বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্”ার পটভূমি বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চা ইউনিট
সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক প্রাচীন জনপদ হচ্ছে বাংলাদেশ। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নানা বাক পেরিয়ে বাংলাদেশ
আজ এক অপার সম্ভাবনার দেশ। আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দরিদ্র দেশটি আজ উন্নয়নশীল
দেশের কাতারে। সনাতন কৃষি অর্থনীতির পরিবর্তে নগরকেন্দ্রিক শিল্প ও সেবাভিত্তিক অর্থনীতি বিকশিত হওয়ায় এদেশের
সমাজ কাঠামো এবং সামাজিক সম্পর্ক ভীষণভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল সমাজ
সম্পর্কে অধ্যয়নের অপরিহার্য শাস্ত্র হচ্ছে সমাজবিজ্ঞান। ভারতীয় দার্শনিক কৌটিল্য (খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০-২৭৫ অব্দ)
বিক্ষিপ্তভাবে সমাজবিজ্ঞানের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি তাঁর ‘অর্থশাস্ত্র’ গ্রন্থে তৎকালীন ভারত বর্ষের আইন,
রাষ্ট্র, রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতি, কৃষি, শিল্প, সমাজনীতি ও ধর্মীয় বিধিনিষেধ সম্পর্কে তাত্তি¡ক ও ব্যবহারিক ধ্যান-ধারণা
সম্পর্কে আলোচনা করেন। যুগে যুগে অনেক পর্যটক, পরিব্রাজক, যোদ্ধা, ধর্ম প্রচারক, দার্শনিক, ইতিহাসবেত্তা এই
বঙ্গভূমিতে এসেছেন। যেমন- হিউয়েন সাং, আবুল ফজল, আলবেরুনি, ইবনে বতুতা প্রমুখ এর গ্রন্থে তৎকালীন বাংলার
অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও জীবনধারার বিশেষ করে উৎপাদন ব্যবস্থার বর্ণনা পাওয়া
যায়। এদেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি, কৃষি, শিল্প, সমাজ কাঠামো, পরিবার, বিবাহ, জ্ঞাতি সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় নিয়ে
তাঁরা আলোচনা ও বিশ্লেষণ করেছেন। সামাজিক জীব হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের বিভিন্ন অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানএবং
ব্যবহারিক বিষয়াদি নিয়ে সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে বিধায় বাংলাদেশে এর পাঠের গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে জীবন-যাপন করে, তাদের আচার-আচরণ, রীতি-নীতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করার প্রয়োজন রয়েছে।
সামাজিক উন্নয়ন, সমাজ সংস্কারমূলক কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয়ে জানার জন্য সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে যে মনীষী কাজ করেছেন তিনি অধ্যাপক নাজমুল করিম। তাঁর বিভিন্ন লেখা বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। মুখ্য শব্দ বাংলাদেশ, সমাজবিজ্ঞান, অধ্যয়ন, চর্চা, পটভূমি।
মানব সমাজকে বুঝতে হলে এবং সমাজ কাঠামো অনুধাবন করতে হলে সমাজবিজ্ঞান চর্চার বিকল্প নেই। সমাজ
কাঠামো, সামাজিক পরিবর্তনের গতিধারা, সামাজিক পরিবর্তনের কারণ, সামাজিক সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়াদি,
পরিবার, রাষ্ট্র, সম্পত্তি, সামাজিক শ্রেণি, ধর্ম-বর্ণ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা এবং বিশ্লেষণে সমাজবিজ্ঞান চর্চার
গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থা এবং এর গতি প্রকৃতি সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়নের পটভূমি তৈরি
করেছে। বাংলাদেশের মানুষের সংস্কৃতি, সংস্কৃতির পরিবর্তন, সামাজিক পরিবর্তন, রাজনীতির দর্শন, ঐতিহাসিক দর্শন
ইত্যাদি বিষয় সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি তৈরি করেছে।
খ্রিস্টের জšে§র পূর্ব থেকেই সমাজবিজ্ঞান চর্চার প্রমাণ ভারতীয় উপমহাদেশে রয়েছে। ভারতীয় দার্শনিক কৌটিল্য
(খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০-২৭৫ অব্দ) গভীরভাবে সমাজ কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি তাঁর
‘অর্থশাস্ত্র’ গ্রন্থে তৎকালীন ভারতের আইন, রাষ্ট্র, রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতি, কৃষি, শিল্প, সমাজনীতি ও ধর্মীয় বিধিনিষেধ
সম্পর্কে তাত্তি¡ক ও ব্যবহারিক বিষয়সমূহ আলোচনা করেন। গ্রিক পÐিত প্লেটো (খ্রিস্টপূর্ব ৪২৭-৩৪৭ অব্দ), এরিস্টটল
(খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২ অব্দ) প্রমুখের সমাজচিন্তা সমাজবিজ্ঞান উদ্ভবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। মধ্যযুগের বিখ্যাত
মুসলিম চিন্তাবিদ ইবনে খালদুন সমাজচিন্তার বিকাশের ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন। অনেকের মতে তিনিই
সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃত জনক। কিন্তু ফরাসি সমাজচিন্তাবিদ অগাস্ট কোঁতকে সমাজবিজ্ঞানের জনক হিসেবে অভিহিত করা
হয়। যেহেতু ১৮৩৯ সালে তিনিই প্রথম সমাজবিজ্ঞান শব্দটি ব্যবহার করেন।
কার্ল মার্কস উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তনের আলোকে সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনের বিষয়ে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস পেয়েছেন।
তিনি তাঁর আলোচনায় নির্দিষ্ট একটি উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত একটি সমাজব্যবস্থাকে চিহ্নিত করেছেন। সমাজ
বিকাশের ধারায় তাঁর উৎপাদন ব্যবস্থা বিষয়ক আলোচ্য স্তরগুলো হলো, আদিম সাম্যবাদী উৎপাদন পদ্ধতি Z (Primitive Communal Mode of Production); দাস উৎপাদন পদ্ধতি Z (The Slave Mode of Production); সামন্তবাদী উৎপাদন
পদ্ধতি ((The Feudal Mode of Production);; পুঁজিবাদী উৎপাদন পদ্ধতি (ঞযব ঈধঢ়রঃধষরংঃ গড়ফব ড়ভ চৎড়ফঁপঃরড়হ),
সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতি ((The Capitalist Mode of Production এবং সাম্যবাদী উৎপাদন পদ্ধতি
(The Socialistic Mode of Production) কার্ল মার্কসের উৎপাদন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হলো এশিয় (Asian Mode of Production)|
উৎপাদন ব্যবস্থা (Communist Mode of Production)|। এশিয় উৎপাদন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য অন্যান্য উৎপাদন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
থেকে আলাদা। এটি মূলত এমন একটি উৎপাদন ব্যবস্থা যা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই লক্ষ্য করা গিয়েছিল। এ উৎপাদন
ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য ছিলো ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামীণ সম্প্রদায় বাSelf Sufficient Village Community.
যুগে যুগে অনেক পর্যটক, পরিব্রাজক, যোদ্ধা, ধর্ম প্রচারক এই বঙ্গভূমিতে এসেছেন। যেমন- হিউয়েন সাং, আবুল ফজল,
আলবেরুনি, ইবনে বতুতা প্রমুখ। তাঁদের লেখায় তৎকালীন বাংলার বিভিন্ন বিষয়ের বর্ণনা পাওয়া যায়। এদেশের
অর্থনীতি, সমাজনীতি, কৃষি, শিল্প, সমাজের বৈচিত্র্য, সমাজ কাঠামো, পরিবার, বিবাহ, জ্ঞাতি সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় নিয়ে
তাঁরা বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁদের আলোচনায় সামাজিক প্রেক্ষাপট, সমাজকাঠামো, সামাজিক স্তরবিন্যাস, শ্রেণি কাঠামো
ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিশদ বিবরণ পাওয়া যায় নি, যা সমাজবিজ্ঞান চর্চায় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
ইংরেজদের হাতে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের পর ব্রিটিশ কোম্পানির শাসন ও ইংরেজদের ঔপনিবেশিক
শাসনকালে বাংলার অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, সমাজকাঠামো ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এই
পরিবর্তনের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চায় নতুন ধ্যান ধারণার তৈরি হয়। ১৯২১ সালে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫৬ সালে সমাজবিজ্ঞান একটি আলাদা বিষয় হিসেবে পঠন-পাঠন শুরু হয়। ১৯৪৭ এর
দেশভাগ, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ
সমাজবিজ্ঞান চর্চার আলাদা পটভূমি তৈরি করে।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি খুব বেশি দিন আগে তৈরি হয়নি।
বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তন এদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি তৈরি করেছে।
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশের প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থা এবং এর গতি প্রকৃতি সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি তৈরি করেছে। বাংলাদেশের
মানুষের সংস্কৃতি, সংস্কৃতির পরিবর্তন, সামাজিক পরিবর্তন, রাজনীতির দর্শন, ঐতিহাসিক দর্শন ইত্যাদি বিষয়
সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি তৈরি করেছে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫৬ সালে একটি আলাদা
বিষয় হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের পঠন-পাঠন শুরু হয়। ১৯৪৭ এর দেশ ভাগ, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১
সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ সমাজবিজ্ঞান চর্চার আলাদা পটভূমি তৈরি করে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভ‚মি তৈরির কারণ কোনটি?
(র) অর্থনৈতিক পরিবর্তন
(রর) সামাজিক পরিবর্তন
(ররর) রাজনৈতিক পরিবর্তন
(রা) কোনটিই নয়।
কোনটি সঠিক?
(ক) র (খ) র ও রর
(গ) র, রর ও ররর (ঘ) রা
২। কার্ল মার্কসের এশিয় উৎপাদন প্রণালী কোথায় বিদ্যমান ছিল
(ক) সমগ্র এশিয়ায় (খ) ভারতবর্ষে
(গ) বাংলাদেশে (ঘ) ইউরোপে

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]