ইতিহাস বিজ্ঞান না কলা ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর ভূমিকা : ইতিহাস ও বিজ্ঞান দুটি ভিন্ন আঙ্গিকের বিষয়। ইতিহাস বিজ্ঞান না কলা এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিকগণের অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যের সাথে ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। আবার কেউ কেউ বলেছেন ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য কলার বৈশিষ্ট্যের অনুরূপ । ফলে ইতিহাসের প্রকৃতি নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে ।
● ইতিহাস বিজ্ঞান না কলা : ইতিহাস বিজ্ঞান না কলা এ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
ক. ইতিহাসকে বিজ্ঞান না বলার যুক্তি :
১. ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত তথ্যসমূহ একক বা অদ্বিতীয় এবং ইতিহাস পুনঃপুন আবর্তিত হয় অর্থাৎ History repeats itself. ২. ইতিহাস সাধারণত স্বাধীন ইচ্ছা সম্পন্ন অতীত কার্যাবলি ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট ধ্যানধারণা নিয়ে পর্যালোচনা করে থাকে। স্বাধীন ইচ্ছা দ্বারা সম্পাদিত মানবিক কার্যাবলি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার সাধারণ সূত্র নিরূপণের ক্ষেত্রে কখনও কোনো মালমসলা বা উপকরণ সংগ্রহ করতে পারে না।
৩. পদার্থ ও রসায়নবিদ্যা যে অর্থে বিজ্ঞান ঠিক সে বিবেচনায় ইতিহাসকে বিজ্ঞান হিসেবে গণ্য করা হয় না। কারণ পদার্থবিদ্যা ও রসায়নবিদ্যার কিছু সুনির্দিষ্ট সূত্র রয়েছে এবং এ সূত্র ধরে কাজ করলে সবসময় একই ফল পাওয়া যায়। অন্যদিকে, ইতিহাসের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায় না। ইতিহাসের কোনো সাধারণ সূত্র নেই বা ইতিহাসে কোনো ঘটনার বিশ্লেষণ সবসময় একই ধরনের ফল পাওয়া যায় না । তাই ইতিহাস সে অর্থে বিজ্ঞান নয় ।
খ. ইতিহাসকে কলা বলার যুক্তিসমূহ : মানুষের অতীত কর্মের প্রামাণিক দলিল হলো ইতিহাস । মানুষ ও তার অতীত কর্মই ইতিহাসের প্রধান উপজীব্য বিষয়,। মানুষের এ অতীতের মধ্যে তার হাসি-কান্না, দুঃখ-বেদনা মিশ্রিত জীবন প্রণালি ও মানুষের মানবিকতা সংশ্লিষ্ট কর্মকে আশ্রয় করে বিনির্মিত হয় তা সন্দেহাতীতভাবে কলাবিদ্যার অন্তর্ভুক্ত।
কলা মানবিকবিদ্যার অন্তর্ভুক্ত। মানবিকবিদ্যার যেসব বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার ইতিহাসের মধ্যে তার বাস্তব প্রতিফলন রয়েছে। যেমন—
১. কলাবিদ্যা মানুষের কথা তুলে ধরে ।
২. কলাবিদ্যা সব মানুষের আনন্দ-দুঃখ মিশ্রিত অতীত জীবনকে শৈল্পিক বর্ণনার মাধ্যমে পাঠকের হৃদয় অঙ্গনে গ্রথিত করে । ৩. এটি বিজ্ঞানের নিয়ম ও নির্মমতাকে রসবোধ সৃষ্টি করার মাধ্যমে মানুষের কাছে সাবলীলভাবে তুলে ধরে। উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কলাবিদ্যা হিসেবে উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর সবই ইতিহাসে প্রতিফলিত রয়েছে । ইতিহাসে কলাবিদ্যার অংশ হিসেবে মানুষের জীবন ও কর্মের প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত রয়েছে। আর এজন্য ইতিহাসকে কলা ও মানববিদ্যার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে ইতিহাসকে অভিহিত করাই শ্রেয়।

ইতিহাসের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর ।

উত্তর ভূমিকা : ইতিহাস ও বিজ্ঞান দুটি ভিন্ন আঙ্গিকের বিষয় হলেও তাদের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক বিদ্যমান। কোনো ঘটনার সত্য জানার জন্য পরিচালিত গবেষণা ও অনুসন্ধানের ধরন বিবেচনায় ইতিহাসকে বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করা হয় । বিজ্ঞান বলতে আমরা যা কিছু বুঝি ইতিহাস বলতে আমরা ঠিক সেরকম না বুঝালেও তার কাছাকাছি অর্থে ইতিহাস ও বিজ্ঞানকে সম্পৃক্ত করতেই পারি ।
