জ্ঞাতি স¤পর্ককে মানুষের জৈবিক সম্পর্কের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নির্মাণ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
সমাজ বিজ্ঞানীদের মধ্যে জ্ঞাতিত্বের জৈবিক দিককে মুখ্য হিসেবে ধরে নিয়ে এর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক
দিকগুলিকে গৌণ করে ফেলার প্রবণতা আছে। এর ফলে জ্ঞাতি সম্পর্কঅধ্যয়নে বিয়ে, সন্তান জন্মদান,
পরিবার গঠন, মৃত্যু ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে যে কাঠামো গড়ে উঠে তা প্রাধান্য পায়। তদুপরি জ্ঞাতি
সম্পর্ককেন্দ্রিক সংগঠন কি ধরনের সামাজিক সাংস্কৃতিক ভ‚মিকা পালন করছে তা দেখা হয়। এতে জ্ঞাতি
সম্পর্কএকটি পৃথক পরিসর হিসেবে গণ্য হয়ে যায়। কিন্তুজ্ঞাতি সম্পর্কসমাজ সংগঠনের পৃথক কোন
ক্ষেত্র নয়। বিয়ে ও পুনরুৎপাদন বিচ্ছিন্নভাবে কেবল পরিবার ও জ্ঞাতিগোষ্ঠীর বিষয় নয়। এগুলি বৃহত্তর
সামাজিক প্রক্রিয়ার অংশ। এর সঙ্গে সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যুক্ত। সুতরাং জ্ঞাতি সম্পর্ককে স্থাপন করা
প্রয়োজন সামগ্রিক পরিসরে। জ্ঞাতি সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত লিঙ্গীয় সম্পর্ক। অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া যেমন ভ‚মি
ও সম্পত্তির মালিকানাকে বাদ দিয়ে জ্ঞাতি সম্পর্কবিশ্লেষণ করা যায় না। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সমাজে যে
শ্রেণী পৃথকীকরণ ঘটায় সে রূপান্তরের সঙ্গে জ্ঞাতি সম্পর্কেরও রূপান্তর ঘটে। ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন
জ্ঞাতিত্বকে ভিন্নভাবে সংগঠিত করে। সামাজিক পরিবর্তন জ্ঞাতি সম্পর্কের ভিন্ন অর্থ দাঁড় করায়। সমাজের
বিভিন্ন অবস্থা ও শক্তিগুলির বদলের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞাতি সম্পর্কেরও বদল ঘটে।
বাংলাদেশে জ্ঞাতি সম্পর্কের সংগঠন
বাংলাদেশে জ্ঞাতি সম্পর্ক পিতৃসূত্রীয় (ঢ়ধঃৎরষরহবধষ), পিতৃস্থানিক (ঢ়ধঃৎরষড়পধষ) ও পিতৃতান্ত্রিক
(ঢ়ধঃৎরধৎপযধষ)। জ্ঞাতি সম্পর্কনির্ণয়ে একটি বড় প্রশ্ন হচ্ছে কোন ব্যক্তি তার পূর্ববর্তী প্রজন্ম এবং পরবর্তী
প্রজন্মের সঙ্গে কিভাবে সম্পর্কসংগঠিত করবে। এ সম্পর্কস্থাপিত হতে পারে বাবা অথবা মার মাধ্যমে
এবং পুত্র অথবা কন্যার মাধ্যমে। এভাবে বংশধারা (ফবংপবহঃ) নির্ণয়ের ক্ষেত্রে একটি লিঙ্গীয় সম্পর্কের
প্রাধান্য স্থাপিত হয়। সেটি পুরুষ। বংশধারা নির্ণীত হয় ইগোর (নিজের) পিতা, দাদা ও পুত্র সন্তানের
মাধ্যমে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠী মান্দাইদের মধ্যে মাতৃসূত্রীয় বংশ ধারার নিয়ম আছে। মায়ের
মাধ্যমে বংশ ধারা সৃষ্টি হলেও এ সমাজে পুরুষ প্রাধান্য বিরাজ করে এবং সম্পত্তি বন্টন ও ক্ষমতা চর্চা
করেন মায়ের ভাই। তার অর্থ কি পিতৃসূত্রীয় কি মাতৃসূত্রীয় দুটো বংশ ধারাতেই পুরুষ আধিপত্য বিরাজ
করে। পিতৃস্থানিক নিয়ম অনুসারে কোন বংশের পুরুষগণ নিজ এলাকাতেই বসবাস করতে থাকেন এবং
তাদের স্ত্রীদের বাহির থেকে নিয়ে আসা হয়। একই নিয়মে বংশের মেয়েদের বাইরে অন্য বংশে বিয়ে
দেয়া হয় যেখানে তারা বসবাস করেন।
পাঠ - ৩
বাংলাদেশে জ্ঞাতি সম্পর্ক
পিতৃসূত্রীয়
(ঢ়ধঃৎরষরহবধষ),
পিতৃস্থানিক (ঢ়ধঃৎরষড়পধষ)
ও পিতৃতান্ত্রিক
মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সমান্তরাল বিয়ের (যেমন চাচাতো ভাই বোন) অগ্রাধিকার থাকলেও তার
বাস্তবায়ন কম হয়। তবে সমান্তরাল বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ে নিজের বংশের বাসিন্দাদের কাছাকাছি বসবাস
করায় তাদের বৈবাহিক সম্পর্কেঅবস্থান ততটা নাজুক নয়। কিন্তুদূরবর্তী স্থান থেকে যে সকল নারীকে
বিয়ে করে আনা হয় তাদের অপরিচিত এলাকায় অপরিচিতদের মধ্যে বাস করতে হয় বলে অবস্থান দুর্বল
হয়ে পড়ে। বিবাহের মাধ্যমে নারীর বংশ পরিবর্তিত হয় না। নারীর বংশ নির্ধারিত হয় তার বাবা, দাদা,
দাদার বাবার একরৈখিক বংশধারার মাধ্যমে। নারী কোন বংশ সৃষ্টি করেন না। কারণ পুত্র সন্তান জন্মদানের
মাধ্যমে তিনি তার স্বামীর বংশ ধারা প্রবাহিত করেন।
বাঙালী সমাজে বংশ একটি যূথবদ্ধ জ্ঞাতি দল। এর সঙ্গে যুক্ত বৃহত্তর জ্ঞাতি দলটি হচ্ছে গোষ্ঠী। গোষ্ঠীর
অন্তর্ভুক্ত হন রক্ত সম্পর্কিত (পড়হংধহমঁরহধষ) এবং বিবাহ সম্পর্কিত (ধভভরহধষ) আত্মীয়-স্বজন সকলে।
আবার বংশে একরৈখিক (ষরহবধষ শরহ) যেমন বাবা-দাদা-ছেলের সম্পর্ককে গুরুত্ব প্রদান করা হয়।
গোষ্ঠীতে এর সঙ্গে যুক্ত হয় পার্শ্বিক জ্ঞাতি (পড়ষষধঃবৎধষ শরহ) যেমন দাদার ভাই বোন ও তাদের সন্তান,
বাবার ভাই বোন ও তাদের সন্তান, নিজের ভাই বোন ও তাদের সন্তান ইত্যাদি।
কয়েক প্রজন্মের পূর্বে কোন পূর্ব পুরুষকে কেন্দ্র করে তার সঙ্গে সম্পর্কিত সকল রক্ত সম্পর্কিত নারী পুরুষ
এবং তাদের সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে সম্পর্কিত সকল নারী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে বিবেচিত হন। এর অর্থ
একজন নারীর দ্বৈত গোষ্ঠী সদস্যপদ থাকে। বিয়ের পরও নারীর পিতার গোষ্ঠীর সদস্যপদ বহাল থাকে
এবং স্বামীর গোষ্ঠীরও অন্তর্ভুক্ত হন। পূর্ব পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক, ঐতিহ্য, জ্ঞাতি বন্ধনের ঘনত্ব, জ্ঞাতি
সম্পর্কের নৈকট্য ও একত্রে বসবাসের ফলে গোষ্ঠী হয়ে উঠে একতাবদ্ধ ও যূথবদ্ধ (পড়ৎঢ়ড়ৎধঃব) জ্ঞাতি
দল। কেবল জ্ঞাতিত্ব নয়, গোষ্ঠী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাও। সমাজ সংগঠনের শক্তিশালী একক
হিসেবে গোষ্ঠী আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত। গোষ্ঠী ব্যবস্থায় পিতৃসূত্রীয়
সম্পর্ককঠোরভাবে সংহত করার ফলে মাতৃসূত্রীয় সম্পর্কগুলি পুরোপুরি বাদ পড়ে না। বরং নানা-নানী,
খালা ও বিশেষত ‘মামার বাড়ীর’ সঙ্গে নানাবিধ আদান প্রদান ও বিচুয়ালের (আচার অনুষ্ঠান) মাধ্যমে
সম্পর্কজীবিত থাকে। পিতৃস্থানিক ব্যবস্থায় শ্বশুর বাড়ীতে চাপের মধ্যে বাস করায় বিবাহিত নারী সর্বদাই
বাবার বাড়ীতে ‘নায়র’ যাওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকেন।
বাঙালী সমাজে বিয়ের মাধ্যমে সম্পর্কপ্রতিষ্ঠিত হয় দুটি পরিবার ও গোষ্ঠীর মধ্যে, কেবল দু’জন ব্যক্তির
মধ্যে নয়। একারণে গোষ্ঠীর নিয়ম অনুসারে স্বামীর মৃত্যু হলে বিধবা স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর ছোট ভাইয়ের কিংবা
স্ত্রীর মৃত্যু হলে স্ত্রীর ছোট বোনের সঙ্গে পুনর্বিবাহের ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। অনাথ শিশুরা
আধিকাংশ ক্ষেত্রেই নানীর আদর যতেœ লালিত পালিত হয়ে থাকে। ‘কন্যা দাতা’ ও ‘কন্যা গ্রহীতা’ এই দুই
গোষ্ঠীর মধ্যে কন্যা দাতাদের সম্মান নীচু বলে ধরে নেয়া হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ে কন্যার বাবা কন্যার
শ্বশুরালয়ে অন্নগ্রহন করেন না। সাধারণত ভাইদের দায়িত্ব হয়ে যায় বিবাহিত বোনদের বাড়ীতে গিয়ে
খোঁজ খবর রাখা। বিভিন্ন উৎসবে, পার্বণে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্য ও উপহার আদান প্রদান হয়ে থাকে।
এই দুই গোষ্ঠীর আত্মীয়-স্বজন পরস্পরের বাড়ীতে অতিথি বা ‘কুটুম’ হিসেবে বিশেষ মর্যাদা ও আদর যতœ
লাাভ করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহিত মেয়েদের জামাইকে আম কাঁঠালের দিনে বিশেষ ভাবে
‘জামাই ষষ্টি’ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে ভোজের আয়োজন করার রীতি আছে।
জ্ঞাতিদলের সংহতি স্থাপন
বাঙালী সমাজে গোষ্ঠীর সংহতি রক্ষা করার জন্য প্রজন্ম ও বয়স দুটোকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এ
উদ্দেশ্যে গোষ্ঠীর সদস্যদের আচরণ নিয়ন্ত্রিত হয়। গোষ্ঠী ব্যবস্থায় জ্ঞাতি সম্পর্কেশৃঙ্খলা রক্ষা করা হয়
আচরণ বিধিমালা প্রয়োগের মাধ্যমে। ইগোর অর্থাৎ নিজের উপরের প্রজন্মের সকলে শ্রদ্ধার পাত্র। যেমন
বাবা-চাচা, মা-চাচী সম মর্যাদার অধিকারী। বিবাহিত নারীর কাছে তারা সকলে শ্বশুর শ্বাশুড়ীর মর্যাদার
অধিকারী। কোন চাচা বা মামার বয়স ইগোর চেয়ে কম হলেও তারা শ্রদ্ধার পাত্র। ইগোর নিজ প্রজন্মের
পূর্বপুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক,
ঐতিহ্য, জ্ঞাতি বন্ধনের
ঘনত্ব, জ্ঞাতিসম্পর্কের
নৈকট্য ও একত্রে বসবাসের
ফলে গোষ্ঠী হয়ে উঠে
একতাবদ্ধ ও স্বার্থবদ্ধ
(পড়ৎঢ়ড়ৎধঃব) জ্ঞাতি দল।
বয়সে বড় যারা তাদের সঙ্গেও শ্রদ্ধার সম্পর্কথাকে। যেমন ইগোর বড় ভাই ও কাজিনগণ। বিবাহিত
নারীর সঙ্গে স্বামীর বড় ভাই ও কাজিনদের অর্থাৎ ভাশুরদের সম্পর্কদূরত্বের ও শ্রদ্ধার। স্বামীর ছোট ভাই
অর্থাৎ দেবর এবং স্ত্রীর ছোট বোন অর্থাৎ শ্যালিকাদের সঙ্গে সম্পর্কহাসি ঠাট্টার। গোষ্ঠী ব্যবস্থায় নারীদের
মধ্যে জন্ম সূত্রে গোষ্ঠী সদস্য এবং বৈবাহিক সূত্রে গোষ্ঠী সদস্যদের মধ্যে পার্থক্য করা হয়। এই মর্যাদার
পার্থক্য ননদ ও বউদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে। বিবাহিত নারীর শাশুড়ী যদিও বৈবাহিক সূত্রে গোষ্ঠীর
সদস্য তবু দীর্ঘকাল বাস করার ফলে স্বামীর গোষ্ঠীতে তার অবস্থান অনেক দৃঢ়। শাশুড়ী সবসময় নবাগত
বউদের কাজের খবরদারী করায় তাদের সম্পর্কবিরোধের। অন্যদিকে শ্বশুর সম্পর্কিতদের সঙ্গে বউদের
সম্পর্কদূরত্বের ও ¯েœহের এবং কখনো বিরোধের নয়। বাবা মার প্রতি অনুগত থাকাকে ধর্মীয় কর্তব্য বলে
বিবেচনা করা হয়। বাবা মার আদেশ কোন যুক্তি তর্ক ছাড়া পালন করা গোষ্ঠীর অন্যতম নৈতিক শিক্ষা।
বিশেষত বৃদ্ধ বয়সে বাবা মাকে দেখাশোনা করার জন্য সন্তানদের শিশুকাল থেকেই শিক্ষা প্রদান করা
হয়। বংশ রক্ষার জন্য ছেলে সন্তানকে প্রাধান্য দেয়া হয়। বড় গোষ্ঠীগুলিতে অনেক ছেলে সন্তানের জন্ম
