প্রত্নত্তত্ত্ব ভিত্তিতে সমাজের শ্রেণি বিভাগ এবং প্রাচীন, মধ্য ও নব্যপ্রস্তর

মুখ্য শব্দ প্রাচীন প্রস্তর যুগ, প্রস্তর যুগ মধ্য, নব্য প্রস্তর যুগ।
সমাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই আদিম সমাজ থেকে আধুনিক সমাজের উদ্ভব ও বিকাশ
সাধিত হয়েছে। ধীরে ধীরে পরিবর্তনের মাধ্যমে উন্নত রূপ লাভ করাকে সমাজের বিবর্তন বলে অভিহিত করা
হয়। বিবর্তনের মাধ্যমেই সমাজ প্রাগৈতিহাসিক বা প্রাচীন কাল থেকে আধুনিক যুগে পদার্পন করেছে। নানা উপাদান ও
দৃষ্টিকোণ থেকে মনীষীরা বিবর্তিত সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি বিভাজন করেছেন। ফলে সমাজের বিভিন্ন ধরন পরিলক্ষিত হয়।
খনন কাজের মাধ্যমে প্রাপ্ত উপাদানের ভিত্তিতে প্রতœতাত্তি¡কেরা সমাজের যে শ্রেণি বিভাজন (স্তর) করেছেন তা হচ্ছে:
ক) প্রাচীন প্রস্তর যুগ
খ) মধ্য প্রস্তর যুগ
গ) নব্য প্রস্তর যুগ
ঘ) তা¤্রযুগ (
ঙ) ব্রোঞ্জ যুগ (
চ) লৌহ যুগ
উল্লিখিত প্রতিটি সমাজের স্বকীয় আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সমাজেরও পরিবর্তন
সাধিত হয়েছে। এ পরিবর্তন মূলত উন্নতি ও সমৃদ্ধির। অভিজ্ঞতা, প্রয়োজনীয়তা এবং প্রচেষ্টা মানুষকে নতুন জ্ঞান ও
আবিষ্কারের সন্ধান দিয়েছে। মানুষের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টায় সমাজ হয়েছে আরো উন্নত। বিবর্তিত সমাজের শ্রেণি বিভাজনের
মধ্য দিয়ে আমরা সে বার্তাই পাই।
প্রাচীন প্রস্তর যুগ
প্রাচীন প্রস্তরযুগ-এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল গ্রিক শব্দ (পুরো > পুরাতন) এবং খরঃযড়ং (পাথর)
শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে শব্দটি গঠিত। এ যুগটি ছিল প্রস্তরযুগের প্রথম পর্যায়। প্রাগৈতিহাসিক এ
যুগকে সময়ের হিসেবে সবচেয়ে দীর্ঘতম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০ থেকে ১৫ লক্ষ খ্রিস্টপূর্ব অব্দ
পর্যন্ত প্রাচীন প্রস্তরযুগের সময়কাল বিবেচনা করা হয়। তবে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি না পাওয়ায় আধুনিক প্রতœতত্ত¡বিদ ও
ইতিহাস গবেষকেরা এ যুগের সময়কাল সংক্ষিপ্ত করে ১ লক্ষ থেকে ১০ হাজার বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন। এ যুগে
অবিকৃত, অমসৃণ ও স্থূল পাথরের অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, মানবসভ্যতার
প্রাথমিক বিকাশ প্রাচীন প্রস্তরযুগ বা পুরোপলীয় যুগেই ঘটেছিলো। প্রাচীন প্রস্তরযুগটি ছিল প্রস্তরযুগের প্রথম পর্যায়। নি¤েœ
প্রাচীন প্রস্তরযুগের সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হল :
ক) খাদ্য: প্রাচীন প্রস্তরযুগের মানুষ ছিল খাদ্য-সংগ্রহকারী। শিকার ও খাদ্য আহরণের দ্বারা মানুষ ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারণ করত।
খাদ্যতালিকায় ছিল ফলমূল, লতাগুল্ম, শাক-সবজি, পাখির ডিম, কীট-পতঙ্গ, ছোট বড় জীবজন্তুর মাংস, শামুক, ঝিনুকসহ
জলজ অন্যান্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ইত্যাদি।
খ) বাসস্থান: পুরোপলীয় যুগে দীর্ঘদিন মানুষ গাছের ডালে, গাছের কোটরে, পাহাড়ের গুহায়, মাটির গর্ত প্রভৃতি স্থানে
বসবাস করত। পরবর্তীতে তারা ঘরবাড়ি বানানোর কৌশল আয়ত্ত করে।
গ) বস্ত্র ও অলঙ্কার: পুরোপলীয় যুগের মানুষ প্রথমদিকে জীবজন্তুর মতো উলঙ্গ থাকত। পরবর্তীতে তারা গাছের পাতা,
ছাল-বাকল ইত্যাদি লজ্জা-নিবারণে ব্যবহার করত। শেষ পর্যায়ে এসে পশুর চামড়া ও লোম দিয়ে পোশাক তৈরি করত।
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে গহনা ব্যবহারের প্রচলন ছিল।
ঘ) হাতিয়ার: প্রাচীন প্রস্তরযুগের মানুষ বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার তৈরি করত। পাথরের পাশপাশি বাঁশ, গাছের ডাল, পশুর
হাড়, দাঁত, শিং ইত্যাদি দিয়েও হাতিয়ার তৈরি করা হত।
ঙ) সমাজ জীবন: প্রাকৃতিক বৈরিতা এবং শ্বাপদসংকুল পরিবেশে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে মানুষ প্রাচীন প্রস্তর যুগেই যূথবদ্ধ
জীবন-যাপন শুরু করে। পরিবার ও সমাজের নেতৃত্ব বিষয়ে বিতর্ক থাকলেও অনেকেই মনে করেন যে তখন পরিবার ও
সমাজের নেতৃত্ব নারীদের ওপর ন্যস্ত ছিল।
চ) ধর্ম: প্রাকৃতিক বৈরিতা থেকে মুক্তি, শিকারি জীবনকে সফল করা, আত্মরক্ষা, পূর্বপুরুষের কৃপালাভ প্রভৃতি কারণে এ
যুগের মানুষ অদৃশ্য শক্তির সাহায্য প্রার্থনা করত। এভাবে তাদের মনে একটা ধর্মীয় অনুভূতির জন্ম হয়। সমাজবিজ্ঞানী
ডুর্খেইম (উঁৎশযবরস) আদিম ধর্মীয় বিশ্বাসকে টোটেম (ঞড়ঃবস) বলে অভিহিত করেছেন।
ছ) চিত্র/শিল্পকলা: প্রাচীন প্রস্তযুগের মানুষ গুহার ভিতরে চিত্রকলার মাধ্যমে তাদের শিকারি জীবন, শিকার প্রাণী শিকারের
দৃশ্য, ব্যবহৃত হাতিয়ারাদি, বসন-ভূষণ, জীবনযাপন পদ্ধতি, সংস্কৃতিবোধ, শিল্পবোধ, জাদুবিশ্বাস, ধর্মীয় চেতনা, দার্শনিক
চিন্তা ইত্যাদি চিত্রকলা ফুটিয়ে তুলেছে।
জ) আবিষ্কার: প্রস্তরযুগেই মানুষ আগুন আবিষ্কার করেছিল। তারা আগুনের ব্যবহার জানত এবং তা সংরক্ষণ করতে পারতো।
ঝ) শ্রম বিভাজন: প্রাচীন প্রস্তরযুগে খাদ্য সংগ্রহ কর্মকান্ডে শ্রমবিভাগের সূত্রপাত হয় বলে অনেক পন্ডিত মনে করেন।
এসময় মেয়েরা ফলমূল সংগ্রহ, পুরুষেরা শিকার করতো। অল্পবয়সীরা ছোটখাটো জীবজন্তু ও মাছ শিকার এবং বয়স্কদের
কাজে যথাসম্ভব সহযোগিতা করত। বৃদ্ধরা অস্ত্র তৈরি ও বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহায়তা দিত। তৎকালীন সমাজে শ্রমভেদ থেকেই সামাজিক স্তরভেদের জন্ম হয়।
মধ্য প্রস্তর যুগ
মধ্য প্রস্তরযুগ হচ্ছে প্রাচীন প্রস্তরযুগের প্রান্তিক পর্যায় এবং নব্য প্রস্তরযুগের প্রারম্ভিক পর্যায়। ইউরোপে এ যুগ প্রায় ১১
হাজার থেকে ৫ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। আফ্রিকা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে এ যুগের অনেক
নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। মধ্য প্রস্তরযুগে ইউরোপের তৃণভূমি বা তুন্দ্রা অঞ্চলে গভীর বন-বনানীর সৃষ্টি হয়। চতুর্থ
বরফযুগের পরবর্তী সময়ে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা নতুনভাবে প্রকৃতির সাথে খাপ খাওয়াতে সক্ষম হয় এবং এরা মধ্যপলীয়
সংস্কৃতির জš§ দেয়। এখানে মধ্য প্রস্তরযুগের সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হল:
ক) খাদ্য: মধ্য প্রস্তর যুগেও মানুষ ছিল খাদ্য-সংগ্রহকারী। তখনো তারা খাদ্য উৎপাদন করতে শেখেনি। তাদের প্রধান
খাদ্য ছিল পশুপাখি ও মাছ। মাছকে শুঁটকি করে তারা সংরক্ষণ করতো। মাছ ছাড়াও তারা বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদ ও
প্রাণীকে খাদ্য তালিকার অর্ন্তভূক্ত করেছিল।
খ) হাতিয়ার: মধ্য প্রস্তরযুগের মানুষ পূর্বের তুলনায় হাতিয়ারের উৎকর্ষ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। এ সময়ের প্রধান অস্ত্র ছিল
তীর-ধনুক। এ যুগে মৎস্যশিকারে বঁড়শি, হারপুন, নৌকা, জাল ব্যবহৃত হত। হস্তকুঠার ছাড়াও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রে তারা
কাঠের হাতল সংযুক্ত করেছিল। পশুর হাড়, শিং ইত্যাদি দিয়েও অস্ত্র তৈরি হত।
গ) ধর্ম: মধ্যপ্রস্তরযুগের মানুষ ধর্ম ও জাদুবিদ্যায় বিশ্বাসী ছিল। সর্বপ্রাণবাদ, মহাপ্রাণবাদ, বস্তুভক্তি ও পূর্বপুরুষ পূজা ছিল তাদের ধর্ম সংক্রান্ত মূল মতবাদ।
ঘ) সমাজ জীবন: মধ্যপলীয় যুগের মানুষ ছিল আধা-যাযাবর, আধা-স্থায়ী। এ যুগের মানুষ মূলত দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে
পড়ে। একটি শাখানদী ও সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চল এবং অন্যটি মূল ভূমিতেই অবস্থান করে। মধ্যপলীয় যুগে মানুষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র
দলে বিভক্ত হয়ে বসবাস করত। অন্তঃ ও আন্তঃদলীয় সম্পর্ক ভালো ছিল।
ঙ) চিত্র/শিল্পকলা: এ সময় চিত্রকলায় আগের তুলনায় বিষয়বস্তু এবং অঙ্কন রীতিতে পরিবর্তন আসে। জ্যামিতিক নকশার
আনুকরণে মানুষ ও জীবজন্তুর মূর্ত ছবিও গুহার দেয়ালে অঙ্কন করা হত। জলাশয়ের তীরবর্তী বস-বাসকারী মানুষের
চিত্রকর্মে পানি ও পানিনির্ভর জীবনযাপন প্রণালী প্রতিফলিত হয়েছে।
চ) আবিষ্কার: মধ্য প্রস্তরযুগের মানুষেরা আগুনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে এবং পোশাক-পরিচ্ছদ ও গহনার ব্যবহার
বাড়ায়। ব্যক্তিবিশেষের সম্পত্তির ধারণার প্রাথমিক বিকাশও এ সময়ে ঘটেছে বলে মনে করা হয়।
নব্য প্রস্তর যুগ
‘নব্যপ্রস্তর’ শব্দটি এসেছে ইংরেজি ঘবড়ষরঃযরপ প্রতিশব্দ থেকে। গ্রিক শব্দ ঘবড় (নব > নতুন) এবং (পাথর) এর
সমন্বয়ে ঘবড়ষরঃযরপ শব্দটির উদ্ভব। বিখ্যাত ইংরেজ প্রতœতত্ত¡বিদ ঝরৎ ঔড়যহ খঁননড়পশ ১৮৬৫ সালে প্রথম শব্দটি
ব্যবহার করেন। আনুমানিক ৮০০০-৩৫০০ খ্রিস্টপূর্ব অব্দের মধ্যে ও নিকট প্রাচ্যে নব্য প্রস্তরযুগের প্রথম বিকাশ ঘটে।
অতঃপর ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল এবং অবশেষে খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দে ইংল্যান্ডে এ যুগের সূচনা হয়। সমাজ ও সভ্যতার
অগ্রগতির ইতিহাসে নব্য প্রস্তরযুগ একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। বিখ্যাত ইংরেজ ঐতিহাসিক গর্ডন চাইল্ড (এড়ৎফড়হ
ঈযরষফব) খাদ্য-আহরণ পর্যায় থেকে খাদ্য উৎপাদনের জন্য কৃষিকাজে উত্তরণকে নব্য প্রস্তরযুগের বিপ্লব হিসেবে চিহ্নিত
করেছেন। নি¤েœ নব্য প্রস্তরযুগের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
ক) খাদ্য উৎপাদনের সূচনা: কৃষিকাজের মাধ্যমে নব্য প্রস্তুরযুগের মানুষেরা খাদ্য-উৎপাদনমুখী এক সৃজনশীল যুগের সূচনা
করে। প্রকৃতপক্ষে কৃষিকাজের সূচনা করাই ছিল প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানব সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উদ্ভাবন। এ সময়ের
উৎপাদিত ফসল হল গম, যব, মটরশুঁটি, ডাল, কাউন, জোয়ার, মিষ্টি আলু, ভুট্টা, সীম, বরবটি, লাউ, নারকেল, খেজুর,
জলপাই, ডুমুর, আঙ্গুর, এবং অসংখ্য লতা-পাতা, শাক-সবজি ইত্যাদি।
খ) পশু পালন: মানুষের শিকারের সঙ্গী হয়েছিল কুকুর। একপর্যায়ে কুকুর গৃহপালিত পশুতে পরিণত হয়। পশুর দুধ, মাংস
এবং পাখির ডিম তাদের খাদ্যের অনিশ্চয়তা দূর করে এবং চামড়া বস্ত্রের চাহিদা মেটায়। এছাড়াও পরিবহন, ভূমিকর্ষণ,
পশু-সংগ্রহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে পশুর ব্যবহার ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পশু-পাখির গৃহপালিতকরণ নবোপলীয় যুগের অন্যতম
গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য।
গ) গৃহ নির্মাণ: নব্য প্রস্তরযুগের শেষদিকে এসে গুহাবাসী মানুষ কৃত্রিম আবাসস্থল গড়ে তোলে। প্রথমে তারা বনের
গাছপালা ও তৃণ দিয়ে কুড়েঘর নির্মাণ করতো। রোদ-বৃষ্টি, ঝড়সহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আত্মরক্ষার জন্য গৃহ
ছিল নিরাপদ আশ্রয়স্থল। কালক্রমে মানুষ গৃহের বহুবিধ উন্নতি সাধন করেছিল।
ঘ) হাতিয়ার: নব্য প্রস্তরযুগের হাতিয়ার অধিক মসৃণ, ধারালো, হালকা ও কার্যকরী করে তৈরি করা হত। হাতিয়ারের
বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্যই এ যুগকে নয়া পাথরের যুগ বলে অভিহিত করা হয়। এ যুগের শেষদিকে কৃষিকাজে লাঙলের
ব্যবহারও শুরু হয়।
ঙ) আবিষ্কার: নব্য প্রস্তরযুগের গুরুত্বপূর্ণ একটি কীর্তি হল চাকার আবিষ্কার। চাকার আবিষ্কার, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, পরিবহন
এবং যুদ্ধকৌশলে (যুদ্ধে পাথর ব্যবহার) পরিবর্তন ঘটায়। কৃত্রিম পদ্ধতিতে আগুন জ্বালানোর কৌশল আয়ত্ত¡ এবং এর
ব্যাপক ব্যবহার নব্য প্রস্তর যুগের অর্জন। মূলত চকমকি পাথর ছিল এ সময়ের মানুষের দিয়াশলাই। উদ্বৃত্ত ফসল সংরক্ষণ,
রন্ধনকার্য, খাদ্য ও পানীয় সংরক্ষণ কাজে মৃৎপাত্র ব্যবহার করা শুরু হয়। নব্য প্রস্তরযুগের শেষপর্যায়ে এসে সীমিত আকারে
তামার ব্যবহার শুরু হয়।
চ) বস্ত্রশিল্প: এ যুগে তাঁত বা বয়ন শিল্পের বিকাশ ঘটে। বয়নশিল্পে প্রথম শণ, পরে ভেড়া ও ছাগলের লোম, তুলা এবং
শেষে রেশমগুটি কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ যুগে এশিয়াতে তুলা উৎপাদন শুরু হলে তাঁতশিল্পের অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়।
ছ) শ্রমবিভাজন: নব্য প্রস্তরযুগে শ্রমবিভাজন সংহত রূপ লাভ করে। এ সময় পুরুষেরা হাতিয়ার তৈরি, পশুপালন, শিকার,
ঘরবাড়ি তৈরি ও কৃষিকাজ করত। নারীরা ফসল সংরক্ষণ, বস্ত্রবয়ন, মৃৎপাত্র তৈরি, সন্তান প্রতিপালন ও ঘরকন্যার কাজে
ব্যস্ত থাকত।
জ) সামাজিক অবস্থা: নব্য প্রস্তরযুগে বিবাহ ও পরিবার ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এ সময়ে সংঘবদ্ধভাবে বসবাস অনিবার্য হওয়ায়
মানুষ ক্ল্যান, পরিবার ও ট্রাইব গঠন করে। পরিবার নবোপলীয় যুগের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। নবোপলীয় যুগে মানুষের
মধ্যে সত্যিকার অর্থে-সামাজিক শ্রেণিভেদ বা স্তরভেদ দেখা দেয়। দলপতির আবির্ভাব, যুদ্ধে পরাজিতদের দাসে
পরিণতকরণ, ধর্মগুরু ও অভিজাত শ্রেণি সৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে সমাজে শোষক-শোষিত বা প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক
সৃষ্টি হয়। ক্ষমতা, ধন-সম্পত্তি এবং মর্যাদাকে কেন্দ্র করেও সামাজিক স্তরভেদ প্রকট হয়ে ওঠে। নব্য প্রস্তরযুগে ব্যক্তিগত
সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে। ।
ঝ) ভাষা ও শিল্পকলার বিকাশ: নব্য প্রস্তরযুগে কথ্যভাষার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। মনের ভাব প্রকাশের জন্য কথা বা ভাষার
ব্যবহার শুরু হয়। স্থাপত্য, ভাস্কর্য, চিত্রকলা, অঙ্কন, প্রভৃতি শাখায়ও বিকাশ লাভ করে।
ঞ) ধর্ম ও যাদুবিদ্যা: নবোপলীয় যুগে রোগ-শোক, মৃত্যু, মৃত্যু-পরবর্তী জীবন, বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কীটপতঙ্গ ও জীবজন্তুর হাত থেকে নিজেদের জীবন ও ফসল রক্ষা, শিকার, যুদ্ধজয়, শুভ-অশুভ ধারণা, আত্মা-প্রেতাত্মায় বিশ্বাস ইত্যাদি বিষয় থেকে যাদুবিদ্যা ও ধর্মবিশ্বাস প্রবল হয়ে ওঠে।
সারসংক্ষেপ
মানব সভ্যতার সূচনা হয়েছিল প্রাচীন প্রস্তুর বা পুরোপলীয় যুগে। মধ্য ও নব্য প্রস্তুর যুগে সভ্যতার বিকাশ সাধিত
হয়েছে। নব নব আবিষ্কার মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যে নতুনত্ব এনেছে। গুহাবাসী মানুষ হয়েছে গৃহবাসী।
শিকার ও সংগ্রহভিত্তিক অনিশ্চিত অর্থনীতি থেকে মানুষ খাদ্য উৎপাদনের নিরাপদ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেল
খাদ্যের নিশ্চয়তা মানুষের সৃজনশীলতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে। সমাজে শ্রমবিভাজন, শ্রেণি বৈষম্য
প্রভৃতি নতুন নতুন উপাদান যুক্ত হয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.২
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। প্রতœতাত্তি¡কেরা সমাজের কয়টি শ্রেণি বিভাজন (স্তর) করেছেন?
ক) চারটি খ) পাঁচটি
গ) ছয়টি ঘ) সাতটি
২। ঘবড়ষরঃযরপ শব্দটি
ক) ফরাসি খ) জার্মান
গ) ল্যাটিন ঘ) গ্রিক
৩। “নবপলীয় বিপ্লব” শব্দটি কে ব্যবহার করেন?
ক) গর্ডন চাইল্ড খ) ই. বি. টেইলর
গ) ডুর্খেইম ঘ) ম্যাক্স ওয়েবার

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]