ইতিহাসের শাখা হিসেবে ধর্মীয় ও ভৌগোলিক ইতিহাসের গুরুত্ব তুলে ধর।

উত্তর ভূমিকা : ইতিহাস অতীতের দর্পণস্বরূপ। সমাজের ভৌগোলিক ও ধর্মীয় বিষয়াদি ইতিহাসবিষয়ক আলোচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস চর্চার শুরু পূর্ব থেকেই প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের জীবনযাত্রাকে নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত করতো । আর মানুষের কর্ম ও জবিনধারাকে প্রভাবিত করার মধ্যদিয়ে কার্যত ইতিহাসের গতি প্রকৃতি নির্ধারিত হয়। অতঃপর ধীরে ধীরে যখন মানুষ তাদের কর্মকাণ্ডের সাথে ধর্মীয় বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করেছে তখন থেকে ইতিহাস বিষয় আলোচনায় ভৌগোলিক ও ধর্মীয় ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
• ভৌগোলিক ও ধর্মীয় ইতিহাস : নিম্নে ভৌগোলিক ও ধর্মীয় ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
ক. ভৌগোলিক ইতিহাস : নিম্নে ভৌগোলিক ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. ভৌগোলিক ইতিহাস পরিচিতি : ইতিহাস ও ভূগোল পরস্পরের পরিপূরকভাবে সম্পর্কিত। একটি ছাড়া অপরটি পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। 'ভূ' শব্দটির অর্থ পৃথিবী এবং ‘গোল' শব্দটির অর্থ গোলাকার, অর্থাৎ 'ভূগোল' শব্দটির - দ্বারা গোলাকার পৃথিবীকে বুঝানো হয়। আর ভৌগোলিক ইতিহাস বলতে মূলত গোলাকার এ পৃথিবীর ইতিহাসকে বুঝানো হয় ।
২. ভৌগোলিক ইতিহাসের বিষয়বস্তু : ভূগোল এর আলোচ্য সূচির সাথে ভৌগোলিক ইতিহাসের আলোচ্য সূচির তেমন কোনো বড় পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। ভূগোল ও ভৌগোলিক ইতিহাসের পার্থক্য করা হয় শুধুমাত্র কালের পরিবর্তনের নিরিখে। ভৌগোলিক ইতিহাসে কোনো দেশ বা অঞ্চলের বিষয়বস্তু পূর্বেকার ভূপৃষ্ঠের উপাদান, শিলা, পাহাড়, পর্বত, নদনদী, সাগর মহাসাগর, জলবায়ু, অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ প্রভৃতি বিষয়বস্তু হিসেবে বিবেচিত হয়।
৩. ভৌগোলিক ইতিহাসের উপযোগিতা : ভৌগোলিক ইতিহাসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, পৃথিবীতে আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ মহাদেশ, সাগর মহাসাগর, দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি নিয়ে ভৌগোলিক ইতিহাস আলোচিত বিষয়। ভূগোল শাস্ত্রের এসব বিষয় সম্পর্কে ভৌগোলিক ইতিহাস আমাদেরকে সঠিক অবস্থানগত দিক নির্দেশনা দেয়। ভৌগোলিক ইতিহাস ব্যতীত কোনো দেশের বা অঞ্চলের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব নয় । ভৌগোলিক ইতিহাস বিশাল পৃথিবীকে বিভিন্ন দেশ, মহাদেশ, মহাসাগর, উপসাগর ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভিন্ন জাতির অবস্থানের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটিয়ে দেয় । এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশ এবং মহাসমুদ্র যাত্রা পথে ভৌগোলিক ইতিহাস আমাদেরকে সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দিয়ে গন্তব্যে পৌছতে সাহায্য করে।
৪. মানুষের ইতিহাস তুলে ধরে : ভৌগোলিক ইতিহাস শুধু এ সুবিশাল পৃথিবীর কোথায় কোনো জাতির অবস্থান শুধু তুলেই ধরে না, সেসব দেশের জনগোষ্ঠীর জীবন চরিত্র সম্পর্কেও আমাদের ধারণাও প্রদান করে। ভৌগোলিক ইতিহাসে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে ভৌগোলিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভৌগোলিক সম্পর্কের কারণে তাদের মন ও মেজাজের পরিবর্তন, পোশাক পরিচ্ছদ, প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ফলে ভৌগোলিক ইতিহাস ভূগোলের বর্ণনার পাশাপাশি মানবজীবনের অতীত বিচিত্র কর্মকাণ্ডের বর্ণনা উপস্থাপন করে থাকে ।
ক. ধর্মীয় ইতিহাস : নিম্নে ধর্মীয় ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. ধর্মীয় ইতিহাস পরিচিতি : ধর্মের উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ, রীতিনীতি, আচারানুষ্ঠান, ধর্মের পরিবর্তন, সংস্কার, ধর্মকে কেন্দ্র করে নানাবিধ যুদ্ধবিগ্রহ প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে ইতিহাসের যে শাখা গড়ে উঠেছে তা ধর্মীয় ইতিহাস নামে পরিচিতি । ইতিহাসে বিভিন্ন সময়কালে ধর্মীয় ইতিহাসের প্রভাব এক রকম ছিল না। তা সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে। সুপ্রাচীন কাল থেকেই ধর্মীয় ইতিহাসের সূচনা হয়। পুরোপলীয় যুগের মানুষ টোটেম বিশ্বাসকে ভিত্তি করে তাদের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতির সূচনা ঘটায় । এরপর নবপোলীয় যুগের মানুষ সাধারণত ভীতিকর ও কল্যাণকারী নানাবিধ প্রাকৃতিক শক্তির ওপর দেবত্ব আরোপের রীতির প্রচলন করে। তাছাড়া এ সময় বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনা যেমন আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, ভূমিকম্প, সূর্য, পাহাড়, দাবদাহ প্রভৃতির ওপর দেবত্ব আরোপ করতে থাকে। উপর্যুক্ত দুই যুগেই মানুষ পুনর্জন্মে প্রবলভাবে বিশ্বাস করতো। তাদের ধারণা ছিল সমাহিত করার পর মৃত লোকটি পুনরায় জীবিত হবে এবং তার ব্যবহার্য দ্রব্যাদির প্রয়োজন হবে। এজন্য তারা মৃত ব্যক্তির সাথে সমাধিতে তার ব্যবহার্য দ্রব্যাদি দিয়ে আসার প্রথা চালু করে। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এভাবেই শুরু হয় ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মের ইতিহাস ।
২. ধর্মীয় ইতিহাসের বিষয়বস্তু : নবি ও রাসুল (আ.)দের প্রচারিত ধর্ম ছাড়াও প্রাচীন যুগ থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন প্রকার ধর্ম নিজেদের মধ্যে প্রতিপালন করতে থাকে। প্রাচীন মিসরীয়রা সূর্য দেবতা ‘রে' বা ‘রা’ এবং নীলনদের দেবতা হিসেবে ‘ওসিরিস’ এর উপাসনা করতো। প্রাচীন পারসিকরা জরথুস্ত্রবাদ, মিথ্রাসবাদ, মানিবাদ প্রভৃতি ধর্ম বিশ্বাসের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো। প্রাচীন গ্রিকরা জিউস, এ্যাপোলো, এথেনা এবং প্রাচীন রোমকরা জুপিটার, মিনার্ভা, ভেনাস, নেপচুন প্রভৃতি দেবদেবীর উপাসনা করতো। এ সব দেবদেবী ও নানাবিধ ধর্মবিশ্বাসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে ধর্মীয় ইতিহাসের বিষয়বস্তু।
৩. ধর্মীয় ইতিহাসের গুরুত্ব : সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে ধর্মীয় ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বৌদ্ধধর্মের অহিংস নীতি, খ্রিস্টধর্মের আর্তের সেবামূলক আদর্শ, ইসলাম ধর্মের সাম্যবাদী আদর্শমূলক ইতিহাস সামাজিক সংহতিকে সুদৃঢ়করণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধর্মীয় ইতিহাস মানুষকে যথার্থভাবে পরধর্মের প্রতি সহিষ্ণু ও উদার মনোভাবাপন্ন করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। নৈতিক চরিত্রের পবিত্রতা অর্জনের জন্য মহাপুরুষদের জীবনী তথা মহাপুরুষদের ইতিহাস অধ্যয়ন একান্ত প্রয়োজনীয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইতিহাস হলো মানবসমাজের অতীত বিচিত্র কার্যাবলির বিবরণ। আর মানুষের অতীত বিচিত্র কার্যাবলির ভিন্ন বিষয়বস্তুগত ভিন্নতাকে লক্ষ করে ভৌগোলিক ইতিহাস ও ধর্মীয় ইতিহাসের শাখা গড়ে উঠেছে। ইতিহাসের এ দুই শাখা মানুষের ধর্মীয় ও ভূগোলকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা মানুষের জীবনব্যবস্থার পরিবর্তন প্রভৃতি সম্পর্কে আমাদেরকে অবহিত করে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]