দান প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয়। কারণ তা না হলে গোষ্ঠীর আকার ও ক্ষমতা ক্রমশ নি¤œগামী হয়ে
যাবার আশঙ্কা আছে।
গোষ্ঠীর জোটবদ্ধতা
গোষ্ঠীর প্রধান বৈশিষ্ট্য এর জোটবদ্ধতা। একই পূর্ব পুরুষের উত্তরসুরীগণ রক্ত সম্পর্কও বৈবাহিক সম্পর্কের
মাধ্যমে এই জ্ঞাতি দল গঠন করেন। গোষ্ঠীর ঐক্য রক্ষা করা একটি প্রক্রিয়া। জ্ঞাতি সম্পর্কের মধ্যে
শৃঙ্খলা আনয়নের দায়িত্ব অর্পিত হয় পুরুষ প্রধানদের উপর। ক্ষুদ্র যৌথ পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষের
পদবী হচ্ছে ‘মুরুব্বী’। জ্ঞাতি দলের সকল যৌথ ও একক পরিবারের প্রধান পুরুষের পদবী ‘মাতব্বর’।
অধস্তন প্রজন্মের উপর ঊর্ধতন প্রজন্মের, কনিষ্ঠদের উপর জ্যেষ্ঠদের এবং নারীর উপর পুরুষের আধিপত্য
প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গোষ্ঠীতে শৃঙ্খলা আনয়ন করা হয়। জ্ঞাতি সম্পর্কের মধ্যে আচরণ বিধি ও কর্তৃত্ব
বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা তদারকী করার দায়িত্ব প্রথমত মুরব্বী এবং সার্বিক ভাবে মাতব্বরের। গোষ্ঠীভুক্ত
পরিবারগুলির চেষ্টা থাকে একই এলাকায় বসবাসের। অনেক সময় পাশ্ববর্তী গ্রাম গুলিতেও গোষ্ঠী সম্পর্ক
বিস্তৃত হয়ে যায়। সাধারণত একত্রে বসবাসকারী গোষ্ঠীর মধ্যে দৃঢ়তার সৃষ্টি হয়। গোষ্ঠী সদস্যদের
পারস্পরিক ক্রিয়াকলাপের ভেতর দিয়ে গোষ্ঠীর একাত্বতা বৃদ্ধি পায়। গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত সদস্যগণের ঝগড়া
ফ্যাসাদ ও বিরোধ গোষ্ঠীর ভেতরেই মাতব্বর কর্তৃক মিমাংসা হয়। সাধারণত সালিশের মাধ্যমেই দ্ব›েদ্বর
সুরাহা হয়। তবে গোষ্ঠীর মাতব্বরের বিচার করার ক্ষমতা আছে। বিচারকালে মাতব্বরের শারিরীক ভাবে
মারধর করার এবং অপমানজনক জুতা পেটা করার ক্ষমতা আছে।
গোষ্ঠী সংহতির জন্য বিয়ে গুরুত্বপূর্ণউপাদান হওয়ায় কোন কোন মুসলিম সমাজে যেমন উত্তর আফ্রিকার
দেশসমূহে, ইন্দেনেশিয়ায় ও পাকিস্তানে সমান্তরাল কাজিন (যেমন চাচাতো ভাই বোন) বিবাহ অনেকটা
বাধ্যতা মূলক করা হয়। এতে বিয়ে ব্যবস্থার উপর গোষ্ঠীর আধিপত্য অধিক মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এসব
সমাজে গোষ্ঠীর ঐক্যও বেশী। বাংলাদেশে মুসলমান সম্পদায়ের মধ্যে সমান্তরাল কাজিন বিবাহের প্রচলন
খুব একটা নেই। তথাপি বিয়ের সিদ্ধান্তগ্রহণে গোষ্ঠীর আধিপত্য লক্ষ্য করা যায়। বিয়ের সম্পর্কনির্ধারণের
ক্ষেত্রে গোষ্ঠীতে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তগৃহীত হয়। কারণ কোন বংশের মেয়েকে আনা হচ্ছে
তার উপর গোষ্ঠীর ইজ্জত নির্ভর করে। বিয়ের পর নারীদের পর্দা পালনের উপর কড়াকড়ি করা হয় কারণ
গোষ্ঠীর খান্দান নারীর পর্দা পালনের উপর নির্ভরশীল।
কেবল আচরণ বিধিমালা বাস্তবায়ন ও বিচারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ নয়, গোষ্ঠীর ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয় সাহায্য
সহযোগিতার মাধ্যমেও। জন্ম, আকিকা, বিয়ে, মৃত্যু এই জীবনচক্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে গোষ্ঠীর কার্যকর
ভ‚মিকা আছে। সাত মাসের অন্তসত্ত¡া মহিলাকে গোষ্ঠী উৎসবের মাধ্যমে আশীর্বাদ করে। শিশু জন্মের পর
উপহার প্রদান করে। বিয়ের সময় নানাবিধ বিচুয়াল (আচার ও প্রথা) পালন করে। বিয়ের পর কন্যার
গোষ্ঠী ব্যবস্থায় জ্ঞাতি
সম্পর্কে সংহতি স্থাপন করা
হয় আচরণ বিধিমালা
প্রয়োগের মাধ্যমে।
জামাইকে ও পুত্রের বউকে ‘সালামী’ প্রদান করে। শিশুর সামাজিকীকরণে গোষ্ঠী কার্যকর ভ‚মিকা রাখে।
মৃত্যুর সময় গোষ্ঠীর সকলে একত্রিত হয়ে বিচুয়াল পালন করে, জানাযা, কবর ও প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করে।
মৃতদেহ সৎকারের ব্যয় ভাগাভাগি করে বহন করে। তাছাড়া মৃতের পরিবারের শোক ও ক্ষতি অতিক্রম
করার ক্ষেত্রে গোষ্ঠী সর্বপ্রকার সহযোগিতা প্রদান করে। বিশেষত বিয়ের বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। পৃথক
ভাবে সেলামী দেওয়া ছাড়াও বিয়েতে অনুষ্ঠান, খাওয়া-দাওয়া ও যৌতুক বাবদ যে ব্যয় হয় তার হিসাব
করে সেই ব্যয় গোষ্ঠী সদস্যগণ ভাগাভাগি করে বহন করেন। যে যৌথ পরিবারে বিবাহের সময় গোষ্ঠী
সহযোগিতা করে তা সেই পরিবারের জন্য ‘ঋণ’ বলে বিবেচিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে গোষ্ঠীর অন্য
পরিবারে বিবাহ অনুষ্ঠানে সাহায্য করে এই ঋণ পরিশোধ করা হয়।
গোষ্ঠীর সাহায্য সহযোগিতা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও কার্যকর। একাত্বতার বন্ধন অর্থনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত
না হলে তা দুর্বল হয়ে পড়ে। যেমন গোষ্ঠীর ধনী কৃষকগণ তাদের জমি গোষ্ঠীভ‚ক্তদের মধ্যে বর্গাচাষের
জন্য বরাদ্দ করেন। সাধারণত ধনী কৃষকগণ এই সাহায্য প্রাপ্তদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য একজনকে অল্প
পরিমাণ জমি বর্গাচাষের জন্য দিয়ে অধিক সংখ্যক আত্মীয়কে বর্গাচাষের সঙ্গে যুক্ত করে থাকেন। গোষ্ঠীর
সদস্যদের অভাব অনটনের সময় ধনী কৃষকগণ ঋণদান করেন। ধনী কৃষকের বাড়ীতে ও জমিতে কাজের
সুযোগ গোষ্ঠীভুক্ত দরিদ্রগণকে দেয়া হয়। ধনী কৃষকগণ সরকারী প্রশাসন ও পল্লী উন্নয়নের কার্যক্রমের
সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় কৃষি উপকরণ, ঋণ ও কাজের সুযোগ বনটনের ক্ষমতা প্রাপ্ত হন। নিজেদের গোষ্ঠীর
মধ্যে তারা এসব সুবিধা বন্টনে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। গোষ্ঠীর সদস্যগণ জমি বিক্রয় করতে চাইলে
ধনী কৃষকগণ সে জমি ক্রয়ে আগ্রহী হন কিংবা গোষ্ঠীর ভেতরেই যেন জমি থাকে সে চেষ্টা করেন। জমির
মালিকানা ক্ষমতার উৎস। জমি মাতব্বরেরও ক্ষমতার ভিত্তি। সুতরাং মাতব্বর গোষ্ঠীর জমি বাইরে যাওয়া
রোধ করাকে দায়িত্ব বলে মনে করেন। হঠাৎ বেশী শ্রমের প্রয়োজন হলে গোষ্ঠী শ্রমের যোগান দিয়ে
থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও গোষ্ঠীভুক্তরা পরস্পরকে সাহায্য করেন। গৃহস্থালীর দৈনন্দিন
কর্মকান্ডে যেমন রান্না, সন্তান লালনপালন, পানি আনা ইত্যাদিতে নারীরা পরস্পরকে সাহায্য করেন।
নারীর অসুস্থতায়, অন্তস্বত্ত¡া অবস্থায় কিংবা নায়র গেলে গোষ্ঠীর নারীরা সহযোগিতা করেন।
গোষ্ঠী ও শ্রেণী সম্পর্ক
শহরে বসবাসকারীদের মধ্যে জ্ঞাতি সম্পর্কদুর্বল। জ্ঞাতি সম্পর্কের কোন কাঠামোর মধ্যে তারা প্রবিষ্ট নন
জোরালোভাবে। গোষ্ঠীর দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যোগাযোগ ক্ষীণ। তবে
গোষ্ঠীর ধনী সদস্যগণের সঙ্গে শহরের মধ্যবিত্তগণ আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ স্বল্প মাত্রায় রক্ষা করেন।
গ্রামাঞ্চলে জ্ঞাতি সম্পর্কের উপর গঠিত গোষ্ঠী শ্রেণী সম্পর্কের মধ্যে অন্তপ্রবিষ্ট। এই শ্রেণী বিভেদ জ্ঞাতি
সম্পর্ককে জটিল করে তোলে। ধনী কৃষক, বর্গাদার কৃষক, ক্ষুদ্র কৃষক ও ভ‚মিহীন মজুরী শ্রমিকের জন্য
গোষ্ঠী এক অর্থ বহন করে না। গোষ্ঠীর মাতব্বর এবং অন্যান্য ধনী কৃষকগণ গ্রামের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
তারা ক্ষমতা বিস্তারের জন্য রাজনৈতিক সম্পর্কস্থাপন করেন। ভূমির মালিকানার ভিত্তিতে সমাজে যে
স্তরীকরণ হয় ধনী কৃষকগণ সে স্তরীকরণের অন্তর্ভুক্ত। শ্রেণী বিন্যাসে ধনী কৃষকগণ ঊর্ধতন অবস্থানে থেকে
গ্রামে এবং গ্রামের বাইরে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতার মাধ্যমে ক্ষমতার প্রতিযোগিতায়
অংশগ্রহণ করেন। গ্রামের ভেতরে ক্ষমতার প্রতিদ্ব›িদ্বতায় ধনী কৃষকগণ কোন্দলের রাজনীতি চর্চা করেন।
কোন্দলের রাজনীতিতে কেবল জ্ঞাতি সম্পর্কযথেষ্ট নয়। জ্ঞাতি সম্পর্কের ভিত্তিতে মাতব্বরের কেন্দ্রীয়
দল গঠিত হলেও নানাবিধ সম্পর্কও আনুগত্যের ভিত্তিতে দলের সদস্য বৃদ্ধি করা হয়। সুতরাং ধনীকৃষক
বর্গাচাষ, ঋণপ্রদান, কাজের সুযোগ, সরকারী সুযোগের বন্টন ইত্যদি গোষ্ঠীর বাইরেও বিস্তৃত করেন।
গোষ্ঠীর বাইরে বন্ধুত্বের সম্পর্কপ্রতিষ্ঠার উপর মাতব্বর জোর দেন। বন্ধুত্বের সম্পর্করক্ষার জন্য অর্থ ব্যয়
করেন ও উপহার আদান প্রদান করেন। মাতব্বর তার ক্ষমতার ভিত্তিকে শক্তিশালী করার জন্য অন্যান্য
প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে স্বার্থের আঁতাত গড়ে তোলেন।
গোষ্ঠীর ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়
পারস্পরিক সাহায্য-
সহযোগিতার মাধ্যমে।
একাতœতার বন্ধন
অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত
হয়।
ধনী কৃষক, বর্গাদার কৃষক,
ক্ষুদ্র কৃষক ও ভ‚মিহীন মজুরী
শ্রমিকের জন্য গোষ্ঠী এক
অর্থ বহন করে না।
ধনী কৃষকগণ কৃষি উৎপাদনের উদ্বৃত্ত ও ব্যবসায়ের মুনাফা ব্যয় করেন জমি ক্রয় ও সুদের ব্যবসায়। ক্ষুদ্র
ও প্রান্তিক কৃষকগণ অভাবের চাপে পড়ে জমি বন্ধকী রেখে ঋণ গ্রহণ করেন। এসব জমি ধনী কৃষকগণ
আত্মসাত করেন। এখানে গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্র কৃষকগণ সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্তহন। কারণ গোষ্ঠী রীতি
অনুসারে জমি বিক্রয় গোষ্ঠীর ধনী কৃষকের কাছে করাই স্বাভাবিক। সুতরাং গোষ্ঠীর ক্ষুদ্র ও দরিদ্র কৃষকের
জমি গোষ্ঠীর ধনী কৃষক বা মাতব্বরের কাছে পুঞ্জীভ‚ত হয়। বর্গাচাষের ক্ষেত্রেও দেখা যায় যে ধনী কৃষকগণ
গোষ্ঠী সদস্যগণকে বেশী বর্গাচাষ করতে দেন না। একটি গবেষণায় ভ্যান র্বাডন ও এরেন্স (১৯৭৭)১ উল্লেখ
করেন যে গোষ্ঠী সদস্যগণকে জমি বর্গাচাষ করতে দিলে আত্মীয়তার কারণে বর্গাচাষীগণ এ জমিকে নিজের
জমি মনে করেন ও মালিককে তার চাহিদা অনুযায়ী ফসল দেন না। এ কারণে ধনী কৃষকগণ গোষ্ঠীর
বাইরে কৃষকগণের কাছে জমি বর্গাচাষে আগ্রহী হয়ে থাকেন। জমির ফসল অর্ধেক পাবেন এই শর্তে রাজী
হলেই কেবল গোষ্ঠীর কৃষকগণ বর্গাচাষ করতে পারেন। একইভাবে ধনী কৃষক যে স্বল্প মজুরী দেন তাতে
