উত্তর ভূমিকা : সাধারণভাবে বলা যায়, যে শাস্ত্র থেকে ভূমণ্ডল বা পৃথিবী সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায় তাই ভূগোল। ভূগোলশাস্ত্রে মানুষের আবির্ভাবের পর থেকে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাথে মানুষের সম্পর্ক আলোচিত হয়। পক্ষান্তরে, ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানও পরিবেশের সাথে, সমাজের সাথে, সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে মানুষের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া আলোচনা করে। এসব কিছুর মধ্যে ইতিহাস শাস্ত্রই মানুষের সব প্রকারের অতীত কর্মের বিবরণ দিয়ে থাকে । ইতিহাসে সমাজবিজ্ঞান ও ভূগোল সম্পর্কেও আলোচনা করা হয় । ফলে ইতিহাসের সাথে ভূগোল ও সমাজবিজ্ঞানের একটি হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
↑ ইতিহাসের সাথে সমাজবিজ্ঞান ও ভূগোলের সম্পর্ক : নিম্নে ইতিহাসের সাথে সমাজবিজ্ঞান ও ভূগোলের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হলো :
ক. ইতিহাসের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক : ইতিহাসের সাথে সমাজবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। নিম্নে ইতিহাসের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হলো :
১. বিষয়বস্তুগত : ইতিহাস যেমন মানুষের সব কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করে তেমনি সমাজবিজ্ঞানও সমাজব্যবস্থার প্রধান উপাদান হিসেবে মানুষের যাবতীয় কার্যকলাপের পর্যালোচনা করে থাকে। তাই ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু এক ও অভিন্ন। বিষয়বস্তুগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে উভয়ের আলোচ্যবিষয়ে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র লক্ষ করা যায় । ২. মানুষের জীবনপ্রণালি : ইতিহাসের জন্য সমাজবিজ্ঞান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সমাজবিজ্ঞানী যে গবেষণা কর্ম পরিচালনা করেন তার ফলাফল ঐতিহাসিকদের জন্য যথেষ্ট মূল্যবান। মূলত সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবন প্রণালি হচ্ছে আধুনিক সামাজিক ইতিহাসের মূল আলোচ্য বিষয়। এদিক থেকেও ইতিহাসের সাথে সমাজবিজ্ঞানের যথেষ্ট সাদৃশ্য বিদ্যমান । ৩. পারস্পরিক লেনদেন : পারস্পরিক লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের ভিত্তি গড়ে উঠেছে সমাজবিজ্ঞান তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে অনেকাংশে ইতিহাসের ওপর নির্ভর করে। মানবসমাজের ঐতিহাসিক বিকাশের ওপর সমাজবিজ্ঞান গুরুত্বারোপ করে। মানবসমাজে সংঘটিত সব ঘটনার ধারাবাহিক বিবরণই হলো ইতিহাস। আর এ ইতিহাসের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তসমূহকে সমাজবিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে একটি শক্তিশালী সমাজতাত্ত্বিক কাঠামো গড়ে তোলেন । ৪. ইতিহাস দর্শন : পৃথিবীর মানব সভ্যতার উৎপত্তি, বিকাশ, ক্রমবিবর্তন, পরিবর্তন, পতন ইত্যাদি প্রসঙ্গে ইতিহাস দর্শন সমাজবিজ্ঞানে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করে থাকে। ইতিহাস দর্শন হচ্ছে আধুনিক সমাজচর্চার ক্ষেত্রে এক নতুন সংযোজন। আধুনিক সমাজ চিন্তা ও ইতিহাসচর্চা উভয়েই ইতিহাস দর্শনের দ্বারা প্রভাবিত। ইতিহাস দর্শনের অবদানের ফলে ইতিহাস বিদ্যায় অজ্ঞাত ধ্যানধারণার প্রয়োগ ও তাত্ত্বিক অনুসন্ধান সম্ভব হয়েছে।
৫. সামাজিক পরিবর্তন : আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান ও পরিবেশের তারতম্যের কারণে সামাজিক জীবনে বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। এক্ষেত্রে সামাজিক পরিবর্তন ও আনুষঙ্গিক বিবিধ বৈচিত্র্য নিয়ে যখন ইতিহাসশাস্ত্র আলোচনা করে তখন একজন ইতিহাসবিদের সামাজিক জ্ঞান প্রয়োগ করতে হয়। এক্ষেত্রে সামাজিক কাঠামোর স্বরূপ, অর্থনৈতিক কাঠামো, উৎপাদন সম্পর্ক, রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্মবিশ্বাস প্রভৃতির সম্পর্কে ইতিহাসবিদের জ্ঞান থাকতে হবে ।
