইরে প্রতিনিধিত্ব করেন। বাড়ীর ভেতরে সদস্যগণের ঝগড়া ও বিরোধ প্রধানত
বাড়ীতেই মিমাংসা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার ফলে খানার প্রধান পুরুষ হয়ে থাকেন। তবে বিবাহ ভাঙ্গন অথবা অবসান,
স্বামীর মৃত্যু এবং স্বামী গৃহ ত্যাগ করার কারণে নারী-প্রধান খানা সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলি আইনত নারী-প্রধান
(ফবলঁৎব)। এছাড়া অনির্দিষ্ট কালের জন্য পুরুষ সদস্য অনুপস্থিত থাকায় কার্যকর (ফবভধপঃড়) নারীপ্রধান খানা সৃষ্টি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে দেখা যায় যে ১৯৯৬ সনে
বাংলাদেশে নারী-প্রধান খানার শতাংশ সর্বমোট গৃহস্থালীর ৩.৪৮%। প্রকৃতপক্ষে নারী- প্রধান খানার
সংখ্যা আরো বেশী হবে। কারণ পরিসংখ্যানে কোন খানায় স্বামী না থাকলেও পুত্র বা কোন প্রাপ্ত বয়স্ক
পুরুষ থাকলে সে পুরুষকেই খানা প্রধান বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আবার এমন অনেক খানা আছে
যেখানে স্বামী অনুপস্থিত। বহু বিবাহের কারণে স্বামী অন্যত্র বসবাস করতে পারেন। অনেকের স্বামী গ্রামের
বাইরে বা শহরে কাজ করেন। কার্যত এসব খানাগুলিও নারী-প্রধান। স্বামী উপস্থিত থাকলেও নারী প্রধান
উপার্জনকারী হিসেবেও নারী-প্রধান খানা সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে স্বামী অসুস্থ, অক্ষম, বেকার হওয়ার
কারণে অর্থোপার্জন করতে পারেন না। এসব খানাগুলিও কার্যত নারী-প্রধান খানা। নারী-প্রধান গৃহস্থালীর
মধ্যে যে সব নারী জমির মালিক তারা তাদের পিতার বা মাতার বংশের পুরুষ আত্মীয়কে নিয়ে আসেন
চাষাবাদ তদারকীতে সাহায্য করার জন্য। তবে অধিকাংশ নারী-প্রধান খানা দারিদ্র ও নিরাপত্তাহীনতার
কারণে বিপন্ন অবস্থায় পড়ে। প্রচলিত ধারণার বিপরীতে অর্থাৎ পুরুষ প্রধান না হওয়ায় এসব পরিবারকে
‘বিচ্যুত’ ধরে নিয়ে সমাজ মতাদর্শিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে।
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে গৃহস্থালীর বিকাশের একটি চক্র আছে (জ্যানসেন ১৯৮৭)১ । একটি
আদর্শ গৃহস্থালীর ধরন হচ্ছে বর্ধিত বা আংশিক যৌথ পরিবার। এই বর্ধিত পরিবারে বাবা-মা তাদের
অবিবাহিত কন্যা ও পুত্র, বিবাহিত পুত্র এবং নাতি-নাতনীদের নিয়ে বসবাস করেন। বর্ধিত পরিবারের
কর্তার মৃত্যু হলে ধারণা করা হয় যে ছেলেদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ অথবা সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও উপার্জনকারী ছেলে
গৃহস্থালীর কর্তা হবেন এবং বর্ধিত পরিবারটি টিকে থাকবে। দেখা যায় যে অধিক জমির মালিকানা আছে
যেসব গৃহস্থালীর সাধারণত সেগুলির গঠন অধিক জটিল আকার ধারণ করে। সাধারণত বর্ধিত পরিবারটির
ছেলেরা সম্পত্তি ভাগ করে কয়েকটি অণুপরিবার কিংবা কয়েকটি জটিল গঠনের পরিবারে বিভক্ত হয়ে
পড়ে। অণু পরিবার গুলি আবার সম্প্রসারিত হয় এবং আদর্শ গৃহস্থালীর অবস্থায় পৌঁঁছায়।
ধনী শ্রেণীর পরিবার
গ্রামে ধনী শ্রেণীর গৃহস্থালীগুলি বর্ধিত ও বড় পরিবার গঠনের উপর জোর দিয়ে থাকে। এই ধরনের আংশিক
যৌথ পরিবারগুলি সামাজিক মর্যাদা লাভ করে। এগুলির সামাজিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তাও অধিক।
এসব কৃষকগণ যৌথ পরিবারে থাকার পক্ষপাতী। ধনী কৃষকের যৌথ পরিবার দীর্ঘদিন টিকে থাকে জমি
ভাগ না করার কারণে। জমি ভাগ না হওয়ায় বিবাহিত ছেলেরা তাদের সন্তানসহ অন্তত পিতার মৃত্যু পর্যন্ত
যৌথ পরিবারে বাস করেন। চাষাবাদের কাজে সহযোগিতার জন্য ধনী কৃষকগণকে পোষ্য পুত্র গ্রহন করতে
দেখা যায়। অনেক সময় ধনী গৃহস্থালীতে স্থায়ী কর্মচারী রাখা হয় যারা যৌথ পরিবারেই বাস করেন। ধনী


ঔধহংবহ ঊ.এ, জঁৎধষ ইধহমষধফবংয: ঈড়সঢ়বঃরঃরড়হ ভড়ৎ ঝপধৎপব জবংড়ঁৎপবং, টচখ, উযধশধ,১৯৮৭.
ষকগণ যৌথ পরিবারে
পক্ষপাতী। ধনী কৃষক
রিবার দীর্ঘদিন টিকিয়ে
ত পারেন জমি ভাগ না
করে।
একটি আদর্শ গৃহস্থালীর ধরন
হচ্ছে বর্ধিত বা আংশিক
যৌথ পরিবার।
কৃষকগণ দূরবর্তী আত্মীয়স্বজনের মধ্যে দরিদ্র আত্মীয়দেরকেও কাজে সহযোগিতার জন্য নিয়ে আসেন।
বিবাহ বিচ্ছেদ কিংবা বিধবা হওয়ার কারণে অনেক নারী তাদের সন্তানসহ ধনী কৃষকের গৃহস্থালীতে একত্রে
বসবাস করেন। ধনীকৃষকগণের বর্ধিত পরিবারে অনেক অনুপস্থিত সদস্য থাকেন। নিজেদের প্রভাব,
মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ধনী কৃষকগণ সন্তান কিংবা ভাইদের শহরে লেখাপড়া করার জন্য ও চাকুরীর
জন্য প্রেরণ করেন। শহরে বসবাস করলেও জমিজমা অবিভক্ত থাকায় গ্রামের যৌথ পরিবারে তারা অর্থ
প্রেরণ করেন ও নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করেন। এভাবে দেখা যায় যে জমি যৌথ পরিবারের
একাত্বতার প্রধান উৎস।
সাধারণত উত্তরাধিকার বন্টনের ফলে জমি ভাগ হয়ে খন্ডিত ও ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। কিন্তুধনী কৃষকের
ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তাদের বিভিন্ন ধরনের আয়ের উৎস এবং নগদ অর্থ থাকায় জমি খন্ডিতকরণ রোধ
করতে পারেন এবং সেটিকেই গুরুত্ব দেন। উত্তরাধিকার ভাগাভাগি হয়ে গেলেও তা যৌথতাকে নস্যাৎ
করে না। তারা একই বাড়ীতে পাশাপাশি বাস করেন। ভাগাভাগির বাস্তব অর্থ অনেক সময় দাঁড়ায় ঘরের
পাশে নতুন ‘চ‚লা’ বসানো এবং খাওয়া দাওয়ার পৃথক আয়োজন করা। অর্থাৎ ধনী কৃষকগণ একই আঙ্গিনায়
বসবাস, পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ ও সম্পর্করক্ষা, সাহায্য সহযোগিতা করা, উৎসব একত্রে
উদযাপন করা ইত্যাদি নানাভাবে যৌথ পরিবারের ঐক্য রক্ষা করেন।
তবে জমি অত্যন্তমূল্যবান হওয়ায় ধনী কৃষক গৃহস্থালীতে সংঘর্ষ প্রকট হয়ে উঠে। জমি বন্টনকে কেন্দ্র
করে সন্দেহ ও ষড়যন্ত্রদানা বাঁধে। ধর্মীয় আইনে বন্টন রীতি বেঁধে দেয়া আছে। তবু দেখা যায় যে
নানাবিধ উপায়ে জমির ও সম্পদের অসম বন্টন হয়ে থাকে। অনেকে বন্টনের পূর্বেই কারো কারো নামে
জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। অনেক ছেলে যৌথ পরিবারে তাদের অবদান বেশী দাবী করে অধিক জমি গ্রহণ
করেন। অনেক ক্ষেত্রে ধনী শ্রেণীর কর্তা নিজের ইচ্ছা ও পছন্দমত জমি বন্টনের উইল করতে পারেন যা
বৈষম্যমূলক হতে পারে। অনেক সময় যৌথ পরিবারের কর্তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী জমিজমা একত্রিত
রাখতে অপারগ হন। অনেক সময় জমির পরিমাণ কম হলে ভাগ বাটোয়ারার পর বৃদ্ধ মা তার সন্তানদের
দ্বারা নিগৃহীত হয়ে থাকেন। আবার অনেক সময় মধ্য বয়স্ক নারী তার স্বামীর মৃত্যুর পর যৌথ পরিবারের
নেতৃত্ব দেন। পুরুষতান্ত্রিক চাপ কিছুটা কমার ফলে তারা স্বাধীনতা ভোগ করেন এবং গ্রামীণ সমাজে ক্ষমতা
চর্চা করেন।
দরিদ্র কৃষক পরিবার
গ্রামে ভ‚মিহীন দরিদ্র কৃষকদের গৃহস্থালীর গঠন ও বিকাশে ভ‚মি কিংবা মূল্যবান সম্পদের কোন ভ‚মিকা
নেই। এইসব পরিবার অনেক সন্তান জন্মদান করতে চান কারণ সন্তানগণ বিভিন্ন ভাবে আয় উপার্জন করে
পরিবারে অর্থের যোগান দেয় এবং বৃদ্ধ বয়সে ভরন পোষণ করে। সন্তানগণই অর্থনৈতিকভাবে মূল্যবান
সম্পদ। দেখা যায় ছয় বৎসর থেকেই ছেলেমেয়েরা সংসারের আয় রোজগার ও গৃহকর্মে সহযোগিতা করে
গৃহস্থালীতে অবদান রাখেন। ছেলেরা বিয়ের পরও কিছুকাল বাবা মার সঙ্গে থাকেন এবং অর্থনৈতিক
সহযোগিতা প্রদান করেন। কিন্তুদরিদ্র পরিবারে আয় রোজগারে বৈষম্য নিয়ে খুব সহজেই বিরোধের
সূত্রপাত হতে পারে। একত্রে বসবাসের আদর্শ তাদের মধ্যে কাজ করে কিন্তু
আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় তা সম্ভব হয় না। তবে দরিদ্র পরিবারেও অণুপরিবার হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
বিবাহিত পুত্রগণ অধিকাংশ সময় ভাগাভাগি করে ছোট ভাইবোন ও বাবা মাকে অর্থনৈতিক ভাবে
সহযোগিতার দায়িত্ব পালন করেন। দরিদ্র গৃহস্থালীতে খুব ঘন ঘন সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি পরিবর্তিত হয়
তাদের আর্থিক অবস্থার সঙ্গে মিল রেখে। যেমন বৎসরে যে সময় আর্থিক অবস্থা ভালো থাকে সে সময় যে
ছেলে সবচেয়ে বেশী ভালো অবস্থায় থাকে সেই ছেলে বেশী দায়িত্ব পালন করেন। যখন আর্থিক অবস্থা
খারাপ থাকে তখন গৃহস্থালীর সদস্যগণ অন্য গৃহস্থালীতে খাওয়া দাওয়া করেন অথবা নিজেরাই পৃথক
গৃহস্থালী স্থাপন করে বাঁচার সংগ্রাম চালান।
শহরে পরিবারের ধরন
বাংলাদেশে শহরগুলি এখনো গ্রাম থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন নয়। বলা হয়ে থাকে যে শহর উন্নত হওয়ার
কারণে এর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় নি বরং গ্রামের অবস্থা অত্যধিক খারাপ হওয়ার কারণে দরিদ্র মানুষ শহরে
অভিবাসন করেছে। একে অনেকে শহরের কৃষক সামাজিকীকরণ বা ঢ়বধংধহঃরুধঃরড়হ ড়ভ পরঃরবং ও
বলে থাকেন। শহরে নি¤œমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণীর মধ্যেও বর্ধিত গৃহস্থালী বা মিশ্র গৃহস্থালীর ধরন দেখা
যায়। গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসনকৃত গৃহস্থালীগুলিকে অনেকটা অণুপরিবারের ন্যায় দেখায়। কিন্তুলক্ষ্য
করলে দেখা যায় যে এসকল পরিবারের নিবিড় সম্পর্কবিরাজ করে গ্রামের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে অথবা
তাদের মূল গৃহস্থালীর সঙ্গে। এ কারণে শহরের গৃহস্থালীর ধরন বোঝার জন্য জীবনযাপন পদ্ধতি বা সড়ফব
ড়ভ ষরারহম দেখা জরুরী। তার মানে কেবল একই স্থানে বসবাস (পড়-ৎবংরফবহপব) ও একসঙ্গে খাওয়া
দাওয়া (পড়সসড়হ শরঃপযবহ) দ্বারা গৃহস্থালীর যৌথতা বোঝা যায় না। যৌথতা অনেক সময় প্রতিষ্ঠিত
হয় সম্পর্কদ্বারা। এবং গৃহস্থালীর ধরন যাচাই করা যায় এর কার্যকলাপ দ্বারা ভঁহপঃরড়হধষ ঁহরঃ হিসেবে।
ঢাকা শহরে এমন বহু গৃহস্থালী আছে যাতে একজন পুরুষ বা নারী সদস্য কাজ করার জন্য ঢাকায় থাকেন
কিন্তুতাদের আত্মীয় স্বজন গ্রামে বাস করেন। গ্রামের মূল গৃহস্থালীতে তারা অর্থ প্রেরণ করেন, অসুস্থতায়
পাশে থাকেন এবং নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। ঢাকায় বসবাসকালেও তারা একা বাস করেন না।
হয়তোবা তারা অন্য কোন অণুপরিবারের সঙ্গে ঘর ভাগ করে থাকেন অথবা কয়েকজন সহকর্মী মিলে
একসঙ্গে মেসে থাকেন। এই ধরনের গৃহস্থালীকে অণু পরিবার বলা যাবে না। শহরে বসবাসকারী অনেক
স্বামী-স্ত্রী-সন্তান পরিবারে অর্থনৈতিক সাহায্য, গৃহকর্মে সহযোগিতা, সঙ্কট কালে মানসিক নিরাপত্তা
ইত্যাদির জন্য গ্রাম থেকে আত্মীয় স্বজনদের এনে রাখা হয়। যেসব পরিবারে নারী কর্মজীবী আছেন
সেখানে ছোট সন্তানদের যথাযথ দেখাশোনা ও মানসিক বিকাশের জন্য বৃদ্ধ বাবা-মা কিংবা নিকটাত্মীয়দের
নিয়ে আসা হয়। শহরে বসবাসকারী অনেকেই ছোট ভাই বোনদের শিক্ষার সুযোগ দেবার জন্য শহরে
নিয়ে আসেন ও একত্রে বসবাস করেন। অনেক স্বামী-স্ত্রী-সন্তান পরিবার শহরে পৃথক ভাবে বসবাস করলেও
গ্রামের বাড়ী ও আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে মানসিক একাত্বতা অনুভব করেন। তারা আত্মীয়দের প্রতি দায়িত্ব
ও কর্তব্য পালন করেন এবং ছুটিতে ও উৎসব উদযাপনের জন্য গ্রামের বাড়ীতে যান।
সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সামাজিক নিরাপত্তা (ংবপঁৎরঃু) ব্যবস্থা কম। কেবল কিছু চাকুরীজীবী পেনশান
পান ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকে লাইফ ইন্সুরেন্স পলিসি গ্রহণ করেন। সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যাপক
না হওয়ায় অসুস্থতা, হঠাৎ মৃত্যু, চাকুরীতে ছাঁটাই, দুর্ঘটনা ইত্যাদি মোকাবেলার জন্য যৌথ পরিবারের
বন্ধন শিথিল হলেও টিকিয়ে রাখা ব্যতীত বিকল্প নেই। শহরে চাকুরীজীবীদের আয়ের পরিমাণ কম হওয়ায়
গ্রামে বসবাসকারী পরিবারের সঙ্গে অনেকে যৌথভাবে কৃষি উৎপাদন করেন। গ্রামে উৎপন্ন কৃষি পণ্য
যেমন চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি শহরের বাসায় নিয়ে আসেন। সুতরাং অর্থনৈতিক চাপের
কারণেও পারিবারিক যৌথতা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া সম্ভব নয়।
দরিদ্র পরিবারেও একত্রে
বসবাসের আদর্শ কাজ করে।
কিন্তআর্থিক সঙ্গতি না
থাকায় তা সম্ভব হয় না।
শহরে নি¤œ মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র
শ্রেণীর মধ্যেও বর্ধিত
গৃহস্থালী বা মিশ্র গৃহস্থালীর
ধরন দেখা যায়।
সারাংশ
এই পাঠের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে পাশ্চাত্যের অণু পরিবারের ধারণা বাংলাদেশে পুরোপুরি কার্যকর
নয়। ঔপনিবেশিক শাসন উপমহাদেশে সামাজিক সংগঠনে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটায়। বলা যায় পুরনো
সংগঠনগুলিকে ধ্বংস করে নতুন রূপে নতুনভাবে গঠন করে। প্রাক-ঔপনিবেশিক কালে বাংলা অঞ্চলে
প্রচলিত ছিল চার পাঁচ প্রজন্মের একান্নবর্তী যৌথ পরিবার। ঔপনিবেশিক কালে পুঁজিবাদ, সমতা, যুক্তিবাদ
ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদের মতাদর্শ একান্নবর্তী পরিবার কাঠামোতে পরিবর্তন আনে। একান্নবর্তী পরিবার ভাঙ্গতে
শুরু করে। বাংলাদেশে শহরাঞ্চলে অণু পরিবার দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলে আদর্শ গৃহস্থালীর ধরন হচ্ছে বর্ধিত
বা আংশিক যৌথ পরিবার। দরিদ্র কৃষক পরিবারেও একত্রে বসবাসের আদর্শ কাজ করে। কিন্তুআর্থিক
সঙ্গতি না থাকায় দরিদ্র পরিবার মিশ্র ধরনের হয়ে থাকে। শহরে বসবাসকারী নি¤œবিত্তের পরিবারগুলির
সঙ্গে গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী আত্মীয় স্বজনের সম্পর্কনির্ভরশীলতার।
এস এস এইচ এল
সমকালীন বাংলাদেশ : সমাজ ও সংস্কৃতি পৃষ্ঠা-৪৩
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন -
১। অণু পরিবারের গঠন কেমন হয়ে থাকে?
ক. বাবা-মা ও তাদের বিবাহিত ও অবিবাহিত সন্তান একত্রে বাস করেন
খ. বাবা-মা ও তাদের বিবাহিত সন্তান ও তাদের সন্তান একত্রে বাস করেন
গ. স্বামী-স্ত্রী ও তাদের অবিবাহিত সন্তান একত্রে বাস করেন
ঘ. বিবাহিত ভাইয়েরা একত্রে বাস করেন
২। খানা কি?
ক. বসবাসের ইউনিট
খ. সম্পত্তি একত্রে রাখার ইউনিট
গ. ঘুমানোর ইউনিট
ঘ. উৎপাদন ও ভোগের ইউনিট
৩। বাংলাদেশের অণু পরিবারে সদস্যগণের মধ্যে সম্পর্কের ধরণ কেমন?
ক. বয়স নির্বিশেষে সকলে সমান
খ. পুরুষ কর্তা একনায়কসুলভ
গ. পরিবারে সিদ্ধান্তগ্রহণ পদ্ধতি গণতান্ত্রিক
ঘ. নারী-পুরুষ সম্পর্কসাম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত
৪। রৈখিক জ্ঞাতিসূত্র কি ধরণের?
ক. নানা-মামা-মামাতো ভাই
খ. দাদা-দাদী-দাদীর ভাই
গ. দাদার ভাই-বাবার ভাই-চাচাতো ভাই
ঘ. দাদা-বাবা-ছেলে-নাতি
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। শহরে পরিবারের ধরন কি গ্রামাঞ্চলের পরিবারের ন্যায়? আলোচনা করুন।
২। নারী-প্রধান খানার ধরন কেমন হয়ে থাকে?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে পরিবার ও গৃহস্থালীর ধরন কিরূপ?
২। প্রাক-ঔপনিবেশিক একান্নবর্তী যৌথ পরিবারের গঠন প্রণালী আলোচনা করুন। এই ধরনের
পরিবার কেন পরিবর্তিত হয়?

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]