রাজী থাকলেই গোষ্ঠীর দরিদ্র মানুষজন কাজ পেয়ে থাকেন। ধনী কৃষক যে চড়া সুদে ঋণ প্রদান করেন
সেই সুদ দিতে রাজী থাকলেই গোষ্ঠীর দরিদ্রগণ মাতব্বরের কাছ থেকে ঋণ পাবেন।
এভাবে জমির ব্যক্তিগত মালিকানা, ব্যবসায়ে ব্যক্তিগত মুনাফা, চাকুরীতে ব্যক্তিগত উপার্জন গ্রামাঞ্চলে
অর্থনৈতিক জীবনে মুখ্য হয়ে উঠছে। জ্ঞাতি সম্পর্কের বাইরে শ্রেণী সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে
ক্ষমতাশালীদের আধিপত্য সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে ভ‚মিহীন ও ক্ষেতমজুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গোষ্ঠী
সম্পর্কতাদের কাজের নিরাপত্তা দিতে পারে না। সুতরাং যেখানে কাজ পাওয়া যায় সেখানেই তারা ছুটে
যায়। ধনী কৃষকগণ শ্রেণী স্বার্থ রক্ষায় শ্রমের মজুরী বৃদ্ধি করেন না কিংবা বর্গাচাষের শর্ত পরিবর্তন করেন
না। দরিদ্র মানুষের কাছে গোষ্ঠীর মালিক ও গোষ্ঠীর বাইরের মালিকের মধ্যে পার্থক্য নেই। ধনী ও দরিদ্র,
মালিক ও শ্রমিকের সম্পর্কনির্ধারিত হয় উৎপাদন সম্পর্কের দ্বারা। জাহাঙ্গীর (১৯৮১)২ এর মতে যে
মূহূর্তে মাতব্বর একজন ধনী কৃষক ও ধনী ব্যবসায়ী সে মূহূর্তে তিনি উৎপাদন সম্পর্কও কর্তৃত্বের সম্পর্কের
যোগফল হিসেবে ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেন। উৎপাদন সম্পর্ক, সামাজিক সম্পর্কও কর্তৃত্বের সম্পর্কের
উপর আধিপত্য বিস্তার করে গোষ্ঠী প্রধান মাতব্বর গ্রামের শোষণ মূলক ক্ষমতা কাঠামোর অধিপতি হয়ে
যান। গোষ্ঠী প্রধান ধনী শ্রেণীর অধিপতি হিসেবে গ্রামের শোষিত শ্রেণীর উপর ক্ষমতা চর্চা করেন। গোষ্ঠী
সম্পর্করাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। মাতব্বরগণ পঞ্চায়েতের সদস্য হিসেবে গ্রামের সামাজিক
জীবন নিয়ন্ত্রণ করেন। ধর্ম, প্রচলিত আচরণবিধি ও মূল্যবোধ ধনী মাতব্বরদের পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্তকে
কার্যকর করায় মতাদর্শিক শক্তির যোগান দেয়। সরকারী প্রশাসন, পুলিশ, ইউনিয়ন পরিষদ ও রাষ্ট্রের
শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে ধনী মাতব্বরদের সম্পর্কগ্রাম পর্যায়ে তাদের শাসনকে আরো শক্তিশালী করে তোলে।
তার অর্থ গোষ্ঠী গ্রামীণ ক্ষমতাশালীদের একমাত্র শক্তির উৎস নয়। ক্ষমতা চর্চার ধরন থেকে দেখা যায় যে
বাংলাদেশে পিতৃসূত্রীয় জ্ঞাতি সম্পর্কক্ষমতার ভিত্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তুঅর্থনৈতিকভাবে সম্পদশালী
ও সামাজিকভাবে মর্যাদাবান পরিবারগুলির মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কপ্রতিষ্ঠার রেওয়াজ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
দেখা যায় যে এর ফলে বৈবাহিক সম্পর্কগুরুত্বপূর্ণহয়ে উঠেছে। কারণ এই ধরনের বৈবাহিক সম্পর্ক
রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। গ্রামীণ ও জাতীয় রাজনীতির পরিসরে এধরনের ‘সম্বন্ধদল’,
‘জ্ঞাতিদলে’র চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
সারাংশ
১ অৎবহং ঔধহফ ইবঁৎফবহ ঔঠ, ঔযধমৎধঢ়ঁৎ: চড়ড়ৎ চবধংবহঃং ধহফ ডড়সবহ রহ ধ ঠরষষধমব রহ
ইধহমষধফবংয, ঞযরৎফ ডড়ৎষফ চঁনষরপধঃরড়হ, ইরৎসরহমযধস, ১৯৭৭.
২
ঔধযধহমরৎ ইক, “ঝড়পরধষ ঙৎমধহরুধঃরড়হ চৎড়পবংং ধহফ ঈযধহমব: ইধহমষধফবংয”, ঔড়ঁৎহধষ ড়ভ
ঝড়পরধষ ঝঃঁফরবং, ঘড়. ১৪ ঈঝঝ, উযধশধ টহরাবৎংরঃু, ১৯৮১.
জ্ঞাতি সম্পর্কের বাইরে শ্রেণী
সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে
ক্ষমতাশালীদের আধিপত্য
সৃষ্টি হয়। গোষ্ঠী সম্পর্ক
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত
হয়।
বিভিন্ন সমাজে জ্ঞাতিত্ব বিভিন্নভাবে সংগঠিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রজন্ম অনুসারে জ্ঞাতিত্ব নির্ণয় করা
হয়। যেমন নিজ বা ‘ইগো’ এর বাবা-চাচা তার উপরের প্রজন্মের এবং দাদা ও দাদার ভাই তারও উপরের
প্রজন্মের। ‘ইগো’ এর ভাই নিজ প্রজন্মের এবং ভাতিজা তার পরের প্রজন্মের। বাংলাদেশে জ্ঞাতি সম্পর্কের
দুইটি পৃথক বর্গ হচ্ছে রক্ত সম্পর্কিত ও বিবাহ সম্পর্কিত। বাঙ্গালী সমাজে বংশ একটি যূথবদ্ধ দল। এর
সঙ্গে যুক্ত বৃহত্তর জ্ঞাতি দলটি হচ্ছে গোষ্ঠী। বংশে এক রৈখিক যেমন দাদা-বাবা-ছেলের সম্পর্ককে গুরুত্ব
প্রদান করা হয়। গোষ্ঠীতে এর সঙ্গে যুক্ত হয় পার্শ্বিক জ্ঞাতি যেমন দাদার ভাই বোন ও তাদের সন্তান,
বাবার ভাই বোন ও তাদের সন্তান, নিজের ভাই বোন ও তাদের সন্তান ইত্যাদি। গোষ্ঠীর জোটবদ্ধতা রক্ষা
করার জন্য গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত সকলে সচেষ্ট থাকেন। পারস্পরিক সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে জোটবদ্ধতা
দৃঢ় হয়। তবে গোষ্ঠীর ভেতরে ধনী ও দরিদ্র আত্মীয়দের মধ্যে সম্পর্কবৈষম্যমূলক। ক্ষমতাশালী ধনী
কৃষকগণ গোষ্ঠী সম্পর্ককে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন -
১। নি¤েœর কোন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীতে মাতৃসূত্রীয় বংশ ধারার নিয়ম আছে?
ক. চাকমা
খ. ত্রিপুরা
গ. মান্দাই
ঘ. সাঁওতাল
২। গোষ্ঠী সংগঠনে কোন ধরনের সম্পর্ককে গুরুত্ব প্রদান করা হয়?
ক. রক্ত সম্পর্ক
খ. বিবাহ সম্পর্ক
গ. রক্ত সম্পর্কও বিবাহ সম্পর্ক
ঘ. কেবল পিতৃসূত্রীয় পুরুষগণের সঙ্গে সম্পর্ক
৩। বাঙ্গালীদের বংশধারা কিভাবে নির্ণয় করা হয়?
ক. পিতৃসূত্রীয়
খ. মাতৃসূত্রীয়
গ. পিতৃসূত্রীয় ও মাতৃসূত্রীয়
ঘ. দুই প্রজন্মের মাতৃসূত্রীয় ও পিতৃসূত্রীয়
৪। নি¤েœর কোন সম্পর্কটি বিরোধের নয়?
ক. ননদ-ভাবী
খ. ভাইদের স্ত্রীগণ
গ. দেবর-ভাবী
ঘ. শ্বাশুড়ি-বউ
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। বাংলাদেশে জ্ঞাতি সম্পর্ককিভাবে সংগঠিত হয়?
২। জ্ঞাতি দলের মধ্যে আচরণ বিধিমালা কিভাবে সংহতি রক্ষা করে?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। শ্রেণী সম্পর্ককি গোষ্ঠীর জোটবদ্ধতার জন্য হুমকী স্বরূপ?
২। গোষ্ঠীর জোটবদ্ধতা কিভাবে রক্ষা করা হয় আলোচনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত