সংস্কৃতি কাকে বলে? সংস্কৃতির ধরনগুলো কি কি, উদাহরণ দিন। উদ্দীপকের আলোকে সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যগুলো লিখুন।

মুখ্য শব্দ বাংলাদেশ, মানুষ, সংস্কৃতি, জীবনধারা।
বাংলাদেশের মানুষের জীবনধারা যুগে যুগে পরিবর্তিত হয়েছে। এদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনধারা জানার
জন্য আমাদেরকে জীবনধারণ প্রণালী সম্পর্কে জানতে হবে। নি¤েœ বাংলাদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনধারা
সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
(১) ভাষা: বাংলাদেশের মানুষের ভাষা বাংলা। তবে এই বাংলা ভাষায় অন্যান্য ভাষা থেকে শব্দ এসে এ ভাষার
মৌলিকত্বকে নাড়া দিলেও ভাষাকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করেছে। তৎসম, অর্ধতৎসম, তদ্ভব এবং বিভিন্ন বিদেশি ভাষা
থেকে আগত শব্দ (আরবি, ফার্সি, হিন্দি, উর্দু, তুর্কি, চাইনিজ, জাপানি, বার্মিজ, পর্তুগীজ, ওলন্দাজ, গুজরাটি,
মারাঠি, ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যাানিশ ইত্যাদি) বাংলা ভাষাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে এবং এদেশের মানুষ এই ভাষার
মাধ্যমে তাদের ভাবের আদান প্রদান করে থাকে।
(২) সংকেত বা প্রতীক: সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সংকেত বা প্রতীক। বাংলা ভাষাই বাংলাদেশের
মানুষের অতি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বাংলাদেশের মানুষের জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতীক
হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাল-সবুজের এ পতাকা অর্জিত হয়।
(৩) খাদ্যাভ্যাস: আমাদের অতি পরিচিত একটি প্রবাদ মাছে ভাতে বাঙালি। মাছে ভাতে বাঙালি বাংলাদেশের মানুষের
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধারণ করে। বাংলাদেশেরর মানুষ প্রধানত ভাত, মাছ, ডাল, শাক সবজি, মাংস, ডিম, দুধ
ইত্যাদি খেয়ে থাকে। বেশির ভাগ মানুষ তিন বেলাতেই ভাত খায়। তবে অনেকে ভাতের বদলে রুটিও খেয়ে
থাকেন। শহর এলাকাতে মানুষ দিনের বিভিন্ন সময় নাস্তাও করে থাকেন। বর্তমানকালে শহর এলাকায় ফাস্টফুড
জাতীয় নাস্তার ব্যাপক প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। কোনো উৎসব অনুষ্ঠানে মাংস, রোস্ট, পোলাও, বিরিয়ানি, জর্দা
ইত্যাদির প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়।
(৪) পোষাক-পরিচ্ছদ: বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ লুঙ্গি, গেঞ্জি, গামছা, পাজামা-পাঞ্জাবি, ফতুয়া পরিধান করে। শহর
এলাকায় প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, ট্রাউজার, ক্যাপ, বেøজার পরিধান করে। মেয়েরা শাড়ি, বøাউজ, পেটিকোট, সালোয়ার
কামিজ, বোরকা ইত্যাদি পরিধান করে। গ্রাম কিংবা শহর সবখানে গামছা ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। মেয়েরা
পাউডার, নেলপালিশ, টিপ, লিপস্টিক, কাচের চুড়ি, গহনা, ঝুমকা, নাকফুল ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে। সনাতন
ধর্মের বিবাহিতা মেয়েরা সিঁথিতে সিঁদুর এবং হাতে শাঁখা পরে।
(৫) বাড়িঘর: মাটির দেয়ালের উপর শন বা খড়ের চালা বাংলাদেশের মানুষের সংস্কৃতির একটা অংশ। একসময়
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মাটির দেয়ালের উপর টিনের চালার ঘর ব্যবহার করতো। তবে
ইদানীং টিনের বেড়া এবং টিনের চাল এবং আধা পাকা ঘরে টিনের চাল, পাকা ভবন দেখা যায়। তবে প্রতিকূল
প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে অঞ্চলভেদে টিনের বেড়ার ঘর এবং মাটির দেয়ালের ঘর পরিলক্ষিত হয়। শহর অঞ্চলে
মোটামুটি পাকা ঘরের আধিক্য বেশি এবং বাড়ির ভিতরে সোফাসেট, খাট-পালংক, ডাইনিং টেবিল ইত্যাদি দেখা
যায়। গ্রামাঞ্চলে চৌকি, খাট ইত্যাদি বেশি লক্ষ্যণীয়।
(৬) ধর্ম: বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মে অনুসারী। এছাড়াও এদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মের মানুষ
বসবাস করে। বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠীর জনসংখ্যা যেমন-চাকমা, মারমা, হাজং, মণিপুরি, গারো, রাখাইন
