ইতিহাসের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক নিরূপণ কর

উত্তর ভূমিকা : মানুষ ও মানুষের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক, বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর মধ্যে আদানপ্রদান, সংঘর্ষ ও সমন্বয়ের ফলে বৃহত্তর মানবসমাজের উন্নয়নের ধারাবাহিক বিবরণ হলো ইতিহাস। আর রাষ্ট্র নামক বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব, উদ্দেশ্য, রাষ্ট্রের কার্যকারিতা সম্পর্কিত নিয়মকানুন ও সুসংবদ্ধ অধ্যয়ন হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞান। এখানে লক্ষণীয় যে, কোনো নির্দিষ্ট রাষ্ট্রে বা অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের সম্পর্ক ও উত্থানপতনের ধারাবাহিক বিবরণ ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান শাস্ত্রকে একত্রিত করেছে। উভয়ের মধ্যে একটি সৌহার্দের সম্পর্ক সৃষ্টি করেছে ।
● ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক : নিম্নে ইতিহাসের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হলো :
১. ঐতিহাসিক সূত্র : ইতিহাস গবেষণার জন্য বিভিন্ন উপায়ে সংগৃহীত ঐতিহাসিক সূত্রের যথাযথ রাজনৈতিক বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠার জন্য একজন ইতিহাসবিদ রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে অবারিত সহায়তা গ্রহণ করেন। অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনাকে মাত্র কয়েকটা সূত্র থেকে বা বস্তুগত প্রমাণ থেকে বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠা করা বেশ কঠিন কাজ। এই কাজ করতে গিয়ে একজন ইতিহাসবিদ রাজনৈতিক কোনো বিশেষজ্ঞ বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর পরামর্শ নিলে কাজটা অনেক সহজেই সম্পন্ন করতে পারেন ।
২. রাজনৈতিক কাঠামো বিশ্লেষণ : ইতিহাসের তথ্যপ্রমাণের আলোকে আমরা জানতে পারি, অতীত জনপদের রাজনৈতিক কাঠামো কেমন ছিল, তখনকার মানুষ কী ধরনের আইনকানুন, বিচারব্যবস্থা ও সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো, এ ধরনের কাঠামো প্রতিষ্ঠার কারণ কি, এর ফলে তৎকালীন মানুষ কী ধরনের সুবিধা ও অসুবিধার সম্মুখীন হতো এসব যথার্থভাবে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে একজন ইতিহাসবিদকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর শরণাপন্ন হতে হয় ।
৩. রাজনৈতিক সংকট : বর্তমানকালের সরকার ব্যবস্থার আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিভিন্ন ঘটনা যেমন— দাঙ্গা, জাতিগত সংঘাত, ক্ষমতার লড়াই, রাজনৈতিক সংঘর্ষ, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভৃতির প্রভাবে অনেক ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে। এই সংকট মোকাবিলায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইতিহাসবিদের সাহায্য নিয়ে উপকৃত হতে পারেন। ইতিহাসবিদ সহজেই ইতিহাসের পাতায় মিলিয়ে দেখতে পারেন পূর্বে কোথায় এ ধরনের সংকট দেখা গিয়েছিল, তার সমাধান কি ছিল ইত্যাদি। এধরনের সংকটাপন্ন অবস্থায় ইতিহাস ও রাজনীতিবিদ একত্রিত হয়ে সংকট সমাধানে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
.
৪. শাসনতান্ত্রিক সংস্কার : সরকার ব্যবস্থায় অনেক সময় শাসনতান্ত্রিক সংস্কার কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেক * জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। সেক্ষেত্রে এরূপ জটিলতার কোনো অতীত উদাহরণ থাকলে ইতিহাস থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। এর পাশাপাশি কি সমস্যার উদ্ভব ঘটাতে পারে এবং কোন ধরনের শাসনকাঠামো কীরূপ, সে সম্পর্কেও তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। আর কোনো কোনো রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে কি কি সিদ্ধান্ত নিলে তা রাষ্ট্রতন্ত্রের জন্য উপকারী হয়ে ওঠে সে ব্যাপারেও তাদের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ
সহজতর হয় ৷
৫. সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে : অতীতে একটি বিশেষ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে কীভাবে নিরাপদ করেছিল, কিংবা একটি সিদ্ধান্ত কীভাবে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বকে বিপদগ্রস্ত করেছিল এসব বিষয় বিশ্লেষণ করতে গিয়ে একজন ইতিহাসবিদকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহায়তা নিতে হতে পারে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রাষ্ট্রযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ নানা দিকের সাথে এই কৈর সার্বভৌমত্বের ইস্যুটি নিয়েও বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা করা হয়ে থাকে ।
৬. রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত : একটি অজানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় নীতিনির্ধারক মহল ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ ইতিহাস থেকে {{ সাহায্য নিতে পারেন। বর্তমানে কোনো একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে দেখা যায় বাস্তব বিষয়টি বিদ্যমান অবস্থার চেয়েও জটিল আকার ধারণ করেছে। কিন্তু ইতিহাসে দেখা যায় এই জাতীয় ঘটনা অতীতেও ঘটেছিল। তখন বিষয়টি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বা রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারক খুব সহজেই ইতিহাস থেকে ধারণা নিয়ে বেশ উপকৃত হতে পারেন ।
৭. রাজনীতির অবস্থা বিশ্লেষণ : কোনো দেশ বা অঞ্চলের রাজনৈতিক কাঠামোর অবস্থা, ভূমিকা ও অতীত রাজনীতির চালচিত্র বুঝতে গেলে একজন ইতিহাসবিদকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে, কিংবা সরাসরি একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর কাছ থেকে সাহায্য নিতে হবে। ইতিহাসের তথ্য সূত্র থেকে একটি বিষয়ে সহজে অনুমান করা সম্ভব। তবে ঐ ঘটনাসংশ্লিষ্ট নানা বিষয় যথার্থভাবে যাচাইবাছাই করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া বেশ কঠিন। তাই বাস্তব অবস্থার নিরিখে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে গেলে একজন ইতিহাসবিদকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়াবলির ধারণা স্পষ্ট থাকতে হবে।
৮. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক : বিভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে একটি রাষ্ট্র কীভাবে তার পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল কিংবা পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করেছিল এসব বিষয়ে ইতিহাসে স্পষ্ট তথ্য নাও থাকতে পারে। গ্রহণযোগ্য ইতিহাস নির্মাণ করতে গেলে একজন ঐতিহাসিক এক্ষেত্রে একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক তথা বিশেষ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর সহায়তা নিতে পারেন।
৯. ইতিহাসের পটপরিবর্তন : বিশেষ কোনো ঘটনার প্রভাবে ইতিহাসের পটপরিবর্তন ঘটে থাকলে সেখানে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একটি বিষয় সময়ের প্রেক্ষাপটে ইতিহাসে স্থান পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঘটনাসমূহে অবস্থান বিশ্লেষণ করতে গিয়ে একজন ইতিহাসবিদকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর শরণাপন্ন হতে হয়। কোনো বিশেষ রাজনৈতিক সংকটের ফলে ইতিহাসের গতিধারায় পটপরিবর্তন ঘটেছে তা একজন ইতিহাসবিদের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক মহল তথা শাসকগোষ্ঠী জানতে পারে। তবে এ ধরনের সংকট সৃষ্টির পূর্বেই এগুলো প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্ৰহণ করা যেতে পারে।
১০. তথ্যের যাচাইকরণ : একজন ইতিহাসবিদ অতীত সমাজ ও সভ্যতা নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণায় নিয়োজিত থাকেন। অতীতের কোনো সমাজ, সম্প্রদায় এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিবরণ যথাযথভাবে সবসময় ইতিহাসবিদের নিকট পৌছায় না। ইতিহাসবিদ বিভিন্নভাবে বিকৃত তথ্য পেয়ে থাকেন। ইতিহাসবিদকে এ ধরনের বিকৃত তথ্য থেকে ইতিহাস রচনাকে শুদ্ধভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর সাহায্য নিতে হয়। তিনি তার প্রাপ্ত তথ্যের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর তথ্যের উৎস মিলিয়ে নিরপেক্ষ ও সত্য ইতিহাস রচনার প্রয়াস পান ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান একে অপরের সাথে দৃঢ় সম্পর্কে আবদ্ধ। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক বার্জেস বলেন, “উভয়কে যদি পৃথক করে দেওয়া হয় তাহলে ইতিহাস হবে বিকলাঙ্গ আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান হবে আলোর মতো আবছায় বা অবাস্তব।” উভয়ের সহাবস্থান ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান শাস্ত্রকে দিন দিন অনেক সমৃদ্ধ করছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাহায্যে ইতিহাসের রাজনৈতিক বিষয়াবলিকে সত্য হিসেবে উপস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে।
আবার একথাও সত্য উভয় শাস্ত্রের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মিল থাকলেও ক্ষেত্রবিশেষে বৈসাদৃশ্যও লক্ষ করা যায় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]