বর্ণ প্রথার ধারণা
উপমহাদেশে সামাজিক বিভাজন সৃষ্টির একটি উপাদান হচ্ছে বর্ণ। বর্ণের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে অসমতা
সৃষ্টি হয়। আর অসমতার ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় সামাজিক স্তর বিন্যাস। বর্ণ ভিত্তিক সামাজিক বিভাজনের
বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ফলে ব্যক্তির জন্মের পরিচয় দ্বারা কোন দল বা গোষ্ঠীর সদস্যপদ নির্ধারিত হয়ে যায়।
জন্মসূত্রে নির্ধারিত দলের মধ্যে খাওয়া দাওয়া, মেলামেশা ও সম্পর্কস্থাপন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। বৈবাহিক
সম্পর্কস্থাপন একই বর্ণের মধ্যে সংঘটিত হয়। এমন কি মানুষের পেশাও বর্ণ পরিচয় দ্বারা নির্ধারিত হয়।
তার মানে একটি নির্দিষ্ট বর্ণের মানুষজন একটি নির্দিষ্ট পেশাভুক্ত হয়ে থাকেন। ধর্মীয় অনুশাসন, বিভক্তি
করণের মতাদর্শ ও লোকাচার দ্বারা এই বর্ণভেদকে কার্যকর করা হয়। বর্ণগুলির মধ্যে আধিপত্যবাদিতা ও
অধস্তনতা ক্রিয়াশীল থাকে। এর আলোকে উচ্চ-নীচ চিহ্নিত করে বর্ণগুলিকে সামাজিক কাঠামোতে
স্তরীকৃত করা হয়। এভাবে জন্মগত বর্ণ পরিচয় স্থায়ী ভাবে মানুষকে বিভক্ত করে ফেলে। বর্ণ ভিত্তিক সমাজ
টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থাই বর্ণ প্রথা। বর্ণ প্রথা ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত। এটি স্থায়ী ভেদাভেদ যা বদলানো
যায় না। হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বর্ণ প্রথা চালুআছে। প্রধান বর্ণ চারটি-ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র। এই
চার বর্ণের স্তরীকরণের একেবারে নীচে আরেকটি বর্ণ আছে। তাদেরকে ‘অচ্ছুত’ বা ‘অস্পৃশ্য’ বলে গণ্য
করা হয়।
বর্ণের উৎপত্তি
প্রাচীনকাল থেকে উপমহাদেশে জন্মগত বর্ণভেদ দ্বারা সমাজ বিভক্ত ছিল। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য বর্ণের
উল্লেখ পাওয়া যায় প্রাচীন ইতিহাসে। এর বাইরে অধিকাংশ মানুষ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন যারা
কায়িক শ্রমে নিযুক্ত হতেন। তখন শ্রম বিভাজন স্পষ্ট ছিল না। কায়িক শ্রমকে তখন প্রথাগতভাবে
নি¤œমানের ভাবা হতো না। বৈদিক যুগের শেষভাগে বর্ণ প্রথা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। সে যুগ
আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ থেকে ৬০০ সাল পর্যন্তবিস্তৃত ছিল বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন। সে যুগে
দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন বর্ণ প্রথা ভিত্তিক সমাজ কাঠামোকে পুনর্গঠিত করে। প্রথমত: লাঙ্গল দিয়ে চাষাবাদ
শুরু হওয়ায় কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে। জমিতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। পশু উৎপাদনের
মাধ্যমেও উদ্বৃত্ত সঞ্চিত হতে থাকে। সমাজে উদ্বৃত্ত সম্পদের মালিকগণের আধিপত্য সুদৃঢ় হয়। তখন
থেকেই এই সমৃদ্ধ শ্রেণীটির কায়িক শ্রমের প্রতি অবজ্ঞা দেখা দেয়। সম্পদশালীগণ কায়িক শ্রম থেকে
নিজেদের বিযুক্ত করেন। এ বিযুক্তিকে উচ্চতর মর্যাদার প্রতীক হিসেবে গণ্য করেন। কিন্তু সমস্যা দেখা
দেয় এ কারণে যে, জমিতে উৎপাদন এবং শিল্প ক্ষেত্রে উৎপাদনে প্রচুর কায়িক শ্রমের প্রয়োজন দেখা
দেয়। কায়িক শ্রমের যোগানকে অব্যাহত রাখার জন্য উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত মানুষজনকে চতুর্থ
বর্ণ অর্থাৎ শুদ্র বর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
পাঠ - ২
বর্ণভিত্তিক সামাজিক
বিভাজনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছেএর ফলে ব্যক্তির জন্মের
পরিচয় দ্বারা গোষ্ঠীর
সদস্যপদ নির্ধারিত হয়ে
যায়।
দ্বিতীয়ত: আর্যদের আধিপত্যের কারণে বৈদিকযুগে বর্ণ প্রথা পুনর্গঠিত হয়। আর্যরা গাত্রবর্ণ বিষয়ে
অত্যধিক সচেতন ছিলেন। শ্বেতাঙ্গ আর্য ও কৃষ্ণাঙ্গ অনার্যদের মধ্যে পার্থক্য করা হয়। তাছাড়া বিজয়ী
হিসেবে আর্যরা পরাজিত অনার্যগণকে নি¤œমানের বলে গণ্য করেন। চার বর্ণের শ্রম বিভাজনের সঙ্গে
আর্যদের বর্ণ বিদ্বেষ যুক্ত হয়ে বর্ণ প্রথা শক্তিশালী রূপ লাভ করে। খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ থেকে ৩০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত
ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই চলে। শুদ্র ব্যতীত অন্যান্য বর্ণের মধ্যে এবং আর্য-অনার্যের
মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কের ফলে অনেক মিশ্র বর্ণের আবির্ভাব ঘটে। খ্রিষ্টিয় চতুর্থ শতাব্দী থেকে বর্ণাশ্রম
ব্যবস্থার ভিত্তিতে বিন্যস্তসমাজ কাঠামোতে বর্ণ বিভাজন কঠোরভাবে পালিত হতে থাকে। কালক্রমে কৃষি
ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং শহর নগর গড়ে উঠে। বর্ণশ্রম ব্যবস্থায় সংখ্যালঘিষ্ঠ সুবিধাভোগী উচ্চ
বর্ণের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্য দিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের নি¤œবর্ণের ও দারিদ্রের
অবস্থান পাকাপোক্ত হয়ে যায়।
বর্ণভিত্তিক স্তর বিন্যাসের মতাদর্শিক ভিত্তি
বর্ণ ভিত্তিক অসম বিভাজনকে বৈধতা দান করে ধর্মীয় বিশ্বাস। ঋগে¦দের কাহিনীতে জানা যায় যে মানুষ
সৃষ্টির কালে আদিপুরুষের খন্ডীকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়। আদি পুরুষের মুখ থেকে
উৎপন্ন হয় ব্রাহ্মণ, দুই বাহু থেকে ক্ষত্রিয়, দুই উরু থেকে বৈশ্য এবং দুই পা থেকে শুদ্র। সামাজিক
অবস্থান নির্দিষ্ট করা হয় জন্মস্থানের সঙ্গে মিল রেখে। শরীরের উপরের অংশ থেকে উৎপন্ন ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়
পান সমাজের উচ্চস্থান। শরীরের নীচের অংশ থেকে সৃষ্ট বৈশ্য ও শুদ্র পান সমাজের নীচু স্থান। এভাবে
ধর্মীয় অনুশাসন অনুসারে হিন্দু সমাজে ক্রমোচ্চ সামাজিক স্তর বিন্যাস গড়ে উঠে। ক্রমোচ্চ চারটি বর্ণের
স্তর বিন্যাস আরো পাকাপোক্ত হয় শুচি, অশুচি, পবিত্র-অপবিত্রতার ধারণার ফলে। এর আলোকে চারটি
বর্ণের গুণাগুণও নির্দিষ্ট হয়ে যায়। শরীরের পবিত্রতম অংশ মুখ থেকে সৃষ্ট ব্রাহ্মণ চিহ্নিত হয় সমাজের