ইত্যাদি এখানে বসবাস করে এবং তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ইসলাম ধর্মের অনুসারী বাংলাদেশিরা
মসজিদে, হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা মন্দিরে, বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা প্যাগোডায় এবং খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা চার্চে
যায় তাদের উপাসনা করার জন্য। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে দুই ঈদ, মিলাদ-উন-নবী ইত্যাদি।
এছাড়া নামাজ, রোজা, যাকাত তাদের প্রধান ধর্মীয় রীতি। হিন্দুদের দুর্গাপূজা, কালিপূজা, ল²ীপূজা, মনসা পূজা,
সরস্বতী পূজা এবং বৌদ্ধদের বৌদ্ধপূর্ণিমা ও খ্রিস্টানদের খ্রিস্টমাস, ইস্টার সানডে ইত্যাদি।
(৭) মৌলিক অর্থনীতি: বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। গত কয়েক দশকে ডেইরি, পোল্ট্রি এবং মৎস্য চার
গ্রামীণ অর্থনীতি নতুন গতি সঞ্চার করেছে। সাম্প্রতিককালে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা
(রেমিটেন্স) এবং তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি আয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে।
বাংলাদেশের খনিজ সম্পদের মধ্যে গ্যাস সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দরবনসহ বনাঞ্চল, নদী, সমুদ্র ইত্যাদি প্রাকৃতিক
সম্পদ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
(৮) বিনোদন: বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান পালন করে। যেমন- অগ্রহায়ণ মাসে নবান্ন
উৎসব, পৌষ-পার্বণ, পহেলা বৈশাখ, বৈশাখী মেলা ইত্যাদি। যাত্রা, জারিগান, লোকগান, লালনগীতি, মুর্শিদী,
ভাটিয়ালি, নজরুলসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত ইত্যাদি এদেশের মানুষের সংস্কৃতিকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দান করেছে। হাডুডু,
দাঁড়িয়াবান্ধা, কানামাছি, গোল্লাছুট-এর পাশাপাশি ফুটবল ও ক্রিকেট জনপ্রিয় খেলা। গ্রামাঞ্চলের মেলাগুলোতে সার্কাস,
পুতুলনাচ, নাগরদোলা প্রধান আকর্ষণ। বর্ষবরণ এবং বিজয় দিবস দেশের জাতীয় উৎসব হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
(৯) শিক্ষা: বাংলাদেশে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যাপকভাবে প্রচলিত। এছাড়াও ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা
গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তবে শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষার একটা প্রচলনও লক্ষ্য করা যায়।
(১০) ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব: জমিদারী প্রথা বিলোপের পর থেকে ভূমিভিত্তিক ক্ষমতা কাঠামোর কর্তৃত্ব আগের তুলনায হ্রাস
পেয়েছে। বর্তমানে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোতে রাজনৈতিক প্রভাব, নগদ অর্থ, শিক্ষা, প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক,
প্রযুক্তির উপর মালিকানা প্রভৃতি উপাদানের প্রভাব লক্ষ করা যায়।
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশের মানুষের সংস্কৃতির মধ্যে রয়েছে ঘর-বাড়ির ধরন, পোশাক-পরিচ্ছদ, অর্থ-ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থা,
খাদ্যাভাস, ধর্ম, সাহিত্য, শিক্ষাব্যবস্থা, খেলাধুলা ইত্যাদি। বাংলাদেশের মানুষের ভাষা বাংলা। তবে এই বাংলা ভাষায়
অন্যান্য ভাষা থেকে শব্দ এসে এ ভাষাকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বাংলাদেশের
মানুষের সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মে অনুসারী। এছাড়াও
এদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মের মানুষ বসবাস করে। বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠীর জনসংখ্যা যেমন-চাকমা,
মারমা, হাজং, মণিপুরী, গারো, রাখাইন ইত্যাদি এখানে বসবাস করে এবং তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-২.৪
সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (√) দিন।
১। বাংলাদেশের মানুষের জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতীক কী?
(ক) নৌকা (খ) জাতীয় পতাকা
(গ) সংসদ ভবন (ঘ) শাপলা
২। গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোতে বর্তমানে কোন উপাদান বেশি প্রভাব বিস্তার করছে?
(ক) নগদ অর্থ (খ) শিক্ষা
(গ) রাজনৈতিক কর্তৃত্ব (ঘ) সবগুলো
ক. বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (গঈছ)
১। অবস্তুগত সংস্কৃতির উদাহরণ হচ্ছেÑ
(ক) বিশ্বাস-মূল্যবোধ (খ) ধর্ম, আইন
(গ) কোনোটি নয় (ঘ) ‘ক’ ও ‘খ’ উভয়
২। বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ব্যবধান কেন তৈরি হচ্ছে?
(ক) শিক্ষার প্রসারে (খ) জলবায়ুর পরিবর্তনে
(গ) প্রযুক্তি বিকাশে (ঘ) একক পরিবারের কারণে
খ. নিচের উদ্দীপকটি পড়–ন এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দিন।
বাংলাদেশের সংস্কৃতির অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে স্থানান্তর, লালিত ঐতিহ্য,
পরিবর্তনশীলতা,মূল সংস্কৃতি এক ও অভিন্ন, সংকর সংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক ঐহিত্য, সাংস্কৃতিক ব্যবধান, আকাশ
সংস্কৃতির প্রভাব, আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাব, বিশ্বায়নের প্রভাব ইত্যাদি।
৩। “সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের সমগ্র সৃষ্টি” কে বলেছেন?
(ক) ই.বি টেইলর (খ) জোনস
(গ) অগাস্ট কোঁৎ (ঘ) হার্বার্ট স্পেন্সার
৪। সংস্কৃতির মূল ধরন দু’টি কি কি?
(ক) আদিম-আধুনিক (খ) বৈজ্ঞানিক-অবৈজ্ঞানিক
(গ) বস্তুগত-অবস্তুগত (ঘ) পাশ্চাত্য-এশীয়
ঘ) সৃজনশীল (কাঠামোবদ্ধ) প্রশ্ন:
উদ্দীপকটি পড়–ন এব নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন।
রফিক উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান শাখার ছাত্র। তার বন্ধু শাওন মানবিক শাখায় পড়ে। একদিন রফিক শাওনকে বললো, আজ
সোনার বাংলা অডিটোরিয়ামে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা আছে। শাওন রফিককে প্রশ্ন করলো, ‘বলতো সংস্কৃতি কী’? রফিক আত্মবিশ্বাসের
সাথে বললো, ‘গান, কবিতা, নাটক, নৃত্য, কৌতুক অর্থাৎ যাকিছু আমাদের বিনোদন দেয় তাই সংস্কুতি’। শাওন মুচকি হেসে
সমাজবিজ্ঞানে সংস্কৃতি বলতে কী বুঝায়, এর উপাদান ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে রফিকের সাথে আলোচনা করলো।
১) সংস্কৃতি কাকে বলে? ১
২) সংস্কৃতির ধরনগুলো কি কি, উদাহরণ দিন। ২
৩) উদ্দীপকের আলোকে সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যগুলো লিখুন। ৩
৪) বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিবর্তনে কোন কোন উপাদান ক্রিয়াশীল উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করুন। ৪
উত্তরমালা :
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ২.১ ঃ ১। খ ২। গ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ২.২ ঃ ১। গ ২। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ২.৩ ঃ ১। ঘ ২। খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ২.৪ ঃ ১। খ ২। ঘ
চ‚ড়ান্ত মূল্যায়ন ঃ ১। ঘ ২। ক ৩। খ ৪। গ

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]