উত্তর ভূমিকা : ইতিহাস জ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। কালের পরিবর্তনে একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বিকশিত মানব সভ্যতার ধারাবাহিক ও বর্ণনামূলক বিবরণই ইতিহাসে স্থান করে নেয়। এটি মানব সভ্যতায় অগ্রগতি ও ক্রমবিবর্তনের নির্ভরযোগ্য দলিল যা অতীতের প্রতিচ্ছবি। ইতিহাস যেহেতু অতীতকালের মানব সভ্যতায় ঘটে যাওয়া বিষয়াবলির ধারাবাহিক বিবরণ সবার সামনে তুলে ধরে তাই পৃথিবীর সর্বত্র পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে ইতিহাস একটি জনপ্রিয় বিষয়ে পরিগণিত হচ্ছে। ইতিহাসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা বিষয় হিসেবে ইতিহাসকে অনন্য মর্যাদা দান করেছে।
জ্ঞানের শাখা হিসেবে ইতিহাসের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ : জ্ঞানের শাখা হিসেবে ইতিহাসের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. সত্যানুসন্ধান : অনুসন্ধিৎসা আর তথ্যপ্রমাণ যাচাই করে নতুন আঙ্গিকে অতীতকে পুনর্গঠন করার সুযোগ ইতিহাসের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। মানুষ কর্তৃক সম্পাদিত ও সৃষ্ট বস্তুগত অনুসন্ধান করে ইতিহাস প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত আমাদের সরবরাহ করে থাকে। অতীতকালে মানুষের জীবনব্যবস্থা কেমন ছিল, তাদের কর্মপদ্ধতি কেমন ছিল ইত্যাদি নিয়ে ব্যাপকভাবে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের সুযোগ তৈরি করে ইতিহাস। সঠিক পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করে নতুন তথ্যের আলোকে ইতিহাস পুনর্বিন্যাস করা হয় । তাই সত্যানুসন্ধান ইতিহাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলে বিবেচনা করা হয় ।
২. বিজ্ঞানমনস্কতা : ইতিহাস নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণের আলোকে অনুসন্ধানের চেষ্টা করে। এদিক থেকে ইতিহাসের একটি বিজ্ঞানমনস্ক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ইতিহাস উপাদানসমূহের পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের জন্য জীবাশ্ম, মুদ্রা, শিলালিপি ইত্যাদির গবেষণা ও অনুসন্ধান পরিচালনা করে থাকে। অনুসন্ধানের ফলে প্রাপ্ত তথ্য ইতিহাস হিসেবে সন্নিবেশিত হয় যা ইতিহাসকে সামাজিক বিজ্ঞানের মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হতে সহায়তা করছে।
৩. আত্মোপলব্ধিমূলক জ্ঞান : ইতিহাস তথ্যপ্রমাণ নির্ভর আত্মোপলব্ধিমূলক একটি জ্ঞান । কেননা ইতিহাসের পাতা থেকেই একটি জাতি তাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য ও জাতীয় তথ্যাবলি সম্পর্কে জানার সুযোগ লাভ করে। অতীতের বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজ সংস্কারক, জাতীয় বীর ইত্যাদি ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি। এসব বিষয় বিশ্লেষণ করলে আমরা যেমন একটি জাতিসত্তার পরিচয় সুস্পষ্টভাবে জানতে পারি তেমনি আত্মোপলব্ধিতে বলিয়ান হয়ে নতুন দিনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় শপথ নেওয়ারও সুযোগ তৈরি করতে পারি ।
৪. নিরপেক্ষতা : ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো স্থানকালপাত্রভেদে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোত্র, অবস্থান, মতাদর্শ ও স্বার্থ এগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন না হলে প্রকৃত ইতিহাস রচনা করা সম্ভব হয় না। সাদা, কালো, অনিষ্টকারী, কল্যাণকর, স্বৈরাচারী, নিপীড়ক, গণতান্ত্রিক সব প্রশাসকের প্রতি সমান দৃষ্টি নিবন্ধ করে ইতিহাস তার নিরপেক্ষতার পরিচয় দেয়।
৫. অতীতের দর্পণ : ইতিহাসের ঘটনাবলি থেকেই আমরা অতীতের সব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে স্পষ্টভাবে অবগত হতে পারি । আসলে তথ্যপ্রমাণের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া অতীতকে বাস্তবের সামনে জীবন্ত এক প্রতিচ্ছবি হিসেবে তুলে ধরাই ইতিহাসের মূল কাজ । আর এজন্যই ইতিহাসকে অতীতের দর্পণ বলা যায় ।
৬. কালানুক্রমিক বিন্যাস : কালানুক্রমিক বিন্যাস ইতিহাসের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত সব ঘটনার নির্দিষ্ট দিন তারিখ থাকে। কোনো ঘটনার প্রাচীনত্ব সময়ের বিচারেই প্রমাণ করা হয়। পাশাপাশি রাজনৈতিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে কোনো রাজবংশের শাসনকালের বিস্তৃতি বিবেচনা করে তার প্রকৃত অবস্থান নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়। এসব বিষয় বিবেচনা করতে গিয়ে ইতিহাসের ক্ষেত্রে কালানুক্রমিক বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পায় ।
৭. ধারাবাহিকতা : ধারাবাহিকতা ইতিহাসের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। অতীতকালে কোন ঘটনার পর কোন ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল, কোন বিশেষ ঘটনার সাথে পরবর্তী বা পূর্ববর্তী কোন ঘটনা কীভাবে সম্পর্কিত হয়েছে, কোন রাজবংশের পরবর্তী ধারাবাহিকতায় অন্য কোন রাজবংশের আবির্ভাব ঘটেছে এর সবই ইতিহাসে আলোচিত হয় বলে ইতিহাসের ধারাবাহিকতার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
৮. কলেবর বৃদ্ধি : সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ যুক্ত হয়ে কলেবর বৃদ্ধি পাওয়া ইতিহাসের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি ও মানুষের কর্মকাণ্ডের বৈচিত্র্য বৃদ্ধির সাথে সাথে ইতিহাসের কলেবরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ ও প্রয়োজন সাপেক্ষে কলেবর বৃদ্ধি করে ক্রম অগ্রসর হওয়া ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ।
৯. দেশপ্রেমবোধ জাগিয়ে তোলা : ইতিহাস কোনো নির্দিষ্ট দেশের সব শ্রেণি পেশার জনগণের মাঝে কার্যকরভাবে দেশপ্রেমবোধ জাগিয়ে তোলে। ইতিহাসে অতীতের গৌরবগাথা লিপিবদ্ধ থাকে বলে এর মাধ্যমে দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। এভাবে মানুষ নিজ জাতি, সমাজ, সংস্কৃতি, রাষ্ট্রীয় পরিবর্তন ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত হয়। নিজ দেশের বীরত্বগাথা ও গৌরবময় কার্যাবলির পাশাপাশি স্বৈরশাসকগণের শোষণ ও বঞ্ছনায় নিখুঁত চিত্র তুলে ধরে ইতিহাস জনগণের মধ্যে সর্বদা দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কোনো একটি জ্ঞানকে শনাক্ত করতে হলে সবার আগে এর বৈশিষ্ট্যসমূহ চিহ্নিত করতে হয়। প্রতিটি ব্যক্তি, বস্তু, বিষয়, প্রাণী, সমাজ, এমনকি রাষ্ট্রেরও কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে। তেমনি ইতিহাস জ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে কতিপয় বিশেষ বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। তাই জ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসেবে ইতিহাসের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসমূহ উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়েছে।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত