ইতিহাস কী সব ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে? ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর ভূমিকা : ইতিহাস এমন একটি শাস্ত্র যেখানে মানুষের অতীত কর্মের সত্যানুসন্ধান ও বিচারবিশ্লেষণ করা হয়। মানুষের অতীত কর্মের ওপর বিচারবিশ্লেষণ করতে গিয়ে ইতিহাস কিছু সাধারণ সত্য আমাদের সামনে উপস্থাপন করে ৷ ইতিহাসের এ সাধারণ সত্য আমাদের কিছু দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। ইতিহাসের এ ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনাকে আমরা ইতিহাসের ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলতে পারি।
" ইতিহাসের ভবিষ্যদ্বাণী : আমাদের অনাগত ভবিষ্যৎ সর্বদাই অনির্ধারিত ও অজানার বিষয়। যুগে যুগে সব মানুষেরই ভবিষ্যৎকে জানার ও বুঝার অত্যন্ত আগ্রহ ছিল। আর তাই অনেককে ভবিষ্যৎ জানার জন্য জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপরও নির্ভর করতে দেখা গেছে । ভবিষ্যৎকে জানার এ চেষ্টাকে ইতিহাস চর্চার মাধ্যমে অনেকাংশে সার্থক করা সম্ভব। নিম্নে ইতিহাসের ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. মানুষের স্বাভাবিক স্বভাব চরিত্র এমনই যে, সে সারাজীবন একই কর্মের বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটায়। মানবকর্মের এরূপ ধারাবাহিকতামূলক নিদর্শন দেখেই ইতিহাস বলে দিতে পারে ভবিষ্যতে একই রকমের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি ঘটবে কি না । এ বিবেচনায় বলা যায়, ইতিহাস ভবিষ্যদ্বাণীও করতে সক্ষম ।
২. 'History repeats itself" একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য বাণী। ইতিহাস ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব প্রভৃতি পর্যালোচনার মাধ্যমে এক নিমিষেই বলে দিতে পারে রাজার একচ্ছত্র স্বৈরাচার, জনগণের মধ্যে বিদ্রোহের ফলেই নতুনভাবে সমাজ ও প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এক্ষেত্রে কাল মার্কস ও হেগেলের কথা বলা যায়, তারা দুজনেই মত দেন যে, এটা খুবই পরিতাপের বিষয় যে “ইতিহাস থেকে কেউই শিক্ষা গ্রহণ করে না ।”
৩. ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে আমরা অতীত ক্ষেত্রে যে ধারণা নিয়ে বেড়ে উঠি ভবিষ্যতের সমকালে অনুরূপভাবে আমাদের গোচরীভূত হলে আমরা অতীতের আদলেই সমাধান করার চেষ্টা করি। তাই বলা যায়, ইতিহাসও ভবিষ্যতের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক রয়েছে।
৪. ইতিহাস আমাদের ভবিষ্যৎকে নির্ধারণ করে। আমরা পূর্বে কেমন ছিলাম, আমাদের জাতিগত ঐতিহ্য কেমন ছিল প্রভৃতি যেমন— ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে হিন্দু মুসলমান সব শ্রেণির মানুষই অংশগ্রহণ করেছিল। এতে দেশের অসাম্প্রদায়িকতার প্রমাণ পাওয়া যায়। অন্যদিক, জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল জাতির পহেলা বৈশাখ উদযাপনের চিত্র থেকেও অসাম্প্রদায়িকতার প্রমাণ পাওয়া যায় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাস অতীত জ্ঞানের আলোকে আমাদের সামনে ভবিষ্যতের রূপরেখা দাঁড় করায় । এ রূপরেখায় যে দিকনির্দেশনা থাকে তা পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য না হলেও কিছুটা হলেও গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ এককথায় ইতিহাস ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে । অনেক সময় এ ভবিষ্যদ্বাণীকে কর্মফল হিসেবেই মেনে নেয়, যা যথার্থ নয় ।

কলাবিদ্যা কাকে বলে? কলাবিদ্যার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর ।