খ. ইতিহাসের সাথে ভূগোলের সম্পর্ক : নিম্নে ইতিহাসের সাথে ভূগোলের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হলো :
১. সংস্কৃতির সূচনায় : কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মানুষের সংস্কৃতির সূচনার সাথে এর ভৌগোলিক পরিমণ্ডলের প্রভাব প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। অনেক পূর্ব থেকেই কোনো ভূখণ্ড মানুষের বসবাসের জন্য কতটুকু উপযোগী তা নির্ধারিত হয় ঐ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে। ফলে প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশে সহজলভ্য জীবনধারণ উপাদান থাকলে সহজেই একটি ভূখণ্ড মানুষের আবাসস্থল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এসব বিষয় বিশ্লেষণ করতে গেলে একজন ইতিহাসবিদকে ভূগোল সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করতে হয়।
২. সংস্কৃতির বিকাশের ক্ষেত্রে : প্রাচীনকালে বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তি সাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট স্থানে মানুষ বসতি গড়ে তুলতো। এক্ষেত্রে নদী তীরবর্তী উর্বর ভূমিতে মানুষ সহজেই বসতি নির্মাণ করে তার সংস্কৃতি বিকশিত করার পথকে প্রশস্ত করেছে। এক্ষেত্রে মানব সভ্যতার ইতিহাস কিংবা সংস্কৃতি বিশ্লেষণে একজন ইতিহাসবিদকে সংস্কৃতি সংক্রান্ত ধারণা নিতে হয় ।
৩. অর্থনৈতিক : মানুষের অর্থনৈতিক জীবনব্যবস্থা অনেকাংশেই তার পরিবেশের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সভ্যতা বিকাশের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অনুকূল পরিবেশ তথা ভৌগোলিক অবস্থান পাওয়াতে মানুষ কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছিল। এই উন্নতি তাদের অর্থনীতিকে বিকশিত করেছে। অর্থনীতি বিকশিত হয়ে তাদের সভ্যতার অগ্রগতিকে আরেকটি সোপান পার করে উপরে ওঠে দাঁড়ানোর পথ করে দিয়েছে। বিষয়গুলো বুঝার জন্য একজন ইতিহাসবিদকে ভৌগোলিক জ্ঞান আয়ত্ত করতে হয় ৷
৪. প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কার : কালের গহব্বরে হারিয়ে যাওয়া মানব বসতির চিহ্ন আবিষ্কার ও শনাক্ত করার ক্ষেত্রে ইতিহাস গবেষককে ঐ স্থানের ভৌগোলিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে। কেননা মানব বসতির চিহ্ন বা ধ্বংসাবশেষ টিকে থাকা বা চিরতরে বিনষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে ঐ অঞ্চলের ভৌগোলিক পরিবেশ অবদান রাখতে পারে।
৫. ইতিহাসের ধারাবাহিকতা : একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে পরিবেশের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। পরিবেশের বিপর্যয় ক্ষেত্রবিশেষ রাজবংশীয় শাসনের পতন ঘটাতে পারে। এর প্রভাবে একটি জনপদ কালের গহ্বরে হারিয়ে যেতে পারে। ফলে কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক পরিমণ্ডলের সংস্কৃতি কিংবা রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ভৌগোলিক পরিবেশের অবদান অনস্বীকার্য। এজন্য ভূগোলের জ্ঞান না থাকলে একজন ইতিহাসবিদের পক্ষে বিষয়টি আলোচনা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইতিহাসের সাথে সমাজবিজ্ঞান ও ভূগোলশাস্ত্রের সম্পর্কের মূল বিষয় মূলত মানবসম্প্রদায়। মানুষের কর্মের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে পৃথক পৃথকভাবে ইতিহাস, ভূগোল ও সমাজবিজ্ঞানের সূত্রপাত ঘটেছে। তবে সার্বিকভাবে শুধুমাত্র ইতিহাসের মধ্যেই ভূগোল ও সমাজবিজ্ঞানকে একত্রিত করা যায় । ইতিহাসে ভূগোল ও সমাজবিজ্ঞানের আলোচনা সন্নিবেশিত থাকে বলে এদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত