উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ, উচ্চ রক্তচাপ হৃদপিণ্ডের অসুখে উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রেণের কিছু ঘরোয়া প্রতিকার

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ সব সময় বোঝা সম্ভব নয় । অনেক সময় দেখা যায় কোনও রূপ লক্ষণ ছাড়াই এ ব্যাধি নিয়ে মাসের পর মাস অনেকে জীবন যাপন করছে।
বিভিন্ন অঙ্গের লক্ষণ বোঝার উপায়
মাথা ব্যথা, বিশেষতঃ মাথার পশ্চাৎভাগ এবং ঘাড়। বুক ধড়ফড় করে এবং ঘুম হয় না। সকালে ঘুম থেকে উঠলে পা ব্যথা হয়ে থাকে এবং বেলা যখন বাড়ে তখন ব্যথা কমে যায়। রক্তচাপ থাকলে হৃদপিণ্ডের অনেক ক্ষতি সাধিত হয়। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে অনেক সময় মাথা ঘোরে, কানে ভোঁ ভোঁ করে এবং অল্পতেই বিরক্ত হয়ে যায়। অল্প পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট আরম্ভ হয়ে যায় এবং সেই সাথে বুকে ব্যথা হয় ও রাতে হাঁপানি হয়। উচ্চ রক্তচাপের ফলে যদি মূত্রাশয়ের রোগ হয় তবে শরীর ফ্যাকাশে হয়ে মুখ এবং পা ফুলে যায় সেই সাথে বমিও হয়।
উচ্চ রক্তচাপের ফলে যদি কিডনী ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তবে রাতের বেলা ঘন ঘন প্রস্রাব হয় এবং প্রসাবের সাথে রক্তও যেতে পারে। যদি হাঁটার পর পায়ের মাংসপেশী ব্যথা হয়, তবে বুঝতে হবে পায়ের ধমনী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
অতিরিক্ত জটিলতা দেখা দিলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, পক্ষাঘাত গ্রস্থ হতে পারে এমনকি কথা বলাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে ।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রেণের কিছু ঘরোয়া প্রতিকার
ধূমপান বন্ধ করুন ঃ আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপের রোগী হয়ে থাকেন তবে প্রথমেই আপনাকে ধূমপান বর্জন করতে হবে। ধূমপান রক্তনালীর দেয়ালকে শক্ত করে রক্তের ঘনত্ব বাড়ায়।
অতিরিক্ত লবণ খাবেন না ঃ রান্নায় যতটুকু লবণ লাগে ঠিক ততটুকুই লবণ খাবেন। ভাতের সাথে লবণ খাবেন না। লবণাক্ত খাদ্য এড়িয়ে চলুন। যেমন- চিপ্‌স, সস, মাখন, পেস্ট্রি, নোনতা বিস্কুট, টিনজাত খাদ্য ইত্যাদি ।
চিৎকার চেঁচামেচি বন্ধ করুন : মৃদু স্বরে কথা বলার অভ্যাস রপ্ত করুন এতে করে রাগের মাত্রাও কমে যাবে। রাগের মাত্রা বেড়ে গেলে রক্তচাপ বিপদসীমা ছাড়িয়ে যায়। এ জন্য অযথা চীৎকার চেঁচামেচি করবেন না, মনকে বশে রাখুন এবং মৃদুস্বরে কথা বলুন।
দেহের ওজন কমাবার চেষ্টা করুন ঃ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে স্থূলতা এবং উচ্চ রক্তচাপের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক বিদ্যমান। তাই আপনি যদি মোটা হয়ে থাকেন তবে দেহের ওজন কমিয়ে ফেলুন।
নিয়মিত এবং পরিমিত ব্যায়াম করুন ঃ নিয়মিত ব্যায়াম করুন এতে করে দেহের ফিটনেস বাড়বে এবং রক্ত চাপ স্বাভাবিক থাকবে। একজন ব্যক্তির ব্যায়ামের ধরন নির্ভর করবে তার বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং সুযোগের ওপর। সপ্তাহে অন্তত তিনদিন ২০ মিনিট করে হাঁটুন, সাইকেল চালান অথবা সাঁতার কাটুন। এটুকুই আপনার শরীর চর্চার জন্য যথেষ্ট।
কফি পানের অভ্যাস বন্ধ করুন : কফি পানের অভ্যাস থাকলে তা বন্ধ করুন এবং যাদের অভ্যাস নেই তারা তা রপ্ত করবেন না ।
রোজ রসুন খাবেন ঃ দিনে তিন চার কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন।
মাছ খাবেন ঃ সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে করে 'ওমেগ্রা থ্রি' নামে একটি ফ্যাটি এসিড নিয়ন্ত্রিত হয় ।
প্রচুর পটাশিয়াম যুক্ত খাবার খান : বিভিন্ন ধরনের সবুজ টাটকা শাক সবজি, মটর শুঁটি, সীম, কমলার রস, টাটকা মাছ, মুরগীর মাংস নিয়মিত এবং যথেষ্ট পরিমাণে খাবেন ।
নিয়মিত ভ্রমণ করুন ঃ রোজ দু'বেলা স্বাভাবিক গতিতে অন্তত ২ কিলোমিটার হাঁটুন।
প্রতিদিন ভিটামিন 'সি' খাবেন ঃ প্রতিদিন নিয়মিত ভিটামিন 'সি' খেতে যদি পারেন তবে রক্তচাপ অনেক কমে যাবে। এজন্য রোজ অন্তত একটি করে টক জাতীয় ফল অর্থাৎ লেবু, আমলকী, পেয়ারা, টমেটো ইত্যাদি খাবেন।
ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খান : গবেষকদের মতো ভিটামিন 'সি'-র মতো ক্যালসিয়ামও রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে থাকে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা রোজ দু'কাপ করে মাঠাতোলা দুধ খেতে পারেন।
মনকে প্রফুল্ল রাখুন : অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা রক্তচাপের অন্যতম শত্রু । উৎকণ্ঠা এবং উত্তেজনা পরিহার করে চলুন। ভাল ভাল বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের সাথে সুন্দর সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। অযথা পারিবারিক অশান্তি মানসিক অশান্তির মূল কারণ। দৈনিক ৮ ঘণ্টা নিশ্চিন্তভাবে ঘুমান। যাদেরকে পছন্দ হয় এমন লোকের সাথে মেলামেশা করুন, গান শুনুন, ছবি আঁকুন। যা ভাল লাগে তাই করুন।
নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করুন ঃ চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ১৫ দিনে একবার কিংবা মাসে একবার রক্তচাপ পরীক্ষা করুন ।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুন ঃ নিয়মিত নামাজ পড়ার চেষ্টা করুন। সেই সাথে সময় পেলে কোরআন তেলওয়াত করুন। এতে রাগ উদ্বেগ ও মানসিক অবসাদ কমবে।
উপরোক্ত নিয়মগুলো একজন উচ্চ রক্তচাপের রোগী ছাড়াও সুস্থ কোনও ব্যক্তিও যদি মেনে চলেন তবে উচ্চ রক্তচাপ রোধ করা সম্বব।
হৃদপিন্ডের অসুখ ও করণীয়
বয়স্ক লোকদের বিশেষ করে যারা মোটা, যারা ধূমপান করেন কিংবা যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে এদের মধ্যে হৃদপিণ্ডের সমস্যা দেখা দেয়।
হৃদপিণ্ডের অসুখে উপসর্গগুলো
১। শ্বাস নিতে কষ্ট ।
২। বুক ধড়ফড় করা।
৩। যদি এনজাইনার ব্যথা হয় তবে হার্ট অ্যাটাকের মতো প্রচন্ড ব্যথা না হলেও বুকের ঠিক মাঝখানে বেশ ব্যথা হয়। আর এ ব্যথা হয় সাধারণত শারীরিক পরিশ্রমের পর যেমন- ব্যায়াম করলে, দৌড়ালে বা সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠলে ।
৪। যদি হার্ট অ্যাটাক হয় তবে বুকের মাঝখানে ব্যথা হয় এবং এ ব্যথা খুব তীব্র হয়, ভীষণভাবে শরীর ঘামতে থাকে এবং অনেক সময় রোগী অজ্ঞান পর্যন্ত হয়ে যায়।
হার্ট অ্যাটাক রুখবেন কি করে
১। যদি ধূমপান করে থাকেন তবে তা বন্ধ করে দিন। আর যদি না পারেন তবে কমিয়ে দিন ।
২। হার্টের গোলমাল থাকলে কঠোর পরিশ্রম করা উচিত নয়।
৩। চর্বি জাতীয় খাবার কমিয়ে দিন।
৪। ফল, শাক সবজি, মুরগির মাংস, মাছ ইত্যাদি বেশি করে খাবেন। সেই সাথে ফাইবার যুক্ত খাবার খাবেন যেমন- রুটি ইত্যাদি।
.
৫। প্রতিদিন পরিমিতভাবে কিছু ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। যেমন- যোগাসন, এরোবিক্স কিংবা কোনও খেলা। যদি ব্যায়ামগুলো করতে না পারেন তবে হাঁটার চেষ্টা করুন।
৬। স্ট্রেচ বা কাজের চাপ কমান। এ ব্যাপারে করণীয় কি ও আপনার চাহিদার সীমারেখাকে বাস্তবমুখী করুন। উচ্চাকাঙ্খা ভাল তবে বেশি উচ্চাকাঙ্খা হার্টের পক্ষে ক্ষতিকর। যদি কোনও একটি লক্ষ্যে পৌছাতে গিয়ে আপনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তবে লক্ষ্যে পৌঁছে আপনার লাভটা কোথায় ? যদি সাফল্যের মধুর ফলই ভোগ করতে না পারলেন তবে সাফল্যের সার্থকতা রইল
কোথায় ?
দিনের কোনও না কোনও সময় একান্ত নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখুন। নিজের সঙ্গে একা থাকাটা একান্ত জরুরী।
হার্টের রোগী যদি বাড়িতে থাকে, তবে কিছু নিয়ম বাড়ির লোকদের জানা একান্ত প্রয়োজনীয়
পালস দেখা : প্রথমেই রোগীর পালস দেখবেন। পালস যদি না পেয়ে থাকেন তবে ১০ মিনিটের মধ্যেই ম্যাসেজ শুরু করে দিন। যখন ম্যাসেজ শুরু করবেন তখন রোগীকে শুইয়ে মুখে আঙ্গুল দিয়ে দেখবেন মুখে কিছু আছে কি- না। যদি মুখে থুতু বা অন্য কোনও কিছু থেকে থাকে তবে তা সরিয়ে
ফেলবেন।
এরপর ডাক্তার ডাকুন এবং সেই সাথে বুক ম্যাসেজ করবেন, এরপর মুখে মুখ দিয়ে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস চালাবেন। প্রথমেই রোগীর নাকটা টিপে মুখটা হা করিয়ে নেবেন। এরপর মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস নিয়ে শ্বাস ছাড়বেন। এ কাজ খুব জোরে করবেন যাতে করে রোগীর বুকটা খুব ফুলে ওঠে।
ডান হাতের চেটোর শেষ অংশটুকু দিয়ে বুকের মাঝ বরাবর ম্যাসেজ
করুন।
মাটিতে বসে পড়ুন। ডান হাতের চেটোর ওপর বাম হাতটা রাখুন। এরপর চাপ প্রয়োগ করুন। চার সেকেন্ড পর পর তিনবার করে চাপ প্রয়োগ করুন । ছ'বার হয়ে গেলে আবার মুখে বাতাস দিন। চাপটা খুব জোরে যেন না হয় ।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]