প্রত্নত্তত্ত্ব সংজ্ঞা এবং এর উৎসসমূহ

প্রতœতাত্তি¡ক নির্দশনের ভিত্তিতে সমাজ ও সভ্যতার বিকাশ ইউনিট
প্রতœতত্ত¡ মানুষের অতীত কর্মকাÐের অধ্যয়ন। প্রাগৈতিহাসিক সময়ের বস্তুগত ও অবস্তুগত সহস্কৃতি সম্পর্কে প্রতœতত্ত¡
আমাদেরকে সুনির্দিষ্ট ধারণা দেয়। প্রতœতত্ত¡ প্রাচীনকালের মানুষের নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদি, স্থাপত্য, জীবন-যাপনের
কৃৎকৌশল, সাংস্কৃতিক কর্মকাÐের উপকরণ ও জৈবিক উপাদানসমূহ (ফসিল) অধ্যয়ন করে। সভ্যতা ও সংস্কৃতির নানা দিক
সম্পর্কে জানতে প্রতœতত্বের ভ‚মিকা অনস্বীকার্য। মানুষের প্রাগৈতিহাসিক সংস্কৃতি ও সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা
ও বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে জ্ঞানের যে শাখা সৃষ্টি হয়েছে তাকে প্রতœতত্ত¡ বলে। প্রতœতাত্তি¡করা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন
করে শত শত বা হাজার হাজার বছর আগের প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবাশ্ম ও মানুষের নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য, যুদ্ধাস্ত্র, কৃষি ও সেচ
যন্ত্রপাতি মাটি খুঁড়ে বের করেন। প্রাচীন সভ্যতার সময় নির্ধারণ, সাংস্কৃতিক ও প্রতিবেশিক পরিস্থিতি যাচাইয়ে এসব
প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শনের গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রতœতাত্তি¡ক সময় নির্ধারণের জন্য রেডিও কার্বন ডেটিং পদ্ধতি ও রেডিও
একটিভ পটাশিয়াম পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এসব পদ্ধতির মাধ্যমে জীবাশ্ম বা প্রতœসম্পদের বয়স বা প্রাচীনত্ব নির্ধারণ করা হয়। মুখ্য শব্দ প্রতœতত্ত¡, এরিয়াল জরিপ, রিমোট সেন্সিং, জরিপ পদ্ধতি।
খনন কাজের মাধ্যমে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন সভ্যতার বিভিন্ন উপাদান উদ্ধার ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করা
হচ্ছে প্রতœতত্ত¡ (Archaeology)| Archaeology শব্দটি গ্রিক Archaeos এবং Logia শব্দ থেকে উদ্ভুত, যার
অর্থ হচ্ছে প্রাচীন অধ্যয়ন। প্রাচীন সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতির উৎস অনুসন্ধানে প্রতœতত্ত¡ গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।
প্রতœতত্তে¡র সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, লিখিত উপাদান ছাড়াও কেবল ব্যবহার্য সামগ্রী বা অলিখিত উপাদান থেকে ধ্বংস
হয়ে যাওয়া সভ্যতার নানা বৈশিষ্ট্য উদঘাটন করা যায়। উইলিয়াম কার্নিংটনকে প্রতœতাত্তি¡ক খনন কাজের মূল উদ্যোক্তা
হিসেবে মনে করা হয়।
অক্সফোর্ড লিভিং ডিকশনারি অনুসারে, খনন কাজের মাধ্যমে ইতিহাস ও প্রাক-ইতিহাসকে অধ্যয়ন করা এবং সময়ের সাথে
সাথে টিকে থাকা বিভিন্ন দ্রব্য ও অস্তিত্বশীল বস্তুর বিশ্লেষণকে প্রতœতত্ত¡ বলা হয়। সোসাইটি ফর আমেরিকান আর্কিওলজির
মতে, প্রতœতত্ত¡ হচ্ছে প্রাচীন মানব ইতিহাসের টিকে থাকা উপাদানসমূহের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান। নৃবিজ্ঞানী হোবেল
) তাঁর Anthropology: The Study of Man গ্রন্থে বলেছেন, প্রতœতত্ত¡ আদিম মানুষের পরিত্যক্ত দ্রব্যসামগ্রী এবং
তাদের ব্যবহৃত পোশাক-পরিচ্ছদসহ বস্তুগত সংস্কৃতির যেসব দিক এখনো উদ্ধার হয়নি সেগুলো উদ্ধারে সচেষ্ট।
ব্রিটিশ নৃবিজ্ঞানী ই.বি. টেইলর বলেন, প্রতœতত্ত¡ অতীতের ধ্বংসাবশেষ সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন । নৃবিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে প্রতœতত্তে¡র অধ্যয়ন শুরু হলেও এটি এখন স্বতন্ত্র শাস্ত্র (Archaeology is the study of remains of the past)|
(Discipline) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বিকাশমান এ শাস্ত্রটির অনেকগুলো শাখা রয়েছে। যেমন, প্রাগৈতিকহাসিক প্রতœতত্ত¡,
ঐতিহাসিক প্রতœতত্ত¡, পরিবেশ প্রতœতত্ত¡, প্রতœ-উদ্ভিদবিদ্যা, জলগর্ভস্থ প্রতœতত্ত¡, জাদুঘর অধ্যয়ন, ঐতিহ্য ব্যবস্থাপনা, নগর
ব্যবস্থাপনা, লোকপ্রতœতত্ত¡ ইত্যাদি।
প্রাচীন কোনো নির্দশন উদঘাটনের লক্ষ্যে খনন কাজ পরিচালনা করার আগে ভৌগোলিক এলাকা সনাক্তকরণের জন্য
রিমোট সেন্সিং ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও মাঠ জরিপ পদ্ধতি, এরিয়াল জরিপ, ভৌগোলিক জরিপ পদ্ধতিও ব্যবহৃত হয়।
তবে প্রতœতাত্তি¡ক গবেষণার জন্য খনন কাজকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। খননের মাধ্যমে প্রাপ্ত উপাদানের
বয়স কার্বন ডেটিং পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা হয়।
প্রতœতত্তে¡র উৎসসমূহ (ঝড়ঁৎপবং ড়ভ অৎপযধবড়ষড়মু)
প্রতœতত্তে¡র ভিত্তি হচ্ছে নিয়মতান্ত্রিক খনন কার্যক্রম। খননকাজের মাধ্যমে অতীত-ইতিহাস উšে§াচিত হয়। খননের মাধ্যমে
প্রাপ্ত হাড়, মাথার খুলি, ব্যবহার্য সামগ্রী, অস্ত্র, যন্ত্রপাতি, তৈজসপত্র, আসবাবপত্র ইত্যাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রাচীন
যুগের মানব সমাজ ও তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে কার্যকর ধারণা পাওয়া যায়। বহুবিধ উৎস থেকে প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন উদঘাটন করা যায়। যেমন:
১) লিখিত উৎস: খনন কাজের মাধ্যমে প্রাপ্ত সাহিত্য, দলিল-দস্তাবেজ, লিপি প্রভৃতি প্রতœতত্তে¡র গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে
বিবেচিত। এসব থেকে প্রাচীন সমাজ ও সভ্যতার সময়কাল, শাসকবর্গ, তাদের শাসনকার্য, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক
ব্যবস্থা সম্পর্কে কার্যকর ধারণা লাভ করা যায়।
২) মৌখিক উৎস: প্রাচীন লোককথা, গল্প, কেচ্ছা-কাহিনী, রূপকথা ইত্যাদি প্রতœতত্তে¡র মৌখিক উৎস হিসেবে স্বীকৃত। যুগ
যুগ কিংবা বংশ পরম্পরায় এসব মৌখিক উৎস সমাজে চলমান থাকে। সাধারণত বয়োজ্যেষ্ঠদের নিকট থেকে এগুলো
পরবর্তী প্রজন্মে হস্তান্তরিত হয়।
৩) রাজপ্রাসাদ ও মন্দির বা ধর্মশালা: খনন কাজের মাধ্যমে প্রাপ্ত নগরীর রাজপ্রাসাদ, মন্দির বা ধর্মশালা প্রতœতত্তে¡র গুরুত্বপূর্ণ
উৎস। এর মাধ্যমে প্রাচীন সমাজের নির্মাণ কৌশল, রুচিবোধ এবং ধর্মবোধের নিদর্শন স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়।
৪) শিলালিপি, চিত্রলিপি গুহাচিত্র: প্রাচীন যুগে কাগজ ছিলো না। মানুষ তার মনের কথা, প্রয়োজনীয় বার্তা, তথ্যাবলী,
নির্দেশ, সিদ্ধান্ত ইত্যাদি পাথর, পর্বতগাত্র, তামারপাত্র ইত্যাদিতে বিশেষ লিপির মাধ্যমে লিখে রাখত। বিশেষ করে রাজ্য
শাসন প্রণালী সম্পর্কীয় বিষয়াবলি লিপির মাধ্যমে কঠিন পর্বতগাত্রে খোদাই করে রাখা হতো।এগুলো থেকে রাজ্য শাসনের
কাল, রাজ্যের বিস্তৃতি এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতে পারেন।
৫) মুদ্রা, দেবদেবীর মূর্তি: মুদ্রার মাধ্যমে বিভিন্ন রাজার রাজত্বকাল, শাসকদের নাম ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। দেবদেবীর
মূর্তি থেকে মানুষের জীবনের ধর্মীয় চিন্তাধারায় এবং শিল্পে নিপুণতার পরিচয় পাওয়া যায়। এগুলো থেকে মানুষের
ক্রমবিবর্তনের ধারা এবং সাধারণ মানুষের জীবন দর্শনও উপলব্ধি করা যায়।
৬) আসবাবপত্র ও হাতিয়ার: আসবাবপত্র ও হাতিয়ার দেখে যুগকে চিহ্নিত করা যায়। যেমনÑ প্রস্তর যুগ, লৌহ যুগ, তাম্র
যুগ, ব্রোঞ্জ যুগ ইত্যাদি। সে যুগের মানুষ যে অস্ত্র ব্যবহার করতো তা নির্মিত হতো এসব ধাতুর মাধ্যমে। বিভিন্ন সময়ের
আসবাবপত্র ও হাতিয়ার দেখে মানব সমাজের পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
৭) স্মৃতিফলক: প্রতœতত্তে¡র উৎস হিসেবে স্মৃতিফলকের গুরুত্ব আছে। স্মৃতিফলক দেখে অতীত জীবনধারা সম্পর্কে জানতে
পারা যায়। আর.এল ব্রাইন স্মৃতিফলকের গুরুত্ব স্বীকার করেছেন। তার মতে, “স্মৃতিফলক জীবনধারার সাক্ষী,
সমাজচিত্রের দর্পন এবং মানুষের পেশা ধারণার অবলম্বন।”
সারসংক্ষেপ
প্রাচীন বা প্রাগৈতিহাসিক কালের প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবাশ্ম ও মানুষের ব্যবহার্য সামগ্রী, যুদ্ধাস্ত্র, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাটি খুঁড়ে বের করে সে সম্পর্কে অধ্যয়ন করা হচ্ছে প্রতœতত্ত¡। নৃবিজ্ঞান প্রতœতত্ত¡কে এর অন্যতম
শাখা হিসেবে অধ্যয়ন করে। তবে প্রতœতত্ত¡ এখন স্বতন্ত্র শাস্ত্র হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত। খনন কাজের মাধ্যমে প্রাপ্ত লিখিত,
অলিখিত বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত উপাদান এ শাস্ত্রকে সমৃদ্ধ ও বিকশিত করছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। প্রতœতত্তে¡র শাব্দিক অর্থ কী?
ক) প্রাচীন অধ্যয়ন খ) মানুষের বিজ্ঞান
গ) সামাজিক গবেষণা ঘ) কোনটিই নয়।
২। কোন পদ্ধতিতে খননের মাধ্যমে প্রাপ্ত উপাদানের বয়স নির্ধারণ করা হয়?
ক) এরিয়াল জরিপ পদ্ধতিতে খ) মাঠ জরিপ পদ্ধতিতে
গ) ভৌগোলিক জরিপ পদ্ধতিতে ঘ) কার্বন ডেটিং পদ্ধতিতে

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]