মুখ্য শব্দ সংস্কৃতি, জীবনপ্রণালী, বস্তুগত সংস্কৃতি এবং অবস্তুগত সংস্কৃতি।
সংস্কৃতি সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়। প্রত্যেক সমাজের আলাদা ও নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে।
সাধারণ কথায়, সংস্কৃতি হলো এমন জীবন ধারা যা মানুষ তার জীবন নির্বাহ করতে গিয়ে নানা প্রয়োজনে
নিজস্ব সাংস্তৃতিক উপাদান ছাড়াও বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহ সংযোজনের মাধ্যমে নিজেদের সংস্কৃতির উৎকর্ষ
সাধন করে। বিভিন্ন পথ উদ্ভাবন করতে শিখে থাকে।
সংস্কৃতির সংজ্ঞা: ইংরেজিCulture শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হলো ‘সংস্কৃতি’ যা ল্যাটিন শব্দ 'Cultura’’ থেকে এসেছে, যাকে
এক কথায় কর্ষণ বা চাষ করা বোঝায়। অর্থাৎ মানসিক, বুদ্ধিভিত্তিক এবং দৈহিক চাহিদা পূরণের জন্য চর্চার মাধ্যমে প্রাপ্ত
বিষয়বস্তুর নির্যাসই হলো সংস্কৃতি। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী এবং নৃবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে সংস্কৃতিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যেমনব্রিটিশ নৃবিজ্ঞানী ই.বি টাইলর তাঁর ‘‘Primitive Culture’ গ্রন্থে বলেছেন, “সংস্কৃতি হলো সমাজস্থ মানুষের সমগ্র জীবন
প্রণালী।” তাঁর মতে, সংস্কৃতি হচ্ছে সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষের অর্জিত জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্পকলা, নৈতিকতা, আইন,
রীতিনীতি এবং অন্য যেকোনো দক্ষতা ও অভ্যাসের জটিল সমষ্টি (Culture is that complex whole which includes
knowledge, belief, art, moral, law, custom and any other capabilities and habits acquired by man as a
member of society.)
সংস্কৃতির সংজ্ঞায় ঔড়হবং বলেন,“Culture is the sum total of man’s creation অর্থাৎ মানুষ তার চলার পথে জীবিকা
নির্বাহের জন্য যা কিছু সৃষ্টি করে তা-ই সংস্কৃতি।
ম্যালিনোস্কি তাঁর ‘A Scientific Theory of Culture’ গ্রন্থে বলেন, “সংস্কৃতি হলো মানুষের আপন কর্মের সৃষ্টি যার
মাধ্যমে সে তার উদ্দেশ্য সাধন করে”(Culture is the handiwork of man and the medium through which he
achieves his ends.) |
সমাজবিজ্ঞানী স্পেনসার সংস্কৃতিকে একটি অধি-জৈবিক পরিবেশের সাথে তুলনা করেছেন, এই জৈবিক পরিবেশ বৃক্ষরাজি
এবং পশুপাখি দ্বারা গঠিত এবং এটি জৈবিক বা প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে ভিন্ন। (ঈঁষঃঁৎব রং ঃযব ংঁঢ়বৎ ড়ৎমধহরপ
বহারৎড়হসবহঃ ধং ফরংঃরহমঁরংযবফ ভৎড়স ঃযব ড়ৎমধহরপ, ড়ৎ ঢ়যুংরপধষ, ঃযব ড়িৎষফং ড়ভ ঢ়ষধহঃং ধহফ ধহরসধষং).
ঝধসঁবষ কড়বহরম তাঁর ঝড়পরড়ষড়মু গ্রন্থে বলেন: | (Culture is the super organic
environment as distinguished from the organic, or physical, the worlds of plants and animals).
Samuel Koenig Zuvi Sociology MÖ‡š’ e‡jb: “Culture may be defined as the sum-total of man’s efforts to
adjust himself to his environment and to improve his modes of livings.” অর্থাৎ মানুষ তার চারপাশের পরিবেশের
সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য যে প্রচেষ্টা চালায় এবং তার জীবনমান বৃদ্ধিতে যত কাজ করে তার সমষ্টিই হলো সংস্কৃতি।
উপরের সংজ্ঞাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, মানুষের সমাগ্রিক কার্যাবলি যা সে তার জীবন ধারণের জন্য করে থাকে
তাকে সংস্কৃতি বলে। মানুষের আচার-আচরণ, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, মেধা, নীতিবোধ ইত্যাদির সমষ্টিই সংস্কৃতি।
সংস্কৃতির ধরন: সমাজে সাধারণত দুই ধরনের সংস্কৃতি বিদ্যামান। যথা- বস্তুগত সংস্কৃতি এবং অবস্তুগত সংস্কৃতি।
বস্তুগত সংস্কৃতি: সকল বস্তুগত জিনিসপত্র যা মানুষ দৈনন্দিন জীবন যাপনের জন্য ব্যবহার করে তাকে বস্তুগত সংস্কৃতি
বলে। এসব বস্তুগত জিনিসের মধ্যে ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, পোষাক, বাসন বা তৈজসপত্র, হাতিয়ার অন্যতম,
আর এগুলোই বস্তুগত সংস্কৃতি। সামাজিক পরিবর্তনের রেশ ধরে সভ্যতার উন্নয়নের ফলে সংস্কৃতির এসব উপাদানের
মধ্যেও এসেছে পরিবর্তন। যেমন- মানুষের ব্যবহার্য জিনিসের মধ্যেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আগে মানুষ লাঙল,
কাস্তে, মাটির হাঁড়ি, ঘরবাড়ি, লুঙ্গি, শাড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করতো কিন্তু বর্তমানে কলের লাঙল, ধানকাটার মেশিন, স্টিলের
হাড়ি পাতিল ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে।
অবস্তুগত সংস্কৃতি: যেসব বিষয়ের বস্তুগুণ নেই অথচ আমাদের সংস্কৃতির অংশ তাকে অবস্তুগত সংস্কৃতি বলে। যেমনচিন্তাভাবনা, ধ্যান-ধারণা, রীতিনীতি, সাহিত্য, দর্শন, ধর্ম, নীতিবোধ ইত্যাদি। এক কথায় ভাবগত সংস্কৃতিকে অবস্তুগত
সংস্কৃতি বলে। এছাড়াও মানুষের ভাষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, আইন, আদর্শ, মূল্যবোধ, প্রথা, শিল্পকলা, অভ্যাস, বিশ্বাস, সামর্থ্য
ইত্যাদি উপাদানও অবস্তুগত সংস্কৃতির অংশ।
বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য
বস্তুগত সংস্কৃতি অবস্তুগত সংস্কৃতি
১। বস্তুগত সংস্কৃতি মানুষের জীবনকে প্রত্যক্ষভাবে
প্রভাবিত করে।
১। অবস্তুগত সংস্কৃতি মানুষের জীবনকে পরোক্ষভাবে
প্রভাবিত করে।
২। উদাহরণ-ঘর-বাড়ি, আসবাব-পত্র, পোষাক-পরিচ্ছদ,
গাড়ি ইত্যাদি।
২। উদাহরণ-শিল্পকলা, সাহিত্য, সংগীত, প্রযুক্তি, ভাষা
ইত্যাদি।
৩। বস্তুগত সংস্কৃতিকে দেখা যায় এবং এক স্থান থেকে
অন্য স্থানে সরানো যায়।
৩। অবস্তুগত সংস্কৃতিকে দেখা যায় না এবং এক স্থান
থেকে অন্য স্থানে সরানো যায় না।
৪। বস্তুগত সংস্কৃতি বৈষয়িক। ৪। অবস্তুগত সংস্কৃতি ভাবগত।
৫। বস্তুগত সংস্কৃতি বাহ্যিক দিকের পরিবর্তন ঘটায়। ৫। অবস্তুগত সংস্কৃতি মানসিক পরিবর্তন ঘটায়।
৬। বস্তুগত সংস্কৃতি দ্রæত পরিবর্তনশীল। ৬। অবস্তুগত সংস্কৃতি অপেক্ষাকৃত ধীর পরিবর্তনশীল।
৭। বস্তুগত সংস্কৃতি সঞ্চালন প্রক্রিয়া অবস্তুগত সংস্কৃতির
তুলনায় বেশি সচল।
৭। অবস্তুগত সংস্কৃতি সঞ্চালন প্রক্রিয়া বস্তুগত সংস্কৃতির
তুলনায় কম সচল।
শিক্ষার্থীর কাজ বস্তুগত এবং অবস্তুগত সংস্কৃতির পার্থক্য নিরুপণ করুন। সময়: ৫ মিনিট
সারসংক্ষেপ
সংস্কৃতি সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরত্বপূর্ণ প্রত্যয়। সংস্কৃতির ইংরেজি প্রতিশব্দ ঈঁষঃঁৎব যার উৎপত্তিগত অর্থ চাষ করা বা
কর্ষণ করা। মানুষ তার জীবন চলার পথে বা জীবন মান বৃদ্ধির জন্য তার চার পাশের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর
জন্য যে সমস্ত কার্যাবলি করে থাকে তাকে সংস্কৃতি বলে। সংস্কুতি দুই প্রকার। যথা-বস্তুগত সংস্কৃতি এবং অবস্তুগত
সংস্কৃতি। সকল বস্তুগত জিনিসপত্র যা মানুষ দৈনন্দিন জীবন যাপনের জন্য ব্যবহার করে তাকে বস্তুগত সংস্কৃতি বলে।
যেসব বিষয়ের বস্তুগুণ নেই অথচ আমাদের সংস্কৃতির অংশ তাকে অবস্তুগত সংস্কৃতি বলে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-২.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (√) দিন।
১। সংস্কৃতির ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে-
K) Civilization (L) Culture (M) Music (N) Fashion
2| Primitive Culture MÖগ্রন্থটি কার লেখা?
(ক) রংগলাল সেন এর (খ) আবুল বারকাত এর
(গ) ই.বি টাইলর এর (ঘ) এডওয়ার্ড সাঈদ এর
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত