কলা ও বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখ। ইতিহাস কী বিজ্ঞান?

উত্তর ভূমিকা : জ্ঞানের অন্যতম প্রধান দুটি অনুষদ কলা ও বিজ্ঞান । কলা অনুষদের বিষয়সমূহ মানববিদ্যার সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে, বিজ্ঞানের বিয়য়সমূহ বিশেষ জ্ঞান বা কৌশল হিসেবে মানবকল্যাণে ব্যবহৃত হয়। ইতিহাসকে জ্ঞানের একটি প্রধান শাখা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইতিহাসে সন্নিবেশিত বিষয়সমূহ বিচারবিশ্লেষণ করে কতিপয় ঐতিহাসিকগণের কেউ কেউ ইতিহাসকে বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আবার কেউ কেউ ইতিহাসকে কলাবিদ্যার অন্তর্ভুক্ত বলে মত দিয়েছেন। ইতিহাস বিজ্ঞান না কলা এ বিষয়ের ঐতিহাসিকদের মধ্যে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে।

ইতিহাসের প্রকৃতি
> কলা ও বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ : নিম্নে কলা ও বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করা হলো :
ক. কলার বৈশিষ্ট্যসমূহ : নিম্নে কলাবিদ্যার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলো :
১. কলাবিদ্যা মানুষের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করে থাকে।
২. কলাবিদ্যা সব মানুষের আনন্দ-সুখ মিশ্রিত অতীত জীবনকে শৈল্পিক সৌন্দর্যে পাঠকের হৃদয়ে গ্রথিত করে । ৩. মানুষের শৈল্পিক ও সৃষ্টিশীল কর্মগুণকে শাণিত করে ।
৪. এটি বিজ্ঞানের নিয়ম ও নির্মমতার মধ্যে রসবোধ সৃষ্টি করে মানুষের কাছে সবলীলভাবে উপস্থাপন করে ।
৫. এটি মানুষের মনোজাগতিক দিগন্তকে ভাববাদের রাজ্যের সাথে পরিচিত করে।
৬. মানুষের সুকুমার বৃত্তিগুলোকে পরিস্ফুটিত করে।
৭. সংস্কৃতির বিকাশই ইতিহাস ও মানবিক বিজ্ঞানের আলোচিত বিষয়
৮. কলাবিদ্যা ধর্ম ও ধর্মসংক্রান্ত বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনা করে ৷
৯. এছাড়া কলাবিদ্যা মানবতাবোধ, সংহতিমূলক অনুপ্রেরণা, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে ৷
১০. এটি মানুষের মানবিকতা ও মমত্ববোধকে জাগিয়ে তুলতে অনুপ্রেরণা দেয় ।
খ. বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ : নিম্নে বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করা হলো :
১. বিজ্ঞান শব্দটি দ্বারা বিশেষ কোনো জ্ঞানকে বুঝায়। যেমন— পদার্থ বিষয়ের বিশেষ জ্ঞানকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন,
বিষয়ের বিশেষ জ্ঞানকে রসায়নবিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করা হয় ৷

বিজ্ঞান কোনো ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ করে। পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য থেকে বিজ্ঞান বিচারবুদ্ধির মাধ্যমে তত্ত্বে পৌছায় ।
৩. বিজ্ঞান যা ঘটে বা যেভাবে ঘটে তা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের মাধ্যমে যাচাইবাছাই করে ।
৪. বিজ্ঞান তার তত্ত্বকে যাচাইবাছাই, পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য পরীক্ষণের ব্যবস্থা করে। পরীক্ষণের ফলে প্রাপ্ত তথ্যকে
বিজ্ঞান সূত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করে ।
৫. বিজ্ঞান তার পরীক্ষালদ্ধ ফল থেকে তার তত্ত্বকে প্রয়োজনে পরিবর্তন বা সংশোধন করে ।
৬. . বিজ্ঞানের প্রাপ্ত ফলাফলসমূহ প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত সত্য। যেমন— বিজ্ঞানের মাধ্যমে এটি প্রমাণ করে দেখানো যায়
যে, দুই অনু হাইড্রোজেন ও এক অনু অক্সিজেন একত্রিত হয়ে দুই অনু পানি উৎপন্ন হয় ৷
৭. পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক ফলসমূহ স্থানকালপাত্রভেদে প্রতিষ্ঠিত সত্য। এক্ষেত্রে স্থান, কাল ও পাত্র কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। যেমন— বিজ্ঞানে আমরা জানতে পারি, ১ কিলোগ্রাম= ১০০০ গ্রাম, ১ কিলোমিটার= ১০০০ মিটার। E = mc2 প্রভৃতি। এ সূত্র বা তত্ত্বসমূহ যেকোনো জায়গায় বা যেকোনো দেশের বিজ্ঞানচর্চার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ।
৮. বিজ্ঞান ঘটনার যে কার্যকর ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে তা স্বতঃসিদ্ধ। এ স্বতঃসিদ্ধতার জন্য বিজ্ঞান সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
৯. বিজ্ঞান নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের বৈজ্ঞানিক বলা হয়। প্রত্যেকটি শাখার বৈজ্ঞানিকেরই কাজের কয়েকটি ধাপ
রয়েছে। কাজের যথাযথ ধাপ অনুযায়ী বৈজ্ঞানিকগণ নিজস্ব পদ্ধতিতে কাজ করে থাকেন ।
*১০. বিজ্ঞান জ্ঞান-প্রযুক্তির দ্বারকে নতুনভাবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। যার ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবন সহজ হয়ে উঠেছে ।
↑ ইতিহাসকে বিজ্ঞান বলা যায় কি না : ইতিহাস মানুষকে অতীত জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে। এ কাজ করতে গিয়ে ইতিহাস অতীতকালে সংঘটিত যেকোনো ঘটনার তথ্যসংগ্রহ করে সংগৃহীত তথ্যকে বিজ্ঞান সত্যানুসন্ধান বৈশিষ্ট্য প্রয়োগের মাধ্যমে উপকথা, রূপকথা, মিথ্যাচার ও অতিরঞ্জন ইত্যাদি বিভিন্ন থেকে আলাদা করেন। আবার হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস উদঘাটনের ইতিহাসশাস্ত্র প্রাচীন মানুষের ব্যবহার্য নানান প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান যেমন— ফসিল, জীবাশ্ম প্রভৃতি গবেষণা করে সঠিক সত্য উদঘাটন করেন । এক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিকের কাজের ধারা ও ঐতিহাসিকের কাজের ধারা প্রায় একই।
< আবার ইতিহাস সমকালীন মানবসমাজে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে গবেষণা করে যে সত্য প্রতিষ্ঠা করে তা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সাধারণ সত্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । যেমন- ইতিহাস ফরাসি বিপ্লবকে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, ফ্রান্সের মতো অন্য কোনো দেশে এরূপ স্বৈরাচার করতে থাকলে এক সময় না এক সময় রাজা জনবিপ্লবের মুখে ক্ষমতা হারাতে বাধ্য হবে । এরূপ সাধারণ সত্য প্রতিষ্ঠায় ইতিহাসের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে ইতিহাসের সাধারণ সত্যসমূহ 2 + 2 = 4 বা F = ma এর মতো কাল বা সমাজের ঊর্ধ্বে নয়। তাই ইতিহাসকে অন্যান্য প্রাকৃতিক বিজ্ঞান যেমন– পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞানের মতো বিজ্ঞান বলা যায় না ।
এখানে এ বিষয়টি উল্লেখ্য যে, ইতিহাসের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু যেহেতু মানুষ ও সমাজবিদ্যার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত তাই ইতিহাসের আলোচনা সমাজবিজ্ঞানের পর্যায়ভুক্ত।
"
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বিজ্ঞান ও কলার বৈশিষ্ট্যসমূহ পর্যবেক্ষণ করে আমরা বলতে পারি যে, ইতিহাসে এককভাবে বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ বিদ্যমান নয় এখানে কলাবিদ্যারও অনেক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, যার 'কারণে বিজ্ঞানের প্রকৃতিকে এককভাবে বিজ্ঞান বা কলা বলতে পারি না। তবে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করলে ইতিহাসকে সমাজবিজ্ঞানের পর্যায়ভুক্ত বলা যায়। পদার্থ, রসায়ন প্রভৃতি যে অর্থে বিজ্ঞান ইতিহাস হয়তো ঠিক সেই অর্থে বিজ্ঞান নয় তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইতিহাস অনেকটা বিজ্ঞানের অনুরূপ। আর তাই আমরা ইতিহাসকে সামাজিক বিজ্ঞান অর্থে বিজ্ঞান বলতে পারি। কেননা ইতিহাসে বর্ণিত ঘটনার অধিকাংশই সামাজিক বিজ্ঞানের অংশ ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]