• ইতিহাসের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক : বিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ Science ল্যাটিন শব্দ Scientea থেকে এসেছে । যার অর্থ হলো জানা। ইতিহাসের ইংরেজি শব্দ History ল্যাটিন শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ হচ্ছে সত্যকে উদঘাটনের জন্য পরিকল্পিত অনুসন্ধান। বিজ্ঞান হলো অজানাকে আবিষ্কারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, তেমনিভাবে ইতিহাসও অজানাকে জানার জন্য ঐকান্তিকভাবে চেষ্টা করে থাকে । তাই ইতিহাস ও বিজ্ঞানের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
নিম্নে ইতিহাসের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা করা হলো :
১. গবেষণা পদ্ধতি : নিজস্ব পদ্ধতি ও সত্যানুসন্ধানের মাধ্যমে ইতিহাস চর্চা পরিচালিত হয়। এ কারণে ইতিহাসকে বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞান বলা খুবই যুক্তিসংগত। ঐতিহাসিকগণ বিজ্ঞানের আদলে মানুষের অতীত কর্মকাণ্ডকে তাদের গবেষণার বিষয়বস্তু হিসেবে নির্ধারণ করে বিভিন্ন প্রক্রিয়া, পরীক্ষানিরীক্ষা ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করে থাকেন ।
২. সত্য উদঘাটনে : ইতিহাস নিয়মানুগভাবে আহরিত পরস্পর সম্পর্কিত জ্ঞান । এজন্য ইতিহাসকে বিজ্ঞান বলা যায় । এটি বিমূর্ত না হয়ে মূর্ত বিজ্ঞান এবং এটি কোনো সাধারণ বিষয়ে সত্যে উপনীত না হয়ে এককভাবে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে সত্য উদঘাটন করে থাকে ।
৩. গবেষণাগার ক্ষেত্রে : গবেষণার জন্য পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রভৃতির যেমন পরীক্ষাগার আছে ইতিহাসের ঠিক তেমন কোনো পরীক্ষাগার নেই। তবে হাজার হাজার বছরের পুরানো জীবাশ্ম, অনুরূপ মুদ্রা, বিভিন্ন প্রত্নবস্তু প্রভৃতি নিয়ে গবেষণা করে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য ঐতিহাসিকের রয়েছে যথোপযুক্ত গবেষণাগার। সেজন্য ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, অনুসন্ধিৎসুকর্ম ও গবেষণামূলক পদ্ধতিগত দিক বিবেচনায় ইতিহাসকে বিজ্ঞানের পর্যায়ভুক্ত বলা চলে ।
৪. তথ্য যাচাইয়ে : তাছাড়া সমালোচনামূলক বিজ্ঞান হিসেবে ঐতিহাসিকগণ ইতিহাসকে নিম্নোক্ত তিনটি কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যেমন— i. সব প্রকার প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটনের লক্ষ্যে সংঘবদ্ধ অনুসন্ধান, ii. উদঘাটিত ও প্রাপ্ত তথ্যসমূহের যথার্থতা নিরূপণের জন্য প্রকৃত বিচার বিশ্লেষণ ও iii. তথ্যসমূহের সঠিক, নিখুঁত ও বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান । যথাযথ ও বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনার জন্য ঐতিহাসিকগণ একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগিয়ে যান। তাই ইতিহাসকে এসব কারণে বিজ্ঞান বলা শ্রেয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাসের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক পর্যালোচনায় দেখা গেল যে এটি হুবহু বিজ্ঞান নয়, তবে পদ্ধতিগতভাবেও সত্য উদ্ঘাটনের অনুশীলনে ইতিহাস বিজ্ঞানের পর্যায়ভুক্ত। তাই ইতিহাসকে বিজ্ঞান হিসেবে উপলব্ধি করে এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি ।

ইতিহাসের সাথে বিজ্ঞানের বৈসাদৃশ্যগুলো লেখ ।

উত্তর ভূমিকা : ইতিহাস ও বিজ্ঞান দুটি ভিন্ন আঙ্গিকের বিষয়। ইতিহাসের সাথে বিজ্ঞানের গভীর সম্পর্ক থাকলেও তাদের মধ্যে বেশ কিছু বৈসাদৃশ্য রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে প্রক্রিয়াগত দিক থেকে ইতিহাস ও বিজ্ঞানের মধ্যে বিস্তর বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায় । বিজ্ঞান বলতে আমরা যা বুঝি ইতিহাস বলতে তা বোঝায় না ।
• ইতিহাসের সাথে বিজ্ঞানের বৈসাদৃশ্যসমূহ : নিম্নে ইতিহাসের সাথে বিজ্ঞানের বৈসাদৃশ্যগুলো আলোচনা করা হলো : ১. সত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে : যেসব পণ্ডিত ইতিহাসকে বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকার করতে চান না তাদের মধ্যে স্পেন্সার, ওয়ালপোল্ড প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাদের মতে, বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যগুলো বিজ্ঞানের মতো করে ইতিহাসে প্রতিফলিত হয় না। যেমন— দুই অনু হাইড্রোজেন ও এক অনু অক্সিজেন একত্রিত হয়ে পানি উৎপন্ন হয়। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত সত্য। কিন্তু ইতিহাসে এরূপ সত্য প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয় ।
২. তথ্যগত পার্থক্য : ইতিহাসকে যারা বিজ্ঞানের পর্যায়ভুক্ত মনে করেন না তাদের যুক্তি হলো ইতিহাসের কোনো প্রামাণ্য সূত্র নেই । তাছাড়া ইতিহাসের বিষয়বস্তু ও ব্যবহৃত তথ্যের অনেক সময় পরিবর্তন লক্ষ করা যায় । অর্থাৎ তারা ইতিহাসের অকাট্যতা- ও প্রামাণ্যতার বৈশিষ্ট্যকে স্বীকার করতে প্রস্তুত নন। প্রকৃত অর্থে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে প্রাচীন, মধ্যযুগ, এমনকি আধুনিক যুগের অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত যে ইতিহাস রচিত হয়েছে সেগুলোর বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা মতানৈক্য থাকতে পারে। কারণ উনিশ শতকের পূর্ব পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে প্রামাণ্য তথ্যের ভিত্তিতে ইতিহাস রচনা করা সম্ভব হয়নি ।
৩. উপাদানগত পার্থক্য : ইতিহাস মানুষের জীবনধারণের উপাদান ধর্ম, সংস্কৃতি, অতীত ব্যবসা বাণিজ্য ও বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান নিয়ে সত্যানুসন্ধানের লক্ষ্যে গবেষণা করে। কিন্তু বিজ্ঞানের গবেষণার বিষয়বস্তুসমূহ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে । বিজ্ঞান মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিক যেমন— স্বাস্থ্যবিদ্যা, আলো, তরঙ্গ, মহাকর্ষ, অভিকর্ষ, খাদ্যবস্তুর বিভিন্ন উপাদান, আমাদের পারিপার্শ্বিক ভৌত ও রাসায়নিক জগৎ সম্পর্কে আলোচনা করে। বিষয়বস্তুগত দিক থেকেও এ দুই বিষয় একে অপরের সাথে সংশ্লিষ্ট এমন শাস্ত্র ভাবার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
৪. সংস্কৃতির বিকাশে : সংস্কৃতির উত্তরোত্তর বিকাশ কীভাবে মানুষের সংস্কৃতিকে সভ্যতার দিকে ধাবিত করেছে আর এ সভ্যতার ক্রমাগত উন্নয়ন কীভাবে বর্তমান আধুনিক যুগে প্রবেশ করেছে এর সবই ইতিহাস ও মানবিকবিদ্যার আলোচিত বিষয়। অন্যদিকে, মানুষ তার জীবনমান উন্নয়নে কোন ধরনের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সম্ভবপর হয়েছে এবং এগুলো দ্বারা আরও কীভাবে কার্যকরভাবে বিজ্ঞানের উন্নয়ন ঘটানো যায় ইত্যাদি বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত।
উপসংহার : ইতিহাস স্পষ্টত মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সাথে সংশ্লিষ্ট। এর পুরোটাই মানুষের জীবনধারা সংশ্লিষ্ট হওয়াতে ইতিহাস ও বিজ্ঞানের একটি নিবিড় সম্পর্ক থাকলেও তা বিজ্ঞান বলে গণ্য করা যায় না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইতিহাস অনেকটা বিজ্ঞানের অনুরূপ। ব্যবহারিক দিক দিয়ে ইতিহাসের সাথে বিজ্ঞানের ব্যাপক বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]