কৃষি কাঠামো বলতে কি বোঝায়? বাংলাদেশের কৃষি কাঠামোর বৈশিষ্ট্য আলোচনা করুন।
বর্গাচাষের শর্ত কি? বর্গাচাষে কি ধরনের পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে?

কৃষি কাঠামো
বাংলাদেশের কৃষি কাঠামো অথবা কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা বোঝার জন্য উৎপাদন পদ্ধতিগুলি জানা প্রয়োজন।
কৃষি কাঠামো বলতে কৃষি উৎপাদনের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনাকেই বোঝায়। অর্থাৎ কৃষি কাঠামোর সঙ্গে
যুক্ত কিছু প্রতিষ্ঠান, লিখিত ও অলিখিত নিয়মাবলী, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কযা
ভ‚মির মালিকানা ও ভ‚মির ব্যবহারের ধরন নির্ধারণ করে। উৎপাদন পদ্ধতি প্রত্যয়টি কার্লমার্ক্স যেভাবে
ব্যবহার করেছেন তাই অধিকাংশ গবেষক ব্যবহার করে থাকেন। মার্ক্স উৎপাদন পদ্ধতি বলতে উৎপাদন
শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কএই দুটি উপাদানের সমন্বয়কে বুঝিয়েছেন। মার্ক্স এর মতে- “সামাজিক
উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় মানুষ জড়িত হয় কতকগুলি অনিবার্য ও ইচ্ছা নিরপেক্ষ নির্দিষ্ট সম্পর্কে, উৎপাদন
সম্পর্কে, যা মানুষের বৈষয়িক উৎপাদন শক্তির বিকাশের একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের অনুরূপ” (মার্ক্স, ১৯৭১
: ২৫)১ । উৎপাদনী শক্তির অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে এক, যন্ত্রসরঞ্জাম ও প্রযুক্তিবিদ্যা, দুই, ভ‚মি যা উৎপাদনের
উপায় ও তিন, মানুষের শ্রম। উৎপাদন সম্পর্কহচ্ছে উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় মানুষে মানুষে ক্রিয়াশীল
সম্পর্ক। বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন পদ্ধতি আলোচনার বিষয়বস্তুতে অন্তর্ভুক্ত হয়- জমির জোত (ষধহফ
যড়ষফরহম), জমির স্বত্বভোগ ব্যবস্থা (ষধহফ ঃবহঁৎব), মূলধন, প্রযুক্তি, শ্রমের ব্যবহার, ঋণ ব্যবস্থা,
বিভিন্ন শ্রেণীর কৃষকের মধ্যে সম্পদ বন্টন, সরকারী হস্তক্ষেপ ইত্যাদি।
জমির জোত
ইতিহাসে জানা যায় যে আদিতে বাংলা অঞ্চলে জমির ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল না। কৃষকের ছিল
যৌথভাবে জমি ব্যবহারের অধিকার। তবে বাংলাদেশে জমিতে রাইয়ত হিসেবে চাষের অধিকার বহু পূর্ব
হতে চলে আসছে। জমি চাষাবাদ থেকে খাজনা নেয়ার রেওয়াজও বেশ পুরনো। এই উপমহাদেশে সম্রাট
শেরশাহ কবুলিয়ত ও পাট্টা প্রদানের মাধ্যমে ভ‚মি চাষের জমি ও ভ‚মির জন্য দেয় খাজনা নির্দিষ্ট করে
দেন। বৃটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার দেওয়ানী লাভের পর খাজনা আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ডাককারী
জমিদারের নিকট ৫ বৎসর ও ১ বৎসর মেয়াদী ভ‚মি বন্দোবস্তদেওয়ার রেওয়াজ প্রতিষ্ঠা করে।
ঔপনিবেশিক শাসকগণ ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তপ্রবর্তন করে যার ফলে বাংলায় জমিদারী প্রথার
উৎপত্তি ঘটে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পূর্বে জমির প্রকৃত মালিক ছিল রাইয়ত বা কৃষকগণ। কিন্তু এই
বন্দোবস্তের পর জমিদারগণ চিরস্থায়ী ভাবে ভ‚সম্পত্তি ভোগ করার ও রাইয়তদের কাছ থেকে খাজনা আদায়

১ কার্ল মার্ক্সস, “অর্থশাস্ত্রের সমালোচনা প্রসঙ্গে গ্রন্থের ভ‚মিকা”, মার্ক্সস এঙ্গেলস রচনা সংকলন, প্রথম খন্ড, দ্বিতীয় অংশ,
প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, ১৯৭১।
পাঠ - ১
ঔপনিবেশিক শাসকগণ
কর্তৃক ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী
বন্দোবস্তপ্রবর্তনের পূর্বে
জমির প্রকৃত মালিক ছিল
রাইয়ত বা কৃষকগণ।
করার অধিকার লাভ করেন। এর বিনিময়ে জমিদারগণ বৃটিশ সরকারকে স্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব
প্রদান করতে বাধ্য থাকেন। পরবর্তীতে আরো কঠোর আইনের ফলে জমিদারগণ কৃষকদের জমি থেকে
উচ্ছেদ করার ক্ষমতা লাভ করেন। এভাবে ঔপনিবেশিক শাসনামলে বাংলার কৃষকগণ জমির মালিক থেকে
প্রজায় পরিণত হন। উচ্চহারে খাজনা না দিতে পারায় এবং ভ‚মি থেকে উৎখাত হওয়ায় অনেক কৃষক
ভ‚মিহীন মজুরে পরিণত হন। উত্তর ঔপনিবেশিক কালে পাকিস্তান সরকার ১৯৫০ সালে জমিদারী উচ্ছেদ
ও প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে জমিদারী প্রথার বিলোপ ঘোষণা করে। এর ফলে হিন্দু জমিদারগণ দেশত্যাগ
করে ভারতে চলে গেলে তাদের জোতগুলি ভাগচাষী ও দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে ৩৩ একরের সীমা বেধে
দিয়ে বিলি করা হয়। অন্যদিকে মুসলমান উদ্বৃত্ত কৃষক ও জোতদার যাদের মালিকানায় বিশাল জোত ছিল
তাদের মালিকানা অপরিবর্তিত থাকে। তারা পরিবারের অপরাপর সদস্যের নামে জমি রেজিস্ট্রি করে নেন।
জমিদারী উচ্ছেদ আইনের ফলে বাংলাদেশে একটি সংখ্যা গরিষ্ঠ ক্ষুদে জোতের মালিক শ্রেণী সৃষ্টি হয়।
জমির মালিকানা
১৯৯৬ সালের কৃষি শুমারীর জমির মালিকানা বিন্যাসে দেখা যায় যে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ৬৬.১৮%
গৃহস্থালী জমির মালিক। ১০.১৮% ভ‚মিহীন যারা জীবিকার জন্য কৃষির উপরই নির্ভরশীল। লক্ষণীয় যে
কৃষি নির্ভর গৃহস্থালীগুলির ৫২.৮৫% ক্ষুদে জোতের (০.৫ থেকে ২.৫ একর) মালিক। মাঝারী (২.৫
থেকে ৭.৫ একর) কৃষি জোতের মালিক ১১.৬৫% এবং বড় জোতের (৭.৫ থেকে উপরে) মালিক
১.৬৭%। ক্ষুদে কৃষকদের গড় জমির পরিমাণ ১৯৮৪ সালে ছিল ২.২৬ একর যা আরো কমে ১৯৯৬
সালে দাঁড়ায় ১.৬৯ একরে। ১৯৯৬ সালের কৃষি শুমারী অনুসারে মোট জমির মালিকদের ৪৯.১১% প্রান্তিক
কৃষকের জমির পরিমাণ এক একরের কম। মাঝারী ও ধনী কৃষক যারা মোট জমির মালিকের সংখ্যার
২০% তারা মোট জমির ৫৯% এর মালিক। বাকী ৮০% ক্ষুদে কৃষক ৪১% জমির মালিক। সারণী-১
থেকে ভ‚মি বন্টনে বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। বোঝা যায় যে ক্ষুদে কৃষকের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলেও
তাদের চাষের জমি বাড়ে নি। অন্য দিকে মাঝারী ও ধনী কৃষকের কাছে জমির পুঞ্জীভবন ঘটছে। ক্ষুদ্র
জোতের উপর নির্ভর করে ক্ষুদে কৃষকের জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব হয় না। তাই তারা ধনী ও মাঝারী
কৃষকের জমি বর্গাচাষ করেন এবং ক্ষেতমজুর হিসেবে কাজ করেন। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের উপর ঋণের
বোঝাও সর্বাধিক হওয়ায় ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে তারা জমি বিক্রি করে ভ‚মিহীনে পরিণত হন।
সারণী - ১ : বাংলাদেশের খামার জোতের মালিকানা বন্টনের পরিবর্তন (১৯৬০-১৯৯৬)
খামারের আয়তন
খামার জোতের সংখ্যার শতাংশ
(ভধৎস যড়ষফরহম)
খামার জমির আয়তনের শতাংশ
(ভধৎস ধৎবধ)
১৯৬০ ১৯৭৭ ১৯৮৪ ১৯৯৬ ১৯৬০ ১৯৭৭ ১৯৮৪ ১৯৯৬
ছোট জোত
(০.৫-২.৫একর)
৫১.৬ ৪৯.৮ ৭০.৩৪ ৭৯.৮৭ ১৬.২ ১৮.৭ ২৮.৯৮ ৪১.১৮
