শ্রেণী সচেতনতার ধরন
পূর্ববর্তী ২ নং পাঠে আলোচনা করা হয়েছে কিভাবে বাংলাদেশে গ্রামীণ সমাজে শ্রেণী পৃথকীকরণ ঘটছে।
মেরুকরণ স্পষ্ট হয়ে উঠে মজুরী শ্রম নিয়োগের ক্ষেত্রে। তাছাড়া অর্থ, ফসল ও শ্রম হিসেবে ধনী কৃষককে
যে খাজনা দেয়া হয় তাতেও শোষণের ধরন স্পষ্ট। মহাজনী ঋনের মাধ্যমেও ধনী শ্রেণীর অত্যাচারে
জর্জরিত হয় দরিদ্র শ্রেণীর কৃষক। শ্রেণী পৃথকীকরণ অর্থনৈতিক থেকে সামাজিক সম্পর্কের মধ্যেও বিস্তৃত
হচ্ছে। মার্ক্সসের তত্ত¡ অনুসারে এই শ্রেণী পৃথকীকরণ দুটি অবস্থায় থাকতে পারে। এক, আত্ববিস্মৃত শ্রেণীর
অবস্থা (পষধংং রহ রঃংবষভ) এবং দুই, আত্বসচেতন শ্রেণীর অবস্থা (পষধংং ভড়ৎ রঃংবষভ)। সাধারণত প্রথম
অবস্থা থেকে দ্বিতীয় অবস্থায় উত্তরণের মাধ্যমে শ্রেণী পৃথকীকরণ দৃঢ় হয়। দ্বিতীয় অবস্থায় নির্দিষ্ট শ্রেণী
স্বার্থরক্ষার জন্য সংঘবদ্ধ হয়। তখন তারা অবস্থা সংহত করার জন্য কিংবা পরিবর্তনের জন্য নানাবিধ
কর্মকান্ডে জড়িত হয়।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে মজুরী শ্রমিকের শ্রেণী সচেতনতার কথা ধরা যাক। মজুরী শ্রমিকদের মধ্যে বিভিন্ন
ধরন আছে। কেউ সাময়িক মজুরী শ্রমিক, কেউ স্থায়ী আবার কেউ দীর্ঘ সময়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে
পারেন। তাদের শ্রেণী সচেতনতার মধ্যেও পার্থক্য আছে। যে সকল মজুরী শ্রমিকের অল্প জমি আছে তারা
শ্রমিক হিসেবে অতটা সচেতন হন না। ধনী কৃষকের সঙ্গে তাদের প্রধান বিরোধ জমির মালিকানা সংক্রান্ত।
সাময়িক মজুরী শ্রমিকের ক্ষেত্রেও শ্রমিক হিসেবে সচেতনতা ততটা নাও থাকতে পারে। যেসব মজুরী
শ্রমিকের কোন জমি নেই এবং কেবল মজুরী শ্রমের উপর জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের শ্রেণী সচেতনতা
বেশী। এই শ্রেণীর ক্ষেত মজুরগণকে সর্বহারা বলেও আখ্যায়িত করা হয়। সর্বহারা শ্রমিকগণ প্রতিদিনের
জীবন সংগ্রামে ধনী কৃষকগণের সঙ্গে মজুরী নিয়ে বিরোধে লিপ্ত হন। অনেক সময় সর্বহারা শ্রেণীর
ক্ষেতমজুরগণ মিলে সিদ্ধান্তনিতে পারেন যে নির্দিষ্ট পরিমাণ মজুরী না পেলে তারা কাজ করবেন না।
তারপর পৃথক পৃথক ভাবে মজুরগণ মালিকগণকে তা জানান। এ ধরনের ঘটনা প্রায়শই ঘটে। কিন্তু
এটাকেও সম্মিলিত সচেতন শ্রেণী বিরোধ বলা যাবে না। যখন সর্বহারা ক্ষেতমজুরগণ সংগঠিতভাবে একত্রে
ধনী শ্রেণীর মালিকদের বিরুদ্ধে মজুরী নিয়ে দরকষাকষির সংগ্রামে লিপ্ত হন তখন তাকে সচেতন শ্রেণী
সংগ্রাম বলা যায়। বাংলাদেশে ক্ষেতমজুরগণ এখনো সংগঠিত শক্তিতে পরিণত হন নি। তেভাগা
আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে হামজা আলাভী (১৯৬৫)১ মনে করেন যে মজুরী শ্রমিকদের আন্দোলনে
