অর্থনীতি কী? ইতিহাস ও অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা কর ।

উত্তর ভূমিকা : অর্থনীতি হলো সমাজবিজ্ঞানের এমন একটি বা যা মানুষের অভাব পূরণের জন্য সম্পদ উৎপাদন, বিনিময়, বণ্টন ও যোগানের সাথে জড়িত সব নিয়ামকসমূহ নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে, ইতিহাস মানুষের অতীত সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সমষ্টি। যে কারণে ইতিহাস ও অর্থনীতির মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। এ সম্পর্কের প্রেক্ষিতেই অর্থনৈতিক ইতিহাস নামে ইতিহাসের একটি স্বতন্ত্র শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অর্থসম্পদ শুধু মানুষের জীবনকে নয়; বরং ইতিহাসসহ সমকালীন অনেক বিষয়কে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে থাকে । অর্থনীতি : অর্থনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Economics, যা গ্রিক শব্দ Oikonomia থেকে এসেছে। Oikonomia শব্দটির অর্থ হলো গৃহস্থালির ব্যবস্থাপনা। কেননা গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল অর্থনীতিকে গার্হস্থ্যবিষয়ক ও সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেছেন। শিল্পবিপ্লবের সময় হতে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত বিভিন্ন অর্থচিন্তাবিদ অর্থনীতির সংজ্ঞায়ন বিভিন্নভাবে করেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞাগুলো হলো :
অর্থনীতির জনক এডাম স্মিথ (Adam Smith) বলেন, “অর্থনীতি হলো এমন একটি বিজ্ঞান যা জাতিসমূহের সম্পদের প্রকৃতি ও কারণ অনুসন্ধান করে।”
অধ্যাপক মার্শাল (Marshall) বলেন, "Economics is the study of mankind in the ordinary business of life. " অর্থাৎ, অর্থনীতি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করে।
এল. রবিনস (L. Robbins) এর মতে, “অর্থনীতি হলো এমন একটি বিজ্ঞান যা মানুষের অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যবহারযোগ্য দুষ্প্রাপ্য উপকরণসমূহের মধ্যে সমন্বয়সাধনকারী কার্যাবলি আলোচনা করে ।”
অর্থনীতির সংজ্ঞাসমূহের মধ্যে এল রবিনস এর সংজ্ঞাটিকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বলে অর্থচিন্তাবিদদের মধ্যে সমাদৃত হয়েছে ।
↑ ইতিহাসের সাথে অর্থনীতির পার্থক্য : ইতিহাস ও অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক বহুমাত্রিক। এই দুই জ্ঞানশাস্ত্রে বিষয়গত দিক থেকে কিছুটা সাদৃশ্য ও অনুরূপতা থাকা সত্ত্বেও উভয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্যও কম নয় । নিম্নে ইতিহাসের সাথে অর্থনীতির পার্থক্য আলোচনা করা হলো :
১. উৎপত্তিগত : ইতিহাস ও অর্থনীতির মধ্যে প্রথম পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় উৎপত্তিগত দিক বিবেচনায় । পৃথিবীতে মানুষের আগমন হতেই ইতিহাসের সূত্রপাত ঘটে। কারণ ইতিহাসের মূল বিষয়ই হলো মানুষ। পক্ষান্তরে, একটি পৃথক বিষয়রূপে অর্থনীতি ইতিহাসের অনেক পরে আত্মপ্রকাশ করে ।
২. প্রকৃতিগত : মানব সভ্যতার বিবর্তন ও বিভিন্ন সাম্রাজ্যের উত্থানপতন, নানাবিধ যুদ্ধবিগ্রহ, কল্যাণকামী শাসকদের জনকল্যাণমূলক কার্যাবলি প্রভৃতি মানুষের অতীত গৌরবকে সংরক্ষণ করে তা বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রয়োজন থেকে ইতিহাসের উদ্ভব হয়েছে। পক্ষান্তরে, সীমিত সম্পদের দ্বারা মানুষের সার্বিক চাহিদার যোগানের প্রেক্ষিতে অর্থনীতির উদ্ভব হয়েছে।
৩. বিষয়বস্তুগত : বিষয়বস্তুগত দিক থেকে অর্থনীতি অনেক সংকীর্ণ কলেবর নিয়ে আলোচনা করে। অর্থনীতিতে মানবসমাজের একটি দিক তথা অর্থসম্পদ নিয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা হয়। বিষয়বস্তুগত দিক থেকে ইতিহাস অতীতের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় তথা মানুষের সব প্রকার ইতিবাচক ও নেতিবাচক কর্মের বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ তুলে ধরে। ধারাবাহিক ইতিহাসের অগণিত বিষয়বস্তুর মধ্যকার একটি হলো অর্থনৈতিক দিক ।