পবিত্রতম অংশ হিসেবে। আর বলা হয় ব্রাহ্মণের গুণ হচ্ছে শুচি, সত্য, জ্ঞান ও তপস্যা। হাত থেকে
উৎপন্ন ক্ষত্রিয় ব্রাহ্মণের তুলনায় কম পবিত্র। ক্ষত্রিয়দের গুন হচ্ছে রজ অর্থাৎ শৌর্য বীর্য। উরু থেকে
উৎপন্ন বৈশ্যরা পবিত্র নয়। বৈশ্যদের গুণ হচ্ছে রজ ও তম অর্থাৎ অন্ধকার গুণের সমন্বয়। পা থেকে সৃষ্ট
শুদ্র অশুচি এবং অপবিত্র। তাদের গুণ হচ্ছে তম অর্থাৎ কেবল অন্ধকার। পঞ্চম বর্ণ চরম অপবিত্র ও
অস্পৃশ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়।
জাতিবর্ণ ও সামাজিক বিভাজন
শুচি-অশুচির ধারণা সামাজিকভাবে অনুশীলনের বিষয়ে পরিণত হয়। বিভিন্ন বর্ণের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা
নানাবিধ বিধি নিষেধ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ধারণা করা হয় যে স্থায়ী অশুচি শোধন করা যাবে না কারণ তা
জন্মসূত্রে প্রাপ্ত। অস্থায়ী অশুচি অবস্থা দৈনন্দিন কাজ কর্মের ফলে হয় কিন্তু তা শোধনযোগ্য। ধারণা করা
হয় যে প্রধান অশুচি হচ্ছে মৃত্যু এবং শরীর থেকে নির্গত বস্তু যেমন- রক্ত, প্রস্রাব, ধাতু, লালা, নখ ও
চুলের অংশ। এ কারণে সমাজের বর্জ্য ও ত্যক্ত পদার্থ দূর করা, মৃত দেহের সৎকার, রাস্তাঘাট পরিষ্কার
করা, মলমূত্র পরিষ্কার করা ইত্যাদি অপবিত্র কাজ করার জন্য অচ্ছুুত গোষ্ঠীর উপর দায়িত্ব অর্পিত হয়।
যারা এসব নোংরা কাজ করেন তারা সমাজে ঘৃণ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যান।
দৈনন্দিন জীবন যাপনে শুচি -অশুচির ধারণা বিস্তৃত হয়। খাবার তৈরী সংক্রান্তকাজে অশুচি আক্রান্তহতে
পারে সে কারণে উচ্চ বর্ণের ব্যক্তিগণ তাদের রান্নাঘর বিভিন্ন ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা দ্বারা পবিত্র রাখার
উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ভিন্ন বর্ণ ও ধর্মের ব্যক্তিগণকে রান্নাঘরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। পানি পান করার
সময় অশুচি হতে পারে বলে পানির পাত্র ও পানরত ব্যক্তিকে সকলের স্পর্শের বাইরে রাখার নিয়ম করা
হয়। এসকল কারণে উঁচু বর্ণের মানুষজন নীচু বর্ণের মানুষের সঙ্গে একত্রে বসে খান না। যৌন সম্পর্কের
মাধ্যমে অশুচি হতে পারে বলে বিয়ের ব্যাপারে কঠোর নিয়ম পালিত হয়। এক বর্ণের মানুষ অন্য বর্ণের
সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কস্থাপন করা নিষিদ্ধ। অর্থাৎ বিয়ে হতে হবে একই বর্ণের মধ্যে। দৈহিক সংস্পর্শের
মাধ্যমে অশুচি হতে পারে বলে উঁচু বর্ণের মানুষ নীচু বর্ণের মানুষের সঙ্গে দৈহিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলেন।
বর্ণ ভিত্তিক অসম
বিভাজনকে বৈধতা দান
করে ধর্মীয় বিশ্বাস।
শুচি-অশুচির ধারণা দ্বারা
বিভিন্ন বর্ণের মানুষের
সংগে মেলা-মেশা ও
বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত
হয়।
বর্ণপ্রথা ভিত্তিক সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয় পুরুষানুক্রম জন্মগত পেশা। তার মানে বর্ণ ভিত্তিক
বিভাজনের সঙ্গে যুক্ত পেশাভিত্তিক বিভাজন। সাধারণভাবে ব্রাহ্মণ হচ্ছেন জ্ঞানী, ক্ষত্রিয় যোদ্ধা, বৈশ্য
ব্যবসায়ী ও শুদ্র কায়িক শ্রমিক। তার অর্থ দাঁড়ায় পেশাভিত্তিক বিভাজনও জন্মগত। পুরুষানুক্রমে এই
বিভাজন চলতে থাকবে। উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা হচ্ছেন জমি ও শস্যের মালিক। শুদ্ররা হচ্ছে ভ‚মি শ্রমিক।
শাস্ত্রঅনুযায়ী শুদ্রের কোন ধনসম্পদ নিজের মালিকানায় রাখার নিয়ম নেই। যদি তাদের হাতে কোন
সম্পদ থাকে তাহলে ব্রাহ্মণগণ ধর্মচর্চার প্রয়োজনে সে সম্পদ নিয়ে যেতে পারেন। বৈশ্যগণ যদিও ক্ষুদ্রচাষী
কিন্তকালক্রমে তারাও ভ‚মি শ্রমিকে পরিণত হন। এভাবে বর্ণগত ও পেশাগত বিভাজন শ্রেণী বিভাজনের
রূপ লাভ করে। উচ্চ বর্ণের ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় ধনী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীভুক্ত এবং বৈশ্য ও শুদ্রগণ দরিদ্র
শ্রেণীভুক্ত। বিশেষত শাস্ত্রীয় বিধানের নামে শুদ্ররা স্থায়ীভাবে দরিদ্র শ্রেণীভুক্ত হয়ে পড়েন।
বর্ণ ভিত্তিক বিভাজন শ্রেণীর মধ্যে অন্তপ্রবিষ্ট হলেও নি¤œশ্রেণীর শুদ্রদের পক্ষে কখনো উচ্চ মর্যাদাশীল হওয়া
সম্ভব হয় না। শ্রেণীগত বাধা অতিক্রম করে যদি কখনো কোন শুদ্র ধনস্পদের মালিক হন তবুও তার পক্ষে
বর্ণের বাধা অতিক্রম করা সম্ভব হয় না। কারণ বর্ণের বিভাজন জন্মগত। উচ্চবর্ণের মানুষ সবসময় নি¤œ
বর্ণের মানুষকে হীন দৃষ্টিতে দেখেন এবং মর্যাদা দেন না। তার মানে দারিদ্র থেকে মুক্তি পেলেও সামাজিক
হীন অবস্থা থেকে নি¤œবর্ণের মানুষের মুক্তির উপায় নেই। অন্য দিকে উচ্চবর্ণের কেউ যেমন কোন ব্রাহ্মণ
দরিদ্র শ্রেণীভুক্ত হলেও দরিদ্র শুদ্রের থেকে তার সামাজিক অবস্থান উপরে। ফলে একই বর্ণের মধ্যে উচ্চনীচ শ্রেণী এবং একই শ্রেণীর মধ্যে উচ্চ-নীচ বর্ণের বিভিন্ন দলের আবির্ভাব ঘটে। এইসব দলগুলি আবার
নিজেদের মধ্যে মর্যাদার ক্ষেত্রে পার্থক্য করে থাকে।
শুদ্র বর্ণের মধ্যে বিভিন্ন পেশার ভিত্তিতে উপদল সৃষ্টি হয়। কালক্রমে এ ধরনের বহু উপদলের (জাতি)
উৎপত্তি ঘটে। যেমন কারিগর পেশার কয়েকটি জাতি হচ্ছে তাঁতি, কামার, ছুতোর, চামার, কাঁসারি,
শাঁখারি ইত্যাদি। ব্যবসা পেশার মধ্যে আছে গন্ধবণিক, তাম্বুলি বণিক, স্বর্ণ বণিক ইত্যাদি। সেবা পেশায়
আছে নাপিত, ধোপা ইত্যাদি। এইসব জাতি আবার অন্তঃ বিবাহ রীতি পালন করে জাতি পরিচয় সংহত
করে থাকে।
বাংলা অঞ্চলে বর্ণপ্রথা
বাংলা অঞ্চলে জাতিবর্ণ প্রথা ভিত্তিক সামাজিক স্তর বিন্যাস প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে তুলনামূলকভাবে
অনেক দেরীতে। খ্রিষ্টিয় পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্তব্রাহ্মণ্যবাদের আধিপত্য কালে বাংলায় আর্যদের
জাতিবর্ণ ব্যবস্থা বিকাশ লাভ করে। বাংলার সমাজ সংগঠন আর্য সমাজ থেকে স্বতন্ত্রথাকায় বাংলাকে
“পান্ডব বর্জিত দেশ” হিসেবে আখ্যা দেয়া হয় (রঙ্গলাল সেন ১৯৯৭)১ । বলা যায় বাংলা অঞ্চলে জাতিবর্ণ
ভিত্তিক বিভাজন প্রতিষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। হিন্দু ধর্মাবলম্বী গুপ্তদের শাসনামলে শাসকগণ
ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ব্রাহ্মণদের আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসেন। শাসকগণ ব্রাহ্মণদের ভ‚মিদান
করেন এবং সরকারী চাকুরীতে অধিষ্ঠিত করেন। বাংলা অঞ্চলে সমাজের স্তর বিন্যাস প্রধানত ব্রাহ্মণ ও
শুদ্রদের নিয়ে গঠিত হয়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় প্রধানত ব্যবসায়ী শ্রেণীর আধিপত্য থাকলেও ক্রমে ক্রমে
ব্রাহ্মণগণ ক্ষমতা দখল করেন। ধীরে ধীরে জাতিবর্ণ ভিত্তিক সমাজ কাঠামোও সুদৃঢ় হয়ে উঠে।
১
সেন রঙ্গলাল, বাংলাদেশের সামাজিক স্তর বিন্যাস, বাংলা একাডেমী , ঢাকা, ১৯৯৭।
শ্রেণীগত অবস্থান পরিবর্তন
করেও বর্ণগত বাধা
অতিক্রম করা সম্ভব হয় না।
বাংলা অঞ্চলে জাতি
বর্ণভিত্তিক বিভাজন
প্রতিষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রীয়
পৃষ্ঠপোষকতায়।
সারাংশ
বর্ণভিত্তিক সামাজিক বিভাজন ব্যক্তির জন্মের পরিচয় দ্বারা স্থির হয়ে থাকে। ফলে বর্ণভিত্তিক বিভাজন
স্থায়ীরূপ লাভ করে। বর্ণভিত্তিক বিভাজনকে বৈধতা দান করে ধর্মীয় বিশ্বাস। শুচি-অশুচি, পবিত্রঅপবিত্রতার ধারণার ফলে বর্ণভিত্তিক সামাজিক বিভাজন পাকাপোক্ত রূপ লাভ করে। অর্থনৈতিক সাফল্য
অর্জন করার পরও নি¤œবর্ণের মানুষের পক্ষে উচ্চ মর্যাদাশীল হওয়া সম্ভব হয় না। ফলে নি¤œবর্ণের মানুষ
স্থায়ীভাবে দরিদ্র শ্রেণীভুক্ত হয়ে পড়েন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন -
১। নি¤œশ্রেণীর শুদ্রদের পক্ষে কিভাবে উচ্চ বর্ণে উত্তরণ সম্ভব?
ক. অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন করে
খ. উচ্চ মর্যাদার পেশা গ্রহণ করে
গ. উচ্চ শিক্ষা লাভ করে
ঘ. কখনোই উচ্চ বর্ণে উত্তরণ সম্ভব নয়
২। নি¤েœর বর্ণসমূহের মধ্যে কারা কায়িক শ্রম করেন?
ক. ব্রাহ্মণ
খ. ক্ষত্রিয়
গ. বৈশ্য
ঘ. শুদ্র
৩। বর্ণ পরিচয় স্থায়ীভাবে মানুষকে বিভক্ত করে কিভাবে?
ক. বর্ণ পরিচয়ের সঙ্গে পেশাগত বিভাজন যুক্ত হওয়ায়
খ. বর্ণ পরিচয় জন্মগত হওয়ার কারণে
গ. বর্ণ পরিচয়ের সঙ্গে শুচি-অশুচির ধারণা যুক্ত হওয়ায়
ঘ. বর্ণ পরিচয়ের সঙ্গে শ্রেণী পরিচয় যুক্ত হওয়ায়
৪। বাংলাকে “পান্ডব বর্জিত দেশ” বলা হয় কেন?
ক. বাংলা অঞ্চলে চারটি বর্ণ না থাকায়
খ. বাংলা অঞ্চলে সমাজ সংগঠন আর্য সমাজ থেকে স্বতন্ত্রথাকায়
গ. বাংলা অঞ্চলে বর্ণ প্রথা না থাকায়
ঘ. বাংলা অঞ্চলে ব্রাহ্মণদেরকে ভিন্ন অঞ্চল থেকে আনা হয় বলে
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। বর্ণ ভিত্তিক সামাজিক বিভাজনের বৈশিষ্ট্য কি?
২। বর্ণ প্রথা ভিত্তিক সামাজিক স্তর বিন্যাসের মতাদর্শিক ভিত্তি কি?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। উপমহাদেশে জাতিবর্ণ বিভাজনের উৎপত্তি কিভাবে ঘটে? বাংলা অঞ্চলে কিভাবে জাতিবর্ণের
বিস্তৃতি ঘটে?
২। জাতিবর্ণ কর্তৃক সৃষ্ট সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভাজনের বর্ণনা দিন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত