তা¤্র যুগের আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা ব্রোঞ্জ যুগের আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট্য লৌহ যুগের আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে

মুখ্য শব্দ তা¤্র যুগ, ব্রোঞ্জ যুগ, লৌহযুগ।
প্রতœতাত্তি¡কযুগের শেষ পর্যায়গুলো যথাক্রমে তাম্রযুগ, ব্রোঞ্জযুগ এবং লৌহযুগ। তাম্রযুগে হাতুড়ি ও অন্যান্য
ধারালো অস্ত্র তৈরিতে তামার ব্যবহার শুরু হয়। তাছাড়া তামার মুদ্রা ও তামার তৈজসপত্রও ব্যবহৃত হয়।
এরপর তামা ও টিনের সংমিশ্রণে ব্রোঞ্জ নামক ধাতব পদার্থটি তৈরি হয়। ব্রোঞ্জযুগের বড় সাফল্য হলো লেখা আবিষ্কার।
লৌহযুগে কৃষি, শিল্প, যানবাহন, গৃহনির্মাণ, যন্ত্রপাতি তৈরি, যাতায়াত ব্যবস্থা তথা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে লোহার ব্যাপক ব্যবহার আধুনিক সভ্যতার জন্ম দেয়।
তাম্রযুগ
খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের শেষদিকে ইউরোপে এবং নিকট প্রাচ্যে তাম্র যুগের সূচনা ঘটে। তাম্রযুগে প্রবেশের মধ্য দিয়ে
নগরসভ্যতার সূচনা হয়। তবে তা¤্রযুগে পাথরের ব্যবহারও চলমান ছিল। তামার ব্যবহার ছিল সভ্যতার নতুন সংযোজন।
এ অবস্থাকে তাম্রপলীয় যুগ নামে আখ্যায়িত করা হয়। মানুষের প্রথম ব্যবহৃত ধাতু হল তামা। ধারণা করা হয় যে,
কৃষিযুগে মাটির হাঁড়ি-পাতিল পোড়াতে গিয়ে প্রথম তামা আবিষ্কৃত হয়। কারণ মালাকাইট (তামার আকর) পুড়লে তামা
গলে আলাদা হয়ে বেরিয়ে আসে। প্রাচীন মিশর, সিরিয়া ও অ্যাসিরিয়ার অধিবাসীরা ব্যাপকভাবে তামার ব্যবহার জানত।
বস্তুত সুমেরের নগরসভ্যতার গোড়াপত্তন হয়েছিল তামা ব্যবহারের মধ্যদিয়ে। তবে তামার দু®প্রাপ্যতা এবং এর কিছুকাল
পর ব্রোঞ্জযুগের আগমনে তাম্রযুগ দীর্ঘায়িত হয়নি।
পাথরের স্থলে তামার হাতিয়ার ও তৈজসপত্রের ব্যবহারের কারণে শ্রমের উৎপাদনশক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলে মানব সভ্যতায়
প্রথম অর্থনৈতিক শ্রেণিবিভাগ সৃষ্টি হয়। তামা বিক্রি করে কিছু লোক প্রচুর ধনসম্পদের মালিক হয়ে যায়। এমন
পরিস্থিতিতে শ্রেণিবিভক্ত সমাজে শক্তিশালী রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের বিকাশ ঘটে। প্রাচীন
মিশরের পিরামিড যুগের সভ্যতা ও সিন্ধুসভ্যতা তাম্র ও ব্রোঞ্জযুগের সভ্যতা।
ব্রোঞ্জযুগ
মেসোপটেমিয়া, মিশর, ভারত এবং চৈনিক সভ্যতায় ব্রোঞ্জের আবিষ্কার হয়। ধীরে ধীরে ব্রিটেন, সুইডেন, ডেনমার্ক ও উত্তর
জার্মানীতে এর বিস্তার ঘটে। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ পর্যন্ত ব্রোঞ্জযুগ স্থায়ী হয়। ব্রোঞ্জযুগে এসে
নগরসভ্যতা আরো বিকশিত হয়। নগরায়নের ফলে শ্রমবিভাগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসে। শ্রমবিভাগকে কেন্দ্র করে সমাজে
পৃথক শ্রেণি বিভাজন ও স্তরবিন্যাস গড়ে ওঠে। ব্রোঞ্জযুগে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। দ্রব্য বিনিময়ের পরিবর্তে ব্রোঞ্জের
তৈরি মুদ্রা অর্থনীতির বিকাশ ঘটে। এ যুগে লেখা আবি®কৃত হয়। ফলে শিক্ষা ও জ্ঞানরাজ্যে নতুন যুগের আগমন ঘটে।
ব্রোঞ্জ-নির্মিত বর্ম, শিরস্ত্রাণ, বর্শা, তলোয়ার ইত্যাদির ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। সামন্ত রাজাগণ ব্রোঞ্জের অস্ত্রের সাহায্যে
সজ্জিত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামন্তরাজ্যগুলো আক্রমণ ও দখল করে নতুন নতুন উপনিবেশ স্থাপন করে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। শ্রেণীবিন্যাস বিস্তৃত হওয়ায় সমাজকাঠামোতে গুণগত
পরিবর্তনের সূচনা হয়। বহিঃশত্রæর আক্রমণের আশংকায় নগরের চারপাশ প্রাচীর স্থাপন করা হয়। জলসেচ ও বাঁধ
নির্মাণের ওপর ভিত্তি করে মিশরে কেন্দ্রীয় সম্রাটের শাসন কার্যকর হয়। কার্ল উইটফোগাল (কধৎষ ডরঃঃভড়মবষ) যাকে
পানিভিত্তিক সভ্যতার (ঐুফৎড়ষরপ পরারষরুধঃরড়হ) উদ্ভব বলে অভিহিত করেছেন। আর যে সমস্ত অঞ্চলে জলসেচ ও বাঁধ
নির্মাণের প্রয়োজন ছিল না, সেখানে গড়ে ওঠে ছোট ছোট নগররাষ্ট্র। তীব্র শ্রেণিবিন্যাস, দাসভিত্তিক শ্রম ব্যবস্থা, অতিরিক্ত
কর আদায়ের প্রয়োজনে কঠোর ও শক্তিশালী শাসন ব্যবস্থার গোড়াপত্তন ঘটে। সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য এ সময় আইনের উৎপত্তি হয়।
লৌহযুগ
লোহার আবিষ্কার ও ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে ব্রোঞ্জযুগের একচেটিয়া অধিকার ও কর্তৃত্ব হ্রাস পেয়েছিল। ব্রোঞ্জ ছিল দু®প্রাপ্য ও
মূল্যবান ধাতু। এর ব্যবহার মূলত অভিজাত শ্রেণির হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল। সহজলভ্য ও দামে সস্তা হওয়ায় লোহার ব্যাপক
ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। সাধারণ মানুষও তাদের দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে লৌহ নির্মিত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে শুরু
করে। এভাবেই লৌহযুগ নামে নতুন এক সভ্যতার বিকাশ লাভ ঘটে। এশিয়া মাইনরে হিট্টাইটরা (ঐরঃঃরঃবং) প্রথম লোহার
আবিষ্কার ও এর ব্যবহার শুরু করে। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে মধ্যপ্রাচ্যে লোহার ব্যবহার শুরু হয়।
লোহার আবিষ্কার ও ব্যবহার সভ্যতার সামাজিক ভিত্তিকে অনেক মজবুত এবং এর পরিধিকে আরও প্রসারিত করে।
লৌহযুগে বর্ণমালাভিত্তিক লিখন পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়। ব্যবসাবাণিজ্য ও মুদ্রা-অর্থনীতি ব্যাপকতা লাভ করে। জাহাজ
চলাচল ব্যাপকভাবে শুরু হওয়ার ফলে যাতায়াতব্যবস্থা সহজ হয়। এর ফলে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আর্থ-
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক লেনদেন ও ভাবের আদান-প্রদান বৃদ্ধি পায়। গৃহনির্মাণ, বিভিন্ন ধরনের গৃহসামগ্রী, আসবাবপত্র,
রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কুঠার, লাঙলের ফলা, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে লোহার ব্যবহারের মাধ্যমে সভ্যতার দ্রæত উত্থান ঘটে।
উৎপাদন ব্যবস্থায় যন্ত্রশক্তির প্রয়োগ আরও সহজ হয়। ফলে শিল্পবিপ্লব ত্বরান্বিত হয়। মানুষের মধ্যে অন্ধবিশ্বাস, কাল্পনিক
ও অযৌক্তিক ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে যৌক্তিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটে। লৌহযুগে শিল্প, বাণিজ্য,
নগরায়ন প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পেশাভিত্তিক সামাজিক শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। এতে সামাজিক বৈষম্য ও শ্রেণিবিন্যাস
আরও জটিল ও বিস্তৃত হয় এবং সমাজকাঠামোতে আমূল পরিবর্তন আসে। লৌহযুগে গ্রিসে এক উন্নত গণতান্ত্রিক নগরসভ্যতার বিকাশ ঘটে।
সারসংক্ষেপ
মানব সভ্যতা বিকাশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর হচ্ছে তা¤্রযুগ, ব্রোঞ্জ যুগ ও লৌহ যুগ। এর মাধ্যমে মানুষ পাথরের যুগ
থেকে ধাতুর যুগে প্রবেশ করে। নগর সভ্যতার মাধ্যমে তারা আধুনিক সভ্যতার গোড়াপত্তন ঘটায়। বিনিময় ব্যবস্থার
পরিবর্তে মুদ্রা অর্থনীতি চালু হয়। কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা বিকশিত হওয়ার পাশাপাশি শিল্পভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। সর্বপ্রথম কবে তামার ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়?
ক) খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের প্রথম দিকে খ) খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের শেষদিকে
গ) খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দের শেষদিকে ঘ) খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের প্রথম দিকে
২। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে কোন অঞ্চলে লোহার ব্যবহার শুরু হয়?
ক) ইউরোপে খ) আফ্রিকায়
গ) মধ্যপ্রাচ্যে ঘ) আমেরিকায়

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]