৪. পরিধিগত : পরিধিগত দিক থেকেও ইতিহাস ও অর্থনীতির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ করা যায়। ইতিহাসের বিষয়বস্তু যত বেশি ও যতদূর পরিব্যাপ্ত এর পরিধিও ততদূর বিস্তৃত। কার্যত মানুষের কর্মের, সৃষ্টির, অভিযাত্রার দিগন্ত যতদূর সম্প্রসারিত ইতিহাসের পরিধিও ততদূর বিস্তৃত। ভূমণ্ডলের যেখানেই মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মের ছোঁয়া লাগে সে পর্যন্ত ইতিহাসের পরিসীমা বিস্তার লাভ করে থাকে। কিন্তু অর্থসম্পদকেন্দ্রিক অর্থনীতির পরিধি অদ্যাবধি টাকা পয়সা ও সম্পত্তিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। অতএব বলা যায়, অর্থনীতির পরিধির চেয়ে ইতিহাসের পরিধি অনেক গুণ বিস্তৃত ।
৫. সময়ানুক্রমিক : অর্থনীতি সমকালীন প্রেক্ষিতকে অর্থনৈতিক আঙ্গিকে অতি গুরুত্বের সাথে বিচারবিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করে দেয়। পক্ষান্তরে, ইতিহাস অতীত আশ্রয়ী একটি বিষয়রূপে সমাদৃত । অতীতের ঘটনাবলি থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমানকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার উপায় বের করে দেয় ইতিহাস। ইতিহাস সমগ্র অতীতকে বর্তমানের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখে। সুতরাং সময়ানুক্রমিক দিক থেকেও ইতিহাস মৃত নয়; বরং জীবিত ।
৬. ধারাবাহিকতার : ইতিহাসে বর্ণিত ঘটনাসমূহ ধারাবাহিক হওয়া আবশ্যিক। এখানে ঘটনার গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে কোনো ঘটনাকে আগে বা পরে সন্নিবেশিত করা যায় না। কিন্তু অর্থনীতির বেলায় সমকালীন প্রেক্ষিত মূল্যায়ন করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, তত্ত্ব ও বিষয় সন্নিবেশিত হয়ে থাকে। অর্থনীতিতে ধারাবাহিকতা ও সময়ানুক্রমের চেয়ে তথ্য ও তত্ত্ব অধিক অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্থান লাভ করে থাকে ।
৭. অন্তর্ভুক্ত বিষয় : ইতিহাসের ঘটনাসমূহ বর্ণনামূলক ও মূল্যায়ন দ্বারা সমৃদ্ধ হয়। এটি মূলত ঘটে যাওয়া ঘটনাবলির প্রামাণ্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বর্ণনাশ্রয়ীরূপে পরিবৃত্ত হয়। কিন্তু অর্থনীতিতে তত্ত্বগত ও বিশ্লেষণাত্মকভাবে বিষয়সমূহ সন্নিবেশিত হয় ।

পরিকল্পনাগত : কোনো দেশ বা অঞ্চলের অর্থনীতিকে সবল করে রাখার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক । এক্ষেত্রে আর্থিক বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু ইতিহাসের গতিকে সবল ও সচেতন করে রাখার জন্য অর্থনীতির মতো আগাম কোনো পরিকল্পনা বা বাজেটের প্রয়োজন পড়ে না। ইতিহাস শুধু ঘটে যাওয়া বিষয়াবলির প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে থাকে। যে কারণে পূর্ব পরিকল্পনার গুরুত্ব ইতিহাসে একেবারেই কম ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, অর্থনীতি ও ইতিহাসশাস্ত্রের মধ্যে প্রকৃতি, পরিধি, বিষয়বস্তু, পরিকল্পনা ইত্যাদি বিভিন্ন দিক থেকে বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এই পার্থক্যের কারণে দুটি বিষয় কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে পাশাপাশি অবস্থান করছে। তবে অনেক পার্থক্যের মধ্যেও ইতিহাস ও অর্থনীতির মূল আলোচ্য বিষয় মানুষ । যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে উভয়শাস্ত্রের সাদৃশ্যও লক্ষ করা যায়। সুতরাং জ্ঞানের যথাযথ বিকাশ সাধন বুদ্ধিবৃত্তির চর্চার জন্য ইতিহাস ও অর্থনীতির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]