উত্তর ভূমিকা : বুদ্ধি, বিবেক, চিন্তাচেতনা প্রভৃতি গুণের কারণেই মানুষকে অন্যান্য প্রাণীগুলোর চেয়ে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়। মানুষের এ চিন্তাচেতনা ও বিবেকবোধ মানুষে মানুষে সম্প্রীতি, মানবিকতা, সংস্কৃতি প্রভৃতির বিকাশ ঘটাতে ব্যবহৃত হয় । মানুষের এরূপ শৈল্পিক গুণগুলো দেশ ও জাতির উন্নতির পক্ষে সহায়ক হলেই তা কলাবিদ্যার রূপ পরিগ্রহ করে ।
কলাবিদ্যা : কলাবিদ্যা সাধারণত মানব সৌন্দর্যের বিশেষ দিকে যেমন – সাহিত্য, চিত্রকলা, সংগীত, ভাস্কর্য, স্থাপত্য প্রভৃতি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। সাধারণত মানুষের নানাবিধ শ্রম যখন সৌন্দর্যবিষয়ক কাজে ব্যবহার করা হয় তখন তা কলা বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করা হয় । কলাবিদ্যা মানুষের রুচিশীলতা, সংস্কৃতি ও মানবিকতাবোধকে জাগ্রত করতে অনেক বেশি সহায়ক ।
● কলাবিদ্যার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য : নিম্নে কলাবিদ্যার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো :
১ . কলাবিদ্যা মানুষের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করে থাকে ।
২. কলাবিদ্যা সব মানুষের আনন্দ-সুখ মিশ্রিত অতীত জীবনকে শৈল্পিক সৌন্দর্যে পাঠকের হৃদয়ে গ্রথিত করে ।
৩. মানুষের শৈল্পিক ও সৃষ্টিশীল কর্মগুণকে শাণিত করে-।
৪. এটি বিজ্ঞানের নিয়ম ও নির্মমতার মধ্যে রসবোধ সৃষ্টি করে মানুষের কাছে সবলীলভাবে উপস্থাপন করে ।
৫. এটি মানুষের মনোজাগতিক দিগন্তকে ভাববাদের রাজ্যের সাথে পরিচিত করে ।
৬. মানুষের সুকুমার বৃত্তিগুলোকে পরিস্ফুটিত করে ।
৭. সংস্কৃতির বিকাশই ইতিহাস ও মানবিক বিজ্ঞানের আলোচিত বিষয় ।
৮. কলাবিদ্যা ধর্ম ও ধর্মসংক্রান্ত বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনা করে ।
৯. এছাড়া কলাবিদ্যা মানবতাবোধ, সংহতিমূলক অনুপ্রেরণা, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে ।
১০. এটি মানুষের মানবিকতা ও মমত্ববোধকে জাগিয়ে তুলতে অনুপ্রেরণা দেয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কলাবিদ্যা জ্ঞানের অন্যতম প্রধান একটি শাখা। কলাবিদ্যার অনেক উপশাখা রয়েছে। ইতিহাস তার মধ্যে একটি। মূলত মানুষের অতীত কর্মকাণ্ডগত জ্ঞানশাস্ত্র হিসেবে ইতিহাস কাজ করে বলে তাকে মানবিকবিদ্যার অন্যতম উপশাখা বিবেচনা করা হয় ।

বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে লেখ।

উত্তর ভূমিকা : বিজ্ঞানকে বিশেষ জ্ঞান অর্থেই নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও পদ্ধতিগতভাবে লব্ধ সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ জ্ঞান এই জ্ঞানার্জনের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি। বিজ্ঞানে জ্ঞান, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও দৃষ্টিভঙ্গি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে আধুনিক বা উত্তরাধুনিক যাই বলি না কেন তাতে উত্তরণে বিজ্ঞানের অবদান সবচেয়ে বেশি ।
বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ : যুগে যুগে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীর কাজের ধারা, পদ্ধতি ও দৃষ্টিভঙ্গি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় । নিম্নে বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে লেখা হলো :
১. বিজ্ঞান শব্দটি দ্বারা বিশেষ কোনো জ্ঞানকে বুঝায়। যেমন- পদার্থ বিষয়ের বিশেষ জ্ঞানকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন
বিষয়ের বিশেষ জ্ঞানকে রসায়নবিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করা হয় ।
২. বিজ্ঞান কোনো ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ করে। পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য থেকে বিজ্ঞান বিচারবুদ্ধির মাধ্যমে
তত্ত্বে পৌঁছায় ৷
৩. বিজ্ঞান যা ঘটে বা যেভাবে ঘটে তা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের মাধ্যমে যাচাইবাছাই করে ৷
৪. বিজ্ঞান (তার তত্ত্বকে যাচাইবাছাই, পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য পরীক্ষণের ব্যবস্থা করে। পরীক্ষণের ফলে প্রাপ্ত তথ্যকে
বিজ্ঞান সূত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করে ।
৫. বিজ্ঞান তার পরীক্ষালদ্ধ ফল থেকে তার তত্ত্বকে প্রয়োজনে পরিবর্তন বা সংশোধন করে ।
৬. বিজ্ঞানের প্রাপ্ত ফলাফলসমূহ প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত সত্য। যেমন— বিজ্ঞানের মাধ্যমে এটি প্রমাণ করে দেখানো যায়
যে, দুই অনু হাইড্রোজেন ও এক অনু অক্সিজেন একত্রিত হয়ে দুই অনু পানি উৎপন্ন হয় ।
৭. পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক ফলসমূহ স্থানকালপাত্রভেদে প্রতিষ্ঠিত সত্য। এক্ষেত্রে স্থান, কাল ও পাত্র কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। যেমন— বিজ্ঞানে আমরা জানতে পারি, ১ কিলোগ্রাম= ১০০০ গ্রাম, ১ কিলোমিটার= ১০০০ মিটার। E = mc2 প্রভৃতি। এ সূত্র বা তত্ত্বসমূহ যেকোনো জায়গায় বা যেকোনো দেশের বিজ্ঞানচর্চার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ।

"
৮. বিজ্ঞান ঘটনার যে কার্যকর ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে তা স্বতঃসিদ্ধ। এ স্বতঃসিদ্ধতার জন্য বিজ্ঞান সবার কাছে
গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে ।
৯. বিজ্ঞান নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের বৈজ্ঞানিক বলা হয়। প্রত্যেকটি শাখার বৈজ্ঞানিকেরই কাজের কয়েকটি ধাপ
রয়েছে। কাঁজের যথাযথ ধাপ অনুযায়ী বৈজ্ঞানিকগণ নিজস্ব পদ্ধতিতে কাজ করে থাকেন ।
১০. বিজ্ঞান জ্ঞান-প্রযুক্তির দ্বারকে নতুনভাবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে । যার ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবন সহজ
হয়ে উঠেছে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহই বিজ্ঞানকে অন্যান্য শাস্ত্র থেকে আলাদা জ্ঞানশাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। যুগে যুগে জ্ঞানের এ শাস্ত্র নিয়ে মানুষ আরও বেশি ভাবছে। ফলে প্রতিনিয়তই বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের উন্নয়ন ঘটছে এবং নতুন নতুন বিষয় আবিষ্কার হচ্ছে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]