০.৫ এর নীচে ১৩.১ ৫.৫ ২৪.০৬ ২৮.৪৫ ০.১ ০.৫ ২.৭৪ ৪.৪৮
০.৫-০.৯৯ একর ১১.২ ১০.৪ ১৬.৩৭ ২০.৬৬ ২.৩ ২.১ ৫.০৮ ৮.৫১
১.০-২.৫ একর পর্যন্ত ২৭.৩ ৩৩.৯ ২৯.৯১ ৩০.৭৬ ১৩.০ ১৬.১ ২১.১৬ ২৮.১৯
মাঝারী জোত
(২.৫-৭.৫একর)
৩৭.৭ ৪০.৮ ২৪.৭২ ১৭.৬১ ৪৫.৭ ৪৮.৯ ৪৫.০৯ ৪১.৫০
বড় জোত
(৭.৫ একরের উর্ধে)
১০.৭ ৯.৪ ৪.৯৪ ২.৫২ ৩৮.১ ৩২.৪ ২৫.৯২ ১৭.৩২
উৎস : বিবিএস ১৯৭৭, ১৯৮১, ২০০০ সন।
জমি কেনাবেচা ব্যতীত জমি হস্তান্তর হয় উত্তরাধিকার, দান ও যৌতুক হিসেবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র ধর্মীয়
উত্তরাধিকার আইনের স্বীকৃতি প্রদান করেছে। ইসলামী উত্তরাধিকার আইন বেশ জটিল যাতে তিন ধরনের
উত্তরাধিকার অন্তর্ভুক্ত আছে - অংশীদার (ংযধৎব), অবশিষ্টাংশ ভাগীদার (ৎবংরফঁধৎরবং) এবং দূরবর্তী
বংশধর (ফরংঃধহঃ শরহফৎবফ)। এই তিন শ্রেণীর মধ্যে আবার ১২ ধরনের অংশীদার, ১৯ ধরনের
ক্ষুদে কৃষকের সংখ্যা ক্রমাগত
বৃদ্ধি পেলেও তাদের চাষের
জমি বাড়েনি। মাঝারী ও ধনী
কৃষকের কাছে জমির
পুঞ্জীভবন ঘটছে।
অবশিষ্টাংশ ভাগীদার ও ১৭ ধরনের দূরবর্তী বংশধরগণের উত্তরাধিকার প্রাপ্তির নিয়ম আছে। নারী সন্তানের
চেয়ে পুরুষ সন্তান দুইগুণ বেশী সম্পত্তি উত্তরাধিকার হিসেবে পেয়ে থাকে। উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী
নারীরা বাবা, মা, স্বামী, পুত্র ও কন্যার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারেন। কিন্তু কার্যত দেখা যায় যে
নারীদেরকে সম্পত্তি বিশেষত জমি উত্তরাধিকার হিসেবে না নিতে উৎসাহিত করা হয়। নানা কলা কৌশলে
নারীদের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। পর্দা প্রথার দরূণ নারীদের পক্ষে জমি ব্যবস্থাপনা
অসুবিধাজনক এই অজুহাতে নারীদের জমির মালিক কার্যত পুরুষগণই হয়ে থাকেন। ১৯৯৬ সালের কৃষি
শুমারীতে দেখা যায় যে পুরুষের মালিকানায় জমির পরিমাণ ৯৬.৫২% ও নারীদের মালিকানায় ৩.৪৮%।
জমির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দরিদ্রদের মধ্যে উত্তরাধিকার বন্টনের ফলে জমি অধিক হারে খন্ডিতকরণ হয়ে
থাকে। ধনী কৃষকগণের মধ্যে জমি ব্যতীত অন্যান্য সম্পদ থাকায় উত্তরাধিকার বন্টনের ফলে জমির
খন্ডিতকরণ কম হয়। বাংলাদেশে অধিকাংশ জোত অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডে খন্ডিত এবং বিভিন্ন স্থানে
ছড়ানো। খন্ডিত জমি মূলধনঘন ও আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের পথে বড় অন্তরায়।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দারিদ্র ও বর্গাচাষের জন্য জমি কম থাকায় জমির মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধনী কৃষকগণ কৃষিতে
আধুনিক প্রযুক্তি যেমন সেচের জন্য পাওয়ার পাম্প আনার ফলে তাদের উদ্বৃত্ত উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর
সঙ্গে তাল মিলিয়ে জমির মূল্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া জমি বিত্তবানদের ক্ষমতা ও মর্যাদার প্রতীক। প্রতি
দশ বৎসরে একর প্রতি ফসলী জমির মূল্য ছয়গুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রান্তিক চাষীগণ ক্ষুদ্র জমিতে উৎপাদনের
ব্যয় বহন করে জীবিকা নির্বাহ করতে অপারগ হওয়ায় জমি বিক্রয় করতে বাধ্য হন। অনেকে ক্ষেত মজুর
হিসেবে কাজ করাই লাভজনক বলে মনে করছেন। এভাবে জমির মালিকানা থেকে প্রান্তিক কৃষকগণ ঝরে