মাঝারী কৃষকগণ নেতৃত্ব দিতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশে সার্বিকভাবে মাঝারী শ্রেণীর কৃষকগণকে
ক্ষেতমজুরদের স্বার্থ রক্ষায় সচেতন হিসেবে দেখা যায় না।
বাংলাদেশে ধনী শ্রেণীর কৃষকদের শ্রেণী স্বার্থ সংহত হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে নতুন কৃষি প্রযুক্তির অনুপ্রবেশ,
সরকারী উদ্যোগে পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচী, পূর্ত কর্মসূচী, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে
ধনী কৃষকগণের ক্ষমতা সংহত হয়েছে। গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোতে আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমেও শ্রেণী
স্বার্থ রক্ষিত হয়। গ্রামীণ স্তরবিন্যাসে অধস্তনদের উপর নিপীড়ন নির্যাতনের ধরন রক্ষা করার মাধ্যমেও ধনী
শ্রেণীর স্বার্থ স্পষ্ট হয়ে উঠে। তাছড়া গ্রামের বাইরে উচ্চতর ক্ষমতা কাঠামো এবং রাষ্ট্রের শাসক গোষ্ঠীর
সঙ্গেও ধনী শ্রেণী ক্ষমতা সম্পর্কগড়ে তুলে শ্রেণী স্বার্থ রক্ষা করেন। সরকারের করনীতি, উদ্বৃত্ত জমি
অধিগ্রহণ, কৃষিপণ্যের মূল্য ইত্যাদি সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে ধনী শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষিত হয়েছে। প্রশাসনের
সঙ্গে স্বার্থ সম্পর্কস্থাপন করে ধনী কৃষকগণ কৃষি উপকরণের ব্যবসা, সেচের উপর কর্তৃত্ব, কর ফাঁকি
দেয়া, বেনামী কাগজ তৈরী করে জমি অধিগ্রহণ ঠেকানো ইত্যাদিতে সফল হন। পুলিশের সঙ্গে সম্পর্ক
স্থাপন করে তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থেকে রেহাই পাওয়ার সাফল্য অর্জন করেন। বলা যেতে পারে রাষ্ট্রের
শাসক গোষ্ঠী বুর্জোয়া শ্রেণীর সঙ্গে গ্রামীণ ধনী শ্রেণীর ক্ষমতার আঁতাত গড়ে উঠেছে। তারা পরস্পরের
শ্রেণী স্বার্থ রক্ষার্থে তৎপর।
কৃষক রাজনীতির প্রেক্ষাপট
বাংলা অঞ্চলে কৃষকগণ বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের পূর্বেও আন্দোলন করেছেন জমিদারের খাজনা
আদায়ের নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য। খাজনা আদায়ের জন্য জমিদার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে নির্যাতন
করতো এবং ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দিতো। তখন কৃষকগণ জোটবদ্ধ হয়ে লাঠিয়াল বাহিনীর সঙ্গে লড়াই
করতেন। ঔপনিবেশিক শাসনামলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে জমিদারগণ জমির ব্যক্তিগত মালিকে
১ অষধার ঐ, “চবধংধহঃং ধহফ জবাড়ষঁঃরড়হ” রহ গরষরনধহফ জ (বফ) ঝড়পরধষরংঃ জবমরংঃবৎ, গড়হঃযষু
জবারবি চৎবংং, ঘবুিড়ৎশ, ১৯৬৫.
সর্বহারা ক্ষেত মজুরগণ
প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামে
ধনী কৃষকগণের সঙ্গে মজুরী
নিয়ে বিরোধে লিপ্ত হন।
কিন্তু ক্ষেতমজুরগণ এখনো
সংগঠিত শক্তিতে পরিণত
হননি।
পরিণত হন। কর সংগ্রহ আরো নির্যাতনমূলক হয়ে যায়। কিন্তু জমিদারদের সঙ্গে বৃটিশ শাসক গোষ্ঠীর
স্বার্থ জড়িত থাকায় তাদের শক্তি অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। তথাপি ঔপনিবেশিক শাসনামলে বড় ধরনের কৃষক
আন্দোলন সংগঠিত হয়। তেভাগা আন্দোলন এমনি একটি ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন। বৃটিশ
শাসনামলে কমিউনিষ্ট পার্টি কৃষকদের সংগঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিরিশের দশকে কৃষক
আন্দোলন হয় খাজনা, প্রজাস্বত্ব, ক্যানেল কর, মহাজনী ঋণ ইত্যাদির বিরুদ্ধে। চল্লিশের দশকে কৃষকদের
প্রধান লড়াই ছিল ফসলের ভাগের জন্য লড়াই।
পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর বৃটিশ আমলে গঠিত পূর্ব বাংলা কৃষক সভা সংগঠনটি কমিউনিষ্ট পার্টির সঙ্গে
মিশে যায়। ১৯৫৭ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতি গঠিত হয়। পঞ্চাশ ও
ষাটের দশকে কৃষক সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে শ্রেণীগত ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। পূর্বে কৃষক সংগঠনে
কৃষকদের প্রাধান্য থাকতো। কিন্তু পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ক্ষুদ্রকৃষক, দরিদ্র কৃষক ও ক্ষেতমজুরগণ অধিক
হারে সংগঠনে অংশগ্রহণ করেন। ষাটের দশকে দরিদ্র কৃষকদের মূল দাবী ছিল জমি, কাজ, মজুরী,
খাদ্য, ঋণ ইত্যাদি। ১৯৫০ সালে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ হলেও গ্রামাঞ্চলে জোতদার ও মহাজনদের
নিপীড়নমূলক শোষণ বৃদ্ধি পায়। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি তখন সারা দেশে
কৃষক সমিতির সংগঠনের মাধ্যমে কৃষকদের সংগঠিত হতে সাহায্য করে। ষাটের দশকের শেষদিকে পূর্ব
পাকিস্তানে গণ আন্দোলন শুরু হলে বিভিন্ন স্থানে কৃষকগণ জোতদার, মহাজন, ইউনিয়ন কাউন্সিলের
চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণকে শোষক ও নির্যাতনকারী হিসেবে আক্রমণ করতে শুরু করেন। ষাটের দশকের
শেষ দিকে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিষ্ট পার্টি (মার্ক্সসবাদী-লেনিনবাদী) ভারতের নকশাল বাড়ী আন্দোলন
দ্বারা প্রভাবিত হয়। তখন বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায় কৃষকগণ জোতদার মহাজন, পুলিশের বিরুদ্ধে
সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী যখন গ্রামাঞ্চলে হত্যা, বাড়ীঘর
লুট, ফসল নষ্ট ও ধর্ষণ করতে শুরু করে তখন কৃষকগণ রুখে দাঁড়ান। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভাবে কৃষকসমাজ
অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর থেকে ধীরে ধীরে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলির সাংগঠনিক শক্তি
কমে যায়। গ্রামাঞ্চলে কৃষকদেরও সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু মজুরী, কাজ ও ঋণের দাবীতে
বিচ্ছিন্নভাবে কৃষকগণ আন্দোলন করেন। এর কয়েকটি কেস সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হলো।
কেস স্টাডি : ১
তেভাগা আন্দোলন
তেভাগা আন্দোলনের ব্যাপ্তিকাল চল্লিশের দশকের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত। বাংলার কৃষকগণ
বর্গাচাষের ফসলের দুই তৃতীয়াংশের ভাগ দাবী করে আন্দোলন গড়ে তোলেন। তেভাগা আন্দোলন প্রধানত
বর্গাচাষীদের আন্দোলন হলেও এতে দরিদ্র কৃষক ও ক্ষেতমজুরগণ অংশগ্রহণ করেন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর
কৃষকদের মধ্যে সাঁওতালদের এ আন্দোলনে ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। তেভাগা আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য
দিক হচ্ছে নারী বিশেষত কিষাণীদের শক্তিশালী ও জঙ্গী ভ‚মিকা। এই আন্দোলন ব্যাপকতা ও দীর্ঘস্থায়ীত্বের
জন্য কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণহয়ে উঠে। কৃষকদের দৃঢ়তা, ঐক্য, সংগ্রামী চেতনা ও
আত্বত্যাগ লক্ষণীয়।
যদিও ফসলের ন্যায়সঙ্গত বন্টনের দাবীতে আন্দোলন সংগঠিত হয়, তবু তেভাগা আন্দোলন কেবল
অর্থনৈতিক দাবী আদায়ের সংগ্রাম ছিল না। এটি ছিল একাধারে জমিদার, জোতদার, মহাজন, মুনাফা
খোর, চোরাকারবারীদের শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন। ঔপনিবেশিক শাসক গোষ্ঠী এই সকল
নিপীড়নকারীদের রক্ষক ও পৃষ্ঠপোষক হওয়ায় তেভাগা আন্দোলন বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধেও পরিচালিত
হয়। ভারতের স্বাধীনতার দাবীতে বুর্জোয়ারা তখন বৃটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিল। কিন্তু সেই
পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর
ক্ষুদ্র কৃষক, দরিদ্র কৃষক ও
ক্ষেতমজুরগণ দাবী আদায়ের
জন্য কৃষক সংগঠনে
অংশগ্রহণ করেন।
ল্লিশের দশকের শুরুতে
টত তেভাগা আন্দোলন
ল জমিদার, জোতদার
মহাজন, মুনাফাখোর,
রাকারবারীদের শোষণ
নির্যাতনের বিরুদ্ধে
আন্দোলন।
জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে সাধারণ কৃষক মজুরের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা ছিল না। মধ্যবিত্ত, ভদ্রলোক
বুর্জোয়াগণ বৃটিশ শাসনের অবসান চান। কিন্তু শোষণের পথ থেকে বিদেশীদের তাড়িয়ে কোন ধরনের
অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে তারা স্পষ্টভাবে কিছু বলেন নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে তেভাগা আন্দোলন
সাধারণ কৃষকদের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের আন্দোলন।
বৃটিশ শাসকগণ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে জমিদারগণকে জমির ব্যক্তিগত মালিকানার অধিকার প্রদান
করায় কৃষকের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। করের সকল চাপ কৃষকের উপর পড়ে অথচ বর্গাচাষ থেকে
তার আয় খুব সামান্য। ফসলের তিনভাগের দুইভাগ জোতদারকে দিতে হতো। শুধু তাই নয় জোতদারগণ
নানা ধরনের কর ধরতো। যেমন, জোতদারের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ‘নজরানা’, জোতদারের ধর্মীয়
উপাসনার জন্য ‘সেলামী’, জোতদারের বরকনদাজ বা লাঠিয়াল বাহিনীর জন্য বেতন, জোতদারের মেয়ের
বিয়ের জন্য উপহার ইত্যাদি। ফসলের হিসাব বুঝে নেয়ার সময় দুই তৃতীয়াংশ রাখার পর এইসব
খরচাপাতি বাবদ অতিরিক্ত ফসল রেখে দেয়া হতো। এতে বর্গাচাষী যা ধান পেতেন তাতে তিন চার
মাসের খোরাকী চলতো। জোতদারের কাছ থেকে ধার নিতে হতো বাধ্য হয়ে। এই ধারের সুদ হিসেবে
দ্বিগুণ ও তিনগুন ধান রেখে দেয়া হতো। কৃষকরা ধরে নেন যে লড়াই ছাড়া জোতদারদের হাত থেকে
বাঁচার কোন পথ নেই। তেভাগা আন্দোলন সেই লড়াই।
তেভাগা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরী হয় ১৯৩৭ সালে প্রজাস্বত্ব আইন পাশের পর। তখন থেকেই
জোতদার ও মহাজনের প্রতাপ আইনসিদ্ধ হয়ে যায়। কারণ জমিদারগণ কিছু জমি জোতদার ও মহাজনদের
পত্তন দেন। বর্ধিত ক্ষমতার ফলে জোতদার ও মহাজনদের অত্যাচার বৃদ্ধি পায়।১৯৩৯-৪০ সালে কৃষকগণ
বকেয়া খাজনা মওকুফ আন্দোলন শুরু করেন। তারপর শুরু হয় জমিদারের বিরুদ্ধে খাজনা মওকুফ
আন্দোলন। ১৯৪০-৪৩ সাল পর্যন্তহয় ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ। অসংখ্য কৃষক মারা যান মন্বন্তরে। কৃষকগণ মজুত
উদ্ধার ও লঙ্গরখানার জন্য আন্দালন করেন। হাজার হাজার নারী সরকারী অফিস ঘেরাও করেন খাদ্যের
দাবীতে। এই দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় কারণ বিপুল পরিমাণ খাদ্য মজুদ করা হয় জমিদার, জোতদার ও মহাজনের
গুদামে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের খাদ্য যোগানের জন্য বৃটিশ শাসকগণ এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
কৃষকদের বিদ্রোহ শুরু হয় উত্তরবঙ্গে এবং ক্রমশ তা সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। বৃটিশ শাসকবর্গ পুলিশের
সাহায্যে জোর পূর্বক খাদ্য দখল করে। কৃষকগণ সংগঠিত হন। তারা দলবেধে জমি থেকে ফসল কাটেন।
সে ফসল তারা জোতদারের গুদামে না নিয়ে কিষাণীর আঙ্গিনায় তোলেন। জোতদারের গুদাম থেকে খাদ্য
দখল করে নিয়ে আসেন। কৃষকের উপর চলে পুলিশী নির্যাতন। গ্রেপ্তার, মারপিট, বাড়ীঘর জ্বালানো,
নারীদের উপর যৌন নির্যাতন চলে। বহুস্থানে পুলিশের গুলিতে অসংখ্য কৃষক মৃত্যুবরণ করেন। নির্যাতনের
ফলে কৃষকের ঐক্য আরো সুদৃঢ় হয়।
তেভাগা আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ কেবল সভা ও মিছিল শে- াগানে সীমাবদ্ধ ছিল না। তারা
মিলিশিয়া বাহিনী গড়ে তোলেন। প্রতিটি গ্রামে নারীরা সংগঠিত হন। গড়ে তোলেন ঝাঁটা বাহিনী,
প্রতিরোধ বাহিনী, নারী রক্ষী বাহিনী ইত্যাদি। তারা গ্রাম পাহারা দেন যাতে পুলিশ এসে ধান না নিয়ে
যেতে পারে। পুলিশের সন্ধান জানা মাত্র শাঁখ বাজিয়ে গ্রামবাসীকে সজাগ করা মাত্র শত শত নারী ঘর
থেকে লাঠি, ঝাড়ূ, বটি, কুড়াল, কোদাল, বর্শা হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসেন। তারা একত্রে জঙ্গী আক্রমণ
চালান পুলিশের উপর। তেভাগার বিভিন্ন কাহিনী থেকে জানা যায় যে পুলিশ বাহিনীর প্রধান ভীতি ছিল
নারীদের আক্রমণ। নারীরা শিল দিয়ে পিটিয়ে পুলিশের বন্দুক ভেঙ্গে দেন এবং পুলিশকে নাজেহাল
করেন।
জোতদার, মহাজন ছিল নারীদের প্রত্যক্ষ শত্রæ। এই শ্রেণী শত্রæ নিধনের জন্য তাই তারা সর্বশক্তি নিয়োগ
করেন। নারীরা কৃষিকাজে কঠোর শ্রম দেন অথচ তারা ন্যায্য ফসল পান না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তারা তেভাগা আন্দোলনে
নারীদের অংশগ্রহণ ছিব্যাপক। নিপীড়নমূলকঅবস্থা অবসানের জন্যকিষানীগণ ঘরে ঘরে জপ্রতিরোধ গড়ে তুলেন
শোষণ ও বঞ্চনার শিকার। অন্যদিকে জোতদার মহাজন কর্তৃক শ্রেণী শোষণের শিকার। জোতদার
মহাজনরা মনে করতো বর্গাচাষীরা তাদের পূর্ণনিয়ন্ত্রণে আছে। এই সুযোগে তারা বর্গাচাষীর পরিবারের
নারীদের উপর যৌন নির্যাতন চালাতো। নারীদের যৌন শোষণকে জোতদার মহাজনরা ফসলের জোরপূর্বক
ভোগের ন্যায় ন্যায্য বলে ধরে নিয়েছিল। এই নিপীড়নমূলক অবস্থার অবসানের জন্য কিষানীগণ ঘরে ঘরে
জঙ্গী প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। গ্রামে গ্রামে অসংখ্য সাহসী নারী নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়। তাদের নাম লিখিত
ইতিহাসে আজো স্থান পায় নি।
তেভাগা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় রাজশাহীর নাচোলে কৃষক বিদ্রোহ হয় ১৯৪৯-১৯৫০ সালে। এই
বিদ্রোহের মুল শক্তি ছিলো সাঁওতাল কৃষকগণ। মুসলিম লীগ তখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন। পুলিশ ও আধা
মিলিটারীদের দ্বারা আন্দোলনকারীদের উপর নির্যাতন ও হত্যালীলা চালানো হয়। নাচোলের কৃষকগণ
বিদ্রোহ করেন। কারণ জোতদার মহাজনগণ ফসলের তিনভাগের দুই ভাগ দাবী ছাড়াও ‘আবওয়াব’ বা
বেগার দাবী করেন। কৃষকগণ না মানলে জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। নাচোলের বিদ্রোহে নেতৃত্ব দানের
জন্য ইলা মিত্রের নাম মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে।
উৎস : চবঃবৎ ঈঁংঃবৎং, ডড়সবহ রহ ঃযব ঞবনযধমধ টঢ়ৎরংরহম, ঘড়ুধ চৎধশধংয,
ঈধষপঁঃঃধ,১৯৮৭.
কেস স্টাডি : ২
খাস জমি আন্দোলন
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার খাস জমি ভ‚মিহীনদের মধ্যে বিতরণের সিদ্ধান্তগ্রহণ করে। কিন্তু ভ‚মিহীনদের
পক্ষে খাস জমি পাওয়া বড় ধরনের যুদ্ধের ন্যায়। প্রথমে আইনী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে হয় যে
জমিটি খাস জমি। কারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ ভ‚য়া দলিল তৈরী করে মালিকানা দাবী করেন। আইনী লড়াইয়ে
জেতার পরও ভ‚মিহীনরা জমি দখল করতে অপরাগ হন কারণ জোতদারগণ অবৈধভাবে জমি দখল করে রাখেন।
জোতদারদের মাস্তানবাহিনী জমি পাহারা দেয়। সরকারের পুলিশ এ ক্ষেত্রে ভ‚মিহীনদের পক্ষে কাজ করে না।
পাবনার বিল কুরুলিয়ার খাস জমিতে ১৯৫৭ সন থেকে ৩০০টি দরিদ্র জেলে পরিবার বাস করে আসছে। ১৯৬১
সনে ১৫০ জন নিজেদের ভ‚মিহীন দাবী করে জমিটিতে বর্গাচাষের জন্য আবেদন করেন এবং অনুমতি পান। কিন্তু
এদের অধিকাংশ ধনী ও মাঝারী কৃষক। ১৯৬২ সনে একটি স্থানীয় খাস ভ‚মি দল গঠিত হয় যাতে ৪৭২ জনের
মধ্যে ১৫ জন জোতদার ও ১৫ জন মাঝারী কৃষক আছে। এই দলটি নিজেদেরকে ভ‚মিহীন দল বলে দাবী করে
এবং চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য আবেদন করে। জেলা প্রশাসক তাদের কাছে দশ বৎসরের সেলামী দাবী করেন।
এই দলের নেতৃবর্গকে বর্গাচাষের অনুমতি প্রদান করা হয়। ১৯৭৩ সনে ‘খাস ভ‚মি দল’ এর পুনরায় আবেদনের
প্রেক্ষিতে ২৬১ জনকে সালামীর বিনিময়ে বন্দোবস্তের কাগজ প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে ১৯৯ জনকে
কাবুলিয়াত প্রদান করা হয়। ১৯৮৪ সালে ভ‚মি সংস্কার অর্ডিন্যান্সের পর তিনটি পক্ষ পুনরায় খাস জমির জন্য
আবেদন করে-জেলেদের গ্রæপ, কাবুলিয়াত দাবীদার গ্রæপ ও জোতদার গ্রæপ। ১৯৯৯ সনে ১৯৯ জনের কাবুলিয়াত
বাতিল করা হয়। ইতোমধ্যে কাবুলিয়াত প্রাপ্ত ১৯৯ জন খাস জমি বর্গাচাষের জন্য প্রদান করেন ভ‚মিহীনদের
কাছে। কাবুলিয়াত প্রাপ্তদের ৯০০ বিঘা জমি ভ‚মিহীন কৃষকগণ চাষ করেন। কিন্তু ফসল কাটা নিয়ে সমস্যা দেখা
দেয়।
১৯৯২ সালে ভ‚মিহীন কৃষকগণ ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করে। পার্টি বিল কুরুলিয়ার আশেপাশের
১৪টি গ্রামের ভ‚মিহীন ও জেলেদের নিয়ে আন্দোলন সংগঠিত করে। ভ‚মিহীন কৃষকগণ মিটিং-মিছিল করে
প্রতিবাদ জানান। জোতদারগণ ক্ষমতা প্রদর্শন করেন। পার্টির কৃষক সমিতি বিল কুরুলিয়ার ভ‚মি বন্টনের
সিদ্ধান্তনেয়। ভ‚মিহীন পরিবার প্রতি ১০-১২ কাঠা খাস জমি প্রদান করা হয়। ভ‚মিহীন পরিবারগুলি চাষাবাদ
করে। অন্য দিকে জোতদারগণ মাস্তান বাহিনী দিয়ে ফসল কেটে নিতে চান। ভ‚মিহীন কৃষকগণ আন্দোলন
বাংলাদেশে খাসজমি
নদের মধ্যে বিতরণের
সিদ্ধান্তগৃহীত হলেও
ীনদের পক্ষে খাস জমি
ওয়া বড় ধরনের যুদ্ধের
ন্যায়।
করে ফসল রক্ষা করেন। ১৯৯৪ সালে পুনরায় ভ‚মিহীনদেরকে আবেদন করার জন্য বলা হয়। তখন ১২০০
জন ভ‚মিহীন আবেদন করেন যাদের মধ্যে ৮০০ জন আন্দোলনকারী এবং ৪০০ জন জোতদার ও কাবুলিয়াতের
পক্ষে। এই দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি লেগেই থাকে। আন্দোলনকারীগণের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে
এবং অনেককে জেলে আটক রাখা হয়েছে। এই সব মামলা চালানোর জন্য ভ‚মিহীনদের দেড় লক্ষ টাকা ব্যয়
হয়ে গেছে। অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন।
সরকারের সিদ্ধান্তথাকার পরও ভ‚মিহীনদের পক্ষে খাস জমির দখল পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জোতদার ও
ধনী শ্রেণী খাস জমিতে ভোগ দখল করেন। সরকারী প্রশাসন তাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য ভ‚মিহীনদের
নানাভাবে হয়রানী করে। ভ‚মিহীনগণ সংগঠিত হতে পারলে এবং বামপন্থী রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা
পেলে আন্দোলন জোরদার হয়। তখন আইনী লড়াই চালানো সম্ভব হয় এবং খাস জমির দখল নেয়া সম্ভব
হয়। কিন্তু খাস জমিতে দখল বজায় রাখা ও ফসল কাটার জন্য সবসময় ভ‚মিহীনদের সাংগঠনিক শক্তি ও
ঐক্য বজায় রাখা জরুরী হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে চর ভ‚মি দখল নিযে জোতদার, ভ‚মিহীন
ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই আছে।
উৎস : করৎংঃবহ ডবংঃবৎমধধৎফ “গড়নরষরুধঃরড়হ ভড়ৎ কযধং খধহফ” রহ ডরষষরধস াধহ ঝপযবহফধষ
(বফ) ইধহমষধফবংয রহ ঃযব ১৯৯০ং, টচখ, উযধশধ,১৯৯৭.
সারাংশ
বাংলাদেশে বিত্তশালী ও দরিদ্র শ্রেণীর কৃষকের মধ্যে শ্রেণীগত ব্যবধান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বহারা
ক্ষেতমজুরগণ প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামে ধনী কৃষকগণের সঙ্গে মজুরী নিয়ে বিরোধে লিপ্ত হন। ঋণ,
ভাগচাষ, কৃষি উপকরণ ইত্যাদি নিয়ে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের সঙ্গেও ধনী কৃষকগণের স্বার্থের সংঘাত
ঘটে। কিন্তু এ ধরনের বিরোধকে সচেতন শ্রেণী বিরোধ বলা যায় না। দরিদ্র কৃষক কিংবা ক্ষেতমজুরগণ
যখন সংগঠিত ভাবে একত্রে ধনী শ্রেণীর মালিকদের বিরুদ্ধে স্বার্থ আদায়ের সংগ্রামে লিপ্ত হন তখন তাকে
সচেতন শ্রেণী সংগ্রাম বলা যায়। বাংলা অঞ্চলের কৃষকগণ অতীত কাল থেকেই অত্যচার নিপীড়নের
বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ভাবে সংগ্রাম করেছেন। বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে কৃষকগণ যে তেভাগা আন্দোলন
গড়ে তোলেন তা বাংলা অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এই লড়াইয়ে কৃষকের পক্ষে কিছু দাবী
আদায় করাও সম্ভব হয়। পাকিস্তানী শাসনামল ও বাংলাদেশেও কৃষকগণ বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সময় দাবী
আদায়ের আন্দোলন করেছেন। তবে দরিদ্র কৃষকগণ এখনও একটি সংগঠিত শক্তিতে পরিণত হন নি।
পাকিস্তানী শাসনামলে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলি কৃষকদের সংগঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
এক্ষেত্রে মওলানা ভাসানীর নাম উল্লেখযোগ্য।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন -
১। তেভাগা আন্দোলনে কোন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কৃষকদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল?
ক. চাকমা
খ. মনিপুরী
গ. সাঁওতাল
ঘ. রাখাইন
২। ১৯৪০ - ৪৩ সালে বড় ধরনের দুর্ভিক্ষের কারণ কি?
ক. তখন ফসল ভালো হয়নি
খ. বন্যায় ফসল নষ্ট হয়
গ. বৃটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকারীগণ ফসল আটক করেন
ঘ. বৃটিশ শাসকগণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের জন্য ফসল গুদামজাত করেন
৩। নাচোলের কৃষক বিদ্রোহে কে নেতৃত্ব দান করেন?
ক. প্রীতিলতা
খ. কল্পনা দত্ত
গ. কল্পনা চাকমা
ঘ. ইলা মিত্র
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। খাস জমি কি? খাস জমি দখলে ভ‚মিহীন কৃষকদের কি ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। বাংলাদেশে কৃষক সমাজে শ্রেণী সচেতনতার অবস্থা বর্ণনা করুন।
২। তেভাগা আন্দোলনের স্বরূপ ব্যাখ্যা করুন। তেভাগা আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ কেমন ছিল?
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত