সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বল সাঁওতাল সম্প্রদায়ের জীবনযাপন পদ্ধতি আলোচনা কর

মুখ্য শব্দ সাঁওতাল, সমতল, বরেন্দ্র অঞ্চল, কৃষিজীবী, পিতৃতান্ত্রিক, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী।
বাংলাদেশের অন্যতম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নাম সাঁওতাল। সাঁওতাল নামকরণের বিষয়ে সর্বসম্মত কোনো তথ্য নেই।
ভারতের সাঁওতাল পরগনার অধিবাসী হওয়ায় এ নামকরণ হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। বিভিন্ন স্থানে
বিক্ষিপ্তভাবে বাস করার পর ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৬ সালে সাঁওতালদের স্থায়ী এলাকা নির্ধারণ করে দেয়। ‘দামনি কো’নামের
এই এলাকাটি পরবর্তীতে সাঁওতাল পরগনা নামে পরিচিতি লাভ করে। সাঁওতাল ভাষায় ‘দামনি’- শব্দের অর্থ অঞ্চল এবং
‘কো’- শব্দের অর্থ পাহাড়। সাঁওতালরা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম অধিবাসী।
নৃতাত্তি¡ক পরিচয় ও আবাস: নৃতাত্তি¡কদের ধারণা, সাঁওতালরা আদি অস্ট্রালয়েড নরগোষ্ঠীভুক্ত। এদের চেহারা কালো,
নাক চ্যাপ্টা, ঠোঁট মোটা, চুল কোঁকড়ানো এবং দেহের উচ্চতা মাঝারি ধরনের। এজন্য এদেরকে প্রাক-দ্রাবিড়ীয় বলেও মনে
করা হয়। সাঁওতালরা ১২টি গোত্রে বিভক্ত। তার প্রথম সাতটি পিলচু হড়ম ও পিলচু বুড়ির সাত জোড়া সন্তান থেকে উৎপন্ন
এবং অবশিষ্ট পাচটি গোত্র পরবর্তীকালে উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়। উইলিয়াম হান্টারের মতে, অবশিষ্ট ৫টি গোত্র
সংকর বর্ণের। অর্থাৎ আর্য পিতা ও সাঁওতাল মাতা থেকে এদের উৎপত্তি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় দুই লক্ষের
বেশি সাঁওতাল বসবাস করেন। এদের মূল আবাসস্থল রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল। অর্থাৎ রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ,
চাঁপাইনবাবগঞ্জে অধিকাংশ সাঁওতাল নৃগোষ্ঠীর বসবাস। বগুড়া, রংপুর, পাবনা, ময়ংমনসিংহ এবং বৃহত্তর সিলেট জেলায়ও
সাঁওতালদের বসবাস রয়েছে। সিলেট অঞ্চলের চা-বাগানে কর্মরত শ্রমিকদের একটি অংশ সাঁওতাল নৃগোষ্ঠীর অন্তর্গত বলে
মনে করা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও অন্যান্য পার্বত্য অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে বনজঙ্গলের পতিত জমিতে
সাঁওতালরা বসবাস শুরু করে। পরে পতিত জঙ্গল পরিষ্কার করে চাষাবাদ আরম্ভ করে।
ভাষা, ধর্ম, পরিবার ও বিবাহ: সাঁওতালদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। এ ভাষা দুটি উপভাষায় বিভক্ত, ক) কারমেলি ও খ)
মাহলেস। ভাষাবিজ্ঞানীদের মতে, সাঁওতাল ভাষা মুন্ডারী ভাষার উপভাষা। আবার নৃবিজ্ঞানী হডসন মনে করেন, কোল
ভাষার উপভাষা হচ্ছে সাঁওতাল ভাষা। বাঙালিদের প্রভাবে তারা মাতৃভাষার সাথে বাংলাভাষাও গ্রহণ করেছে। সময়ের
পরম্পরায় সাঁওতাল ভাষার সাথে হিন্দি, মারাঠী, তেলুগু তামিল ইত্যাদি ভাষার সংমিশ্রণ ঘটেছে।
সাঁওতাল স¤প্রদায়ের মানুষ প্রধানত হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীরা হিন্দুধর্মের রীতিনীতি ও ধর্মীয়
আচার-অনুষ্ঠান পালন করে। অন্যরা খ্রিস্টান ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। সাঁওতালদের প্রধান গ্রামদেবতার নাম
‘মারাংবুরো’। এই দেবতাকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য তাঁর উদ্দেশ্যে সাদা মোরগ ও সাদা ছাগল উৎসর্গ করা হয়।
সাঁওতালদের মধ্যে পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রচলিত। পিতাই পরিবারের প্রধান। সাঁওতালদের মধ্যে বর্তমানে একক বা
অনুপরিবার লক্ষ করা যায়। সাঁওতালদের মধ্যে পিতার সম্পত্তিতে পুত্রের সমান অধিকার থাকে। কিন্তু পিতার সম্পত্তিতে
কন্যাসন্তানের কোনো অধিকার নেই। সাঁওতালদের মধ্যে একক বিবাহ প্রচলিত। তবে স্বগোত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ। সাধারণত
ছেলেরা ১৯/২০ এবং মেয়েরা ১৫/১৬ বছর বয়সে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ (তালাক) এবং একাধিক বিবাহ প্রচলিত আছে।
খাদ্য, অর্থনীতি, পোশাক ও সমাজ পরিবর্তন: ভাত সাঁওতালদের প্রধান খাদ্য। ভাতের সাথে ডাল এবং শাক-সবজি
তারা খায়। তাছাড়া শূকর, মুরগি, ইঁদুর, কাঠবিড়ালী, গুঁইসাপ, পাখি, লাল পিঁপড়া ইত্যাদি তাদের পছন্দের খাবার।
উৎসব-অনুষ্ঠান এবং নৃত্যের সময় তারা চাউল থেকে তৈরি ‘হাড়িয়া’ নামক মদ পান করে।
সাঁওতাল অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। ভূমিহীন হওয়ার কারণে ৯০ শতাংশ সাঁওতাল কৃষিশ্রমিক হিসাবে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে
কাজ করে। মহিলা-পুরুষ উভয়ই মাঠে কাজ করে। কৃষি ছাড়াও জেলে, কুলি, দিনমজুর, চা-শ্রমিক, রিকশা-ভ্যানচালক
প্রভৃতি কাজে সাঁওতাল নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ লক্ষ করা যায়।
সাঁওতাল মেয়েরা সাধারণত কাঁধের উপর জড়িয়ে শাড়ি পরে। তবে ঘোমটা দেয় না। মেয়েরা হাতে রাং, লোহা কিংবা
শাঁখের বালা পরে। পুরুষেরা লুঙ্গি পরে। কোনো কোনো পুরুষ গলায় মালা ও হাতে বালা ব্যবহার করে। পুরুষ ও
বালকদের ধুতি পরতে দেখা যায়।
সাঁওতালদের মধ্যে শিক্ষিতের হার খুব কম। ইদানিং তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। কোনো কোনো
সাঁওতাল এলাকায় তাদের নিজস্ব ভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কারণে সাঁওতাল সমাজে পরিবর্তন এসেছে।
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন অধিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হচ্ছে সাঁওতাল। সমতলের এ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী
প্রধানত বরেন্দ্র অঞ্চলে বসবাস করে। তাদের মূলত কৃষিজীবী। তবে ভ‚মিহীন হওয়ায় অধিকাংশ সাঁওতাল কৃষিশ্রমিক হিসেবে
কাজ করেন। নিজস্ব ভাষা থাকলেও তাদের মধ্যে শিক্ষার হার খুবই কম। তবে পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় তারাও ক্রমশ
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৪.৮
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। সাঁওতালরা কয়টি গোত্রে বিভক্ত?
ক) ১০টি খ) ১২টি
গ) ১৫টি ঘ) ১৮টি
২। ‘ কারমেলি’ ও ‘ মাহলেস’ কী?
ক) সাঁওতাল ভাষার দু’টি উপভাষা খ) সাঁওতালদের ধর্ম
গ) সাঁওতালদের গোত্র ঘ) সাঁওতালদের উৎসব
৩। ‘মারাংবুরো’ কী?
ক) সাঁওতালদের বর্ষবরণ খ) সাঁওতালদের মন্দিরের নাম
গ) সাঁওতালদের বিবাহপ্রথা ঘ) সাঁওতালদের প্রধান গ্রামদেবতা

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]