পড়ছেন এবং ধনী কৃষকগণের মালিকানায় অধিক জমি ঘনীভ‚ত হচ্ছে। লক্ষণীয় যে গ্রামীণ সমাজে গোষ্ঠী
গুরুত্বপূর্ণহওয়ায় জমি বিক্রয়, বর্গাচাষ, মজুরী শ্রম সকল ক্ষেত্রেই কৃষকগণ গোষ্ঠীভুক্ত পরিবারগুলির
মধ্যেই লেনদেন সীমাবদ্ধ রাখতে অধিক আগ্রহী হয়ে থাকেন।
বর্গাচাষ
ক্ষুদ্র কৃষকগণের জমি কম থাকায় জীবিকা নির্বাহের জন্য তারা উৎপাদনে সর্বোচ্চ শ্রম শক্তি নিয়োগ
করেন। ফলে দেখা যায় যে ক্ষুদ্র কৃষকের জমির একর প্রতি ফসলের উৎপাদন ধনী কৃষকের উৎপাদনের
চেয়ে বেশী। এতে ধনী কৃষকগণ ক্ষুদ্র কৃষকের কাছে চুক্তি ভিত্তিতে জমি চাষ করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন।
ধনী কৃষকগণ অবশ্য মর্যাদাবোধের কারণে নিজেদের পারিবারিক শ্রম কৃষি উৎপাদনে নিয়োগ করেন না।
কায়িক শ্রম না করাকে তারা মর্যাদার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এভাবে যারা কায়িক শ্রম করেন
তাদের উপর যারা কায়িক শ্রম করেন না অর্থাৎ ধনী কৃষকগণ ক্ষমতা চর্চা করেন। তাছাড়া হিসাব করে
দেখা যায় যে চুক্তি ভিত্তিক চাষ বা বর্গাচাষে ধনী কৃষক অধিক লাভবান হন। নিজেদের জমি মজুরী শ্রমিক
দ্বারা, মূলধন খাটিয়ে ও তত্ত¡াবধান করে চাষ করলে যা খরচ হয় বর্গাচাষের মাধ্যমে অর্ধেক ফসল বিনা
খরচে পাওয়া অনেক বেশী লাভজনক। এতে সময়মত মজুরী শ্রম পাওয়ার অনিশ্চয়তা থেকে ধনী কৃষকগণ
রক্ষা পান এবং মূলধন অন্যান্য অর্থকরী ব্যবসা ও ঋণ প্রদানের ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করতে সক্ষম হন।
সর্বোপরি অধিক সংখ্যক ক্ষুদ্র কৃষকের কাছে বর্গাচাষ করতে দিলে ক্ষুদ্র কৃষকগণের উপর ধনীকৃষকগণের
নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়। বর্গাচাষের জন্য অনুক‚ল অবস্থা সৃষ্টি হলেও পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে সর্বাধিক
সংখ্যক কৃষক নিজের জমি নিজে চাষ করেন। তারপর যাদের জমি আছে এবং কিছু জমি বর্গাচাষও করেন
তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। শুধুমাত্র বর্গাচাষের উপর নির্ভর করেন এবং নিজের জমি নেই এমন বর্গাচাষীদের
সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। তবে পরিসংখ্যানে লক্ষণীয় যে মালিক ও বর্গাচাষীর সংখ্যা ১৯৬০ সালে ছিল
৩৭.৬% যা ১৯৭৮ সালে কমে দাঁড়ায় ২৮.১%। অন্য দিকে কেবল বর্গাচাষীর সংখ্যা ১৯৬০ সালে ছিল
১.৬% যা ১৯৭৮ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৭.৪%। এর অর্থ প্রান্তিক কৃষকগণের মধ্যে যারা বর্গাচাষও করেন
তারা নিজের জমি বিক্রি করে শুধু বর্গাচাষের উপর ও মজুরী শ্রমের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন।
ধনী কৃষকগণ ক্ষুদ্র কৃষকের
কাছে চুক্তি ভিত্তিতে জমি চাষ
করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন।
বর্গাচাষের মাধ্যমে অর্ধেক
ফসল বিনা খরচে পাওয়া
তাদের জন্য অনেক বেশী
লাভজনক।
বর্গাচাষের চুক্তি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। (১) সর্বাধিক প্রচলিত চুক্তিটি ‘ভাগচাষ’। এতে নির্দিষ্ট সময়ের
জন্য জমির মালিক বর্গা চাষীকে জমি চাষ করতে দেন এবং এতে উৎপাদনের ব্যয় দুইপক্ষে ভাগ করে নেবার
কথা। কিন্তু বর্তমানে দেখা যায় যে মালিক কোন ব্যয় ভাগ করেন না এবং বর্গাচাষীকে উৎপাদনের সকল
ব্যয় বহন করতে হয়। উৎপাদিত ফসল মালিক ও বর্গাচাষী সমান দুই ভাগে ভাগ করে নেন। (২) দ্বিতীয়
ধরনের বর্গাচাষ ব্যবস্থায় বর্গাচাষী জমির মালিককে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অথবা ফসল খাজনা হিসেবে
উৎপাদনের পূর্বে অথবা পরে দিয়ে থাকেন। জমিতে কতটুকু ফসল উৎপাদিত হলো তার উপর এই খাজনা
নির্ভর করে না। (৩) খাই খালাসী নামে যে বর্গাচাষ চালু আছে তাতে বর্গাচাষী নির্দিষ্ট পরিমাণ খাজনা
মালিককে প্রদান করার পর জমি চাষ করতে পারেন। নির্দিষ্ট সময় চাষ করার পর জমি মালিককে ফেরত
দিতে হয়। (৪) দায়সুদী নামে যে বর্গাচাষ করা হয় এতে বর্গাচাষী মালিককে ঋণ হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ
অর্থ প্রদান করেন এবং ঋণ পরিশোধ করার পর জমি ফেরত দেন।
দীর্ঘকাল যাবত ভাগ চাষ ব্যবস্থা কার্যকর থাকলেও বর্তমানে মালিকগণ নগদ অর্থের বিনিময়ে বর্গাচাষ করতে
অধিক আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ধনী কৃষকগণের ধারণা এই যে সরকার বর্গাচাষীদেরকে জমির মালিকানার
অধিকার প্রদান করতে পারেন। এই ভীতি থেকে তারা সনাতন বর্গাচাষ ব্যবস্থা থেকে সরে আসতে চান।
সনাতন বর্গাচাষে যে উৎপাদন ব্যয়, বীজ, সার ইত্যাদি এবং ফসল ভাগাভাগির বিষয় ছিল তাও পরিবর্তিত
হয়ে গেছে মালিকের পক্ষে। বর্গাদারকেই বর্তমানে উৎপাদনের সকল ব্যয় বহন করতে হয় বলে বর্গাচাষকৃত
জমিতে ফসলের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। অধিক উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন, প্রযুক্তি ও উপকরণ
ব্যয় সাপেক্ষ হওয়ায় বর্গাদারের পক্ষে বিনিয়োগ করা সম্ভব হয় না। এসকল কারণে বর্গাচাষকৃত জমিতে
আধুনিকীকরণ বা উচ্চ ফলনশীল বীজ ও সেচের পানি ব্যবহারের পরিমাণও কম। যেহেতু উচ্চ ফলনশীল
বীজ চাষে অধিক ফসল উৎপাদিত হয় সুতরাং ধনী কৃষকগণ বর্গাচাষীদের উৎখাত করে নিজেদের তত্ত¡াবধানে
চাষ করতে উৎসাহী হয়ে উঠছেন। যেহেতু জমির মালিকগণ বর্গাচাষীদের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে উৎপাদন
ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করছেন এ কারণে অনেক গবেষক একে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য বলে মনে করেন।
কিন্তু বর্গাচাষের সবকিছু অর্থনৈতিক লেনদেন নয়। যেমন জমি পাওয়ার জন্য বর্গাচাষীকে মালিকের জন্য
বিনা পারিশ্রমিকে শ্রম দেওয়াসহ নানাবিধ রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সহযোগিতা প্রদান করতে হয়।
ভ‚মিহীনতা
বাংলাদেশে ভ‚মির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কনির্ণয়ে ভ‚মি মালিকানা ব্যবস্থার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণবৈশিষ্ট্য হচ্ছে
ভ‚মিহীনতা। ১৯৭৭ সালের ভ‚মি মালিকানা জরীপে ভ‚মিহীনতা সংজ্ঞায়নের জন্য তিনটি বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা
হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে আরো একটি বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত হয়।
ভ‚মিহীন ১ গ্রামীণ গৃহস্থালী যাদের বসতভিটা ও চাষের জমি নেই।
ভ‚মিহীন ২ গ্রামীণ গৃহস্থালী যাদের বসতভিটা আছে, চাষের জমি নেই।
ভ‚মিহীন ৩ গ্রামীন গৃহস্থালী যাদের বসতভিটা বাদে ০.৫ একর পর্যন্তজমি আছে।
ভ‚মিহীন ৪ গ্রামীণ গৃহস্থালী যাদের বসতভিটা বাদে ০.৫১ থেকে এক একর পর্যন্ত জমি আছে।
উল্লেখ্য যে, ঔপনিবেশিক শাসন কায়েমের পূর্বে বাংলায় ভ‚মিহীনতার কোন সম্ভাবনা ছিল না কারণ তখন
ভ‚মির ব্যক্তিগত মালিকানা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয় নি। তখন বিক্রি, বন্ধক, উইল, দান, উপহার
ইত্যাদির মাধ্যমে ভ‚মির নিয়ন্ত্রণ হারানোর বিষয় ছিল না। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর ভ‚মির ব্যক্তিগত
মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ভ‚মির মালিকানা হারানোর বিষয় গুরুত্বপূর্ণহয়ে উঠে। নি¤েœর সারণীতে
বাংলাদেশে ভ‚মিহীনের হার উপস্থাপিত হলো।
সারণী - ২ : ভ‚মিহীন কৃষকের হার
বৎসর কৃষিতে নিয়োজিত মোট শ্রমশক্তির ভ‚মিহীনের শতাংশ
ভ‚মিহীন ১ ভ‚মিহীন ২ ভ‚মিহীন ৩ ভ‚মিহীন ৪
১৯৫১ ১৪.৩ - - -
ধনী কৃষকগণ নগদ অর্থের
বিনিময়ে বর্গাচাষ করতে
অধিক আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
তবে বর্গাচাষের সব কিছু
অর্থনৈতিক লেনদেন নয়।
বর্গাচাষীকে বিনা পারিশ্রমিকে
শ্রম ও মালিকের পক্ষে
রাজনৈতিক সমর্থন প্রদান
করতে হয়।
১৯৬১ ১৮.৯ - - -
১৯৭৪ ২৪.৯ - - -
১৯৭৭ ১১.৭ ৩২.৭৯ ১৫.২৯ -
১৯৭৮ ১১.৫৯ ২৩.৪৩ ১৮.৫৯ -
১৯৮৪ ৮.৭০ ১৯.৬০ ২৪.০৬ ৪০.৪৩
১৯৯৬ ১০.১৮ ৩৫.৯১ ২৮.৪৫ ৪৯.১১
উৎস : চড়ঢ়ঁষধঃরড়হ ঈবহংঁং ১৯৫১, ১৯৬১, ইইঝ ১৯৭৪, ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৮৪, ১৯৯৬.
বাংলাদেশে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভ‚মিহীনতা বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ একদিকে ধনী কৃষকদের হাতে ভ‚মি ও
সম্পদের কেন্দ্রীভবন ও অন্য দিকে ভ‚মি থেকে বিচ্ছিন্ন মানুষের নিঃস্বকরণ। ভ‚মিহীনের সংখ্যা বৃদ্ধি মানে
মজুরী শ্রমের সরবরাহ বৃদ্ধি। কিন্তু দেখা যায় যে গ্রামাঞ্চলে ধনী কৃষকগণ উৎপাদনের উদ্বৃত্ত জমি ক্রয়,
সুদের ব্যবসা ও কৃষি উপকরণসহ নানাবিধ ব্যবসায় বিনিয়োগ করে থাকেন। ফলে গ্রামাঞ্চলে অ-কৃষি
খাতে কর্মসংস্থান হয় না। ভ‚মিহীন ক্ষেত মজুরগণ কৃষি কাজেই ক্ষেতমজুর হিসেবে প্রধানত কাজ করেন।
কৃষি মজুরী শ্রম মৌসুমী ধরনের। কৃষি খাতে সারা বৎসর কাজ থাকে না। ফলে বেকারত্ব, ছদ্ম-বেকারত্ব,
অর্ধাহার ও অনাহারে বেঁচে থাকেন ভ‚মিহীন ক্ষেতমজুরগণ। সরকারী উদ্যোগে অবকাঠামো নির্মাণের অস্থায়ী
কাজে কিছু কর্ম সৃষ্টি হয়। ভ‚মিহীনদের একটি বড় অংশের নিজের বাড়ী নেই যারা অন্যের বাড়ীতে থাকেন
ও বিভিন্ন গ্রামে কাজ করেন। কৃষির বাইরে কাজ না থাকায় এবং শহরেও সকলের কর্ম সংস্থানের সম্ভাবনা
না থাকায় নিঃস্ব ক্ষেতমজুরগণ গ্রামেই কৃষিকে আঁকড়ে ধরে কোন রকমে বেঁচে থাকেন। গ্রামাঞ্চলে এনজিও
এর ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের আওতায় স্বকর্ম সংস্থানের কিছু ব্যবস্থা হয়েছে। ভ‚মিহীন ও ক্ষুদ্র কৃষকগণ সর্বাধিক
দারিদ্র পীড়িত। কারণ ভ‚মি থেকে খাদ্যসংস্থান না হওয়ায় তারা বাজার থেকে চড়া দামে খাদ্যসহ সকল
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে বাধ্য হন। অথচ বাজারের দ্রব্যমূল্যের চেয়ে ক্ষেতমজুরদের মজুরীর পরিমাণ
অনেক কম।
কৃষিঋণ
কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় নগদ অর্থের সংস্থান ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের নেই। কারণ তাদের উদ্বৃত্ত
নেই বললেই চলে। কৃষি উৎপাদনের জন্য ব্যাংক প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ প্রদান করলেও তাতে ধনী কৃষকগণের
প্রবেশাধিকার বেশী। ফলে গ্রামের ধনী কৃষক ও মহাজনদের কাছ থেকেই দরিদ্র কৃষকগণ ঋণ গ্রহণ করে
থাকেন। এসব ঋণে সুদের হার অত্যধিক বেশী। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুদের হার ১০০% এবং কখনো তা
২০০% ও হয়ে থাকে। এসব উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করায় ফসল হানি ঘটলে তা কৃষকের জন্য বিপদজনক
হয়ে পড়ে। ঋণ পাওয়ার জন্য কৃষকগণ অনেক সময় জমি বন্ধক রাখেন। এটি কৃষকের জন্য একটি মরণ
ফাঁদের ন্যায়। কারণ একবার মহাজনের খপ্পরে বন্ধকী জমি গেলে তা ফিরে পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার। ঋণের
সুদ আসল যোগ করে চক্রবৃদ্ধি হারে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ধনী কৃষকগণ
ক্ষুদ্র কৃষকের জমি আত্বসাৎ করেন। দরিদ্র কৃষকগণ খাদ্যের প্রয়োজনেও ঋণ গ্রহণ করেন সাধারণত ফসল
উঠার পূর্বের সময়কালে যখন খাদ্যাভাব মারাত্বক আকার ধারণ করে। নিয়ম অনুযায়ী ফসল উঠার পর
এই ঋণ পরিশোধ করতে হয় ফসল প্রদান করে। এই পরিশোধিত ফসলের মূল্য ঋণের মূল্যের চেয়ে
অনেক গুণ বেশী।
কৃষি প্রযুক্তি
বাংলাদেশের কৃষি পদ্ধতিতে সনাতন যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বাধিক। ক্ষুদ্র কৃষকের প্রয়োজনীয়
মূলধন না থাকা এর একটি বড় কারণ। অনেক কৃষকের সনাতন যন্ত্রপাতি যেমন লাঙ্গল, যোয়াল, বলদও
নেই। ধনী ও মাঝারী কৃষকগণের কাছ থেকে তারা এসব ধার করে আনেন। এ কারণে অনেক সময়
ভ‚মিহীনের সংখ্যা দিন-দিন
বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার মানে
মজুরী শ্রমের সরবরাহ বৃদ্ধি
পাচেছ। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে অকৃষি খাতে কর্মসংস্থান হয়
না। ফলে বেকারত্ব, ছদ্ম
বেকারত্ব, অর্ধাহার ও
অনাহারে বেঁচে থাকে
ক্ষেতমজুরগণ।
আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিরপ্রশাসক ও ধনী কৃষকনিয়ন্ত্রণ থাকায় দরিদ্র কৃষকগণ তাদের করুপাত্র হয়ে যান।
সময়মত চাষাবাদ বিঘিœত হয়। আধুনিক উচ্চ ফলনশীল বীজ দিয়ে বেশীর ভাগ ধনী কৃষকগণই চাষ
করেন। কারণ আধুনিক বীজ দিয়ে চাষ করার জন্য প্রচুর রাসায়নিক সার প্রয়োজন। কীট নাশক ও আগাছা
নাশক প্রয়োজন। সময়মত সেচের জন্য পানি আবশ্যক। এসব উপকরণ ব্যয়বহুল। এইসব উপকরণ
যোগাড় করার জন্য দরকার নগদ অর্থ। মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করে আধুনিক চাষাবাদে
ব্যয় করা লাভজনক হয় না। তাছাড়া সরকারী প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে
আধুনিক কৃষি উপকরণ পাওয়া যায় না। প্রশাসনের সঙ্গে স্বার্থের লেনদেনের সম্পর্কগড়ে তুলতে অপারগ
হওয়ায় দরিদ্রদের দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। সেচের জন্য গভীর, অগভীর নলক‚প ও শক্তি চালিত পাওয়ার পাম্প
ইত্যাদি সরকারী উদ্যোগে ব্যবস্থা করা হলেও, সেচের জন্য গঠিত সমবায় গুলিতে ধনী কৃষকগণের একচ্ছত্র
আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সেচ ব্যবস্থাপনায় ধনী কৃষকগণের নিয়ন্ত্রণ থাকায় দরিদ্র কৃষকগণ তাদের করুণার
পাত্র হয়ে যান। অনেক সময় প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ না করে ধনী কৃষকগণ চাপ প্রয়োগ করে জমি
বন্ধক রাখা কিংবা বিক্রয় করার জন্য ক্ষুদ্র কৃষককে বাধ্য করেন। দরিদ্র কৃষকগণের উপর নিয়ন্ত্রণ অটুট
রাখার উদ্দেশ্যে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও আধুনিক সেচ প্রকল্পগুলি ক্ষমতাশালীদের হাতিয়ারে পরিণত হয়।
সারাংশ
বাংলাদেশের কৃষি কাঠামোর আলোচনা থেকে দেখা যায় যে কৃষকদের অধিকাংশ ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও ভ‚মিহীন
কৃষক। তারা মোট চাষের জমির ক্ষুদ্র অংশের মালিক। অন্য দিকে অল্পসংখ্যক ধনীকৃষক অধিকাংশ জমির
মালিক। কৃষকদের একটি বড় অংশ যারা ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও ভ‚মিহীন কৃষক তারা জমি চাষাবাদ করে
নিজেদের খোরাকী যোগাড় করতে অপারগ হন। কাজের জন্য তারা নির্ভর করেন ধনী কৃষকের উপর।
সারা বৎসর কৃষি কাজ থাকে না। আর মজুরীও খুব কম। অ-কৃষি খাতে কাজের সুযোগ যথেষ্ট নয়।
বর্গাচাষীগণ ধনী কৃষকের কাছ থেকে জমি নিয়ে ভাগ চাষ করেন। কিন্তু ভাগচাষের জন্য জমি পাওয়া
অনিশ্চিত এবং চাষের শর্ত বর্গাচাষীর জন্য শোষণমূলক। পুঁজির স্বল্পতার দরূণ কৃষকগণ ঋণের জন্য
ধনীকৃষক ও মহাজনের উপর নির্ভর করেন। তারা ঋণের জন্য উচ্চ হারে সুদ নেন। কোন বছর ফসল
ভালো না হলে কৃষক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে সর্বস্বান্তহয়ে যান। অনেক সময় জমি বন্ধক রেখে ঋণ গ্রহণ
করায় ঋণের টাকা ফেরত না দিতে পারলে জমি হাত ছাড়া হয়ে যায়। কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি অর্থাৎ উচ্চ
ফলনশীল বীজ, সার, কীটনাশক ও সেচের পানি ব্যবহৃত হওয়ায় দরিদ্র কৃষকগণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েন
স্থানীয় প্রশাসক ও ধনী কৃষকগণের উপর। ধনী কৃষকগণ প্রশাসনের যোগাসাজশে কৃষি উপকরণ নিয়ন্ত্রণ
করেন। ধনী কৃষকগণ তাদের উদ্বৃত্ত ভ‚মি ক্রয়, সুদের ব্যবসা, কৃষি উপকরণের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন।
ঋণের ফাঁদে পড়ে এবং নানাবিধ চক্রান্তও চাপে পড়ে ও দারিদ্রের কারণে প্রান্তিক কৃষকগণ জমি বিক্রয়
করেন। ধনী কৃষকের হাতে ব্যাপক হারে জমির পুঞ্জীভবন ঘটছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন -
১। কত সালে জমিদারী প্রথার উৎপত্তি ঘটে?
ক. ১৮৫৭ সালে
খ. ১৭৫৭ সালে
গ. ১৭৯৩ সালে
ঘ. ১৮৮৫ সালে
২। কত সালে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ হয়?
ক. ১৯৪৭ সালে
খ. ১৯৫০ সালে
গ. ১৯৭১ সালে
ঘ. ১৯৬৯ সালে
৩। বর্গাচাষ ব্যবস্থায় ফসলের কত অংশ জমির মালিককে দিতে হয়?
ক. দুই তৃতীয়াংশ
খ. অর্ধাংশ
গ. এক তৃতীয়াংশ
ঘ. এক চতুর্থাংশ
৪। খাই খালাসী ব্যবস্থায় মালিককে কি দিতে হয়?
ক. নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসল
খ. নির্দিষ্ট পরিমাণ খাজনা
গ. মালিকের জমিতে শ্রম দিতে হয়
ঘ. ফসল ও শ্রম দিতে হয়
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। ধনী কৃষকের হাতে কিভাবে জমির পুঞ্জীভবন ঘটছে আলোচনা করুন।
২। ভ‚মিহীনতার বৈশিষ্ট্য কি? ভ‚মিহীনতার ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে কি কি সমস্যার উদ্ভব হয়?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। কৃষি কাঠামো বলতে কি বোঝায়? বাংলাদেশের কৃষি কাঠামোর বৈশিষ্ট্য আলোচনা করুন।
২। বর্গাচাষের শর্ত কি? বর্গাচাষে কি ধরনের পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে?
গ্রামীণ সমাজে আর্থ-সামাজিক সম্পর্ক
ঝড়পরড়-ঊপড়হড়সরপ জবষধঃরড়হংযরঢ়ং রহ জঁৎধষ ঝড়পরবঃু

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]